চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ২১
লেখা আশিকা জামান
একদল অস্বস্তিকর বিড়ম্বনায় অনন্যার ইচ্ছে করছে পাতালে চলে যেতে। মনে মনে বিড়বিড় করছে, ” ধরণী দ্বিধা হও,
পাতাল দ্বার উন্মোচিত হও।
এই অভাগীকে একটিবার টেনে লও।”
কি আশ্চর্য! অনন্যাকে সত্যিই টেনে নেয়া হচ্ছে। দু’চোখ বন্ধ করে অনন্যা পাতালে গা ভাসিয়ে দেয়। অনন্যা কি সত্যিই পাতালে চলে গেলো!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
উহু অনন্যার সেই সাধ পূরণ হয়নি। অঙ্কন হল ভর্তি মানুষের সামনে অনন্যার ডান বাহু চেপে ধরে বাহিরে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে গিয়ে তবেই ক্ষ্যান্ত দেয়। অনন্যা চক্ষু খুলে এই অতি সুদর্শন পুরুষটাকে দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। তবে খুব করে ইচ্ছে ছিলো মানুষটকে একবার কাছ থেকে দেখতে। আজকে তাহার রুপে অনন্যাও গুনমুগ্ধ কিন্তু সেই সাধ আর সাধ্য কোনটাই পূর্ণ হয়নি। উনি যেভাবে চোখ তুলে অনন্যার দিকে তাকিয়ে ছিলো তাতে অনন্যার বড়ই অসুবিধে হচ্ছিলো। অস্বস্তিতে শরীর কাটা দিচ্ছিলো। এখন ইচ্ছে করছে কয়েক কথা শুনিয়ে দিতে। কেমন অসভ্যের মত ড্যাবড্যাব করে এখনো তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে দুই চোখ দিয়ে গিলে খাবে৷ তার চেয়ে ভয়াবহ লজ্জার ব্যাপার কথা নাই বার্তা নাই সবার সামনেই দুম করে টেনে এখানে নিয়ে এলো। অনন্যারতো লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। মাথামোটা, বেহায়া, সর্বাপেক্ষা রগচটা। বোনের রিসেপশনে বর কেই ভাগিয়ে দেয়। নুন্যতম সেন্স নেই, কি সাংঘাতিক!
অনন্যা রাগান্বিত দৃষ্টিতে অঙ্কনের দিকে তাকায়।
সেই দৃষ্টি পর্যবেক্ষন করে অঙ্কন উদ্ধত ভঙ্গিতে দুজনের মাঝে যে নুন্যতম দূরত্ব অবশিষ্ট রয়েছে তা ঘুচাতে উঠে পড়ে লাগে।
ঘাবড়ে গিয়ে অনন্যা পেছাতে পেছাতে দেয়ালে গিয়ে ঠেকে। দু’চোখ বন্ধ করে মনে মনে দু’আ ইউনুস পড়ছিলো।
অঙ্কন দেয়ালে দুই হাত ভর দিয়ে অনন্যার বুজা চোখের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো,
” কি ভাবো নিজেকে রাণী এলিজাবেথ! এত ভাব কেন তোমার? তুমি অন্ধ না চোখ বাড়িতে রেখে এসেছো?”
অনন্যা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে, বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে স্বভাববিরুদ্ধ উঁচু গলায় বললো,
” আমার সামনে থেকে সরো বলছি৷ না হলে আমি একটা কথাও বলবো না।”
” আমার যখন ইচ্ছে হবে তখন সরবো। না হলে আমি একচুলও নড়বো না।” অঙ্কন দ্বিগুন উত্তেজিত হয়ে বললো।
” অঙ্কন প্লিজ আমি পিঠে ব্যাথা পাচ্ছি। এভাবে বাকাঁ হয়ে দেয়াল ঘেঁষে দাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। ”
” মোশন অফ ‘ ল তোমার উপর প্রভাব ফেলছে। আমি কষ্ট দিচ্ছি তাই তুমি ব্যাথা পাচ্ছো সিম্পল হিসেব। আর একটা কথা তুমিতো প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে নিজেকে জ্যোতিষী প্রমাণ করার জন্য আজকে আনন্দ দিবস, রাগ দিবস, সুখ দিবস, দুঃখ দিবস, বিরহ দিবস ইত্যাদি ইত্যাদি দিবস প্রেডিক্ট করো। সেই অনুযায়ী পুরো দিনটাই কাটাতে চেষ্টা করো। আজকে আমি প্রেডিক্ট করছি আজকের দিনটা তুমি যাই ভেবে আসোনা কেন তোমার জন্য এটা কান্না দিবিস মোটেও আনন্দ দিবস নয়। কথাটা মিলিয়ে নিও।”
” তুমি কি জানো, তুমি একটা অসহ্যকর রগচটা পাবলিক। সকাল সকাল অহেতুক তানভীরের উপর চড়াও হয়েছিলে এবার আমার উপর খেপেছো। আসলে তোমার রগচটা স্বভাবটা জনসম্মুখে প্রকাশ না করলে ভালোই লাগে না।
আমি তোমার কোন বাড়াভাতে ছাই দিয়েছি সত্যিই জানিনা। উলটো তোমার বোন জামাইকে ধরে বেধে নিয়াসলাম। না নিয়ে এলে তোমার যে কি পরিমাণ বাশ খাওয়া লাগতো সেটা এখন ভুলে গেছো তাইনা!”
” আরে, ধুর অঙ্কন কারো ধার ধারেনা। আর একটা কথা তানভীরের সাথে খারাপ ব্যাবহার করার কারণটা তুমি। আর এখন তোমার উপর যা যা রাগ দেখাচ্ছি তার কারণ ও তুমি। তাই তানভীরকে নিয়ে এসে পূর্বের অন্যায়টা মাফ হলেও এখনকার অন্যায়টাতো মাফ হয়ে যাবেনা।”
কথাটা শুনামাত্র অনন্যা অঙ্কনের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ছুটে পালাতে চাইলে অঙ্কন হাত ধরে ফেলে।
” হাত ছাড়ো বলছি। তোমার রাগের ধার অনন্যা ধারে না, ছাড়ো। আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না, আমি করেছি টা কি?”
” আমি তোমার দিকে অনেকক্ষণ থেকে তাকিয়ে ছিলাম,তুমি বুঝতে পারোনি! আমার দিকে একবার তাকালে কি তোমার চোখ জ্বলে যেতো।
তোমার সাথে কতবার কথা বলতে চাচ্ছিলাম তুমি ভাব দেখিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছিলে। কেন আজকাল খুব ভাব বেড়েছে নাকি!”
” কেন তোমার সাথে দেখা হওয়া মাত্রই কি কোলে চড়ার কথা ছিলো! আশ্চর্য। ” অনন্যার চোখে মুখে বিরক্তি।
” শেট আপ! উল্টাপাল্টা কথা বলবেনা। ”
অনন্যা চুপ করলো। পরক্ষণেই দ্বিগুন জোরে চেচিয়ে বললো,
” তাই বলে তুমি সবার সামনে হিড়হিড় করে টেনে নিয়াসবে। কোন লজ্জা শরম কি আল্লাহ দেয় নি।”
” নাহ্ আমার হবু বউকে আমি যেখানে খুশি সেখানে নিয়ে যেতে পারি। হাত কেন চাইলে কোলেও নিতে পারি তাতে কারো বলার মত কিছু আছে বলেতো মনে হয়না।” অঙ্কন কথাটা বলে চমকে উঠে অনন্যার দিকে তাকায়।
অনন্যার মেরুদণ্ড বেয়ে যেন ঠান্ডা স্রোতের হাওয়া বয়ে গেলো। কিছুক্ষণের জন্য নিজের কানকে নিজে বিশ্বাস করতে পারলোনা। মনে হচ্ছে কথাটা যেন ভুল শুনলো। শিউর হওয়ার জন্য অনন্যা অস্ফুট সুরে বললো,
” কি বললে? ঠিক শুনতে পাইনি।”
” ঠিকই শুনেছো। না মানে, এখানে উপস্থিত সকলেই জানে তুমি আমার হবু স্ত্রী। তাই এই অতি সাধারণ ব্যাপার নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না।” কথা বলতে বলতে অঙ্কন অনন্যার চোখের দিকে তাকিয়ে কি এক অমূল্য জীনিস খুঁজলো তারপর ঠোঁট বাকিয়ে স্মিতহাস্যে বললো,
” অবশ্য সত্যিটা তুমি আর আমি ছাড়াতো কেউ জানে না।”
জ্বলন্ত অগ্নিশিখা যেমন অতিমাত্রায় বাতাসের তাড়নে ধপ করে নিভে যায় তেমনি অনন্যাও নিভে গেলো। কিছু বলার বা শোনার মতো ধৈর্য্য অনন্যার অবশিষ্ট রইলো না।
” তোমরা এখানে আর আমি খুঁজে খুঁজে হয়রান। তাড়াতাড়ি আসো তোমাদের ডাক পড়েছে।” অন্বেষা কথাটা বলেই একটা রহস্যময় হাসি দিলো। অঙ্কন অনন্যার হাত ছেড়ে দিয়ে ভাবলেশহীনভাবে অন্বেষার দিকে তাকায়। অন্বেষা আবার বাঁ চোখে টিপ বসিয়ে ভাইকে কিছু একটা ইশারা করে। অঙ্কন মুচকি হাসির বদলে ভ্রুকুচঁকে বিরক্তি প্রকাশ করে হনহন করে ওদের ফেলে চলে যায়।
অন্বেষা, অনন্যার নিভে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজছিলো। কিন্তু অনন্যা তখনও নিজের ঘোরের মধ্যেই ছিলো, এখান থেকে বের হওয়া বোধ হয় তার পক্ষে আর সম্ভব নয়। কেন এলো সে! না এলেই হয়তো ভালো হতো! কেন অঙ্কন নামের এই দুর্ভেদ্য জীনিসটাকে বুঝতে উঠে পড়ে লেগেছে। এই মানুষটাকে যতই বুঝতে চায় ততই ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। তার খুব কান্না পাচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে সত্যিই আজ কান্না দিবস। অনন্যা দাতে দাত চেপে কান্না আটকালো।
” অনন্যা আপু কি ভাবছো অতো! ধুর এখন কি এত ভাবা ভাবির সময় আছে নাকি।” অন্বেষা অনন্যার হাত ধরে টানতে টানতে সামনের দিকে পা বাড়ায়। অনন্যার মনে হচ্ছে তার নিশ্চল দেহটাকে অন্বেষা টানতে নিয়ে যাচ্ছে।
” আমন্ত্রিত অতিথিরা, আপনারা আরো একটি চমৎকার মুহূর্তের সাক্ষী হতে যাচ্ছেন। আপনারা কোন গেস করতে পারছেন! এনি গেস।”
ইমতিয়াজ উপস্থিত সকলের মনোযোগ আকর্ষণের উদ্দেশ্য বললেন। চারপাশে তখন টানটান উত্তেজনা। কেবল অনন্যাকেই অসাড় নিশ্চল মনে হলো।
উনি উনার দরাজ কন্ঠে আবার বললেন,
” আমার একমাত্র পুত্র অঙ্কন চৌধুরীর, সাথে আহনাফ আহমেদের একমাত্র কন্যা অনন্যা আহমেদের এঙ্গেজমেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনারা উপস্থিত সকলেই নিজেদের দোয়া আশীর্বাদ দিয়ে ওদের নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানাবেন এই কামনাই করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।”
চারপাশে করতালির আওয়াজে অনন্যা ধাতস্থ হয়ে ভীরু চোখে অঙ্কনের দিকে তাকায়। এরকম একটা অপ্রস্তুতকর চমকে অনন্যা ভয়াবহ রকমের বিব্রত।
সাথে সাথে ভয়টাও জাঁকিয়ে বসলো এই বুঝি অঙ্কন এংগেইজমেন্টে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু না অঙ্কন সহজ সরল স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।
চলবে…
সবার কাছে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/