গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০৬(বোনাস)
আজ আমাদের বিয়ে।যেমনটা চেয়েছিলাম তেমনই নাহার আপুর বিয়ের আগে আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হবে। পার্থক্য শুধু এইটুকুই যে আগের মত শুধু পরিবারের সদস্যরা থাকবে না আরো থাকবে কিছু আত্নীয় স্বজন।
নিরব আগের মত প্রাণবন্ত না থাকলেও খুব একটা মন মরা নেই।হয়ত বুঝে গেছে ভালোবাসলেই পেতে হবে এমনটা না।
_______
প্রথমবারের মত নিরবের ঘরটা এত আপন লাগছে।এখন কোন কিছু ধরতে গেলে আমাকে আর পারমিশন নেওয়া লাগবে না।সবটায় আমারও সমান অধিকার।
হ্যাঁ! বিয়ে শেষে এখন আমি নিরবের ঘরে। একটু আগেই এসেছি এই ঘরে।
যদিও বারবার দেখেছি ঘরটা তবুও কেন যেন আজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে।
অপেক্ষা শুধু নিরবের আসার।
.
.
.
যদিও খুব একটা ভারি সাজ নেই তবুও সবটা পাল্টে নিতে হবে।
কারণ এই পোষাকে শান্তিতে ঘুমাতে পারব না।
চুপচাপ সবটা পাল্টে চোখেমুখে পানি দিয়ে নিরবের বেলকনিতে আসলাম।
বসার জন্য দোলনা রয়েছে আর ছোট ছোট টব ঝুলিয়ে রাখা আছে।
শীতল হাওয়া গায়ে এসে মাঝে মাঝে লাগছে।ফ্যানের কৃত্রিম বাতাস থেকে প্রাকৃতিক বাতাস অনেক ভালো।
এই শান্ত পরিবেশে একটা গান ধরাই যায়।কি গান গাই?
তোমার ইচ্ছেগুলো,,ইচ্ছেগুলো,,
তোমার ইচ্ছেগুলো ইচ্ছে হলেই আমায় দিতে পারো
আমার ভালোলাগা ভালোবাসা
তোমায় দেব আরো(২)
তুমি হাত টা শুধু ধরো আমি হব না আর কারো (২)
তোমার স্বপ্নগুলো আমার চোখে হচ্ছে জড়োসড়ো
তোমার ইচ্ছেগুলো,,ইচ্ছেগুলো,,
নিরব কি কখনো চাইবে আমার হাতটা ধরতে?
বুক চিরে শুধু দীর্ঘশ্বাসই বেরিয়ে এলো কারণ এর উত্তর তো আমার কাছে নেই। নিরব যদি মন থেকে ভুলতে চায় তাহলে অবশ্যই পারবে,আমার বিশ্বাস।
অবশ্য খারাপ স্মৃতিকে যতদিন মনে রাখা হবে ততদিন দুঃখ দেবে।
নিরব এখনো আসলো না।আমি রুমে এসে বসলাম।ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম নিজেকে একবার।অতটাও সুন্দরী না আমি।তাই কি নিরব আমাকে প্রত্যাখান করত?
হতেও পারে,আবার নাও পারে। নিরবের সাথে কি আমাকে মানাবে?
আয়নার একদম সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি। রূপ লাবণ্যকে তেমন একটা মূল্যয়ন না দিলেও আজ কেন যেন সেই জিনিসটারই কমতি লাগছে।
এরই মাঝে নিরব আসল।আমি তখনও আয়নায় নিজেকে দেখতে ব্যাস্ত।আওয়াজ পেয়ে পিছনে ফিরলাম আমি।
নিরবের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম”আমি সুন্দর না বলেই তুমি আমাকে প্রত্যাখান করতে তাই না?”
নিরব আমার কাছ থেকে হয়ত এই মুহূর্তে এই প্রশ্ন আশা করে নি। হঠাৎ কেন এমন প্রশ্ন করছি তাও হয়ত মেলাতে পারছে না সে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বলল”আমি কোনদিনই মানুষকে রূপ দিয়ে বিচার করিনি,তোকেও না।”
এই কথায় মনে অল্প একটু আশা জাগলো।আমি একটু স্বাভাবিক হয়ে মাথা নিচু করে বললাম”ফ্রেশ হয়ে নাও”
নিরবও তার কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।
মাথা নিচু করেছিলাম চোখের পানি আড়াল করতে। সত্যি বলতে আমি ধরেই নিয়েছিলাম সে আমাকে রূপের জন্য প্রত্যাখান করেছে আর এটা ভেবেই চোখে পানি এসে গেছিল।
বিছানায় গিয়ে চুপচাপ বসলাম আমি।এখন আমার কি করা উচিত?
নিরবের জন্য অপেক্ষা নাকি ঘুম চলে যাওয়া?
যদিও নিরবের থেকে কিছু আশা করা যায় না তবুও ভদ্রতার খাতিরে অন্তত জেগে থাকা লাগবে বলে আমি মনে করি।
আমার ভাবনার মাঝেই মিনিট দুয়েকের পর নিরব বেরিয়ে এলো।
আজও মুখমণ্ডল এ বিন্দু বিন্দু পানি লেগে আছে।কেমন দেখতে লাগছে তা নাহয় বাদই দিলাম।
তাই তার দিক থেকে দৃষ্টি নামিয়ে নিলাম।
নিরব সোফায় বসে মুখ হাত মুছতে ব্যাস্ত।
যদিও গরমকাল তবুও পায়ের কাছে থাকা পাতলা কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে গেলাম।শুইতে তো বাধা নেই।
চোখে অস্থিরতা তবুও চোখ বন্ধই রাখলাম। নিরব বলল”লাইট থাকবে নাকি অফ করব?”
আমি স্লো ভয়েসে বললাম”লাইট জ্বালানো থাকলে আমার ঘুম আসে না তাই বন্ধ করে দাও।”
নিরব লাইট অফ করে আমার পাশেই শুয়ে পড়ল, কোন বাঁধা ছাড়ায়। তবে কাথাটা শুধু নিল না।
আমি ভেবেছিলাম কোন কান্ড করবে হয়ত।
যাক ভালোই!
_______
সকালে নিরবের অনেক পাশেই নিজেকে পেলাম। স্বাভাবিক ব্যপার।এক বিছানায় যেহেতু আছি সেহেতু ঘুমের মধ্যে তো আর দুরত্ব বজায় রাখতে পারব না।
আমি নিরবের দিকে একনজর তাকিয়ে তার দিকে হাত বাড়াতে গিয়েও সরিয়ে ফেললাম।
এখন ইচ্ছা থাকলেও এটা সঠিক সময় নয়।আমি চাই সে প্রথম আমাকে স্পর্শ করুক তাও আবার মন থেকে।
কোন জোর কিংবা দায়িত্ববোধ থেকে নয়।
অথৈ উঠে চলে যেতেই নিরব চোখ খুলল।আর মনে মনে বলল”তুই সত্যিই আমার জন্য পারফেক্ট অথৈ।আমিই ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছিলাম।
যতই নাহারের প্রতি আমার ঘৃণা আসুক আপাতত সেটা ভালোবাসার থেকে কমই দেখতে পাচ্ছি কারন এক সময় তাকে আমি কতটা চেয়েছি তা শুধু আমিই জানি।
যেদিন মনের উপর রাজত্ব করে নাহারের নাম সরাতে পারব সেদিন এই মনে শুধু তোর নামই থাকবে।”
নিরব ঘুমিয়ে ছিল ঠিকই কিন্তু ঘুমের মধ্যে কেউ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকলে এমনি এমনি বিরক্তিবোধ এ চোখ খুলে যায়।
এখানে যেহেতু সে একাই নেই তাহলে অথৈ ই তাকিয়ে আছে। তবুও সে চোখ খুলে নি কারণ চোখ খুললে অথৈকে অস্বস্তিতে পড়তে হত।
অথৈ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নিরব উঠে গেছে তাই সে বলল”কখন উঠেছ?”
নিরব অথৈর দিকে চেয়ে বলল”মাত্রই”
“ওহ!উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর নাস্তা করতে আসো। তোমার অফিস টাইম তো আমি জানি না। আমাকে পরে জানিয়ে দিয়ো একসময় এখন আন্টির কাছে গেলাম।”
অথৈ চলে গেলে নিরব উঠে বসে তারপর ফ্রেশ হতে যায়। অফিস টাইম ৯টা থেকে শুরু তার। এখন সবে ৮টা বাজে। তাড়াহুড়োর কিছু নেই।সব আরামসে করা যাবে।
সকালেই গোসল সেরে নেয় নিরব। সারাদিন তো আর সময় পাওয়া যাবে না।যদিও এখন নতুন তবুও এখন থেকেই টাইমলি সব করতে হবে তাহলে বসের বিশ্বস্ত হওয়া যাবে আর প্রয়োজনের সময় ছুটি নেওয়া যাবে।কখন প্রয়োজন আসে বলা তো যায় না।
খাওয়া দাওয়া, গোসল আর যাবতীয় কাজ শেষে ৮:৪০ এর দিকে নিরব বেরিয়ে যায়। অফিস একটু দূরে হওয়ায় অথৈ তাকে টিফিন এগিয়ে দেয়।নিরবও হাসিমুখে গ্রহণ করে।এই হাসি যেন অথৈ এর মনে আনন্দের বন্যা জাগিয়ে তোলে।
নিরব যাওয়ার পর আমি সব কাজ আন্টির হাতে হাতে শেষ করে ফেলি। আমাদের মাঝে তেমন একটা ফর্মালিটি নেই।
বিয়ের আগে আসলেও আমি আন্টিকে যেকোন কাজে সাহায্য করতাম।
শুধু নিরবের টানে নয়। আন্টির ভালোবাসার টানে।
আমরা আমাদের বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় আমার আম্মু যেমন নিরবকে তার ছেলের মতন ভালোবাসেন তেমনি আন্টিও আমাকে তার মেয়ের মতই ভালোবাসে।
যদি আমাদের সম্পর্কগুলো এরকম না হত তাহলে বিয়ে ভাঙার পর পুনরায় বিয়ে হওয়া একটা কল্পনা মাত্র ছিল।
সব কাজ শেষে গোসল করে নিলাম।এখন আমার কাজ হচ্ছে শাড়ি পছন্দ করা।
নাহার আপুর বিয়েতে পরার জন্য।শাড়ি পড়লে একটু বৌ বৌ ফিলিং আসবে।
নিরব কি পরবে তাহলে? পাঞ্জাবি?
শাড়ি পাঞ্জাবি তো এক জোড়ার মত। নিরবের অনেক পাঞ্জাবি দেখেছি আমি।
তার পাঞ্জাবিগুলো ছিল দোকানের কালেকশনের মত। একদম ইউনিক!
তাহলে আমাদের মিলিয়ে পরতে হবে।আহা!কি একটা ফিলিংস।
চলবে….