চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-০৫

0
1910

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০৫

আন্টির কথায় আমি মৃদু হাসলাম।তারপর আন্টি বলল”তোর মা জানে এত কান্ডের কথা”

আমি ঠোঁট উল্টে বললাম”তোমার ছেলে তোমাকে খুশি করার জন্য আমাকে কাজী অফিস গিয়ে বিয়ে করেছে আর আমিও তার কথায় তাল মিলিয়ে আম্মুকে সারপ্রাইজ দিব বলে কিছু বলি নি”

“তাহলে বাসায় চল”

“মানে কি? নতুন বউকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছ?”

“তা দিব কেন?আর তোদের বিয়ের কথা আমরা তিনজন ছাড়া আর কেই বা জানে?
তাই তোদের আবার বিয়ে দিব আর সেটা হবে সবার উপস্থিতিতে”

“তাহলে এখন?”

“তোদের বাসায় যাব”

আমাদের বাসায় পৌঁছে আম্মু দরজা খুলে আমাকে আন্টির সাথে দেখে ভ্রু কুচকালো।
হয়ত ভাবছে,গেলাম নিরবের সাথে আর ফিরছি আন্টির সাথে তাহলে সারপ্রাইজ কই?

“কিরে?তোর আন্টি তোর সারপ্রাইজ নাকি?কিরে হেনা?”

“আমি সারপ্রাইজ না। আমাদের ছেলে মেয়ে আমাদের আরো বড় সারপ্রাইজ দিয়েছে!”

“মানে?”

“মানে ওরা বিয়ে করে ফেলেছে”

আম্মু হা করে আন্টির দিকে তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল”মানে? কিভাবে”

তারপর আন্টি আম্মুকে সব বলল। আমাদের বিয়ের কথা আর বিয়ে কেন হলো এটাও।
আবার আমাদের বিয়ের আয়োজন করা হবে এটাও বলল।

আন্টি যেতেই আম্মু বলল”তুই কি আসলেই রাজি?”

আমি হালকা হেসে বললাম”আমি তো আগেই রাজি ছিলাম শুধু নিরব যে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে এটাই অনেক। বিয়ে ভাঙার পর তো তোমারো মুড অফ ছিল তাই যখন ও বিয়ের কথা বলল তখন আর না করতে পারি নি”

_____________
নাহার আপু তার বিয়ের কার্ড নিরবের বাসায় পৌঁছিয়েছে।নিরব তখন বাসায় ছিল না।ও আজকে জয়েন করেছে।

কার্ডটা আন্টি পেয়েছে।তারপর আমাকে জানিয়েছে।
একসপ্তাহ পরে বিয়ে তার। সেই হিসেবে আমাদের যাওয়া উচিৎ।আর সেই জন্য আন্টিকে বলেছি যাতে আমাদের বিয়েটা এই একসপ্তাহের মধ্যেই হয়ে যায়।
নাহার আপুর যাতে কিছুতেই মনে না হয় তার দেওয়া ছ্যাকার জ্বালায় নিরব কষ্ট পেয়েছে।
যদিও পেয়েছে তবুও আমাদের এমনটা বোঝাতে হবে যে সে তার মতই সুখে আছে আর বিয়েও করে ফেলেছে।তাও আবার তার আগেই।
নাহলে বিয়ের খুশির সাথে এই খুশিতেও নাহার আপু গদগদ হয়ে যাবে।
.
.
.
বিকেলে নিরবদের বাসায় যাওয়ার কথা আছে আমার। মানে আমি ঠিক করেছি যাব।
আমার মনে হয়েছিল নাহার আপু শুধু কথার কথা বলেছে বিয়েতে দাওয়াত দিবে কিন্তু সত্যিই যে এরকম করবে ভাবিনি।
নিরবের উপর এর প্রভাব কেমন হবে সেটা হয়ত জানিনা তবে খুব একটা যে ভালো হবে না সেটা তো জানা আছে।

গিয়ে বেল চাপতেই নিরব এসে দরজা খুলে দিল। আমার তো হার্টবিট মিস করছে।

হয়ত মাত্রই ফিরে হাত মুখ ধুয়েছে।এখনও চেহারায় পানি জমে আছে। আমাকে দেখেই নিরব বলল”অথৈ?এই সময়?আয় ভেতরে।”

আমি ভিতরে যেতেই নিরব দরজা লাগিয়ে দিল।কি বলে কথা শুরু করব বুঝলাম না।নিরব তার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল”কোন কাজ ছিল?”

নিরবের কোন টেনশন নাই তারমানে এখনো সে জানে না।
আমি বললাম”আন্টি কই?”

“রান্নাঘরে”

এইজন্যই নিরব দরজা খুলতে এসেছিল। আমি”ও” বলে রান্নাঘরের দিকে আসলাম।

আন্টি আমাকে দেখে বলল”কিভাবে নিরবকে এসব বলি বলত?”

“আমিও তো সেটাই ভাবছি। সোজাসুজি তো আর বলতে পারব না নাহলে সে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে বসে থাকবে।তারপর আবার নতুন চাকরি পেয়েছে সে।এখন ঠিকমত না গেলে তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে।”

আন্টি চুলাটা বন্ধ করে কাপের মধ্য চা ঢালতে ঢালতে বলল”তা তো ভাববার বিষয়”

“এক মিনিট,চা টা আমাকে দাও”

“খাবি?”

“আরে না! তোমার ছেলের জন্য কি না?”

“হুম”

“আগে বলো বিয়ের কার্ডটা কোথায় আছে বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি। তুমি শুধু তোমার ঘরে চুপচাপ বসে থাকো নয়ত বাইরে চলে যাও কিছু সময়ের জন্য।যখন ফিরে আসবে তখন দেখবে সবটা করে ফেলেছি আর বিয়ে কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করতে হবে”

“আচ্ছা ধর, এমনিতেও বাসায় মন টিকছে না।আমি বরং পাশের বাসা থেকে ঘুরে আসি”

“তাই যাও”

চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে হালকা ভাবে দরজা খুলে দেখি নিরব আছে কিনা।না দেখা যাচ্ছে না।কি গেল?আমি ঢুকে এদিক ওদিক তাকাতেই পিছন থেকে নিরবের শব্দ শোনা গেল”কারে খুজিস?”

ওর হঠাৎ কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে যাই।হালকা সাহস নিয়ে পিছনে ঘুরে তার সোফার দিকে এগিয়ে গিয়ে চায়ের কাপটা ইশারায় নিতে বলে বললাম”তোমার ঘরে আর কাকে খুজবো?”

সে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলল”আর কিছু?”

“সবসময় কি কিছু থাকা লাগবে? এমনি আসতে পারি না?”

“পারিস তো”

আমি তার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার থেকে কিছুটা দুরত্ব রেখে সোফায় বসে বললাম”চা শেষ করো,কথা আছে”

“কিসের কথা?”

“আগে চুপচাপ খাও, খাইতে খাইতে কথা বলতে হয় না”

এবার নিরব চুপচাপ নিজের চা শেষ করে পাশের টি টেবিলে চায়ের খালি কাপটা রেখে বলল”বল”

“ব..বলছি তা..যে আম আমরা বিয়ে করবো কবে?”

“কালকেই না করলাম?”

“সেটা তো আর মানুষ জানে না”

“আচ্ছা তো এখন আমি কি করব?”

“আন্টি যে তারিখ ঠিক করবে, সেই তারিখে পুনরায় বিয়ে করবে”

“আচ্ছা”

‍”তুমি আমাকে মন থেকে মানো?”

“না মানার কি আছে?”

“তাহলে একটা কথা রাখবে?”

“কি?”

আমি উঠে নিরবের ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে বিয়ের কার্ড টা নিয়ে নিরবের হাতে ধরিয়ে পড়তে বললাম।সে আমাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করল এটা কি?
আমি বললাম পড়লেই বুঝতে পারবে।

পুরাটা পড়ে নিরবের চোখ মুখে অন্ধকার দেখা দিল।ও চুপচাপ কার্ডটা আগের মত ভাজ করে পাশের টেবিলে রেখে দিল।

আমি চুপচাপ গিয়ে ওর পাশে বসলাম তবে আগের চেয়ে দুরত্ব কম রেখে।

“তো এখন কি চাস তুই?”

“আমি চাই আমরা ওই বিয়েতে যাই”

“আমাকে মারতে চাস তুই?আমি কিভাবে যাব? নিজেকে কন্ট্রোল করব কিভাবে?”

“তোমার এই করুণ অবস্থা, দুঃখী চেহারা দেখার জন্যই তো নাহার আপু তোমাকে দাওয়াত করেছে।এখন তুমিও যদি দেবদাসের মত কষ্ট পাও,না যাও তাহলে সে বুঝবে সে তার কাজে সফল।অন্যকে কষ্ট‌ দিয়ে সে সুখী আছে।তার এটাই মনে হবে, তুমিও কি এটাই চাও?”

“কিন্তু,,ও যখন অন্য কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলবে আমার সামনেই অন্য কারো হয়ে যাবে আমি কিভাবে নিব?”

“এইজন্যই তো আমরাও যাব As a couple”

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে