চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ১৯
লেখা আশিকা জামান
অনন্যা থমকে দাঁড়ায়। অসাড়, নিশ্চল পা দুটোতে যেন সর্বশক্তি ব্যয় করে পেছনে ঘুরে।
অঙ্কনকে বড় বিব্রত আর অপ্রস্তুত দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে এমন বিড়বিম্বনা জীবনে আর দ্বিতীয়টি নেই। ভাষাজ্ঞানহীন নির্বাক কিছুসময় পার হয়ে গেছে। অনন্যা চোখ মুখ কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
” পিছু ডাকলে যে! কিছু বলবে?”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
অঙ্কন যেন বজ্রাহত হলো! নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে অস্থির করে তুললো! কেন এভাবে ডাকলো? কি বলবে এখন! সত্যিই কি বলার মতো কিছু ছিলো? মাথা কাজ করছেনা। নির্বোধ বালকের মত এবার অঙ্কন বললো,
” রিসেপশনে আসছো তো? দেখা হচ্ছে তাহলে!”
” আসতে তো হবেই। না, আসলে আন্টি কি আর ছেড়ে কথা বলবেন।”
অঙ্কন আবার চুপ করলো৷ অনন্যা যেন খুব তাড়া এমন ভঙ্গিতে বললো,
” আর কিছু বলবে? আমার যেতে হবে।”
” আমি তোমাকে ফোন করলে ফোনটা তুলবেতো!” কিছু একটা মনে করার ভঙ্গিতে অঙ্কন ইতস্ততভাবে বললো।
” ওমা, কেন তুলবোনা।”
অনন্যা, হাসার চেষ্টা করলো। অঙ্কন ঘাবড়ে যাওয়া ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকলো
” আমার মনে হয় তোমার আর কিছু বলার নেই।” কথাটা বলে চোখের পলকে অনন্যা সীমানা পার হয়ে যায়।
************
আহনাফ সাহেব কপাল কু্ঁচকে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন। আয়েশা ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে উঠলেন,
” বয়স হচ্ছে এবারতো একটু জিহবা শামলাও। এতো খাই খাই করো যে বাপু জ্বালায় বাচিঁনা!”
” তোমার কি জ্বালা হলো আমিতো সেটাই বুঝতেছিনা।”
” আমার কি জ্বালা হলো তুমি বুঝতেছো না নাহ্! তোমার অতিমাত্রায় খাই খাই এর জন্যই মেয়েটা এমন সময় হাত পুড়িয়ে বসলো। আল্লাহ একটু শপিং এ গিয়েও মেয়েটাকে দু’দন্ড শান্তি দিলেনা।”
” উফ্ মা, তুমি থামবে। তেমন কিছুই হয়নি জাস্ট একটু ছ্যাঁকা লেগেছে। এটা বিষয়ই না। তোমরা খাও আমি একটু দেখি।”
” কেন তুই খাবিনা। ”
” নাহ্, ইচ্ছে করছেনা।”
” এ, আবার কেমন কথা! এক্ষুনি আমাদের সাথে খেয়ে নেবে। না খেলে শরীর খারাপ লাগবে।”
অনন্যার ইচ্ছে করছেনা। তবে এখন খেতে হবে কারণ আয়েশা বেগম তাকে কিছুতেই ছাড়বে না। পারলে জোর করে গিলিয়েও দিতে পারে কোন বিশ্বাস নেই। মায়ের হাতে জোর করে উম্ উম্ করে খাবার গেলার বয়স আর ইচ্ছে কোনটাই আর অবশিষ্ট নেই।
উপায় না পেয়ে অনন্যা প্লেটে খাবার তুলে নিয়ে সবার আগে তড়িঘড়ি করে অল্প খেয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
অনন্যার ইচ্ছে ছিলো আজ দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বে। ঘুমটাও ঝাঁকিয়ে বসেছিলো। কিন্তু মায়ের দরজা ধাক্কানোর শব্দে অতিমাত্রায় বিরক্তিতে দরজা খুলতে বাধ্য হয়।
” হয়েছে কি? দরজা ধাক্কাচ্ছো কেন?”
আয়েশা উত্তর না দিয়ে হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে। হাতে ধরা শপিং ব্যাগ চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।
” তুই কি রে? গেলি শপিং এ। আর সব ফেলে এলি! এত ভুলোমনে বাপরে! ওরা, কি ভাবছে বলতো!
” এই কিসের শপিং? কিসের কি ফেলে এসেছি? কি আবুলতাবুল বকছো! যাওতো বড় ঘুম পেয়েছে৷ অনন্যা হাই তুলতে তুলতে বললো।
আয়েশা মেয়েকে টেনে ধরে শপিং ব্যাগ হাতে দিয়ে বললো,
” এসব কি? অঙ্কনের ড্রাইভার এসে মাত্র দিয়ে গেলো। আর বলে গেছে, এত ভুলোমনে হলেতো বিয়ের পর স্বামীর নামই ভুলে যাবি।”
অনন্যা চোখ মুখ কচলে একটা প্যাকেট খুলে সেই পীচ কালার রুপোলী জরির পেটানো জরির কাজ দেখেতো চক্ষু চড়কগাছ। তাড়াহুড়ো করে অন্য প্যাকেটগুলোও খুলতে লাগলো। ম্যাচিং সব জুয়েলারি, জুতো, ব্যাগ অনন্যার পুরো ভীমড়ি খাওয়ার মত অবস্থা।
” আল্লাহ কি সুন্দর শাড়িটা! কত নিলোরে?”
অনন্যা ভাষাশূন্য হয়ে চোখ পিটপিট করে মায়ের দিকে তাকায়। আয়েশা বলে চললেন,
” ম্যাচিং করে এতসব কিনলি কেমনে? জীবনেওতো ম্যচিং বুঝোস না খালি উলটা পালটা পরোস। তাহলে কি মেয়ে আমার একটু একটু ম্যাচিউর হইতেছে!”
আয়েশা খুশিতে গদগদ হয়ে কথাগুলো বললো।
অনন্যা উত্তর না দিয়ে খচখচ শব্দ তুলে বাকি ব্যাগগুলো খুলতে লাগলো। উল্টাতে পাল্টাতে লাগলো এলোমেলো অবিন্যস্তভাবে। কোনও ক্লু খুঁজে পেলোনা যার জন্য অঙ্কনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। তবে তার দৃঢ়বিশ্বাস কাজটা অঙ্কনের!
” এই কি করছিস! করছিস টা কি? পাগলের মতো। আরে শাড়ির ভাজ নষ্ট হয়ে যাবেতো।”
আয়েশা, মেয়ের হাত থেকে শপিং ব্যাগগুলো কেড়ে নিয়ে বিরক্তি ভরা চোখে রইলেন।
নাহ্ ইদানীং মেয়ে কি চায় না চায় কিচ্ছু বুঝতে পারেন না।
****************
ফোনটা বালিশের তলা থেকে অনবরত ভাইব্রেট হচ্ছে। অঙ্কন বিভোর ঘুমে।
ফোনের শব্দে আচমকাই ঘুম ভেঙ্গে গেছে। ঘুমের ঘোরে ফোনটা রিসিভ করে।
” হ্যালো।”
ঘুম জড়ানো কন্ঠে অঙ্কনের ‘ হ্যালো’ বলাটা কেমন যেন অপার্থিব মায়া মায়া লাগলো। ঘুমটা ভাঙ্গানোর জন্য অনন্যার এবার মায়া হচ্ছে। যে কথাটা বলতে উদগ্রীব হয়ে ফোনটা করেছে সেটাতো পরেও করা যেতো। সত্যিই সব কিছুতে বাড়াবাড়ি না করলে ওর চলেই না!
ওপাশে নিঃশ্বাসের শব্দ ভেসে আসছে। আবার কি ঘুমিয়ে পড়লো নাকি! পড়লে পড়ুক নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে আজঁ ভালো লাগছে। কি সব অদ্ভুত অদ্ভুত ইচ্ছে মাথায় চাঁপছে। কিন্তু ভালো লাগুক আর যাই হোক ওর প্রশ্নের উত্তর জানাটা জরুরি। একবার যখন ফোন করেছেই তখন ভদ্রতা করে হলেও কথা চালিয়ে যেতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ!
” তুমি বোধ হয় ঘুমোচ্ছো? আমি কি খুব ডিস্টার্ব করলাম।”
অঙ্কন ঘুমন্ত চোখজোড়া মেলে বড় বড় করে অন্ধকারে তাকায়। বেড সাইড ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে স্ক্রিণের দিকে তাকায়। সত্যিই অনন্যার নাম্বার! অনন্যা ফোন করেছে। মুহুর্তেই ঘুম উবে গেলো। শান্ত গলায় জবাব দিলো,
” একটু চোখ লেগে এসেছিলো তেমন ঘুম নয়। ইট’স ওকে তেমন কোন ব্যাপার নয়!”
” তোমার কন্ঠ শুনে কানার ভাই অন্ধ ও বলে দিবে বিভোর ঘুমে তলিয়ে ছিলে। খামোকা মিথ্যে বলছো কেন?”
” তুমি না সত্যিই বেশী বেশী বুঝো।”
” সহমত। কিন্তু তোমার মনে হয় মাঝে মাঝে এই কথাটা মনে থাকেনা। যদি মনেই থাকতো তবে আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না!”
অঙ্কন কুঞ্চিত চোখে তাকায়। অনন্যা আবার বললো,
” এইসব শাড়ি, গয়না এতগুলো শপিং শুধু শুধু মিথ্যে বলে কেন পাঠিয়েছো। আমি যে কিছু ফেলে আসিনি এটা তুমি ভালো করেই জানো।”
” আমার টাকা কামড়ায় না। আমি পাঠাইনি। ” অঙ্কন কাটা কাটা ভাবে জবাবা দিলো।
” আমি জানি তুমিই পাঠিয়েছো। ”
” কেন তুমি কি জ্যোতিষ শাস্ত্রে দীক্ষা নিয়ে এসেছো? নাকি আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন পীর মা যে সব বুঝে যাবে।”
” এই সাধারণ লজিক বুঝার জন্য আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন ও করা লাগে না আর পীর মাও হওয়া লাগে না।”
” আমি দেইনি, বিশ্বাস হচ্ছে না। আচ্ছা আমি অন্বেষাকে দিচ্ছি ও বললে বিশ্বাস করবেতো। ”
অঙ্কন ফোনটা কানে থেকে নামিয়ে পাশের রুমে চলে যায়। অন্বেষা তখন ড্রয়িং এ ব্যাস্ত। পেন্সিল কাটা কম্পাস, স্কেল নাড়াচাড়া করে কিসব মাপ যোগ করছিলো। অঙ্কন চট করে ফোনটা কানে ধরিয়ে দিয়ে জোরে জোরে বললো,
” অনন্যাকে বলে দেতো অঙ্কনের এত ঠ্যাকা পড়ে নাই যে, ঘুরে ঘুরে মেয়েদের শাড়ী ব্লাউজ ম্যাচিং করবে। আজাইরা টাইম নাই যে শপিং করবে!”
অন্বেষা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করলো তারপর হাসতে লাগলো ভাইএর নাকের ডগায় রাগের লম্ফঝম্প দেখে।
এদিকে অনন্যা হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে। তার ভারী অস্বস্তি হচ্ছে। এই ব্যাপারে এখন অন্বেষার সাথেও কথা বলতে হবে এ ভারী বিব্রতকর। ধুর এই মাথামোটা ছেলেটার জীবনেও আক্কেল হবেনা।
ভাই এর নাকের ডগা দুই আঙ্গুলে চেপে ধরে অন্বেষা বললো,
” ভাইয়া, আমি অনন্যা আপুকে সুন্দরকরে বুঝিয়ে দিচ্ছি৷ তুই একটু আরাম করে এসিটা ছেড়ে বসে পড়। ভাবা যায় এই হিম হিম শীতের রাতেও তুই দরদর করে ঘামছিস!”
অন্বেষা কথার খোঁচা খেয়েও রগচটা অঙ্কন শান্ত হয়ে বসে থাকলো।
” অনন্যা আপু, এই শপিং ব্যাগগুলো কিন্তু ভাইয়া কিনে নি।” অন্বেষা নির্বিকারভাবে বললো। অঙ্কন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বোনের দিকে তাকায়। কিন্তু পরক্ষণেই অন্বেষা জিহবায় কামড় দিয়ে বিস্ময়ের সাথে বললো,
” উঁহু আমার নয় ভাইয়ার মুখের কথা এবার নিশ্চয়ই বুঝেতে পারছো। আর একটু বুদ্ধি খাটিয়ে দেখো সবকিছু কিন্তু দায়সারা ভাবে কেনা হয়নি। সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে ভালোবাসা আর দায়িত্ব মিশিয়ে কেনা হয়েছে। আপু যেই কিনে থাকুক তুমি কিন্তু রিসেপশনে এগুলোই পরে এসো প্লিজ। তুমি যদি আমার কথাটা রাখো তবে বোধ হয় মুখচোরা একজন খুব খুশি হবে।”
” মুখচোরা মানুষকে খুশি করতে আমার বয়ে গেছে। তোমার ভাইয়া একটা ভীতুর ডিম! কি খেয়ে নায়ক হয়েছে আল্লাহ জানে! রগচটা, ভীতুর ডিমকে বলে দিও আমি রিসেপশনেই আসছি না। যত্তসব।” অনন্যা রাগে কটমট করতে করতে ফোন কেটে দেয়।
ফোন শেষ করে অন্বেষা এবারো মিটিমিটি হাসতে লাগলো। বিড়বিড় করে বললো,
” আসতে তো হবেই সোনামনি নইলে খেলা জমবে কি করে?”
অঙ্কন ফোনটা বোনের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” কি বললোরে?”
অন্বেষা দুঃখিত হওয়ার ভাণ ধরে বললো,
” বলেছে আসবেনা।”
” আসবে কি আসবে না এটা তার ব্যাপার তোকে শোনানোর কি আছে? না আসুক! ওর আসার দরকার নাই। ওর জন্য কেউ মরে যাচ্ছে না। ভালোই হয়েছে অতিরিক্ত বাঁচাল মেয়ের হাত থেকে বাঁচা গেলো।”
অঙ্কন রাগে গজগজ করতে করতে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। ”
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/