চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ২৫
লেখা আশিকা জামান।
তৃষ্ণা নিজের গাড়ি থেকে নেমে পেছনের বরের গাড়ির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। তারেক সাহেব আড়চোখে একবার চারপাশটা দেখে নিলেন।
না সব ঠিক ঠাকই আছে। এখানে আসার পূর্বেই ফোনে ডিরেকশন দেয়া আছে। বাড়িতে থাকা আত্নীয় স্বজনরা এতোক্ষণে নিশ্চয় সব গুছিয়েও ফেলেছে।
তারেক সাহেবের বোন ছাড়া বাকি আত্নীয় স্বজনরা সবাই রিসেপশনে গিয়েছিলো। উনাকে বরণডালা হাতে আসতে দেখে তারেক সাহেব একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
তবে তৃষ্ণার খুতখুতে স্বভাবটা যাবার নয়। শ্বশুরবাড়ির আত্নীয় স্বজনদের প্রতি উনি আবার হাই লেভেলের এলার্জিটিক। অত্যন্ত চতুরতা আর ধৈর্য্যের সাথে ইনাদের ৩০ বছর ধরে ট্যাকেল করে আসছেন। কারণ ইনাদের আবার চুন থেকে পান খসলেই মুখে কথার খই ফোটে। তবে তৃষ্ণার সাথে পেরে উঠাও বোধ হয় অতোটাও সহজ নয়। এদের কোণঠাসা করার জন্য দরকার ছিলো একটা চালাক চতুর মেয়ে কিন্তু তা না হয়ে তার ঘাড়ে জুটেছে একটা হাই লেভেলের গাধী। এই মেয়ে যে দুই দিনে তার সংসার ভাসিয়ে দিয়ে তার উপর মনের সুখে নৌকা চালাবে ! এ তিনি বেশ বুঝতে পারছেন। সে যা হবার হয়ে গেছে! এ নিয়ে তিনি আর ভাবতে চান না। কিন্তু এই মুহুর্তে ভাববার মতো বিষয় হচ্ছে মেয়ে এসেছে ভালো কথা কিন্তু তার সাথে মেয়ের মা আর বোনও এসে জুটেছে এ ভারী অনুচিত অযাচিত কারবার। তার উপর অঙ্কন লাপাত্তা বিষয়টা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। তিনি না হয় ছাড় দিতে পারেন কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন এ নিয়ে কানাকানি ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। এদের কি করে সামলাবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না।
মল্লিকা তৃষ্ণার গায়ে ধাক্কা দিয়ে বললো,
” কি গো নতুন শাশুড়ী, কোন ভাবনায় ডুব দিলা। এই ঢিলেমি স্বভাবটা এবারতো বাদ দাও। বউ মা কে বরণ করে, নামাও।”
তৃষ্ণা পেছনে তাকিয়ে একমাত্র ননদের কথার সুক্ষ্ম খোঁচাটা গায়ে না বিঁধিয়ে মুখে মেকি হাসি টেনে বললো,
” দেখি বরণডালার কি হাল করছো?”
তৃষ্ণা বরণডালা নিতে গেলে মল্লিকা শক্ত হাতে ধরে বললো,
” তোমার দেখে কাজ নেই। নিজের কাজটাই বরং করো। ছেলের বউকে এবার তো নামাও। এখানে কেউ অনিদ্দিষ্ট কালের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে না। ”
তৃষ্ণা, মুখ বাঁকিয়ে বরের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
” তানভীর, অনীহাকে নিয়ে নেমে আয়। ”
অনীহা খুশি মনে নামতে উদ্যত হয় পরক্ষণেই মুখ কালো করে আবার বসে পড়ে। তানভীর ভ্রুকুচকে তাকাতেই অনীহা ফিসফিসয়ে বললো,
” তানভীর প্লিজ কিছু করো আমি শাড়ী খুলে ফেলেছি।”
তানভীর আৎকে উঠা গলায় বললো,
” মানে কি, এই অবস্থায়, এতগুলো মানুষের সামনে কিভাবে কি করবো? তোমার মাথা গেছে।”
অনীহা প্রায় আকুলিবিকুলি করে উঠে বললো,
” নাহ্, প্লিজ করো, কিছু একটা করো৷ নাহলে আমি নামবো না।”
তানভীর এসি গাড়ির ভেতরেও দরদর করে ঘামতে লাগলো। বাহিরে থেকে তৃষ্ণা গলা চড়িয়ে বললো,
” ভেতরে কিসের এত গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর হচ্ছে। নেমে আয় বাপ! এবারটি আমায় উদ্ধার কর এরপর ঘরে দোড় দিয়ে গলা ধরে বসে থাকিস তোকে কেউ কিচ্ছুটি বলবে নাকো।”
তানভীরের এই মুহুর্তে মাথা কাজ করছে না। বিরক্তির চরম সীমায় পৌছে গিয়ে চোয়াল শক্ত করে অনীহাকে বললো,
” তুমি কি আর একটা ঘন্টা ওয়েট করতে পারতেছো না। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড এভাবে যখন তখন এসব আসে না। আরে বাবা আগেতো নিজের ঘরে যাই তারপর না হয় যা করার করবো। প্লিজ নিজেকে সামলাও এবার। ”
তানভীর বিড়বিড় করে আবার বললো,
“কি মেয়েরে বাবা লজ্জা শরমের মাথা একেবারেই খাইছে!”
অনীহা ঠাস করে তানভীরের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বললো,
” হাদাঁরাম আমি কি আধা ল্যাংটা হয়ে ঘরে ঢুকবো। আমার শাড়ি খুলে গেছে আর কি সব উল্টাপাল্টা বলছিস।” অনীহা রাগে, লজ্জায় ফুলে ফেপে উঠলো।
তানভীর থাপ্পড় খেয়ে কিছুক্ষণ তব্দা মেরে বসে রইলো। কান ঝা ঝা করে। কি শক্তিরে বাবা!
এই মেয়ের সাথে শক্তিতে কুলোতে পারবেতো! তানভীর অনেক ভেবেও কোন উত্তর পেলোনা।
তৃষ্ণা সহ আশেপাশের সবার চক্ষুচড়ক গাছ। এমন বউ তারা জীবনেও দেখে নি। শ্বশুরবাড়িতে আসতে না আসতেই বরের গালে থাপ্পড়! বিষয়টা কেউ স্বাভাবিকভাবে নিলো না। গোটা আত্নীয় স্বজনদের মাঝে চাউর হতে খুব একটা সময় লাগলোনা। কথায় বলে না ” দুঃসংবাদ বাতাসের আগে ছড়ায়।”
” মা, আমাদের অনীহার সাথে আসাটা একদমই উচিৎ হয়নি। দেখছোনা সবাই কেমন হাঁ করে তাকিয়ে আছে।”
অনীলার মেজাজ এমনিতেই চটে আছে৷ অঙ্কনের প্রতি ভয়াবহ রকমের রাগ লাগছে। অনন্যার সাথে সেই যে গেলো এরপরই লাপাত্তা। ফোন করে যাচ্ছেন সেটাও তুলতে পারছে না। মেয়েটাতো জামাই পাগল সেতো বুঝাই যাচ্ছে এরপর ছেলেটাও যদি বিয়ের আগেই এইভাবে বউ এর আঁচল ধরে ধরে ঘোরে তাহলে কি মানা যায়। শেষ পর্যন্ত বোনটাকে বিদেয় দিতেও এলো না। গেছে কোন চুলোয় কে জানে!
তাছাড়া মেয়েটার একটু ম্যাচুরিটি কম তানভীরদের পিকিউলিয়ার আত্নীয় স্বজনদের হাত থেকে মেয়েটাকে রক্ষা করতেই তার আসা। অবশ্য এখানে আসার দায়িত্বটা অঙ্কনের ছিলো সেটাও সে পালন করতে পারলোনা।
” কি সৌভাগ্য! কি সৌভাগ্য। মেয়ের সাথে দেখি মেয়ের মাও শ্বশুরবাড়িতে হাজীর। এমন দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়ে না। বেয়াইন সাহেবা নাইমা আসুন! নাকি আপনাকেও বরণ করতে হবে।”
মল্লিকা বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বললো।
অনীলা দাত কিড়মিড় করতে করতে নেমে আসলো। পেছন পেছন অন্বেষাও এলো।
পাশেই দুইজন লোক বলাবলি করছিলো,
“নতুন বউতো জামাইরে ঠাড়াইয়া এক থাপ্পড় মারছে।”
মল্লিকা, অনীলা, অন্বেষা বিস্মিত হয়ে বরের গাড়ির দিকে ভোঁ দৌড় দেয়।
মল্লিকা এসেই সাত পাঁচ না ভেবেই বললো, ” এই মেয়ে তোমার সাহসতো কম না। বাড়িতে পা দিতে না দিতেই জামাইয়ের গালে থাপ্পড়! ”
তৃষ্ণা এতোক্ষণ বাকশূন্য হয়ে তাকিয়ে ছিলো। এবার কিছু না বললেই নয়। কিন্তু সে মুখ খোলার আগেই আরেকজন এসে বললো,
” তৃষ্ণা যে মেয়ে আনছো ঘরে মাথার চুল একটাও থাকতো না।”
তৃষ্ণা নিজের কপাল দুঃখে, আর অতিমাত্রায় রাগে প্রায় বসে পড়ার উপক্রম হয়। অনীলা হুট করে এসে ধরে ফেলে। তাতে তার রাগও বেড়ে যায়। অভিযোগের সুরে বললো,
” ভাবি তোমার মেয়ে সবার সামনে আমার ছেলেকে থাপ্পড় মেরেছে। আমার মান সম্মান যা ছিলো সব খুইয়েছে। তুমিই বলো এবার আমার কি করা উচিৎ। ”
অনীলা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত না হয়ে পারছেন না। ধমকের সুরে বললেন,
” তুই এই অকাম টা কেন করলি? মাথায় কি কিছু নাই।”
অনীহা বরাবরের মতোই কাচুমাচু করে তাকিয়ে থাকলো। পেছন থেকে অন্বেষা পট করে বলে ফেললো,
” মশা! তানভীর ভাইয়া তোমার গালে মশা বসেছিলো তাইনা!”
বোনের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে অনীহা লাফিয়ে উঠে বললো, ” মশা! তানভীর বলো না কিভাবে আমি তোমার মশা মেরে দিলাম।”
অনীহা কথা বলতে বলতে তানভীরের কাধে কাধ ঠেকিয়ে ইশারায় সম্মতি জানাতে বললো৷ তানভীর চোখ মুখ কুচকে বললো,
” অনীহা থাপ্পড় মেরে আমার গালের মশা মেরে দিয়েছে। মশাটা না বিশাল বড় ছিলো প্রচুর রক্ত গেছে। এই দেখ গালটা কেমন লাল হয়ে গেছে।”
তানভীর সবাইকে নিজের ফোলা গাল দেখাতে লাগলো।
দুই বোন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। পরিস্থিতি এযাত্রায় স্বাভাবিক।
****************
কুয়াশার চাদরে মোড়া কোন এক কাক ডাকা ভোরে, অনন্যা হিড়হিড় করে কাঁপতে কাঁপতে অনির্দিষ্ট গন্তব্যের পথে হেটে চলেছে। চলেছেতো চলেছেই যেন এ পথ অন্তহীন। কিছুদূর যাওয়ার পর পা আর টলছিলো না। ক্লান্ত হয়ে থেমে যায়। ঠিক তখনই কুয়াশার চাদর ভেদ করে অস্পৃশ্য একটি ছায়ামানব হাত বাড়িয়ে বললো,
” চলো দুজনে মিলে, গন্তব্য পৌছাই। থেমে গেলে যে লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে।”
অনন্যা মৃদু হেসে হাত টা ধরতে যায়। ঠিক তখনি কোথা থেকে যেন আরেকটা ছায়ামূর্তি এসে ছোঁ মেরে ছায়া মানবকে নিয়ে চলে যায়, তেপান্তরের পথে। অনন্যা দ্বিগবিদিক শুন্য হয়ে খুঁজতে থাকে। কিন্তু ঘণ কুয়াশায় ঘেরা নীবিড় আধাঁরে কারো চেহারাই দেখতে পেলো না। কেবল মনে হলো ছায়ামানবটা তার চেনা খুব পরিচিত বড় আপন। তার কিঞ্চিৎ পরেই অনন্যা অঙ্কনের নাম নিয়ে চিৎকার করে বিছানায় উঠে বসে। কিছুটা সময় লাগে ধাতস্থ হতে। মনে পড়ে যায় এটা একটা স্বপ্ন ছিলো তবে বাস্তব আর স্বপ্নের মাঝে খুব একটা তফাৎ নেই। কেন দেখলো এমন স্বপ্ন! অনন্যা সেই অবস্থাতেই কাঁদতে কাঁদতে অনিকের নম্বর ডায়াল করলো। অনিক ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। বোনের ফোন পেয়ে বরাবরের মতোই কেটে দিয়ে নিজে ব্যাক করলো।
অনন্যা প্রথমে ফুঁপাচ্ছিলো কথাই বলতে পারছিলো না।
অনিক বুঝে যায় কিছু একটা হয়েছে। বুকের ভেতরটা খচখচ করে উঠে।
” অনন্যা, কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন বোন।”
” ভাইয়া, তোকে ছাড়া আমার একটুও ভালো লাগছে না। আমাকে তোর কাছে নিয়ে যা।”
অনিক ভাষাশূন্য হয়ে কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর বললো,
” হ্যাঁ নিয়ে তো আসবোই। কিন্তু তোর এক্সাক্ট ঠিক কি হয়েছে সেটাতো বল।”
” কিচ্ছু হয়নি।”
” কিছু একটা হয়েছে আমি বুঝতে পারছি। বেশ কয়েকদিন যাবৎ কাজের ব্যাস্ততায় তোদের খোঁজ নিতে পারিনি। প্লিজ কিছু লুকোবি না।”
অনন্যা কাঁদতে কাঁদতে সব কিছু ভাইয়ের কাছে বলতে লাগলো। পৃথিবীতে এই একটা মানুষের কাছে কোন অনুভূতিই সে লুকোতে পারেনা। আর এটুকু আত্নবিশ্বাস আছে,
এই মানুষটাই পারে তাকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/