#চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে
পর্ব ৬৮
আশিকা জামান
পরদিন সকাল বেলা অনন্যা ল্যাপটপ নিয়ে বসে। গুণে গুণে তিনটা ইমেইল করে। ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল অফিস, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সেন্টার এবং সর্বশেষ প্রফেসরকে। আপাতত নিউইয়র্কে আছে, আগামী সপ্তাহে ইউনিভার্সিটিতে যাবে।
অনিক দু’টো কফির মগ নিয়ে বোনের পাশে ধপাস করে বসে পড়ে। মাথায় গাট্টা মেরে বলল,” কী করছিস?”
” এইতো ভাইয়া ই-মেইলের ঝামেলাটা সকাল সকাল সেরে ফেললাম। অঙ্কন ঘুমুচ্ছে এই সুযোগ৷ নাহলে নিজেই ভুলে যাব। সত্যি বলতে ও সাথে থাকলে আমি সব ভুলে যাই। নেক্সট উইকে ওঁ চলে যাবে আর আমি যাব…. ” কথাটা বলতে গিয়ে অনন্যার চোখের জল চিকচিক করে উঠলো। অনিক বেশ বুঝতে পারল। মুহুর্তেই নিজেকে সামলিয়ে বলল,
” কোর্স রেজিষ্ট্রেশন আর প্রফেসরের সাথে প্রাইমারি ইন্ট্রোডাক্টরি মিটিং সেরে আসব। তুই যাবি তো আমার সাথে!”
” অবশ্যই যাব। কেন নয়…
মাই ওয়ান এন্ড অনলি লাভিং প্রিন্সেস।” অনিক হেসে বলল।
প্রতিউত্তরে অনন্যা হেসে বলল,
” উঁহু, একটু ভুল হলো যে!, এই ওয়ান এন্ড অনলি কথাটায় আমার ঘোর আপত্তি।”
অনিক চমকে উঠে বলল,
” কেন?”
” তোর আর অন্বেষার মধ্যে কী চলছে একটু বল তো!”
অনিক হঠাৎ কাঁশতে কাঁশতে বলল,
” কই কিছু না-তো!”
” আমাকে রেখেই এত কীসের আড্ডা হচ্ছে। ”
দুজনেই চমকে পেছনে তাকায়। অঙ্কন জুল জুলে চোখে তাকিয়ে আছে৷ বাঁ হাতে এক চোখ কচলাতে কচলাতে বলল। এক মাথা এলোমেলো চুল নিয়ে মৃদু হাসছে। যেন ঠিক বাচ্চা ছেলে।
অনন্যা প্রথমে ঘাবড়ে যায় অঙ্কন কিছু শুনলো না-কি! হাজার হোক নিজের বোন, কী রকম রিএক্ট করবে কে জানে। অঙ্কনের দিক থেকে তেমন কোন রিএক্ট না পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
” তোমাকে জেট ল্যাগ ভালোই পেয়ে বসেছিল। ফ্রেস হয়ে আসো। আমরা এখনো ব্রেকফাস্ট করিনি। তোমারই অপেক্ষা করছিলাম। আমার আবার বেরোতে হবে।”
★★★★★
অনিক চলে যেতেই অনন্যার কেমন যেন অস্বস্তি হতে লাগলো। হুট করেই আচমকা অঙ্কন এসে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে অনন্যা যেন খেই হারিয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। মাত্রই দেখেছে ফোনে কথা বলতে। হুট করে এভাবে আসবে বুঝতেই পারেনি। আবেশে অনন্যার দু’চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। ঠিক কতদিন আগে এভাবে জড়িয়ে ধরেছিল অনন্যা মনে করতে পারে না৷ শরীরের সেই বুনো গন্ধটা নাকে লাগতেই অঙ্কনের মসৃণ পিঠ খাঁমচে ধরে। বরাবরের মতোই অনন্যার মুখ আর মন ভিন্ন কথা বলে,
” আচমকা এভাবে উড়ে আসলে যে! ভয় পেয়েছিলাম তো!”
” আজকাল আমাকে দেখে ভয়ও পাওয়া হয়, তাহলে!” অঙ্কন বোবা চোখে তাকায়। এরপর হুট করে হাতের বাঁধন শীথিল হয়। ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়, ” ঠিক আছে, আর উড়ে এসে জুড়ে বসছি না। কেমন!”
” আরে, তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? আমি তো এমনিই বললাম।” অনন্যা অধৈর্য্য গলায় বলল।
” মনে তো হচ্ছে না! ইনফ্যাক্ট, তুমি চাইছোই আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে। নাহলে কাল রাতে একটা কথা, গুড নাইট পর্যন্ত বললে না শুয়েই ঘুম! এটা কোন কথা!”
অনন্যা, দু’কদম এগিয়ে এসে বলল, ” তুমি নিজে কী করেছ? আমার আগেই তো ঘুমিয়ে গেছ। এখন ভাব নিতে আসছে, যেন আমি কিছু জানিই না।”
” তুমি আগে ঘুমিয়েছ। ”
” নাহ, তুমি আগে।” কথা বলতে বলতে অনন্যা, অঙ্কনের টি-শার্ট খাঁমচে ধরে।
অঙ্কন দু’হাত বাড়িয়ে অনন্যার মুখ আঁজলা ভরে তুলে নেয়। চোখে চোখ রেখে বলে, ” তুমি! ”
অঙ্কন ফিঁচেল হাসে। সেই হাসিতে তার মুক্তোর ঝকঝকে দাঁতগুলোও চিকচিক করে উঠে, চোখ হাসে, ঠোঁট হাসে সব, সব, সব হাসে। অনন্যাও হাসে। যেন এইমুহূর্তে হাসিই একমাত্র কাজ।
” তুমি বড্ড দুষ্টু হয়েছ, সবকিছুতেই জেদ করো। এবার একটু বড় হও।” অনন্যার রেশম কোমল চুলে হাত চালাতে চালাতে অঙ্কন বলল।
” জেদ তুমি করো এবং সবসময়।”
” তাই, বুঝি।”
অঙ্কনের বুকে মুখ লুকাতে লুকাতে অনন্যা বলল, ” হ্যাঁ। ”
” আচ্ছা, অনেক হয়েছে এবার তাড়াতাড়ি রেডি হও। একটু ঘুরে আসা যাক।”
” কিন্তু, যাবে কোথায়?”
” যেদিকে দু’চোখ যায়। উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াব বুঝলে।” অনন্যার প্রশস্ত ললাটে প্রেমচুম্বন এঁকে দিতে দিতে বলল সে।
★★★★★
নিউইয়র্কে যতবারই এসেছে অঙ্কন ততবার একবার হলেও জ্যাকসন হাইটস এ এসেছে। বিদেশ বিভুঁইয়ে এসে স্বজাতিদের প্রতি যে টান তা এখানে না আসলে হয়তো বুঝতে পারত না। অনন্যা বিস্মিত হয়ে কেবল তাকিয়েই থাকে। মিনি বাংলাদেশ খ্যাত জ্যাকসন হাইটসে ফুটপাতের পাশে বাংলাদেশের মত পানের দোকান পর্যন্ত আছে। কাঁচাবাজার আছে। কাঁচাবাজারের সামনের ফুটপাত ও রাস্তা বাংলাদেশের মতই। জ্যাকসন হাইটসে একটি চত্বরও আছে। সন্ধেবেলায় সেখানে নিউইয়র্কের বাংলাদেশীরা এসে ভিড় করেন। কাগজের কাপে চা কিনে খান আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দেন। আড্ডা দেয়ার জন্য চত্বরে চেয়ার আর টেবিলও পেতে রাখা আছে। অঙ্কন বিস্তৃত হাসি হেসে বলল,
” বাংলাদেশীদের দেখলেই আমি কেমন তৃষিত হয়ে উঠি।”
জ্যাকসন হাইটসে গিয়ে অন্তত একশ পরিচিত মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। এযুগের সেলফি অটোগ্রাফ কিছুই বাদ যায়নি। যতটুকু সময় ছিল বলা যায় ভালোই লেগেছে। মজার ব্যপার হলো এদের মধ্যে আশি জনই বাংলাদেশের সাংবাদিক। তবে ওদের মন কেড়েছে ম্যানহ্যাটন। সারা পৃথিবীর বিজনেস ক্যাপিটাল নিউইয়র্ক সিটি। আর নিউইয়র্ক সিটির ক্যাপিটাল ম্যানহাটন আইল্যান্ড। যা দেখা যায় তা-ই ভাল লাগে।
আমেরিকায় এসেছে আর ম্যানহাট্ন থেকে ফেরিতে চড়ে স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে যাবে না এ হতেই পারে না। দেখে মনে হবে সবই চেনা। প্রতিটি ইঞ্চিই যেন সিনেমায় দেখা।
অঙ্কন যেন হঠাৎ বিভোর স্বপ্নে তলিয়ে যায়। অনন্যার দু’বাহু খাঁমচে ধরে বলে,
” এখানে আরও একবার আসব, সেদিন মাঝখানে আরও একজন থাকবে। তার ছোট্ট ছোট্ট আদুরে আঙ্গুলগুলো আমার এক হাতে গুঁজা থাকবে। আরেক হাত থাকবে তোমার মসৃণ হাতের মুঠোয় ভরা। অবাক নয়নে তার সমস্ত স্বপ্নরা জ্বলজ্বল করবে। সেই স্বপ্নের সিঁড়িপথ ধরে চলোনা দু’পা মেলি।”
অনন্যা কিছু বুঝে উঠার আগেই অঙ্কন হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
” উইল য়্যু বি দ্যা মাদার অফ মাই চাইল্ড?”
অঙ্কনের হাতা ধরা একটি বক্স ভেতরে দু’টি রিং একটা বড় আরেকটা সেইম কেবল বেবি সাইজের। অনন্যা হাতে তুলে নেয়। দু’চোখ বেয়ে যেন তার অনাগত স্বপ্নের প্রবল আকাঙখায় দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।
অঙ্কন কালবিলম্ব না করে মুহুর্তের মাঝেই সেই জল নিজের ওষ্ঠে তুলে নেয়।
কপাল জুড়ে এঁকে দেয় উষ্ণ চুম্বন।
“অনন্যা, একদিন আমরা পাক্কা টুরিস্ট হব। বুঝলে! সকালে বের হব আর গভীর রাতে ফিরব। আমি, তুমি, আর আমাদের বেবি। পিঠে থাকবে ব্যাকপ্যাকে। ওর খাদ্য-পানি-ডায়াপার-পোশাক। আমি না ওকে অনেক অনেক ভালোবাসব। কোলে নিয়ে ঘুরব, অনেক অনেক আদর করব।”
অনন্যাকে আড়চোখে তাকাতে দেখে অঙ্কন ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
” কী ব্যপার! ওভাবে তাকাচ্ছ যে?”
অনন্যা কিছু বলল না। অঙ্কনই আবার বলল, ” কী হিংসুটে মেয়ে, ভাবছ তোমার ভালোবাসা কমে যাবে!”
‘ উঁহু, মোটেও না। আমি সেরকম ভাবিই নি।”
” ও-ইতো যেভাবে তাকিয়ে থাকলে। বাব্বাহ, সাংঘাতিক মেয়ে তুমি। ”
অনন্যা দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ” কী বললে? বললে কী তুমি?”
অনন্যাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বলল, ” ভালোবাসি তোমায়, ঠিক ততটা, যতটা আমি নিজেও নিজেকে বাসতে পারিনি। লাভ ইউ সো মাচ। সুইটহার্ট। ”
” লাভ ইউ সুইটহার্ট। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার খুব কষ্ট হবে। যতবার মনে পড়ছে এই কথাটা ততবার যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে। এই যে, তুমি আমাকে এত এত ভালো সময় সুন্দর সুন্দর মুহুর্ত উপহার দিচ্ছ, বিনিময়ে আমি, তোমাকে কিচ্ছু দিতে পারছি না। আমি ঠিক করে আনন্দও করতে পারছি না। জানো, আমি চাই আনন্দে থাকতে কিন্তু পারছি না অঙ্কন।” বলতে বলতে অনন্যা প্রায় কেঁদে দেয়।
” তাঁকাও প্লিজ! অনন্যা, আমার দিকে তাঁকাও প্লিজ। কালকে কী হবে এটা ভেবে আজকেই দিন নষ্ট করার কোন মানেই হয় না। একটু বুঝার চেষ্টা করো। আমি আসব, মাঝেমাঝে আসব। তোমাকে না দেখে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমরা প্রতিদিন কথা বলব লং টাইম৷ এবার হাসো।”
অনন্যা জোর করে হাসার চেষ্টা করে। অঙ্কন মৃদু হেসে অনন্যাকে টানতে টানতে টাইমস স্কোয়ারে ঘুরতে নিয়ে যায়। এই টাইমস স্কোয়ার একটা আজব জায়গা। যত রাত হয়, তত জমে ওঠে। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা এই জায়গাটা সরগরম। এই এলাকার দোকানপাটও চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকে। টাইমস স্কোয়ারে বার-বি-কিউ নামে একটি রেস্তোরা আছে, রাত সাড়ে তিনটাতেও সেখানে গিয়ে টেবিল পাওয়ার জন্য আধ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হল।
ম্যানহাট্টানের অ্যাপল স্টোর নামের জায়গাটাতেও এরকম ভীড় ছিল। মাটির নিচে বিরাট এক দোকান। মাটির ওপর ছোট্ট এক কাঁচের ঘর। সেখান থেকে লিফটে কিংবা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যেতে হয়। নিচে নামলেই বিরাট এক হলরুম। লম্বা লম্বা টেবিলে সারি সারি মোবাইল, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ আর কম্পিউটার। শত শত মানুষ। দিন কিংবা রাত — যখনই যাওয়া যায় একই রকম দৃশ্য নাকি এখানে থাকে। ওদের এটা বেশ লেগেছে।
সারাদিন ঘুরেফিরে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরতে অনেক রাত হলো। অনিককে এত রাত পর্যন্ত বসে থাকতে দেখে ওঁদের কিঞ্চিৎ লজ্জা হলো। অনিক ওদের বসে না থেকে শুয়ে পড়তে বলে নিজেও বেডরুমে চলে যায়।
★★★
অঙ্কন ফ্রেস হয়ে এসে ভেবেছিল ঘুমিয়ে পড়বে এমনিতেও টায়ার্ড। অনেক ধকল গেছে। যেই ভাবা সেই কাজ। চোখটা লেগে আসবে এমন সময় দরজা নক করার শব্দ হয়। ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে।
পিংক কালার নাইট গাউন পড়া অনন্যার দিকে একবার তাঁকিয়ে অঙ্কন চোখ নামিয়ে ফেলে।
” ঘুমিয়ে পড়েছিলে।” অনন্যা দরজা লক করতে করতে বলে।
অঙ্কন দু’হাতে চোখ কচলায়। কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় ততক্ষণে তার মাথা ধরেছে।
” তুমি হঠাৎ না ঘুমিয়ে এখানে যে!”
অনন্যা শব্দ করে আলো জ্বালায়। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে, ” হঠাৎ, হ্যাঁ হঠাৎ ই তো।” কথাটা বলেই অঙ্কনের দিকে তাঁকাতে চেষ্টা করে।
নগ্ন শরীরের বুকের ঠিক ডান পাশে ট্যাটু দেখতে পেয়ে অনন্যা বলল, ” কবে করলে এটা?”
” কী?” পরক্ষণেই অনন্যার চোখ অনুসরণ করে অঙ্কন শান্ত সুরে বলল, ” কিছুদিন হবে।”
” কই আমি তো দেখতে পেলাম না।”
কথাটা শুনে অঙ্কন ফিঁচেল হাসলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, ” আমি কী তোমার সামনে খালি গায়ে থাকি নাকি, যে তুমি দেখতে পাবে।”
অনন্যা গলায় ভীষণ রাগ ঢেলে বলল, ” তো বলোনি কেন?”
” না- মানে, এটা বলার মতো কিছু কিনা আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না। ”
” এক্সাক্টলি, এটা আমাকে বলার প্রয়োজনই তুমি বোধ করলে না।” অনন্যা মুখ রাগে থমথমে হয়ে আছে।
অঙ্কন উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,
” কী হয়েছে? এভাবে রেগে আছ কেন?”
প্রতুত্তরে অনন্যা কিচ্ছু বলল না।
” আই থিংক, তোমার বিশ্রাম প্রয়োজন। অনন্যা যাও গিয়ে ঘুমাও। সকালে দেখবে মাথা একদম ক্লিয়ার হয়ে গেছে। যাও রাত অনেক হয়েছে।”
অনন্যা না গিয়ে অঙ্কনের বিছানার উপরের বালিশ ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে। কটমট করে বলল,
” তোমার বিশ্রামের মায়েরে বাপ।”
অঙ্কন বিস্মিত হয়ে অনন্যার পাশে বসে,
” আমি কী কিছু করেছি? না বলে এভাবে হুটহাট রাগ দেখালে আমি বুঝব কী করে?”
অনন্যা তখনও কিছু বলছিল না। অঙ্কন কী জানি কী মনে করে বলল,
” ওহ্, এই ট্যাটু তোমার পছন্দ না। সরি হ্যাঁ, তোমাকে না বলে এটা আঁকানোর জন্য। আসলে আমি ইচ্ছে করে এটা আঁকাইনি। করতে হয়েছে শ্যুটিং এর জন্য। অনন্যা আবারও সরি বলছি তুমি প্লিজ কিছু বলো। ”
” ঘুমাচ্ছিলে কেন তুমি? আমাকে কেন ডাকনি? ঘুমুতে এসেছ তুমি? ওঁকে ঘুমাও।”
অঙ্কন আশ্চর্য হয়ে তাঁকাও অনন্যার রাগের কারণ শুনে। মাথা চুলকাতে-চুলকাতে অনন্যার হাত খাঁমচে ধরে।
” চলে যাচ্ছ যে?”
” তোমাকে বিরক্ত করার জন্য সরি। তুমি ঘুমাও।”
” আমি কখন বললাম বিরক্ত হচ্ছি।” অনন্যা হাত ছাড়াতে চাইলে অঙ্কন শক্ত করে অনন্যার কোমড় জড়িয়ে ধরে। ” রাতদুপুরে মাথা ঘুরিয়ে দিয়ে আবার বলা হচ্ছে ঘুমাও। তোমার মনে হয় আমি ঘুমাতে পারব।”
” দিব্যি ঘুমাচ্ছিলে! প্লিজ ন্যাকামি করবা না।”
” তুমি না আমার ভাবনারও উর্ধে, আমি ভেবেছি তোমার কষ্ট হবে, তাই ডাকিনি। বিশ্বাস কর, আমারও ইচ্ছে করছিল তোমার কাছে ছুটে যেতে। সেই কবে তোমাকে কাছে পেয়েছিলাম।” অঙ্কন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” এরপর তো আর কাছেই টানতে পারলাম না, কেবল তোমাকে দুঃখই দিয়ে গেলাম।”
” আমি তোমাকে অভিযোগ করেছি যে আমাকে কেবল দুঃখই দিয়ে গেছ।”
” না, এমনি বললাম। এখনো রেগে থাকবে! একটু হাসো।” অনন্যার কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে অঙ্কন মৃদু হেসে বলল,
” ভাগ্যিস নিজেকে সংযত রেখেছিলাম, না হলে এই নখরামি দেখার সৌভাগ্যই হত না।”
” দাঁড়াও দেখাচ্ছি, নখরামি। খুব হাসা হচ্ছে!”
অনন্যা নিজেকে ছাড়াতে বেশ তোড়জোড় শুরু করে দেয়। তবে সে চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অঙ্কনের ওষ্ঠ ঠোঁটের চুম্বনে।
” এবার নখরামি আমি দেখাব।”
অনন্যাকে কোলে তুলে নিতে নিতে দুষ্টু হাসি হেসে বলল অঙ্কন।
চলবে…