চেয়েছিলাম তো তোমাকেই পর্ব-১১

0
1870

গল্প:#চেয়েছিলাম_তো_তোমাকেই
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:১১

কালকের নিরবের বলা কথাটা নিয়ে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ভেবেছি আমি।
ফলাফল তেমন পাইনি শুধু ভাবতে ভালো লেগেছে।
আম্মুও অনেকটা সুস্থ এখন।
আব্বুকে বলেছি তিনি যেন এখন থেকে বাসায়ই থাকেন নয়ত তার সাথে কোন কথা বলব না তাই তিনিও রাজি।

“অথৈ!”

নাস্তা বানাতে বানাতে এগুলাই ভাবছিলাম, হঠাৎ আব্বুর ডাকে আমি রান্নাঘর থেকেই চেঁচিয়ে বললাম”কি হয়েছে?”

“নিরব এসেছে!”

নিরব এসেছে মানে কি?
আবার কি শক দিতে চায় ও আমাকে?
কালকের কথা থেকেই বেরুতে পারি নি আর আমার সামনে আসলে ও যেকোন এমন কথা বলবেই যাতে আমার ভাবনার শেষ না থাকে সেটা নিয়ে।

সে যাইহোক,আমিও এগিয়ে গেলাম বসার ঘরের দিকে। তাকে বসতে বললাম তারপর আবারো ফিরে গেলাম।
একটু পর আম্মু এসে দাঁড়ালো আমার পাশে।

“তুমি কেন এসেছ”

“সবসময় বসে থাকতে ভালো লাগে না আর আমিতো সুস্থ,সব করতে পারব”

“যখন চলে যাবো তখন কইরো, এমনিতেও তো সারাজীবন করেই যাচ্ছো”

আম্মু আর কিছু বলল না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবে ৮ টা বাজে।
নাস্তা নিয়ে টেবিলে রাখলাম আমি।
সবাইকে নাস্তা দিয়ে আমিও খেলাম।তারপর যে যার রুমে চলে গেল।
আমিও সব গুছিয়ে রুমে চলে আসলাম।
নিরব ঘরেই ছিল।আমি যেতেই ও উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।
আমি তখনও আগের মত এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি।
কিন্তু নিরব আমার আরো কাছে আসছে দেখে আমি পিছাতে লাগলাম।
দুই কদম পিছনে যাওয়ার পরই নিরব একটান দিয়ে আমাকে তার পাশে আনলো আর দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে দিল।
Main target ওর দরজা লাগানো ছিল যা বুঝলাম।

তারপর আমাকে দরজার সাথে লাগিয়ে দুই পাশে দুই হাত দিয়ে একটু ঝুঁকে দাঁড়ালো সে।
তার হুটহাট আচরণে হতবাক হয়ে যাই আমি।
নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।
তাই নিরব বললো”জীবনে তো এত লজ্জা পেতে দেখি নি,এত লজ্জা আসছে কোথা থেকে?”

“তোমাকেও এত কাছে আসতে দেখি নি আমি, দূরে সরো নাহলে দম আটকে মারা যাব”

“আমি কি অক্সিজেন আটকে দাঁড়িয়ে আছি নাকি?যে তোর শ্বাস আটকে যাচ্ছে”

“তোমার যে বিশাল দেহ তাতে অক্সিজেন,কার্বনডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন,হাইড্রোজেন সব আটকে যাবে”

নিরব মুখ বাঁকিয়ে সরে গেল।আমি যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

“বললে‌ নাতো সকাল সকাল কেন এসেছিলে?”

“এসে তোর খুব ক্ষতি করেছি?”

“সোজা উত্তর দিতে পারো না?”

“তোর থেকেই দেওয়া শিখেছি”

“আচ্ছা বলতে হবে না”

“বলতেসি,বলতেসি। বাসায় মন বসছিল না তাই আম্মুকে বলেছি আমার অফিস জলদি যেতে হবে আজ তাই জলদি বেরুচ্ছি”

আমি হাঁ হয়ে তার কথা শুনলাম তারপর বললাম”এত মিথ্যা কবে থেকে বলতে শিখলে?”

“একটু আধটু মিথ্যা বলতে হয়”

“যাও সরো তোমার অফিস নেই?”

নিরব ঘড়ির দিকে এক নজর চেয়ে বলল”হ্যাঁ অবশ্যই আছে,তোর জন্য দেখি আমার অফিস ও টাইম মতো যাওয়া হবে না”

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম”আমি ধরে রেখেছি নাকি?”

“মানা করসি আমি?ধর”বলেই দুই দিকে হাত প্রসারিত করল নিরব‌।মানে যাকে বলে”শাহরুখ খান”পোজ আরকি

তার কথা শুনে আমি উল্টোদিকে ঘুরে বিড়বিড় করে বললাম”এর সাথে কথা বললেই লজ্জা পেতে হবে।

নিরব ততক্ষণে আমার পিছনে এসে টাইট করে জড়িয়ে ধরে টুপ করে ডান গালে একটা চুমু খেয়ে চলে যেতে যেতে বলল”সন্ধ্যায় নিতে আসব,রেডি থাকিস”

আমি শুধু কান দিয়ে শুনলাম কিন্তু বলতে পারলাম না কিছুই।অথচ তাকে বলা উচিৎ ছিল”সাবধানে যেও, আমি রেডি থাকব”
কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না।
খাম্বার মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর রুম থেকে বেরিয়ে এলাম আমি।
ততক্ষণে নিরব বেরিয়ে চলে যাওয়ার দুই চার মিনিট পার হয়েছে।
দরজাটা লাগিয়ে রুমে আসলাম আমি।

সন্ধ্যায় নিরব নিতে আসলে আব্বু আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসলাম আমরা।
সন্ধ্যা হওয়ায় আকাশের আলো নিভতে শুরু করলেও কৃত্রিক আলোয় শহর ঝলমল করছে।
কখনো কোন ল্যাম্পপোস্ট, কোন দোকান কিংবা কোন গলির আলো।
এভাবেই শত আলোয় শহর আলোকিত।

বাড়িতে এসেই ফ্রেশ হয়ে নিল নিরব। আমিও আন্টির খোঁজ খবর নিয়ে রুমে আসলাম।
তার একটুপর নিরব আসল।
এই সময়টা আমার কোন কাজ থাকেনা বলেই ফোন স্ক্রোল করি।
আজও সেটাই, তবে আমার মনে হচ্ছে নিরব এদিকেই তাকিয়ে আছে কিন্তু একটু আগেই সেও ফোন নিয়ে বসল।
তাহলে কি আমার মনের ভুল?

যাই হোক,সেসব পাত্তা না দিয়ে আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে থাকলাম।
পড়াশোনার প্রতি কানেক্টেড না থাকলেও আমি তাদের সাথে কানেক্টেড।
হঠাৎই বাইরে কে যেন কলিং বেল চাপ দিল।
তা শুনে দুজনেই নিজেদের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পর আমি নিরবকে বললাম দরজা খুলে দিতে।

সে দরজা খুলে ফিরে এলো ঠিকই তবে চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ।
তাই বললাম”কে এসেছে?”

“পাশের বাসার আন্টি!‍”থমথমে মুখে বলল নিরব

“তাতে তোমার এমন অবস্থা কেন?”

“সিমা আন্টি এসেছে।আর কিছু শোনা লাগবে তোর? উনার কাজই তো হচ্ছে কখন কার ছেলে মেয়ে কি করল তার তদারকি করা,না জানি আজ কি নিউজ নিয়ে হাজির হয়েছেন”
(পাঠকদের মধ্যে কারো নাম”সিমা”হলে আমার নামে কূটনামি করবেন না 🐸।আই আর নাম খুঁজে পাই নাই।)

আমি কিছু না বলে চুপচাপ রইলাম। আমারও মেজাজ তুঙ্গে।
যাইহোক, একটু পর আন্টি হাসতে হাসতে আমাদের রুমে আসল।
তা দেখে আমরা দুজনেই নড়েচড়ে ঠিকঠাক হয়ে বসলাম।

নিরব জিজ্ঞেস করল”হাসছ কেন?আজ সিমা আন্টি কূটনামির বদলে কোন কৌতুক বলেছে নাকি?”

আন্টি হাসি থামিয়ে বলল”আমার কাছে তোদের দুজনের অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। তুই নাকি সন্ধ্যা বেলায় মেয়ে নিয়ে ঘুরছিস,সেদিনও (যখন অথৈকে নিরব রাখতে গিয়েছিল)ঘুরছিলি। তোদের মধ্যে নাকি কিছু চলে”

“তুমি কি বললে তারপর?”আগ্রহের সাথে বলল নিরব

“তারপর আর কি? বললাম জামাই-বৌ তো একসাথেই ঘুরবে এটাই স্বাভাবিক।এটা শুনে যেন উনার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।উনি জিজ্ঞেস করলেন তোদের বিয়ে কখন কিভাবে হলো?
আমি বললাম ঘরোয়া ভাবে হয়েছে তাই বেশি মানুষ জানে না।”

আন্টির কথা শেষ হতেই আমি আর নিরবও হাসতে লাগলাম।নিরব হাসতে হাসতে বলল”তোমাকে আর কষ্ট করে আমাদের বিয়ের কথা কাউকে জানাতে হবে না,দেখবা কাল আমাদের বাসায় প্রেস ও এসে হাজির হবে”বলেই আবারও হাসতে থাকল নিরব।

তারপর রাত হতেই আমরা শুয়ে পড়লাম। তবে আজ নিরব পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছে আমাকে।
তার এই হঠাৎ পরিবর্তন গুলো চোখে পড়ার মতো।
তবে ভালোই লাগে।
কিছু অভ্যাস, কিছু স্মৃতি থাকুক না।

সাথে আমিও থাকি,এটাই তো চাই।
দুজন মানব জোড়া শামুকের মতো লেগে আছি কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই।
অনুভবেই অস্ত্বিত্ব গ্রহণ করি।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে