চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩৪
লেখা আশিকা জামান
অনন্যার মাথা কাজ করছে না৷ এক অন্যরকম অস্বস্তিতে সে কিছুটা সময় বুঁদ হয়ে থাকল। হয়তো অঙ্কনের উচিৎ ছিল অনন্যার সাথে স্বাভাবিক কথা চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু সে কিছু বলল না। বলল না মানে আর একটা কথাও বলে নি। অনন্যা চোখ বুজে আছে যদি কিছুটা অস্বস্তি কাটানো যায়। পাশে বসা এই রহস্য বালকের দিকে তাকিয়ে থাকলে বরং ব্যাপারটা আরও খারাপ হবে।
” নামো। এসে পড়েছি!”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
অনন্যা চোখ খুলে চারপাশে তাকায়। ঠিক কতক্ষন চোখ বুজে ছিল কে জানে। এই মুহুর্তে ওরা একটা বহুতল ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জায়গাটা কোথায় ঠিক ঠাহর করতে পারছে না।
অঙ্কন গাড়িটা পার্কিং লটে রেখে এসে, আচমকা অনন্যার হাত চেপে ধরে লিফটের দিকে এগিয়ে যায়। অনন্যার মনে হচ্ছে সে একটা ঘোরের মধ্যে আছে কিংবা কোন অতি বাস্তব কোন কল্পলোকে। তবে অনন্যা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে অনুভূতিটা নিজের কাছে শক্ত করে ধরে রাখতে। আচ্ছা অনুভূতিগুলো কি আজন্ম এভাবেই বেঁচে থাকতে পারে না?
ঠিক এই মুহুর্ত থেকে তার অসম্ভব দুঃখ দুঃখ পাচ্ছে। মনে হচ্ছে সত্যিই সে খুব খারাপ একটা কাজ করেছে। এভাবে অবিবেচকের মতো কাজ করাটা তাকে মানায় না। কেন করল সে?
কি আর করবে সে, মাথার ভেতর সারাক্ষণ অঙ্কন চেপে বসে থাকলে তার আর কি করার! নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে অনেক অনেক দূরে পালিয়ে গেলেই এই ঘোর কেটে যাবে।
নাইন ফ্লোরে লিফট থামে। অঙ্কন কিছুক্ষণের জন্য অনন্যার হাত ছেড়ে দেয়। চাবি বের করে দরজা খুলতে থাকে। অনন্যা কেবল ভাবলেশহীন ভাবে প্রশ্ন করে,
” এটা কার ফ্ল্যাট?”
” আমার!” কথাটা বলেই অঙ্কন ফের অনন্যার হাত চেপে ধরে ভেতরে নিয়ে যায়।
শুষ্ক চোখ মুখ নিয়ে অনন্যা লিভিং রুমের সোফায় বসে পড়ে। গলাটা কেমন শুকিয়ে গেছে খুব তৃষ্ণা পাচ্ছে। অস্ফুট স্বরে উচ্চ্বারণ করে
” পানি।”
অঙ্কন দরজা লাগাতে লাগাতে অনন্যার দিকে একপলক তাকায়।
এরপর ফ্রিজ খুলে একটা ইনটেক্ট ওয়াটার বোতল অনন্যার মুখের সামনে ধরে।
একরকম ছুঁ মেরে বোতলটা হাতে নিয়ে অনন্যা ট্যাগ খুলতে থাকে। অনবরত হাত কাঁপছে। কিছুতেই খুলতে পারছিল না।
অঙ্কন সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে পানির বোতল নিজের হাতে নিয়ে নেয়।
মুখ খুলে অনন্যার হাতে দেয়। ঢকঢক করে পানি গিলে সে অঙ্কনের রক্তহিম করা চোখের দিকে সরাসরি তাকায়।
” একটা সামান্য পানির বোতল খুলতে পারে না আবার বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লাগছে।”
অনন্যা অভিমানী দৃষ্টিতে তাকায়।
অঙ্কন আর কিছু না বলে ফ্ল্যাটের দক্ষিন দিকের মাস্টার বেডরুমে চলে যায়। সারাদিন খুব ধকল গেছে। একটা হট শাওয়ার না নিলে মাথাটা ঠান্ডা হবে না৷
অনন্যা চলৎশক্তিহীন জড়পদার্থের ন্যায় সোফাতেই বসে রয়। যেভাবেই হোক তার সরি বলে এখান থেকে বের হতে হবে। অঙ্কন কে আজ বড় দূর্ভেদ্য লাগছে। আজ রাতটা এখানেই কাটাতে হবে এটা ভেবেই তার বুকের রক্ত ছলকে উঠল। সেই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থাটা দ্বিগুণ থেকে চতুর্গুন হল ঠিক তখন, যখন অঙ্কনকে খালি গায়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হতে দেখল। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা শুরু হয়ে গেছে সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। নাভীর ঠিক নিচে প্যান্ট পড়েছে যেটা ঠিক হাটুর উপর পড়ে আছে। ফর্সা পায়ের গোড়ালি, হাটু তার আজই প্রথম দেখা। বুকের ঠিক মাঝ বরাবর ঘণ কালো কুচকুচে লোমের পাহাড়। অনন্যা হতচকিত তাকায়। এতো মুগ্ধতা কারো চোখেমুখে কি করে থাকতে পারে? লম্বা, তীক্ষ্ণ, ধারালো নাকের ডগায় এখনো রক্তিম আভা। ফর্সা চিবুক ঢেকে আছে মানানসই দাঁড়ি গোফ। এই লুকটা নতুন তবে বেশ মানিয়েছে। কেমন ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। তবে নিজেকে যত সংযত রাখতে পারবে ততই মঙ্গল। তবে কতক্ষন এই সংযম চলবে তা সে নিজেও জানে না। অনন্যা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। নিজেকে বহুবার বেহায়া প্রমাণ করা হয়ে গেছে আর নাহ!
অঙ্কন আচঁমকা এক কাজ করে বসল। অনন্যার গা ঘেঁষে বসে পড়ে। অনন্যা হতচকিত হয়ে ছিটকে সরে যেতে চায় কিন্তু পুরুষালি শক্ত হাত দু’টো ততক্ষণে কোমড় জড়িয়ে ধরেছে। নিদারুণ ঠান্ডায় অনন্যার শরীর হিম হতে থাকে। ঘণ ঘণ হৃৎযন্ত্রের উঠানামা যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করে। মুখ ফুটে অস্ফুটস্বরে বের হল,
” অঙ্কন, আ’ম সরি। খুব ভুল করে ফেলেছি।”
” কিন্তু কেন?” অনন্যার দুই চিবুক টেনে ধরে নিজের মুখের কাছটায় নিয়াসতে নিয়াসতে অঙ্কন প্রশ্ন করল।
” বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে করিনি। করতে চাই নি। আমার বন্ধুরাই তো বলল তোমার একবার মেডিক্যাল চেক আপ করিয়ে নিতে। আমিও কেমন বুদ্ধরামের মতো কাজটা করে ফেললাম।”
অঙ্কন হিশহিশ করে অনন্যার ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে ধরে বলল,
“কথা বোলো না।”
অনন্যা খেয়াল করে অঙ্কনের চোখ, মুখ, ঠোঁট কেমন রক্তিম হয়ে উঠছে। কি করতে চাইছে সে!
অঙ্কনের উন্মুক্ত বুকের মাঝে আটকে পড়ে সে হাঁসফাস করে ।সরে যেতে চায় কিন্তু পারে না। এই মানুষটাকে জোর করে সে সরাতে চায় না!
দ্বিধা আর দ্বন্ধের দোলাচালে তার ঠোঁটের কাছটায় অঙ্কন চুমু খায়। নাকে নাক ঘষে।
অনন্যা আর পারছে না।শ্বাস প্রশ্বাস গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
” অঙ্কন কি করছো? সরে যাও প্লিজ!”
” বিয়ের আগে একটু চেক দিচ্ছিলাম। আর নিজেকেও তো প্রমাণ করতে হবে যে, আ’ম ক্যাপেবল!!” অঙ্কন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে।
” কোন দরকার নেই।” অনন্যা তোতলাতে তোতলাতে বলে।
” আছে তো! পরে যদি তোমার আফসোস হয়। এর থেকে তো এটাই বেটার। তোমার হাতে অপশন থাকবে আমাকে দিয়ে না হলে তুমি বেটার কাউকে বিয়ে করতে পারবে।”
কথাটা শোনামাত্র অপমানিত, রাগান্বিত অনন্যা গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে অঙ্কনকে ধাক্কা দেয়। আচমকা ধাক্কায় সে পড়ে যেতে নিয়েও সোফাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। বিস্মিত হয়ে অনন্যার ক্রোধে জ্বলজ্বল করা চোখের দিকে তাকায়। অপরদিকে মানুষটার দু’চোখে তখন জলের ফোয়ারা। দু’চোখের বন্যায় অঙ্কনের সমস্ত রাগ, দুঃখ, কষ্ট, হতাশা, গ্লানি সব ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠছে।
কাদঁতে কাঁদতেই সে মুখ খোলে,
” আমার সম্পর্কে তোমার এত বাজে ধারণা। আমাকে তোমার এমন মনে হয়। এইসব শোনার আগে আমি মরে গেলাম না কেন?”
অনুতপ্ত হয়ে অনুনয়ের সুরে অঙ্কন বলে,
” আ’ম সরি। তোমাকে খুব দুঃখ দিয়ে ফেললাম। প্লিজ কান্না থামাও। আর মরার কথা একদম বলবা না।”
উথলে উঠা কান্নার দরুন সে আর কোন কথাই বলতে পারল না। অঙ্কন উঠে দাঁড়ায়। তার মনে হচ্ছে তার উঠা উচিৎ। অনন্যা বরং কাদুঁক। ইচ্ছেমতো কাঁদুক। আর যাই হোক বিয়ের পর একমুহুর্তের জন্যেও সে অনন্যাকে কাঁদতে দিবে না। যতক্ষন বাসায় থাকবে একদম বুকের কাছে যত্ন করে চেপে ধরে রাখবে তখন দেখবে ঠিক কি ভাবে নাকের জলে চোখের জলে একাকার করে।
কলিং বেল বাজছে! অঙ্কন নিজের ঘরে, অনন্যা তখনও লিভিং রুমে। অনন্যা উঠতে চেয়েও উঠে না। দুই চিবুক জুড়ে কান্নার দাগ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। এই অবস্থায় উঠে দরজা খোলা তার পক্ষে সম্ভব নয়। অঙ্কনই বা করছে কি? কেন আসছে না।
তার কিঞ্চিৎ পরেই অঙ্কন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে। এখন অবশ্য খালি গায়ে নয় টি শার্ট পরা। অনন্যাকে দেখেই আমতাআমতা করে বলে,
” প্লিজ তুমি একটু বেডরুমে যাও।”
অনন্যাকে আঁতকে উঠতে দেখে অভয় দিয়ে বলে,
” নাহ্, আমার টায় না, এখানে আরও তিনটা বেডরুম আছে যে কোন একটাতে গেলেই হবে।”
অনন্যা কথা না বাড়িয়ে অঙ্কনের বেডরুমেই যায়।
দরজা খুলতেই জিহাদ এতগুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে ঢুকে। হাঁপাতে হাঁপাতে সোফায় বসে পড়ে। পেছনে আরও কয়েকটা ছেলে কতগুলো কতগুলো জিনিসপত্র বহন করে নিয়াসে। সব একা হাতে সামলাতে জিহাদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তাই দেখে অঙ্কন বলল,
” আর ইউ ওকে! এভাবে শুয়ে পড়লে যে। সব ঠিক ঠাক তো!”
” ইয়েস, স্যার। সব পার্ফেক্ট! আপনি যেভাবে ডিরেকশন দিয়েছেন আমি ঠিক সেইভাবেই সব করেছি। আপনি বরং ম্যামের কাছে যান।”
“হ্যাঁ, শিউর” অঙ্কন ম্লান হেসে বলল।
অঙ্কন নিজের বেডরুমে যায়৷ অনন্যা তখন ওয়াশরুম থেকে ওড়না ঠিক করতে করতে বের হয়। চোখে মুখে জলের ছিটা দিয়ে একটু ফ্রেস লাগছে। তবে অস্বস্তি যাচ্ছে না। অঙ্কনকে দেখে সে আবার চমকায়। অঙ্কন অনুরোধের সুরে বলে,
” অনন্যা, তুমি একটু পাশের রুমে আসবে।”
অনন্যা মুখে রা কাটে না। সুরসুর করে পাশের রুমে যায়। পেছন পেছন অঙ্কনও আসে। এতোক্ষণে সে বুঝতে পারে এই ফ্ল্যাটে সে ছাড়া আরও অনেকেই আছে। হচ্ছেটা কি?
বিছানায় এতোগুলো শপিং ব্যাগ দেখে সে আরো কপাল কু্ঁচকায়। প্রশ্ন করতে চেয়েও থেমে যায়। অঙ্কনই বলে,
” তোমাকে ফিফটিন মিনিট টাইম দিলাম এর মাঝে তুমি গোসল করে বের হয়ে এসে আমাকে নক করবে। ওকে!”
” এই রাতের বেলা খামোকা আমি গোসল করতে যাব কেন?” সে এখনও বেশ রেগে আছে।
” কারণ বিয়ের আগে গোসল করতে হয় এটা ফরজ!” অঙ্কন হাসতে হাসতে বলে।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/