চোখের আড়ালে পর্ব-০৪

0
724

#চোখের আড়ালে
#Maishara_Jahan
Part……….4

কিছু ক্ষন পর নিচে গেলে দেখে সবাই যাওয়ার জন্য রেডি। রিমানের মা রিমানকে বলে মাহুয়াকে বাসায় দিয়ে আসতে। রিমান মাহুয়ার দিকে তাকাতেই অদ্ভুত একটা হাসি দেয়। রিমান হাসি দেখেই নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে।

রিমান_ মা মাহুয়াকে ফারহান দিয়ে আসবে। নিয়ে যখন এসেছে তখন দিয়েও আসতে পারবে।

ফারহান _আমি তৃষাকে দিয়ে আসতে যাবো।

তৃষা অভাক হয়ে বলে _আমাকে কেনো, আরাব আছে তো।

আরাব_আমি মাহিকে তার বাসায় দিয়ে আসতে যাবো।

তৃষা _সেটা তো ফারহান ও পারবে।

মাহি_ না ও আমার সাথে যাবে। আরাবের সাথে আমার কিছু কাজ আছে।

তৃষা ব্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো _ কি কাজ।

মাহি আরাবের বাহু আঁকড়ে ধরে বললো _ পার্সোনাল কাজ।

তৃষা আর কিছু বলার আগেই আরাব মাহিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আমি শুধু তাকিয়ে ওদের যাওয়া দেখি। আমিও ফারহানের গাড়িতে উঠে বসি। ফারহান আমাকে কিছু বলতে নিয়েও বললো না, মনে হলো।চুপচাপ বসে আরাবের পরিবর্তনের কারন খুঁজছি।
,,,,,
রিমান গাড়ি চালাচ্ছে। আমি কিছু ক্ষন বাহিরে তাকিয়ে থেকে রিমানকে জিজ্ঞেস করি_আচ্ছা সিনিয়র তৃষা ভাবি আর আরাব ভাইয়ার মধ্যে কি কোনো সমস্যা হয়েছে।

রিমান একটু চুপ থেকে বললো_ না তো, কেনো।

_না মানে, আরাব ভাইয়াকে মাহির কাছে কখনো দেখি নি। আজ ভাবির মনটাই ভেঙে দিলো। আর মন ভাঙার কষ্ট অনেক প্রখর। মন ভাঙার আওয়াজ না হলে প্রচুর ব্যাথা করে।

_আরাব আর তৃষার মধ্যে কিছুই হয়নি। মাহিকে শুধু বাসায় পৌঁছে দিতে গিয়েছে। আর তাছাড়া তুমি কষ্টের কি বুঝো। এমন ভাবে বলছো যেনো কেও অনেক বার তোমার মন ভেঙেছে।

আমি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললাম_হুম ভেঙেছে তো। তাও এক বার না, অনেক বার।

রিমান গাড়ি থামিয়ে বললো_কে ভেঙেছে শুধু নামটা বলো।

আমি রিমানের দিকে তাকিয়ে বললাম_ কি করবেন নাম যেনে।

_তাকে তার প্রাপ্য শাস্তি দিবো। সাহস কি করে হয় তোমাকে কষ্ট দেওয়ার।

_আচ্ছা তাহলে দেন নিজেকে শাস্তি।
_মানে৷
_মানে আপনি ভেঙেছেন আমার মন, তাও এক বার না অনেক বার।
_কিভাবে।

_ আপনি জানেন আপনাকে আমি কতোটা পছন্দ করি। তাও আপনি আমার সামনে কতো মেয়ের সাথে ফ্লাট করেন। তখন আমার কষ্ট হয়। আপনি যখন আমাকে সামনে রেখে অন্য মেয়ের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলেন তখন আমার কষ্ট হয়। আমাকে রেখে অন্য কোথাও নিজের জীবন সঙ্গী খুঁজতে থাকেন তখন আমার শুধু কষ্টই হয় না, আমার আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। বুঝেন আপনি।

কথা গুলো বলতে বলতে আমার চোখে পানি এসে গেলো। অনেক কষ্টে কান্না থামিয়েছি। পানির ফোঁটা চোখ থেকে নিচে পড়তে দেয়নি।

রিমান নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। কেন জানি বসে থাকতে ভালো লাগছে না। তাই গাড়ি থেকে বের হয়ে একটু সাইডে দাঁড়ায়। চোখ ভালো ভাবে মুছে নিয়।

চারদিক অন্ধকার, ফাঁকা জায়গা, রাস্তার সাইডে লাগানো লাইট দিয়ে হালকা হালকা দেখা যায়। ঠান্ডা বাতাস মনকে শান্ত করে দিলো। একটু পর রিমান গাড়ি থেকে বের হয়ে বললো_ ভিতরে বসো, জায়গাটা ভালো না।

আমি শান্ত গলায় বললাম_ এই মুহুর্তে জায়গাটা আমার ভালো লাগছে।

রিমান গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও একটু পর রিমানের সাথে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। রিমানের দিকে তাকিয়ে বলি_আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলেবেন?

_ কি সত্যি কথা?

_আমার জন্য কি আপনার মনে ছিটে ফোঁটাও কিছু নেয়। কোনো দিন আমাকে দেখে কোনো কিছু ফিল হয়নি। বেশি না একটু হলেই চলবে।

রিমান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললো_রাতটা অনেক সুন্দর তাই না? তবে কি জানিস, সুন্দর জিনিস অনেক সময় ভয়ংকর হয়।

আমি হাল্কা হেঁসে বললাম _আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন? সমস্যা নেয়, একদিন এর জবাব নিয়ে ছাড়বো। আর বাকি রইলো রাতে কথা, আপনি থাকলে আমার কাছে সব কিছুই সুন্দর।

রিমান কিছু বললো না। চুপ করে আছে। মনে হচ্ছে কি একটা নিয়ে চিন্তিত। আমি গাড়ির সামনে উপরে উঠে বসে বললাম_আপনাকে চুপ থাকলে মানায় না। কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত থাকলেও মানায় না। আবার হাসি ঠাট্টা না করলেও মানায় না।

রিমান আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললো_আর কতো ক্ষন এভাবে থাকার ইচ্ছে। কতো বার বলবো জায়গাটা ভালো না।

আমি একটু বিরক্তি নিয়ে বললাম _ আপনি ঠিক কিসের ভয় পাচ্ছেন। মানুষের নাকি ভুতের। মানুষ তো মনে হয় না এতো রাতে এই রাস্তায় থাকবে।

মূহুর্তেই রিমানের মুখ ফেঁকাসে হয়ে গেলো।

রিমান_(আমার তো ভুতের কথা মাথায় ছিলো না। আল্লাহ এতো নিরিবিলি জায়গা যদি কোনো পেত্নী আমার ঘাড়ে উঠে বসে তখন কি করবো। এখানে বেশি থাকা মোটেও ভালো হবে না)

রিমান মাহুয়ার হাতে ধরে এক টান দিয়ে নিচে নামিয়ে দিলো। মাহুয়া চমকে জিজ্ঞেস করলো_কি হলো সিনিয়র?

রিমান কোনো মতে ঠেলে ধাক্কিয়ে মাহুয়াকে গাড়ির ভিতরে বসালো। সে নিজেও তাড়াতাড়ি গাড়িতে বসে ড্রাইভ করতে লাগলো। মাহুয়া আবারো জিজ্ঞেস করলো_ কি হলো? কিছু তো বলেন।

রিমান আশেপাশে তাকিয়ে বলছে_কিছু না

আমি মনে হয় একটু ধারনা করতে পেরেছি। আমি একটু রহস্যময় ভাবে হাসি দিয়ে বললাম_ জ্বীন-ভূতের ভয় নাকি। চিন্তা করবেন না আমি থাকতে আপনাকে কেও কিছু করতে পারবে না।

রিমান আমার দিকে একটু ভয়ে তাকিয়ে বললো_তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো। আর অদ্ভুত ভাবে হাসির কি কারন। (আল্লাহ এই মেয়েকে আবার কোনো জ্বীন-ভূতে ধরলো নাকি?)
আর তুমি থাকতে আমাকে কেও কিছু করতে পারবে না কেও।

আমি গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে হাল্কা হেঁসে বলি_কারন আমি নিজেই তো একটা জ্বীন।

রিমানের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সে আসলেই ভয় পেয়েছে৷ রিমান একটু কাঁপা কন্ঠে বললো_মানে।

আমি আর হাসি আটকে রাখতে পারলাম না জোরে জোরে হেঁসে দেয়। তৃষার জোরে জোরে হাসি দেখে রিমানের বুক কাঁপছে। সে জোরে গাড়ি চালাচ্ছে আর মনে মনে যা দোয়া পাড়ে পড়ার চেষ্টা করছে।

রিমান_(দুর ভয়ে কোনো সূরাও মনে পড়ছে না) মাহুয়া কি হয়েছে তোমার?

আমি হাসতে হাসতে বলি_আম সরি,আমি তো মজা করছিলাম বাট আপনি তো সত্যি সত্যি ভয়ে পেয়ে গেছেন।

রিমান একটু রাগে বললো_আমি ভয় পায়নি।

আমি হাসতে হাসতে বললাম_তাহলে নিজের চেহেরাটা আয়নায় একটু ভালো করে দেখেন। কেমন বর্ণ হীন চেহেরা হয়ে গেছে।

রিমান _ শুনো আমি শুধু তোমার জন্য চিন্তিত ছিলাম। আর সত্যি সত্যি তুমি মজা করছিলে তো?

_ হ্যাঁ বাবা আমি মজায় করছিলাম।
_আচ্ছা তোমার বাসা এসে গেছে। আর দেখো এমন মজা কোনো দিন করবে না। তোমার এমন মজার কারনে মানুষের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

_কার মানে আপনার?

_না আমার কেনো হবে। আমি তো স্ট্রোং, তাই আমার কিছু হয়নি। আমার সাথে করছে মানলাম। আর কারো সাথে করবে না। যদি হার্ট অ্যাটাক করে।

_আর কারো সাথে করবো না৷ শুধু আপনার সাথে করবো। কারন আপনি তো স্ট্রোং তাই না।

রিমান কিছু বলার আগেই মাহুয়া গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। যাওয়ার সময় গাড়ির জালানা দিয়ে মুখ ঢুকিয়ে বললো _ রিমান সাবধানে যাবেন। কারন আসার সময় না হয় আমি ছিলাম কিন্তু যাওয়ার সময় ঐ রাস্তা দিয়ে আপনাকে যেতে হবে। রাস্তাটা কিন্তু সত্যিই ভালো না।

এই সব বলেই মাহুয়া দৌড়ে চলে যায়। রিমান কিছু বলতেও পারলো না।

_ঠিকি তো ঐ রাস্তা দিয়ে আমি একা একা যাবো কি করে৷ আরে দূর, আমি তো গাড়ির ভিতরে থাকবো। আচ্ছা যারা হাওয়ায় বেসে বেরায় তারা কি আমার গাড়ির ভিতরে আসতে বেশি সময় লাগবে? না এক দমি লাগবে না৷ এখন কি করি?আজ রাতটা কি মাহুয়ার বাসায় থেকে যাবো? না, না মোটেও ভালো বুদ্ধি না৷

কিন্তু একা এতো বড় রাস্তা পাড়ঁ করবো কি করে। এখন কি করবো৷ এক কাজ করি গাড়ির বক্সে জোরে সূরা আয়তুল কুরসি লাগিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যায়। তাহলেই হবে।

রিমান বক্সে আয়তুল কুরসি লাগিয়ে জোরে গাড়ি চালায়। একদম সোজা বাসার সামনে দাঁড় করিয়ে তাড়াতাড়ি ভিতরে চলে যায়।
____
ফারহান তৃষাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আসে। তৃষা বেল বাজালে একটা কাজের লোক দরজা খুলে দেয়৷ আমি নিঃশব্দে বাসায় আমার রুমে চলে যায়।

আমি বাবাকে ফোন করি। ওনি কেমন আছি জিজ্ঞেস করে। আমি উত্তর না দিয়েই জিজ্ঞেস করি _ আমাকে কতো টাকা দিয়ে কিনেছে আরাব?

বাবা একটু হতভম্ব হয়ে বললো_মানে কি বলছো উল্টো পাল্টে?

আমি শান্ত গলায় বলি_বাবা আমি সব জানি, তাই আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেয়। ঠিক আমার মূল্য টা কত সেটা জানতে চাইছি।

_ছিঃ ছিঃ, এভাবে বলে না। আরাব তো এমনি খুশিতে দিয়েছে, আমি না করেছিলাম।

_বাবা কত দিয়েছে জিজ্ঞেস করেছি।

বাবা একটু চুপ থেকে বললো _পঞ্চাশ লক্ষ

_আমার দাম মাত্র পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। মা জানে ব্যাপারটা? ছাড়ো জেনেই কি করবো।এই জন্য বলে সৎ কোনো দিন আপন হয় না৷ আমার সম্মানের কথাও ভাবলে না। তোমাকে বাবা বলতেও আমার ঘৃণা করছে। তার যোগ্য তুমি না।

বলে ফোন কেটে দিলাম। আরাবের ব্যাবহার আমার প্রতি একদম ঠিক আছে। যে মেয়েকে তার বাবা বেচে দিয়েছে, সে আর কেমন ব্যবহারি বা করবে৷ আমি তার কাছে বিক্রি করার জিনিস হয়ে গেছি। আমার চরিত্র সম্পর্কে তার ধারনা ও ভিন্ন হতে পারে এখন।

ইচ্ছে তো করছে চিৎকার করে কাঁধি কিন্তু পারবো না৷ বিছানায় শুয়ে পড়ি। চোখ বার বার ঝাপসা হয়ে আসছে৷ বার বার চোখ মুছছি। অনেক রাত করে আরাব রুমে আসে। আমি ঘুমের বান করে শুয়ে থাকি।

কিছু ক্ষন পর ড্রেস চেঞ্জ করে আসলো। আমি এমন ভাবে শুয়ে আছি যেনো পুরো পুরি ঘুমের দেশে আছি। ঘুমের মধ্যে অনুভব করলাম আরাব চাদরটা আমার গায়ে দিয়ে দিচ্ছে। আরাবের ভালোবাসাও আমি বুঝছি না তার ঘৃণাও বুঝছি না।

একটু পর তাকিয়ে দেকি আরাব সোফায় শুয়ে আছে। আমি অপর পাশে ঘুরে যায়। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ঠিকি আছে আমার মতো মেয়ের পাশে সে থাকবেই বা কেনো। হয়তো আমাকে বউ বানিয়ে সে আফসোস করছে। আমার মতো মেয়েকে আনন্দ করা যায় বউ না। হয়তো এইরোকমি তার ধারনা হয়েছে।

সকালে…
আমি ভার্সিটিতে ঘুরছি। কিছু ছেলে এসে ইভটিজিং করছে। নতুন স্টুডেন্ট দেখে কি ভেবেছেটা কি। একে তো এখনো রিমির কোনো খবর নেয়। মেজাজটা গরম আছে তার মধ্যে এরা৷

বেগ দিয়েই ওদের পিটানো শুরু করে দিয়েছি। সাথে হাত পা তো আছেই। ভার্সিটির ভিতরে তাই গায়ে হাত দিতে পারছে না আমার৷ এই সুযোগে পিটিয়ে নিয়।

একটু পর দেখলাম রিমান রিমিকে নিয়ে আসছে। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে কাঁদো কন্ঠে রিমিকে ডাক দেয়। রিমান আর রিমি এতো গুলো ছেলে আমার চারপাশে দেখে দৌড়ে যায়।

রিমান _কি হচ্ছে এখানে।
আমি একটু কান্না ভাব নিয়ে বলছি_সিনিয়র ওরা আমাকে টিচ করছে। অনেক আজেবাজে কথাও বলছে।

রিমান সবাইকে সাইড করে রাগি একটা লুক দিয়ে বলে _ তোরা জানিস না এ আমার বোন

আর কিছু বলার আগেই মাহুয়া রিমানের কলারে টান দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলি_খবরদার আমাকে আপনার বোন বলার সাহস ও করবেন না।

রিমান চমকে গিয়ে বলে_আমার বোনের ফ্রেন্ড।

আমি ছেড়ে দিয়ে বলি_হুম এবার ঠিক আছে।

রিমি বলে_ফ্রেন্ড না বেস্ট ফ্রেন্ড। সাহস কি করে হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে টিচ করার।

রিমান রাগে ওদের দিকে তাকায়। ওদের মধ্যে একটা ছেলে বলে_ভাই আমরা জানতাম না এই মেয়ে আপনার কিছু লাগে। আর উনি আমাদের মার__

আর কিছু বলার আগেই বলি _সিনিয়র এই ছেলে আমাকে থাপ্পড় মেরেছে।

এটা শুনে রিমান ছেলেটাকে ধরে ইচ্ছা মতে পিটাতে থাকে৷ ছেলের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। হাত তো মনে হয় মুচড়িয়ে ভেঙে ফেলে। ছেলে গুলো সুযোগ পেয়ে পালায়।

চলবে______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে