চন্দ্র’মল্লিকা ৪৩
লেখা : Azyah_সূচনা
হীনতার সংসার বেশ ভালো না হলেও।চলছে! অন্যান্য মাসের চেয়ে ব্যতিরেক সময়টা। অতিরিক্ত কাজ থেকে আজ রেহাই পেলো।একমাসের বেতন নিয়েছে বলে ছয়মাস অতিরিক্ত কাজ করে উসুল করলো মাহরুর।আজ ডিরেক্টর শরিফুল রেগে গেছেন মাহরুরের উপর।অহেতুক বাড়তি কাজ কেনো? তারাতো তাকে বলেনি বেশি কাজ করতে?কয়টা টাকা বেশি পাওয়ার আশায় যে মাহরুর নিগ্রহ শুরু করেছে সেটা কি আর ডিরেক্টর বুঝবে?ঘরের খরচ,মিষ্টির স্কুলের বেতন, মেহুলের দেখভাল থেকে শুরু করে বাদবাকি সবকিছু মিলিয়ে বিগত ছয়মাস গিয়েছে দুর্বিষহ।আজ মেয়েটার মুখে প্রথমবারের মতন খাবার তুলে দিবে।শুনেছে মানুষ নাকি ঘটা করে আয়োজন করে এই দিনে।কে জানে নিয়ম নাকি কুসংস্কার? মাহরুরের এসব চেতনা মস্তিষ্কে আনার সময় নেই।
এক সপ্তাহের বাজার হাতে হাঁটছে রেদোয়ান আর মাহরুর।নিজের প্রতি অভিযোগ জানালো।এখনও অফিসের প্রয়োজন মোতাবেক ল্যাপটপ কিনতে পারেনি।
রেদোয়ান উত্তরে বলে, “টাকা হলে অবশ্যই কিনে নিবে।
তাড়াহুড়োরতো কিছু নেই”
“টাকাটা হবে কখন?একই নিয়মেই চলছে সব!”
“জীবনের উপর এত নিরাশ হয়ো না মাহরুর।খারাপ কিছুর মধ্যেও ভালোর আশা করতে হয়।”
“আমার নিজের জন্য চিন্তা নেই।নাই চন্দ্রের জন্য।ওকে আমি দুমুঠো ভাত খাইয়ে রাখলেও কোনোদিন অভিযোগ করবে না।আমার যত দুশ্চিন্তা আমার মেয়েদের জন্য।সামনে ওদের একটা ভবিষ্যৎ আছে।”
“হচ্ছেতো মাহি।ধীরেধীরে আরো হবে।আগে কোনো পথ ছিলো না।এখন আশার আলো আসে তোমার ঘরে।ভালো চাকরি পেয়েছো।নিজের ব্যবসা করছো।সময় লাগবে কিন্তু সাফল্যের মুখ দেখবে আমি জানি।” কাধে হাত রেখে বলল মাহরুর।
মাহরুর মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো।এই দীর্ঘশ্বাস অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে এসেছে।কথা বাড়ালো না।বললো,
“বাড়ি চলো। চা খাবে”
“সেখানেইতো যাচ্ছি।কেনো তুমি জানো না?”
“নাতো”
“ভাইজির মুখে স্বয়ং তার মনি খাবার তুলে দিবে।গিয়ে দেখবো শিরীন আর আমার ল্যাদা বাচ্চারা সেখানে হাজির।”
বসতে শিখেছে মেহুল।ধীরেধীরে হাত পা নড়চড় করে। মেহুলের সাথে মিষ্টিটা হয়ে উঠেছে লক্ষী বাচ্চা। বোনের দায়িত্ব ঘাড়ে নিচ্ছে।মায়ের সাথেসাথে নিজেও দেখভাল করে ওর।আজকাল সে ভীষণ ব্যস্ত। মাহরুর পড়াতে পারে না।স্কুল থেকে আসার পথে শিক্ষিকার বাসায় পড়ে তারপর ফিরে।শুধু খাবারের অনীহাটাই রয়ে গেলো। মাহরুর তাকে মেহুলের দোহাই দিয়ে দিয়ে খাওয়ায়।
ঘরে এসে দেখলো তার কন্যাদ্বয় একই সাথে;একই ধরনের কাপড় পড়ে বসে আছে।শুধু মাপের তফাৎ। মাহরুরকে চোখে পড়তেই কি যেনো হলো। মেহুল হাত তুলে দিলো।কোলে চড়বে বলে নিঃশব্দে ইশারা করে যাচ্ছে।তার দেখাদেখি নকল করলো মিষ্টি।
আর বললো, “মেহু তুমিতো কথা বলতে পারো না।দেখবে আমি এখন কথা বলে মাহি বাবাকে ডেকে নিবো।”
এই সময়টায় মাহরুর তাড়াহুড়োয় থাকে।কখন হাত মুখ ধুয়ে এসে একজোড়া চাঁদকে বুকে জড়াবে।আজও তাই।হাত মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে একটানে শার্ট পাল্টে নেয়। টিশার্ট পড়ে বিছানার মধ্যিখানে বসেছে।একপাশের উরুতে এসে বসলো মিষ্টি অন্যকোলে মেহুল।নব্য চঞ্চলতায় মেতে মেহুল হাত পা তুলে মাহরুরের মুখ বরাবর এসে হাজির।ছোট্ট হাতে খামচে ধরলো দুইগাল।মিষ্টির মায়া হলো। মেহুল হাত সরিয়ে নিতেই গালে হাত বুলিয়ে দেয়।
বলে, “তুমি ব্যাথা পেয়েছো মাহি বাবা?”
“প্রথমে ব্যথা পেয়েছিলাম।এখন আমার বড় মেয়ে হাত বুলিয়ে দিয়েছে।সব ব্যথা ভ্যানিশ!”
“তাই?”
“হ্যাঁ।”
মিষ্টি বুদ্ধিমতির মতন বলে উঠলো, “মেহুতো ছোট মাহি বাবা।না বুঝে ব্যথা দিয়েছে।”
মাহরুর মিষ্টির মুখে বুঝদার কথা শুনে ভ্রুদ্বয় উচু করে। চমকিত খানিকটা।হয়তো মেয়েরা খুব তাড়াতাড়িই বড় হয়ে যায়।এই ভাবনার মাঝে আসলো আরেক ভাবনা।এই দুজনকে একদিন বিদায় দিতে হবে।অন্যের ঘর আলোকিত করবে তারা।একা রয়ে যাবে মাহরুর আর মল্লিকা।এসব চিন্তায় মন খারাপ হতেই নিচ্ছিলো ঠিক তখন কল্পনায় মাহরুর নিজের মাথায় নিজে চাপড় মারলো।মনে মনে বললো এখনও অনেক দেরি মেয়েদের বিয়ের।এখন এসব ভাবার সময় না।
শিরীন বাবা মেয়েদের মধ্যিখানে বলে উঠে, “বাপকে পেলে আর কোনো হুশ থাকে না দুই বুড়ির।এইযে আমি কতক্ষন যাবৎ এসেছি?একটা বার যদি আমার কোলে আসতো? তাকালোও না একবার।”
“তুই যে ঝগড়ুটে” মাহরুর জবাব দিলো।
“বেশি কথা বলবে না ভাইয়া।এই বয়সে মারামারি করতে চাও নাকি?”
“আমি একটা দিলে পাঁচতলার নিচে গিয়ে পড়বি”
“আমার ব্যাকআপে আমার জামাই আছে।”
রেদোয়ান এর দিকে চাইলো সকলে।ততক্ষনে রেদোয়ান হাত সারেন্ডার করেছে।সে এসবে নেই মাথা নেড়ে বলে দিলো।নিজেকে সরিয়ে নিলো ভাই বোনের যুদ্ধর মধ্যে থেকে।শিরীন জোর করেই মেহুলকে কোলে নিয়েছে।রমজান সাহেব,ফরিদা বেগম এবং রহিম মিয়া ও জোবেদা খাতুনও এসেছেন। দুলালও আসবে কিছুক্ষনের মধ্যে।
মেহুলের মুখে নিজ হাতে খাবার তুলে দিলো শিরীন।প্রথমবারের মতন ভিন্ন কোনো খাবারের স্বাদে নাক মুখ কুচকে নেয় মেহুল।তার বাচ্চা মুখে এমন প্রতিক্রিয়া দেখে সবাই একত্রে হেসে উঠলো।ফরিদা বেগম মল্লিকাকে বুঝিয়ে পড়িয়ে দিতে লাগলেন।কি করে খাওয়াতে হবে তাকে।আগামীকাল তারা ফিরে যাবেন।তাই আগেই তাগাদা দিলেন।
মল্লিকা আকস্মিক হেসে উঠে।মেয়ের হাসি দেখে ফরিদা বেগমও মুখ কুচকে নেয়।
বলে, “কি হলো?হাসছিস কেনো?”
হাসি থামিয়ে উত্তর দেয় মল্লিকা, “আম্মা তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছো আমি নতুন মা নই।আগেও এসব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি।কাকে শেখাচ্ছ?”
কপালে হাত রাখেন ফরিদা বেগম। সত্যিইতো! মিষ্টিকে লালন পালন করেছে মল্লিকা।সেখানে শেখানো পড়ানোর কিছু নেই।মিষ্টির জন্ম থেকে বেড়ে উঠার সময়কালে তাদেরকে কাছে পায়নি রমজান সাহেব এবং ফরিদা বেগম। হাতে গোনা যাবে।মাত্র দুই থেকে তিনবার দেখা হয়েছে। বাগানবাড়িতে তাদের আসা যাওয়া ছিলো রেহালা বেগমের কাছে অপছন্দনীয়।একবার সরাসরি বারণও করেছিলো।সেই চিন্তায় হয়তো মেয়ের মা হওয়ার সময়টাকে উপভোগ করতে অনেকটা পেছনে পড়ে গেছে।
মল্লিকা মাকে জড়িয়ে ধরলো।কি করে যেনো বুঝে গেলো মায়ের মনের ভাবনা।জড়িয়ে বলতে লাগলো,
“আম্মা!পুরোনো কথাগুলো আর পূনরায় মনে করবে না।”
ফরিদা বেগমও উত্তরে বলেন, “ওসব আমি মনে করলেও গায়ে মাখি না।”
“আর ক’ টাদিন থেকে যেতে?”
“মেয়ের শশুরবাড়িতে আর কতদিন বল!আবার আসবো।তুই তোর মেয়েগুলোকে সামলে নিস কিন্তু।”
“আমাকে কে সামলাবে মা?”
“মাহি আছে না?”
“আর ওনাকে?” লাজুক স্বরে প্রশ্ন করে মল্লিকা।
“তোরা আছিস কি করতে?”
হাস্যোজ্জ্বল দুটো মুখ।দুজনেই নারী। কন্যা সন্তানের জননী।কারো স্ত্রী।তাদের চেয়ে ভালো একে ওপরের মনের ভাব কে বুঝতে পারবে?চোখে চোখে অনেক বুঝ দিয়ে যাচ্ছেন ফরিদা বেগম।যা পূর্বের সংসারে দিতে পারেননি।সেতো অভিজ্ঞ। অভিজ্ঞতার ঠিকঠাক প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি মেয়ের সংসারে।যেখানে ছিলো মেয়ের মুখ দর্শন দুষ্কর।
___
অনেকদিন পর আজ ছুটির মুখ দেখেছে।সারাদিন ঘুমাবে।আজ মেয়েদের সাথেও সময় একটু কমই কাটানো হবে।দরকার পড়লে মল্লিকাকে আদেশ করবে খাবারটা মুখে তুলে দেওয়ার জন্য।মহারাজ সেজে বিছানা নামক সিংহাসনে পুরো শরীর এলিয়ে দিয়েছে।উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমদেরকে তাড়া করছে যেনো দ্রুত এসে হাজির হয়।তার পিঠের উপরে আরেকজনের অবস্থান। মেহুল এর।বাবার পিঠে চড়িয়ে বসিয়েছে তাকে মিষ্টি।ওজন বেশি নয়।কোনো রকম অসস্তি হলো না মাহরুরের। ভাবান্তরবিহীন একইভাবে শুয়ে আছে।মাঝেমধ্যে ধারালো নখ বসাচ্ছে বাবার উন্মুক্ত পিঠে।এবার বুঝি পিত্তি জ্বলে মাহরুরের।
মল্লিকার উদ্দেশে বলে সামান্য মাথা উচু করে, “ওর নখ কেটে দিতে পারিস না।গতকাল মুখে আঁচড় বসিয়েছে। আজ পিঠের ওপর নকশা করছে”
মল্লিকা তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললো, “মেয়ের এতটুকু অত্যাচার সহ্য হয়না।আমি পেটে নিয়ে মাসের পর মাস ঘুরেছি।”
“আমাকে একা ব্যাথা দেয় সেটা কথা না।ওর নিজের মুখেও নখের দাগ।”
মল্লিকা সরাসরি উত্তর দিলো, “আজ আপনি নখ কেটে দিবেন।”
মেহুল মাথা আকিয়ে বাঁকিয়ে শুনলো। ধপ করে নিজেও বাবার পিঠে উপর হয়ে শুয়ে পড়ল। আহ্লাদ দেখাচ্ছে হয়তো।মিষ্টিও পিছিয়ে নেই।পাশে এসে একই ভঙ্গিতে শুয়ে পড়েছে। দুজনার একত্রিত ভার বহন করে আছে মাহরুর।
বললো, “দেখেছিস কি চালাক?ব্যথা দিয়ে এখন আদর দেখাচ্ছে।….আর বড় জন আরো একধাপ এগিয়ে। ছোটোজন ভুল করে বড়জন ভুলের উপর পর্দা দেয়।”
“উফ চুপ থাকেন!কি সুন্দর লাগছে আপনাদের তিনজনকে।আপনার ফোনটা কোথায়?একটা ছবি তুলি ”
মাহরুর বাম হাত তুলে আঙ্গুলের ইশারায় ফোনের স্থান দেখালো।উত্তর দিতেও আলসেমি লাগছে।উপরে দুজনকে মনে হলো কম্বলের মতন।আরামে আবেশে চোখ বুজে পূনরায়।
মল্লিকা ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।সেও যোগ দিবে তাদের মধ্যে।পাশে গিয়ে বসতে চাইলেই দুলাল আসে।দরজা ধরে হাঁপাতে লাগলো।মুখ দেখে মনে হলো ভীষণ ভীত।মল্লিকা হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়।এগিয়ে যায়।
জানতে চেয়ে প্রশ্ন করে, ” দুলাল? কি হয়েছে?”
“ভাবি!”
মৃদু ঘুমটা যখনই চক্ষে এসে ধরা দিচ্ছিলো ঠিক তখনই দুলালের অস্থির গলায় মাহরুরের কান খাড়া হয়।খুবই সাবধানতার সাথে হাত পেছনে মুড়িয়ে দুই কন্যাদ্বয়কে নামালো পিঠ ঠেকে।
ইতিমধ্যে নিঃশ্বাসের গতি স্বাভাবিক করে দুলাল বললো, “চাচা অজ্ঞান হইয়া গেছে।ওনার ছেলে ফোন দিছিলো।পড়ে কয়জন লোক পাঠাইছে।তারা নাকি এই বাড়ি কিনা নিবো।এই কথা শুইনা রহিম চাচা অজ্ঞান হইলো।চাচী ভাইরে ডাকে।”
বিস্ফোরিত নয়ন মাহরুর আর মল্লিকার।এক মুহুর্ত দেরি করলো না।পাশ কাটিয়ে উঠে গেছে।গায়ে জড়িয়েছে টি শার্ট।কদমের দ্রুততা বাড়িয়ে দোতলায় পা বাড়ায়। মল্লিকা মেহুলকে কোলে তুলে নেয়।নিচে গেলো। মিষ্টিও পিছু নিল বাবা মায়ের।
দুলালকে পাঠানো হয়েছে ডাক্তার ডাকতে। মাহরুর মাটিতে লুটিয়ে থাকা রহিম মিয়ার মাথা তুলে নিজের কোলে রাখলো।পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে বারংবার।জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা।মল্লিকা একহাতে মেহুল অন্যহাতে সামলাচ্ছেন ক্রন্দনরত জোবেদা খাতুনকে।শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।ডাক্তার আসলো বিশ মিনিটের মাথায়। পর্যবেক্ষণ করলো বেশ সময় নিয়ে।
রহিম মিয়াকে ইনজেকশন দেওয়া শেষে কঠোর গলায় ডাক্তার মাহরুরের উদ্দেশ্যে বললেন, “আপনি কি ওনার ছেলে?…. এই বয়সে ওনার এত চাপ কিসের?দেখে শুনে রাখতে পারেন না।ভাগ্য ভালো অতবড় কোনো বিপদ হয়নি।”
মাহরুর ধমকটুকু হজম করে নেয়। সবিনয়ে বলে, “আমি ওনার ছেলে নই ডাক্তার।”
থতমত খেয়ে ডাক্তার বলেন, “অ্যাম রিয়েলি সরি।”
“সমস্যা নেই ডাক্তার।আমি ওনার ছেলের মতনই।কি হয়েছে চাচার একটু বলবেন?”
“অনেক বেশি স্ট্রেসড উনি।কোনো বিষয়ে অনেক চিন্তা করছিলেন।তাছারাও আগের মেডিসিনগুলোও সময়মতো নিচ্ছেন না।”
রহিম মিয়ার বাড়িতে কাজ করেন আরো এখন মেয়ে।ডাক্তারের কথা শুনে বললেন, “চাচাজান এর ওষুধ দেওয়ার দায়িত্ব আমার।তিনদিন ধইরা ওষুধ নিয়া পিছনে ঘুরতাছি।খায় না।খালি কয় এমন কুলাঙ্গার পোলা জন্ম দিছি আমার ওষুধ খায়া বাঁচন লাগবো না আর। বাচ্চাগো মতন জেদ করছে।হইলো তো বিপদ!”
মাহরুর বললো, “আমাকে ডাক দিতে?”
“মনে আসিলো না ভাইজান”
ডাক্তার বললেন, “আপনাদের পারিবারিক কলহ থেকে ওনাকে কিছু সময়ের জন্য দূরে রাখুন।আগের ওষুধ চলবে।নতুন দিয়ে যাচ্ছি। আনিয়ে নেবেন।সাথে পুষ্টিকর খাবার। উনি ঠিক আছেন।আমি আসি”
মাহরুর উঠে দাড়ালো।ডাক্তারের সাথে হাত মিলিয়ে তার সম্মানীটা দিয়েছে।পরপর বললো, “ধন্যবাদ স্যার”
রহিম মিয়া ঘুমোচ্ছেন। মাহরুর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ভাবলো। যার আছে সে মূল্য দেয় না। যার নেই সে হাহাকার করে।রহিম মিয়ার পাশ থেকে সরে জোবেদা খাতুন এর কাছে এসে বসে।
বলে, “বলেনতো চাচী আসলে কি হয়েছিল?”
কান্নার জোর বাড়িয়ে জোবেদা খাতুন উত্তর দিতে লাগলেন, “আমার পোলায় লোকজন পাঠাইছে।তারা আয়া আমগো পুরা বাড়ি দেইখা গেছে।এক সপ্তাহের মধ্যে নাকি নগদ টাকা পরিশোধ কইরা বাড়ি কিনা নিবো।”
“এসব আপনার ছেলে ওই দেশে বসে করছে?”
“হ।এই লোকগুলারে নাকি ফোন কইরা কইছে বাড়ি বেচবো।দেইখা আইতে।দলিলে সই করানো নাকি তার কাছে ওয়ান টু এর ব্যাপার।”
“আপনাদের হুমকি দিয়েছে?”
“গলার সুরতো ওই রকমই ”
মল্লিকার দিকে এক পলক চায় মাহরুর।এই মুহূর্তে শান্তনার পাশাপাশি একটা সমাধান দরকার।এভাবে চলতে থাকলে প্রতিনিয়ত মানুষ এসে বিরক্ত করবে।কথায় বোঝা যাচ্ছে রহিম মিয়ার ছেলে বাড়ি বিক্রি না হওয়া অব্দি ক্ষ্যান্ত হবে না।অবশ্যই কোনো কারণ আছে এর পেছনে।কোনো বিশাল কারণ।
মাহরুর জোবেদা খাতুনকে বললেন, “একটু নিজের মনকে শক্ত করুন।একটা জিডি করে রাখুন পাশের থানায় যেনো কেউ বারবার আপনাদের কেউ বিরক্ত না করে।তাছারাও ছেলেকে এক বাক্যে বলে দিন বাড়ি আপনারা বিক্রি করছেন না।তার সাথে কিছুদিন কথা বন্ধ রাখুন। আপনাআপনি ভুত নেমে যাবে।”
“আমিতো মা।কলিজা জ্বলে আমার।”
“তাইতো বললাম শক্ত হতে।আমার কথায় কিছু মনে করবেন না।আমি আপনাদের ভালোর জন্য বলছি”
“আইচ্ছা!তোমার চাচার হুশ ফিরুক।কথা কমু।”
“আরেকটা কথা চাচী।দলিল সযত্নে রাখবেন।”
___
মধ্যে কেটে গেছে আরো কয়েক দিন। রহিম মিয়া মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মাহরুরকে সাথে নিয়ে গিয়ে থানায় জিডি করেছে জোবেদা খাতুন।সাথে ছেলে বিমুখীও হয়েছেন।কথা বলেননি একদমই।পরিষ্কার গলায় জানান কোনোভাবেই বাড়ি বিক্রি হবে না।
ছাদে পাটি বিছিয়ে মা মেয়েদের আড্ডা চলছে। বালিশের সাহায্যে বসিয়ে রাখা মেহুলের এক বিন্দু সস্তি নেই।বারেবারে এদিক ওদিক হামাগুড়ি দিয়েই চলেছে মেয়েটি।আজকাল সে ভীষণ দুরন্ত;চঞ্চল।মিষ্টি এমন ছিলো না।যেখানে বসানো হতো সেখানেই বসে থাকতো চুপচাপ। রোদ পোহাতে পোহাতে চোখ পড়ে কোমরে দুহাত রেখে দাড়িয়ে থাকা মাহরুরের দিকে।কখনো হাত তুলে শূন্যে কিছু আকাঝুকি করছে।কখনো মাথা বাঁকিয়ে ভাবছে।তাদের ঘরের পাশেই বিশাল জায়গা।পুরোটা জায়গা খালি।কে জানে খালি জায়গায় চেয়ে মাহরুর কি দেখছে?
মল্লিকা ডাকলো নরম কণ্ঠে, “মিষ্টির বাবা?”
হুশ ফিরলো যেনো মাহরুরের।পিছনে ফিরে বললো, “হ্যা?.. বল”
“কি করছেন একা দাড়িয়ে?”
মাহরুরও এসে যোগ দেয়।পাটিতে পা ভাজ করে বসলো।কেটে রাখা আপেলের টুকরো মুখে পুড়ে দিয়ে বললো, “দেখছিলাম আর ভাবছিলাম এই খালি জায়গায় আরো সুন্দর তিনটে ঘর হবে।”
মল্লিকা জবাব দেয়, “হবে কিন্তু করবে কে?রহিম চাচার ছেলে?সেতো বাড়ি বিক্রির জন্য পাগল।”
“সেটা অবশ্য ঠিক”
“আপনি তাহলে শূন্যে আকাআকি কেনো করছিলেন।”
“ভাবছিলাম কেমন ডিজাইন হতে পারে।”
মল্লিকা আবারো প্রশ্ন করলো, “যেখানে বাড়ি থাকবে কিনা নিশ্চয়তা নেই সেখানে ডিজাইন ভেবে কি হবে?আপনি ভেবেই বা কি করবেন?”
“হুম” ছোট্ট করে উত্তর দেয় মাহরুর।
গম্ভীর মাহরুরের মুখখন্ড। নেত্র পল্লব নিম্নে ঝুঁকে আছে।মস্তিষ্কে কোনো চিন্তা থাকলে ঘাড় চেপে বসে থাকে।মল্লিকা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো তাকে।ভাবুক তার ভঙ্গি।
মিনিট খানেক পর প্রশ্ন করলো, “আপনি কিছু ভাবছেন কি?”
“হুম?…না!”
চলবে….