#চন্দ্রাবতী আসছে
১ম পর্ব
লেখিকা – শারমিন আঁচল নিপা
আমার বাসার কাজের মেয়েটার বয়স ১৩।মেয়েটার নাম সুখী।ঐদিন সুখীর খুব পেট ব্যাথা হওয়ায় আমি তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।ডাক্তার সুখীর চেকআপ করে বলল সুখী মা হতে চলেছে।কথাটা শোনে যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।কারন এটা কিভাবে সম্ভব সুখী অবিবাহিত আর আমার বাসায় আমি আর অরন্য ছাড়া আর কেউ নেই।তাহলে সুখীর এ অবস্থা কেন হবে?
অরন্য সুখীকে একদম মেয়ের মত মা মা বলে ভালবাসে। বিয়ের অনেকদিন পরও আমাদের কোন সন্তান হয় নি।তাই আমরা দুজনেই সুখীকে নিজের মেয়ের মত ভালোবাসি।সুখীকে আমরা কাজের জন্য আনি নি।আমি সারাদিন বাসায় একা থাকি তাই অরন্য সুখীকে নিয়ে আসছে যাতে করে আমার যেন একা না লাগে।কিন্তু সুখীর এ হাল কে করল?আমি এ পিঠ ও পিঠ ভেবেও যেন কিছু পাচ্ছিলাম না।তাই কিছুটা বিস্মিত হয়েই ডাক্তারকে বললাম।আপনি হয়ত কোথাও ভুল করছেন।এত ছোট বাচ্চা প্র্যাগন্যান্ট হবে কি করে?আর ওর তো এখনও বিয়েই হয় নি।
ডাক্তার আমাকে জোর দিয়েই বলল যে সুখী প্র্যাগন্যান্ট এন্ড ২ মাস রানিং।আমি ডাক্তারের কথা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।কিন্তু সব রিপোর্ট সাক্ষী দিচ্ছে যে সুখী মা হতে চলেছে।তাই বিশ্বাস না করেও পারছিলাম না।তাহলে কি অরন্য সুখীর সাথে এমন করেছে?নাহ আমি এ কি ভাবছি।দীর্ঘ সাতটা বছর প্রেম করে অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে আমি অরন্যকে পেয়েছি।আমাদের বাচ্চা হয় না ঠিক আছে কিন্তু অরন্য এসব নিয়ে আমাকে কখনও আঘাত করে কথা বলে নি।বরং কেউ কিছু বললে আমাকে শান্ত্বনা দিয়েছে।তাহলে সুখীর সাথে কে এমন করল?
এসব ভেবে ভেবেই যেন আমার মাথা ঘুরাচ্ছিল।আমি কিছু না পেয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে আসলাম।বাসায় এসে সুখীকে জিজ্ঞেস করলাম
-মা তোমার সাথে কেউ কি কোন নোংরা কাজ করেছে?তুমি কি বলতে পারবে মা তোমাকে কোন ছেলে ধরেছে কখনও?
সুখী কথা গুলো শোনে যেন আমার কথার মানেই বুঝতে পারছিল না।সে হয়ত বুঝতেই পারছে না আমি কি বলছি।কিছুট না বুঝেই আমাকে উত্তর দিল
-কি হবে মামনি। আমার তো কিছুই হয় নি।আর কিসের নোংরা কাজের কথা বলছ বুঝতে পারছি না
আমি কিছুটা বিস্মিত হয়েই সুখীকে বুঝাতে চাইলাম কেউ তার সাথে কোন খারাপ করেছে কিনা।সুখী এ কথা গুলো শোনে এবার বুঝতে পেরেছে যে আমি সুখীকে কি বুঝাতে চেয়েছি।এবার খেয়াল করলাম সুখী বেশ ভয়ে লাল হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে কিছু একটা সুখী লুকাচ্ছে।আর আমাকে বলতে চাচ্ছে না।আমি বারবার ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম সত্যি করে বল কেউ কি এমন করেছে।বারবার একি কথা জিজ্ঞেস করায় খেয়াল করলমা সুখী ভয়ে কাতর হয়ে যাচ্ছে।আর না সূচক মাথা নাড়াচ্ছে।
আমার বুঝতে বাকি রইল না সুখী আমার কাছে কিছু একটা লুকাচ্ছে।কিন্তু সেটা কি?তাহলে কি অরন্য সুখীর এ হাল করেছে? নাহ আমি এসব কি ভাবছি?আমার অরন্য এমন কখনও হতে পারে না।ও সুখীকে নিজের মেয়ের মত ভালোবাসে।আমি এসব কি ভাবছি।তাহলে সুখীর এ অবস্থা কে করল?কথাগুলো যতই ভাবছি ততই যেন মাথা ঝিম ধরে যাচ্ছে।সারাটাদিন আমার এভাবেই কাটল।কোন কাজ করতে আর মন চাইল না।
সন্ধ্যায় অরন্য এসে খেয়াল করল আমি বিমর্ষ অবস্থায় বসে আছি।অরন্য আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল
-কি ব্যাপার তোমার কি কিছু হয়েছে? এভাবে যে বসে আছ মনমরা হয়ে।
আমি নিজেকে একটু সামলিয়ে ভাবতে লাগলাম অরন্যকে কি ঘটনাটা বলব নাকি বলব না।মনে মনে ভাবলাম এখনেই বলব না।অরন্য জড়িত থাকলে তাহলে হাতে নাতে ধরতে পারব না।তাই অরন্যকে উত্তর দিলাম
-নাহ এমনি বসে আছি।মনটা ভালো লাগছে না।সুখীর পেট ব্যাথা ছিল তাই ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম।
সুখীর পেট ব্যাথার কথা শোনে অরন্য যেন বেশ অস্থির হয়ে উঠল।অস্থির হয়ে বলতে লাগল
-কি বলল ডাক্তার?সুখী এখন কোথায় আছে?
অরন্যের এ অস্থিরতা টা দেখে আমার কাছে কেমন জানি মনে হতে লাগল।আমি কিছুটা চমকালাম ওর এ অস্থিরতা দেখে।কিছুটা চমকে নিশ্চুপ কন্ঠে ওকে বললাম
-এত অস্থির হওয়ার মত তো কিছু হয় নি তাহলে এত অস্থির হচ্ছ কেন?
অরন্য হয়ত ভাবে নি আমি এমন একটা জবাব দিব।তাই আমার জবাব শোনে অরন্য বেশ চুপসে গেল।চুপসে গিয়ে মুখটা বেশ ফ্যাকাশে করে বলল
-অধরা তুমি তো জানই আমি সুখীকে মেয়ের মত ভালোবাসি।তাই এ অস্থিরতাটা কাজ করছে।কিন্তু তুমি এমন জবাব দিলে কেন হুট করে।তুমিও তো সুখীকে মেয়ের মত ভালোবাস।
(ওহ তোমাদের তো আমার পরিচয় দেওয়ায় হল না আমি অধরা।তেমন কিছুই করি না।একজন গৃহিনী।এই যে অরন্য ওনি আমার স্বামী।সাত বছর প্রেমের প্রণয় ঘটে আমাদের ভালোবাসা পূর্নতা পায় ৮ বছর আগে।এর মধ্যে আমাদের কোল আলো করে কেউ আসে নি।তাই সারাক্ষণ একা নিশ্চুপ থাকতাম তাই অরন্য সুখীকে এনে দিয়েছিল যাতে আমার কষ্ট না হয়।অরন্য সুখীকে কোথায় থেকে এনে দিয়েছে তা আমি জানি না।তবে অরন্য বলেছিল সুখী নাকি রাস্তায় খুব অসহায় অবস্থায় পড়ে ছিল তাই নিয়ে আসছে।আমারও সুখীকে দেখে বেশ মায়া লাগল।আর ওকে নিজের কাছেই রেখে দিলাম।
অরন্য আর আমি দুজনেই সুখীকে নিজের মেয়ের মত আদর করি।কিন্তু হুট করে ডাক্তার এমন বলায় বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠল কারন এ বাড়িতে আমি আর অরন্য ছাড়া আর কেউ থাকে না।একজন এসে বাজার করে দিয়ে যায় কিন্তু সে কখনও বাড়িতে প্রবেশ করে নি।তাই সন্দেহের তীরটা অরন্যের কাছে গেলেও কেন জানি না মানতে পারছিলাম না।অরন্যের প্রতি তীব্র ভালোবাসা আর বিশ্বাসের কারনে হয়ত এমন হচ্ছে।)
আমি অরন্যের কথার আর জবাবটা একটু এড়িয়ে গেলাম।অরন্যকে বললাম
-ঐরকম কিছু না। আমার ভালো লাগছে না তাই এমন বলতেছি।ফ্রিজে খাবার আছে গরম করে খেয়ে নাও।
অরন্য আমার পাশে বসে বলল
-তুমি খাবে না?
আমি জবাব দিলাম
-আমার মন চাচ্ছে না।
অরন্য এবার জবাব দিল
-তাহলে আমি আর সুখী খেয়ে ফেলি।
অরন্যের মুখে সুখীর কথাটা শোনলেই যেন আমার গা জ্বলা শুরু করল।তবুও নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে বললাম
-আচ্ছা খাও।(এ বলে রুমে চলে গেলাম।)
একটু পর রুমে কেন জানি না মন টিকছে না।তাই একটু ডাইনিং রুমে ওকি দিলাম।ওকি দিয়ে খেয়াল করলাম অরন্য সুখীকে খাওয়ায়ে দিচ্ছে।যদিও এ কাজটা অরন্য এর আগেও করেছে।কিন্তু কেন জানি না আজকে মানতে পারছি না।তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিলাম।হয়ত আমার ধারনা ভুল ও হতে পারে ।
রাতে অরন্য আর আমি শুয়ে পরলাম।হঠাৎ মাঝ রাতে আমার ঘুম ভাঙ্গল আমি ঘুম থেকে উঠে খেয়াল করলাম অরন্য আমার পাশে নেই।আমি বিস্মিত হয়ে উঠে ওয়াশ রুম চেক করলাম।খেয়াল করলাম ওয়াশ রুমেও অরন্য নেই।আমি এবার সুখীর রুমের দিকে এগুলাম।আর খেয়াল করলাম