চলো_না_হারিয়ে_যাই [১০]
লেখকঃ জয়ন্ত_কুমার_জয়
বিষণ্ণ বিড়বিড় করে বললো ” মিষ্টি আপু,কোলবালিশ ছাড়া আমার ঘুম আসে না।আজ রাতের জন্য তুমি আমার কোলবালিশ হবে? ”
কথাটা শুনতেই মিষ্টির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।বিষণ্ণ এসব কি বলছে? মিষ্টি হকচকিয়ে উঠে বসলো।যতটা সম্ভব কর্কষ গ’লায় বললো
” কোলবালিশ হবো মানে? কি বলছিস এসব? ”
বিষণ্ণ আমতা আমতা করে বললো ” না মানে কোলবালিশ ছাড়া ভালোলাগে না তো,আচ্ছা লাগবে না তুমি ঘুমাও ”
” খবরদার যদি গায়ে হাত রাখছিস তো খবর আছে বলে দিলাম ”
বিষণ্ণ শুকনো মুখ করে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।মিষ্টি লক্ষ্য করলো ঘন্টাখানেক পার হয়ে যাওয়ার পরেও বিষণ্ণর ঘুম আসছে না।শুধু ইদুরের মতো নড়াচড়া করছে।মিষ্টির একটু করুণা হতে লাগলো বিষণ্নর জন্য।ছেলেটার বোধহয় সত্যিই কোলবালিশ ছাড়া ঘুম আসে না।মিষ্টি হালকা স্বরে ডাকলো
” বিষন্ন,ছটফট করছিস শুধু, ঘুম আসছে না বুঝি? ”
” না আসলে কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে গেছে তো, তাই হয়তো ঘুম আসছে না ”
মিষ্টি লজ্জায় ইতস্তত করে বললো ” আচ্ছা ঠিক আছে।তখন যেটা হতে বললি সেটায় আমি রাজি ”
মিষ্টি কিসে রাজি হওয়ার কথা বলছে বিষণ্ন বুঝতে না পেরে বললো ” কিসে রাজি? বুঝলাম না ”
মিষ্টি প্যাচার মতো মুখ করে বললো ” কিছু না। যা ভাগ,ছোট্ট গাধার বাচ্চা ”
মিষ্টির খুব রাগ লাগছে।লজ্জা কাটিয়ে মুখ ফুটে বলার পরেও বিষণ্ণ বুঝলো না! এতো সর্ট টাইম মেমোটি কেন ওর।গাধা ছেলে একটা।বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পরেও বিষণ্ণর কোনো জবাব না পেয়ে মিষ্টি আবারো বললো
” তুই কি এখনও বাচ্চা নাকি? এতো বড় হয়েও তোর কোলবালিশ লাগে? ”
” ছোট বেলার অভ্যাস,ছাড়তে পারিনা তো ”
বিষণ্ণ বুঝতে পারলো মিষ্টি তার কোলবালিশ হওয়ার শর্তে রাজি,তবুও সে বুঝেও না বোঝার ভান করছে।বিষণ্ন চায় মিষ্টি নিজের মুখেই তাকে জ”রিয়ে ধরার কথা বলুক।কিন্তু এবারেও মিষ্টি কিছু বললো না।বিষণ্ণর ভারী মন খারাপ হতে লাগলো।সাথে ভয় ও হতে লাগলো এই ভেবে যে বেশি পাকনামি করতে গিয়ে মিষ্টিকে জরিয়ে ধরে ঘুমানোর ইচ্ছেটা বুঝি আর সত্যি হলো না।
বিষণ্ণর ভাবনা ঠিক।মিষ্টি নিজ থেকে কিছুই বললো না।বিষণ্ণর ভিষণ আফসোস হতে লাগলো,কেন তখন মিষ্টির কথায় সায় দিলাম না? ইশারা বুঝেও মা বোঝার ভান করলাম কেন?
বিষণ্ণ একপলক মুখ উঁচিয়ে মিষ্টিকে দেখার চেষ্টা করলো।গোল গোল চোখ,ফোলা গা”ল,পাতলা ঠোঁ”ট দেখে বিষণ্ণর শরীরে একটা শিহরন জেগে উঠলো।মনে হতে লাগলো এই একজোড়া পাতলা ঠোঁ”টের স্পর্শ না পেলে জীবন বৃথা,পুরো মহাজগৎ বৃথা।
বিষণ্ণ মনে মনে আইন্সটাইনকে তীব্র গালাগাল দিলো।টাইম ট্রাভেল থিউরিটার বাস্তব রুপ করে দিয়ে গেলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো?তাহলে অন্তত মিষ্টির ইশারাকে কাজে লাগানো যেতো।
কিন্তু মিষ্টিকে কে বোঝাবে?ওর স্পর্শ আমি খুব করে চাইছি।যে চাওয়ার মাধ্যমে মানবসভ্যতা টিকে আছে সেরকম চাওয়া না,যে চাওয়ায় আপন ধ্বংস হয়ে যায়,নিজের বলতে আর কিছুই থাকে না,তোমার কাছে সেই চাওয়াটাই আমার প্রাপ্য।তোমার স্পর্শে যে আমি জ্বলে পুড়ে ভস্ম হতে চাচ্ছি সেটা কি তুমি বুঝতে পারো?দেবে কি সেই আগুনটুকু?লজ্জা ভুলে আর একটিবার কি বলবে ” আচ্ছা ঠিক আছে।তখন যেটা হতে বললি সেটায় আমি রাজি? “।
মিষ্টি ঠো’ট টিপে নিঃশব্দে হাসছে।বিষণ্ণর অবস্থাটা বুঝতে পেরে মিষ্টি বললো
” কোলবালিশ বু’কে জড়িয়ে ধরে ঘুমাস নাকি শুধু বালিশে হাত পা রাখিস,কোনটা? ”
বিষণ্ণর বু’ক ধক করে উঠলো।মিষ্টি কি সত্যিই এটা বললো? শেষমেশ একটা সুযোগ কি সত্যিই পাওয়া গেলো? বিষণ্ণ চোখ বড়বড় করে বললো
” তোমার অসুবিধা না হলে শুধু হাতটা রাখবো ”
” আচ্ছা ”
বিষণ্ণ তার ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা হাত মিষ্টির হাতের ওপর রাখলো।র”ক্তপ্রবাহ বাড়তে লাগলো।শরীরের প্রতিটা কোষ যেন জেগে উঠলো।মিষ্টি বললো
” শুধু হাত রাখবি, মনে থাকবে তো? ”
বিষণ্ণর শরীর এতোই অবস হয়ে আসলো যে কিছুই বলতে পারলো না।বিষন্নর চুপ থাকা দেখে মিষ্টি মুখ ভোতা করে বললো ” আর হ্যা,যদি দেখছি উল্টাপাল্টা যায়গায় হাত রাখছিস তাইলে কিন্তু খু”ন করে ফেলবো,মাথায় থাকে যেন কথাটা ”
কথাটা বলে মিষ্টি চিৎ হয়ে শুতেই বিষণ্ণর হাত স্লাইড করে মিষ্টির পে’টে স্পর্শ করলো।পে”টে হাত পড়তেই বিষণ্ণর শরীরে কারেন্ট বয়ে যেতে লাগলো।মুহুর্তেই চারপাশটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য অন্ধকার হয়ে গেলো।আশ্চর্যের বিষয় হলো মিষ্টি কিছু বলছেও না,চোখ বন্ধ করে আছে।
বিষণ্ণর মাথার চুল দাঁড়িয়ে গেছে।নিজেকে সামলে রাখা যে বড্ড কঠিন হয়ে পড়ছে।জানালা দিয়ে জোছনার আলো এসে পড়ছে মিষ্টি বু’ক এবং পে”টের খানিকটা যায়গায়।ওড়না সরে যাওয়ায় জোছনার আলোয় মিষ্টির বু”কের উঁচু অংশবিশেষ স্পর্শ বোঝা যাচ্ছে।বিষণ্ণ শত চেষ্টা করেও সেখান থেকে চোখ সরাতে পারলো না।বিষণ্ণ বুঝতে পারলো নিজেকে সামলা রাখা আর সম্ভব না।দাবানলে ঝাপ দিয়ে নিজেকে পুড়িয়ে ফেলার সময় হয়ে এসছে।বিষণ্ণর কাঁপতে কাঁপতে তার হাত রাখলো মিষ্টির……..
চলবে?