চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩১
লেখা আশিকা জামান
অনন্যার কেবলই মনে হচ্ছে এই সাত সকালে কেন এসেছে সে? যেঁচে বাঘের গুহায় কেউ পা দেয়! কিন্তু সে দিয়েছে। স্বীকার করুক আর নাইবা করুক অঙ্কনের অভদ্র রুপটা যে তার দেখতে বড় ইচ্ছে হচ্ছে। বেহায়া ইচ্ছেটাকে যে কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না।
বুজা চোখের পাপড়ি মেলে অনন্যা অঙ্কনের চোখের দিকে এবার সরাসরি তাকায়।
অঙ্কনের কপালে তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম, সেই হৃদয়হরা দৃষ্টি আর মুখে এক অন্য ভূবনের অভিব্যক্তির ছাঁপ যার সাথে ইতিপূর্বে অনন্যার পরিচয় ঘটেনি।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
সময় তখন থমকে গেছে, চার চোখের মিলনে প্রকৃতিও লজ্জা পেয়ে মুখ লুকিয়েছে। তবুও সলজ্জ চাহনি যেন অনেক অব্যাক্ত কথাই বলে দিচ্ছে। সমস্ত ইন্দ্রিয় যেন তোলপাড় করে একটি কথাই জানিয়ে দিচ্ছে, এ বাধন যেন আজন্মের জন্য দুটি সত্তাকে একসাথে বেধে দিয়েছে, এখান থেকে কারো নিস্তার নেই।
হঠাৎ আচমকা এক শিরশিরানি অনুভূত হওয়ায় অনন্যার অসাড় নিস্তেজ দেহ নড়ে চড়ে উঠে। অঙ্কন তার ঠোঁট অনন্যার প্রশস্ত ললাটে চেপে ধরে আছে গভীর আবেশে। তার ঠিকভাবে কিঞ্চিৎ পরেই ঠোঁট দুটো অনন্যার ঠোঁটের কাছটায় নেমে আসে। গাঢ় নিঃশ্বাস মুখের উপর আছড়ে পড়ায় অনন্যার মূর্ছা যেতে ইচ্ছে করল।
অঙ্কন চোখ তুলে আবার তাকায় অনন্যার লালচে ঠোঁটের উপরিভাগে অবাঞ্চিত এক কালো কুচকুচে তিল! তবে এই অবাঞ্চিত জিনিসটাকে অঙ্কনের চোখে সৌন্দর্য্যের আধাঁর হিসেবে ধরা দিচ্ছে। অঙ্কন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অনন্যার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে গিয়েও ফিরে আসে।
অনন্যার ঠোঁট থরথর করে কাঁপছে এটা ভালো লাগা নাকি অস্বস্তি অঙ্কন জানে না। কেবল জানে তার এখন সরে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু কেন পারছে না! তার মানে সেও কি তার বাবার মতো চরিত্রহীন। এক চরিত্রহীন লোকের রক্ত তার শরীরে বইছে। সারা শরীর অপরাধবোধের অস্বস্তিতে বিদ্যুৎ খেলে গেলো। ধপ করে সরে যায় সে।
অনন্যা চমকে উঠে অঙ্কনের দিকে তাকায়। দু’চোখ বুজে অঙ্কন সোজা হয়ে শুয়ে আছে। নাক দিয়ে ঘণ ঘণ নিঃশ্বাস পড়ছে। অনন্যা বুঝে উঠতে পারে না তার কোন ভুল হয়েছে কি না। কেন এতোটা কাছে এসে কেন এভাবে সরে গেল।
” অঙ্কন, তোমার কি শরীর খারাপ! অমন করে শুয়ে পড়লে কেন? কি হয়েছে?”
অনন্যার করা প্রশ্নের তীক্ষ্ণ বুলেট অঙ্কনের বুকে গভীর শেলের মতো বিধঁতে লাগল। বিতৃষ্ণা ভরা দু’চোখ উন্মোচিত করে রুক্ষভাবে বলল,
” কেন, এসেছো এভাবে? এই সাত সকালে আমার বেডরুমে ঢুকে তুমি কি প্রমাণ করতে চাইছো, আমি চরিত্রহীন!”
অনন্যা হতভম্ব হয়ে তাকায়। ফর্সা মুখে রক্ত জমে যায়। সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে সামলিয়ে আকুলিবিকুলি করে অনন্যা আবার বলল,
” এসব কি বলছো? আমি কেন তোমাকে চরিত্রহীন প্রমাণ করতে যাব। তুমি না আমাকে ভালবাসো তাহলে এসব কথা কেন আসছে।”
অঙ্কন প্রশ্নটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে পূর্বের জের ধরে বিছানায় উঠে বসতে বসতে বলল,
” তার মানে তুমি আমার কথা শুনছো না তাই তো! তুমি যদি আমার কথা না শোন তাহলে জীবনেও আমার সামনে আসবে না।”
” আচ্ছা আসব না! বিয়েটা ভেঙ্গে দিলেও তো তোমার সামনে আসার চান্স নেই। তারচেয়ে বরং
আমাকে একদিনের জন্য একটু বিয়ে করো। তারপর আমি ইউ এস এ চলে যাব। তখন তোমার যা খুশি তাই করো আমি বলতে আসব না।”
” ভালো তো! যুক্তি সব সময় রেডি থাকেই। তোমার বউ হওয়ার শখ হয়েছে তো, তুমি যদি সত্যিই আমার বউ হও বিশ্বাস করো আমি তোমাকে একটুও ভালোবাসবো না।”
অনন্যা এত দুঃখেও হেসে দিলো,
” যাহ্ তা আবার হয় না কি! স্বামী তার বউকে ভালোবাসবে না এটা কখনো হয়।”
” আমি মানুষটা উদ্ভট তাই আমার চিন্তাভাবনা গুলাও উদ্ভট! কথা বুঝা গেলো।”
” আচ্ছা ভালোবাসতে হবে না তুমি বরং বিয়েটাই করো।” অনন্যা মুখ কালো করে বলল।
অঙ্কন অধৈর্য্য হয়ে অনন্যার হাত চেপে ধরে,
” তুমি এত জেদ করছো কেন অনন্যা! ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড অনন্যা আমি নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করতে পারি না। আমি খুব খারাপ। আমার কোন কিছুর ঠিক নেই। উশৃঙ্খল এলোমেলো ভুলেভরা জীবন। আমার সাথে বিয়ে হলে তুমি জীবনেও সুখী হবেনা। তুমি কেবল কষ্টই পাবে কেন বুঝোনা।”
অনন্যা অঙ্কনের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।
” তোমাকে পাওয়ার জন্য অমন শতকষ্ট আমি মুখ বুজে সহ্য করতে পারি।”
মেয়েটা কাঁদছে। অঙ্কন কি করবে? নিজেকে যে সামলাতে পারছে না। মনস্থির করেই নিয়েছে এবার থেকে আর লুকোচুরি নয় যা হবার সামনাসামনিই হবে!
অঙ্কন দুইহাতে অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” অনন্যা, শান্ত হও। বাড়ি যাও। তোমার সাথে আমি পরে কথা বলব। বিশ্বাস করো আমার একা থাকার দরকার। নিজের সাথে নিজের অনেক বোঝাপড়া করার আছে।”
অনন্যা নির্বিকারভাবে উঠে দাঁড়ায়। চোখে তখনও জল ছলছল করছিলো। এই জল সে মুছবে না। সামনের দিকে পা বাড়ানো মাত্র অঙ্কন আচমকাই হাত টেনে ধরে। টিস্যু বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
” অনন্যা তুমি কিন্তু এখনো কাঁদছো। জল মুছে যাও।”
অনন্যা টিস্যু ফেলে দিয়ে বলল,
” নাহ্, এটা আমার নিত্যসঙ্গী। যেদিন থেকে বুঝেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি সেদিন থেকে কান্না ছাড়া আর কিছু কপালে জুটে নি। বলতো এখানে আমার কি দোষ? ”
” অনন্যা! তোমার কোন দোষ নেই। সব আমার দোষ। ” অঙ্কনের জ্বলন্ত চোখজোড়া অনন্যার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
অনন্যা একমুহুর্তও দাঁড়ালো না নিঃশব্দে স্থান ত্যাগ করে।
বের হওয়ার সময় ড্রয়িংরুমে অন্বেষার সাথে চোখাচোখি হলেও অনন্যা কিছু না বলে দ্রুত পা চালায়। করিডোরে এক অপরিচিত ছেলের সাথে অনন্যা ধাক্কা খেয়েও পেছনে না ফিরে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
ছেলেটি অনন্যার কান্নাভেজা চেহারার দিকে তাকিয়ে কি যেন এক যোগসূত্র খুঁজে বের করলো। তা কেবল সে আর ঈশ্বরই জানে।
অন্বেষা কিছু হয়তোবা অনন্যাকে জিজ্ঞেস করতো কিন্তু জিহাদকে দেখে থেমে গিয়ে উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,
” আরে, জিহাদ ভাই যে! কেমন আছেন।”
” এই তো সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ। তোমরা সব ভালোতো।”
” হ্যাঁ ভালোই খারাপ না। কেবল মাথামোটা ভাইয়াকে নিয়েই যত ঝামেলা।”
” হ্যাঁ আমি বরং হিরো সাহেবের ঘরেই যাই।”
” মুন ভাবির এখন কি অবস্থা! ইন্ডিয়া থেকে কবে ফিরলেন?”
” মুন তো এখন আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ। কালই ফিরেছি। অনেক তো ছুটি কাটানো হলো এবার তো আর বসে বসে হিরোর টাকা উড়ানো যায় না। তাই কাজে চলে এলাম।”
জিহাদ স্বভাবসুলভ হাসি ঝুলিয়ে রেখে অঙ্কনের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
অঙ্কন ঘরের দোড় লাগিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকতে চেয়েছিলো জিহাদের জন্য সে চেষ্টা বৃথা গেলো। পৃথিবীতে এই একটা মানুষের কাছে অঙ্কন অকারণ অহেতুক দায়বদ্ধ। এই মানুষটা হয়তো জানে না তার কাছে সে কতোটা নির্ভরযোগ্য কতোটা বিশ্বস্ত।
” এইসব কি শুরু করছেন আপনি?”
জিহাদ দাঁড়িয়ে থেকেই প্রশ্নটা করলো।
” কি শুরু করছি।”
অঙ্কন শান্ত গলায় বলল।
” আপনি কি ভেবেছেন আমি ঘাস খাওয়ার জন্য আপনার পার্সোনাল সেক্রেটারি হয়েছি। স্যার আপনার প্রত্যেকটা মুহুর্তের প্রত্যেকটা খবর আমি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানি। ঠিক এই কারণেই আমি ইন্ডিয়া যেতে চাইনি। আপনি আমাকে জোর করে পাঠালেন বলেই যেতে হলে না হলে বাড়িতে আরও লোক ছিলো তারা ঠিক ম্যানেজ করে নিতো। ”
” ম্যানেজ হয়তো করে নিতো। কিন্তু মুনের পাশে তোমার থাকাটা জরুরি ছিলো। এতবড় একটা অপারেশন আর তুমি স্বামী হয়ে স্ত্রীকে মেন্টাল সাপোর্ট দিবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই নয় কি!”
” তাই বলে আপনি নিজের ভালোটা বুঝবেন না এতসব স্ক্যান্ডাল! আমার জাস্ট বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো। আর আমার অবর্তমানে নাসিরের তো আপনার সাথে থাকার কথা ছিলো। কোথায় সে নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে।”
” নাসির তার দায়িত্ব ঠিকভাবেই পালন করেছে। আর যা যা ঘটেছে তা আমি ইচ্ছেকরেই ঘটিয়েছি।”
“হুয়াট! আপনি ইচ্ছেকরে নিউজ হয়েছেন। আপনার মাথা সত্যিই গেছে।”
বিস্ময়ে জিহাদের মুখ হাঁ হয়ে যায়।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/