চোখের আড়ালে পর্ব-১৩

0
727

#চোখের আড়ালে
#Maishara_jahan
Part………13

তৃষা একটু হেঁসে বললো_ যখন এ কথাটা আপনি নিচে বলেছিলেন তখন কথার মাঝে অজানা একটা ভালোবাসা দেখতে পারছিলাম। একি কথা এখন বলছেন । কিন্তু এখন ভালোবাসাটা দেখতে পারছি না। রাগ, এতো রাগ কেনো? কি করেছি আমি? আমার অপরাধটা একটু বলুন পিল্জ? আমি এভাবে থাকতে পারছি না।

_থাকতে হবে। তুমি এর থেকে খারাপ ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য।

তৃষা এবার একটু জোরে চিৎকার করে বলে _ কি করেছিটা আমি? কি করেছি? আপনি আমার জীবনে এসেছেন আমি আপনার জীবনে না। তাড়াতাড়ি বিয়ে আপনি করেছেন, আমি না। বিয়ের আগে প্রপোজ করেছেন, সবার সামনে আমি না করে দিয়েছি এর জন্য এতো বড় শাস্তি।

হঠাৎ করে প্রপোজ করলে মানুষ কি করবে? যেমন না করেছি তেমন সবার সামনে নিজের ভুল শিকারও তো করেছি। আপনি আমাকে ভালোইবাসেন না। যদি ভাসতেন তাহলে এতো ছোট একটা বিষয় নিয়ে এতো কাহিনি করতেন না।

আরাব _ তোমার কি মনে হয়, এতো নরমাল একটা বিষয়ে আমি তোমাকে এতো ঘৃণা করতে পারি?
_ তাহলে কি করেছি আমি?
_অন্য কোনো দিন বলবো, এখন ভালো লাগছে না।
_ না এখনি বলতে হবে। আমার আর সহ্য হচ্ছে না। এখন তো আমাকে পেয়ে গেছেন। এভাবেই চলতে থাকলে, আমি আর আপনার থেকে পালাবো না দুনিয়া থেকেই চলে যাবো।
_সেট আপ। ডোন্ট ইউ ডিয়ার,

_ ইয়েস আয় ডু, আপনি এখন যদি আমাকে সত্যিটা না বলেন তাহলে কছম দিয়ে বলছি, আমি এমন কিছু করবো যা কেও কল্পনাও করতে পারবে না।
_ এতো শুনার ইচ্ছে যখন তাহলে শুনো। আমার মা বাবা দের বছর আগে কার এক্সিডেন্টে মারা গেছে শুনেছো নিশ্চয়ই।

_ হ্যাঁ কিন্তু এতে আমার কি দোষ?
_ এটাতে তোমার কোনো দোষ নেয়। কিন্তু এর আগে যে আচরণ তুমি আমার মা বাবার সাথে করেছো তার শাস্তি তো পেতেই হবে।
_ মানে আমি কিছু বুঝছি না। কে আপনার মা বাব? আর যে হোক আপনার মা বাবা আমি কোনো দিন কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতেই পারি না। তাছাড়া আমি দেখেছি আপনার মা বাবার ছবি বাড়িতে। আমার তো তাদের কোনো কথা মনে পড়ছে না।

_ কারো সাথে খারাপ করে ভুলে যাওয়াটা মানুষের সভাব।
_ আমার এমন সভাব আছে বলে মনে হয় না। আপনি এতো না প্যাঁচিয়ে আসল কারনটা বলুন।

_ ওকে ফাইন শুনো। আমার বাবা মা একটা কাজে আমেরিকায় গিয়েছিলো। সেখানে একটা কোম্পানিতে তোমার সাথে দেখা হয়েছিলো। আমার মা যিন্নাত আর আমার বাবা মুগ্ধ খান, তাদের তোমাকে পছন্দ হয়ে গেছিলো।

কিছু দিন পরে আমার মা বাংগালী মায়ের মতো তোমাকে সরাসরি তার ছেলের কথা বলে আর বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আর তুমি কি করেছিলে বিভিন্ন ভাবে সবার সামনে আমার বাবা মাকে অপমান করেছো। মা আমাকে তোমার সম্পর্কে অনেক কিছু বলতো৷

তুমি কিভাবে চলো, কথা বলো, হাঁসো, সব কিছু যেগুলো মা দেখতো। মার কথা শুনে ভালোলাগা শুরু হয়ে গেছিলো তোমার প্রতি। কিন্তু তুমি যে তাদের অপমান করেছো তা বলেইনি। কিছু দিন ধরে তোমার প্রসঙ্গ উঠায়নি মা। তার কিছু দিন পর এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় এক্সিডেন্ট হয়ে যায়। তারপর বাবার এসিস্ট্যান্ট আমাকে বাবা মার এই অপমানের কথা বলে।

তখনি আমি ভেবে নিয়েছিলাম তোমার এই রুপের অহংকার আমি ভেঙে দিবো। বিয়ে আমি তোমাকেই করবো। আর এর শাস্তি অবশ্যই দিবো। তোমার বাহিরেরটা দেখে ভেতরের চেহেরা চিনা মুশকিল।

আমার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়তে থাকে। আমি চোখ মুছে বলি_ আমি জানি না আপনার বাবা মা এমন কেনো বলেছে। কারন আমার মনে আছে আন্টি আপনার বিষয়ে অনেক কিছু বলতো। আপনার খারাপ দিকটা ভালো দিকটা। আমি শুধু হাল্কা হাসতাম।

আর কিছুই বলতাম না৷ যখন উনি আমাকে সরা সরি বলে আপনাকে বিয়ে করার কথা তখন আমি শুধু এটাই বলি যে, বিয়ে আমার বাবা মার হাতে। উনারা আমার বিষয়ে যা ভালো মনে করবে তাই করবো। তারপর আমি শুনি উনি নাকি আমার বাবা মার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেছে।

আর তারা না করে দেয়। এর বেশি কিছুই জানি না আনি। আমি আন্টিকে জিজ্ঞেস ও করেছিলাম আংকেল মানে আমার সৎ বাবা উনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে নাকি। উনি বলেছে না, তেমন কিছুই হয়নি। বাংলাদেশ গিয়ে আপনাকে বলবে যেনো আমরা একে অপরের সাথে দেখা করি। আমিও কিছুই বলিনি। কিন্তু আমি কারো অপমান করিনি।

আরাব জোরে বলে_মিথ্যা বলছো তুমি। কি কি বলা হয়েছে আমি সব শুনেছি।
_ কার কাছে শুনেছেন? আপনার মা বাবা আপনাকে বলেছে? যার কাছে শুনেছেন তাকে জিজ্ঞেস করেন কথা গুলো আমি বলেছি নাকি আমার সামনে বলা হয়েছে। তাহলেই প্রমান হয়ে যাবে।
_ঠিক আছে ফোন করে জিজ্ঞেস করছি। যদি তুমি ভুল প্রমাণিত হও তাহলে পরিণাম ভালো হবে না তোমার জন্য।
_ঠিক আছে আমি প্রস্তুত।

আরাব ওর বাবার এসিস্ট্যান্ট মিঃ সেন কে কল করে। মিঃ সেন কল ধরতেই আরাব বলে _ আংকেল বাবা মা মারা যাওয়ার আগে আমেরিকায় একটা মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো তারপর বাবা মাকে অপমান করা হয়। আপনি আমাকে বলেছিলেন মনে আছে?

_হ্যাঁ স্যার মনে আছে, বাট এখন এসব কথা কেনো?
_ আপনাকে পরে বলবো , আগে বলেন আমার বাবা মাকে অপমানটা কে করেছিলো ঐ মেয়ে তৃষা তাই না?
_ না স্যার, ঐ মেয়ের বাবা করেছিলো। নেশা করে অনেক আজেবাজে কথা বলেছিলো।
_ ঐ মেয়েটার সামনে করেছিলো না?
_ না স্যার, মেয়েটা তো খুব ভালো ছিলো। জানি না ওর বাবা এমন কেনো।

আরাব কিছু ক্ষন চুপ থেকে বলে _ তাহলে আপনি কেনো বলেছিলেন যে ঐ মেয়ে আমার বাবা মাকে অপমান করেছে?
_ না স্যার আমি তো এমন কিছু বলিনি। আমি শুধু বলেছি তৃষা নামক মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর আপনার বাবা মাকে অপমান করা হয়। কি কি বলেছে তাও বলেছি। কিন্তু মেয়েটির কথা তো বলি নি। আপনি হয়তো মনে করেছেন যে মেয়েটিই করেছে।
_ আচ্ছা রাখছি, পরে কথা হবে।

আরাব মুখ কালো করে আমার দিকে তাকায়। আমার হাসি পাচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু ঠোঁটে হাসি। আরাব কিছু বলার আগেই আমি তাকে থামিয়ে বলি _

তার মানে এতো দিন আমি কোনো ভুল না করার শাস্তি পাচ্ছিলাম। বিনা অপরাধে এতো বড় শাস্তি। নিজের উপর হাসি পাচ্ছে আমার। কারন কি জানেন? কারন আমি যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি সে শুধু মাত্র প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমাকে বিয়ে করেছে। এখানে ভালোবাসার ছিটে ফোঁটাও নেয়। আর আমি পাগল ভেবেছি অভিমান করে আছে আমার উপর। ভালোবাসায় অভিমান তো হবেই। বিয়ের আগে ও পরে যতো ভালোবাসা আমাকে দেখিয়েছেন সবি অভিনয় ছিলো। এতো কষ্ট তো আমার তখনো হয়নি যখন আমি যানতে পেরেছি বাবা আমাকে বেঁচে দিয়েছে।

_ ঐ লোককে আমি মজা দেখাবো। শাস্তি দিবো ওকে। পথের ফকির বানিয়ে দিবো।

আমি তুচ্ছ একটা হাসি দিয়ে বললাম _ আই ডোন্ট কেয়ার। আর তাছাড়া এটা আপনি আমার জন্য করবেন না। শাস্তি দিবেন কারন ওনি আপনার মা বাবাকে অপমান করেছে।

আরাব আমাকে ধরতে যায়। আমি একটু পিছিয়ে বলি _ ডোন্ট। সেই অধিকার হারিয়েছেন।

বলে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ছাদে চলে যায়। সেখানে এক কোনায় বসে আছি।
_______
একটু পর আলো গেস্ট রুমের সামনে এসে দরজায় টুকা দেয়। রিমান ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে। আলো রুমের ভিতরে উঁকি ঝুঁকি মেরে বলে __ ফারহান জি কোথায়।

রিমান জোরে বলে _ ফারহান জি আপনাকে একজন খুঁজছে।

ফারহান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে বলে _ কে এসেছে?

আলো কোনো মতে রিমানকে ঠেলে সরিয়ে বলে _ জি আমি আলো।

ফারহান মুখ মুছে তোয়ালেটা রেখে বলে _ জি কিছু বলবেন?
_ নাস্তা রেডি তাই আপনাকে এসেছিলাম।

রিমান আস্তে করে বলে_ মেহমান তো আমিও আমাকেও তো বলা উচিত।

ফারহান একটু অস্বস্তি বোধ করে বলে _ একটু পরে আসছি।
_ একটু পরে কেনো, এখনি চলেন। গরম গরম লুচি বেঝেছি। চলেন পরে ঠান্ডা হয়ে যাবে।

বলে ফারহানের হাত ধরে টানতে থাকে। ফারহান হাত ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে ছাড়াতে চায়৷ আলো টানছে ফারহান অসহায় আর মতো ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। রিমান ঘুম ঘুম চোখে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো কিছুই হচ্ছে না। অবশেষে ফারহান হাত ছাড়িয়ে বলে _ মিস্ আপনি যান আমি এখনি আসছি।

আলো হেঁসে দিয়ে বলে _ ওকে ফারহান জি, তাড়াতাড়ি চলে আসবেন কিন্তু না হলে আমি আবারো চলে আসবো ডাকতে আপনাকে।

বলে খিলখিল করে হেঁসে চলে যায়। ফারহান অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলে _ রিমান তোর বোনের হবু হাসবেন্ডকে কেও এইভাবে ইভটিজিং করছে চর তুই কিছু করবি তো দূরের কথা কিছু বললি ও না।

রিমান কিছু ক্ষন ফারহানের দিকে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ে। দেখে মনে গভীর ঘুমে আছে৷

ফারহান রিমানের দিকে তাকিয়ে বলে _ আমার সাথে এমন করেছিস না দেখিস তোর সাথেও এমন হবে।

তখনি ডাক পড়ে _ রিমান জি, রিমান জি।
রিমান তাড়াতাড়ি উঠে বসে চোখ গুলো জোর করে খুলে বলে _ কালা জিহ্বা তোর।

তখনি আশা ভিতরে ঢুকে বলে _ রিমান জি আমি কি আসতে পারি?
রিমান একটু আস্তে বলে_ আর কতো ভিতরে আসবে, এসেই তো পড়েছো।
আশা_ কি বির বির করছেন।
ফারহান _ রিমান আপনার কথায় ভাবছিলো এতো ক্ষন।
রিমান জোর করে হেঁসে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে,রাগী চোখ নিয়ে। রিমানের দিকে তাকিয়ে ফারহানও দাঁত গুলো বের করে দেয়।

আশা রিমানের একটু কাছে গিয়ে বলে _ সত্যি জি, আপনি আমাকে মনে করছিলেন?

রিমান একটু দূরে সরে গিয়ে মৃদু হেসে বলে_ না মানে, ঐ আরকি। আচ্ছা আপনি কোনো আমাকে খুঁজছিলেন?
_ জি খাওয়ার জন্য ডাকছিলাম।
_ জি আমি এখনি আসছি, আপনি যান।
_ না আপনি এখনি আমার সাথে চলুন।

বলে আশা রিমানের হাত ধরতে চাই তার আগে রিমান লাফ দিয়ে দরজার বাহিরে গিয়ে বলে_ ফারহান তাড়াতাড়ি আয় নাস্তা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।

বলে রিমান তাড়াতাড়ি নিচে চলে যায়। তার পিছনে আশাও যায় আর সাথে ফারহান ও। সবাই খেতে বসে। তৃষা আরাবের দিকে তাকাচ্ছে ও না। নিচে তাকিয়ে চুপচাপ খাচ্ছে। আরাব বার বার তার দিকে তাকাচ্ছে। অন্য দিকে আলো আশা রিমান আর ফারহানকে খায়িয়ে মেরে ফেলছে।

খাওয়া শেষ করে রিমান সোজা শুয়ে পড়ে। ফারহান তাকিয়ে দেখে এক সেকেন্ডে সে মরার মতো ঘুমাচ্ছে৷ ফারহান ও শুয়ে পড়ে। তৃষা আলো আশার রুমে শুয়ে আছে।

আরাব কয়েক বার ডাকতে আসে কিন্তু সে ঘুমের বান করে শুয়ে আছে। পরে আরাব বিরক্ত হয়ে তৃষাকে কোলে করে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। তৃষা এখনো ঘুমের বান করে অন্য দিক হয়ে শুয়ে থাকে।

আরাব বার বার ডাকার সর্তেও তৃষা না শুনার কারনে আরাব পিছন থেকে তৃষাকে জরিয়ে ধরে তার মাথা তৃষার ঘারে রেখে শুয়ে পরে। তৃষা একটু চমকে গেলেও চুপচাপ শুয়ে আছে। আরাব তৃষার ঘার থেকে চুল গুলো সরিয়ে তার মাথাটা ভালো করে রাখে। তৃষা ঘুমের বান করে নড়তে চাইলেও আরাব শক্ত করে জরিয়ে ধরে রাখে।

চলবে_____

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে