চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ২৩
লেখা আশিকা জামান
অনন্যার চুল থেকে টুপ টুপ করে পানি ঝরছে। এবার বেশ শীতও করছে। পিঠে ব্লাউজের অধিকাংশই ভিজে হয়তো বিচ্ছিরি লাগছে। এতোক্ষণ হাসলেও এখন আর পূর্বের হাসিটা ধরে রাখতে পারছে না।
এখন রাগ হচ্ছে। যাই হোক এইরকম একটা সাংঘাতিক লেভেলের লোকের সাথে অনন্যা আর রাগ দেখানোর চেষ্টাও করবে না। শুধে মুখে নয় কানেও চিমটি দেয় যাতে মনে থাকে।
কি সাংঘাতিক! কি সাংঘাতিক!
অনন্যা কেবল মাথায় একটু পানি ঢেলেছে তাই বলে কোন মেয়ের গায়ে এতগুলো মানুষের সামনে এক বোতল পানি ঢেলে দেওয়া কি সুস্থ মানুষের কার্যকলাপ! নাহ্ কিছু ভাবতে পারছে না। এখন যত দ্রুত সম্ভব তার বাসায় পৌছা দরকার।
অনন্যা ভেজা শরীরে হিড়হিড় করে কাঁপতে কাঁপতে বাবা মায়ের সামনে যায়।
মেয়েকে দেখে আয়েশা আর আহনাফ বহু কষ্টে হাসি সামলিয়ে একগাদা প্রশ্নবোধক চিন্হ নিয়ে সরাসরি তাকায়।
” বাবা, আমি বাসায় যাচ্ছি। শাহীন ভাই আমাকে রেখে, পরে তোমাদের না হয় নিতে আসবে।”
আয়েশা, আহনাফ ভ্রুকুচঁকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো তার পূর্বেই অনন্যা অনুমতির অপেক্ষা না করে হন হন করে উলটো দিকে হাটা ধরে।
অঙ্কন সেদিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকলো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
” ভাইয়া, তুই কি কাজটা ঠিক করলি। মা কিন্তু তোর উপর খ্যাপে আছে মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।” অন্বেষার প্রশ্নে অঙ্কনের চেতনা ভঙ্গ হয়। উত্তর না দিয়ে সরুচোখে অনীহার দিকে তাকিয়ে বললো,
” অনীহা, আমি যদি এখন চলে যাই তুই কি খুব মাইন্ড করবি?”
অনীহা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
” হ্যাঁ মাইন্ড করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই যখন বলছস তখন মাইন্ড করবোনা।”
তারপর কিছু একটা ভেবে নিয়ে আবার বললো,
” দাঁড়া আগেই যাসনা তানভীরকে জিজ্ঞেস করি।”
তানভীরের দিকে উচ্ছ্বসিত হাসি দিয়ে অনীহা বললো,
” ভাইয়া, এখন চলে গেলে কি তুমি রাগ করবে?”
” অবশ্যই না। রাধিকা চলে যাচ্ছে! এবার হিরোকে আটকানোর মত গুরুতর অপরাধ করা কি আমার সাজে! ” তানভীর ৩২ পাটি দাঁত বের করে হাসলো।
অঙ্কনের রাগ লাগছে। তবু তানভীরকে কিছু বললো না। আজকে অনন্যার জন্যই তাকে শো পিস হতে হয়েছে। সবাই দাঁত বের করে খুব হেসেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো অনন্যাও হেসেছে!
অনন্যা লিফট থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমেই শাহীনের নম্বর ডায়াল করে। রাবিশটা ফোন তুলছেই না৷ এই এত ভীড়ের মধ্যে খুঁজবে কিভাবে? বড্ড চিন্তার বিষয়!
এদিকে খুব বাতাস। গাছের পাতা অনবরত নড়ছে। পাল্লা দিয়ে শরীর উষ্ণতাও হারাচ্ছে। অনন্যা শাড়ির আচঁল ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে নেয়। এরপর আবার শাহীনের নম্বর ডায়াল করে। বিরক্ত! মহাবিরক্ত এবার ও ফোন তুলছে না। হঠাৎ করেই চেনা কারো আলতো এলোমেলো অবিন্যস্ত স্পর্শে অনন্যা শিউরে উঠে পেছনে তাকাতে বাধ্য হয়।
অঙ্কন তার গায়ের কোট খুলে অনন্যার গায়ে পড়িয়ে দিচ্ছে অপটুভাবে। অনন্যা হতবিহ্বল হয়ে কিছুক্ষণ কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। এরপর দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে ভাষাজ্ঞানহীন হিসেবে আবিষ্কার করলো।
” তোমার খুব ঠান্ডা লাগছে!
আচ্ছা, তুমি এখানে দাঁড়াও আমি গাড়িটা নিয়াসছি।”
অঙ্কন আর পিছু না ফিরে গ্রাউন্ড ফ্লোরের দিকে যেতে থাকে।
অনন্যা অঙ্কনকে অনুসরণ করে পেছনের দিকে একবার তাকিয়ে ফের নিজের দিকে মনযোগ দেয়। এই মুহুর্তে অঙ্কনকে সে কিছুতেই এক্সপেক্ট করেনি। কেন এলো সে? অনন্যার কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না। এনগেজমেন্ট এর পর তাদের আলাদাভাবে কোন কথা হয়নি। তবে কি সে তার সাথে আলাদা সময় কাটাতে চায়? অনন্যার মেরুদণ্ড বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোতের হাওয়া বয়ে গেলো।
গাড়ির ডোর খুলে গেলো। অনন্যা লজ্জাজনক ভঙ্গিতে অঙ্কনের পাশে বসে মুখ নিচু করে থাকলো।
কিঞ্চিৎ পর পর একটু করে তাকিয়ে আবার চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলো। এ ভারী মজার খেলা। অঙ্কন বেশ কিছুক্ষণ ধরে বিষয়টা
লক্ষ্য করে খ্যাঁক করে গলা পরিষ্কার করে বললো,
” তুমি কিন্তু এখন অব্দি সিট বেল্ট বাধনি। আমি করে দিবো না নিজেই করে নিবে।”
অনন্যা মুখ নিচু করে দুই হাত উপরে তুলে সম্মতি জানায়। অঙ্কন বুঝে যায় তার কি করতে হব। অনন্যার দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে নিয়াসতেই অনন্যা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। নাকে এসে লাগে আফটার শেভের মাতাল করা সুগন্ধ৷ কেমন যেন নেশা ধরে যাচ্ছিলো। অনন্যার বড্ড ইচ্ছে করছিলো অঙ্কনের চিবুকদ্বয় একটিবার আলতো হাতে ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু ইচ্ছের থেকে লজ্জাটা বেশী পাচ্ছিলো তাই বরফের মতো কাঠিন্য ভাব শত কষ্টেও বজায় রাখলো।
অঙ্কনের বড় বিব্রত হওয়ার পালা। অনন্যার এই লজ্জামাখা মুখ দেখে কিছুতেই সহজ হতে পারছে না৷ নিজের সহজাত কাঠিন্য ধরে রেখে যখন অনন্যার সিটবেল্ট বাধছিলো তখন ঠান্ডা হিম শীতল হাতে আচমকা স্পর্শ লেগে এক অপ্রস্তুতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। তবে কিছু সময়পর সহজভাবে তা কাটিয়েও উঠে। আপন মনে ড্রাইভ করে কিছুদূর যাওয়ার পর অনন্যার দিকে ফের তাকায়।
অনন্যার চোখে মুখে তখনো সেই আফটার শেভের গন্ধ! চোখ বন্ধ করে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে যেন এক অন্য জগতে বিচরণ করছিলো।
হুট করেই একটা কবিতা মনে পড়ে গেলো। যে কবিতা পড়তে গিয়ে স্কুল জীবনে বয়সন্ধিকালের উত্তাল যৌবনে কান গরম হওয়ার যোগাড় হয়েছিলো। সেই কবিতা এতো দিন পর….।
” আফটার শেভ”
তসলিমা নাসরিন
তোমার শরীর থেকে আফটার শেভের গন্ধ আসে
বিলেতি, নাকি ফরাসি সৌরভ, বুঝিনা।
তোমায় চুমু খেতে গেলে আফটার শেভ
কপালে,গালে,কন্ঠদেশে ঠোঁট ছোয়াবো, আফটার শেভ
————————————–
————————————
এতো আফটার শেভ মাখো তুমি
বুকে মুখ রাখলে নেশা ধরে যায়।”
মাঝে আর শেষের লাইনগুলো অনন্যা মনে করতে পারে না। নিবিড়ভাবে মনে করার চেষ্টা চালায়। ঠিক তখনই অঙ্কন বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
” অনন্যা কি ভাবছো? আর কিসব বিড়বিড় করছো।”
অনন্যা চকিত তাকিয়ে মুখ ফসকে বললো,
” আফটার শেভ।”
” হুয়াট!”
” না মানে মানে আফটার শেভের স্নেল পাচ্ছি।” অনন্যা গলা পরিষ্কার করে বললো।
” ওহ হ্যাঁ সকালেই শেভ করেছি। কেন তোমার কি স্মেলটা পছন্দ হচ্ছে না। খুব বাজে লাগছে। ”
অনন্যার ইচ্ছে করছে বলতে উঁহু খুব ভালো লাগছে। একটু ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে আর চুমু খেতেও ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে বলবে না। কারণ এই অনুভূতিগুলো অঙ্কনের থেকে আগে আসা দরকার, এটাই নিয়ম। একটা দীর্ঘশ্বাস পিছলিয়ে পড়লো। অনন্যা অস্ফুট স্বরে বললো,
” এখানে ভালো বা খারাপ লাগার কিছুতো নেই। আমি জাস্ট এটুকুনুই বলতে চেয়েছি যে একটা স্মেল পাচ্ছি। দ্যাট’,স ইট।”
” ওহ আচ্ছা।”
অনন্যা আর কিছু বললো না। অঙ্কন সেদিকে একবার তাকিয়ে হঠাৎ অধৈর্য্য গলায় বললো,
” আ’ম সরি অনন্যা।”
অনন্যা চকিত তাকায়। অঙ্কন আবার বললো,
” তোমার উপর হুট করেই একটা সম্পর্কের দায় চাপানো হলো। আমি সত্যিই জানতাম না। অবশ্য আগে থেকে জানলেও আমার কিছু করার ছিলো না। মা বাবার সব ইচ্ছেটাকেই সমান ভাবে গুরুত্ব দেয়াটা ছেলে হিসেবে আমার নৈতিক দায়িত্ব। তবে তোমার দিকটা ভেবে খারাপ লাগছে। আমি জানি আমাদের যে নতুন সম্পর্ক হতে যাচ্ছে তাতে তুমি মোটেও হ্যাপি নয়। আমি এটা জানি এবং মন থেকে বিশ্বাস করি। তুমি কিন্তু চাইলে এখনো তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে পারো?”
অনন্যা স্তম্ভিত হয়ে অঙ্কনের কথা শুনে গেলো। হঠাৎ অবিশ্বাস্য সুরে প্রশ্ন করলো,
” ঠিক কি ব্যাপারে কথা বলবো? আমি না বুঝলাম না অঙ্কন।”
” না মানে, তুমি তখন বললে না, যে এংগেইজমেন্ট হলেই বিয়ে হয়ে যায়না৷ তো এই ব্যাপারে কথা বলতে পারো। আমি নিরপেক্ষ তুমি যেকোন ডিসিশন নিতে পারো আই হ্যাভ নো প্রবলেম।”
অনন্যা দুই কান ধরে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো। অঙ্কন সেদিকে তাকিয়ে অপরাধীর মত নিস্তেজ শান্ত গলায় বললো,
” কোন সমস্যা? ওভাবে বসে আছো কেন?
তুমি কি আমার কথায় হার্ট হচ্ছো? আমি কিন্তু তোমাকে হার্ট করার জন্য কিছু বলছিনা। যেটা সত্যি কেবল সেটাই বলতে চাইছি। আমরা বড়জোর ভালো বন্ধু হতে পারি এর বেশী তো অসম্ভব। কারণ তুমি আর আমি দুজনেই দুমেরুর তাছাড়া মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট পয়েন্ট হচ্ছে তুমি আমাকে পছন্দ করোনা। এটাতো আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার দিনই তুমি বলে দিয়েছো। সো আমিতো এতোদিন আমার মেন্টালেটি ওভাবেই প্রস্তুত করেছি সেভাবেই তোমার সাথে মিশেছি।”
অনন্যা উত্তর দিলো না। একটা কথাও বললো না। দু’চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসতে চাইছে। মনে হচ্ছে এই বাধঁভাঙ্গা জল কিছুতেই কোন বাধঁনই মানবে না।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/