চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-০৭

0
1906

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০৭

কালার সিলেক্ট করা আমার কাজ না।সেই কখন থেকে একটার সাথে আরেকটা মিলানোর চেষ্টা করছি কিন্তু মিলছেই না।

না,মিলছে না বললে ভুল হবে।আমি মেলাতে পারছি না। সম্পুর্ণ না মিললেও হালকা একটু মিল পাচ্ছি তবে সেটাও মনে ধরছে না।
সুতরাং নিরবকেই নির্বাচন করে দিতে হবে, বলে আমি মনে করি।

সব কাজ শেষে আন্টি একটু শুয়েছিল। আমিও ঘরে ছিলাম।ড্রেস চুজ করতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করি নি।
তাই আন্টিকে ডেকে আমি আর আন্টি খেয়ে নিলাম। নিরবের বিকালে আসার কথা। তবে আরো দেরি হতে পারে।
______
বিকালে নিরব আসলে আমি দরজা খুলে দেই।

নিরব ঢুকতেই তার প্রথমে অথৈ এর দিকে চোখ পড়ল।ও অথৈকে চিনতেই পারেনি।পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিল সে। কারণ আজ অথৈ শাড়ি পড়েছে। মিষ্টি কালার শাড়ি।

কালও সম্ভবত পরেছিল তবে সেভাবে দেখা হয় নি।দেখবেই বা কিভাবে?
চারিদিকে তেমন মানুষ না থাকলেও যে খুব কম মানুষ ছিল তাও না।
সেই অবস্থায় যদি নতুন বৌয়ের দিকে সে তাকিয়ে থাকে তবে নিতান্তই তাকে লজ্জায় পড়তে হতো।
আর যাই হোক, মুরুব্বিদের সামনে তো আর বৌ দেখতে পারবে না।

তারপর আবার কাল যখন সে রুমে আসল তখনও অথৈ চেন্জ করে ফেলেছিল। আবার রুমে আসতেই সব উদ্ভট প্রশ্ন তার মাথা হ্যাং করে দিয়েছিল।
তাই তাকে একটুও দেখা হয় নি।

এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অথৈ নিরবকে উদ্দেশ্য করে বলল”কি হলো? ভিতরে আসো।”

তা শুনে নিরব ভিতরে এলো‌।হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে আসতেই অথৈ বলল”কিছু খাবে এখন?”

“তুই আমাকে যেভাবে খাওয়াচ্ছিস ওভাবে খেতে থাকলে তো বেলুন হয়ে যাব”

আমি ভেবে পাচ্ছি না আমি ওকে বেশি খাওয়ালাম কখন?আরে বেশি দূরে থাক, আমি ওকে খাওয়ালামই কখন?আসলামই তো কালকে।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে নিরব বলল”কিরে? চুপ করে গেলি যে?”

“না ভাবছি তোমাকে খাওয়ালাম কখন”

“সকালে যে দুপুরের জন্য টিফিন দিলি ওতগুলো তো গরুও খায় না”

তা শুনে আমি বললাম”ওহ!এক বেলাতেই কাতর হয়ে গেলে?তা নিজে খেতে পারো না সেটাই বলো। খামোখা গরুর ওপর দোষ দিচ্ছ কেন?”

“অপমান করছিস?”

“অপমান করার মত কিছু বলেছি?”

নিরব মুখ বাঁকিয়ে আবারো ঘরে চলে গেল।আমি গেলাম আন্টির কাছে। নিরব কিছু নাই খাইতে পারে আন্টিতো খাইতেই পারে। কিন্তু কেউ ই কিছু খাইল না তাই আমি রুমে চলে আসলাম।নিরব তখন বলল”আম্মু খেয়েছে দুপুরে?”

“তোমার কি মনে হয়?না খাইয়ে রাখসি!”

নিরব বই পড়ছিল তখন একটা। আমার কথা শুনে আমার দিকে চেয়ে বলল”সহজ একটা কথা জিগাইলাম,সহজ করে উত্তর দিতে পারস না?”

“না পারি না”

“ঝগড়ুটে!”

“আপনি!”

‍”আগে কে করসে?”

“চুপ করে আমাকে একটু সাহায্য করলে খুশি হতাম”

নিরব ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করল”কি?”

“আপনার জন্য নীল ড্রেস পছন্দ করসি, কালকে পরবেন?”

“কাল…ওহ!পরাই যায়”

“ঢং!এমন মনমরা হয়ে বলছে যেন সব দুঃখ উনারই”

নিরব ভ্রু কুঁচকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আমি বললাম”হইসে!এখন আপনার প্রেম কত গাড় ছিল,কত ভালোবাসা ছিল,ইউ নিড টাইম এগুলো বলতে শুরু করে দিবেন না এমনেই মেজাজ খারাপ”

বলেই আমি চলে আসলাম।

নিরব অথৈর কথা হা হয়ে শুনল পুরাটা। যতগুলো কথা ও বলসে তার মধ্যে একটা কথাও আমি মনের মধ্যেও আনি নি এখন আর ও যা ঝাড়ল!বাপরে বাপ নাহারকে মনে করার টাইম ই পাব‌ না আমি, অবশ্য মনে করতে চাইও না❤️
.
.
.
যতগুলো কথা ঝেড়ে এলাম ততগুলোর একটাও আমার মনের কথা ছিল না,রাগও ছিল না। শুধু এখন উল্টা কোন রিয়েকশন না দেখায় তাহলেই হবে।
সন্ধ্যা তো হয়ে আসল ছাদের দরজা লাগিয়ে আসতে হবে। তারপর হয়তো নাস্তা বানাতে হবে।
এই টাইমে নিরবদের বাসায় কোনদিন আসলে দেখতাম আন্টি নাস্তা বানাচ্ছে। কারণটা নিরব।
ও বেশীরভাগ সময় রাতের খাবার খায় না,আন্টি বলেছিল।এখন না খাইয়ে তো রাখতে পারবে না তাই নাস্তা বানাতো।
এখন তো সে চাকরি করে, সারাদিন খাটে তাহলে নিশ্চয়ই ওর খাওয়ার কথা?
জিজ্ঞেস করে নিতে হবে। নাহলে আবার নাস্তা বানাতে হবে। বানাতে হলে আন্টিকে কিছু করতে দিব না।এখন আমি আছি না!

আন্টি কি করছে এখন? ঘুমাচ্ছে হয়ত।
যাই হোক, নিরবের কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
.
.
.
.
“এই যে…”

“হুম কি?”

“নাস্তা খাবেন নাকি রাতের খাবার?”

“যেটা মন চায় বানিয়ে ফেল”

“হ্যাঁ,আপনি খুব শুনেন তো আমার কথা!
বানিয়ে ফেলব তারপর আপনি বলবেন মুড নাই তখন আমি কি করব?”

“আহা!দেখোস না কাজ করি?তার মধ্যে আবার নাস্তা নাস্তা করস কিল্লাই?”

“তো করব না?যখন পছন্দ হবে না খাবারতখন সারারাত ক্ষিদার জ্বালায় মরবা ওইটা ভাল্লাগবে?”

“নাস্তা কর 😒”

.
.
.
“ধরো তোমার নাস্তা”

আমার কথায় নিরব আমার দিকে ফিরে তাকাল।

“তুই এত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ফেলেছিস?”

“কচু করেছি! কাজের মধ্যে এত কিসের ব্যাস্ততা তোমার?২ ঘন্টা হয়েছে আমার যাওয়া,সব কাজ শেষে তারপর এসেছি আর বলে তাড়াতাড়ি। ঠিক মত সময় দেখে বলো”

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিরব আমার দিকে তাকালো।

“আমার দিকে না তাকিয়ে খাবার শুরু করো,তারপর ঘুমাও”

“আম্মু?”

“নামাজ শেষে খাবেন, তোমার তো এগুলায় খেয়াল থাকে না”

“কাজের জন্য শুনি নিই আজান,তাই বলে তো তুইও ডাক দিস নিই”
বলেই আর দেরি না করে হাত ধুতে গেল।

আমিও কিছু বললাম না। সত্যি আমার উচিৎ ছিল তাকে ডেকে দেওয়া। আমিও অযু করে নামাজ পড়ে নিলাম।

নিরব খাওয়া দাওয়া শেষ করে নামাজ পড়তে বসল।
আমি খেয়ে রুমে আসার পর দেখলাম রুম অন্ধকার।লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম নিরব ঘুমিয়ে গেছে।ও আজ সত্যিই ক্লান্ত ছিল হয়ত।
লাইটটা নিভিয়ে ডিম লাইট জ্বালিয়ে আমিও তার পাশে আসলাম।তার দিকে ফিরে শুয়ে পড়লাম।
কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানি না। ওভাবেই ঘুমিয়ে গেছি।

সকালে নিরবের আগেই ঘুম থেকে উঠলাম। তাকে আর আন্টিকে নামাজের জন্য জাগিয়ে নিজেও নামাজ পড়লাম। নামাজ শেষ করে আন্টি আবারো শুয়ে পড়লেন আর নিরবও।আমি শুধু নিরবের বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম। সকালের আকাশ-বাতাস দুইটাই আমার কাছে অধিক প্রিয়। কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর রান্নার কাজে লেগে পড়লাম।
নিরব ঘুমানোর খানিক পরেই জেগে গিয়েছিল।তারপর সেও হাঁটতে বেরিয়েছে।
আমার রান্নার মাঝে আন্টিও এসে যোগ দিয়েছেন।
নিরব ফিরে আসলে আমরা একসাথে নাস্তা করি।নিরব বেরিয়ে যায় তার কাজে।
আজ সে জলদি আসবে। অর্থাৎ হাফটাইম বলা যায়।
আম্মুর সাথে আজ দেখা করতে যাব। আমার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাসায় আছে সেগুলো নিতে হবে।

আন্টিকে বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।যদিও রাস্তাটা লম্বা নয় তবুও পথিমধ্যে নাহার আপুর দেখা মিলল।যদিও বিষয়টা কাকতালীয়।
আমি তাকে এড়িয়ে যেতে চাইলে সে আমার সামনে এসেই দাঁড়ালো।
এতে আমার বিরক্ত লাগলেও বুঝলাম সে আমাকে কিছু বলতে চায়।

সে আমাকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করার আগেই বলল”তোমার ভাই কোথায়?”

ওর এই প্রশ্নে আমি রিতিমত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। এতদিন ধরে ও আমাকে জানে অথচ আমার যে কোন ভাই বোন নেই এইটা কি ও জানে না?
নাকি অন্য কিছু বলতে চাইছে?

আমি নাহার আপুর দিকে তাকিয়ে বিরক্তিভাব বজায় রেখেই বললাম”আমার কোন ভাইয়ের কথা বলছেন আপু? আমার তো কোন ভাইবোন নেই আপু।না নিজের আর না কোন কাজিন ব্রাদার। আমার যা আছে সব সিস্টার”

আমার কথায় নাহার আপু হাসি হাসি মুখে জবাব দিল”কেন? তোমার নিরব ভাই? সারাক্ষণ তো তাকেই ভাই ভাই ডাকো তাহলে ভাই থাকবে না কেন?”

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে