চিলেকোঠার_ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
1216

#চিলেকোঠার_ভালোবাসা
#পর্ব_৪
#Adharer_Musafir (ছদ্দনাম)
(ফাহমিদা ইফ্ফাত ছিদ্দীকা)
.
.
.

কথার প্রতিটা লাইনে আমি আশ্চর্য হয়ে আছি।
সে কি কোনো ভাবে কিছু আঁচ করতে পেরেছে?
কিন্তু কিভাবে, দু’দিনের পরিচয় আমার কথার সাথে।
নিলাকে নিয়ে তো আমি কথাকে কিছুই বলিনি, এমনকি তার সাথে আমার তেমন কথাই হয়নি।
আমাকে অবাক করে দিয়ে কথা বললো–

— কি হলো কি ভাবছেন!
এটাই ভাবছেন তো, আমি কেনো এসব বলছি!?
আসলে আমি তখন আপনাকে কাঁদতে দেখে ফেলেছি।
ঐ যে যখন একটা আপু একটা ছেলের সাথে বাইকের পেছনে করে যাচ্ছিলো আর আপনি তাকিয়ে ছিলেন।
তখন আমি আপনাকে কাঁদতে দেখেছি।
এখন দয়া করে এটা বলবেন না যে এসব মিথ্যে। মেয়েরা আবার এসব ব্যাপারে ভালোই বোঝে।

কথা যে আমার দিকে কোনো কিছুর জবাবের আশায় বসে আছে তা আমি ঢের বুঝতে পারছি।
কিন্তু কথাকে জবাব দেয়ার মতো কোনো ভাষা যে আমার কাছে নেই।

আমার চুপ করে থাকা এই মেয়ের বোধহয় কোনোবারই পছন্দ না।
নিঃসঙ্কোচ ভাবে কথা বললো–

— আমি জানি না আপনার মনের অবস্থা এখন ঠিক কেমন, তবে সত্যি বলতে কি জানেন।
প্রকৃত ভালোবাসা একবারই আসে।
যার সত্যতা যাচাই করতে হয় না।
সেখানে শুদ্ধতার ঘাটতি থাকে না, আর সেই ভালোবাসাটা একতরফাই বেশি হয়ে থাকে।
একপক্ষ এর মর্ম বুঝে না আর অন্যপক্ষ বুঝাতে না পেরে নিজেই অবুঝ হয়ে থেকে যায়।

কথার এমন সাহিত্য মাখানো কথায় আমি তার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছি।
মেয়েটাকি মুহূর্তেই মন পড়তে পারে?
সব মেয়েদের নাকি মন পড়ার একটা বিশেষ ক্ষমতা থাকে, আমি অবশ্য এই থিউরিকে মানি না।
এটা সত্য হলে নিলা অবশ্যই আমাকে বুঝতো।

আমার তাকিয়ে থাকাতে নিলা বোধহয় একটু লজ্জাই পেলো।
আমার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে খোলা আকাশের দিকে দৃষ্টি দিলো।
মুচকি হেসে কথাকে বললাম-

তোমাকে কিন্তু চশমা ছাড়াই বেশ সুন্দর লাগে।

দ্রুত সেখান থেকে চলে এলাম আমি।
হুট করে যে আমার মুখ থেকে এমন কথা বের হয়ে যাবে আমি নিজেও বুঝতে পারিনি।
তাই আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত প্রস্থান করলাম সেখান থেকে।
কথা যে আমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে সেটা আমি না দেখেই বলে দিতে পারবো।
মেয়েটাও বোধহয় আমার এমন কথার সম্মুখীন হবে সেটা আন্দাজ করতে পারেনি।
চিলেকোঠার দরজা পেরিয়েও আমি থেমে গেলাম।
দু’কদম পেছনে ফেলে উঁকি দিয়ে একবার কথার মুখটা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।
সেদিকে তাকাতেই দেখি কথা চশমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
ইশশ কি ভাবছে মেয়েটা, বড্ড বোকামি করে ফেললাম আমি।

🍂
🍂
🍂

পরদিন ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ করে নোটসগুলো চেক করতে করতে একটু দেরি হয়ে গেলো।
লাইব্রেরিতে গিয়ে কিছু বই ফেরত রেখে আসতে গিয়ে নিলার মুখোমুখি হলাম।
নিলাকে দেখেই মাথা নিচু করে চুপচাপ সেখান থেকে চলে আসতে যাবো ঠিক তখনই পেছন থেকে নিলা আমার নাম ধরে ডেকে উঠলো।
ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম আমি সেখানেই।
তার দিকে তাকানোর মতো রুচি মন মানসিকতা কিংবা রুচিবোধ কোনোটাই আমার অবশিষ্ট নেই, সেখানে কথা বলার চিন্তা-তো বাদই দিলাম।

— শুনলাম তুমি নাকি ভার্সিটির জুনিয়রদের সাথে চুটিয়ে প্রেম করছো!
বাহ্, বলি ব্রেকআপ হতে না হতেই আরেকটা জুটিয়ে ফেলতে তেমন কষ্ট বোধহয় হয়নি তোমার।
নোটস দেওয়া, স্টাডিতে হেল্প করা এভাবেই শুরু করেছো তাইনা?
যেমনটা আমার সাথে করেছিলে?
ফায়াজ, তোমাকে আমি খুব ঘৃণা করি।
আফসোস হচ্ছে আমার তোমার মতো ছেলের সাথে আমি রিলেশনে ছিলাম ছিঃ।

এক্সকিউজ মিস নিলা।
এতো এতো ভুল ধারনা নিয়ে আপনি থাকেন কি করে আমি বুঝিনা।
সে যাই হোক, জুনিয়রের সাথে প্রেম করি কিংবা সিরিয়রের সাথে তাতে তোমার কি?
তোমার কেনো এতো গায়ে লাগছে!
আর কি বললে, ব্রেকআপ!
মিস নিলা, তোমার কাছে ওটা ব্রেকআপ হবে কিন্তু আমার কাছে সেটা… সে যাই হোক।
নোটস দেয়া নেয়া, স্টাডিতে হেল্প এসব তুমিই আগে শুরু করেছিলে।
আমিতো তোমাকে আমার ভালোবাসা ভেবে সবটুকু হেল্প করতাম।
কি বোকা ছিলাম আমি, একটা ভুল মানুষকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম।
একটা ভুল মানুষের জন্য দিনের পর দিন সময় নষ্ট করেছিলাম।
কিছু মিথ্যে স্বপ্ন দেখতাম ‘আমাদের’ নিয়ে!

যেই স্বার্থ ফুরিয়ে গেলো, ওমনি বদলে গেলে তুমি।
আর কি যেনো বললে তুমি, আমাকে ঘৃণা করো?
অবশ্য করতেই পারো, তার হাজারো কারন আছে।
কি বলোতো নিলা, আফসোসটা তোমার না মূলত আফসোসটা এখন আমার প্রতিনিয়ত হচ্ছে আমি তোমার সাথে কেনো রিলেশনে গেলাম।
তোমার আর কি, তুমি তো দিব্যি আছো অন্য একজনকে নিয়ে।
যে কিনা তোমার সব চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
তুমি তো প্রথম থেকেই জানতে আমি কেমন আমি কোথা থেকে এসেছি কতটুকু এ্যবিলিটি আছে আমার তোমার চাহিদা পুরন করার।
তারপরও তুমি রিলেশনে গিয়েছিলে আমার সাথে।
এখন বুঝতে পারছি কেনো গিয়েছিলে।
তবে এখন কেনো খোঁচা দিতে এসেছো!
দেখছোই তো তোমাকে ছাড়া একা চলতে শিখে যাচ্ছি তবে কেনো খোঁচা দিতে এসেছো!

— এই যে শুনছেন!

আমাদের কথার মাঝখানে পেছন থেকে কারো ডাকার শব্দে আমি আর নিলা দু’জনই পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি কথা দাঁড়িয়ে আছে।
আমাদের দু’জনকে একসাথে দেখে কথা যে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে সেটা কথার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি।

আমতা আমতা করে কথা কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই নিলা চিৎকার করে বললো–

— এই মেয়ে এখানে কি করতে এসেছো?
দেখছো না আমরা সিনিয়র-রা এখানে কথা বলছি, যাও এখান থেকে।

নিলার এমন চিৎকার করে কথা বলাতে, কথা বেশ ঘাবড়ে গেলো মনে হচ্ছে।
কিন্তু নিলা এমন আজব ব্যবহার-ই বা কেনো করছে সেটা বুঝতে পারছি না।
এমন তো নয় যে, নিলার সাথে আমার এখনও আগের মতো সম্পর্ক আছে।
দু’জনের কথার মাঝে কেউ এলেই আগে নিলা খুব রেগে যেতো।

মাথা নিচু করে কথা চলে যেতে নিলে আমি কথার নাম ধরে ডাকলাম।
কথা দাঁড়িয়ে যেতেই নিলাকে বললাম–

তোমরা মেয়েরা না খুব আজব।
তোমাদের বোঝা সত্যিই মহা মুশকিল।
শুধু তোমরা মেয়েরা না, সব মানুষই আজব।
এখানে আপনজন আপনজনকে দূরে ঠেলে দেয়।অথচ, অজানা, অচেনা কিছু মানুষ, নাম বিহীন কিছু সম্পর্কের মাঝে সেইসব মানুষকেই কাছে টেনে নেয়।
এই নশ্বর মানবদেহের সবকিছু পরিবর্তিত হয় শুধু মায়া নামক অনুভূতি বাদে।
দিন শেষে একেকরুপে এই অনুভূতি মানুষের মাঝে ফুটে ওঠে।
কখনো তা পরিচিত জনের জন্য, আবার কখনো তা অপরিচিত কারো জন্য।
আবার কিছু কিছু সময় সেই মায়া পরিবর্তন হয়ে ঘৃণায় রুপ নেয়।
নিলা, আমিও আর কখনও চাইনা তোমার সাথে আমার দেখা হোক কিংবা কথা হোক, ভালো থেকো।

কথাকে নিয়ে চলে এলাম লাইব্রেরী থেকে।
দ্রুত পায়ে ভার্সিটির বাইরে চলে এলাম দু’জন।
জানি পেছন থেকে আমাদের যতদূর দেখা যাবে ততদূরই নিলা বিষে ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকবে।
তাতে কি, সেই চোখের মায়া কেটে গেছে আমার বেশ কিছুদিন আগেই।
শুধু স্মৃতিটুকুই বাকি ছিলো।
আজ বোধহয় স্মৃতিরাও বিলীন হয়ে গেলো।

কথাকে নিয়ে বিনাবাক্যে একটা রিকশায় উঠে বসলাম।
মেয়েটা এখনও বিস্বয়ভরা চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
কথার মাথায় কি চলছে কে জানে!
এদিকে আকাশ খুব মেঘলা, একটু বাদেই ঝুম বৃষ্টি এসে পড়বে তা নিশ্চিত।
আজ বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছে হলেও এক প্রকার জেদ করেই নিলাকে দেখিয়ে কথাকে নিয়ে রিকশায় উঠে বসেছি।
এখন আফসোস হচ্ছে খুব, হেঁটে গেলেই বোধহয় বেশ হতো।
কথার সাথে এভাবে হুট করে রিকশায় উঠে বসাটা মোটেও উচিত হয়নি আমার।
এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতিকে আরো লজ্জায় ফেলে দিয়ে রিকশাওয়ালা মামা যা করলেন তাতে আমি এবং কথা দু’জনেই…

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে