চন্দ্র’মল্লিকা ৪২
লেখা : Azyah_সূচনা
“আগে থেকে পরিষ্কার করছি একটা কথা চন্দ্র।কখনো ভাববি না আমি আমার নিজের মেয়েকে মিষ্টির চেয়ে বেশি ভালোবাসবো। ধারণাটা কোনোদিন মস্তিষ্কে আসতে দিবি না। মেহুল ছোট হতে পারে ওরদিকে একটু বেশি যত্ন দেখাবো।তবে মিষ্টির ক্ষেত্রেও কোনো অনীহা হবে না।ভুলে যাস না সবার আগে মিষ্টিই আমাকে বাবা বলে ডেকেছে।আর ওই ডাকটা আমার কাছে সর্বদা অমূল্য থাকবে।”
চক্ষু ফেরায় মল্লিকা।মাত্রই মাহরুরের রাশভারী কন্ঠ এই বাক্যগুলো ছুঁড়েছে।কর্ণপাত হতেই মস্তিষ্ক জাগ্রত হলো। হঠাৎ করে এমন বলার কি অর্থ দাঁড়ায়?কেনো আসছে হুট করে এসব কথা?
মল্লিকা তৎক্ষনাৎ উত্তর দেয়।বলে, “আমি কল্পনায়ও এটা ভাবতে পারিনি আপনি মিষ্টি আর মেহুলের মধ্যে ভেদাভেদ করবেন।”
নিশির আধাঁরে সাদা রোশনি জ্বালানো চিলেকোঠার ঘরটায়।অনেকদিন পর এই ঘরটায় নিজেদের অবস্থান।ভালো লাগায় ভরপুর।এর মধ্যে মাহরুরের বাক্যযুগলকে কঠোর মনে হলো। কাঠিন্যর আভাস পাওয়া গেলো।
মাহরুর উত্তর দেয়, “মানুষের মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।ভাবতে না চাইলেও ভাবনা চলে আসে।”
“কখনো না। মিষ্টিও আপনার মেয়ে আর মেহুলও।”
“সেটাই নিজের মাথায় গেঁথে ফেল।আর কেউ কটূক্তি করতে এলে তার মস্তিষ্কেও গেড়ে দিবি।”
মল্লিকা মলিন মুখে বলে, “রাগ করছেন কেনো?”
“রাগ করছি না।কঠোর হয়ে বলছি।এসব ব্যাপারে একটু রুক্ষতা অবলম্বন করতে হয়।নাহয় মিষ্টভাষা মানুষ বেশিদিন মনে রাখে না।”
মেহুলকে মাহরুরের কোলে তুলে দিলো মল্লিকা।এখানে চলবে তার রুক্ষতা?একদমই নয়।মল্লিকা মিনমিনে গলায় আওড়ায়,
“আপনার রুষ্ট – মিষ্ট সকল কথাই আমার মনে থাকে।”
মাহরুর ইচ্ছেকৃত জানতে চাইলো, “কেনো?”
বিনা দ্বিধায় মল্লিকা জবাব দেয়, “কারণ আমি আপনার জীবনে বিশেষ একজন।”
মাহরুর উত্তর দিলো, “আমার জীবনে বিশেষ দুইজন।একজন আমার কোলে আরেকজন তোর পাশে হা করে ঘুমিয়ে আছে।”
মল্লিকা কপাল কুঁচকে বললো, “অনীহা করছেন আমায়?”
ভাবলেশহীন মাহরুর বললো, “করছি।তো?”
“করলেও লাভ নেই।অনন্তকাল আমার সাথেই থাকতে হবে।”
লম্বা শ্বাস টেনে নেয় মাহরুর।দ্রুত ছেড়েও দিলো। মেহুল এর ছোট্ট হাত মাহরুরের বলিষ্ঠ তর্জনী আঙ্গুল চেপে আছে।ঘুমোচ্ছে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে। এতো চোখের শান্তি। নীরবতা চলছে সম্পূর্ণ কামরা জুড়ে।মল্লিকা দেখছে একে একে তিনজনকে।
সময়ের ব্যবধানে মাহরুর বলে, “দ্রুত সুস্থ হ চন্দ্র।যত্নের প্রয়োজন আমার।ভীষণ রকমের ক্লান্ত আমি”
মাহরুরের নিদারুণ চাওয়া।মল্লিকা ভাবলো এখন কি দুঃখ পাওয়া উচিত মাহরুরের এরূপ কথায়?তবে হলো না।বেশ ভাল লাগলো তার এই কথাটা।নিজে থেকে যত্ন চাইছে।এই কথাটিও ভালো লাগায় ঘেরাও করতে পারে?হয়তো পারে।এক দীর্ঘশ্বাস মল্লিকাকে শক্ত করলো।দ্রুত কাটাতে হবে কায়ার অদৃশ্য অসুখ। দেবীরূপে তার একান্ত মানবের বাহু জড়িয়ে সামলে নিতে হবে।বলে মা হওয়া সহজ নয়।কত কষ্ট! কত যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়।বাবা হওয়া কি এতই সহজ? শারীরিক নয় মানসিক যন্ত্রণা বলেও কিছু আছে।
“আপনার এই চাওয়া খুব শীগ্রই পূর্ণ করবো।এবার আপনার যত্ন পাওয়ার পালা।”
পুরো দমে অফিসের কাজে মজেছে মাহরুর। ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিজের উপর জুলুম চালাচ্ছে।সুযোগ দেওয়া যাবে না কাউকে।অনেকবার সাহায্য করেছে ডিরেক্টর।কথা দিয়েছে যেহেতু সেটা পূর্ন করার দায়িত্ব তারই।এরমাঝে যোগ হলো আরেক দুঃখ।নিজের ফুটফুটে সন্তানকে সময় দিতে পারছে না।অনেক কাজ পেন্ডিং।বাড়ি ফিরে দেরিতে।এসেই দেখে ঘুমিয়ে আছে তার হৃদয়ের দুই অংশ।ফরিদা বেগম আর রমজান সাহেব থাকায় অনেকটা চিন্তা কমেছে।সামলে নেয়।
সন্ধ্যা সাতটায় সম্পূর্ণ অফিস খালি।এমডি স্যার,কয়েকজন সিনিয়র আর কিছু স্টাফ ছাড়া কেউ নেই।যান্ত্রিক কম্পিউটার এর সামনে বসে আঙ্গুলের সাহায্যে কি বোর্ডের কি চাপছে।ঠিক তখনই তার ডিরেক্টর শরিফুলের আগমন।
এসে বললেন, “মিষ্টার মাহরুর?”
“জ্বি স্যার” তড়িৎ গতিতে উত্তর দেয় মাহরুর।
“আপনি কি ল্যাপটপ কিনতে পেরেছেন?”
দৃষ্টি নত করে মাহরুর মাথা দোলায়।বলে, “না স্যার।”
“ল্যাপটপ দরকার।আমি অফিসের পুরোনো একটা ল্যাপটপ আপনাকে দিচ্ছি।আপনি আপাদত সেটায় কাজ করেন।একটু পুরোনো মডেল।আপনি কিনলেই ফিরিয়ে দেবেন।কোনো সমস্যা আছে?”
“না স্যার কোনো সমস্যা নেই।”
“আচ্ছা যাওয়ার পথে নিয়ে যাবেন।”
“ওকে স্যার।”
শরিফুল চলে যেতে নিয়েও ফিরে আসেন।বলেন, “ওহ হ্যা?আপনার মেয়ে কেমন আছে?”
“আলহামদুলিল্লাহ স্যার ভালো আছে।”
“ওকে একদিন আসবো।ইউ টেক কেয়ার।বায়”
চারিদিকে শীতশীত ভাব।তোড়জোড় চলছে নতুন মৌসুমকে বরণের।বাতাসের সাথে মিশে আসে এক নিত্য সুভাষ।প্রেম পায় এই ঘ্রাণে।পকেটে হাত গুজে হাঁটতে হাঁটতে হাসলো মাহরুর। অভ্যন্তরীণ অনুভূতি আশ্চর্য্যতম। বয়েস বেড়ে দাঁড়িয়েছে চৌত্রিশে।আর অন্তর কিনা নব্য প্রেমিকের বেশ ধরেছে?এই সময়টা ভীষণ অদ্ভুত।কিশোরী মল্লিকার ন্যায় হৃদয়ে প্রজাপতিরা উড়ে বেড়াচ্ছে।অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথ দৈর্ঘ্যের মাঝে কত অনুভূতিরা ভিড় জমাতে শুরু করলো।ইচ্ছে হচ্ছে দুজনায় হাতে হাত রেখে উপভোগ করুক রাতের শহর।অল্প বয়সী প্রেমিক যুগলের ন্যায় করুক কিছু অবুঝ কর্মকাণ্ড।যা হবে অন্যের চোখে ছেলেমানুষী।
ঘ্রাণেন্দ্রি়য়তে ভেসে এলো ফুলের সুভাস।আর দর্শনশক্তিতে একগুচ্ছ চন্দ্রমল্লিকা ফুল।কোনো ভাবনাবিহীন কদম এগোয় সেখানে।টাকার কমতি।সেখানে তোয়াক্কা না করে কিনে নিল একটা ফুল।
ফুল বিক্রেতা বৃদ্ধা নারী মুচকি হেসে জানতে চাইলেন, “প্রেমিকার লেইগা নিবেন?”
মাহরুর ফটাফট এক কদম পেছনে হটে বৃদ্ধার উদ্দেশ্যে বললো,
“দেখেন কাকী?আমাকে দেখলে মনে হয় আমি কারো প্রেমিক?”
“হইবো না কেরে?মেলা সুন্দর চেহারা।”
“আপনিও কিন্তু সুন্দর কাকী?” দুষ্টুমির সুরে বললো মাহরুর।
“যাহ!কি কয় না কয়।নিবেন কার লেইগা হেইডা কন দেহি?”
“আমার রূপবানের জন্য নেবো।”
দাঁত বের করে হেসে বৃদ্ধা জবাব দিলেন, “তয় আমি কি ভুল কিছু কইছি? প্রেমিকাইতো।”
“প্রেমিকা না আমার মেয়েদের মায়ের জন্য নিবো।আর হ্যা চন্দ্রমল্লিকা ফুল দিবেন।আমার রূপবানের নাম চন্দ্রমল্লিকা।”
যেনো বৃদ্ধা বেজায় খুশি হলেন। চট জলদি দুটো টকটকে লাল চন্দ্রমল্লিকা ফুল নিয়ে স্কচটেপে মুড়িয়ে মাহরুরকে দিলেন।
আর বললেন, “তিরিশ টাকা”
মাহরুর একশো টাকার একটা নোট বের করে দিলো তাকে।বৃদ্ধা বললেন,
“ভাংতি নাই।আজকে বেচাকিনি হয় নাই।”
“রাখেন পুরোটাই।আর এখন বাড়ি চলে যান।ঠান্ডা পড়ছে ধীরেধীরে।”
“আমারে দিলেন পুরা টাকা?”
“হ্যাঁ”
“আইচ্ছা”
একশত টাকা এই যুগে বড় অংক বলে ধরা হয়না।ছুঁয়ে দিলেই উধাও।তবে বৃদ্ধা নারী ওই টাকাই তুষ্ট।অল্প সময়ে যেনো তার সাথে জীবনের টুকটাক কথা আদান প্রদান হয়ে গেলো।হাসি মুখে বিদায় নিয়ে আর মিনিট পাঁচেক এর পথ হেঁটে বাড়ি ফিরেছে মাহরুর।
আওয়াজ দিতে দিতে আসলো মাহরুর।বললো, “আমার বাচ্চাদুটো কি করে?”
মিষ্টি লাফিয়ে উঠে। ঝাঁপ দেয় মাহরুরের কোলে।চুপচাপ মেহুল।কান অব্দি আওয়াজ হয়তো পৌঁছেছে।তবে তার কি সাধ্য আছে ঝাঁপ দেওয়ার?চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খুঁজছে আসলো কোথা থেকে তার বাবার আওয়াজটা।ফরিদা বেগম মাহরুরকে দেখেই দ্রুত চা বসিয়ে দিলেন চুলোয়।মল্লিকা কাঁধের ব্যাগ নিয়ে জায়গামতো রেখে দিয়েছে। মাহরুর মিষ্টিকে নামায়। ঝড়ের গতিতে হাত মুখ ধুয়ে ফিরে এলো আরেকজনের কাছে।বড় মেয়েকে একপাশে রেখে ছোট মেয়েকেও কোলে নেয়।
মল্লিকার পানে চেয়ে বললো, “আজ ঘুমায় নি কেনো? ওতো রাত জাগে না।”
মল্লিকা কাপড় ভাজ করতে করতে উত্তর দিলো, “কে জানে?হয়তো আপনার অপেক্ষায় ছিল।”
মিষ্টিও আহ্লাদী গলায় বলে উঠলো, “আমিও অপেক্ষা করছিলাম মাহি বাবা।”
“আমি জানিতো মা।তুই আর মেহুল বাবু আমার জন্য অপেক্ষা করে।আর কেউ করে নাকি?”
মিষ্টি দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বললো, “কেউ করে নাহ!”
মল্লিকা ফোড়ন কেটে বললো, “যে অপেক্ষা করেনা তার জন্যই আবার ফুল আনা হয়।”
ফরিদা বেগম মুখে আঁচল চাপলেন।হাসছেন হয়তো আবডালে।মাহরুর এর দৃষ্টিগোচর হয়।মল্লিকা অজ্ঞাত। মনভোলা।এটাও ভুলতে বসেছে পাশেই তার মা জননী বসে। অবলীলায় বলে ফেললো কথাটি। মাহরুর চোখ রাঙায়।ইশারা করে ফরিদা বেগম এর দিকে।মল্লিকা তড়বড় দাঁত দিয়ে জ্বিভ কাটলো।মুখ ঘুরিয়ে ধীর গতিতে অন্যদিকে ঘুরে গিয়েছে।
যত রাতই হোক আজ দোকানে যেতে হবে।ভাড়া দেওয়ার সময় এসেছে। মাহরুর চা খেয়ে চলে গেলো।দুলাল এর সাথে বসে আছে দোকানের মালিক।এসে গেছে ভাড়া আদায় করতে।
মাহরুর গিয়ে সবার প্রথমে হাত মেলালো। সালাম জানিয়ে বললো,
“সাজ্জাদ ভাই এ মাসের ভাড়াটা এখন দিতে পারছি না। জানেনইতো আমার মেয়ে হয়েছে। হাসপাতালে অনেক খরচা গেছে।আপনি কোনোভাবে এই মাসটা…”
“সামনের মাসেতো দ্বিগুণ হইবো টাকা” সাজ্জাদ এর কথার ভঙ্গিতে বোঝা গেলো মাহরুরের কথায় তিনি সন্তুষ্ট নন।টাকার ক্ষেত্রে তিনি কোনো সমস্যা দেখেন না।
মাহরুর বুঝতে পেরে বললো, “আচ্ছা ভাই আমার এডভ্যান্স এর টাকা থেকে কেটে রাখুন।অনেক সমস্যায় না পড়লে মাসের এক তারিখেই টাকাটা দিয়ে দিতাম।”
সাজ্জাদ ছোট্ট করে উত্তর দিলো, “হুম”
“কিছু মনে করবেন না ভাই।”
“আচ্ছা। আসি তাহলে।”
“ঠিক আছে ভাই।”
__
“আমার মল্লিকা বনে,
যখন প্রথম ধরেছে কলি
আমার মল্লিকা বনে।
তোমারো লাগিয়া তখনি, বন্ধু
বেঁধেছিনু অঞ্জলি।
আমার মল্লিকা বনে, আমার মল্লিকা বনে,
যখন প্রথম ধরেছে কলি
আমার মল্লিকা বনে।”
মাহরুরের কণ্ঠে মাতাল মল্লিকার অন্তর। পলকবিহীন আধাঁরে মুখ চেয়ে।চোখের নিচের স্পষ্ট কালি যে বেমানান।রোগা দেখাচ্ছে মুখটা।তবে কণ্ঠে সমস্ত মাধুর্য্য ঢেলে ভেলায় ভাসালো চন্দ্রমল্লিকাকে।কতদিন!কতদিন পর এভাবে একত্রে মুখোমুখি দুজন?
মাহরুর থেমে গেলো।মল্লিকা বললো, “থামলেন কেনো?ভালো লাগছিলো তো ”
“প্রেমালাপ করতে চাইছি।” সোজাসুজি জবাব দেয় মাহরুর।ভারী কণ্ঠে।
মল্লিকা ওষ্ঠধরের উপরে হাত রেখে হাসলো। ক্ষণিকের জন্য নামিয়ে নেওয়া দৃষ্টি তুলে পূনরায়।বলে,
“হঠাৎ এই ইচ্ছে কেনো?”
“কি জানি!আজ শীতের এক দমকা হাওয়া শরীর ছুঁতেই নিজের মধ্যে ভিন্নতা অনুভব করলাম।সারা রাস্তা হেসেছি।কি ইচ্ছে হচ্ছে আমার জানিস?”
“কিহ?”
“আবার নতুন করে প্রেমের সূচনা করি।ধরে নেই তুই আমায় চিনিস না।আমি তোকে চিনি না।কোনো সম্পর্ক নেই আমাদের মধ্যে।অন্যভাবে গল্পটা সাজাবো।তুই হবি অষ্টাদশী যুবতী আমি হবো তাগড়া যুবক।হুট করে শীতের এক সন্ধ্যায় আমাদের দেখা হবে।এক বিশাল গাছের নিচে। যার পাতাগুলো শুকিয়ে লুটিয়ে থাকবে জমিনে।”
আগ্রহী মল্লিকা শুনতে ব্যস্ত ছিলো। মাহরুরের থেমে যাওয়া দেখে গাল থেকে হাত নামায়।বলে, “তারপর?”
“তারপর তুই বল।কিভাবে গল্পটা এগোনো যায়?”
চিন্তন জগতে ডুব দিলো মল্লিকা।মুখখানা তুলেছে সামান্য শূন্যে।নেত্র পল্লব পিটপিট করে জোর দিচ্ছে মস্তিষ্ককে।আজ মাহরুর অপেক্ষায় মুখ চেয়ে রইলো।ভাবুক একটু।তার এই ভাবুক মুখটাও বেশ সুন্দর।
মল্লিকা দীর্ঘ সময় পর মুখ খুলে,
“তারপর আমাদের দেখা হতেই থাকলো।একবার, দু’বার,বারবার।ঠিক সেই জায়গাটায় যেখানে প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিলো।”
মাহরুর তাল মিলিয়ে বললো, “তারপর একদিন আমাদের দুজনেরই মনে হলো?এই বারেবারে দেখা কি কাকতালীয়?নাকি প্রকৃতির কোনো ইঙ্গিত?”
মাহরুরের বুকে পিঠ ঠেকিয়ে বসে। মাহরুর মুখ গুজলো তার ঘাড়ের উপরিভাগে।বিচরণ চালায়। মৃদু কম্পিত মল্লিকা জবাব দেয়, “নাহ! কাকতালীয় নয়। প্রকৃতি আমাদের ইঙ্গিত দিচ্ছে।যা আমরা একইসাথে বুঝে অনুভব করবো।”
মাহরুর বলে, “এতোদিনতো দেখা হলো। আজ নাহয় কথা হোক?প্রথম কদম আমিই এগোবো।”
“আমি প্রথমে অসস্তি অনুভব করবো।চোখ এড়াবো বারেবারে।তারপর আপনার কথার ছলে ফেঁসে দুয়েক বাক্য আমিও আওড়াবো”
“প্রতিদিনের দেখা কথায় রূপান্তরিত হবে।কথা থেকে শুরু হবে গল্প।বন্ধুত্ব হবে।”
“তারপর আমাদের একে অপরের অভ্যাস হয়ে যাবে।”
“অভ্যাসটা বদঅভ্যাসে পরিণত হয়ে বুঝে নিবো চন্দ্রকে নিয়ে বুকের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে অন্যরকম অনুভূতি।তবে অনুভূতি প্রকাশে করে ফেলবো বিলম্ব”
লম্বা নিঃশ্বাস নেয় মল্লিকা।কি যে ভালো লাগছে তার!এই আলাপন ভীষণ সুন্দর।তাল ছেড়ে দিল না। বরাবরের মতই উত্তর দিল,
“অনুভূতি যেদিন জানান দেবেন?আমি ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে খড়খড়ে জমিনের দিকে চেয়ে থাকবো।আমাদের মধ্যে কি কোনো সমস্যা হবে?”
“একদম না। ঝামেলাবিহীন গল্প হবে।” কাটকাট গলায় উত্তর দেয় মাহরুর।
“আপনি আমার উত্তরের আশায় থাকবেন?”
“অপেক্ষায় শুকিয়ে পাড় করবো এক আস্ত রৌদ্রজ্জ্বল মৌসুম।”
“এক বৃষ্টির সন্ধ্যায় সেই মৃত গাছে নতুন করে সবুজ পাতা আসবে।”
মাহরুর প্রশ্ন করে, “তারপর?”
“তারপর সেই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় ভিজে একাকার হয়ে স্বীকৃতি দিবো ভালোবাসাকে”
“বিশ্বজয়ের হাসি মুখে দ্রুত তোকে নিজের নামে লিখিয়ে নেবো।যত ঝড় আসুক,বাদল আসুক।কেড়ে নিয়ে এই চিলেকোঠায় সুখের সংসারে মজবো।”
কল্পনার জগতে হারায় দুজনায়।নিজেদের অনুভব করছে গল্পে।এই গল্পের অংশ তারা দুজন।পরিচয় থেকে পরিণয় সবটাই দুজনার বদ্ধ চোখের সামনে স্পষ্ট।এতটা গভীর কি করে হয় এই কল্পনা।চোখের ফ্রেমে ভাসছে নতুন চিত্র।মনে হলো ওই জগতেই আছে।আশপাশ শূন্য।লম্বা শুকনো গাছ তলায় একেক অপরের দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করে চেয়ে আছে।
চলবে…