চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৪৬
লেখা আশিকা জামান
এর মাঝে পাঁচ ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে। ওঁরা তখন সাসপেনশন ব্রিজের উপর! এটা পার হয়ে রিসোর্টে যেতে হয়। এখান থেকেই লাফ দিতে হবে এটা ভেবেই যেন তানভীরে শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের স্রোত নামল। বাসে আসার সময় পুরোটা রাস্তা নিজেকে সাহস জোগাতে জোগাতে এসেছে। ব্রিজে চড়ে সব সাহস এক নিমিষে উড়ে গেল।
” তোমার কি হয়েছে? অমন করে কাঁপছো কেন?
তানভীর স্বাভাবিক গলায় বলল,
” কোথায় কাঁপছি! ধুর কি যে বলোনা!”
” তুমি যে ভয়েই কাঁপতেছো এটা না কানার বউ অন্ধও বলে দিবে।”
তানভীর কথাটা শোনামাত্র চোখ বড়বড় করে অনীহার দিকে তাকায়। তার ভ্যাবলী বউ যেহেতু বুঝে গেছে সেহেতু বাকি সবাই বুঝে যাবে। উঁহু এত তাড়াতাড়ি মান-ইজ্জত খোয়ানোর ইচ্ছা তার নেই।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
সবাই একে একে নেমে পড়লো। ওয়েলকাম ড্রিংক দেওয়া হলো এক্টিভিটি এরিয়ায়। তানভীরের ভয়ে গলা দিয়ে কিছুই নামছিল না। অঙ্কন আর সাইমুন হি হি করে হাসতে লাগল ওর এই অবস্থা দেখে। এরপর ব্রিফ করা হলো কি করা যাবে কি করা যাবেনা এইসব নিয়ে। সবার ওজন মাঁপা হলো। ওজন অনুযায়ী ৩ টা গ্রুপে বিভক্ত করা হলো। ভাগ্যক্রমে ওঁরা তিনজনই প্রথম গ্রুপে পড়লো !
এরপর সেখানে ভিডিওর জন্য পে করলো। ভিডিও নিলে আলাদা পে করতে হয়। ওদের নিয়ম হল একটা ভিডিওর জন্য ২৩০০ রুপি আর এর পরের টা ১৫০০ রুপি। দুটার ভিডিওর জন্য জনপ্রতি ৩৮০০ রুপি পে করা লাগল। তারপর তারা বাঞ্জি আর সুইং এর জন্য আলাদা দুইটা টি-শার্ট দিল৷
যেহেতু প্রথম গ্রুপে সুইং ছিল তাই তাড়াতাড়ি
অঙ্কন টি শার্ট পড়ে রেডি হয়ে গেল। এরমাঝেই মনটা কেমন যেন দূর্বল লাগতে লাগলো। হয়তো অনন্যার সাথে দূর্ব্যবহার করেছে তাই। অদূরে অনন্যা দাঁড়িয়ে আছে বিষন্ন মুখে। অঙ্কনের মাথাটা কেমন শুন্য শুন্য লাগল। কিছু বুঝে উঠার আগেই এক দৌড়ে অনন্যার কাছে চলে যায়। ওঁকে এদিকেই আসতে দেখে পাশে থাকা নিনিত নেহা কিঞ্চিৎ দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। অনন্যা নতমুখে তাকিয়ে আছে৷ ওঁর ভয় করছে ইচ্ছে করছে অঙ্কনকে জোর করে আটকে দিতে। কিছুতেই ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু সে কী তার কথা শুনবে!
সামনে এসেও এবার আর অঙ্কন কিছু বলতে পারলনা। হাতে ধরা ব্যাগ, পাসপোর্ট, ওয়ালেট অনন্যার হাতে দিয়ে দেয়।
” অনন্যা, আমি তাহলে আসি!” অঙ্কন স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল।
চাইলে লকারেও রাখতে পারতো কিন্তু এইমুহুর্তে অনন্যাকে বেশি প্রয়োজন তাই এভাবে ছুটে এসেছে।
” এই জাম্প, টাম্প না দিলে হয়না!” অনন্যার ভয় করছে। জাম্প স্টেশন টা দেখেই ভয় করছে। দ্যা লাস্ট রিসোর্ট এর বাঞ্জি উচ্চতার দিক থেকে বিশ্বে ৯ তম, ১৬০ মিটার।
আর সুইংটা নাকী হাইয়েস্ট! এটা ভেবেই আরও ভয় করছে যদি কিছু হয়ে যায়।
অঙ্কন হাসলো। অনন্যার গাল টেনে বলল,
” তাকাও আমার দিকে!”
অনন্যার ভ্রুযুগল প্রসারিত হয়ে নিবিড়ভাবে অঙ্কনের দিকে তাকায়। অঙ্কনের মনে পড়ে যায় সেই ধনুকের মত বাঁকানো ভ্রুযুগল! তার প্রিয়তমার রাগের বহিঃপ্রকাশ এটা কী ভুলা যায়। সেই লজ্জামাখা মুখে রক্তিম আভা! যেন সদ্য প্রস্ফুটিত পদ্য। এই দৃশ্য মনে করতে করতে মৃত্যুর পথে হাটাও যেন চরম সুখের।
হঠাৎ হাতে শীতল স্পর্শ পেয়ে অঙ্কনের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সচকিত হয়ে যায়। মনে মনে এক নিদারুণ প্রশান্তি অনুভব করে। এই মুহুর্তে এই স্পর্শটার বড় প্রয়োজন ছিল।
” অঙ্কন!” অনন্যা থেমে যায়। না কেবল ভাষারাই থেমে যায়না থেমে যায় হৃদস্পন্দনও!
” কিছু বলবে বলো!”
” প্লিজ এইসব হাংকিপাংকি করার দরকার নেই। আমার ভালো লাগছেনা প্লিইজ।”
” কেন ভয় করছে?” অনন্যার থুতনিতে বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে দিয়ে অঙ্কন বলল।
অনন্যা কেবল ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকল।
” এই তুমি ভাবলে কী এত সহজে তোমার মুক্তি? হ্যাঁ হ্যাঁ………..। তোমার কপালে ভীষন ভীষণ কান্না আছে। তোমাকে নাকের জলে চোখের জলে একাকার না করেই আমি মরে যাব।” অঙ্কন হো হো করে হাসতে থাকল। তবে এই হাসিটা অনন্যার ভাবনাচিন্তা গুলো অন্যদিকে ধাবিত করার জন্যই।
” অঙ্কন! আর একটাও কথা বলবা না। সবসময় বাজে বকো তুমি! আর একবার মরার কথা বললে আমি নিজেই তোমাকে মেরে ফেলব।”
এই কথাতেও অঙ্কনের বাধভাঙ্গা হাসি উপচে পরলো। হাসতে হাসতেই বললো,
” যে ব্যাক্তি স্ত্রীর নির্যাতন প্রতিনিয়ত সহ্য করে সে হচ্ছে স্বামী। আর যে স্ত্রীর অতি নির্যাতনে শহীদ হবে সেতো আল্লাহ’র অলী৷ কী সৌভাগ্য!”
অঙ্কন হাসতেই ছিলো, তবে অনন্যার এই বোকার মত তাকিয়ে থাকা দেখে হাসি থামিয়ে, হুট করে অনন্যার প্রশস্ত ললাটে চুমু খেয়ে বলল,
” আসছি।”
এরপর কিছু বুঝে উঠার আগেই সে দৌড়ে পালায়। হতবিহ্বল হয়ে পথের পানে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তার আর কিছুই করার থাকলো না।
অঙ্কন যখন ব্রিজে গেলো তখন একের পর এক ঝাঁপ দিচ্ছে সবাই। প্রথম দিকে কয়েকজনের ঝাঁপ দেয়া দেখে ওর ভীষণ হাসি পেলো। পেছনে দাঁড়ানো সাইমুনেরও হাসি পাচ্ছে। কিন্তু তানভীরের নিজেকে সেখানে চিন্তা করেই প্রান উড়ে গেল। অধৈর্য্য গলায় বলল,
” প্লিজ এইরকম করে হাইসো না। নিজেদেরও এই অকামই করা লাগব। মনে হচ্ছে টাকা দিয়ে মরণ কিনতে আইছি।”
এই কথায় সাইমুন কিছুটা থামলেও অঙ্কনের থামা থামি নাই সে হাসতেই থাকলো যতক্ষণ পারলো।
” অনন্যা আপু তুমি কি এখন ভাইয়ার জন্য কাঁদতে বসবে? প্লিজ কেঁদো না। আমার ভাইয়া সুপারম্যান তার কিচ্ছু হবেনা। যত ভয় তানভীর গর্দভটার জন্য। ওইটা যা ভীতুর ডিম।”
অনীহার কথায় অনন্যার কোন হেল দুল হলো না। একেক জনের জাম্প দেখে তার ভয় করছিলো কিন্তু এইমাত্র অঙ্কনের টার্ন। ইন্সট্রাক্টর তাকে প্রিপেয়ার্ড করতেছে এটা দেখেই ভয়ে দ্বিগুণ কান্না বেড়ে গেলো। বন্ধুরা অনন্যাকে একটু নিজেকে সামলাতে বলল। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
ক্যানিওন সুইং এর জন্য রেডি। একদম দুরে একটা দড়ি বাধা আছে এপাশে অঙ্কনের কোমড়ে দড়ি বাধা হলো। একটু পরেই তাকে ফেলে দেওয়া হবে আর সে দোলনার মত ঝুলবে। যখন ধিরে ধিরে জাম্প স্টেশনে নিয়ে গেল সেই মুহুর্তটা কিঞ্চিৎ ভয়ার্ত ছিল৷ হার্টবিট প্রচন্ড বেড়ে গেল। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলো। ইন্সট্রাক্টর বললো ধিরে ধিরে আগাও। ১,২,৩ সুইং বলে কাউন্টডাউন শেষ হতেই ঝাঁপ দিল। ফ্রি ফল টার সময় মাথা কেমন যেন খালি হয়ে গেল। সেই অনুভূতি কোনদিন বোঝানো সম্ভব না।
অনেকক্ষন দোল খাবার পর দড়ি টেনে পাড়ে এলো ৷ এরপর প্রায় ৪০-৫০ মিনিট মত উপরে উঠে রিসোর্টে যেতে হবে।
এরপরেই তানভীরের টার্ন এলো।
ভয়ে তার দু’পা কাঁপছিলো। যখন ওঁকে প্রিপেয়ার করছিল তখন খালি মনে হচ্ছিলো কুরবানীর গরুকে গোসুল করাচ্ছে একটু পরেই গলা কাটবে৷ চরম ভয় পেয়ে শেষ মুহুর্তে মনে হলো এই সুইং করার কোনই দরকার নেই। বেহুদা কাজে আজাইরা টাকা ঢাললো। না সে এখনি পালিয়ে যাবে। কিন্তু কিভাবে! উপায় না পেয়ে সে ইন্সট্রাক্টর বললো,
” ভাই ছেড়ে দেন। আমি পারুম না।”
কিন্তু সে কোন কথা কানে নিল না। বললো,
” ধিরে ধিরে আগাও। না পারলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব। এবার বলো লাফ দেবে না আমি ধাক্কা দিব!”
তানভীর ভয়ে মুখ আমষেটে করে বলল,
” নাহ্ নিজের চেষ্টায় মরাও ভালো। আপনার হেল্প লাগবে না। নিজেই দিতেছি। আল্লাহ বাচাও!”
কাউন্টডাউন শেষ হতেই সে লাফ দিলো। এক নিমিষেই ভয় ডর উধাও হয়ে গেলো। হঠাৎ করে মনে হলো সে বেঁচে আছে এখনও। আর মুখে খেলে গেলো অদ্ভুত হাসি! আনন্দে তার চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে। এই বেঁচে থাকার ফিল টা পাবার জন্যই এই এক্টিভিটি জীবনে একবার হলেও করা উচিৎ।
এরপর সাইমুনের টার্ন।
অনন্যার অস্থির হয়ে উঠা শরীর শক্ত হাতে ঝাঁকুনি দিয়ে অনীহা বলল,
” অনন্যা আপু দেখো কে আসতেছে। চোখ তুলে তাকাও। ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। ”
অনন্যা চোখ মুছতে মুছতে ব্যকুল হয়ে অঙ্কনের দিকে তাকায়।
অনীহা এর মাঝে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিল চোখের জল ফেলার। যেহেতু অনন্যার চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে সেহেতু তারও উচিৎ তানভীরের জন্য একটু জল ফেলা। কিন্তু কি আশ্চর্য তানভীরের জন্য সে একফোঁটা চোখের জলও ফেলতে পারলো না। শেষে অধৈর্য্য হয়ে হাল ছেড়ে দিল।
অঙ্কন কাছে এসে দাঁড়াতেই অনীহা বলল,
” ভাইয়া তোর ছিচকাঁদুনে বউটা তো কেঁদে কেটে অস্থির! কী করবি এমন বউ নিয়ে তুই-ই বল!”
অঙ্কন বাকাঁ চোখে তাকিয়ে বলল,
” পাগল একটা। এভাবে কেউ কাঁদে। তাকাও দেখো আমার কিচ্ছু হয়নি।”
অনন্যা তাকালো না। কিন্তু কেন অঙ্কন জানে না হয়তো সবার সামনে লজ্জা পাচ্ছে। তানভীর লাফাতে লাফাতে বললো,
” আমি বেঁচে আছি। সবাই দেখ আমি বেঁচে আছি।”
তানভীরের এই ছেলেমানুষী লাফানো দেখে সবারই মুখে হাসি খেলে গেলো। অনীহার রাগে গা জ্বলে গেলো।
” এইভাবে না চিল্লালেও সবাই বুঝতে পারছে যে তুমি বেঁচে আছো। যত্তসব তুমি কি মরতে গেছিলে নাকী! ছেলেমানুষী বন্ধ করো এবার।”
তানভীর মুখ বাঁকিয়ে চুপ করে গেলো।
” শালার নিজের বউই যখন নিজেরে বুঝে না তখন বোবা হয়ে যাওয়াই ভাল।” বিড়বিড় করে বলল তানভীর।
এরপরে লাঞ্চের সময় হয়ে যায়। এই ব্যুফে লাঞ্চটা প্যাকেজের অন্তর্ভুক্তই ছিলো। সবাই লাঞ্চ করলেও তানভীর অসম্মতি জানালো।
” আমি খাবনা। লাঞ্চ করেই ওল্টা করে ঝুলাবে যদি খাবার সব পেট থেকে বেরিয়ে যায়।”
তানভীরের ভয়ার্ত মুখ দিয়ে অঙ্কন হেসে বললো, “আরে ধুর কিছু হবেনা। বস তো!”
ওঁকে জোর করে বসানো হলো কিন্তু ভয়ে ওঁর গলা দিয়ে খাবার নামলো না।
চলবে….
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/