চলো না হারিয়ে যাই পর্ব-০৭

0
503

চলো_না_হারিয়ে_যাই [৭] 💛
লেখকঃ জয়ন্ত_কুমার_জয়

গলিতে মিষ্টির সাথে কি আদৌও শারীরিক সম্পর্ক করা হয়েছিলো? এতটুকু ভাবতেই বিষণ্ণর শরীর কাঁপুনি দিয়ে একটা শিহরন বয়ে গেলো।

সে রাতের পর থেকে মিষ্টি কেমন যেন অগোছালো হয়ে গেলো।সারাক্ষণ চুপচাপ ঘর অন্ধকার করে বসে থাকে।বিষণ্ণ সবসময় মিষ্টির আশেপাশে থাকার চেষ্টা করে,কিন্তু লাভ হয় না।মিষ্টি তার পাশে কাউকেই সহ্য করতে পারছে না।

_________

ঘর নিকষ অন্ধকার করে মিষ্টি খাটের পাশে বসে আছে।সত্যিটা সবাইকে বলে দেওয়া উচিত?মিষ্টি পারছে না সহ্য করতে পারছে না বলতে।এমন সময় দরজায় খটখট শব্দ হলো।মিহি স্বর ভেসে এলো ” মিষ্টি মা,দরজা খোল।দেখ জায়ান তোর সাথে দেখা করতে এসছে ”

মিষ্টি চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালো।ঠিকমতো হাঁটার শক্তিটাও তার নেই।হেলেদুলে দরজাটা খুললো মিষ্টি।জায়ান মিষ্টির মা’কে বললো ” আন্টি আমি ওর সাথে একটু আলাদাভাবে কথা বলবো ”

” হ্যা বাবা, দেখো তো ও কথা বলে কিনা।আমি রোজ এতো ডাকাডাকি করি,গল্প করার চেষ্টা করি,ও কিচ্ছু বলে না। শুধু কেঁদেই চলেছে ”

অতটুকু বলতে বলতেই মিষ্টির মা হু হু করে কেঁদে ফেললো।জায়ান ঘরে ঢুকলো।জায়ানকে দেখে মিষ্টির প্রচন্ড রাগ,ঘৃণা একই সঙ্গে ভয় হচ্ছে।জায়ান বেশ স্বাভাবিক স্বরে বললো

” কেমন আছো মিষ্টি? ”

মিষ্টি কান্নামিশ্রিত স্বরে রেগেমেগে চেঁচিয়ে জবাব দিলো ” আবার কেন এসছেন?ওকে মা”রতে? বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন না তাহলে কেন এমনটা করলেন? ”

জায়ান কঠিন স্বরে বললো ” মিষ্টি প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো আর কতবার বলবো?অজ্ঞান অবস্থায় তোমায় দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলো না ”

” আপনি আর একটা কথাও বলবেন না।একটা কুকুরের সাথে আপনার কোনো পার্থক্য নেই ”

” তুমি তাহলে বাচ্চাটার এবর্শন করাবে না? সে না করলে,এটা তোমার ব্যাপার।তবে আমি তোমায় বিয়ে করবো না এটা তো ভালো করেই জানো।সমাজে নষ্টা মেয়ে হয়ে বেঁচে থাকতে পারবে তো? ”

জায়ানের কথায় মিষ্টির শরীরে যেন আগুন ধরে গেলো।জায়ানের গা”লে কষিয়ে এক চ”র বসাতেই জায়ান টেবিলের সাথে ধাক্কা খয়েে টেবিলে থাকা কাঁচের একটা গ্লাস মেঝেতে পড়ে ভেঙ্গে গেলো।জায়ানের শার্টের কলার চেপে ধরো মিষ্টি অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে বললো

” তোকে আজ আমি মে”রেই ফেলবো শু”য়ারের বাচ্চা।মেয়েদের শরীর নিয়ে খেলিস! ”

এই পর্যায়ে চেঁচাচেমিতে মিষ্টির মা মিষ্টির ঘরে এসে দেখে মিষ্টি জায়ানের শার্টের কলার চেপে ধরেছে।মিষ্টির মা মিষ্টিকে আটকানোর আগেই জায়ানের নাক বরাবর প্রচন্ড একটা ঘু”ষি আছড়ে পড়লো! মিষ্টির থেকে জায়ানকে ছাড়িয়ে নিয়ে মিষ্টির মা জায়ানকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।মিষ্টি ঘরের মেঝেতে বসে পাগলের মতো চিৎকার করে কান্না করছে।

বসার ঘরে বিষণ্ণ বসে আছে।বিষণ্ণর ঠিক সামনের সোফায় মিষ্টির মা কেঁদে কেঁদে বলছে ” বিষন্ন বাবা,কিছু একটা উপায় বল না!হাসিখুশি মেয়েটা আমার দিনদিন পাগলের মতে হয়ে হচ্ছে! দেশের এতো বড়বড় সাইক্রিয়েটিস্ট দেখালাম,কিছুই তো হচ্ছে না! ”

বিষণ্ণ দুঃখী স্বরে বললো ” মিষ্টির অসুস্থতা আরো বেড়েছে? কালকেও তো ভালো দেখলাম।আমার সাথে দু একটা কথাও বললো ”

” আজ জায়ান এসছিলো।ও জায়ানকে পাগলের মতো মা”রধর করেছে।আমার এতো চঞ্চল মেয়েটার কি হয়ে গেলো বলতে পারিস! ”

এতটুকু বলে মিষ্টির মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।বিষণ্ণ কাছে বসে ওনাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে বললো ” আন্টি তুমি কেঁদো না প্লিজ।এখন আমাদের মনকে শক্ত রাখতে হবে।মিষ্টিকে আমি সুস্থ করে তুলবোই। তুমি দেখো।প্লিজ কেঁদো না ”

” মিষ্টির বাবার দিকে তাকানো যাচ্ছে না।লোকটা দুইদিন ধরে কিচ্ছু খাচ্ছে না।সারাক্ষণ মিষ্টির কথা বলে ঝুরঝুর করে কান্না করে ”

এমন সময় মিষ্টির ঘর থেকে প্রচন্ড হুটোপুটির শব্দ হতে লাগলো।বিষণ্ণ ছুটে গেলো মিষ্টির ঘরের দিকে।দরজার কাছে গিয়ে চেচিয়ে মিষ্টিকে ডাকছে,কিন্তু মিষ্টি কোনো জবাব দিচ্ছে না।শুধু পাগলের মতো চিৎকার করছে আর বারবার বলছে, ” আমি একটা নষ্ট মেয়ে।আমি নষ্ট মেয়ে ”

মিষ্টির অবস্থা ভালো না বুঝে মিষ্টির মা বিষণ্নকে বললো ” বিষণ্ণ দরজা ভাঙ্গতে হবে।মিষ্টি নিশ্চিয়ই খারাপ কিছু করে ফেলবে।তুই দরজা ভাঙ্গার ব্যবস্থা কর ”

দরজা অনেক হেভি মেটালে তৈরি। সহজে ভাঙ্গা সম্ভব না।তবুও বিষণ্ণ দরজায় হাত লাগিয়ে ধাক্কা দিয়ে খোলার চেষ্টা করলো।হঠাৎ মিষ্টি চুপ হয়ে গেলো।একদম পিনপতন নীরবতা দেখে বিষণ্ণর শারা শরীর হিম হতে শুরু করলো।প্রচন্ড গতীতে শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করতে করতে হঠাৎ চোখ পড়লো দরজার নিচ দিয়ে গড়িয়ে আসা র”ক্ত প্রবাহের দিকে!মিষ্টির চিৎকার হঠাৎ থেমে গেলো!মেঝে থেকে র”ক্ত গড়িয়ে বেড় হচ্ছে! তবে কি মিষ্টি!

মিনিট দুয়েক ধাক্কার পর দরজার একটা পাল্লা ভাঙ্গতে সক্ষম হয় বিষণ্ণ।ভাঙ্গা পাল্লাটার মধ্যে দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকতেই মিষ্টিকে দেখে বিষণ্ণর হাত পা অবস হয়ে গেলো!সারা ঘরের মেঝেতে র”ক্তের স্রোত।মিষ্টির নিথর দেহ মেঝে পড়ে আছে…….

চলবে?.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে