#চোখের আড়ালে
#Maishara_Jahan
Part………….. 1
আরাব হাতে রিং নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাহিও মুখ ভরে একটা হাসি হাতটা এগিয়ে দেয়। আরাব হাতটা ধরে রিং পড়াতে যাবে এমন সময় দৌড়ে একটা মেয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়। দরজার সামনে এসে কমরে ধরে হাঁপাচ্ছে। হাঁপাতে হাঁপাতে আটকে আটকে বলে_ আরাব এনগেজমেন্ট করবেন না।
আরাব অভিমানী কন্ঠে বললো_ কেনো করবো না।না করার তোহ কোনো কারন দেখছি না। কিসের জন্য এসেছো শুধু সেটা বলো।
_ আমি শুধু আপনার একটা কথার জবাব দিতে এসেছি। সেটা শুনার পর যদি আপনার এই এনগেজমেন্ট করতে ইচ্ছে করে তাহলে করবেন বাঁধা দিবো না।
মাঝখান থেকে রিমান এসে বলে_ যা বলার তাড়াতাড়ি বলো, আমার বিরয়ানী আমার জন্য ওয়েট করছে।
ফারহান_ মানে।
রিমান _ আরে মানে, এই এনগেজমেন্ট এর পরেই তো সবাই খাওয়া শুরু করবে। আর বিরয়ানীর কতো সুন্দর গ্রান আসছে।
আরাব একটু রাগেই বলে_ এই সিচুয়েশনে তোর বিরয়ানী খাওয়ার কথা মনে পড়ছে। তোর মানসিক ভারসাম্য ঠিক আছে তোহ।
রিমান একটু কাশি দিয়ে বলে_ তৃষা তুমি কিসের জবাব দিতে এসেছো, দাও।
তৃষা আরাবের দিকে তাকিয়ে একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বলে_ আই লাভ ইউ টু।
আরাব তৃষার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে_ হেহ আবার বলো।
_ আই লাভ ইউ টু ।
রিমান_ সেই তো রাজিই হলে, তোহ আগেই হয়ে যেতে। এতো কাহিনি করার কি দরকার ছিলো।
আরাব রাগী ভাবে রিমানের দিকে তাকায়, রিমান একটি হাসি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে_ আজ তোহ মনে হয় বিরয়ানীর গন্ধ শুঁকেই পেট ভরাতে হবে।
ফারহান_ চুপ কর একটুর জন্য।
আরাব তৃষার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে_ হঠাৎ তোমার মত পাল্টে গেলো কিভাবে।
_ না আসলে আমি ভাবলাম আপনার পাশে আমকে ছাড়া কাওকে মানাবে না। আর না আমার পাশে আপনাকে ছাড়া কাওকে।
রিমান_ এটা আবার কেমন লজিক।
ফারহান _ তোকে চুপ থাকতে বলেছিলাম না।
রিমান_ একটুর জন্য বলেছিলি।
তৃষা_ এতো কিছু জানি না, আমি আপনার পাশে আর কাওকে দেখতে পারবো না।
আরাব_ ভালোবেসে ফেলেছো নাকি।
তৃষা লজ্জা মাখা মুচকি হেঁসে বলে_ কিছু কথা না বলেই বুঝে নিতে হয়।
মাহি একটু এগিয়ে এসে বলে _ তাহলে এনগেজমেন্টটা আর হচ্ছে না তাই তো।
আমি একটু রাগ দেখিয়েই বললাম _ না হবে না।
মাহির রাগ হলেও প্রকাশ করলো না, মুচকি হেঁসে বললো_ মনে হয় এই আংটিতে তুমার নাম লেখা ছিলো তাই এইটা আর আমার হাতে সোভা পেলো না। আরাব তুমি বরং এই রিংটা তৃষাকে পড়িয়ে দাও।
আরাব আমার দিকে ফিরে হাতটা ধরতেই আমি টান দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে আনি। আরাব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। শুধু ও না, সবাই অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে।
রিমান_ হঠাৎ করে আবার মন পাল্টে গেলো নাকি। এই জন্যই বলে মেয়েদের মন বুঝা নয়রে নয় সোজা।
তৃষা_ রিমান ভাইয়া আপনি এমন কেনো। আমার মন পাল্টায় নি।
আরাব _ তাহলে এমন করলে কেনো।
তৃষা_ আমি এই রিং পড়বো না। এই রিংটা তো আর আমার জন্য কিনা হয়নি। এই রিংটা কিনেছিলে মাহিকে পড়াবে বলে। আর আমি অন্যের রিং কেনো পড়বো। আমার অন্য রিং লাগবে যেটা আমার জন্য কিনা হবে।
আরাব _ আচ্ছা এখন এটা পড়ো কাল আমি তোমাকে অন্য আরেকটা কিনে দিবো।
_ না আমার আজি লাগবে আর এখনি। আর না হলে আজ এনগেজমেন্ট হবে না৷
আরাব একটু রেগে গিয়ে বললো_ হোয়াট, ইউ সিলি গার্ল..
আর কিছু বলার আগেই ফারহান আরাবের কাঁধে হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো _ আমি আর রিমান নতুন রিং নিয়ে আসছি।
রিমান কাদো কাঁদো কন্ঠে বললো_ আমার বিরয়ানী
আরাব _ তৃষা তুমি থাকো আমিও যাচ্ছি রিং আনতে, তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
তৃষা_ হুম ঠিক আছে।
রিমান সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে বললো _ এতো জন যাওয়ার কি দরকার। তিনজন গেলে তোহ আর টাকা কম নিবে না। তোরা যা আমি বরং থাকি।
আরাব একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে রিমানের বুকের সাইডে কোর্টটা ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। আর রিমান কষ্ট নিয়ে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনজন গাড়ি করে যাচ্ছে। আরাব গাড়ি অনেক জোরে চালাচ্ছে। রিমান পিছন থেকে বলে _ ভাই গাড়িটা আস্তে চালা, এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাই না, এখনো একটা গার্লফ্রেন্ড ও নাই।
আরাব জোরে ব্রেক মারে। রিমানের মুখ সিটে গেলে যায় একদম। আরাব গাড়ি থামিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে বের হয়ে একটা মলে ডুকে। পিছন পিছন ফারহান আর রিমান ও যায়।
মলে ডুকে ফারহান আর রিমানকে বলে, একটা রিং তাড়াতাড়ি পছন্দ করে কিনতে। ফারহান একটা রিং আরাবকে দেখিয়ে বলে_ দেখতো এটা কেমন।
আরাব চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে_ যেমনি হোক প্যাকেট করিয়ে আন।
ফারহান_ তোর একটা পছন্দ অপছন্দ আছে না।
আরাব_ রাগে নিজেকে কনট্রোল করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।যা করার পিল্জ তাড়াতাড়ি কর।
রিমান_ এনগেজমেন্টটা করার আগে আরেক বার ভেবে নে। আমরা অন্য কোনো রাস্তা খুঁজে নিবো।
আরাব_ যা করছি ভেবেই করছি। বিয়ে তোহ আমি তৃষাকেই করবো।
রিমান_ যা তোর ইচ্ছা। আমরা সব সময় তোর সাথেই আছি চিন্তা করিস না।
তিন জন রিং নিয়ে চলে যায়। আরাব গিয়ে সাথে সাথে তৃষাকে রিংটা পড়িয়ে দেয়। কিছু বলার সুযোগ ও দেয় না।
তৃষা আরাবকে রিং পড়াতে পড়াতে বলে _ এতো তাড়া কিসের আপনার।
আরাব _ এখন যেহেতু আমাদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে তাই আমাকে তুমি বলে ডাকতে পারো।
তৃষা_ আসলে মুখ ফসকে আপনিটা বেরিয়ে যায়।আর আপনি ঢাকাতে সমস্যা কি। আগেও তো আপনি করেই ডাকতাম, তখন তো কিছু বলতেন না।
_ আগে আর এখনের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
আমি একটু হেঁসে বললাম _ কি, আগে আমাকে ভালোবাসতেন না এখন ভাসেন তাই না।
আরাব কিছু ক্ষন তৃষার দিকে তাকিয়ে, চোখ ফিরিয়ে হুমম বলে।
রিমান লাফ দিয়ে বলে,, এখন তো এনগেজমেন্ট শেষ, তাহলে আমি খেতে যায়৷
ফারহান এগিয়ে এসে রিমানের কাঁধে হাত দিয়ে বলে _ বিরয়ানীর আশা ছেড়ে দে।
রিমান ব্রু কুঁচকে বলে,, মানে কেনো, এখন এইটা বলবি না যে, বিরয়ানী শেষ হয়ে গেছে।
ফারহান _ বিরয়ানী রান্না করা হলে তো শেষ হবে।
_ মানেহহহ
_ মানে বিরয়ানী রান্না হয়নি। তাহলে তুই যে বললি।
_ তুই আসতে লেইট করছিলি তাই বলেছি।
_কিন্তু আমি যে বিরয়ানীর গন্ধ পাচ্ছিলাম৷
_ ঐটা বিরয়ানীর গন্ধ না, তোর মনের লোভের গন্ধ।
রিমান বুকের বা পাশে হাত দিয়ে ব্যাথার মতো অভিনয় করে বলে _ এতো বড় মিথ্যা কথা, ফারহান তুই আমার নিষ্পাপ মনটা ভেঙে চুরমার করে দিলি। আল্লাহ তোর বিচার করবো।
আবিদ দুইজনকে ধমক দিয়ে বলে _ তোদের নাটক শেষ হলে এখন আমি বিয়েটা করি।
তৃষা _ বিয়ে মানে।
আবিদ _ হুম বিয়ে, কাজি এখানেই আছে আমরা আজি বিয়ে করবো। কাল সকালে বাংলা দেশে চলে যাবো।
তৃষা_ পাগল হয়ে গেলে নাকি। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে, তার মধ্যে বাবাকে না জানিয়ে কখনোই না।
আরাব_ তোমার বাবা অনেক আগে থেকেই রাজি, শুধু তুমিই ছিলে না। আমার বাংলাদেশ এ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। বিয়েটা আজি হবে, আমি তোমার বাবাকে কল করে দিয়েছি। উনি একটু পরেই এসে পড়বে।
তৃষা_ কিন্তু,
আরাব তৃষার কাঁধে হাত দিয়ে তার দিকে ফিরিয়ে বলে _ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া আর এক মুহূর্তও থাকতে পারবো না। আমাকে জরুরি কাজে কালকেই যেতে হবে। আর বাংলাদেশ এ ফিরে গেলে তিন চার মাসের আগে আসতে পারবো না৷ তোমাকে রেখে আমি ঐখানে কোনো কাজেও মন দিতে পারবো না। তাই তোমাকে নিয়েই যেতে চাই।
তৃষার চোখ পানিতে ঝলঝল করছে। চোখের পানি মুছে তৃষা মুচকি হেঁসে বলে_ আর কিছু পারো আর না পারো নিজের কথায় মানুষকে মোহিত করতে ঠিকি পারো।
ফারহান_ তার মানে বিয়েটা হচ্ছে।
তৃষা _ বাবা রাজি থাকলে আমিও রাজি।
তৃষার বাবা আসে, তার বাবার অনুমতি নিয়ে আরাব আর তৃষার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ে শেষে ফারহান রিমানকে খুঁজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। খুঁজতে খুঁজতে দেখে রিমান টেবিলে বসে খাচ্ছে।
আমি রিমানের কাছে গিয়ে, রিমানকে একটা ধমক দিয়ে বলি _ এখানে তোর বন্ধুর বিয়ে, এতো বড় একটা খুশিতে তুই না থেকে এখানে এসে খাবার খাচ্ছিস।
রিমান তুচ্ছ হাসি দিয়ে খেতে খেতে বললো _ বিয়ে কিসের বিয়ে, যেই বিয়ের কোনো ভবিষ্যত নেয় তাকে বিয়ে বলে না। আর এই বিয়েতে খুশি কোথায় থেকে দেখলি। এইটা একটা খেলা, যেটা আমি দেখতে চাই না।
ফারহান _ রিমান চুপ,, কেও শুনলে প্রবলেম হবে।
রিমান_ আমার এই নাটক আর ভালো লাগছে না।
দুই মাসে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। বেস এখান থেকে এখন যেতে চাই আমি।
ফারহান_ কালকেই চলে যাবো।
রিমান একটু মন খারাপ করে বললো _ ফারহান আমরা কোনো ভুল করছি না তো।
ফারহান লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে বললো _ ঠিক ভুল জানি না, শুধু এটা জানি আমরা আমাদের বন্ধুর সাথে আছি।
পিছন থেকে আরাব এসে বলে_এতো কিছু ভাবার দরকার নেয়। যা গিয়ে ঘুমো। কালকে সকালে ফ্লাইট।
রিমান _ এক বার বাংলাদেশে গেলে আর এক বছর আমেরিকার নাম নিবো না। আচ্ছা আজকে রাত তৃষা কোথায় থাকবে, মানে কার সাথে।
আরাব চোখ ছোট ছোট করে বলে_ তৃষাকে তার বাবার সাথে পাঠিয়ে দিয়েছি, কাল এয়ারপোর্টে দিয়ে যাবে।
রিমান একটা কাশি দিয়ে বলে_ ওও
সকালে সবাই তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে এয়ারপোর্টে চলে যায়। রাত আটটা বাঝে সবাই বাংলাদেশে এ পৌঁছায়। সবাই অনেক ক্লান্ত তাই আরাবকে বলে রিমান আর ফারহান তার বাসায় চলে যায়৷
আরাব তৃষাকে নিয়ে তার বাসায় আসে। তৃষা বাড়ি বাড়িতে ঢুকে চার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বলে_ বাড়িটা অনেক না, অনেক বেশিই সুন্দর কিন্তু কেও নেয় কেনো।
আরাব একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলে_ আমি আগেই বলেছিলাম আমার মা বাবা মারা গেছে।
তৃষা একটু মন খারাপ করে বলে_সরি, আমি মা বাবার কথা বলি নি। মা বাবা ছাড়া অন্য কেও আছে কিনা সেটা বলেছি।
আরাব রাগে বললো_এই বাড়িতে তোমার সেবা করানোর মতো অনেক কাজের লোক আছে চিন্তা করো না।
_আমি কাজের লোকের কথা বলছি না।
আরাব আমার দিকে অনেক রাগী ভাবে তাকালো। আমি কি কিছু ভুল বলেছি, বুঝলাম না। অনেকটা রাগেই বললো _ তুমি অনেক ক্লান্ত আসো আমার সাথে আমি বেড রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।
বলে তাড়াতাড়ি সিরি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো। আমিও তার পিছন পিছন গেলাম। একটা বড় রুমে আমার সুটকেস রেখে বললো_ ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি একজনকে বলে তোমার রুমে খাবার পাঠিয়ে দিবো।
বলেই যেতে নেয়, আমি বাঁধা দিয়ে বললাম_ কোথায় যাচ্ছেন।
_ আমার একটা জরুরি কাজ আছে, যেতে হবে।
_কিন্তু আমি এখানে একা,,
আর কিছু বলার আরাব বের হয়ে চলে গেলো। আরাব অনেকটা পরিবর্তন লাগছে। হয়তো ক্লান্ত তার উপর আসতে না আসতে কাজের চাপ তাই হয়তো মেজাজটা বেশি একটা ভালো না।
আমি আর কিছু না ভেবে, গোসল করে এসে জামা কাপর সব বেগ থেকে বের করে আলমারিতে গুছিয়ে রাখি। একজন মহিলা এসে আমাকে খাবার দিয়ে যায়। আমি তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করি নি।
খাবারটা সাইডে রেখে দিয়, আরাব আসলে এক সাথে খাবো তাই। আরাবকে দেখার জন্য রুম থেকে বের হয়ে উপর থেকে নিচে দেখতেই ভয়ে আবার রুমে চলে আসি।
চলবে____