# চরিত্রহীন
# পর্ব-৩ (শেষ পর্ব)
আপন মানুষগুলো যে এভাবে এতো যত্ন করে ধোঁকা দিবে কখনো কল্পনাও করিনি। কিন্তু এটাই হয়েছে আমার সাথে। আমার সবচাইতে বিশ্বাসী মানুষটাও আমাকে ঠকিয়েছে,ঠকিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত অথচ আমি বোকার মতো সব দেখে যাচ্ছি,কিছুই করতে পারছি না। আমার কেনো জানি এই বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে হলো না। যাকে ভালোবেসে বিশ্বাস করে এতোদিন এই বাড়িটাকে নিজের বাড়ি মনে করে থেকেছি সেই মানুষটাই যখন আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে তখন এখানে থাকার কোনো প্রয়োজন মনে করলাম না। মানুষ বলে মেয়েদের স্বামীর বাড়িই আসল বাড়ি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় বাপের বাড়িই আসল। প্রতিটি বাবা মাকে নিজের মেয়ের চোখের জল মুছে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত প্রস্তুত থাকা উচিত। কারণ যেকোনো সময় মেয়েকে স্বামীর বাড়ি থেকে চিরদিনের জন্য বাপের বাড়ি চলে আসতে হতে পারে,এটাই বাস্তবতা। আমি বাবা মায়ের কাছে চলে গেলাম। যে আমার সহজ সরলতার সুযোগ নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাকে না বলেই আমি আমার বাপের বাড়ি চলে যাই।
মা আমাকে একা দেখে যখন জানতে চেয়েছিলো,
“আমি একা এসেছি কেনো? আমার স্বামীকে নিয়ে আসিনি কেনো? আমাদের মাঝে কোনো ঝগড়া হয়েছে নাকি।”
তখন আমি বোবার মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম, আমার বোন তানিয়া আমার দিকে তখনও নিরীহ চোখে তাকিয়ে ছিলো। তাঁর চোখ দেখে তাকে নিরীহ মনে হলেও তাঁর ভিতরটা খুবই হিংস্র সেটা খুব ভালো করেই জানি আমি। আমার জন্য তাঁর মনে কি একটুও মায়া নেই,আমার জন্য কি তাঁর দুঃখ হয় না? সে তো আমার পর না,সৎ বোন না,নিজের মায়ের পেটের বোনের জন্য তো মানুষের মনে অলৌকিক ভাবে মায়া মমতা ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। তাহলে তাঁর মনে হয় না কেনো? এসব আমার জানা নেই। কিন্তু খুব করে এসব জানতে ইচ্ছে করে। তানিয়া কেনো আমার সাথে এমন করলো কিন্তু আমি জানতে পারি না।
আজ সাতদিন হয়েছে আমি চলে এসেছি। এই সাতদিনে আমার স্বামী আমাকে একটি বারের জন্যও ফোন দেয়নি,খোঁজ নেয়নি। অথচ আমি তানিয়াকে দেখতাম কার সাথে যেনো কথা বলে সে,আমি আমার স্বামীকে ছাড়া কাউকে ভাবতে পারতাম না। কারণ আমি জানি হাসানই তানিয়ার সাথে কথা বলে। আমি এখন তাঁর কাছে পুরাতন হয়ে গিয়েছি। সে নতুন কিছু চায়। আমি বুঝতে পারছি না দুইদিন পর আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে। খুব ইচ্ছে করছে বাবা মাকে সব খুলে বলি। কিন্তু তাতে লাভ কি? বাবা মা অনেক কষ্ট পাবেন। অথচ যারা কষ্ট পাওয়ার তারা ঠিকই সুখে থাকবে।
বাবা আর মা মামার বাড়ির যাবে কিছুদিনের জন্য। তানিয়াকে এতো করে বলার পরেও সে যেতে রাজি হলো না,আমিও সেখানে গেলাম না। কারণ আমি জানি বাবা মায়ের সাথে যদি আমি মামার বাড়ি চলে যাই তাহলে হাসান এখানে চলে আসবে। যদিও আমার মনে হয় তানিয়া হাসানকে হয়তো জানিয়ে দিয়েছে বাসায় কেউ নেই,সবাই মামার বাড়িতে গিয়েছে,তুমি চলে আসো। আর হাসানও চলে আসবে। আফসোস সে তাঁর স্ত্রীর জন্য আসবে না,নোংরা প্রেমিকার জন্য আসবে। আমি তাদের এই অবৈধ নোংরা প্রেমলীলাটা দেখতে পারছি না,সহ্য হচ্ছে না আমার। মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আমার মনে হয় তাদের দুজনকে যদি খুন করতে পারতাম তাহলে আমার ভিতরটা একটু হলেও শান্ত হতো।
পরের দিন সকালে দেখি আমার স্বামী চলে এসেছে। আমি দরজা খুলে দিলেও সে আমার সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে চাইলো না,কেনো না বলে চলে এসেছি এটাও জানতে চাইলো না,জানতে চাইলো শুধু তানিয়া কোথায়। আমি বললাম সে বাবা মায়ের সাথে গিয়েছে। কিন্তু সে আমার কথা বিশ্বাস করলো না।
” তানিয়া আমাকে ফোন করে বলেছে সে মামার বাড়ি যাবে না,বরং তুমি যাবে তাই সে আমাকে আসতে বলেছে আর এখন তুমি বলছে তানিয়া বাসায় নেই। আমি তানিয়াকে এখনি ফোন দিচ্ছি দাঁড়াও।”
এই বলে আমার স্বামী আমার বোনকে ফোন দিতে থাকে কিন্তু তাঁর নাম্বার বন্ধ দেখায়।
আমি তাকে বললাম,তানিয়া নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে। সে আমার কাছে অনেক কান্না করেছে। আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি,তোমাকেও ক্ষমা করে দিয়েছি। চলো না আগের মতো হয়ে যাই আমরা।
কথাগুলো শুনে হাসান কিছু বলল না,আমি তাকে ভিতরে নিয়ে খাবার খেতে বললাম।
“আজ আমি অনেক যত্ন করে তোমার খুব পছন্দের একটা জিনিস রান্না করেছি,যেটা তুমি সবচাইতে বেশি পছন্দ করো,খেয়ে দেখো তোমার অনেক ভালো লাগবে।”
আমার সামনে আমার স্বামী খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে। বুঝতে পারছি রান্নাটা তাঁর কাছে খুব ভালো হয়েছে।
অনেক সুন্দর হয়েছে রান্নাটা। কিন্তু লবণ একটু বেশি হয়েছে।
– মানুষের মাংসতো তাই একটু লবণ বেশি লাগছে।
– কি বললে। মানুষের মাংস মানে।
– কিছু না,বললাম লবণ একটু বেশি দিয়ে ফেলেছি। তুমি খাও।
খাওয়ার পর আমি স্বামী যখন আমাকে স্পর্শ করার জন্য ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো তখন আমি বিছানা থেকে উঠে গেলাম। সে অনেক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।
কি খুব অবাক হচ্ছো? তুমি কি করে ভাবলে এতো কিছু করার পরেও আমি আবার তোমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাবো। আমার চোখে তুমি পৃৃথিবীর সবচেয়ে অপবিত্র মানুষ,জঘন্য পুরুষ।
– এতো যত্ন করলে যে?
– তুমি কিসের মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছো জানো?
– কিসের?
– মানুষের। তুমি যার সাথে নোংরামিতে মেতে উঠেছিলে তাঁর মাংস রান্না করে তোমাকে খাইয়েছি। হ্যাঁ আমার বোন তানিয়াকে আমি নিজ হাতে জবাই করেছি। তাঁর পর সেই কাচা মাংস রান্না করে তোমাকে খাইয়েছি। তোমার সবচাইতে পছন্দের জিনিসটা তুমি খুব মজা করে খেয়েছো। আমার কথা শুনে হাসান বমি করে ফেলল আমার সামনেই।
– এতোটা জঘন্য মানুষ কিভাবে হতে পারে? নিজের বোনকে নিজ হাতে জবাই করতে পারলে? তোমার হাত একটুও কাপলো না।
– না,কাপেনি। নিজের স্বামীকে খুন করতেও আমার হাত একটুও কাপার কথা না।
কথাগুলো বলেই বিছানার নিচ থেকে রাম দা টা নিয়ে আমার স্বামীকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করি। মৃত্যুর আগে সে আমার কাছে অনেক ক্ষমা চেয়েছিলো নিজের প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিলো কিন্তু আমার ভিতরে তাঁর জন্য এতোটা ঘৃণা জমে গিয়েছিলো যে তাকে আমি ক্ষমা করতে পারিনি। তাকে শুধু বলেছিলাম,
” তোমরা দুজন মৃত্যুর পরেও এই পৃথিবীতে খারাপ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকবে।”
আমিই বোধয় প্রথম মানুষ যে তাঁর বোনকে নিজ হাতে জবাই করেছে,নিজেে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
বাবা আর মা যখন বাসায় আসলো তখন আমি দৌড়ে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তাদেরকে জড়িয়ে ধরলাম আর সব কিছু খুলে বললাম। হাসান আর তানিয়ার কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ছিলো আমার কাছে। সেগুলো দেখে আর বাবা মা বিশ্বাস না করে থাকতে পারলেন না।
হাসান আর তানিয়া পালিয়ে গিয়েছে। আর কোনোদিন তারা আমাদের কাছে আসবে না। এই কথাগুলো বাবা মা যখন শুনলো তখন তারা আমাকে জড়িয়ে ধরে,ভালোবেসে সান্ত্বনা দিলো। আমার মনে হলো এরকম বাবা মা থাকতে আমার স্বামী আর বোনের কোনো দরকারই নেই। আমি আমার বাবা মাকে নিয়েই বাকিটা জীবন পাড়ি দিতে পারবো। আমি আমার বাকি জীবনটা কোনো চরিত্রহীন মানুষের সাথে কাটাতে চাই না। সবসময় বিশুদ্ধ থাকতে চাই আমি।
সমাপ্ত।
লেখাঃ আমিনুর রহমান