চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

1
2509

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:১২
:১২_ও_শেষ

এভাবেই কিছুমাস অতিবাহিত হলো।নিরবের স্বভাব আগের তুলনায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
এখন ও অনেক কেয়ার করে আমার।সব কিছুতেই তার পার্মিশন নেওয়া লাগবে।
ও নিজে চেষ্টা করেছে বলেই পরিবর্তিত হতে পেরেছে।

আজকে ছুটির দিন বলে আমরা ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
নিরব আর আমি বিকালের দিকে বের হলাম।
আধা ঘন্টা হাঁটাহাঁটির পর আমরা একটা নির্জন জায়গায় এসে পৌঁছলাম।
সেখানেই আমরা বসলাম কিছুক্ষণ। নিরবের কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছি আমি।
দূরে একটা বাড়ি থেকে একটা মেয়ে বিষণ্ণ মনে বের হলো।
তাকে অনেক চেনাচেনা মনে হলো আমার।
একটু পরেই বুঝতে পারলাম ওটা নাহার আপু। তবে চোখেমুখে কেমন যেন ভাব।
বাড়িটাও তাদেরই।সেদিন বিয়েবাড়ির সাজ ছিল আর আজ সাধারণ তাই চিনতে পারি নি।
আমি নিরবকে দেখালাম,সেও প্রথমে চিনতে পারে নি।

আমরা এগিয়ে গেলাম সেদিকে,যদিও নিরব যেতে চাইছিল না তবুও আমি নিয়ে এলাম কারণ তার এই অবস্থা কেন হলো তা জানার অনেক আগ্রহ জাগলো আমার মনে।

আমাদের হঠাৎ এখানে দেখে নাহার আপু অনেক অবাক হলো।
সে কিছু বলার আগেই আমি বললাম”কেমন আছো?”

“যেমন করে রেখেছ সে অবস্থায় ভালো থাকার আশা করো কিভাবে?”

তার কথা শুনে ভীষণ অবাক হলাম আমি। কিছু বুঝলামও না তাই নিরবের দিকে চেয়ে দেখলাম সেও আমার দিকে না বোঝার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।
আমি বললাম”আমি রেখেছি মানে?কেমন অবস্থায়?আর আমার সাথে কি সম্পর্ক?”

“বাহ!এখন ভালো সাজা হচ্ছে তাই না? তোমার বলাতেই তো আমি নিরবকে ছেড়ে দিয়েছিলাম, শুধুমাত্র তোমার কথায় ইমোশনাল হয়ে আজ আমার এই অবস্থা!
আমার স্বামিও আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছে!আজ নিরব আমার সাথে থাকলে আমরা কতই না সুখি হতাম কিন্তু তোমার কথা ভেবে আমি সবটা বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি”

আমি অবিশ্বাসের চোখে নাহার আপুর দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি এরকম কিছুই করিনি।আমি নিরবের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেও অবিশ্বাসের চোখে নাহার আপুর দিকে তাকিয়ে আছে।
আমার মন বলছে সে এসব বিশ্বাস করবে না তবে কোথাও না কোথাও মনে হচ্ছে যদি ও বিশ্বাস করে ফেলে?
নাহার আপু সবটাই এমন ভাবে বলেছে যেন সবটা সত্যি, কিন্তু কিছুই সত্যি না!

নিরব বললো”এসব কি বলছ নাহার?”

“আমি ঠিকই বলছি নিরব!”বলেই সে এগিয়ে গিয়ে নিরবকে জড়িয়ে ধরল।
আমার বুকে ধক করে উঠল।নিরব শুধু আমার!
আর তার এই বুকেও শুধু আমারই স্থান, সেখানে নাহার আপু কিভাবে?
নিরব ওকে সরাচ্ছে না কেন?
ও কি বিশ্বাস করে ফেলল নাহার আপুর সবটা?

টের পেলাম চোখের কোণে জল এসে ভিড় করেছে।আমি বললাম”চলো না আমরা বাসায় ফিরি, নাহার আপু মিথ্যা বলছে,আমি এমন কিছুই করিনি”
নাহার আপু নিরবের বুক থেকে সরে এসে আমার দিকে এগিয়ে মারার জন্য হাত উঠাতেই কে যেন তার হাত ধরে ফেলল।
আমি তাকিয়ে দেখলাম একজন অচেনা মানুষ। সে নাহার আপুর হাতটা ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল”আর কত সংসার ভাঙবে তুমি?”

তার কথায় নাহার আপু দ্বিতীয় কোন প্রশ্নোত্তর করল‌ না।
ততক্ষণে নিরবও আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।সে আমার মাথাটা তার বুকে চেপে ধরে এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরল তারপর আমার উদ্দেশ্য বলল”চল বাসায় ফিরে যাই”
আমরা অগ্রসর হতেই পিছন থেকে সেই ব্যাক্তিটি বলে উঠলেন”সত্যটা শুনবেন না?”
আমি আর নিরব থেমে পিছন ফিরে ব্যাক্তিটির দিকে তাকালাম।
আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি তখনও।
ব্যাক্তিটি আমাদের অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে নিরবের উদ্দেশ্য বলল”আপনার পরিচয় হয়ত “নিরব”।
আপনাকে দেখে বুঝতে পেরেছি আপনি আপনার স্ত্রীকে অনেক বিশ্বাস করেন কিন্তু তবুও পরবর্তীতে যেন এই নিয়ে কোন প্রশ্ন আপনাদের মনে না জাগ্রত হয় তাই সত্যটা জানাতে চাই।আশা করি শুনবেন।”

নিরব শুধু মাথা নাড়ল। কিছু বলল না।নিরব তখনও আগের ন্যায় আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আর নাহার আপুও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
চারপাশে তখনও কোন মানুষের আশা যাওয়া দেখা যাচ্ছে না।

ব্যাক্তিটি বলতে শুরু করল”আমি নাহারের হাসবেন্ড।আপনারা হয়ত বিয়েতে দেখেছিলেন বলে ভুলে গেছেন। আমারও মনে ছিল না কিন্তু আপনার স্ত্রীকে বিয়ের দিন নাহারের সাথে কথা বলতে দেখেছিলাম বলে আজ দেখে চিনতে পারলাম।
কি কথা হয়েছিল তা তো শুনিনি তবে তারপর থেকেই নাহারের মন খারাপ থাকত। এমনিতেও সে কোন কাজ করত না।এই নিয়ে মায়ের অভিযোগের শেষ ছিলনা তবে নাহার সেগুলো আমলে নিত না।
আমি চুপচাপ সবটা শুনতাম তবে নাহারকে কিছু বলতে পারতাম না কারণ অনেক ভালোবাসতাম ওকে।
অন্য দিকে আম্মুকেও অনেক ভালোবাসি।তার বিরুদ্ধে কিছু বলারও সাহস ছিল না।
শুধু বাড়ির কাজ না করলে মায়ের তেমন একটা অভিযোগ থাকত না তবে নাহার তার নিজের কাজগুলোও করত না।
যা মায়ের জন্য বাড়তি ছিল।
আজ বুঝতে পারছি নাহারের সেই মন খারাপের কারণ টা আপনি।
কিন্তু সে এখন যেগুলো বলেছে সেগুলো মিথ্যা।আমি সবটা শুনেছি।
নাহার নিজে থেকেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল।
আর আমি তাকে ডিভোর্স দিতে চাইনা, পরিস্থিতি এরকম যে আমার ভা..ভালোবাসা আমার থেকে..যাই হোক এটাই ছিল সবটা”
বলতে বলতে ভদ্রলোকের চোখের কোণে পানি এসে গেছে।

হঠাৎ নিরব আমাকে ছেড়ে নাহার আপুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল”আমি তোমাকে ভালোবাসতাম নাহার,আর এই ছেলেটা তোমাকে ভালোবাসে।
তোমার কথা বলতে গিয়ে তার চোখের কোণে পানি এসে গেছে, ভাবতে পারছো?
ও ঠিক কতটা চাইলে তার এরকম অবস্থা হতে পারে?
তোমার মত কি হবে তাতো জানিনা তবে আমি চাইব তোমরা সবটা ঠিকঠাক করে নাও নিজেদের মাঝে
ছেলেটা সত্যি চায় তোমাকে”
বলেই নিরব আমার হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।আমি পিছন ফিরে দেখলাম ছেলেটা চলে যেতে চাইলে নাহার আপু হাত ধরে আটকে ফেলল।
ছেলেটা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো নাহার আপুর দিকে।

নাহার আপু সরি বললো। দূর থেকে যা বুঝলাম।
হঠাৎ ছেলেটা নাহার আপুকে জড়িয়ে ধরল, আপুও কান্না করতে করতে জড়িয়ে ধরল।

আমি নিরবের দিকে চেয়ে বললাম”সব ঠিক হয়ে গেছে”

নিরব আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালে আমি পিছনের দিকে ইশারা করলাম।
সেও পিছন ফিরে একবার ওদের দিকে চেয়ে হাসলো।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকলো।
ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে।
আমি বললাম”যদি ওই ভাইয়াটা এসে সত্যি না বলত তাহলে তুমি আমাকে অবিশ্বাস করতে?”

“অবিশ্বাস করলে ওই ছেলের কথা শুনার আগে তোকে নিয়ে আসতাম না”

আমি কিছু বললাম না।নিরব আবারও বললো”ভালোবাসি”

আমি হেসে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললাম। এতদিনে এসে কথাটা শুনলাম ‌
“আমার উত্তর?”

“আমিও”

“আমিও কি?”ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল নিরব

“ভালোবাসি”

“”ভালোবাসা ভালোবাসি,আছি মোরা পাশাপাশি””

🥀🥀 *সমাপ্ত*🥀🥀

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে