চন্দ্র’মল্লিকা ৪৪
লেখা : Azyah_সূচনা
“আমাকে আর ভালো লাগে না তাই না?”
অভিমানী নারী সুর বাতাসে ভেসে এলো কর্ণকুহরে।শীতল কুণ্ডলীর ন্যায়। মৌসুম এসেছে প্রেমের,প্রণয়ের।প্রণয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে তারা।তারপরও চিত্ত ডাকে।অনুভব করায় নব অনুরাগের সুরভী। মাহরুর ঘুরে তাকালো অকপটে।মল্লিকার দর্শনে মাহরুরের মাথার উপর ভরা হলদে শশাঙ্ক বিদ্যমান। মাহরুর হাত তোলে।এগিয়ে দেয়।
ডেকে নেয়, “আয়?”
মল্লিকাও বিনাবাক্যে সান্নিধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে। লম্বাটে দম ফেলে আরো দূরত্ব ঘুচায় হাতের টানে।খোঁপা করা চুলের সামনের ভাগে কিছু কেশ এলোমেলো। ললাটের বিচ্ছিন্ন চুল তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্যে সরিয়ে নেয়।
বলে, “আমার মেয়েরা ঘুমিয়েছে?”
চোখ পিটপিট করে মল্লিকা মাথা উপর নিচ দোলায়। হ্যা সূচক উত্তর দেয়। মাহরুর জড়িয়ে ধরলো বক্ষস্থলে।তার চন্দ্রমল্লিকাকে।বললো,
“নাদুস নুদুস হয়েছিস।যেটা আমি হাজার বলেও করতে পারিনি সেটা আমার মেয়ে এসে করে দেখিয়ে দিল।তবে আরেকটু মোটা হলে আরো ভালো লাগবে তোকে।”
“আরো মোটা হবো?”
“হুম!আরো মোটা হওয়ার জন্য আরেকজন সন্তানের আগমন দরকার।”
এক পলকে মাথা তুললো মল্লিকা। দুহাত তুলে না করে।বলে, “আর না।এই দুজনকে এখনই সামলাতে কষ্ট হয়।”
“আরেকজন সন্তানের জন্য আরেকজন মা আনি?”
“ফালতু কথা বলবেন না।আপনার স্বভাব খারাপ হচ্ছে দিনদিন।”
“স্বভাব তোর দোষেই খারাপ হয়েছে।”
মুক্ত হস্ত বিচরণ চালালো মল্লিকার কেশমালায়।একটানে খোঁপা খুলে মুক্ত করেছে কুচকুচে রেশমি চুল।আগের তুলনায় ঘনত্ব কম। তবে মোলায়েম।সময়ের সাথে বদলে যাওয়া মল্লিকাকেও অনুভবের দেয়ালে আবদ্ধ করা হয়ে গেছে। সত্তগাতস্বরূপ দুই তনয়ায় প্রতিধ্বনিত এই ধূসর চিলেকোঠা।
“চন্দ্র?”
আবেদনময় ডাকে ধীমা জবাব দেয় মল্লিকা, “হুম?”
“কলি থেকে ফুল হতে দেখেছি তোকে।আজকের সময়টা ভিন্নরকম সুন্দর।”
“শত অপ্রাপ্তির মাঝেও পূর্ণতা অনুভব হয় তাই না?”
“তাতো বটেই।”
মাতাল সুভাষ মাহরুরের ঘ্রানেন্দ্রিয়কে প্রবলভাবে আকর্ষণ করছে।পরিপূর্ণ এই সৌরভে মাতোয়ারা হতে মুখ ডোবায় মল্লিকার কেশমালায়।প্রমত্ত হলো।বয়সের দোষ নেই। মন বললো মাহরুরের।এসবই প্রেম নামক রোগের দোষ। দিনক্ষণ, বয়সসীমা কোনোটাই তোয়াক্কা করেনা।বেহায়া হতে বাধ্য করে।
নিজের সাথে খিঁচে লেপ্টে রাখে মল্লিকাকে।বলে, “নারীর চুলের ঘ্রাণ কি প্রাকৃতিক?”
“উম!.. কিছুটা।তবে সবই দোকান থেকে কেনা কৃত্রিম সুবাসিত শ্যাম্পুর ঘ্রাণ।”
“যে এই ধরনের সুবাসিত শ্যাম্পু তৈরি করেছে সে নিশ্চয়ই জানে পুরুষের দুর্বলতা।এটা নির্ঘাত কোনো নারীর কাজ।”
মল্লিকা ফিক করে হেসে উঠে।বলে, “পুরুষেরওতো হতে পারে?”
“কোন পুরুষ নিজের মাথা নিজে নষ্ট করতে যাবে বলতো বোকা চাঁদ?”
“আপনি!”
মল্লিকার মাথার উপর নিজের মাথা শক্তভাবে ঠেকিয়ে দাড়িয়ে রইলো মাহরুর।আজকাল বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়েছে।নিজেদের মধ্যে সময় কম পাওয়া যায়।কত সুন্দর দিন ছিলো?একে অপরের সাথে প্রতিরাতে চন্দ্রবিলাস হতো। সময়গুলো চলে গিয়ে নতুন যে সময় উপহার দিয়েছে?সেটাও কম সুখদায়ক নয়! দোটানায় পড়ে যায় মাঝেমধ্যে।কোন সময়টা বেশি সুন্দর?
মল্লিকাকে চমকে হুট করে হেসে উঠে মাহরুর। নীরবতা কাটিয়ে বলে,
“একটা উদ্ভট চিন্তা এসেছিল মাথায় জানিস।পড়ে বাস্তবতা এসে ঠাটিয়ে একটা চড় দিলো।আমি সব ভুলে গেলাম।”
স্বভাবতঃই প্রশ্ন আসে মল্লিকার তরফ থেকে, “কি চিন্তা এসেছিল?”
“জানিস চন্দ্র?এই শহরটা মায়ার শহর।এখানে মায়া জন্মালেও ভালোবাসা জন্মাবে না।যেখানে কালো সাদা অতীত কেটেছে সেই অর্ধপাকা রাস্তাটায় পড়ে আছে আমাদের মন।ভাবছিলাম গতকাল।এই চিলেকোঠাকে আমাদের চির আস্তানা বানিয়ে নিলে কেমন হয়?”
“খুব ভালো হয়।”
“পুরোনো ঘরটাকেই নতুনভাবে সাজিয়ে মিষ্টি আর মেহুলকে উপহার দেওয়ার একটা সুপ্ত বাসনা এসে হাজির হয়েছিল।পরপর মস্তিষ্ক বললো অর্থের বেজায় অভাব।”
মল্লিকা পূনরায় মুখ তুলে তাকায়।এভাবে জাপ্টে নিঃশ্বাস নেওয়া গেলেও কথা বলা যায় না।বললো,
“এই চিলেকোঠাকে আমাদের চির আস্তানা বানিয়ে নিন।খুব সুন্দর করে সাজাবো।নিজেদের মতন করে।এই শহরে বড় বড় ইমারত থাকলেও অনুভূতির বড্ড অভাব।মিষ্টি মেহুল এটাই জানবে বাবা মায়ের বাল্যকাল যেখানে কেটেছে সেখানে তাদের নিজের একটা বাড়ি আছে।দাদী বাড়ি, নানী বাড়ি।আর এই শহরে আছে একটা চিলেকোঠা।”
“কিভাবে সাজাবি?”
“হরেক রকমের ফুলের মেলা বসাবো এখানে।আকাশের রংধনুর সাত রঙ এনে ঢেলে দিবো।”
“তাহলেতো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।”
“আমিও করবো!আমাকে একটা কাজ খুঁজে দিন।দুজন মিলে উপার্জন করলে আমরা পারবো।”
ললাটে গাঢ় স্পর্শ আঁকে মাহরুর।পরপর কপোলে। সারা মুখশ্রীতে বর্ষণ করে অনুরাগের। ঘাড়ে মুখ গুজে মাহরুর বললো,
“আমার অস্পষ্ট জল্পনাকে যে বাস্তবিক রূপ দিয়ে দিলি ”
___
অফিস ফিরতি পথে আজ নিজের ঘরে নয় রহিম মিয়ার ঘরে এসে হাজির মাহরুর। বেতন পেয়েছে।পূর্বের তুলনায় টাকার অংক একটু বেশি।ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ ফল এনেছে জোবেদা খাতুন ও রহিম মিয়ার জন্যে।হাসিমুখে বিনয়ের সাথে ঘরে এনে রাখলো।ঘরে প্রবেশ করতেই দেখা গেলো রহিম মিয়া ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। মাহরুরকে দেখতে পেয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে বসতে বললো।তাদের ইশারা ইঙ্গিতের মধ্যেই
জোবেদা খাতুন বলেন,
“কি দরকার আছিলো এসব আনার?”
“দরকারতো ছিল না চাচী।তবে ইচ্ছে হলো। আপনারাতো ঘরে ফল পড়ে থাকলেও খাবেন না।না থাকলে আনিয়ে খাবেন না।তাই আজ ভাবলাম আপনাদের সামনে বসে খাইয়ে যাই।”
জোবেদা খাতুন হেসে বললেন,
“আচ্ছা বহো!.. কি খাইবা?শরবত দিমু নাকি চা?”
“চা খাবো চাচী। ঠান্ডা পড়ছে আপনার হাতের আদা চা হলে মন্দ হয়না।”
“বও আনতাছি।”
জোবেদা বেগম রান্না ঘরে চা করতে লাগলেন। রান্নাঘর থেকে বসার ঘর মুখোমুখি। সর্বদা রহিম চাচা ও চাচীর দেখভালের কাজে নিয়োজিত সুমিকে ডাকলো মাহরুর।
অনুরোধ করলো, “আমার ব্যাগ আর জিনিসপত্রগুলো একটু তোমার ভাবির কাছে দিয়ে আসতে পারবে?”
সুমি উত্তর দেয়, “হ ভাই পারমু।দেন”
“ধন্যবাদ।আর হ্যা ভাবিকে বলবে আমি নিচে আছি।কিছুক্ষন পর আসবো। আমার চা গরম করা দরকার নেই।”
“আচ্ছা ভাইজান”
দীর্ঘ ফোনালাপ এর পর রহিম নিয়া এসেছেন।এসেই হালচাল জেনে নিলেন একে ওপরে। মাহরুর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করলো,
“কার সাথে কথা বলছিলেন চাচা?”
“ফারুকের সাথে।”
“ফারুক?”
“ঐযে সামনে মাদ্রাসা আছে না?এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।”
“আচ্ছা আচ্ছা”
মাহরুর আর প্রশ্ন করলো না।হতে পারে ব্যক্তিগত ব্যাপার। জোবেদা বেগম তিন কাপ চা আর হালকা নাস্তা এসে হাজির হন বসার ঘরে।অন্যদিকে রহিম মিয়া নিজ থেকেই বলতে শুরু করেন।
বলেন, “যেই অবস্থা দেখতেছি মনে হয় বেশিদিন বাঁচুম না।আগে থেকেই ব্যবস্থা করলাম।ওই মাদ্রাসায় বেশিরভাগ বাচ্চা এতিম।খাওয়া দাওয়ায় কষ্ট।থাকার জায়গাটাও পোষাচ্ছে না। অধ্যক্ষ কইলো এনজিও এর সাথে আলাপ করতে হইবো।যারা এই এতিম বাচ্চাদের জন্য কাজ করে।আমি একটা মাথায় ছাদ দিকে বাকি কাজ নাকি এনজিও এর মানুষ করবো।”
“আচ্ছা ভালো খবর।তবে বেশিদিন বাঁচবেন না এটা কেমন কথা চাচা?”
“মানুষ মরণশীল” হেসে উত্তর দিলেন রহিম মিয়া।
চায়ের কাপে একের পর এক চুমুক বসিয়ে যাচ্ছে মাহরুর।মনের মধ্যে একটা কথা আনচান করতে লাগলো।বলবে কি?বলেও কোনো লাভ হবেনা এখন।তারপরও মনের হাসফাস ভাবের কাছে বাধ্য হচ্ছে বারেবারে।মস্তিষ্ক তাড়না দিচ্ছে।আনমনে ভাবনা চিন্তার জেরে ধাতস্ত করলো নিজেকে।একবার বলেই দেখুক।
বললো, “চাচা একটা কথা বলতাম যদি কিছু মনে না করেন?”
রহিম মিয়া ঝুঁকে চায়ের কাপ টেবিলে রাখলেন। মাহরুরের কথায় দৃষ্টি তুলে বললেন, “হ্যা বলো।মনে করার কি আছে?”
“নাহ চাচা কথাটা অন্যরকম।তাই ভাবলাম….”
ইতস্তত বোধ করতে থাকা মাহরুরকে আশ্বাস দেয় রহিম মিয়া।বলে,
“নির্দ্বিধায় বইলা ফেলোতো”
“চাচা মনে একটা ইচ্ছা এসেছে।আপনার চিলেকোঠায় আমার অনেক স্মৃতি, উত্থান পতন। আপনারাও সময়ের সাথে আমার অনেক আপন হয়ে উঠেছেন।আমি চাই না ওই চিলেকোঠা ছেড়ে যেতে।”
রহিম মিয়া সুর মিলিয়ে বললেন, “আমিওতো চাই না বাপ”
“আমি ভাবছিলাম… আপনিতো বাড়ি বিক্রি করবেন না।আর ছাদে অনেক জায়গা খালি পড়ে আছে।সুন্দর ঘর তৈরি করা যাবে।ওই চিলেকোঠাটা যদি….”
কথাটা পূর্ণ করতে পারছে না মাহরুর।এত চিন্তা চেতনার পর গলায় আটকে আসছে শব্দ।কেমনভাবে নেবেন সে?খারাপ ভাবতে পারে?
রহিম মিয়া নরম হৃদয়ের হওয়া সত্বেও বিশেষ বুঝদার। চট করে ধরে ফেললেন।বললেন,
“তুমি ওই চিলেকোঠায় নিজের ঘর করতে চাও?”
আরো যেনো অপরাধবোধ ঘিরে ধরলো।রহিম চাচা বুঝে গেছেন।ভুল করে ফেললো নাতো? মাহরুর নীরব রইলো।রহিম মিয়া নিজ থেকেই আবার বলতে লাগলেন,
“আমিতো নিজেই চাইছিলাম তোমারে চিলেকোঠা দিয়া যামু।”
মাহরুর প্রশ্ন করলো, “আমাকে কেনো দিবেন চাচা?আমি চাচ্ছিলাম ওই চিলেকোঠার ছাদটার ন্যায্য মূল্য আদায় করে নিজের করে নিতে।বাকি বাড়ি আপনারই থাকবে।আপনি যেহেতু বাড়িটা মাদ্রাসায় দিয়ে দিবেন? ছাদটা নাহয়….. চাচা আপনি মনে কষ্ট নিচ্ছেন নাতো?”
রহিম মিয়া বললেন, “আরেহ কিযে কও।আমি কেনো কিছু মনে করমু। শোনো আমি তোমার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ।কে কেমন মানুষ বুঝি।তবে নিজের পোলারে বুঝতেই ভুল করলাম।হয়তো নিজের রক্ত ভাইবা অন্ধের মতন বিশ্বাস কইরা ফেলছিলাম।আর তুমিতো আমার সম্পত্তি হাতায় নিবা না।”
“চাচা!আমি এই ভাবনা চিন্তায়ও আনতে পারি না।আমি শুধু চাচ্ছিলাম।ওই চিলেকোঠাটাকে নিজের পরিবারের জন্য নিজের মতন করে সাজাতে।”
“বুঝছি মাহি।তোমার প্রস্তাবে আমার কোনো আপত্তি নাই।কিন্তু একটা ওয়াদা দাও আমারে?”
মাহরুর অবাক নয়নে চাইলো।প্রশ্ন করলো, “কি ওয়াদা চাচা?”
“আমরা যদি কোনোদিন নাও থাকি।এই বাড়িটা আর এই বাড়িতে যে এতিম বাচ্চাগুলা থাকবো সবসময় দেইখা রাখবা?”
ভয় পেয়ে বসেছিলো মাহরুর।রহিম মিয়ার কথায় সস্তি আসলো।রহিম মিয়ার দুহাত চেপে বললো, “এই বাড়িটা সবসময় মিয়া মঞ্জিল নামেই থাকবে।আপনারা থাকাকালীন।আপনাদের অনুপস্থিতিতেও।আমি আপনাকে ওয়াদা দিচ্ছি আপনার ইচ্ছে পূরণ হবে।আপনি যে ওই বাচ্চাগুলোর মাথার উপর একটা ছায়া দিতে চাচ্ছেন এই সিদ্ধান্তে আমি আপনার পাশে আছি সবসময়।শুধু আদেশ করবেন।”
মাহরুর স্বল্প বিরতিতে আবার বললো, “তবে চাচা আমার এখনও সামর্থ্য হয়নি।যেদিন হবে সেদিন ওই চিলেকোঠাকে সাজাবো নিজের মতন করে।ততদিন আপনাদেরও আমার পাশে থাকতে হবে।”
“ইনশাল্লাহ”
একটা বোঝা হালকা করে ঘরের দিকে পা বাড়িয়েছে মাহরুর।শান্ত হৃদয় শোনাবে মল্লিকাকে।যেনো যুদ্ধ জয় করেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঘরের দরজায় এসে দাড়ালো।অন্যদিন মাহরুরের ফিরে আসা বুঝে নেয় মল্লিকা।আজ বুঝলো না। মাহরুরের পায়ের আওয়াজও তার কান অব্দি পৌঁছায়নি।গল্প মেতেছে মুঠোফোনে। মাহরুর চুপচাপ বসে তার আলাপ শুনতে লাগলো।কোনো শব্দ করেনি আর।মিষ্টিকেও ইশারা করে থামিয়ে দেয়।
অন্যদিকে মল্লিকা ফোন কাউকে বলছে, “আমার মেয়েটাকে দেখতেও আসলেন না?এত পর হয়ে গেছি আমি?ছয়মাস হতে চললো।এত স্বার্থপর হয়ে গেলেন কি করে?”
ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে উত্তর আসে, “মেয়ে মানুষ ঘর সংসার ফেলে আসা সম্ভব?কত চেয়েছি একবার আসি।হলো না।”
মল্লিকা বলে, “তা হবে কি করে?আমরা গরীব মানুষ আমাদের বাড়ি আসা যায় নাকি?”
শশী মল্লিকাকে ধমকে বললো, “এসব কথা দ্বিতীয়বার বলবি না।আর কি আপনি আপনি করছিস?”
“তো কি করবো?আপনি আগে বলতেন আমি স্বার্থপর।আপনাকে ভুলে গেছি।এখন কে স্বার্থপর আর কে ভুলে গেছে দেখে নেন।”
“ঢং করিস না মল্লিকা। স্বাভাবিকভাবে কথা বল।”
“বলবো না!”
“সখী রাগ করিস না।আমি আসবো।খুব শীগ্রই আসবো।”
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে মল্লিকা।ভীষণ মনে পরে শশীকে।সংসারের ব্যস্ততায় মুখ ফুটে বলা হয়না।তাদের সখ্যতাতো দিন দুয়েক এর নয়?পুরোনো শক্ত বাধন।দুরত্বে থেকেও একে ওপরের কথা মনে পড়ে বেশ।ফোন কেটে পেছনে ফিরতেই ভরকে উঠলো।মল্লিকার ভীত মুখ দেখে মিষ্টি হেসে উঠে।তার দেখাদেখি না বুঝে মেহুলও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।নকল করে বড় বোনের।
বড়বড় চোখে মাহরুরের দিকে চেয়ে মল্লিকা বললো, “কখন এলেন?”
“আপনি যখন ফোনে ব্যস্ত ছিলেন তখন।” জবাব দেয় মাহরুর।
“আচ্ছা।হাত মুখ ধুয়ে আসুন।বসে আছেন যে?”
মাহরুরের মুখে বিরক্তির ছাপ ভেসে উঠে।বলে তীক্ষ্ম দৃষ্টি ছুঁড়ে, “কার সাথে কথা বলছিলি?প্রেমিক নয়তো?”
মাহরুরের এরূপ বাক্য কর্ণপাত হতেই চক্ষু রসগোল্লার ন্যায় হয়ে গেলো মল্লিকার।
বললো, “কিসব আজেবাজে বকছেন!”
“তাহলে কার সাথে এমন অভিমান করে কথা বলছিলি?”
“শশীর সাথে।”
“তুই শশীর সাথে প্রেম করিস?”
হা হয়ে রইলো মল্লিকা।পাগল টাগল হয়ে যায়নিতো এই লোক?কিসব কথা বলে যাচ্ছে! মাহরুর মল্লিকার মুখ দেখে বললো,
“মুখে মাছি পড়বে!…. ওহ না!এখনতো রাত।মুখে মশা ঢুকবে ”
মল্লিকা মাহরুরের দুষ্টুমি ধরে ফেলে।একই সুরে বলে, “আপনাকে না বলেছি মস্তিষ্কে চাপ কম দিবেন?বেশি কাজ করার ফলে এখন হলোতো বিপদ!আমি এই পাগল স্বামী নিয়ে কিভাবে সংসার করবো?”
বেশিক্ষণ নিজের গম্ভীর ভাবভঙ্গি ধরে রাখতে পারেনি মাহরুর।মল্লিকার বিপরীত জবাবে ফিক করে হেসে উঠেছে।পূর্বের ন্যায় আবারো মাথায় ছোট্ট করে চাপড় দেয়।
বলে, “কথা শিখেছিস অনেক।”
“আপনার ছায়াতলে থেকেই এই অবস্থা আমারও”
প্রতিদিনের মতোই সন্ধ্যা ব্যতীত হচ্ছে।আজকাল মেয়েদেরকে ফেলে দোকানে যেতে ইচ্ছেই হয় না।তবে কাজও অত্যন্ত জরুরি।মেয়েদের জন্য ধার্যকৃত সময় তাদের দিয়েই তারপর নিজের দায়িত্বের দিকে এগোয়।দুজনকে একসাথে সামনে বসিয়ে মাহরুর বললো,
“অফিসে আমাকে মানুষ কি বলেছে জানিস?”
মল্লিকাও জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলো, “কি?”
মেহুলের গাল টেনে দিয়ে বললো, “এই পাজি মেয়েটা আমার মুখের উপর যে নকশা করেছে সেটা দেখে সবাই হাসছিলো।আর বলছিলো নতুন নতুন বাবা হলে এমনি হয়”
বোধহয় এমন কথা মেহুলের পছন্দ হয়নি।ছোট্ট হাত তুলে বাবার হাতের উপর চাপড়াতে শুরু করেছে।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জোরেশোরে কান্না শুরু করে দিলো।অহেতুক!অযথা!
মাহরুর কোলে তুলে নিতে চাইলে ছট্ফট শুরু করে।মল্লিকা এসে কোলে তুলে নিলো তাকে।মায়ের কাধে মাথা এলিয়ে হেঁচকি তুলে যাচ্ছে।
মাহরুর এমন অবস্থায় বললো, “আমি কি ভুল কিছু বলেছি?কান্না করলো কেনো?আর মেহুল কি আমাদের কথা বুঝেছে?”
“বুঝেছে কিনা জানি না।তবে তৈরি থাকুন। মেহু মোটেও মিষ্টির মতন না।তার লক্ষণ দেখে বোঝা যাচ্ছে ভীষণ রকমের জেদী হবে এই মেয়ে।”
চলবে…
[দুঃখিত পর্বটা এলোমেলো হয়েছে]