# চরিত্রহীন
# পর্ব-২
ওয়াশরুমে থেকে এসেই দেখলাম আমার হাসবেন্ড আর তানিয়া এমন ভাবে বসে আছে,মনে হচ্ছে তাদের মতো নিষ্পাপ আর বিশুদ্ধ মানুষ হয়তো এই পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। অথচ এই দুজন মানুষই কিছুক্ষণ আগে অবৈধ নোংরামিতে মেতে উঠে ছিলো। আমি কি বলবো কিছু বুঝতে পারলাম না। আমার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ওদের কি খারাপ লাগছে না? লজ্জা করছে না? কেনো জানি ওদের দুজনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না আমি। তাই পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
অতীতের দিন গুলো মনে করে খুব হাসি পাচ্ছে আজ। ভার্সিটি জীবনে এই ছেলেটা আমার পেছনে কতো সময় দিয়েছে,আমার সাথে রিলেশন করার জন্য কতো কি করেছে। সেগুলো মনে হতেই বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। আমারও একসময় মনে হয়েছিলো এই মানুষটাই আমার জন্য পারফেক্ট। তাইতো তাঁর সাথে সারাজীবন সুখে দুঃখে বেঁচে থাকবো বলে সিদ্বান্ত নিয়েছিলাম। হাসান আমাকে সবসময় বলতো সে আমাকে ভালোবাসে। আমার রুপকে নয়। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে তাঁর কথাগুলো মিথ্যা ছিলো। যদি তাই না হবে তবে আজ কেনো এমন হলো?
তানিয়া আমার থেকে সবদিক থেকেই সুন্দর। রুপ,যৌবন সবকিছুতেই সে আমাকে পেছনে ফেলে দিবে অনায়াসেই। পৃৃথিবীর সব ছেলেই কি সুন্দরের পুজারি? আমি তো হাসানকে অনেক ভালোবাসতাম। তাহলে কেনো সে আমার থেকে সুন্দরী মেয়ের লোভে পড়ে আমার ভালোবাসাটাকে ভুলে গেলো? হাসানকে আমি আমার ভালোবাসায় মুগ্ধ করতে পারিনি কখনো। যদি পারতাম তাহলে হয়তো আজ এমন একটা দিন দেখতে হতো না আমাকে। সে আমার রুপে মুগ্ধ হয়ে আমার প্রেমে পড়েছিল,আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো। কিন্তু তানিয়ার সৌন্দর্যের কাছে আমার সৌন্দর্যটা তুচ্ছ। তাই হয়তো হাসান আমাকে ছেড়ে তানিয়ার প্রতি মুগ্ধ হয়েছে। কিন্তু তানিয়া এমন করলো কেনো? তানিয়াও কি হাসানের সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছে?
হাসান ছাড়াও তো পৃথিবীতে কতো সুন্দর সুদর্শন ছেলে আছে। তাদেরকে তো সে নিজের করে নিতে পারতো। সে কেনো আমার সংসারটাতে আগুন লাগালো? এসব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। হয়তো পাবও না কোনোদিন।
তানিয়াকে যখন বললাম তুই আমার বোন হয়ে এই কাজটা করতে পারলি? তোর বিবেকে একটুও বাঁধলো না? পৃথিবীতে কি আর ছেলের অভাব ছিলো না? তোর কি শরীরের তাপমাত্রা এতোই বেশি হয়েছিলো যে নিজের বোনের স্বামীর সাথেই এটা করতে হবে। তোকে আমার বোন বলতেও ঘৃণা হচ্ছে। বাবা মা যদি জানতে পারে তখন তারা কি কারো সামনে মুখ দেখাতে পারবে?
আমার কথার প্রতি উত্তরে তানিয়া যে কথাটা বলল সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি ভাবিও নি কোনোদিন এমন কাজ কোনো মানুষ করতে পারে। তানিয়া যখন বলল,
“আপু আমি পরিস্থিতির স্বীকার। তোমার বাসায় আসার কারণেই আজ আমার এই অবস্থা। বিয়ের পর প্রথম যখন তোমরা নতুন বাসা নিলে তখন তুমিই আমাকে আসতে বলেছিলে মনে আছে? যাতে আমি তোমার নতুন বাড়িটা গোছাতে সাহায্য করি। সেবার আমি কয়েকটা দিন তোমার বাড়িতে ছিলাম। তখনই আমার জীবনে নেমে আসে কালবৈশাখী ঝড়। গোপনে তোমার হাসবেন্ড আমার গোসল করার সম্পূর্ণ ভিডিও রেকর্ড করে। আমাকে প্রতিনিয়ত ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। যখন আমি তোমার কথা বললাম আপুকে সব বলবো। তখন তোমার হাসবেন্ড কি বলেছিলো জানো?
“বলেছিলো তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। বড়জোর তুমি তাকে ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে আমার ভিডিও টা মানুষের কাছে চলে যাবে।”
আমি তখন ভয় পেতে শুরু করলাম। আমি বাঁধ্য হয়ে তোমার বাসায় আসা যাওয়া শুরু করলাম। তবে তুমি তোমার হাসবেন্ডকে এসব বলো না। তাহলে সে হয়তো আমার জীবনটাকে নরকে পরিণত করে দিবে। আমার সাথে সে যা করতে চেয়েছিলো তা তো করেছে। আমি তোমাদের থেকে দূরে চলে যাবো। তোমাদের এখানে আর আসবো না।
তানিয়া চলে যায়,আর আমি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। আমি নিজের বোনকেই বেশি দোষ দিয়ে এসেছি। অথচ আমার হাসবেন্ডই খারাপ। সেই আমার বোনকে বাধ্য করেছে এসব করতে। যে মানুষটা অন্য একটা মেয়ের সাথে নিজের শরীরটা বিলিয়ে দিয়েছে সেই মানুষটার সাথে আবার আমাকে সংসার করতে হবে এটা ভাবতেই নিজের প্রতি অনেক ঘৃণা হতে লাগলো। আমি আর হয়তো কখনো হাসানকে মন থেকে ভালোবাসতে পারবো না। আমাকেও তাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমি কোনো খারাপ মানুষের সাথে বাকিটা জীবন কাটাতে চাই না।
আগে ভাবতাম আমরা নিজে যেমন হবো আমাদের জীবনসঙ্গিনীও তেমন হবে। আমি যদি বিয়ের আগে কোনো ছেলের সাথে খারাপ কিছু না করি,পুরোপুরি বিশুদ্ধ থাকি তাহলে আমি নিজের জীবনসাথী হিসেবে একজন বিশুদ্ধ মানুষকে পাবো। বিয়ের পর যদি কোনো ছেলের দিকে না তাকাই, কোনো ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্ক না করি,যদি আমার হাসবেন্ডকেই শুধু ভালোবাসি। তাহলে আমার হাসবেন্ডও আমার মতো শুধু সে আমাকে ভালোবাসবে। কিন্তু আমার ধারণাটা ভুল ছিলো। আজকাল পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ হয়েও অশুদ্ধ মানুষের সাথে জীবন যাপন করতে হয়।
আজ দুইদিন হয়েছে আমি আমার হাসবেন্ড এর সাথে কথা বলিনি। সেও আমার সাথে কথা বলেনি। সে তাঁর ভুলে একটুও অনুতপ্ত নয়,লজ্জিত নয়। সেটা তাঁর চলাফেরা দেখলেই বোঝা যায়। আমি ভেবেছিলাম সে হয়তো নিজের ভুল স্বীকার করে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে। সে তানিয়ার সাথে যে কাজটা করেছে সেটা কখনোই ক্ষমার যোগ্য না। সে তানিয়াকে ব্ল্যাকমেইল করে তাঁর সতীত্ব কেড়ে নিয়েছে। একমাত্র মৃত্যুই তাঁর উপযুক্ত শাস্তি। তবুও যদি সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমার সাথে কথা বলতো নিজের মনকে একটু সান্ত্বনা দিতে পারতাম।
এই কাজটাই যদি আমি করতাম। কোনো ছেলের সাথে পরোকিয়া তো দূরের থাক একটু যদি অন্তরঙ্গ ভাবে কথা বলতাম তাহলে হয়তো আমার হাসবেন্ড আমার গায়ে হাত তুলতো। আমাকে অনেক কথা শোনাতো। কারণ আমি মেয়ে। আমি এমন অনেক দেখেছি বউ অন্য কোনো ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করার কারণে তাকে মারতে মারতে আধমরা করে ফেলেছে স্বামী। তাঁরপর নষ্ট মেয়ে বলে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এমন অনেক পুরুষ আছে যারা বউ থাকতেও অন্য মেয়ের সাথে ফষ্টি নষ্টি করে। এতো কিছু করার পরেও শুধুমাত্র দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য অনেক মেয়েই স্বামীকে ছেড়ে যেতে পারে না। সবাই জানলেও তেমন কিছু হয় না। কারণ সে একজন পুরুষ।
একবার ভাবলাম তানিয়ার কথাগুলো আমি আমার স্বামীকে বলি। কেনো সে এমন করলো তাঁর সাথে? আমি কি তাকে সময় দেই না? আমি তো তাকে কখনো না করিনি। যখন সে চাইতো তখনই তাঁর শারীরিক চাহিদাটা পূরণ করতাম আমি। মন ভালো থাকুক আর না থাকুক,শরীর খারাপ থাকলেও আমি তাঁর সুখের কথা চিন্তা করে তাঁর সাথে সব করতাম। অধচ সে কখনো এসব করার আগে একবারও জিগ্যেস করতো না তোমার শরীর ভালো তো? মন ভালো তো? সে শুধু তাঁর দিকটাকেই বড় করে দেখেছে। হয়তো সব পুরুষই এমন। নারীকে ভোগপণ্য ছাড়া কিছু ভাবে না তারা। খুঁজলে এমন পুরুষ খুব কমই পাওয়া যাবে যারা মাঝে রাতে স্ত্রীর নরম শরীরের ওপর হিংস্র জানোয়ার এর মতো ঝাপিয়ে না পড়ে পরম আদরে বুকে জড়িয়ে ঘুমাবে।
হঠাৎ করেই আমার স্বামীর ফোনটা বিছানায় দেখে আমার তানিয়ার কথাটা মনে হলো। তানিয়ার ভিডিও টা কি তাহলে হাসানের ফোনেই আছে? হাসান কিছুক্ষণ আগে গোসলে গিয়েছে,বের হতে একটু দেরি হবে। এই সুযোগে ফোনটা হাতে নিতেই দেখলাম আমার খুব পরিচিত একটা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।
“তুমি কিন্তু বললে না আপু কি আমার কথাগুলো বিশ্বাস করেছে কিনা। আমি তোমাকে বিপদে ফেলে চলে আসার জন্য সরি। তবে আপু কেমন মানুষ আমি জানি। সে আমাদের কথাটা কাউকে বলবে না। সে মানসম্মান নিয়ে অনেক ভয় পায়। লজ্জায় সে কাউকে কিছু বলতে পারবে না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। তাই তুমি আপুকে মেনেজ করে নিও।”
নাম্বারটা আমার বোন তানিয়ার সেটা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
চলবে……….
লেখাঃ আমিনুর রহমান