চোখের আড়ালে পর্ব-১০

0
666

#চোখের আড়ালে
#Maishara_jahan
Part………10

বলে রিমিকে টান দিয়ে, রিমির মাথায় ধরে ঠোঁটে কিস করতে থাকে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো রিমি চেয়েও ফারহানকে সরানোর কোনো চেষ্টায় সে করছে না। একটু পর রিমির হুশ আসে। সে ফারহানকে ধাক্কা মেরে দৌড়ে চলে যায়। নিচে গিয়ে দেখে বিয়ের তারিখ ও ঠিক হয়ে গেছে।
_____
রাতে রিমি বারান্দায় বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে রিলিং ধরে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠিক এসময় রিমান রিমির রুমে ঢুকে, তাকে ডাক দেয় কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেয়। আনমনে তাকিয়ে আছে বাহিরে।

রিমান রিমির কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত দিতেই রিমি চমকে রিমানের দিকে তাকিয়ে বলে _ওহহ ভাইয়া তুই।

_এতো রাতে না ঘুমিয়ে বারান্দায় কি দেখছিস?
_কিছু না ভাইয়া, এমনি ভালো লাগছিলো না। অশান্ত মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছি।
_কি হয়েছে? বিয়ে করতে চাস না তাই তো?
_ ভাইয়া তোকে কিছু কথা বলার আছে তবে এখন না পরে।
_ আচ্ছা ঠিক আছে। আর শুন চুপচাপ ঘুমা। আমি ফারহানের সাথে কথা বলবো বিয়ের বিষয় নিয়ে। আর তুই রাজি না থাকলে এই বিয়ে হবে না, কথা দিচ্ছি আমি। এখন ঘুমুতে যা।

রিমি মিথ্যা হাসি দিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। রিমান চলে গেলো। রিমি দরজা বন্ধ করে, লাইট অফ করে লেম লাইট এর দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায় আবার।
_____
রাতে তৃষা শুয়ে আছে, আরাবের পায়ের শব্দ শুনে ঘুমিবার বান করে শুয়ে আছে। আরাব রুমের ভিতরে ডুকে কোনো কিছু না ভেবে লাইট অফ করে আস্তে করে তৃষার পাশে শুয়ে পরে। একটু পর তৃষা চোখ খুলে আরাবকে খুঁজছে। সোফায় না পেয়ে অপর পাশ হতেই আরাবের চোখে চোখ পড়ে যায়। আরাব তাকিয়ে আছে। তৃষা চোখ বড় বড় করে ফেলে।

_আমাকে কেনো খুঁজছিলে?
_কোথায় না তো। আমি কেনো আপনাকে খুঁজবো। আমি তো ঘুমুচ্ছিলাম।
_চোখ হাল্কা খুলে কিভাবে পুরো রুমে চোখ ঘুরাচ্ছিলে সেটা তো দেখেছিই।
_আপনি হঠাৎ আমার পাশে শুয়েছেন?
_কেনো? কোনো সমস্যা? আমার বিছানা আমার সোফা আমি যেখানে খুশি ঘুমুতে পারি। তাছাড়া আমার সোফাতে শুলে ঘাড় ব্যথা করে।
_ও আচ্ছা।
_ আমি এখানে ঘুমালে কোনো প্রবলেম হবে নাকি?
_ না কোনো প্রবলেম নেয়। তাছাড়া ভালোই হয়েছে।

আরাব অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে বললো_কেনো?
_আজকে আমি ভুতের মুভি দেখেছি, তাই ভয় লাগছিলো। ছোট বেলায় যখন ভুতের মুভি দেখে অনেক ভয় লাগতো। আর এই জন্য যখন রাতে ঘুমাতে পারতাম না। তখন মা আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে রাখতো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো আমি ঘুমিয়ে যেতাম।

যখন বাবা মারা গেলো তখনো সব ঠিক ঠাক ছিলো। কিন্তু মার জীবনে অন্য একজনের আসার পর থেকেই সব আস্তে আস্তে পাল্টে যেতে লাগলো। আমার তখন আরেক জনের মা হয়ে যায়৷ তখন আমার মা আর আমার থাকে না। এখন ভুতের ভয়ে ঘুম না আসলে সারা রাত জেগেই কাটাতে হয়৷

আরাবের কষ্ট লাগছে তৃষার কথা শুনে। কিন্তু সে কষ্টটাকে বুঝতে না দিয়ে বলে_ ভয় যখন লাগে তখন ভুতের মুভি কেনো দেখো?

_ভালো লাগে তাই।
_আর কি কি ভালো লাগে?
_তোমার আমার জন্য ঘৃণা ছাড়া সব কিছুই ভালো লাগে। মার ভাগ সহ্য করার ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দিয়েছে। কিন্তু তোমাকে আমি কারো সাথে শিয়ার করতে পারবো না। তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখলে মরণ যন্ত্রণাও কম মনে হয়।

কথাটা বলার সময় তৃষার চোখ পানিতে ঝলঝল করছে। আরাব তৃষার চোখের দিকে তাকিয়ে তার মায়ায় পড়ে যায়। মেয়েটার জন্য হঠাৎ কষ্ট অনুভব হচ্ছে। তার চোখে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।

আরাব নিজেকে থামাতে পারে না তৃষার কাছে যাওয়া থেকে। আরাব নিজের বালিশ থেকে তৃষার বালিশে গিয়ে তৃষাকে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে ফেলে। তৃষার প্রতি তার গভীর টান অনুভব করে। একটু পর আরাব তৃষার দিকে মুখ এনে তার চোখের দিকে তাকিয়ে তার কপালে চুমু দেয়। তৃষা নিজেকে সামলাতে না পেরে আরাবের ঠোঁটে কিস করতে থাকে। আবার ও নিজেকে কনট্রোলে রাখতে পারে না। গভীর ভাবে ভালোবাসতে থাকে তৃষাকে।
______
সকাল সকাল ফারহান রিমানদের বাসায় আসতেই রিমান তাকে তার রুমে নিয়ে যায়। ফারহান বিছানায় বসে বলে_ এতো তাড়াহুড়ো করে নিয়ে এসেছিস কেনো আমাকে? কিছু বলবি?

_সেই জন্যই তো নিয়ে এসেছি।
_ কি বলবি তাড়াতাড়ি বল।
_ কি শুরু করেছিস এসব?
_কি করেছি?
_তুই রিমিকে বিয়ে করার জন্য না কেনো করলি না?
_ না করার তো কোনো কারন নেয়।
_আছে
_কি শুনি?
_তুই রিমিকে ভালোবাসিস না আর রিমিও তোকে ভালোবাসে না।

ফারহান উঠে বলে_আমি রিমিকে ভালোবাসি না কে বললো তোকে?
_ আমি জানি তুই এসব কেনো করছিস।
_কেনো করছি?
_অফফ ফারহান এসব কিছুর মধ্যে আমার বোনকে জরাবি না। ওর জীবন নষ্ট হয়ে যাক আমি কোনো দিন সহ্য করবো না। যাকে ভালোবাসিস তাকেই বিয়ে কর। আমি তোর সাথে সব সময় আছি।

_তো থাক আমার সাথে। আমি তাকেই বিয়ে করছি যাকে আমি ভালোবাসি।
_এটা কেও বিশ্বাস করবে যে তুই রিমিকে ভালোবাসিস। সব সময় তো ঝগড়া করেই কাটিয়ে দিয়েছিস। ভালোবাসার সময় কোথায় পেলি?

_ চোখের আড়ালে ভালোবেসেছি তোর বোনকে। আর ভালোবাসতে কোনো সময় লাগে না।
_সব কিছু বাদ দিলাম। কিন্তু আমার বোন তো তোকে ভালোবাসে না।৷
_ আমি তোর বোনের উপর এমন জাদু করবো যে আমাকে ভালো না বেসে থাকতেই পারবে না। এতো খেয়াল রাখবো আর এতো ভালোবাসবো যে, একদিন সে আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবে।

রিমান হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পরে। ফারহান রিমানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে_তুই কি আমাকে তোর বোনের যোগ্য বলে মনে করিস না। নাকি আমাকে তোর বোনের জীবন সঙ্গী হিসাবে পছন্দ না তোর। কোনো ভাবে যদি আমাকে তোর বোনের যোগ্য না মনে হয়, তাহলে আমাকে বল। তুই রাজি না থাকলে আমি এই বিয়ে করবো না।

রিমান উঠে ফারহানের কাঁধ দুই হাত দিয়ে ধরে বলে_ অবশ্যই তুই আমার বোনের যোগ্য। রিমির জন্য তোর থেকে ভালো ছেলে সারা জীবন খুঁজেও পাওয়া যাবে না। আর আমার বোন তোদের মতো ভালো একটা ফেমেলীতে যাবে এটাতো সবচেয়ে খুশির কথা। তাহলে আমি রাজি হবো না কেনো? কিন্তু __

আর কিছু বলার আগেই ফারহান রিমানে জরিয়ে ধরে বলে_বেস তাহলেই তো হয়ে গেলো। আর কোনো কিন্তু পরান্তু নেয়৷ এখন তোর বোন আর তোর বন্ধুর বিয়ের আয়জন কর আমি রিমিকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসছি। সাথে আমিও যাবো।

_দিয়ে কোথায় যাবি?
_কোথাও না, আমিও ক্লাস করবো। কিছু দিন পরেই ফাইনাল।
_আমিও যাবো চল।
_তোর তো নিজের গাড়ি আছে। সেটা দিয়ে আয়।
_ না আমি তোর সাথেই যাবো৷

বলে ফারহানের আগে রিমান গিয়ে ফারহানের গাড়িতে বসে। রিমি পিছনে বসে। ফারহান রিমানের দিকে রাগী ভাবে বার বার তাকাচ্ছে। রিমান সামনের দিকে তাকিয়ে বলে_আমাকে দেখার এতো কিছু নেয়। সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালা।

ভার্সিটির সামনে এসে নামে। ওরা নামতেই দেখে মাহুয়া একজনের বাইকের পিছনে বসে আসছে। বাইক থামতেই তিনজন গিয়ে সামনে হাজির। মাহুয়া থামতেই রিমান জিজ্ঞেস করে_কে এটা? এর সাথে তুমি ঘুরে বেড়াচ্ছো, তোমার বাবা জানে?

বাইক থেকে নেমে ছেলেটি বলে_ মাহুয়ার বাবাই আমাকে তার সাথে পাঠিয়েছে।

রিমান_কিহহহ আংকেল একটা ছেলের সাথে তোমাকে ঘুরার জন্য পারমিশন দিয়ে দিলো?

মাহুয়া_ঘুরে কোথায় বেড়াচ্ছি? ভার্সিটিতে দিয়ে পৌঁছে দেওয়া আর ঘুরা কি এক?

রিমান_ভার্সিটিতে আসতে প্রবলেম হলে আমাকে বলতে, আমি নিয়ে আসতাম।

_ছোট ছোট কাজের জন্য এখন আর আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না।

বাইক ওয়ালা ছেলেরি হেলমেট খুলতে খুলতে বলে_ এখন আমি এসেগেছি তাই আর আপনাকে বিরক্ত হতে হবে না।

হেলমেট খুলতেই ছেলেটার চেহেরা দেখেই রিমান আর ফারহান অন্য দিকে ঘুরে যায়। রিমি দুজনকে জিজ্ঞেস করে_কি হলো দুজন কি মুখ লুকাচ্ছে নাকি?

ফারহান _আমরা কি চোর নাকি যে মুখ লুকাবো?
মাহুয়া_তাহলে এদিকে ঘুরে তাকান।

রিমান_না আজকে আমার মুখে সুনু পাউডার কিছু লাগায়নি তাই অচিনা মানুষের সামনে আমি এভাবে আসতে পারবো না।

রিমি_কিহহহ, তুই এইসব কবে থেকে মাখিস? আর আমাকে বলিস আমি পাউডার সুন্দরী?

রিমান_তুই পাউডার না ময়দা সুন্দরী।
রিমি _চুপ কর। আর ফারহান আপনিও স্নো পাউডার লাগানো লাগবে নাকি?

ফারহান _দুর আমি এসব লাগাই না।
মাহুয়া_তাহলে ঐদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছেন কেনো?
ফারহান _আমার বন্ধু মুখ দেখাবে না তাই আমিও দেখাবো না।

ছেলেটি হাসতে হাসতে বলে_আমার সামনে মেকাপ না করেও আসতে পারেন। কারন আমাকে তো আগেই দেখেছেন।

বলে ছেলেরি তাদের সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে বলে_ হাই, আমি শান।

ফারহান ছোট করে মিথ্যা হাসি দিয়ে বলে_আমি ফারহান।
শান রিমানের সাথেও হাত মিলায়। রিমান হেঁসে বলে_ আমি রিমান। আপনি মাহুয়ার চাচা বা মামাতো ভাই হবেন তাই না।

এ কথা শুনে শান তারাতাড়ি হাত ছাড়িয়ে বলে_ আমি ওর কোনো ভাই হয় না। তবে ফিউচারে হাসবেন্ড হতে পারি।

রিমান _মানেহহহ?
শান _ মানে আমি আংকেল এর বন্ধুর ছেলে একটা কাছে এসেছি। সাথে বিয়ের কাজেও এসেছি।
রিমান _মানে কেমন কাজে?
শান_এই তো মাহুয়াকে বিয়েতে রাজি করানোর কাজে।

রিমি _বাহহহ দুই বান্ধবীর বিয়ে একসাথে ঠিক হচ্ছে। এই না হলে ভাগ্য।

রিমান _ এতো খুশি হওয়ার কিছু নেয় তো। এখনো বিয়ে ঠিক হয়নি। মাহুয়া রাজি হলে তো বিয়ে হবে।

মাহুয়া _আমি রাজি।

মাহুয়া এটা বলে সোজা ভার্সিটির ভিতরে যেতে থাকে। শান খুশিতে লাফিয়ে রিমানকে জিজ্ঞেস করে বলে_মাহুয়া কি মাত্র বললো যে, সে রাজি?

রিমান_ না তুমি ভুল শুনেছো। মাহুয়া বললো সে জীবনেও এই বিয়ে করবে না। ভয়রা কানের ডক্টর দেখাও।

বলে রিমান চলে যায়। শান দাঁড়িয়ে রিমানের যাওয়া দেখছে আর বলছে _ রিমান নামক ছেলেটার কি মাথায় সমস্যা আছে নাকি?

রিমি একটা কাশি দিয়ে বলে_সে কিন্তু আমার আপন ভাই,সো সাবধান।

বলে রিমিও চলে যায়। শান দাঁড়িয়ে আবারো বলে_ভাই বোন দুজনের মধ্যেই প্রবলেম আছে মনে হয়।

ফারহান শানের কাঁধে হাত দিয়ে বলে _ এটা আমার হবু বউ। আর রিমান আমার বেস্ট ফ্রেন্ড । কথা বললে আগে পিছনে দেখে তারপর বলবে। না হলে এরজন্য একদিন মারও খেতে পারো কোনো ঠিক নেয়।
___
তৃষা ঘুম থেকে উঠে আরাবের দিকে তাকিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে গোসল করে আসে। আয়নায় তাকিয়ে নিজে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে। তখনি তৃষার ফোন বেজে উঠে। তৃষা ফোন নিয়ে বাহিরে যায়৷

ফোনের উপর পাশ থেকে বলে_হ্যালো মেম আপনার কাজ হয়ে গেছে। সব কিছু ব্যবস্থা সুন্দর ভাবে হয়ে গেছে।

তৃষা আস্তে আস্তে করে বলে _ কেও কিছু জানে না তো?
_না মেম কেও কিছু জানতে পারে নাই আর না পারবে।
_ঠিক আছে, আজকে রাতে আমি ফোন দেওয়ার পর আমার জিনিস আমার কাছে পৌঁছে দিবে ওকে।
_ ঠিক আছে মেম, আপনি চিন্তা করবেন না।

তৃষা ফোন রেখে সামনে তাকিয়ে দেখে আরাব দাঁড়িয়ে আছে। তৃষা ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে সোজা তাকিয়ে আছে৷ আরাব একটু কাছে এসে বলে_কার সাথে কথা বলছিলে?
তৃষা একটু ভয়ে শুধু তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না। আরাব আবারো জিজ্ঞেস করে_বলো কার সাথে কথা বলছিলে?

চলবে______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে