চোখের আড়ালে পর্ব-১১

0
700

#চোখের আড়ালে
#Maishara_jahan
Part………11

তৃষা ফোন রেখে সামনে তাকিয়ে দেখে আরাব দাঁড়িয়ে আছে। তৃষা ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে সোজা তাকিয়ে আছে৷ আরাব একটু কাছে এসে বলে_কার সাথে কথা বলছিলে?
তৃষা একটু ভয়ে শুধু তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না। আরাব আবারো জিজ্ঞেস করে_বলো কার সাথে কথা বলছিলে?

তৃষা একটু অস্থির হয়ে বলে_ আমি একটা জিনিস অডার দিয়েছিলাম সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। সময় মতো দিবে কি-না জিজ্ঞেস করছিলাম।

_কি অডার করেছো?

তৃষা একটু ভেবে বলে_ শাড়ি, রিমানের আম্মু বলেছিলো শাড়ি পড়ে আসতে তাই আরকি।
_ এতো সকালে অডার করার কি দরকার ছিলো?
_ফেইসবুকে ঢুকতেই চোখে পড়লো, আর অনেক ভালোও লেগেছে তাই দিয়ে দিয়েছি।
_ওহ ওকে,কয়টা বাঝে?
_এই তো ১০ টা।
_ অনেক লেইট হয়ে গেলো, আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে অফিসে যাচ্ছে।

আরাব যেতে নেয় তৃষা আরাবের হাত ধরে ফেলে। আরাব তৃষার দিকে তাকিয়ে বলে _কি হয়েছে?

_আজকে অফিসে না গেলে হয় না? আপনার সাথে দূরে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে, নিয়ে যাবেন? শুনেছি একটু দূরেই নাকি সুন্দর একটা বিল আছে। সেখানে নাকি লাল পদ্ম ফুলে ভরে গেছে। নৌকা দিয়ে গেলে নাকি অনেক ভালো লাগে। আজকে দিনটাও ঠান্ডা আছে। কোনো রোদ নেয়, ঠান্ডা বাতাস বয়ছে। তাছাড়া বাংলাদেশে আসার পর থেকে শুধু ঘরেই আছি। সেখানে গেলে আমাদের কতোগুলো সুন্দর স্মৃতি হবে। নিয়ে যাবেন?

আরাব হাত ছাড়িয়ে বললো_কাল রাতের কথা ভুলে যাও। তোমার কথার জালে ফেঁসে গিয়েছিলাম। ভালোবাসি না তোমায় যে, নিয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো। তোমার সাথে কোনো সুন্দর স্মৃতি বানানোর ইচ্ছে নেয় আমার। আমি অফিসে যাচ্ছে, বাঁধা দেওয়ার ভুলও করবে না।

তৃষা চোখের পানি আড়াল করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। আরাব চলে যায়। একটু পর আরাব রেডি হয়ে নিচে এসে দেখে তৃষা খাবার নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে৷ আরাব না দেখার বান করে চলে যায়। তৃষা ডাক দিতে চেয়েও দেয়নি।
____
রিমান ক্লাস করছে কিন্তু তার ক্লাসে কোনো মনোযোগ নেয়। সে কোনো কিছু না বলেই ক্লাস চলা কালীন বেরিয়ে যায়। মাহুয়ার ক্লাসে কিছু না বলেই ঢুকে তাকে নিয়ে আসে। ক্যম্পাসে নিয়ে যায় মাহুয়াকে। মাহুয়া হাত ছাড়িয়ে বলে_ হয়েছেটাকি? কেনো নিয়ে এসেছেন আমাকে এভাবে? সবাই কি ভাববে?

_কে কি ভাবলো না ভাবলো, তাকে আমার কিছু আসে যায় না। তুমি শুধু একটা কথা বলো,

_কি?
_ সত্যি ঐ ছেলেকে বিয়ে করবে?
_শান নাম ওর,
_হোয়াট এভার,, শুধু এটা বলো, ঐ ছেলেকে কেনো বিয়ে করবে?
_ বাবা মা ঠিক করেছে তাই।
_ ভালো না বেসেই বিয়ে করবে?
_বিয়ে করার জন্য ভালোবাসা জরুরি না। শান ভালো ছেলে আস্তে আস্তে ভালো লাগাও হবে আর ভালোবাসাও।
_ ভালোবাসাটা কতো সহজ তোমার কাছে তাই না? যাকে মনে চায় যখন তখন ভালোবেসে ফেলতে পারো?
_ চেষ্টা করবো।
_ এখন বিয়ে করার কি দরকার?
_ কেনো বিয়ে করবো না? কার জন্য অপেক্ষা করবো? বেস অনেক হয়েছে, এখন আর আমি আমার মান সম্মান ফেলে আপনার পিছনে গুর গুর করতে পারবো না। আমিও মানুষ, আমারো কষ্ট হয়।
_শুনো তোমার এমন এক মানুষকে বিয়ের জন্য বাছাই করা উচিত যাকে তুমি খুব ভালো করে চিনো।

মাহুয়া রিমানের দিকে অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রিমান একটা কাশি দিয়ে বলে_ আমাকে ছাড়া, অন্য কারো কথা বলছি।
_ কার কথা?
_আরে তোমার আশেপাশে দেখো অনেক হেন্সাম হেন্সাম ছেলে আছে যাকে তুমি অনেক ভালো করে চিনো। আমার বন্ধুদের মধ্যেই দেখো।

আমি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললাম_ আমি তোমার বন্ধুদের মধ্যে কাওকে বিয়ে করলে তোমার কোনো নেয়?
_ না, ভালো কাওকে বাছাই করলে প্রবলেম নেয়।

আমি কন্ট্রোল হারিয়ে রিমানের কলার ধরে বলা শুরু করি_ আপনার মতো কঠোর মানুষ আমি আমার জীবনে দেখিনি। কি পেয়েছেনটা কি আমাকে? আর কোনো দিন আপনার চেহেরা দেখতে চাই না আমি। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করে চলে যাবো। মুখও দেখবো না আপনার। ঘৃণা করি আপনাকে।

বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় সেখান থেকে। রিমান সেখানে বেঞ্চে বসে থাকে। একটু পর ফারহান আসে। এসে রিমানের পাশে বসে বলে_আমি একটা প্লেন করেছি।

রিমান হতাশ হয়ে বলে_ কি?
_ ঐ শানের বাচ্চাকে __
রিমান উঠে দাড়িয়ে বলে_হেহহ শানের বাচ্চাও আছে, ঐ শানকে তোহ আম_

রিমান যেতে নেয় ফারহান হাত টেনে ধরে আবার বসিয়ে বলে_আরে দূর এটা তো কথার কথা ছিলো। শুন, ঐ শানকে এমন মার মারবো মাহুয়াকে বিয়ে করার কথা মাথা থেকে নেমে যাবে।
_ দূর, আংকেলকে বলে দিলে অনেক জামেলা হয়ে যাবে।
_ লোক ভারা করবো, আমাদের নাম বলতে না করবো।
_ এটা করলে আংকেল ভয়ে মাহুয়াকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিবে। তাও কাছে না৷ দূরে কোথাও বিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দিবে।
_তাহলে এক কাজ করবো, বিয়ের দিন মাহুয়াকে উঠিয়ে আনবো।
_ বদনাম হয়ে যাবে।
_তাহলে জামাইকে উঠিয়ে আনবো।

রিমান ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারহান রিমানের তাকানো দেখে বলে_ সব বাদ দিলাম, আমরা অন্য কিছু ভাববো কিন্তু মাহুয়ার বিয়ে হতে দিবো না।

রিমান হতাশ হয়ে ফারহানের কাঁধে হাত রেখে বলে_ তুই চিন্তা করিস না, মাহুয়ার বিয়ে আমি অন্য করো সাথে হতে দিবো না।
বলে চলে যায়। ফারহান ও রিমির ক্লাসের দিকে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে রিমি সবার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে ।

সেখানে মেয়ের থেকে ছেলে ফ্রেন্ড বেশি। রিমির এভাবে হেঁসে হেঁসে কথা বলাটা ফারহানের মোটেও ভালো লাগছে না। সে ঐখানে গিয়ে সবার সামনে রিমির কাঁধে হাত রাখে। সবার সাথে সাথে রিমিও অভাক হয়ে বলে_ কি করছেন?

ফারহান রিমিকে শক্ত করে ধরে হাসি মুখে সবার দিকে তাকিয়ে পুরো ক্লাসকে বলে_ হায় এভরি-ওয়ান আমাকে তো সবাই নিশ্চয়ই চিনো। আর যারা না চিনো তাদের বলছি আমি ফারহান, ফাইনাল ইয়ার। আর এনি মিস্ রিমি, আমাদের খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে হতো যাচ্ছে। ১০/১২ দিন পরেই হবে। সবাইকে অবশ্যই দাওয়াত দেওয়া হবে। কেও বাকি পড়ে গেলে মন খারাপ না করে চলে আসবেন। এটাই বলার জন্য এসেছিলাম। সবাই একটু আমার হবু বউ এর খেয়াল রাখবেন।

সবাই হাত তালি দিয়ে কংগ্রাচুলেশনস বলে চিৎকার করে শুধু কিছু মেয়ে আর ছেলে ছাড়া। রিমি ফারহানের হাত ধরে টেনে ক্লাস থেকে বাহিরে নিয়ে গিয়ে রাগে বলে_ কি ছিলো এটা?

_ কেনো বিয়ের জন্য সবাইকে দাওয়াত করলাম।
_আপনাকে এভাবে ঢোল বাজিয়ে আমার মান সম্মানে পানি ঢালার কি দরকার ছিলো। সবাই হয়তো হাসাহাসি করছে আমাকে নিয়ে।

_ কেনো করবে? বিয়ে করার কথা বলেছি কোনো জোক বলিনি যে, হাসাহাসি করবে। এখন তো শুধু সবাকে আমাদের বিয়ে কথা বলেছি। তাতেই তোমার এ অবস্থা। বিয়ের পর সবার সামনে আরো অনেক কিছু করতে পারি। সো ডার্লিং সেটার জন্য প্রস্তুত হতে থাকো। বাই

ফারহান চলে যায়, রিমি শুধু অভাক হয়ে তার কথা শুনে। তাদের কথা রিমির কিছু বান্ধবী আড়াল থেকে শুনে হাসছে। রিমির সামনে এসে সবাই রিমিকে নিয়ে মজা করছে। রিমি সেখান থেকে চলে আসতেও পারছে না, এসব সহ্য করতেও পারছে না।

ভার্সিটি ছুটি হওয়ার পর মাহুয়া অন্য কোনো দিক না তাকিয়ে শানের সাথে সোজা চলে যায়। রিমি অনেক বার ডাকা শর্তেও ফিরেও তাকায়নি। মাহুয়া কথা না বলে চলে যাওয়ায় রিমি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। রিমান রিমির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে_ কি হয়েছে? এমন পেঁচার মতো মুখ কেনো করে আছিস?

রিমি মন খারাপ করে বলে_ আজকে সারা দিন মাহুয়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু সে আমার সাথে একটা কথাও বলেনি। ইগনর করে চলে গেলো। আমি কি করেছি আমার কি দোষ?

রিমান_ মন খারাপ করার কিছু নেয়। মাহুয়া আমার সাথে রাগ করে আছে। আমার উপর না দেখাতে পেরে তোকে দেখাচ্ছে।

রিমি_ ও তোর উপরে না, আমার উপরেই রাগ করে আছে।
_কেনো?
তখনি ফারহান এসে বলে_আজকে সারা দিন এখানেই থাকার ইচ্ছে আছে নাকি? চল বাসায় যায়?

রিমান_ যা তুই তোকে মানা কে করছে?
ফারহান _ আমরা এক সাথেই তো যাবো, চল।
রিমান _তুই একা যাবি, আমি রিমিকে নিয়ে যাচ্ছি।
ফারহান _আমি একা কি করে যাবো?
_ রিকসা দিয়ে যা। টাকা না থাকলে, হেঁটে যা।
_ হেঁটে কি ভাবে যাবো?
_ আল্লাহ তোরে পা দেয় নাই। পা দিয়ে যেভাবে আসলি ঐভাবে হেঁটে যা।
_ কিন্তু ব্রো গাড়িটা আমার। তোরা আমার গাড়ি করে এসেছিস।
_কিন্তু চাবিটা আমার কাছে।
_হোয়াট?

রিমি বিরক্তি নিয়ে বলে _ ভাইয়া চল।
ফারহান রিমানকে একটু সাইডে নিয়ে আস্তে করে বলে_ রিমান তোর বোনকে নিয়ে আমি একটু লোং ড্রাইভে যেতে চাই। পিল্জ তোর বোনকে একটু বল না।

রিমান রাগী ভাবে ফারহানের দিকে তাকিয়ে বলে_ তোর বোনের সাথে আমি লং ড্রাইভে যেতে চাইলে দিতি তুই?
_ হ্যাঁ,আমার বোনের সাথে যদি তোর বিয়ে ঠিক হয়ে যেতো তাহলে দিতাম।
_এই জন্যই তোর বোন নেয়। সর শালা।
_দোস্ত পিল্জ বল না, ফ্রেন্ড এট জন্য এটুকু করতে পারবি না। আজকে দেখিয়ে দে তুই ফ্রেন্ডের জন্য কি কি করতে পারিস?

রিমান সোজা হেঁটে রিমিকে নিয়ে গাড়িতে বসে চলে যেতে থাকে। ফারহান চিল্লিয়ে বলছে _ ঐ আমি বাসায় যাবো কিভাবে? নিয়ে যা শালা নেমোহারাম।
____
রাত ১ টা বাঝে আরাব রিমানকে ফোন দিয়ে অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করে বলে_ তোর বাসায় তৃষা আসছে।

রিমান ঘুম ঘুম চোখে বলে_ এতো রাতে তৃষা আমাদের বাসায় আসবে কেনো? কি হয়েছে? এভাবে কথা বলছিস কেনো?
_ তৃষাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। বিছানায় একটা বেগ আর একটা চিঠি আছে শুধু।
_কখন থেকে নেয় বাসায়?
_জানি না, আমি বাসায় কিছু ক্ষন আগেই এসেছি। এসে দেখি নেয়।
_ ব্যগ এ কি আছে?
_ টাকা
_ ও সেট, চিঠিতে কি আছে?
_ পড়ার সাহস হচ্ছে না।
_আমি ফারহানকে নিয়ে আসছি। তুই দেখ চিঠিতে কি আছে। ১০ মিনিটে আসছি।

আরাব ফোন রেখে চিঠিটা আস্তে আস্তে খুলে পড়তে শুরু করে ___

প্রিয়
ঠিক কি লিখবো বুঝে পাচ্ছি না। মনে অনেক কথা আছে, যেগুলো তোমাকে বলার ছিলো কিন্তু বলা হয়নি। তুমি যদি আমাকে ভালোবাসতে তাহলে বুঝতে আগের তৃষা আর এখনকার তৃষার মধ্যে পার্থক্য কতোটা। যে মেয়ে চুপ হওয়ার নামি নিতো না সে এখন কি বলবে সেটা ভেবে পায় না। যানি তুমি বিরক্ত হচ্ছো। আর বিরক্ত করবো না, মেইন কথায় আসা যাক। ব্যাগে ৫০ লক্ষ টাকা আছে। যেগুলো বাবাকে দিয়ে তুমি আমাকে কিনে ছিলে। কিন্তু আমি কোনো কিনার জিনিস না। তাই টাকা গুলো ফিরত দিয়ে মুক্তি হলাম। তোমার থেকে না। আমি একটা বিক্রির জিনিস সেটা ভাবার থেকে মুক্তি হলাম। আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই নি কিন্তু তোমার ঘৃণা আর আমার আত্মসম্মান আমাকে এখানে থাকতে দিলো না। তোমার ঘৃণা করার কারন আমি আজো জানতে পারি নি। তুমি আমার জীবনে এসে ভালোবাসা শিখিয়েছো। তোমার কাছ থেকে ভালোবাসা শিখলেও ঘৃণাটা শিখতে পারিনি। মানুষকে শাস্তি দেওয়ার আগে তার অপরাধটা কি সেটা তো বলে। তুমি তো তাও বলো নি। যাওয়ার আগে আজকের দিনটা আমি তোমার সাথে কাটাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটাও তুমি দিলে না। আমার সাথে তোমার ঘৃণাটায় আমি নিয়ে গেলাম।চিন্তা করো না, আমি সুইসাইড করবো না। জানি তুমি চিন্তাও করো না, তাও বলে রাখলাম। আমাকে খুঁজার চেষ্টা করো না পিল্জ। খুঁজে পাবেও না, তাই অযথা চেষ্টা করে লাভ নেয়। ভালো থেকো, ভালোবাসি প্রিয়।

ইতি ……

চিঠিটা পড়ে আরাব বিছানায় বসে পড়ে। তার চোখ দিয়ে অজান্তেই পানি পড়ছে। কোথায় গিয়েছে কি করছে মাথায় এসবি ঘুরছে। তখনি ফারহান আর রিমান আসে। ওরা আসতেই আরাবকে পাথরের মতো বসে থাকতে দেখে। ফারহান আরাবের হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে পড়তে থাকে৷

চলবে______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে