চোখের আড়ালে পর্ব-০৬

0
797

#চোখের আড়ালে
#Maishara_jahan
Part………6

রিমান কিছু বলার আগেই কল কেটে দেয়। রিমান রাগে ফোন ফেলে দিতে নিয়ে আবার পকেটে রেখে দিয়ে বলে_অনেক গুলো টাকা দিয়ে কিনেছে। অন্য কিছু ভাঙবো কিন্তু পরে।

রিমান বাসায় যায় গিয়ে দেখে, রিমি সোফার উপরে পা তুলে বসে বসে মজার সাথে বোয়াম থেকে বের করে করে নারিকেল এর লাড্ডু খাচ্ছে। রিমান রিমির দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে তাকিয়ে,উপরের সিরির দিকে যাচ্ছে। রিমি ও সন্দেহর নজরে রিমানের দিকে তাকিয়ে আছে।

রিমান সিরির কাছে গিয়ে, সিরির উপরে না উঠে হঠাৎ করে রিমির দিকে জোরে দৌড় দেয়। রিমি ভয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আর রিমান দৌড়ে রিমির হাত থেকে লাড্ডুর বোয়ামটা নিয়ে দৌড়ে উপরে সোজা তার রুমে চলে যায়।

রিমি এখনো আতংকে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। সে এখনো বুঝে উঠতে পারছে না, আসলে হয়েছেটা কি। ফারহান এসে তাকে এভাবে সোফার উপরে হা করে উপরের দিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে_কিরে এভাবে মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

ফারহানের কথায় রিমির হুশ ফিরে। রিমি সব বুঝতে পেরে রাগে সোফা থেকে লাফ দিয়ে নেমে আআআ করে একটা বিকট চিৎকার করে। ফারহান একটু ভয় পেয়ে পিছিয়ে পড়ে। মা বাবা সবাই চলে আসে।কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রিমি চিৎকার করে বলে_রিমানের বাচ্চাআআআ, তুই নিচে আয়, তোকে আমি ইঁদুরের বিষ খাওয়াবো।

রিমানের নাম শুনে সবাই চলে যায়, আর বলতে থাকে_এই দুই ভাই বোন বাড়িটাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না৷ সব সময় এটা না ওটা নিয়ে লেগেই থাকে৷

ফারহান ভয়ে একটু কাছে গিয়ে বলে_ কি হয়েছে?

রিমি আবারো জোরে চিৎকার করে বলে _ঐ রিমানের বাচ্চাকে আমি মেরে ফেলবো।

রিমান বের হয়ে এসে, উপরের বারান্দা থেকে নিচে তাকিয়ে লাড্ডু খেতে খেতে বলে_ বার বার আমার বাচ্চা কে কেনো ডাকছিস? আমি নিজেই তো একটা বাচ্চা।

_ওওলে আমার বাচ্চারে, ফিটার এনে দিবো খাবি।
_ না থাক, ঐটার থেকে একটু বড়ো।
_আমি তোকে মেরে ফেলবো।

বলে যেতে নেয় আর নিচে পড়ে যায়। ফারহান এসে ধরে। সাথে রিমান ও দৌড়ে নিচে আসে। দুইজনের চেহেরায় চিন্তার ছাপ। আমি বসে লাফ দিয়ে রিমান ভাইয়ার চুল ধরে টানতে থাকি। রিমান ভাইয়া কান্না স্বরে বলে_ শাঁকচুন্নি আমার চুল ছাড়। হাজারো মেয়ের ক্রাস আমার চুল।

ফারহান কিছু বলছে না। শুধু ওদের কাহিনি দেখছে। রাগ করবে নাকি বিরক্ত হবে নাকি ইনজয় করবে সেটাই বুঝছে না। একটু পর মা রান্না ঘর থেকে চিৎকার করে বলে_আমি আসলে কিন্তু খুন্তি দিয়ে দুজনকে পিটাবো।

এটা শুনে রিমি রিমানকে ছেড়ে দেয়। রিমান একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে, নিজের চুলে হাত বুলাতে থাকে। আর বলতে থাকে_ আমার মাথার পুরো নাট বলটু ডিলে করে ফেলেছে। ব্যাথা করছে রাক্ষসী কোথাকার।

ফারহান শান্ত গলায় বলে_এখন আমার কথা শুন তোরা।

দুজনে ধমক দিয়ে বলে_কি

ফারহান ধমক শুনে কিছু ক্ষন চুপ করে তাকিয়ে থাকার পর,শান্ত গলায় বলে_আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বললে কিন্তু দুজনকেই মেরে ঝুলিয়ে রাখবো সো চুপচাপ আমার কথা শুন।

দুজনে শান্ত হয়ে বলে_ঠিক আছে, শুনছি।

ফারহান হা করে দাঁড়িয়ে আছে। রিমান বলে_ কি হলো বল।

ফারহান কনফিউজড হয়ে বলে _কি যেনো বলতে এসেছিলাম ভুলেই তো গেলাম। কি যেনো বলতে এসেছিলাম। মনে পড়ছে না কেনো?

রিমি আর রিমান ফারহানকে পাত্তা না দিয়ে চলে যায়৷ ফারহান মাথা চুলকাতে চুলকাতে চলে যায়।

অনেক রাত করে আরাব বাড়ি ফিরে। এসে দেখে তৃষা ঘুটি সুটি মেরে শুয়ে আছে৷ দেখে মনেই হবে না যে বড় কেও শুয়ে আছে। দেখলে মনে হবে বাচ্চা শুয়ে আছে। কম্বল এক পাশে পড়ে আছে। আমি কম্বলটা নিয়ে তৃষার গায়ে দিয়ে দিয়।

কালকে কখন যে সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়ে যায় বলতেই পারিনি। সন্ধ্যায় আরাব এসে তৃষাকে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলে _যাও গিয়ে এটা পড়ে রেডি হয়ে যাও।

তৃষা একটু সংকোচ বোধ করে প্যাকেটটা নিয়ে খুলে দেখে, একটা কালো জর্জেট সুন্দর পাথরের কাজ করা শাড়ি। তৃষা শাড়িটা হাতে নিয়ে বলে_আমি শাড়ি পড়তে পারি না।

আরাব ক্লান্তির নিশ্বাস ফেলে বলে _ইউটুভ থেকে সার্চ দিয়ে দেখো ঠিক পেরে যাবে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে যাবে কারন একটু পরেই গেস্ট এসে যাবে।

_ঠিক আছে চেষ্টা করবো।

বেশ অনেক ক্ষন পরে আরাব বিরক্তি নিয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখে তৃষা সুন্দর করে সেজেছে। কিন্তু শাড়ি অগোছালো। না কুঁচি ঠিক করে হয়েছে না আঁচল ঠিক আছে। আরাব বিরক্তি নিয়ে বলে_ এভাবে কেও শাড়ি পড়ে?

_কেনো হয়নি?
_না হয়নি, একদম হয়নি। মনে হচ্ছে শাড়ি শুধু প্যাচিয়ে রেখেছো।এভাবে নিচে গেলে না তোমার মান সম্মান থাকবে না আমার।
_তো এখন কি করবো?
_সেটাই তো ভাবছি। মাহুয়া রিমি, মামনি কেও তো এখনো আসেনি।
_তাহলে এভাবেই চলে যায়?এতো টাও খারাপ লাগছে না৷
_একদম না। নিজেকে একবার দেখেছো। শাড়ি তল প্যাচিয়েছো তার উপর আবার কোমর দেখা যায়৷ সামনে দিয়ে আঁচল ঠিক নেয়।
_তাহলে কি করবো?

দুজনে মিলে ট্রাই করি হয়ে যাবে। সব খুলো।
তৃষা চমকে গিয়ে বলে _হ্যাঁ কিহহহ?

আরাব তাড়াহুড়ো করে বলে_ না মানে, শাড়িটা হালকা খুলো আমি ঠিক করে দিচ্ছি।

আমি একটু নার্ভাস হয়ে বললাম _ হুমম কিন্তু __

আর কিছু বলার আগেই আরাব সময় নেয় বলে আমার শাড়ি একটানে খুলে ফেলে। আমি পুরো ঘুরে আরাবের বুকে পড়ি। এই শাড়ি আমি কিভাবে পড়েছিলাম যে এক টানে খুলে গেলো?

আমার মাথা আরাবের বুকে। আরাবের হার্ট এতো ফাস্ট কেন?আমার জন্য? না হতেই পারে না। আমি সরে যায়। আরাব অন্য দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলো। আরাব শাড়িটা নিয়ে আমাকে পড়াতে শুরু করে। দেখেই মনে হচ্ছে আরাব অনেক চেষ্টা করে নিজের হাতে স্পর্শ জেনো আমার পেটে কোমরে না লাগে। কিন্তু বার বার লাগছে। আমার মনে অদ্ভুত একটা ফিলিংস হচ্ছে। কিন্তু আরাবের ও কি তাই হচ্ছে? দেখে কেনো মনে হচ্ছে না? হয়তো ওর কোনো ফিলিংস হচ্ছে না তাই।

আমরা দুজনে মিলে কুঁচি করছি। ও কুঁচির এক সাইড ধরেছে আমি আরেক সাইড। সুন্দর করে কুঁচি করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও বোকার মতো তাকিয়ে আছি। আরাব আমার দিকে তাকিয়ে বলে_দাঁড়িয়ে আছো কেনো? কুঁচি গুলো গুঁজে নাও।

আমার মাথায় কিছুই জেনো ডুকছে না। বোকার মতো বলি_কোথায় গুঁজবো।

আরাব আমার দিকে তাকিয়ে, আমার কাছে আসে। শ্বাস ভাড়ি হয়ে এসেছে। আরাব আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আর এক আঙুল দিয়ে পয়েন্ট করে আমার তলপেটে টাচ করে দেখায়। আমি তাড়াতাড়ি অন্য দিকে ফিরে কুঁচি গুলো গুঁজে নিয়। আরাব নিচে বসে কুঁচি গুলো ঠিক করে দিচ্ছে। আমার আগের কোনো কথা মনে নেয়। এর পরে কি হবে সেটাও মাথায় নেয়। শুধু এই মুহুর্ত মনে আছে।

আরাব উঠে আমার আঁচল ঠিক করে ভালো ভাবে পিন লাগিয়ে দিচ্ছে। অনেক সাবধানের সাথে পিন লাগাচ্ছে। আরাব আমার ঘারের অনেক কাছে। তার ছাড়া প্রতিটি নিশ্বাস আমার ঘার ছুঁয়ে বুকে গিয়ে লাগছে। তারপর আরাব আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। কি অদ্ভুত, আরাব ঘামছে। তার কি গরম লাগছে? লাগার তো কথা না, এসি চালানো। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। তাও তার কপালে বিন্দু বিন্দু গাম জমেছে। আরাব নজর সরাতে চেয়েও পারে না। সে তৃষার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে_এবার হয়েছে, চুল গুলো ঠিক করে নিচে আসো।

বলে আরাব বের হয়ে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দেয়। কয়েকটা ডোগ গিলে, তার বুকে হাত রেখে বলে_এতো ফাস্ট হার্ট বিড হওয়ার কিছু তো হয়নি।

এই সময় রিমান এসে বলে_ কি হয়েছে এবাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

আরাব স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়ে তার এক হাত পকেটে ডুকিয়ে বলে_কোথায়,কিছুই তো হয়নি।

_তুই ঘামছিস কেনো।

আরাব পকেট থেকে একটা রুমান বের করে মুছতে মুছতে বলে এমনি। তখনি তৃষা বের হয়ে আসে। রিমান তৃষাকে দেখে বলে_ ভাবী তুমি না পারতে পারো না,দেখে তো মনে হচ্ছে না। নাকি মায়ের সামনে মিথ্যা বলেছো কোনটা?

আমি একটু হেঁসে বললাম_ আমি তো পড়তেই পারি না। আরাব পড়িয়ে দিয়েছে।

রিমান আরাবের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে_ওও এবার বুঝলাম ঠান্ডা রাতে তোর ঘামার আসল কারন।

_এতে ঘামের কি সম্পর্ক।
_গভীর সম্পর্ক। তুই জানতে চাইলে আমার সাথে একদিন পার্সোনাল ভাবে দেখা করবি। তোর এই বিষয়ে একটা ক্লাস নিয়ে নিবো। চিন্তা করিস না, এই ক্লাস তোর জন্য একদম ফ্রি। থ্যাংস বলার কোনো দরকার নেয়।

আরাব কোনো জবাব না দিয়ে তৃষার হাত ধরে নিচে নিয়ে যেতে থাকে। রিমান হতাশ একটা ভাব নিয়ে বলে _আজ কাল কারো ভালো করতে নেয়। সবাইকে বাঁশের উপরে রাখলেই ঠিক থাকে। আজব দুনিয়ে।

রিমান ও নিচে যায়। ফারহান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাই তুলছে। রিমান ও এসে হাজির। তখনি রিমি আর মাহুয়া ডুকে। দুজনেই জর্জেট গর্জিয়াছ সাদা শাড়ি পড়ে। চুল ছাড়া হালকা সাজ, সাদা পার্স, সাদা জুতো পার্ফেট।

তৃষা আর আরাব আসে। তৃষা দুজনকে দেখে বলে_ ওয়াও দুজনকে অনেক সুন্দর লাগছে। জমজ বোনের মতো।

মাহুয়া_আমরা কোনো অনুষ্ঠানে গেলে একি রকম ড্রেস পড়ে যায়। অবশ্য কালো শাড়িতে তোমাকেও কিন্তু কম লাগছে না।

রিমি দুষ্টুমি করে বলে_ ওওহহহ ভাবীর সাথে মেচ করে আরাব ভাইয়াও তো কালো কোর্ট প্যান্ট পড়েছে। মেচিং মেচিং হুমম।

রিমান এসে বলে_তোদের তিন জনকে দেখে একটা গান মনে পড়ে গেলো।

মাহুয়া_কি গান?
রিমি_থাক জিজ্ঞেস করিস না, শুনার কোনো ইচ্ছে নেয়।
মাহুয়া_আহহ চুপ কর না, কি গান সিনিয়র?

রিমান গলাটা একটু ঝেড়ে বলে_সাদা সাদা, কালা কালা, রং জমেছে সাদা কালা।

রিমি_চুপ কর। বলেছিলাম না মাহু ওর গান না শুনতে। ওর মুখ দিয়ে জীবনে ভালো কিছু বের হবে না।

ফারহান এসে বলে_আমার মুখ দিয়ে কিন্তু শুধু রোমান্টিক গান বের হয়। চাইলে শুনাতে পারি?

রিমি _নো থ্যাংস। মাহু চল এখান থেকে।
মাহুয়া যাওয়ার আগে রিমানকে বলে_সিনিয়র আপনার মুখে এইসব গান না রোমান্টিক গান বেশি মানায়।

রিমি মাহুয়াকে টেনে নিয়ে যায়। রিমি দাঁড়িয়ে কথা বলছে ফারহান আড়াল থেকে দেখছে। একটু পর জিসান আসে। এসে সে মাহুয়ার কাছে গিয়ে বলে_ আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।

রিমি দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে_ আর আমাকে?

জিসান একটু নার্ভাস হয়ে বলে_আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে।

রিমি_আমাকে আপনি আর মাহুয়াকে তুমি, ভালোই তো হুমম৷ আচ্ছা আপনারা কথা বলেন আমি আসছি।

রিমান দূর থেকে দেখে বলে_ ফারহান ওরে কে ইনভাইট করলো। আমি তো করিনি।

ফারহান_জিসান আমাদের পরিচিত তাই হয়তো আরাব নিজেই করেছে।

_ওর সাহস কি করে হলো জিসানকে ইনভাইট করার। কারন এর দায়িত্বে তো আমি ছিলাম।

_জিসান আসাতে তোর কেনো প্রবলেম হচ্ছে?
_কোথায় প্রবলেম, কিসের প্রবলেম?

রিমান মাহুয়ার কাছে যায়। গিয়ে বলে_ কি এতো কথা হচ্ছে এখানে।
মাহুয়া হাসি দিয়ে বলে_ঐটাই যেটা আপনার সাথে হয় না।

রিমান আর কিছু বলার আগেই মাহুয়া বলে_ইশশ কতো ভালো একটা কথা বলছিলাম ডিস্টার্ব করলেন কেনো।

বলে জিসানের হাত ধরে অন্য দিকে নিয়ে যায়। রিমান রাগে ফারহানের কাছে যায়। ওয়েটার ড্রিংস নিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে একটা নিয়ে রিমান এক দমে গিলে ফেলে। পরে ওয়েক ওয়েক করতে করতে বলে_কি এইটা?ছিঃ

ফারহান_গাধা তুই ভুলে ওয়াইন খেয়ে ফেলেছিস।
_কিহহহ,, এটা এই পার্টিতে কে রেখেছে।
_বিদেশ থেকেও বিজনেস পার্টনাররা আসছে তাদের জন্যই।

রিমান ফারহানকে ধরে বলে_ফারহান আমার দুনিয়া ঘুরছে,পার্টির সবাই ঘুড়ছে, এবার তো তুই ও ঘুড়ছিস। আর এখন আমিও ঘুরছি।

বলেই মাটিতে পড়ে যেতে নেয়। ফারহান ধরে বলে_একটু বেশি করছিস। এক গ্লাসে এতোটাও নেশা হয় না।

রিমান উঠে বলে _তাই নাকি।

তখন রিমান আরেকটা গ্লাস নিয়ে খেয়ে ফেলে আর বলে_এবার আমি ঠিক আছি।

ফারহান _মাথা ঘুরছে না?
_না, মাথা তো ঘুরছে না, তবে সবাইকে দুটো দুটো দেখতে পারছি। এই ফারহান তোকেও দুটো দেখতে পারছি। তোকে বিয়ে দিলে তোর বউ চিনবে কিভাবে কোনটা তার আসল হাসবেন্ড।

ফারহান_ হে আল্লাহ আধ পাগল রিমান কি কম ছিলো যে পুরো পাগল বানিয়ে দিলে। এখন কি করে সামলাবো।

রিমান _আমাকে সামলানোর কিছু নেয়। আমি একদম ঠিক আছি। শুধু তুই দুলিস না।

_ আমি দুলছি না৷ তুই দুলছিস।
_দুল দুল দোলনি, রাঙা মাথায় চিরুনী। পরে আর মনে নেয়।

এটা বলে রিমান মাহুয়ার কাছে গিয়ে জিসানকে আঙুল দেখিয়ে বলে _ মিঃ জিসান, এই মেয়ে থেকে দূরে থাকবেন ওকে৷ না হলে তোকে ওকে পকে করে দিবো।

মাহুয়া_কেনো দূরে থাকবে?
_কারন আমি বলেছি তাই।
_আপনি বললেই হলো।
_কি হলো?কার কি হলো? ছেলে না মেয়ে হলো?

জিসান একটু রাগে বলে_রিমান ভাইয়া আপনি তো ড্রাং

রিমান ধমক দিয়ে বলে_সেট আপ, ড্রাং মানে। আমার চোদ্দ গুষ্টি কোনো দিন ড্রিংক করেনি, আমার বাবা কোনো দিন করে নি। তাহলে আমি কিভাবে করবো? ইউ ইস্টুপিট।

মাহুয়া _রিমান আপনি সত্যি ড্রাং

রিমান_ও আচ্ছা,, আমার চোদ্দ গুষ্টি করেনি তো কি হয়েছে? আমার বাবা করেনি তো কি হয়েছে? তার মানে এটা না যে আমিও করবো না। সব কিছুর একটা শুরু থাকে। এটার শুরু আমার বংসে আমি করেদিলাম। যদিও ভুলে খেয়ে ফেলেছি তো কি হয়েছে।

মাহুয়া রিমানের হাত ধরে এক সাইডে নিয়ে আসে। রিমান তার টাই টেনে অর্ধেক নামিয়ে ফেলেছে। মাহুয়া তাকে উপরে একটা রুমে নিয়ে যায়। রিমান কথা বলেই যাচ্ছে।

মাহুয়া রিমানকে নিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে, রিমানের নাকে মুখে, মাথায় পানি দিয়ে বের হয়ে আসে।

আমি একটা তোয়ালে নিয়ে বলি_এবার একটু ভালো লাগছে তো।

রিমান অদ্ভুত ভাবে হাসতে হাসতে বলে_মাহু যানো, তোমাকে না পরীর মতো লাগছে। একটা না দুটো পরী।

আমি একটু ব্রু কুঁচকে বললাম_ আরেকটা কে?

এই যে তোমার পাশেই আছে। দুটো মাহু।

আমি ভাবলাম এই সুযোগ সত্যি কথা বের করার। আমি রিমানের মাথা মুছতে মুছতে বললাম_ আমাকে সুন্দর লাগলেই বা কি? আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না।

_না, বাসি তো।

আমি একটু আটকে অভাক হয়ে বললাম_সত্যি ।

রিমান আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো সত্যি তোমার কছম।

_আচ্ছা তাই না-কি। আমাকে দেখলেই তো দূরে দূরে চলে যাও। বিশ্বাস করবো কিভাবে?
_দূরে চলে যায়।
আমি মাথা মুছতে মুছতে হুম বললাম।

তখন রিমান আমাকে তার দুই বাহু দিয়ে শক্ত করে ধরে বলে_এই নাও কাছে চলে এসেছি।

আমি বরফের মতো জমে গেছি। রিমানের দিকে শুধু বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। রিমানও নেশা নেশা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ দেখে আমার এক ধরনের নেশা হয়ে যাচ্ছে,প্রেম নেশা।

হঠাৎ করেই আমার দুই ঠোঁট রিমান তার দখলে নিয়ে নেয়। আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে এসেছে। কিছু বুঝার বা বলার উপায় নেয়৷ রিমান গভীর ভাবে আমাকে কিস করছে। আমিও চোখ বন্ধ করে দেয়। একটু পর হঠাৎ করেই একটা শব্দ পেয়ে আমি রিমানকে ধাক্কা মারি। সে বিছানায় পরে সেখানেই শুয়ে থাকে। মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে এমন এক ভাব।

আমি তাড়াতাড়ি রুম ত্যাগ করি। নিচে গিয়ে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে থাকি৷ কিছু ক্ষন আগে কি হলো কে জানে।

একটু পর রিমানের ঘুম ভাঙে কান্নার আওয়াজে। সে হেলে দুলে রুম থেকে বের হয়ে দেখে, তৃষা এক কোনায় দাঁড়িয়ে কান্না করছে। ভেবেছে নিচে গিয়ে আরাবকে বলবে৷ নিচে গিয়ে দেখে আরাব মাহির সাথে ডান্স করছে। এটা দেখে যে কোনো স্ত্রী কান্না করবে। তখনি রিমানের একটা আইডিয়া আসে।

রিমান হাসতে হাসতে বলে_আমার দুই প্যাক খেয়েই এই অবস্থা। মাহুকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারছি না। তাহলে আরাব আর তৃষার খাবারে এটা মিশিয়ে দিলে কি হবে। ওদের তো কোনো বাঁধাও নেয়। স্বামী স্ত্রী বলে কথা৷

চলবে_______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে