গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০৪
ভাইয়ার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ কেন এ কথা বলছে তাও আমার অজানা।
যে ছেলে বিয়ে করবে না বলে একমাস ধরে মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলো,নানা বাহানায় আমাকে বুঝাচ্ছিল সে আমাকে চায় না আজ সেই আমাকে বিয়ে করতে চায়!
এর নিশ্চয়ই কোন না কোন বড় কারণ আছে।বড় কোন কারণ না থাকলে এত বড় সিদ্ধান্তও নেয়া যায় না।
তাহলে কি নাহার আপুর সাথে কিছু হয়েছে?
হলেও কি এত বড় সিদ্ধান্ত নিত?
আমি চট করে প্রশ্ন করলাম”নাহার আপুর সাথে কিছু হয়েছে তোমার? হলে মিটমাট করে নাও!
এভাবে বাচ্চাদের মত সিদ্ধান্ত নিচ্ছ কেন?”
আমার কথায় নিরব ভাইয়ার ফ্যাকাশে মুখটা আরো ফ্যাকাশে হয়ে গেল।তারপর ভাইয়া বলল”ঠিক ধরেছিস, নাহারের সাথে ঝামেলা হয়েছে আমার। তবে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা বাচ্চাদের মত নিই নি আর না নাহার কোন বাচ্চাদের মত ক্ষমার কাজ করেছে”
“কি করেছে?”
ভাইয়া আমাকে আচমকাই জড়িয়ে ধরে বলল”তোর কথাই ঠিক ছিল অথৈ!ও আমাকে ঠকিয়েছে। আমি তোকে বিশ্বাস করি নি, তোর ভালোবাসাকে সম্মান করি নি।সবাই যখন নাহারের বিপক্ষে বলত তখন আমি হাইপার হয়ে যেতাম। একবারও ভাবতাম না যে একজন বা দুইজন হয়ত চাইবে আমরা আলাদা হই কিন্তু আমার শত্রু গুলোও বলত”ও ভালো না,দেখিস তোকে ঠকাবে।”আমি বিশ্বাস করতাম না।
জানিস?আজ আমি আমার চাকরির খুশিতে ওকে বলতে গেছিলাম”will you marry me?”
বাট তার আগেই ও নিজের বিয়ের খবর দিয়ে দিল।ওর ফ্যামিলি থেকে জোর করলে আমি কিছু বলতাম না বাট ও নিজে রাজি ছিল।একটাবারও বিয়ে আটকানোর চেষ্টা ও করে নি।আর আমাকে কি বলছে জানিস?
ওর নাকি সাজিদ নামে আগে থেকেই বয়ফ্রেন্ড ছিল আর ও সরকারি চাকরি করে আর ও ওকেই বিয়ে করবে।
আমি এতটাই স্তব্ধ ছিলাম যে ওকে কিছু বলতেও পারি নি।উল্টে ও আমাকে তার বিয়েতে দাওয়াত করেছে।
এর থেকে তো এটাই প্রমাণিত হয় যে ও আমাকে কখনো ভালোইবাসে নি।
আমি জানি ও যেই ছেলেকে বিয়ে করবে তার টাকার জন্যই করবে।”
তারপর ভাইয়া একটু থামলো। আমিও স্তব্ধ হয়ে সবটা শুনলাম। ভালো হয়েছে ভাইয়া ওর সত্যিটা নিজ থেকে জানতে পারলো নয়ত দেরি হয়ে গেলে যে কি হত!
যাক দেরি হলেও বুঝতে তো পেরেছে।
আমি ভাইয়াকে বললাম”তাহলে কি তুমি আমাকে নাহার আপুর বিকল্প হিসেবে চাচ্ছ?”
ভাইয়া আমার কাছ থেকে সরে দাঁড়িয়ে চোখের পানি টুকু মুছে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল”কখনোই না! তোর সাথে ওর তুলনা কখনোই হয় না। তুই আমার ব্যাপারে ভেবে আমাকে চেয়েছিস আর ছেড়েও দিয়েছিস আর ও আমার ব্যাপারে কখনো ভাবেই নি। তুই তোর মত আর ও ওর মত।আমি তোকে তোর মতই চাই”
“তুমিতো নাহার আপুকে অনেক ভালোবাসো।সে যদি কোনদিন তোমার কাছে ফিরে আসতে চায় তাহলে সেদিনই কি আমার তোমার জীবনে শেষ দিন হবে?”
“কখনোই না! ভুলের ক্ষমা হয় বিশ্বাসঘাতকতার না”
“আমি কখনো তোমার ভালোবাসা পাব?”
“চেষ্টা করব”
“আমার একটা শর্ত আছে”
আমার কথা শুনে ভাইয়া প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।তা দেখে আমি বললাম”তুমি আমার হচ্ছিলে না আমিও কিছু বলছিলাম না কিন্তু এখন যেহেতু নিজ থেকেই আমাকে চাইছ তাই আমাকে ভালোবাসতে না পারলেও আমি চাই তুমি আমার হয়েই থেকো, আমাকে বিশ্বাস করো তো?”
“করি।আমি রাজি”
তারপর ভাইয়া বলল”এবার আমাকে বিয়ে করা যায় তো?”
আমি মৃদু হেসে জবাব দিলাম”যায়”
“তাহলে চল”
“কোথায়?”
“কাজি অফিস”
“কাজি অফিসে বিয়ে করব?”
“কেন? সমস্যা আছে?”
“না কিন্তু সবাইকে না জানিয়ে?”
“সবাই তো রাজি ছিলই।আর আমাদের বিয়েটাতো ওরা দিতই তাহলে?”
“তবুও”
“আম্মুকে সারপ্রাইজ দিব! সেদিন বিয়েতে না করায় আম্মু কষ্ট পেয়েছিল আর সেই কষ্ট আজ তোকে হঠাৎ বিয়ে করে ঘুচিয়ে দিব”
“Good idea”
তারপর ভাইয়া মৃদু হেসে আমার হাত ধরেই সামনে এগোতে লাগলো। আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম। ভাইয়া আবারো পিছনে ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে দেখল আমি হাতের দিকে তাকিয়ে আছি তাই ধিরে ধিরে ছেড়ে দিল।আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে গেলাম তারপর বললাম”শুনো”
ভাইয়া কিছুটা এগিয়ে ছিল আমার থেকে।আমি ডাকতেই আমার পাশে এসে বললো”কি হলো?”
আমি তার হাতটা আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে মৃদু হেসে বললাম”এবার চলো”
সেও হাসলো তবে কিছু বলল না। সিঁড়ি দিয়ে নেমে আমরা আমাদের রুমের সামনে আসতেই আমি বললাম”বাসায় কেন?”
“তোর আম্মুকে জানাতে হবে না?”
“জানাতে কেন হবে?”
“জানাবি না?”ভাইয়া অবাক হয়ে বলল
“জানাব, তবে ডিরেক্ট বিয়ের পর। আমিও আম্মুকে সারপ্রাইজ দিব। ভালো হবে না?”
“নাহ ভালোই!”
“কিন্তু হ্যাঁ, তোমার সাথে এখন বেরোচ্ছি এটা বলে যেতে হবে নয়ত আমাকে আম্মু খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে যাবে। একটামাত্র সন্তান কিনা!”
দরজায় কয়েকবার টোকা দিতেই আম্মু খুলে দিল।তারপর আমাদের একসাথে দেখে বললো”কি কথা হলো এত?”
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম”তেমন কিছু না তবে এখন আমি বেরোব ভাইয়ার সাথে”
“এই অবেলায় কোথায়?”
“সারপ্রাইজ আছে!যাই?”
আম্মু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল”তাড়াতাড়ি আসবি আর নিরব ওর খেয়াল রেখ।একা যত তিড়িং বিড়িং করে!”
ভাইয়া বিড়বিড় করে বলল”এখন তো আমাকে সারাজীবনই ওর খেয়াল রাখতে হবে”
_____________
ভাইয়াদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর ভাইয়া।ওহ সরি আমার নব বিবাহিত বর আর আমি।
তখন তো বললাম ঠিকই যে সারপ্রাইজ দিব কিন্তু এখন ভয় লাগছে আর তার কারণ হচ্ছে আন্টি যদি নিরবকে কোন কড়া কথা শুনিয়ে দেয়?
তাহলে তো ওর খারাপ লাগবে আর ওর খারাপ লাগবে মানেই আমার খারাপ লাগবে।
বেল চাপতেই আন্টি এসে দরজা খুলে দিল। ওড়নায় মুখ মুছতে মুছতে আমাদের দিকে তাকালেন।হয়ত রান্না করছিলেন।
“কিরে?তোরা একসাথে?”ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল আন্টি
আমাদের কারো মুখেই কথা নেই।নিরব বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না আর আমি কি বলব খুঁজেই পাচ্ছি না।
আমাদের চুপ থাকতে দেখে আন্টি আবারো একই প্রশ্ন করলেন। এবার নিরব একদমে বলে দিল”আমরা বিয়ে করেছি আম্মু”
কথাটা শুনে আন্টি কিছুক্ষণ আমাদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে বললেন”তোরা আর মশকরা করার সময় পেলি না? মানুষ পেলি না নাকি বিষয় পেলি না?”
“I’m serious ammu!”
এবার আন্টি আমাদের দিকে এমন করে তাকালেন যেন জান যায় যায় অবস্থা।তারপর বললেন”তোদের বিয়েতো এমনিতেও দিচ্ছিলাম তোরাই তো করলি না এখন আবার এগুলা কি বলিস”
এবার আমি মুখ খুললাম”আন্টি ঘরে চলো!আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছি”
“কি বুঝাবি?”
“আরে চলোই না!”
তারপর আন্টিকে রুমে নিয়ে এলাম।
“তোরা কি সত্যি বিয়ে করেছিস?”
“হ্যাঁ আন্টি সত্যি”
তাহলে নিরবের প্রেমিকা?ওর কি হলো?নাকি তোদের বিয়ে করার ইচ্ছাই ছিল, শুধু শুধু আমাদের টেনশন দিলি?
“ওর প্রেমিকা ওকে ঠকিয়েছে”
“কি? মানে?”
তারপর আন্টিকে আমি সবটা বললাম।এটাও বললাম যে তার ছেলে চাকরি পেয়ে নিয়েছে।
সবটা শুনে আন্টি বলল,”তাহলে তো নিরব তোকে ওর প্রেমিকা নেই বলে বিয়ে করেছে,সে যদি ফিরে আসে?”
“বিয়ে করার আগে শর্ত দিয়েছিলাম,তার জীবনে আগে যা ছিল তার পরোয়া আমি করি না কিন্তু তার বর্তমান আর ভবিষ্যত জুড়ে যেন আমিই থাকি।সেও সবটা মেনে নিয়েছে।
তুমি শুকরিয়া করো বড় কিছু হওয়ার আগেই সে সবটা জানতে পেরেছে।এজন্যই বলে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
কিন্তু ও যত বিশ্বাসঘাতকতাই করুক একটা সময় তোমার ছেলে ওকে ভালোবাসত তাই এত তাড়াতাড়ি ও ওকে ভুলতে পারবে না আর তাই আমাদের ওকে সময় দিতে হবে আর তুমিও ওকে এ নিয়ে কোন কথা বলো না।
ও যে সবটা ভুলে নতুন করে বাঁচতে চেয়েছে মুভ অন করতে পেরেছে এটা কিন্তু সবাই পারে না।
ও ওর কাজের জন্য অনুতপ্ত আর এটাও ও ভালোমত বুঝেছে যে নাহার আপু বিশ্বাসঘাতক। তার কোন ক্ষমা হয় না”
“এত ভুলের মাঝেও তুই নিরবকে ক্ষমা করে দিলি? ওকে কিছুদিন শাস্তি দেওয়া উচিৎ ছিল তারপর মেনে নেয়া”
“নাগো,তখন কোন শাকচুন্নী আবার নিয়ে যেত আমার বরকে।একটার থেকে তো আল্লাহ বাঁচিয়েছেন।
আর সত্যি বলতে তার চেহারার দিকে তাকিয়ে আমার প্রচুর মায়াও লাগছিল।আর আমি তো তোমাকে বলেছিলাম, যেদিন সে আমাকে মন থেকে বিয়ে করতে চায়বে সেদিন আমি আর দুবার ভাববো না।আর ক্ষমা করা তো মহৎ গুণ, তুমিও ক্ষমা করে দাও আর মেনে নাও আমাদের”
“যে আমার ছেলের জন্য বিয়ের আগে এতটা ভেবেছে সেটা তুই আর তাই তোকে আমার এত ভাললাগে”
চলবে…