চলো_না_হারিয়ে_যাই [৯]
লেখকঃ জয়ন্ত_কুমার_জয়
বিষণ্ণ দু’হাত গা”লে রেখে দাঁড়িয়ে আছে।তার সামনেই বিস্মিত এবং হতভম্ব অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বিষণ্ণর বাবা।বিষণ্ণ গা”ল চেপে ধরেই মিনমিন স্বরে বললো
” বাবা তোমায় তো বললাম ওই ছেলেটা একটা মেয়েবাজ,ও…. ”
বিষণ্ণর পুরে কথা শেষ না হতেই বিষণ্ণর বাবা কর্কষ গলায় বললো ” চুপ,দুইটা চ”র খেয়েও শিক্ষা হয়নি? এখনো কথা বলছো কি করে! বিষয়টা জানাজানি হলে তোমার জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে,বুঝতে পারছো সেটা? ”
বিষণ্ণ মুখ ভোঁতা করে বললো ” ও মিষ্টির দিকে হাত বাড়িয়েছে,এর থেকেও ভয়ঙ্কর কিছু করার ইচ্ছে ছিলো ”
বিষণ্নর বাবা চোখ বড়বড় করে বললো ” আমার ছেলে এই বয়সে এতোটা ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে আমি তো ভাবতেই পারছি না ”
বিষণ্নর বাবার পাশেই ম্যানেজার দাঁড়িয়ে, তিনি গর্ব করে বললেন ” ঠিক সময়ে তোমায় গাড়িতে না তুললে এতোক্ষণে উকিল খুঁজতে হতো ”
কথা শেষ হতেই ম্যানেজারের দিলে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো বিষণ্ণর বাবা।রাগী দৃষ্টি দেখে ম্যানেজার চুপসে গেলেন।বিষণ্ণর বাবা গর্জনের স্বরে বললো
” বিষণ্ণ ওই ছেলের বাড়িতে গেলো,সাইকোর মতো ওকে মা”রলো আর আপনি জানেন ই না? কোথায় ছিলেন তখন? ”
ম্যানেজার আমতা আমতা করে বললো ” মাফ করবেন স্যার,আসলে খিদে পেয়েছিলো খুব।খাওয়ার সময়টুকুতেই এতোকিছু হয়ে গেলো! ”
বিষণ্নর বাবা দাঁত কিটিমিটি করলো,পারলে ম্যানেজারের গ”লা চেপে ধরলে ভালো লাগতো।বিষণ্ন মুখ ভোঁতা করে বললো
” বাবা তুমি এতো হাইপার হচ্ছো কেন,আমি তো অন্যায় কিছু করিনি ”
বিষণ্ণর কথায় সায় দিয়ে ম্যানেজার বিষণ্নর বাবাকে বললো ” স্যার যাই বলেন,বিষণ্নর মধ্যে আপনি আপনি একটা ব্যাপার আছে,বাড়িতে গিয়ে একটা ছেলেকে কু”পিয়ে চলে আসলো, ভাবা যায়! ”
এমন সময় বিষণ্ণর বাবার ফোনটা বেজে উঠলো।ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বিষণ্ণর মা বললো
” বিষণ্ণকে ফোন দাও ”
বিষণ্ণর বাবা মুখ ভোতা করে ফোনটা এগিয়ে দিলো।বিষণ্ণ বললো
” হ্যালো মা ”
” হু,ছেলেটা কি করেছে? বাড়িতে গিয়ে এসব করলি,কত বিপদ হতে পারতো? ”
” সরি মা,ও মিষ্টির সাথে যা করছে সেটা জানার পর মাথা ঠিক রাখতে পারিনি ”
” মিষ্টির সাথে কি করছে? ”
” ফোনে বলতে পারবো না,বাড়ি গিয়ে বলছি ”
বিষণ্ণর বাবা সাইড থেকে বললো ” হুহ,উনি বাড়ি যাওয়ার কথা বলতেছে,যা করছো আগামী কত বছর এই পাহাড়ে থাকতে হবে সেটাই দেখো ”
বাবার কথা শুনে বিষণ্ন হকচকিয়ে গেলো।মায়ের কল কে’টে দ্রুত জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।চারদিকে উঁচু উঁচু পাহাড়ের চূড়া! বিষণ্ণ আঁতকে উঠে বাবার কাছে গিয়ে বললো
” বাবা এটা কোথায় এসছি?আমরা পাহাড়ে কেন? ”
” যা করছো তারপর শহরে থাকার কথা ভাবছো কিভাবে ”
” মানে কি? আমি পাহাড়ে লুকিয়ে থাকবো? অসম্ভব, আর তাছাড়া তুমি চাইলেই তো সব সামলে দিতে পারো ”
” সব সামলে দিতে পারি জন্যই এতো বড় কাজ করতে তোমার হাত কাঁপেনি।তোমার একটা শিক্ষা হওয়া দরকার ”
” কিহ! তুমি শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমায় এখানে আঁটকে রাখবা? ”
বিষণ্ণর বাবা হ্যাসূচক মাথা নেড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।বিষণ্ণ মুখ ভোতা করে ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রইলো।
ঘর থেকে বেড়োতেই ম্যানেজার বললো ” স্যার ওসি মেইল করছে ”
” কি বললো? ”
” বলছে কয়েকটা দিন একটু লুকিয়ে থাকতে ”
বিষণ্ণর বাবা চোখ সরু করে বললো ” ওসিকে ফোন করো ”
ম্যানেজার দ্রুত ফোন করলো।ফোন রিসিভ হতেই বিষণ্ণর বাবা বললো ” আমার ছেলে লুকিয়ে থাকবে কেন?আপনি আছেন কি করতে ”
” স্যার একটু বোঝার চেষ্টা করেন,ছেলের বাড়ির সামনের সিসি ফুটেজে বিষন্নকে দেখা গেছে। বিষয়টা সামলাতে একটু সময় লাগবে স্যার ”
বিষণ্ণর বাবা ফোন কা”টলো।চুল অর্ধেকটা পাক ধরা একজন বয়স্ক লোক এসে বিষণ্ণর বাবাকে বললো
” সে কি কোথায় চললে? ”
” বাসায় যাচ্ছি চাচা। বিষণ্ণ হঠাৎ এমন একটা কাজ করে বসলো,ও কিছুদিন এখানে থাকবে ”
” তুমি একদম ভাববে না,আমি ওদের দেখেশুনে রাখবো রাখবো ”
_________
মিষ্টি বারান্দায় দাঁড়াতেই বুঝতে পারলো সে পাহাড়ের মাঝে একটা বাড়িতে।পাশের ঘরে কে যেন অস্ফুটে স্বরে কথা বলছে।মিষ্টির শরীর দূর্বল,নিজেকে সামলে দরজাটায় হাত দিতেই দরজা খুলে গেলো।ঘরে একটা ছেলে মেঝেতে উবু হয়ে বসে আছে।
মিষ্টি ভয়েভয়ে বললো ” কে আপনি? ”
বিষণ্ণ চমকে দরজার দিকে তাকালো।বিষণ্ণকে দেখে মিষ্টি ধাক্কার মতো খেলো।বিস্মিত হয়ে বললো
” বিষণ্ণ তুই! ”
বিষন্ন মিষ্টিকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে মিষ্টির পাশে বসে বললো ” তুমি উঠে এলে কেন,তোমার রেস্ট দরকার ”
মিষ্টির বিষ্ময় যেন কাটছেই না।মিষ্টি বললো
” চারপাশে পাহাড়ের চূড়া দেখছি,আমরা কি পাহাড়ে? ”
” হ্যা।অনেক অবাক হইছো তাই না? আমিও প্রথমে বুঝতে পারিনি,মাত্র জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম ”
” এটা কার বাড়ি?আমি এখানে কেন? ”
” এটা বাবার বাগান বাড়ি। বাবা চা বাগান দেখতে আসলে এখানে থাকেন ”
” আমি এখানে কিভাবে?কিছুই তো বুঝতে পারছি না ”
” তোমায় হসপিটাল থেকে বাবা কি”ডন্যাফ করে নিয়ে এসছে ”
” কিহ? ”
” এখনি এতোকিছু জানতে হবে না।সময় হলে ঠিকি সব জানবে ”
কথাবার্তার এই পর্যায়ে একজন বয়স্ক লোক এসে বললো ” আপামনির ঘুম ভাঙ্গছে! ”
মিষ্টি বেকার মতো বিষণ্ণর দিকে তাকিয়ে রইলো।বিষণ্ণ বললো ” দাদু খাওয়ার কিছু আছে?খুব খিদে পেয়েছে ”
” আছে আছে,তোমরা আসবে শুনে পাহাড়ি মুরগী কিনে আনছি, খেলে আজীবন ভুলতে পারবা না ” বলেই তিনি বাইরে চলে গেলেন।
বিষণ্ণ মিষ্টির চোখে চোখ রেখে বললো ” মিষ্টি একটা কথা বলবে? ”
মিষ্টি ভ্রু কুঁচকে বললো ” আমি তোর সিনিয়র, নাম দরে ডাকছিস কেন? ”
বিষণ্ণ মুখ ভোতা করে বললো ” সরি ”
” হু,কি বলতে চাইলি?”
বিষন্ন সু”ইসাইড করার বিষয়ে বলতে গিয়েও আর বললো না।মিষ্টি এখন মানসিক ভাবে দূর্বল।এসব বললে মানসিক ভাবে আরো ভেঙ্গে পড়বে।
সন্ধায় বারান্দায় মোড়া পেতে বিষণ্ণ মিষ্টি দু’জনই বসে আছে।আকাশে অর্ধেক চাঁদ। চারদিকটা ঘন গাছগাছালিতে ভরা।আকাশে বিশাল পাহাড়ের চূড়াগুলি দেখতে দানবের মতো দেখাচ্ছে।মোটামুটি কুয়াশা পড়েছে।পাহাড়ে ঠান্ডার রেশ দ্রুতই পাওয়া যায়।
দু’জনার গায়েই পাতলা চাদর,হাতে চায়ের কাপ।বিষণ্ণ চায়ে চু’মুক দিতে দিতে বললো
” হাত কা”টার সময় ব্যথা পাও নি? ”
” একটু চিনচিন ব্যথা হচ্ছিলো ”
” তোমার তো সাংঘাতিক সাহস,আমি ম”রে গেলেও তো হাতে চা”কু বসিয়ে দিতে পারবো না,বাপ্রে, এটা আমার দারা অসম্ভব ”
বিষণ্ন এমন ভাবে কথাটা বললো যে মিষ্টির হাসি পেয়ে গেলো।হেসে বললো
” আমার ঘর তো তালা দেয়া ছিলো,ঢুকলি কিভাবে? ”
” দরজা ভেঙ্গে ”
” ওই ভারী দরজা কে ভাঙ্গলো? ”
” কে আবার আমি ভাঙছি ”
” এহহ,তুই আর দরজা! হইছে থাক বিশ্বাস হইছে ”
বিষণ্ণ মুখ ভোতা করে বললো ” তুমি বিশ্বাস করলে না? আন্টিও ছিলো ওখানে ”
” এখন ঠিক করে বল তো এখানে কেন আমরা? ”
বিষণ্ণ এক এক করে সব কথা বললো।কিভাবে দেয়াল বেয়ে জায়ানের ঘরে ঢুকেছে,কিভাবে গ”লায় ছু”ড়ি বসিয়েছে সবটা বললো।মিষ্টি হতভম্ব হয়ে সবটা শুনছে।বিষণ্ণ সবটা বলা শেষ করতেই মিষ্টি চোখ ছানাবড়া করে বললো
” যা যা বললি সেসব কি সত্যি? তুই জায়ানকে খু”ন করছিস? ”
” হু ”
মিষ্টি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো তারপর নীচু স্বরে জিগ্যেস করলো
” তুই জায়ানের কে”টে দিছিস! এটাও সত্যি? ”
বিষণ্ণ ভ্রু কুঁচকে বললো ” কে’টে দিছি মানে? ”
মিষ্টি ইতস্তত করে বললো ” উমম, নাহ কিছু না ”
” জায়ানের কে”টে দিছি মানে? বুঝলাম না, কি বললে আবার বলো ”
মিষ্টি মুখ ভোতা করে বললো ” আরে ছোট গাধা একটু আগেই তো বললি জায়ানের নাকি ওইটা কে’টে দিছিস,সেটাই বললাম,সত্যিই কে”টে দিছিস কিনা ”
বিষণ্ণ লজ্জায় মুখ অন্যদিকে করে বললো ” ইয়ে মানে,রাগ সামলাতে পারিনি “।মিষ্টি একই সাথে প্রচন্ড বিস্ময় এবং হাসি পাচ্ছে।
রাতে শুতে গিয়ে মিষ্টি দ্বিতীয় দফায় হকচকিয়ে গেলো।দেখলো বিষণ্ণ ঘা’ড়ে একটা কোলবালিশ তার হাতে একটা বালিশ নিয়ে দরজার কাছে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মিষ্টি বললো
” কিরে বিষণ্ণ,বালিশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ”
বিষন্ন বালিশ দুইটা মেঝেতে রেখে বললো ” মিষ্টি তোমার পাশে আমায় শু”তে দিবে? ”
মিষ্টি রাগী দৃষ্টিতে তাকালো বিষণ্ণর দিকে।বিষণ্ণ আমতা আমতা করে বললো ” সরি,মিষ্টি আপু আমি তোমার পাশে ঘুমাবো ”
মিষ্টি শক খাওয়ার মতো চমকে বললো ” মা..মানে কি,কি বলছিস তুই মাথা ঠিক আছে তোর? ”
” না ঠিক নেই।প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।ওই বুড়োর নাক ডাকার শব্দে ঘুম আসছে না আমার।তোমার পাশে শুতে দাও না প্লিজ ”
” অসম্ভব,যা বাইরে গিয়ে ঘুমা ”
” বাইরে তো কুয়াশা, ঠান্ডা খুব ”
” তাহলে মেঝেতে শুয়ে পড় ”
” মেঝেতে শুইছিলাম,ইদুর ঘুরঘুর করে ”
মিষ্টি নিজের মাথার চুল টেনে বললো ” তোর সাথে আমি বেড শেয়ার করে থাকবো কেমনে ”
” তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো ঘুমাবো।প্লিজ শুতে দাও না,আমার ঘুম পাচ্ছে খুব ”
মিষ্টি ইতস্ত করে বললো ” ঘুমের মাঝে আমার জামাকাপড় ঠিক থাকে না ”
মিষ্টি ভেবেছিলো এটা বললে বিষণ্ণ তার সাথে থাকার বায়না ভুলে যাবে।কিন্তু সেটা হলো না বিষণ্ণ বললো
” ঘুমালে আমি কিচ্ছু টের পাইনা।তোমার কাপর সরলেও যা না সরলেও তা ”
মিষ্টি মুখ ভোতা করে বললো ” আচ্ছা ঠিক আছে ”
বিষণ্ণর চেখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।সঙ্গে সঙ্গে সে বিছানায় বালিশ রেখে শুয়ে পড়লো।মিষ্টি বেশ কিছুক্ষণ বিষণ্ণর দিকে তাকিয়ে বললো
” এই বিষণ্ণ ”
বিষণ্ণ ঘুমের ঘোরে বললো ” হু ”
” কোলবালিশদটা মাঝে রাখ ”
” ওটা রাখলে শোয়ার যায়গা থাকবে না ”
অগত্যা মিষ্টি শুয়ে পড়লো।বিষণ্ণ বিড়বিড় করে বললো ” মিষ্টি আপু,কোলবালিশ ছাড়া আমার ঘুম আসে না।তোমায় কোলবালিশ বানাই? ”
চলবে?