#চোখের আড়ালে
#Maishara_Jahan
Part……….3
কান্না যেনো থামছে না। বিয়ের পরের দিন তার স্বামী তাকে এমন কথা বলবে এমন হয়তো কোনো মেয়ে ভাবেও না৷ আরাব আমার সাথে এমন কেনো করছে সেটা আমার জ্ঞান এর বাহিরে। তার চোখে ভালোবাসার ছিটে ফোটাও নেয়৷
সন্ধ্যায়__
আরাব এসে আমাকে ডাকছে। আমি রুমে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। আরাবের আওয়াজ আমার কানে পৌছালেও তার ডাকে সারা দিতে আমার মন চাইনি। আমি বাহিরের দিকেই তাকিয়ে আছি। যেনো কোনো জান নেয় আমার ভিতরে।
আরাব অনেক বার ডেকে সারা না পেয়ে, তাড়াতাড়ি উপরে রুমে এসে দেখে তৃষা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আরাব একটু এগিয়ে গিয়ে ধমক দিয়ে বলে_ কখন ধরে ডাকছি কানে শুনো না।
তৃষা কোনো জবাব না দিয়েই দাঁড়িয়ে আছে। আরাব একটু পর এসে তৃষার কাঁধে টান দিয়ে তার দিকে ফিরায়। তৃষার ছলছল করা ছোখ, মুখে বিষন্নতা বলে দিচ্ছে তৃষার মনের অবস্থা।
আরাবের এক মূহুর্তের জন্য তৃষাকে দেখে মায়া হলেও সে তার চোখ ফিরিয়ে বলে_রিমানের মা বাবা আমাদের আজকে রাতে তাদের এখানে ডিনার করার জন্য যেতে বলেছে। তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসো।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম_ আমার ভালো লাগছে না। আমি কোথাও যাবো না আজ।
আরাব একটু রাগেই বললো_ তোমার অনুমতি কে চেয়েছে। আসতে বলেছি আসতে হবে। তাছাড়া ওদের দাওয়াতে না গেলে ওদের অপমান করা হবে। ওরা আমার মা বাবার মতো। মা বাবা যাওয়ার পর ওরাই সামলিয়েছে আমাকে। ওদের অপমান আমি সহ্য করবো না। তাড়াতাড়ি আসো আমি অপেক্ষা করছি।
আরাব চলে গেলো। আমি আর কিছু বললাম না। আরাবের কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে, আরাব রিমানপর আব্বু আম্মুকে কতোটা সম্মান করে। আমারো তাদের সম্মান রক্ষা করা উচিত।
তাই রেডি হয়ে নিচে গেলাম। আমি যাওয়ার সাথে-সাথেই আরাব বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির দিকে যেতে লাগলো, আমিও পিছনে পিছনে যাচ্ছি। গাড়িতে গিয়ে বসি। আরাব গাড়ি চালাচ্ছে। দুজনের মুখে কোনো কথা নেয়।
নিরবতায় কখন যে পৌঁছে গেলাম জানি না। গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই রিমি দৌড়ে এসে আমাকে ভিতরে নিয়ে যায়। ভিতরে গিয়ে সবার সাথে পরিচিত হলাম।
একটু পর ফারহান, মাহুয়া আর মাহিও চলে আসে। রিমি মাহুয়াকে জরিয়ে ধরে বলে_ তুই এখানে।
মাহুয়া_আংকেল আন্টি বলেছিলো আসতে তাই এসেছি।
রিমান _ এতো রাতে একা একা কেনো এসেছো।
মাহুয়া_ ফারহান ভাইয়া আমাকে নিয়ে এসেছে।
মাহি_রিমান একা তো আমিও এসেছি কই আমাকে তো কিছু বললে না। আমাকে নিয়ে তো এতো চিন্তিত হলে না হুম।
রিমান_ সবাই তোমার মতো এতো স্ট্রিং না তাই।
মাহুয়া_ও হ্যালো, আমি চাইলে না আপনার মতো কয়েকজনকে এক সাথে পিটাতে পারবো হুহ।
রিমান _তা তো শরীর দেখেই বুঝা যাচ্ছে। হাল্কা বাতাসেই উড়ে যাবে।
ফারহান_ ওও এই জন্যই মাহুয়া তুমি রিমিকে ধরে ধরে হাঁটো।
রিমি_ আপনার মানে কি আমি মোটা। আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে মোটা বলার। কোন দিক দিয়ে মোটা মনে হয়৷
ফারহান_আমি কখন বললাম তুমিই বলছো।
রিমি_আমি কতো ডায়েট ফলো করি যানেন।
রিমান_ হুম জানে তো দুই প্লেট বিরয়ানী খেয়ে।
রিমি_চুপ থাক।
রিমান _সবাই এখন নিরবতা পালন। একটা ছোট কথাকে এতো টেনে বড় করতে গেলে ছিঁড়ে যাবে।
রিমি_চল মাহুয়া আমরা ভাবিকে নিয়ে এখান থেকে চলে যায়। পাগলের সাথে থাকলে পাগল হয়ে যাবো।
ফারহান_আরো হওয়ার বাকি আছে।
রিমি মুখ ভেঙচি দিয়ে তার রুমে মাহুয়া আর তৃষাকে নিয়ে যায়। তৃষা বসে রিমিকে জিজ্ঞেস করলো_আচ্ছা আরাব আর মাহি কেমন ফ্রেন্ড।
রিমি_ মোটামুটি ভালোই। এক সাথে পড়াশোনা করতো। তখন থেকে জানি না কিভাবে এই মাহি আরাব ভাইয়ার ফ্রেন্ড হয়ে যায়।
মাহুয়া_অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো রাইট।
রিমি_হুমম ঠিক। তাও মেয়েটা এতো খারাপ না। তাও কেনো জানি আমার ভালো লাগে না।
মাহুয়া_আচ্ছা তোরা একটু থাক আমি আসছি।
মাহুয়া চুপি চুপি রিমানের রুমে যায়। গিয়ে চারদিকে দেখতে থাকে। আর বলতে থাকে _ হায় পুরো রুমটাতে রিমানের গায়ের গ্রান লেগে আছে।
ইশশ কবে যে বউ হয়ে আমি এই রুমে আসবো। তখন তো শুধু এই রুম না রিমান ও আমার। আর তখন, বলেই দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে লজ্জায়।
রিমান সামনে এসে দরজায় নক করার মতো মাহুয়ার হাতে টুকা দেয়। মাহুয়া তাকিয়ে রিমানকে দেখে দৌড় দিতে নেয় রিমান হাত ধরে ফেলে। মাহুয়া ভয়ে তাড়াতাড়ি করে বলে ফেলে_ আমি বেশি কিছু ভাবিনি শুধু কিস এর কথা ভেবেছি।
বলেই জিহ্বায় কামর দেয়। রিমান হা করে মাহুয়ার হাত ছেড়ে দেয়৷ মাহুয়া রিমানের দিকে তাকিয়ে বলে_ সত্যি তেমন কিছুই ভাবিনি৷
রিমান _ নিজের সিনিয়রকে নিয়ে এই সব ভাবো লজ্জা করে না।
_ লজ্জা করছে তাইতো মুখ ঢেকে ফেলেছিলাম। আর সিনিয়রকে নিয়ে ভাববো না তো কি জুনিয়রকে নিয়ে ভাববো।
_ তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর ভাই হয় আমি।
_এইটা তো আরো ভালো। আপনার ছোট বোন আমার ফ্রেন্ড তাও বেস্ট ফ্রেন্ড। তাহলে ভাবেন বিয়ের পর ভাবি ননদের মধ্যে কোনো দিন ঝগড়ায় হবে না।
রিমান_এটা অবশ্য ঠিক। কিন্তু এতো ছোট একটা কারনে আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।
_ তাহলে একটা বড় কারন লাগবে। আচ্ছা সেটা দেখে নিবো। সিনিয়র একটা কথা বলবো।
_বিয়ে করা ছাড়া যেকোনো কিছু বলো।
_আপনাকে না আজকে অনেক হেন্সাম লাগছে। একদম মালাইকুলফি।
বলেই দৌড় দেয়। রিমান আয়নায় তাকিয়ে বলে_ তারিফ করলো, নাকি আমার চেহেরা কুলফির মতো উঁচা নিচা বললো কোনটা। সাদা শার্ট পড়েছি হয়তো এই জন্য বলেছে।
মাহুয়া নিচে গিয়ে দেখে সবাই নিচে। মাহুয়াকে দেখে রিমি বলে_আমি তোকে এখন ডাকতে যেতাম। সবাই এখন খেতে বসবে।
একটু পর রিমান ও এসে পড়ে। সবাই খেতে বসে। আরাব মাহির পাশে বসে। তৃষার রাগ হলেও সে বুঝালো না। সে রিমির পাশে গিয়ে বসে। সবাই খাওয়া শুরু করে তখন রিমানের মা বললো_ নতুন বউ শাড়ি না পড়লে বউ বউ মনে হয় না। শাড়ি না পড়ে কুর্তি পড়েছো কেনো। কিছু দিন একটু শাড়ি পড়ে থাকো তাহলে মনে হবে যে নতুন বউ।
তৃষা খেতে খেতে বললো_ আসলে আমার কোনো শাড়ি নেয়৷ আর কোনো দিন পড়া হয়নি।
রিমানে মা আরাবের দিকে তাকিয়ে বললো_ কিরে তৃষাকে বিয়ের পর শপিং করাতে নিয়ে গেলি না কেনো। বিয়েটাও না জানিয়ে তাড়াহুড়ো ভাবে করে ফেলেছিস।
আরাব_ সময় পায়নি মামনি।
মা_ আচ্ছা যা হওয়ার হয়ে গেছে। শুন কাল পরশু একটা বড় পার্টি রাখবি। সবাইকে জানাতে হবে না তুই বিয়ে করেছিস।
আরাব_ এটার আবার কি দরকার।
মা_দরকার আছে, তুই রাখতে না পারলে বল আমি করবো অনুষ্ঠান।
আরাব_আচ্ছা মামনি পরশু পার্টি রাখবো।আর কালকে সবাইকে দাওয়াত এর কার্ড পৌঁছে যাবে।
আর যেটা রিমান করবে।
রিমান_ সব সময় সেলসম্যান এর মতো বাড়ি ওর বাড়ি আমি কার্ড দিতে যেতে পারবো না।
আরাব _ তুই করবি তোর গাঢ়ও করবো।
রিমান _ তাহলে আমার গাঢ়কেই বল। আচ্ছা দাঁড়া আমিই জিজ্ঞেস করি। এই গাঢ় তুমি যাবে কার্ড দিতে।
ফারহান _কি জবাব দিলো।
রিমান _সোজা না করে দিয়েছে।
আরাব রিমানের গাঢ় চেপে ধরে। রিমান অদ্ভুত ভাবে হাসতে থাকে আর বলতে থাকে_ আরাব ছাড় আমার শুরশুরি লাগছে। যাবো যাবো, ছাড়।
আরাব ছেড়ে দিয়ে গুড বলে। ফারহান খেতে খেতে বলে_আর সব সময় এর মতো বাড়ি ঘর সাজানো আমার কাঁধে তাই তো।
আরাব_একদম ঠিক।
সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে। রিমি বলে_এখন সবার জন্য কুলফি নিয়ে আসছি। ঠান্ডা ঠান্ডা মালাই কুলফি, খাবে তো সবাই।
মাহুয়া রিমানের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে _ আই লাভ মালাইকুলফি।
রিমান মাহুয়ার কথা শুনে বলে_দূর এখনি তো খাবার খেলো কুলফি খাওয়ার কি দরকার।
মাহুয়া_অবশ্যই দরকার কুলফি যে কি টেস্টি হয় আপনি কিভাবে জানবেন৷
মাহিও বলে উঠে_আমারো কুলফি অনেক পছন্দ।
রিমান এটা শুনে কাশি শুরু করে দেয়। ফারহান ও বলে উঠে _আমারো কুলফি অনেক ভালো লাগে।
মাহুয়া হেঁসে দেয়, রিমান এক গ্লাস পানি খেয়ে বলে_চুপ থাক বেটা, উল্টা পাল্টা কথা বলোস।
ফারহান কিছু না বুঝে বলে_আমি এমন কি বলেছি।
আরাব _ কুলফি তো সবারি পছন্দ। ফারহান মনে আছে কলেজে থাকতে তুই আর আমি বাজি লাগতাম কে কতো কুলফি খেতে পারে।
মাহুয়া জোরে জোরে হাসতে থাকে আর রিমানের কাশি থামছে না। সে বুকে হাত দিয়ে বলে_দয়া করে আপনাদের মুখটা বন্ধ রাখেন।
রিমি কুলফি নিয়ে আসে। সবাই একটা করে নিচ্ছে। রিমানকে নিতে বললে সে বলে_খাবো না আমি, কুলফিতে আমার এলার্জি আছে।
রিমি_ এটা আবার কবে হলো।
রিমান _কিছু ক্ষন আগে।
মাহুয়া হাসি দিয়ে বলে _রিমি তুই বরং রিমানের টাও আমাকে দে।আমি তো মজা করে খাবো।
এটা শুনে রিমান কুলফিটা নিয়ে পুরোটা মুখে দিয়ে দেয়। অনেক কষ্ট করে পুরোটা একবারে গিলে ফেলে।
রিমি_ ভুতে ধরেছে নাকি।
সবাইকে কুলফি দেয় শুধু ফারহানকে ছাড়া।
ফারহান _আমারটা কোথায়।
রিমি_শেষ হয়ে গেছে৷ আর তাছাড়া তেঁতো মানুষের মিষ্টি জিনিস না খাওয়ায় ভালো।
ফারহান রাগে রিমির দিকে তাকিয়ে আছে। রিমি একটা হাসি দিয়ে ফারহানকে দেখিয়ে খেতে থাকে। হঠাৎ করে উপরের রেল লাইনে ফোন আসে। তো রিমি ফোন উঠাতে উপরে যায়।
গিয়ে ফোন উঠিয়ে রিমি হ্যালো বলে। পিছন থেকে আওয়াজ আসে _ হ্যালো।
রিমি পিছনে তাকিয়ে দেখে ফারহান। রিমি অবাক হয়ে বলে_আপনি কেনো কল দিয়েছেন।
ফারহান সামনে আসতে আসতে বলে _তোকে সবার থেকে দূরে আনতে।
রিমিও পিছাতে পিছাতে হালকা ভয়ে বলে _আপনি আমার কাছে কেনো আসছে।
রিমির দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। ফারহান ও রিমির কাছে এসে রিমির দুপাশে হাত রেখে বলে_রিমি দেখি ভয় পাচ্ছে। তুই না কোনো কিছুতে ভয় পাস না।
_ভয় পাচ্ছি না আমি। যদি আমাদের এভাবে কেও দেখে ফেলে তখন কি ভাববে। সেটাই ভাবছি।
ফারহান সাইডে সুইচ অফ করে। লাইট নিবে যায়। রিমি একটু ভয়ে বলে_লাইট কেনো অফ করলেন।
_যেনো কেও না দেখে তাই।
_কিন্তু আমি তো আপনাকে স্পষ্ট দেখতে পারছি। আর সবাইও দেখতে পাবে।
_তাহলে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।
_মানে কি করবেন।
ফারহান হাসি দিয়ে তার মাথা বেকিয়ে নিজের ঠোঁট রিমির ঠোঁটের কাছে নিয়ে আসতেই রিমি চোখ বন্ধ করে ফেলে৷ আর হাত দিয়ে ঠোঁট ঢেকে রেখেছে৷ হার্ট বিড বেড়ে গেছে। ফারহান মুচকি হাসে। রিমি যে হাত দিয়ে ঠোঁট ঢেকে রেখেছে ঐ হাতেই কুলফি ধরে রেখেছিলে।
ফারহান রিমির হাতে থাকা কুলফি খাচ্ছে। রিমি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে ফারহানের চেহারা তার অনেক কাছে। কুলফি খাচ্ছে। ফারহানও কুলফিতে মুখ দিয়ে রিমির দিকে তাকায়। দুজনের চোখ অনেক কাছে।
কারো আসার আওয়াজ শুনে দুজনে সরে যায়। ফারহান তাড়াতাড়ি তার মুখ মুছে চলে যায়। রিমি এখনো ঐখানে দাঁড়িয়ে আছে। হার্ট বিড নরমাল হওয়ার নামি নিচ্ছে না।
কিছু ক্ষন পর নিচে গেলে দেখে সবাই যাওয়ার জন্য রেডি। রিমানের মা রিমানকে বলে মাহুয়াকে বাসায় দিয়ে আসতে। রিমান মাহুয়ার দিকে তাকাতেই অদ্ভুত একটা হাসি দেয়। রিমান হাসি দেখেই নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে।
চলবে ___