চন্দ্র’মল্লিকা পর্ব-৬+৭

0
449

চন্দ্র’মল্লিকা ৬
লেখা : Azyah_সূচনা

অতীত,

আসমান হতে বাদল বিন্দু ঝরুক। রৌদ্রের উত্তাপ হোক , সাথে সস্তির প্রতিচ্ছায়াও। অনুভূতি গুঞ্জন তুলুক এই দামাল বাতাবরণে। আঁচলে লুকিয়ে রাখা চন্দ্রের চাঁদনী ছড়িয়ে পড়ুক মাহরুরের রুহের অভ্যন্তরে। সর্বত্র গ্রাস করে নেওয়া মাহরুরও অনুভব করুক এই দহন।বুঝুক কি করে অনুরক্ত করছে নরম হৃদপিণ্ডকে নিজের দিকে।

কবুল বলে বিয়ে সম্পন্ন হয়। শশী এখন এক বিবাহিত রমণী। একটু হাসি, একটু কান্নার মাঝেই জমে উঠেছে পরিবেশ। মল্লিকার নজর তার মাহরুর ভাইয়ের উপর।শওকত ভাইয়ের সাথে হাত নাচিয়ে কোনো বিষয়ে ঘোর আলোচনায় মগ্ন।শান্ত মল্লিকার মনটা আকস্মিক ভীত হয়ে উঠে। মাহরুরের শুভ্রতায় জমে যাওয়া মস্তিষ্ক জ্বলে উঠেছে। ঢাক ঢোল পিটিয়ে স্মরণ করালো।কি বলেছিলো মাহরুরকে?যান্ত্রিক ফোনের মাধ্যমে কি রকম বাক্য প্রেরণ করেছিলো?এত সহজেই ভুলে গেলে হয়? বেহায়া নির্লজ্জ মেয়ের মতন একজন পুরুষকে ‘ ভালোবাসি ‘ বলার দুঃসাহস করে ফেলেছে।এখন নেই কোনো পথ পালাবার।চক্ষু আড়াল করতে চাইছে না আবার চোখে চোখ রাখার সাহসটা মাত্রই হারালো।চোখে চোখ পড়ে যায় হুট করে। তড়িৎ গতিতে ঘুরে যায় চন্দ্র।তার এমন কাণ্ড মাহরুরের চোখ এড়ায়নি।আসার পর থেকেই মেয়েটা অদ্ভুত ব্যাবহার করছে।দূরে দূরে থাকছে।লোকলজ্জায়?নাকি নিজস্ব লজ্জায়!

“আমাকে ভুলে যাবি নাতো সখী?”

বিদায় বেলায় শোক।হৃদয়ে পাথর চেপে কেউ বিদায় দিচ্ছে তার মেয়েকে,বোনকে আর কেউ তার খেলার সাথী,তার সখীকে।মল্লিকার প্রশ্নে হাউমাউ করে কেদে উঠল শশী।কাজল লেপ্টে নাজেহাল অবস্থা।ভাবতেই অবাক লাগছে কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে পুকুর পাড়ে আড্ডা দেওয়া হবে না।আচার খেতে খেতে এদিক ওদিক চড়িয়ে বেড়ানো হবে না।বদলে যাবে সমস্ত রূপ রং।থাকবে একাকিত্ব।

“ভালো থাকিস মল্লিকা।আমি কোনোদিন ভুলবো না তোকে।প্রশ্নই আসেনা।”

“তুইও ভালো থাকিস।নিজের যত্ন নিস”

“মল্লিকা সাহসী হ।নিজের জন্য বাঁচতে শিখ।একদিন তোর সকল ইচ্ছে পূরণ হবে।”

আকা বাকা মেঠো পথে পদচারণ মল্লিকার। শশীর বিদায় হয়েছে ঘন্টাখানেক আগে।বাড়ির চাবি হেফাজতে রেখেছে মাহরুরদের বাড়িতে।যদি বিয়ের মধ্যে হারিয়ে যায়। নিরাপদ না একদমই।ফরিদা বেগম সেই উদ্দেশ্যেই মল্লিকাকে পাঠান ও বাড়ি। মল্লিকাদের বাড়ি থেকে দুই মিনিটের দূরত্ব মাহরুরদের বাড়ি।

“চন্দ্র দাড়া”

যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত পোহায়। প্রবাদ বাক্যটি যথাযথ।চাচ্ছিলো না মাহরুরের মুখোমুখি হতে।ঘুরে ফিরে তাই হচ্ছে বারেবারে।

মাহরুর এগিয়ে এসে জানতে চাইলো, “আমাদের বাড়ি যাচ্ছিস?”

“হ্যা আম্মা বাড়ির চাবি রাখতে দিয়েছিল চাচীকে।সেটাই নিতে যাচ্ছি।”

মাহরুরের হাতে থাকা মিষ্টির বাক্স মল্লিকার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“এই মিষ্টিটা নিয়ে যা।মাকে গিয়ে বলবি বিয়ের মিষ্টি শশীর বাবা দিয়েছে।”

মল্লিকা মাথা দোলায়। হ্যা ,না , আচ্ছা কোনো উত্তর দিলো না মুখ দিয়ে।তার পরিবর্তন দৃষ্টি গোচর হচ্ছে।চোখে চোখ রাখছে মা।আগেতো ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকতো।

“তোর মধ্যে আমি পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি চন্দ্র।”

“ভয় হয়”

“আবার ভয়!কেনো ভয় হয় চন্দ্র? আগেতো এমন ছিলো না।”

ছোট্ট করে জবাব দেয়, “হুম”

বুকে হাত বাঁধলো মাহরুর। দৃষ্টিতে তীক্ষ্মতা এনেছে।নত চক্ষুর অন্তরালে লুকিয়ে রাখা লাজ স্পষ্ট বুঝতে পারছে মাহরুর।তবে এখনও বুঝলো না তার অনুভূতিগুলো। কেরোসিন ঢেলে বললো,

“সেদিন ফোনে কি বলেছিলি আমাকে? হ্যা?”

“বাবা বিয়ে দিতে চাইছে”

“আর?”

“আর কিছুনা মাহরুর ভাই”

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে মাহরুর।রাশভারী কণ্ঠে বলে উঠে, “অনেক সাহস না?”

কাদো কাদো গলায় মল্লিকা উত্তর দেয়, “আমাকে ক্ষমা করে দাও মাহরুর ভাই।আমি ওই কথাটা আর কক্ষনো বলবো না”

আধারে মুচকি হাসে মাহরুর।লুকিয়ে ছাপিয়ে। সম্পূর্ণ শব্দহীনভাবে।আচ যেনো না পায় চন্দ্র।এরকম গম্ভীর গলায় কথা বলে সামান্য ভয় দেখালো তাকে।

___

“আম্মা কিছু কথা ছিলো?”

লিজা মুখ মুখ তুলে চাইলেন। চাল ডাল রৌদ্রে শুকাতে দিয়েছেন। ঝুম বৃষ্টি নাজেহাল অবস্থা করে রেখেছে ঘরের সবকিছু।এমনেতেই অভাবের সংসার।ছেলের চাকরিতে একটা ছোট আশার প্রদীপ জ্বলেছে।

“বল বাজান”

মায়ের পাশে মোড়া পেতে বসলো মাহরুর।খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চলেছে।কিভাবে শুরু করবে? শব্দে গড়মিল।ভাবুক ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে লিজা বেগম বললেন,

“কি হইছে বাজান?কোনো সমস্যা?ঢাকায় ঠিকঠাক মতন আছিসতো?”

“হ্যা আম্মা।ঢাকায় সব ঠিক আছে।চাকরিও ভালোই চলছে।”

“তাইলে?কি বলতে চাস? বল?”

নিজেকে যথাযথ প্রস্তুত করে মাহরুর বললো, “আম্মা আমি চাচ্ছিলাম তুমি রমজান চাচার কাছে যাও। চন্দ্রর জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।”

মুখটা ভার হয়ে আসলো লিজা বেগমের।হাত সরিয়ে গম্ভির মুখে জানতে চাইলেন, “কার বিয়ের প্রস্তাব নিয়া যাবো?”

“আম্মা?….আমার।”

যেমনটা আচ করেছিলো। তিক্ততায় ভরে উঠলো লিজা বেগমের সর্ব মুখশ্রী। তেতিয়ে উঠেন।ঝড়ের গতিতে উত্তর দিলেন, “অসম্ভব!আমি ওই মাইয়ার সাথে তোর বিয়ে দিবো না।”

মার রাগী সুরের বিপরীতে মাহরুর শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো, “কেনো আম্মা? চন্দ্র ভালো একটা মেয়ে।অনেক লক্ষী।ওর মধ্যে আমি খারাপ কিছুই দেখিনা।তাছারাও ঘরের মেয়ে।”

একই সুর বজায় রেখে লিজা বেগম উত্তর দেন, “ওই মাইয়ার নজর তোর জন্য আগে থেকেই ভালো না।কেমন বেহায়ার মতোন তাকায় তোর দিকে।ছিঃ! ভাইগো দিকে এমন নজর দেয় কেউ?”

“আম্মা?তুমি না চন্দ্রকে ভালোবাসতে? হঠাৎ ওর প্রতি তোমার মতামত পরিবর্তন হলো কি করে?”

“হইবো না?আমার সোনার টুকরা ছেলের দিকে প্রেমের নজর নেয়। ওর চরিত্রে খোট আছে।”

“এগুলা কেমন কথা আম্মা?কই প্রেমের নজর দিলো।আমাদের মধ্যে কিছুই নেই।প্রেম ভালোবাসার কোনো সম্পর্কই নেই।আমি ভাবলাম এক না একদিন কাউকে বিয়ে করতেই হবে।করলে চন্দ্রকেই করি।অন্য মেয়ে ঘরে আনবো কেমন হবে জানা নেই।”

লিজা বেগমের রাগ দ্বিগুণ হলো।কথার ঝাঁজ বাড়িয়ে বললেন, “কি কেমন কথা?এসব আমারে বুঝাইতে আসবি না।যে মাইয়া ভাইয়ের দিকে এমন নজরে তাকাইতে পারে ওর চরিত্র কি ভালো নাকি?বিয়ের আগে কিসের পিরিত।”

“আমার কথাওতো সেটা।বিয়ের আগে আমাদের মধ্যে কোনো প্রেম নেই।বিয়েটা করলেই নাহয়…..থাক বাদ দাও আম্মা।তুমি চন্দ্রকে নিয়ে বেশি বেশি খারাপ ধারণা পুষে ফেলেছো।”

“শোন মাহি।তুই আমার একমাত্র ছেলে।তোর বোনকে বড়মাপের লোকের সাথে বিয়ে দিছি।তোর ভবিষ্যতটাও আমি ঠিক করে দিয়েই যাবো।মোতালেব ওর মাইয়ার জন্য তোকে চাইসে।এক বাপের এক মাইয়া।বাপ মার পর সবকিছু ওই পাইবো।আমিও মোতালেবকে কথা দিছি ”

আত্মসম্মান বোধে লাগলো মাহরুরের।এতটা অধঃপতন তার!এতটা!এখন টাকার কাছে বিক্রি হতে হবে তাকে? সম্পত্তির লোভে বিয়ে করতে হবে?মা সম্মানিত।বড় গলায় কিছু বলার সাহস নেই।তারপরও রুষ্ট হয়ে মাহরুর বললো,

“এতবড় একটা ছেলেকে তুমি তার মতামত ছাড়াই বিয়ের জন্য কথা দিয়ে এসেছো?একবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনবোধ করোনি আম্মা?”

“আমি জানিতো।ওই নষ্ট মাইয়া তোরে জাদু করছে।ওর হইয়া মায়ের সাথে এমনে কথা বলিস?এইজন্য পেটে পিঠে পালসি?আগেতো আমার আদেশ মুখ থেকে শব্দ না বের কইরাই মাইনা নিতি ”

“আম্মা এখানে চন্দ্র আসলো কোথা থেকে?আর আমি কোনোদিন তোমাকে ইচ্ছে করে কষ্ট দিয়েছি?কোনোদিন অমান্য করেছি?আমি শুধু তোমার কাছে এমন একটা প্রস্তাব রাখলাম যেটা কিনা সম্ভব। এতে খারাপের কিছুই দেখছি না।কোনো প্রেম পিরিত নেই আমাদের মধ্যে।মেয়েটার জন্য মায়া হয় ব্যাস এইটুকুই।কিন্তু তুমিতো আমাকে বিয়ে না মেয়ের বাবার কাছে বিক্রি করে দেওয়ার চিন্তায় আছো”

লিজা বেগম কাদতে কাদতে বললেন,

“দেস নাই।এখন দিবি।ওই মাইয়ার পাল্লায় পইড়া আমারে একদিন ঘর ছাড়াও করবি।তোর বাপ যাওয়ার পর যে কষ্ট কইরা পালসি।এই প্রতিদান?তোর ব্যপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না আমি?আমি নাকি আমার ছেলেরে বেইচা দিতেছি?”

___

বর্তমান,

“মামা ঔষধ খাও।জ্বর কমে যাবে ”

মামার ভাগ্নি এসেছে।মাথাটা সম্পূর্ণ হেজাবে আবৃত।মাঝেমধ্যেই দেখা যায় সুমাইয়াকে।সারাদিন মাদ্রাসায় থাকে।মামার জ্বরের খবর পেয়ে আজ পড়া কামাই করে এসেছে। জলপট্টি দিয়ে জ্বর সারাতে চাইছে।
জ্বালাপোড়া করছে চোখ।শক্ত দেহটা পুরোপুরি দুর্বল। সারারাত বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধিয়েছে মাহরুর।ফলাফল স্বরূপ বিছানায় পিঠ।

শিরীন এগিয়ে এসে বললো, “ভাইয়া আগে কিছু খেয়ে নাও।তারপর ঔষধ খেও”

“খেতে ইচ্ছে করছে নারে।”

“এগুলো বললে হবেনা।তোমার জ্বর একশত দুই ডিগ্রি। কাল রাতেও কিছু খাওনি তাই না?”

করুন মুখ বানিয়ে মাহরুর জবাবে বলে, “ক্ষিদে নেইতো। বরং ঔষধটা দে খেয়ে নেই।”

“খালি পেটে ঔষধ খাওয়া যাবেনা ভাইয়া। একটু কিছু মুখে দাও”

শিরীন মানবে না। খাইয়ে ছাড়বে।নিজের ঘর সংসার সামলে ঠিকই চলে আসে আবার বোনের দায়িত্ব পালন করতে।ভাই হিসেবে তার কথা রাখাও অত্যন্ত জরুরী।এরচেয়ে বেশি কিছু করার সাধ্যও যে নেই।নুডুলস এনে রান্না করেছে। চামচের সাহায্যে মুখে তুলে খাইয়ে দিলো।কয়েক চামচ খেয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় মাহরুর।আর খেতে পারছে না।নাপা ট্যাবলেট খেয়ে আবার বিছানায় নেতিয়ে পরে।হাত বাড়িয়ে সুমাইয়া আর সায়মনকে জড়িয়ে ধরেছে।এদিক ওদিক এর গল্প করে সময় পার করতে লাগলো।

“আমরা আজ মামার সাথে থাকবো।মামার জ্বর”

রেদোয়ান ছেলে মেয়ের কথা শুনে স্ত্রীর দিকে চাইলো।এসেছিল মাহরুরকে সাথে নিতে।পারেনি।অবশেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে স্ত্রী সন্তানদের নিয়েই ফিরবে।একা একা জ্বরে পুড়তে রাজি তারপরও এক কদম বাহিরে ফেলবে না।পাথরের তৈরি একটা মানুষ। সন্তানদের আবদারে হুট করে সিদ্ধান্ত বদলায় রেদোয়ান।এখানে একটা ঘর। কোনভাবেই তাদের রাখা সম্ভব না।

ছেলে মেয়ের উদ্দেশ্যে বললো, “এক কাজ করো।তোমরা বাড়ি যাও।রহিমা খালা আছে।আমি তোমার মামার সাথে থাকবো আজ।তার সেবা যত্ন করবো ঠিক আছে?কালকেই দেখবে তোমার মামা সুস্থ”

বাবার বুঝানোর ভঙ্গি চমৎকার।তাছাড়াও তারা দুজনই বাধ্য সন্তান।বাবার কথা মতন যেতে রাজি হয়। রেদোয়ান তাদের বাড়ির দিকে এগিয়ে দিয়ে পূনরায় ফিরে এসেছে মাহরুরের চিলেকোঠায়।সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।কাপতে দেখা গেলো মাঝেমধ্যে। গায়ে কম্বল জড়িয়ে পাশেই শুয়ে পড়ে রেদোয়ান।সেও ঘুমে বিভোর হলে চোখ খুলে মাহরুর।

“এই মুহূর্তে তোকে খুব মনে পড়ছে চন্দ্র।একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেইতো আমি সুস্থ হয়ে যাই!….আচ্ছা?কেমন রে তোর হাতের ছোঁয়া?শীতল নাকি উত্তপ্ত?”

চলবে…

চন্দ্র’মল্লিকা ৭
লেখা : Azyah_সূচনা

অতীত,

“আমি বিকালের বাসে ঢাকা ফিরছি।”

“মানে?তুই না এক সপ্তাহের জন্য আসছিস?”

মাহরুর ভারী গলায় উত্তর দিলো,

“ইচ্ছে ছিলো আম্মা।এখন মিটে গেছে”

“ওই চরিত্রহীন মাইয়ার কারণে আমারেও এখন চোখের সামনে সহ্য হইতাছে না তোর?”

আবারো লিজা বেগম চন্দ্রকে টেনে আনলেন এই প্রসঙ্গে। রাগটা দ্বিগুণ হয় মাহরুরের।কথায় কথায় চন্দ্র।কি এমন দোষ করেছে মেয়েটা?খারাপ মেয়েদের মতন গায়ে পড়ে থাকে?নাকি আজেবাজে নোংরা ইঙ্গিত দেয়?তাহলে কেনো কালি ছুঁড়ছে তার মা ওর চরিত্রে।সংবরণ করলো রাগ হাত মুঠ করে। দ্রুত গতিতে স্থান ত্যাগ করে বেরিয়ে যায় বাড়ির বাইরে।

লিজা বেগমের জেদ চেপেছে।এই ব্যাপারের হ্যাস্তনস্ত করতেই হবে।মাথায় কাপড় টেনে পা বাড়ান মল্লিকাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।সঠিক সময় বেছে নিয়েছেন।এই মুহূর্তে রমজান সাহেব বাড়িতেই আছেন।তার কাছে গিয়েই মেয়ের কুকীর্তি ফাঁস করবেন।

“রমজান!এই রমজান!কই তোমরা?”

কর্কশ স্বরে বেরিয়ে এলো রমজান সাহেব।তার সাথেসাথে এসেছে ফরিদা বেগম আর মল্লিকাও।উঠোনে দাড়িয়ে ডেকে চলেছেন বাড়ির সবাইকে।

রমজান সাহেব এগিয়ে এসে বললেন, “ভাবি?এইতো বলেন কি হয়েছে?এই সময় আমাদের বাড়িতে?”

“হ্যা তোমাদের বাড়ীতেতো এখন আবার আসা যাইবো না।তোমারে আমি ভাই ভাবছিলাম।তুমিতো ভাই হইয়া পিঠে ছুরি মারলা।তাও নিজের মাইয়ারে দিয়া!”

রমজান সাহেব পুরোপুরি নির্বোধ।কি বলছেন সবটাই অজানা।পাশে ফরিদা বেগমও আশ্চর্যচকিত।অবাক আর ভয়ের মিশ্রণে ঠায় দাঁড়িয়ে চন্দ্রও।

“ভাবি কি বলছেন?আমি কি করেছি?আর মল্লিকা?”

“এটা তোমার মাইয়ারে জিজ্ঞেস করো কি করছে।এমন মাইয়া কেমনে জন্ম দিলা?আমার মাইয়ারে দেখছো?ওইযে বিয়া দিছি একটা টু শব্দ করে নাই।”

এবারও কথার অর্থ বুঝতে অক্ষম সকলে।রমজান সাহেব ভাবীর উদ্দেশ্যে বললেন, “ভাবি ঘরে আসেন। পাড়ার মানুষ খারাপ ভাববো।ঘরে আইসা সবটা বলেন।”

“এই কলংকিত ঘরে আমি ঢুকবো না।সাহস কি করে হয় তোমার মাইয়ার?আমার ছেলের দিকে চোখ দেওয়ার।তাও আবার কুনজর।প্রেম প্রেম খেলতে আসে আমার ছেলের সাথে।আমার জামাইর টাকায় খাইয়া অন্তর ঠান্ডা হয় নাই?এখন মাইয়ারে আমার ছেলের পিছনে লাগাইছো?”

ভাবির মুখের ভাষা অতিরিক্ত ঘৃনামিশ্রিত।এই রূপতো আগে দেখেননি।রমজান সাহেব এবং ফরিদা বেগম উভয়েই কিংকর্তব্যবিমূঢ়।যেটা ভাবি বলল সেটা কি সত্যি?মল্লিকা এমন কাজ করতে পারে?

ফরিদা বেগম অগ্নিচক্ষু ছুড়লেন মল্লিকার দিকে। ভীত জড়ো হয়ে উঠা মল্লিকার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। স্তব্ধ পরিবেশে আবারো লিজা বেগমের আওয়াজ শোনা গেলো।

“আমার ছেলেরে বিয়া করার শখ জাগছে তোমার মাইয়ার।ওর লাগাম টানো।আমি জীবনেও এই বিয়া হইতে দিবো না। চরিত্রহীন মাইয়া।এই বয়সেই পিরিত করে। আরতো দিন আছে পইড়া।”

লিজার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই ফরিদা বেগম মল্লিকার গালে ঠাটিয়ে চড় মারলেন।চুলের মুঠি ধরে প্রশ্ন করলেন,

“কি করসস? হ্যা!কি বলে তোর চাচী?”

অস্রুরা বাঁধ মানে?দেহ আর মন উভয়ের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে মুক্ত দানার মতন ঝড়ছে অবোধ কন্যার গাল বেয়ে। কাকুতি ভরা মুখে জানালো, “আম্মা আমি কিছু করি নাই।”

“করিস নাই?তোর চাচী বানায় কথা বলছে?”

ফরিদা বেগম মল্লিকাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ছড়ি নিয়ে আসেন। দৃষ্টি বন্ধ করে মল্লিকার উপর সব অপমানের ঝাল মেটাতে শুরু করলেন।ব্যথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়া মল্লিকা মুখে বারবার একই কথা আওড়িয়ে যাচ্ছে, “আম্মা আমি কিছু করিনি”

মল্লিকাদের বাড়ির পাশ দিয়ে হেটে চলা শওকত আর মাহরুর চেঁচামেচির আওয়াজ পেলো। ঘটনা জানতে দ্রুত পায়ে ভেতরে প্রবেশ করে।দৃষ্টি সামনের দিকে তুলতেই মল্লিকাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে ভরকে উঠে।সামনেই লিজা বেগম আর রমজান সাহেব দাড়িয়ে।পিত্তি জ্বলে উঠে মাহরুরের।যেটা আন্দাজ করছে সেটা যেনো না হয়। দৌড়ে এগিয়ে চাচীর হাত থেকে ছড়ি ফেলে দেয়।

গর্জন তুলে জানতে চায়, “হচ্ছেটা কি?ওকে মারছেন কেনো?”

“ওর মতন মাইয়ারে মাইরা গাঙ্গে ভাসায় দেওয়া উচিত।”

“চুপ থাকো আম্মা!অনেক বলছো!”

ছেলের ধমকে চোখ দুটো গোলাকৃতি ধারণ করে।মুখ ঘুড়িয়ে নিজের বাড়ির দিকে চলে গেলেন। অর্ধজ্ঞান মল্লিকার মাথা তুলে নিজের পায়ের উপর রেখে মাহরুর গাল চাপড়ায়,

“চন্দ্র?এই চন্দ্র! ওঠ।”

ঠোঁট প্রসারিত করছে মল্লিকা।তবে মুখ দিয়ে কোনো শব্দ এলো না।ব্যথায় জর্জরিত হয়ে বুঝি বাকশক্তি হারিয়েছে।দ্রুত উঠানামা করা নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই নেই।

“চাচা চন্দ্র উঠছে না।ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।”

রমজান সাহেবের হুশ ফিরে।যতই হোক এক মাত্র মেয়ে।এসেই বুকে জড়িয়ে নিলেন। ক্ষ্যান্ত ফরিদা বেগম এখনও ফোঁসফোঁস করছেন।রমজান সাহেবকে সুযোগ না দিয়েই কোলে তুলে নেয়।পায়ের দ্রুততা বাড়িয়ে ছুটলো ডাক্তারের কাছে।

“চাচা!চন্দ্র কিছুই করেনি। আম্মা না জানি কোন জনমের দুশমনি বের করছে আপনার সাথে।আমি!আমি বলেছিলাম আম্মারে চন্দ্রকে বিয়ে করার কথা। চন্দ্রের কোনো দোষ নাই চাচা।দোহাই লাগে ওকে অত্যাচার করবেন না।আমার দোষ আমারে মারেন”

চন্দ্রের জ্ঞান ফিরেছে।কালো ওড়নায় নিজেকে লেপ্টে বাবার হাত ধরে চলে গেলো।বাবার বাহুর সহায়তায় হাঁটার সাহসটা পাচ্ছে হয়তো।তার যাওয়ার পানে বিনা পলক ফেলে চেয়ে রইলো মাহরুর।আজ হৃদয় পুড়তে শুরু করলো।নিজের দোষে অন্যজন শাস্তি পেয়েছে?এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া বোধহয় ঠিক হয়নি। পারিবারিক বিষয়ে এগোতে খুব বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে। যার ফল চন্দ্রের শরীরের আঘাত।মায়ের মনে এত আক্রোশ চন্দ্রকে নিয়ে?সাবলীল একটা মেয়ে। যথেষ্ট ভদ্র। মাহরুর আর শওকত ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের দিকে চোখ তুলে তাকাতে দেখেনি কোনোদিন।

শওকত মাহরুরের পাশে দাড়িয়ে বললো, “বিনা দোষে মেয়েটি হয়ে গেলো কলঙ্গিত”

মাহরুর মনে মনে বললো, “হয়তো ভালোবেসে হয়েছে কলংকিত”

আসাঢ় পা জোড়াকে টেনে বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছে।টিকেট কেটেছে বিকেল পাঁচটার। সাড়ে চারটা বাজে।ঘরে ঢুকে মাকে মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখলো মাহরুর।কোনো কথা বলেনি।কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে পূনরায় মায়ের ঘরে আসে।সালাম করে ছোট্ট শব্দে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়লো।আড়ালে মল্লিকার বাড়ির কাছে গিয়েছে।বাড়ির পেছন ঘুরে চন্দ্রের ঘরের জানালায় দাঁড়িয়ে কেদে বুক ভাসানো মেয়ের দিকে চাইলো।দুঃখে শক্ত করে চোখ বুজে নেয়।বালিশে মুখ গুজে হেঁচকি তুলছে বারবার।

মাহরুর ডাকলো,

“চন্দ্র?”

মাহরুরের কন্ঠস্বরে লাফিয়ে উঠে মল্লিকা।চারিপাশে মাথা ঘুড়িয়ে খুঁজতে লাগলো।সর্বশেষ নজর গেলো জানালার দ্বারে।ঝড়ের গতিতে এগিয়ে এসে মল্লিকা বলে,

“এখানে কেনো এসেছো মাহরুর ভাই?চাচী জানলে অনেক রাগ করবে।তোমাকে বকবে।”

নাকের ডগা লালাভ বর্ণ ধারণ করেছে।চোখের সাদা অংশে লাল রেখা।মুখ ফুলে গেছে অনেকটা।এলোমেলো চুলে বিদ্ধস্ত দেখালো চন্দ্রকে।সেখানে কিনা মাহরুরের জন্য চিন্তে করতে এই মেয়ে?

“আমার কথা ভাবছিস?আমার জন্য তোকে কত কষ্ট পেতে হলো”

“আমি ভুল করেছি মাহরুর ভাই।তাই শাস্তি পেয়েছি।”

“এখানে দোষতো আমার ছিলো চন্দ্র আমিই মাকে বলেছিলাম”

“কি বলেছিলে মাহরুর ভাই?”

এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে মাহরুর।এই কথাটা আপাদত চন্দ্রকে না বলাই শ্রেয়।কে জানে ভবিষ্যৎ!অযথা মনে আশা পুষে বসবে।জবাবে মাহরুর বলে,

“কিছু না।আমার উপর রেগে আছিস তুই?”

কন্নামিশ্রিত ভারী গলায় উত্তর দেয় মল্লিকা, “একদমই না”

“ঢাকা ফিরে যাচ্ছি।ভালো থাকিস।”

“ফিরবে কবে?”

“জানি না”

মাহরুরের মুখখানায় দৃষ্টি ফেরায় মল্লিকা। অপরাধবোধে আচ্ছাদিত সে।মল্লিকা ঠোঁট কামড়ে আরো কয়েক বিন্দু ঝরালো চোখ থেকে। নীরবতা কাটিয়ে বলে,

“আমি কষ্ট পেয়েও তোমাকে ঘৃনা করতে পারছি না মাহরুর ভাই।আমি জানি তুমিও ইচ্ছে করে আমাকে কষ্ট দাওনি।তুমি যাও।সহি সালামতে যাও।”

দরজায় করাঘাতের আওয়াজে ঘাবড়ে উঠে।দরজার অপরপাশে থেকে বাবার গলার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। মাহরুরও শেষ বিদায় নিয়ে সরে গেলো।মল্লিকা চোঁখ মুছে।দরজা খুলে দিতেই রমজান সাহেব থমথমে মুখে দাড়িয়ে আছেন।মল্লিকা দৃষ্টি নত করতেই খপ করে হাত ধরে ফেললেন মল্লিকার।টেনে নিয়ে গেলেন বসার ঘরে। উচ্চস্বরে স্ত্রীকে ডাকলেন।

বললেন, “সাহস কত তোমার আমার মাইয়ার গায়ে হাত দাও।একটা মাইয়া আমার।আর আমার জীবনে কিচ্ছুই নাই।ছোট বয়সে নাহয় একটা ভুল করছে তাই বইলা এমনে মারবা?তুমি না মা?আমার চেয়ে বেশিতো তোমার কলিজা জ্বলার কথা।”

স্ত্রীকে শাসিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন।কাছে বসিয়ে বলতে লাগলেন, “কই কই ব্যাথা পাইছিস মা? বল?তোর কষ্ট হচ্ছে?”

বাবার আদুরে গলায় ‘ মা ‘ ডাকে মোমের মতন গলতে শুরু করলো।বুকে মাথা পেতে কাঁদতে লাগলো আবারো।বললো,

“আমার কষ্ট হচ্ছে না আব্বা।তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।”

কন্যার মাথায় হাত ফেরায় রমজান মিয়া।এই মেয়েটা তার নয়নের মনি।একজন সন্তান বলে নয়।স্বভাব চরিত্রে অনন্য।মেয়ের নামে বাজে কথাগুলো মনে পড়ে নিজেও কেদে উঠলেন।

“আমিতো নিজেই চাইছিলাম আমার ভাতিজাকেই মেয়ের জামাই করতে।কিন্তু কে জানতো ভাবি আমাদের এত ঘৃনা করে?তুই চিন্তা করিস না মা।আমি তোরে আরো ভালো ছেলের কাছে বিয়ে দিবো। তোরে সে ঘরের রানী বানাবে।”

“আব্বা তোমার কাছে একটা আবদার করি?”

“বল মা”

“আমারে এখন বিয়ে দিও না।আর কয়টাদিন তোমাদের কাছে রাখো?”

___

বর্তমান,

“দেখেন ভাই আপনার সাথে হিরার যে সম্পর্ক ছিলো সেটা এখন আর নেই। কাল আমাদের বিয়ে। আশা করি কোনো ঝামেলা করবেন না।”

পাশে দাড়িয়ে রেদোয়ান কটমট করে বলে উঠে, “চোরের মন পুলিশ পুলিশ।এত ভয় পাচ্ছেন কেন আপনারা?”

মারুফ রেগে উঠে। হিরার হবু স্বামী।বিয়েতে পুরোনো কোনো কথা যেনো না আসে সেই ব্যাপারেই হুশিয়ারি করতে এসেছে
মাহরুর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রেদোয়ান এর দিকে তাকায়।বলে,

“আপনি কে?”

“পুলিশ”

মারুফ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়।গলা নামালো খানিকটা। হিরার সাথে তার সম্পর্ক তিন বছরের। মাহরুরের সাথে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও সম্পর্কে জড়িয়েছে দুজনে।সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় পড়ে ছিলো এতদিন।তারপরও মনে অজানা ভয়।তাদের মিথ্যে ফাঁস হলে বেশ ভুগতে হবে।

মারুফ মাহরুরের কাধে হাত রাখে।তেরছা নজরে তাকালো মাহরুর।মারুফ বললো,

“দেখেন ভাই ভালোবাসা ব্যতীত সংসার হয়না।আপনাদের সংসারটা জোর জবরদস্তির ছিলো।এক না একদিন ভেঙে যেত।হয়তো আপনারা একে অপরের জন্য সঠিক ছিলেন না।আমরা নতুন জীবন শুরু করতে চলেছি।আপনিও এগোন আপনার জীবনে”

কথাগুলো বলেছে স্বাভাবিকভাবেই। মাহরুরের উত্তরের অপেক্ষায়।রেদোয়ান মাথায় চড়ে বসে আছে।আওয়াজ তুললেই পুলিশগিরি দেখাবে। মাহরুর মারুফের হাতের দিকে চেয়ে বলল,

“কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে কথা বলুন।”

সঙ্গেসঙ্গে হাত সরায় মারুফ। মাহরুরকে দেখে যতটা শান্ত স্বভাবের মনে হয় তার চেয়ে বেশ তেজ মনে হলো গলায়। রেদোয়ানও অবাক। স্বাভাবিকতা বজায় রেখে মেজাজ দেখালো।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহরুর বলে, “মস্তিষ্ক যথাযথ চলে আমার। বিকৃত নয়।কি ভেবে চিন্তে এসেছেন কে জানে?আপনার হবু স্ত্রীর অবশ্যই জানার কথা তার প্রাক্তন স্বামী কেমন।তার থেকে আমার স্বভাব চরিত্র এর সার্টিফিকেটটা নিয়ে এসেছেনতো?”

চুপ বনে রইলো মারুফ। হিরার সাথে কথা হয়েছে।কিন্তু মাহরুর সম্পর্কে জানার আগ্রহ আসেনি কোনোদিন।এরই মধ্যে রেদোয়ান বলে উঠলো,

“আপনার হিরা আপনিই রাখেন।অযথা আসবেন না আমাদের সময় নষ্ট করতে।”

মারুফ চলে যেতে নিলে মাহরুর বলে উঠে, “যে যেমন মানুষকে ভাবেও তেমন।এতদিন কোনো রাগ ছিল না।এখন রাগ হচ্ছে আপনার প্রতি।ডিভোর্স হয়েছে মানে কাহিনী শেষ।আবার কেনো একই কথা বারবার তুলে আনেন।বিয়ে করেন। শুভকামনা।অন্যের সংসারে ঝামেলা করে কি পাবো? হিরাকে?কি করবো এমন স্ত্রী দিয়ে যেকিনা আমারই না?উল্টো আপনার আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।আপনার প্রেমিকাকে এতদিন নিজের স্ত্রীর পরিচয় নিয়ে পেলেছি।আমার চোখের সামনে আসবেন না নেক্সট টাইম আপনারা কেউই।”

“আপনিও নিজের জীবনে কাউকে জায়গা দিন মিস্টার মাহরুর।ভালো থাকবেন”

ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে মাহরুর।অতি মাত্রায় রাগ।কপালে নীল রগ ফুটে উঠে।মাত্র জ্বর সেরেছে।অফিসের যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার পূর্বেই মেজাজটা পুরো বিগড়ে দিয়ে গেলো।কেনো এতো ভয়? পরকীয়া করেছে বলে?

রেদোয়ান বললো, “এরপর?এরপর কি করবে মাহরুর?আগে বাড়বে জীবনে?নাকি থেমে থাকবে?”

“জানি না” একবাক্যে সরাসরি উত্তর দেয় মাহরুর।

“ভেবেছো কিছু?সামনে অনেকটা পথ বাকি।”

“হাটতে পারবো।”

“একা?”

“পারবো”

মুখ ঘুরিয়ে নিলো রেদোয়ানের সামনে থেকে। শার্টের বোতাম লাগিয়ে ব্যাগ তুলে বেরিয়ে যায়।অফিস কামাই করলে বেতন কেটে রাখে। নূন্যতম মনুষ্যত্ব নেই এদের। জান যাবে কিন্তু কাজ বাদ দেওয়া যাবেনা। হাঁটার পথে বাগানবাড়িটায় চোখ বুলায়।আজও মিষ্টির দেখা নেই। পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।মন বলে উঠলো,

“রেদোয়ান কি জানে আমি একা চলবো না বাকিটা পথ।আমার সাথে আমার চন্দ্রের জমিয়ে রেখে যাওয়া এক সমুদ্র স্মৃতি আছে।বাঁচিয়ে রাখবে আমাকে”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে