চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ২০

0
2555

চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ২০
লেখা আশিকা জামান

ঝলমলে আলোর আতিশয্যে অঙ্কনের চোখ বুজে আসতে চাইছে৷ মুখে রঙ চঙ মাখিয়ে মেকি হাসির উচ্ছ্বল প্রত্যেকটা মানুষকে আজ অঙ্কনের ভয়াবহ রকমের অসহ্য লাগছে। কোন এক অদ্ভুত কারণে নিজেকে কেমন যেন বেমানান লাগছে। নিজেকে এদের সাথে মানাতে পারছে না।

ইচ্ছে করছে কিছুক্ষণ এই সাড়ম্বর বিয়ের বিষমাখা যন্ত্রণা হতে দূরে দূরে থাকতে। কিন্তু সেটাও সম্ভব নয়। কনের ভাই বিয়েতে অনুপস্থিত থাকাটা খুব একটা শোভন নয়। ঠিক এই একটা কথা ভেবেই অঙ্কনের মেজাজ সেই সকাল থেকেই খিঁচে আছে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



তানভীর বসে আছে রাজমহলের রাজকীয় সিংহাসনে। যার চারপাশটা আবার ফুল দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোনালী মহলের বারান্দায় আবার নান্দনিক ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি ঝুলছে। ঝকমকে বাতি দ্বারা সুসজ্জিত নকল গাছগুলোকে ঠিক জীবন্ত মনে হচ্ছে। তানভীরের মনে হচ্ছে রাজমহলের সামনে বাগানে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। নিজেকে রাজা ভাবতে আজকে কোন দ্বিধা নেই! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখনতো সবাই এই নকল রাজত্বকে ন্যাড়া রাজত্ব বলবে৷ কারণ তার রাণীই তো পাশে নেই। তানভীর মেঝের উপর স্বচ্ছ আয়নায় দুই চোখ উল্টে বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। এই আয়নার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে পুরো রাজমহলটাই পানির উপর ভাসছে কিন্তু না এখন মনে হচ্ছে নিজেই ভাসছে। ধুর! সাজুনী বুড়ির সাজ এখনো শেষ হয়নি! সবাইতো এসে বউ এর খুঁজ করছে। ধুর ছাই ফোনটাও তুলছেনা। তানভীরের ফোনটা ছুড়ে মারতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে মারবে না। এক্ষুনি অঙ্কনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যেই ভাবা সেই কাজ।
অঙ্কন ভাবলেশহীনভাবে বসে আছে। যেন তাকে কোন শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে নেমন্তন্ন করা হয়েছে। মুখ চোখ দেখেই তানভীরের রাগ হচ্ছে। এ হচ্ছে আরেক চিড়িয়া!

” অঙ্কন ভাই, আমার বউ কই।”

” তোর বউ এখনো বসে বসে মেকাপ গিলতেছে।
বেশী ইমার্জেন্সি হলে তুই নিজে গিয়ে কিছু মেকাপ খেয়ে কমিয়ে দিয়ায় যাহ!”

” ধূর এইভাবে কেউ মেকাপ খায়! তুমি না কিচ্ছুটি বুঝো না।”

” তুই যাবি এখান থেকে!”
অঙ্কন রাগে কটমট করে উঠলো।

তানভীর বরাবরের মতোই শান্ত স্বভাবের কিন্তু আজ সে খুব ভয়াবহ রকমের রেগে গেলো। কথাটা খুব ইগোতে লাগলো। সে হচ্ছে বর আর অঙ্কন তাকে এইভাবে অপমান করলো।

সে জোর গলায় বলে উঠলো,
” আমি যাচ্ছি এক্ষুনি যাচ্ছি। এবার যা যা হবে তার জন্য নিজে তৈরী থেকো।নিজের বোনকে এবার তুই সামালা।”
তানভীর হনহন করে চলে যেতে থাকলো। দূর থেকে তৃষ্না তানভীর আর অঙ্কনের মাথা ঝুঁকিয়ে ঝুঁকিয়ে কথা বলাটা লক্ষ্য করেছেন। কিছু একটা গন্ডগোলের আশঙ্কায় উনি ছুটে এসে তানভীরকে ধরে ফেলে।

” তানভীর তুই দরজার দিকে কোথায় যাচ্ছিস!”

” আমি চলে যাচ্ছি। আমি আর একমুহুর্তও এখানে থাকবো না। অঙ্কন আমাকে অপমান করেছে। আমি হচ্ছি বর আর আমাকে কিনা চলে যেতে বলে!”

তৃষ্ণা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। অঙ্কনের এতবড় দুঃসাহস।
উনি চেচিয়ে পরিবেশ মাথায় তোলার বন্দোবস্ত করতেই অঙ্কন পরিস্থিতি আঁচ করে দৌড়ে এসে ফুপিকে থামায়।
” ফুপি আমি ওকে নিজের যায়গায় যেতে বলেছি এখান থেকে চলে যেতে বলিনি।”

” তুই এই কথাই বা কেন বলবি? তানভীর তোর বোনের স্বামী তুই যাচ্ছে তাই ব্যাবহার করতে পারিস না।”
তৃষ্ণার অতিমাত্রার প্রশ্নবাণে অঙ্কনের দম যায় যায় অবস্থা। এদিকে তানভীরও রেগে মেগে কনভেনশন পার হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।
এ এক মহা গন্ডগোলের আভাস। এদিকে কনে পক্ষ উপস্থিত বরের পাত্তাও নেই।
অনীহা পারলে কেদে দেয়। মেকাপ নষ্ট হওয়ার ভয়ে অতি সাবধানে কান্না আটকিয়ে। মুখ খিস্তি দিয়ে বলে উঠলো,
” ভাইয়া তুই আমার তানভীরকে এক্ষুনি এনে দে। নইলে আমি কেদেঁ দিলাম তখন মেকাপ নষ্ট হইলে কেউ কিছু বলতে পারবি না। হুহ। ”

অঙ্কনও রেগে মেগে অন্ধ হয়ে গেলো সব্বাই মিলে কেবল ওকেই দোষারুপ করছে।
” এই রকম সার্কাস পার্টির সাথে আমি আর একমুহুর্ত না। আমি চলে যাচ্ছি। আরো আগেই যাওয়ার দরকার ছিলো। কাউকেই কিচ্ছু বলা যায়না অমনিই রেগে মেগে ফায়ার। ”

কারো তোয়াক্কা না করে অঙ্কনও এক ছুট। ছেলে মেয়ের এতো খাম খেয়ালিপনায় পারলে সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। এদিকে লোক হাসাহাসির মতো অবস্থা।

অঙ্কন চেয়েছিলো সীমানা পার হয়ে দূরে কোথাও যেতে। একজনের প্রতি তার রাগটা আজকের দিনে মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েই চলেছে। কিন্তু সে গেলোনা। কনভেনশন হল পার হওয়ার কিঞ্চিৎ পূর্বে অদূরে ঘটা একটি ছোট্ট ঘটনা তার চোখদুটো অদ্ভুত সম্মোহনে সামনের দিকে টানতে লাগলো। মনে হলো পা দু’টো পেরেক দিয়ে কেউ গেথে দিয়েছে। এখান থেকে এক চুলও নড়া যে তার পক্ষে সম্ভব নয়।

অঙ্কন ফিরে এলো। তাতে কারো মুখভঙ্গি বদলালো না বরং অনীলা বলে উঠলো,
” কি ব্যাপার তুই ফিরে এলি কেন? তোর এখানে থাকার দরকার নেই। ”
অনীহাও অভিমানী সুরে বললো,
” তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিস না বাসলে অন্তত তানভীর কে তাড়িয়ে দিতে পারতি না।’
অনীহা এইবার সত্যিই কেদে দিলো।
রগচটা, ঘাড়ত্যাড়া অঙ্কন তার স্বভাববিরুদ্ধ যথাসম্ভব শান্ত চুপচাপ হয়ে সমস্ত দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিলো। এটা আশ্চর্যজনক! সবার ভেবেছিলো হয়তো সে আত্নপক্ষ সমর্থন করতে অহেতুক তর্ক করবে। কিন্তু না! কেবল অন্বেষাকে বিন্দুমাত্র চিন্তিত মনে হলো না। তার চোখে মুখে এক অজানা রহস্যের ঝিলিক যা সকলের বোধগম্য হবার কথা নয়।

কনভেনশন হলে খুশির জোয়ার। দুই বান্দবী রহস্যময় হাসিতে মাতোয়ারা। তাদের রহস্য তারাই জানে তাই বলে বাকি সবাই নিশ্চুপ এমনটা ও না। পুরা পরিবেশটাই শান্ত বনে গেছে, কিঞ্চিৎ পূর্বে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেলো তার ছিটেফোঁটাও বর্তমানে অবশিষ্ট নেই। রিসেপশনের সাজানো রাজমহলের সিংহাসনে মুখে একগাল হাসি হেসে বর কনে বসে। আহা! কি চমৎকার দৃশ্য। কিন্তু এই দৃশ্য ছাপিয়ে আরো একজনের উপস্থিতিতে পুরা পরিবেশে কেমন উচ্ছ্বলতার অন্য মাত্রা প্রকাশ পাচ্ছে। উপস্থিত সবাই বারবার মেয়েটির ন্যারাচাল লুকের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে। খুবই সাধারণ সাজ পীচ কালার সোনালী জরি পাড়ের শাড়ি, ফুল স্লিভ ব্লাউজ, কানে ঝুমকোর দ্যুদলমান অবস্থা, অতি সাধারণ খোপায় ফুলের গাজরার বাহার! সাধারণ কিন্তু আভিজাত্যের ছাপ চোখে পড়ার মতো। আমাদের হিরো সাহেব সবার চক্ষু উপেক্ষা করে এক ধ্যানে অনন্যার দিকে তাকিয়ে আছে। হাতের চুড়ির রিণি ঝিনি শব্দ তুলে অনন্যা অন্বেষার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। অন্বেষা অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে বার বার দুষ্টুমির ছলে চোখ মারতে থাকে। তাতে অঙ্কনের কোন ভ্রুক্ষেপ হলো না সে আজ অনন্যাকে চোখে হারাবে। হায় এমন ও দিন এলো অঙ্কনের ও আজ কাউকে চোখে হারাতে হয়! হায়ইইইই!!
নিজের মনে নিজেই বিড়বিড় করে অঙ্কন আবার পৃথিবীর সব থেকে চমৎকার মেয়েটির দিকে সরাসরি তাকায়।
অনীলা, হবু ছেলের বউ এর দিকে খুবই সন্তুষ্ট। এই মেয়েটার প্রতি কেমন যেন এক অলিখিত ভালোবাসা জন্ম নিচ্ছে। তার ছেলের একগুঁয়ে জেদ সামলাতে এই মেয়ে একেবারে সিদ্ধহস্ত। কোন এক অদ্ভুত কারণে মেয়েটি পরিস্থিতি বদলানোর অভুতপূর্ন ক্ষমতা রাখে। আজকে যদি অনন্যা তানভীরকে না আটকাতো তাহলে যে ঠিক কি হতো! উনি ভাবতে পারছেন না। অবশ্য উনি এটাও ভাবেননি অনন্যা যে এভাবে তানভীরকে বগলদাবা করে সাথে নিয়ে আসবে।

” ভাবি তোমার ঘাড়ত্যাড়া ছেলে তো অনন্যার দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারছে না।” তৃষ্ণার করা প্রশ্নের জবাবে অনীলা উচ্ছ্বল একটা হাসি দিলো।

” জীবনে প্রথমবারের মতো তোমার কোন সিদ্ধান্তে আমি একমত হলাম। তুমি না সত্যিই এবার একটা কাজের কাজ করছো।”

অনীলা খুশিতে গদগদ হয়ে ভাবতে লাগলো যে কাজটা করতে এসেছেন তা অতি দ্রুত সারতে হবে। উনার মন আবার আকাশের মেঘের মতো ঘনঘন পাল্টায়। কখন কি হয়ে যায় আবার কি থেকে কি সিদ্ধান্ত নেয় কোনই বিশ্বাস নেই।
চলবে…

গল্পটা কালকেই দিতে চাইছিলাম কিন্তু ঘুমিয়ে কাদা। যাই হোক আজ রাতে আর একটা খুউব স্পেশাল একটা পর্ব পাচ্ছেন। কে কে গল্পটা পড়ছেন সবাই অন্তত লাইক দিয়ে একটু সাড়া দিবেন একটা দরকার আছে। আর হ্যাঁ এই গল্পটা শেষ পর্ব পোস্ট করার পর ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলা হবে।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে