চন্দ্র’মল্লিকা পর্ব-৩১+৩২

0
413

চন্দ্র’মল্লিকা ৩১
লেখা : Azyah_সূচনা

কিছু মানুষের জীবন চলে একই গতিতে। মধ্যেমধ্যে দিক পরিবর্তন হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে বিশেষ কোনো অবস্থানন্তর হয়না।নতুন দোকানটা দুলালের হাতে তুলে দিয়ে এসেছে।সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রহিম মিয়া মাঝেমধ্যে দেখাশুনা করবেন আশ্বাস দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কার্পণ্য বোধ করেনি মাহরুর।জীবনে যদি খারাপ মানুষের দর্শন হয়ে থাকে তাহলে ভালো মানুষও পেয়েছে অনেক।

ঈদের লম্বা ছুটি কাটিয়ে অফিসের ডেস্কএ এসে বসে।ব্যাগ থেকে ছবিটা বের করে যথাস্থানে রাখলো।কাজের ব্যস্ততায় তার মন ভালো করার খোড়াক এটি। কাগজপত্র সব পূনরায় ঘাটাঘাটি করতে করতে একটি চিরকুট হাতে পায়। মাহরুর বুঝে উঠতে পারলো না এটি কি?চিন্তা ভাবনা করে চিরকুট খুলেই দেখতে পারে এক লাইনের একটা লেখা।

“আপনি ভীষন রকমের সুদর্শন পুরুষ মিস্টার মাহরুর।যেকোনো হৃদয় আপনার উপর আটকে যেতে পারে”

তড়িৎ গতিতে চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ এসে হাজির।এই ধরনের ফাজলামো কে করতে পারে?অবশ্যই কোনো নারী? চিরকুটটি মুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেয় মাহরুর।নিজের কাজে মনোযোগী হয়।

কয়েক ঘন্টা পর হাতে লাঞ্চ বক্স নিয়ে ক্যান্টিনের দিকে এগিয়ে গেলো মাহরুর।কানে ফোন চেপে আছে।এটাও তার একটা রুটিনের মধ্যেই পড়ে।চন্দ্র আর মিষ্টি খেয়েছে কিনা না জানলে তারও পেটের ভাত হজম হবে না।ক্যান্টিনে বসে মল্লিকার উদ্দেশ্যে বললো,

“বাড়ি ফিরেছিস ঠিক মতন?”

“হ্যাঁ।মিষ্টির ক্লাস টিচার বললো কি যেনো একটা অভিভাবকদের মিটিং আছে বৃহস্পতিবার বিকেলে।আপনার থাকতে হবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে থাকবো।খেয়েছিস তোরা?”

একই থালায় মা মেয়ে খাবার খেতে বসেছে। মাহরুরের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বললো, “খাচ্ছি।”

“আমিও খাচ্ছি।আজকের খাবারটা বেশ মজা হয়েছে”

নিঃশব্দে হাসে মল্লিকা।তার এই ছোটোখাটো কথাগুলোও হৃদয়ে তৃপ্তি দেয়। যার জন্যে যতনে রান্না করা সে যদি প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয় তাহলে আর কি প্রয়োজন? মাহরুর এই পন্থাটা বেশ ভালোই জানে।

মাহরুর বললো, “আচ্ছা খেয়ে নে।কোনো দরকার পড়লে কল করিস।”

“আচ্ছা।আপনি সাবধানে আসবেন”

মাহরুর খাবার শেষে সাথের একজন কলিগের সাথে কথা বলছে।সে জানালো আজ ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ডেকেছে এমডি স্যার।কথা বলতে বলতে দুজন যারযার জায়গায় এসে মিটিং এর জন্য তৈরি হতে লাগলো। এমডি স্যার কাজের প্রতি অনেক কড়া।সবার রেসপন্স ভালো চান তিনি।রেখে যাওয়া ফাইল আবার খুলে বসতেই আরো একটি চিরকুট পায় মাহরুর।পূর্বের তুলনায় বিরক্তি দ্বিগুণ হলো।ফাজলামো নাকি?এটাও তার জন্যই এসেছে বুঝতে বাকি নেই।

“আপনার প্রশংসা করলাম।অথচ আপনি আমার লেখা চিঠি ফেলে দিলেন!কোনো জবাব দেওয়াতো দূরের কথা।”

মাহরুর এদিক ওদিক চায়।অবশ্যই আশপাশের কোনো ডেস্ক থেকে এইসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।বিশেষ নজরও দেওয়া হচ্ছে মাহরুরের উপর। মাহরুর কলম হাতে নেয়।

লিখে, “ধন্যবাদ প্রশংসা করার জন্য।তবে এই প্রশংসা আমার মন জয় করতে পারলো না।আমার ঘরে আস্ত একটা চাঁদ আছে।আমার সৌন্দর্য্য সেই চন্দ্রের কাছে ফিকে। যার কাছে চাঁদ আছে তার মনোযোগ কোনোদিন পাশে জ্বল জ্বল করা অসংখ্য তারার দিকেও পড়বে না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।আপনি নারী হন অথবা পুরুষ।অফিস একটা কাজের জায়গা রঙ্গলীলা করার নয়।”

লেখা সম্পন্ন করে ডেস্কের এক কোণে রেখে দিল। যার নেওয়ার সে এমনেই নিয়ে যাবে। এতে তার তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই।
বাড়ি ফিরেছে একটু দেরি করেই।মিটিং দীর্ঘ সময় চলেছে। এমডি জানিয়েছেন আগামীকাল সোমবার কোনো ছুটি থাকবে না।যেহেতু ঈদে লম্বা ছুটি গেছে।আসার পথে মিষ্টির জন্য কিছু না নিলে ওই বাচ্চাটাও আবার মুখ ফুলিয়ে রাখে।দোকান থেকে ফ্রুট কেক কিনে নিল।পরপর দুলালের কাছে এসেছে।

মাহরুরকে দেখে দুলাল বললো, “ভাইজান বেশি বেচাকেনা হয়নাই।”

“আরেহ আজকে মাত্র প্রথম দিন।আর কিছুদিন যাক দেখি কি হয়।”

“আচ্ছা ভাই”

“সন্ধ্যায় চা নাস্তা কিছু খেয়েছিস?”

দুলাল মলিন মুখে বললো, “না ভাই।চাচী খাইতে ডাকছিল।দোকান ফালায় কেমনে যামু।এরমধ্যে নতুন নতুন। অবহেলা করলে মুনাফা হইবো না।”

দুলালের কাধে হাত রেখে মাহরুর বলে, “দেখ।আমার এখানে কাজ করিস বলে নিজেকে বিলীন করে দিতে বলিনি। সময়মতো খাওয়া দাওয়া করবি।আর সবচেয়ে বড় কাজ হলো রহিম চাচা আর চাচী ডাকলে এক দৌড়ে যাবি দোকানের শাটার নামিয়ে।”

“আচ্ছা ভাই।”

“আচ্ছা তুই বোস।আমি বাড়ি গিয়ে দেখি তোর ভাবি কি নাস্তা তৈরী করেছে।দুজনে একসাথে খাবো।”

“আপনি মাত্র কাজ থেকা আইলেন।বিশ্রাম করবেন না?”

“করবো।তুই বোস ”

লোহার দরজায় ঝাঁকুনির আওয়াজে মল্লিকা চাবি নিয়ে দৌড়ে যায়। মাহরুর এসেছে।দরজা খুলতেই ব্যাগটা মল্লিকার হাতে ধরিয়ে ঘরের দিকে অগ্রসর হলো।মিষ্টি খাতা কলম ছড়িয়ে বসে আছে।স্কুল থেকে দেওয়া বাড়ির কাজ করতে মগ্ন। মাহরুরের উপস্থিতি টের পায়নি। মাহরুর আলতো পায়ে হেঁটে পেছন থেকে জাপ্টে ধরলে ঘাবড়ে উঠে মিষ্টি।

মায়ের দেখাদেখি বুকে থুথু ছিটিয়ে বলে, “মাহি বাবা”

“পড়ালেখা করছিস আম্মা?”

“হ্যাঁ।দেখো আমার নাম লিখেছি।”

খাতাটা এগিয়ে দিলো মিষ্টি।মিষ্টি নামটা লিখেছে।কিন্তু ভুল। মিষ্টিকে “মিশটি” করে ফেলেছে।এতটুকু মেয়ে আর কতই পারবে?তারপরও চেষ্টা করছে এটাই অনেক।

মাহরুর খাতায় সুন্দর করে তার নামটি লিখে বললো, “মিষ্টি এভাবে লিখতে হয় মা।তুই আবার চেষ্টা কর।”

“আচ্ছা”

“আচ্ছা শোন মাহি বাবার একটা কথা রাখবি?”

মিষ্টি বাচ্চাময় গোলাকৃতি চক্ষু মাহরুরের দিকে দিয়ে বললো, “কি কথা?”

ফ্রুট কেকটা মিষ্টির দিকে এগিয়ে দেয়।বলে, “এইযে এসব খাবার চিপস, চকোলেট,কেক এসব পচা খাবার।তুই জেদ করিস বলে এনে নেই।কিন্তু এগুলো খেলে কি হয় জানিস?”

পঁচা খাবার শুনে কিছুটা ভীত হয় মিষ্টি। মাহরুরের দিকে ঘুরে বললো, “কি হয় মাহি বাবা?”

“এগুলো খেলে পেটে ইয়া বড় গাছ হয়।ভালো খাবার কি জানিস? ভাত,মাছ,মাংস,সবজি।এগুলো খেলে দুই তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাবি।”

“আমার সবজি পছন্দ না মাহি বাবা।মা আমাকে জোর করে খাওয়ায়।”

“তোকে কানেকানে একটা কথা বলি শোন।”

মাহরুর মিষ্টির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, “মা যখন সবজি দিবে তখন টুপ করে চোখ বন্ধ করে খেয়ে ফেলবি।আর যদি ভালো মেয়ের মতন প্রতিদিন খাবার খাস আমি প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার চিপস, চকোলেট কিনে দিবো কেমন?”

মিষ্টি বাচ্চা সুরে বলে, “প্রতিদিন দিবে না?”

“না শুধু সোমবার আর শুক্রবার।তাহলে আর পেটে গাছ হবে না।”

মিষ্টি মাথা দোলায়।বলে, “আচ্ছা”

প্রতিদিনের ন্যায় আজও একই কাজ মল্লিকার। মাহরুর হাতমুখ ধুতে ধুতে সে চা নাস্তা তৈরি করে।আজও তাই। মাহরুর হাতমুখ ধুয়ে ঘরের কাপড়ে ফিরে এসে বসলো।

বললো, “আমাকে চা দিস না এখন।নাস্তা কি তৈরি করেছিস?”

“পুরি বানিয়েছি।আপনি খাবেন না কেনো?”

“দোকানে যাবো।দুলাল আর আমার জন্য দিয়ে দে সেখানেই খেয়ে নিব।”

মল্লিকার মুখ লটকে যায়।মাত্র এত সময়ের অফিস করে বাড়ি ফিরলো আবার চলে যাবে।মুখের ভাবভঙ্গি বজায় রেখে বললো,

“মাত্রইতো এলেন?”

“হুম।নতুন কাজ বুঝিস না একটু সাথেসাথে থাকতে হবে।তাছাড়া দুলালও নাস্তা করেনি।দিয়ে দে।”

“দিচ্ছি”

গরম গরম চা ফ্ল্যাক্সে আর বাটিতে করে পুরি দিয়ে দিলো। মাহরুর মিষ্টিকেও সাথে নেয়।বেচারি সারাদিন ঘরে থাকে। এবাড়ি আসার পর তার মাঠে খেলতে যাওয়াও হয়না তার।বাহিরের হাওয়া বাতাস দরকার।একহাতে থলে আরেক দিকে মিষ্টিকে হাতে ধরে বেরিয়ে পড়লো।

যাওয়ার পূর্বে মল্লিকার লটকে থাকা মুখ থেকে প্রশ্ন এসেছে,

“ফিরবেন কখন?”

“বেশি না চন্দ্রমল্লিকা মাত্র একঘন্টা।”

মুখশ্রীতে সীমাতিক্রান্ত রোষাবেশ।আজ থেকে বুঝি এই নিয়মই চলবে?দিবার একটা লম্বা অংশজুড়ে শুধু কাজ আর কাজ। সন্ধ্যা থেকে রাত অব্দি মাহরুরের দীপ্ত মুখমণ্ডল দেখায় সিক্ত হয়ে পড়েছে।এখন আবার নতুন কাজ!কর্ম অবশ্যই প্রয়োজন।তবে স্ত্রীকে সময় দেওয়াও প্রয়োজন। যথাসাধ্য পূরণ করে মাহরুর সময়ের কোটা।মনে পোষায় না মল্লিকার এখন।তার বচন,দৃষ্টি,স্পর্শে ধাতস্ত হয়েছে মল্লিকা। দূরে থাকলেও মন উসখুস করে।

“অভিমানে টইটুম্বুর শ্রী আরো মনোমুগ্ধকর।
তবে কেনো ভালোবাসা প্রকাশে সে অপরাগ?
স্নেহকাতর সেই রমণী কি জানে?
কোনো পুরুষ এক শুদ্ধ চন্দ্রের ক্রীতদাস।”

পুরুষালি কাব্যিক স্বর কর্ণকুহরে এসে ঝনঝন শব্দ করছে।কি সুশ্রাব্য কণ্ঠোধ্বনি!বাদামি পারের শাড়ির আঁচল আঙ্গুলে পেঁচিয়ে অপেক্ষারত হলো।একপা দুপা করে এগিয়ে এসে সেই চন্দ্রের পাশেই ঠায় মিলবে ক্রীতদাস পুরুষের।যেকিনা স্বেচ্ছায় প্রেমদাসত্ব স্বীকার করেছে।

মাহরুর ঠিক চন্দ্রের ভাবনাকে সঠিক প্রতিপাদিত করে পাশে এসে দাঁড়ায়।বলে, “বললেই পারতেন?না একবার বলেই দেখতেন?সব কাজ বাদ দিয়ে আপনার আঁচলে আবদ্ধ হয়ে নিকটে বসে থাকতাম।”

মানে জর্জরিত তবে বোধশক্তি আছে বটে।বললো, “কাজে বাঁধা দিবো কেনো?”

“কাজটা আপনার চেয়ে বেশি দরকারি নয় চন্দ্রমল্লিকা।”

কথার জালে ফেলতে জানে মাহরুর। ধাঁধা লাগানো তার গভিরত্বে আচ্ছন্ন কন্ঠস্বর।ঠোঁট কামড়ে ধরে মল্লিকা।রেহাই দেয় শাড়ির আঁচলটাকে।বলে,

“আমিই বোকা।একটু খারাপ লেগেছে আপনি এসেও সাথেসাথে চলে যাওয়ায়।সেটা নিয়ে কতকিছু ভেবে নিজের মনকে কষ্ট দিয়ে বসে আছি।”

মাহরুর স্কন্ধে হাত রেখে গাঢ় নীলচে আবরণে নিজেকে সাজানো অখিলের দিকে চায়।বলে, “এই ছোটোখাটো বোকামি?অভিমান? এসবও ভালোবাসার গভীরত্ব দর্শায়।তোর নেত্রবিশেষ আমার জন্যে কতটা পিপাসু সেটা অনুভব করায়।এসব ছোটোখাটো মান অভিমান, খুনসুটিইতো আমি চাই।”

মল্লিকা প্রশ্ন করে, “আজ অফিসে কি কি করলেন? জায়গাটায় মানিয়ে নিতে পারছেনতো?”

মাহরুর ঝটপট বলে উঠে, “জানিস কি হয়েছে আজ?”

“কি?”

“আমার ডেস্কএ একজন চিরকুট রেখে গিয়েছে।হতে পারে কোনো নারী।”

বিস্ফোরিত নয়নে তাকায় মল্লিকা।প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, “কি লেখা ছিল চিরকুটে?”

“আমার প্রশংসা করছিলো।বলছিলো আমি নাকি সুদর্শন।আমি প্রথম চিরকুটের উত্তর দেইনি। পরবর্তীতে লাঞ্চের পর আবার উত্তর চেয়ে আরেকটা চিরকুট আসে।আমিও উত্তর দিয়েছি।”

শুভ্র চাঁদের সম্মুখভাগে একগুচ্ছ কালো মেঘ আবরণ দিয়ে দাড়িয়ে পড়ে।মস্তিষ্কে বিবাদের সৃষ্টি হচ্ছে।এক প্রেমী চিত্ত তার প্রনয়ের পুরুষকে অন্য কোনো অস্তিত্বের ছায়ায় দেখতে পারেনা।হুজুগে চিন্তাধারা এসে ধস্তাধস্তি শুরু করেছে।

মাহরুর ঘরে ফিরে যায়।দ্রুত গতিতে ফিরে এসে যান্ত্রিক ফোনটা দেখালো মল্লিকাকে।বললো, “দেখ আমি কি উত্তর দিয়েছি।”

মল্লিকা দূরে সরে দাঁড়ালো।আজ অভিমানেরা এক বিন্দু ছাড় দিচ্ছে না। বারংবার এসে ঝুকে পড়ে।জানতে চায় না মল্লিকা।কি উত্তর দিয়েছে মাহরুর।তার মানে জর্জরিত হৃদয়ের একটামাত্র জিজ্ঞাসা?কি দরকার ছিলো উত্তর দেওয়ার?

“একটাবার দেখ না চন্দ্র।এত অভিমানী হোস না আবার।”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও চোঁখ তুলে তাকায় জ্বলজ্বল করা ফোনের স্ক্রিনে। মাহরুর চিরকুটগুলোর ছবি তুলে এনেছে। মল্লিকাকে দেখানোই মূল উদ্দেশ্য।পলক না ফেলেই মল্লিকা মাহরুরের দেওয়া জবাব পড়ে নেয়।নিজেকে আরেকদফা অতিরিক্ত ভাবার জন্য বকাঝকা করে ফেলে ইতিমধ্যেই। মাহরুরের মধ্যে কোনো রকম দোষ থাকলে সে অবশ্যই তাকে এই বিষয়ে মুখ ফুটে কিছু বলত না।

তার অনুপস্থিতেও মাহরুরের মন-মস্তিষ্কে তারই বিচরণ এটা সচক্ষে প্রমাণ পেয়ে মিষ্টি হাসে মল্লিকা। মাহরুর বললো,

“অভিমান করার অধিকার আছে তোর।তবে কোনোদিন সন্দেহ দানা বাঁধতে দিস না।সন্দেহ সংসারের ধ্বংস ডেকে আনে।”

___

মিষ্টির স্কুলে কয়েকমাস পরপর অভিভাবকের মিটিং হয়। সেখানে ডাক পড়েছে আজ মল্লিকা মাহরুরেরও।প্রতিটি বাচ্চাকে মধ্যিখানে রেখে অভিভাবকদেরও জায়গা হয়েছে স্কুলের বেঞ্চিতে। একেকজনকে ডেকে বাচ্চাদের সম্পর্কে আলোচনা করছেন ক্লাস টিচার।কয়েকজন এর পর মিষ্টির নাম ধরে ডাকা হলো।মল্লিকা, মাহরুর মিষ্টিকে সাথে নিয়ে এসে বসলো ক্লাস টিচারের সামনে। মধ্যবয়স্ক চোখে চশমা পরিহিত শিক্ষিকা একটি কাগজ এগিয়ে দিলেন।

বললেন, “আপনারা আজ এখানে উপস্থিত হয়েছেন সেটার প্রমাণ রাখার জন্য এখানে সই করেন।”

মাহরুর এবং মল্লিকা উভয়ই কাগজে সই করে শিক্ষককে এগিয়ে দিলো। কাগজে চোখ বুলিয়ে শিক্ষিকার মুখের ভঙ্গি পরিবর্তন হয়। মোটা খাতায় লিখিত মিষ্টির সব ডিটেইলস চেক করে চাইলেন মল্লিকা আর মাহরুরের মুখপানে।

বললেন, “আপনি মিষ্টির বাবা?”

মাহরুর উত্তর দেয়, “জ্বি”

“আপনার নামতো মাহরুর ইবনাত।আমাদের রেজিস্ট্রি খাতায় লেখা ফারহান সরোয়ার। গড়মিলটা কোথায় একটু স্পষ্ট করে বলবেন?”

বিব্রত বোধে গ্রাস হয় মল্লিকা, মাহরুর উভয়ে।কথাটি শুনতে এবং বুঝতে যত স্বাভাবিক।বলতে ততটাই জটিল। অন্যান্য অভিভাবকরাও চেয়ে আছে।

মাহরুর বিজড়িত হয়ে বললো, “আম! মিষ্টির বাবা ফারহান সরোয়ার মৃত।”

“আপনি কে তাহলে?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহরুর।বলে, “ফারহান সরোয়ার মিষ্টির বায়োলজিক্যাল ফাদার।তার অবর্তমানে আমিই মিষ্টির লিগ্যাল গার্ডিয়ান।মল্লিকা আমার স্ত্রী।”

পাশ থেকে অহেতুক এক নারী বলে উঠলো, “ম্যাডাম সৎ বাবা। হবেন বোধহয়।এই কথাটা বলতে নাকি এতক্ষন সময় নিচ্ছে” বলেই হেসে উঠলেন তিনি।

মাহরুর এর রাগ হয় কিঞ্চিত।মুখ ভর্তি বিরক্তির ছাপ। ‘ সৎ বাবা ‘ শব্দটা কর্ণকুহরে ভালো শোনাচ্ছে না।তার কথার বিপরীতে কিছু বলতে চাইলে মল্লিকা হাত চেপে থামিয়ে দিলো তাকে।

শিক্ষিকা সেই নারীর উদ্দেশে বলে উঠেন, “আপনি কি ওনাদের পরিচিত?”

উত্তরে সে বলেন, “জ্বি না।”

“তাহলে অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবে না।নিজের ভদ্রতা আর সভ্য ভাষার ব্যবহার বজায় রাখবেন।আপনাদের থেকেই বাচ্চারা শিখে।চেষ্টা করবেন তাদের ভালো কিছু শেখাতে। ভেদাভেদ নয়।”

অভিভাবকের সাথে চাইতেও রূঢ় আচরণ করতে পারলেন না শিক্ষিকা।এমন একটা কথায় মাহরুরের পাশাপাশি শিক্ষিকা নিজেও বিব্রতবোধ করেছেন।এখানে অনেক বাচ্চারা উপস্থিত।তাদের কাছে নতুন কোনো শব্দ উচ্চারিত হলে তাদের মস্তিষ্কে গেঁথে যাবে সেটা।অন্য অর্থ বের হবে।

চশমা ঠিক করে ক্লাস শিক্ষিকা মিষ্টির ভর্তি ফর্ম এগিয়ে দিয়ে বললেন,

“দুঃখিত। মিষ্টার মাহরুর আপনি এই ফর্মটায় লিগ্যাল গার্ডিয়ান এর জায়গায় আপনার নাম লিখে দিন।”

মাহরুর নিচু শব্দে উত্তর দেয়, “জ্বি”

মিষ্টির প্রশংসায় পঞ্চমুখ শিক্ষিকা।তার পেছনে আরো সময় দেয়ার কথা বলেছেন।বেশি যত্ন নিলে আরো ভালো করবে তার মেয়ে।মায়ের মতই পড়াশোনায় দুরন্ত। দশম শ্রেণী অব্দি শাখায় সবচেয়ে ভালো শিক্ষার্থীর তালিকায় মল্লিকার নাম ছিলো।সেই জ্ঞানটুকুই পূনরায় জুটিয়ে মেয়ের দিকে ঢেলে দিচ্ছে। মাহরুরের সময় হয় না।এখন আরো দ্বিগুণ ব্যস্ত।দুটো কাজ একসাথে হাতে নিয়েছে।

স্কুল থেকে বেরিয়ে মাহরুর মিষ্টির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, “দেখেছিস মা ম্যাডাম কি বললো?আরো ভালোমত পড়াশোনা করতে হবে।করলে ক্লাসে প্রথম হবি তুই।”

মিষ্টি এই বিষয়ে কিছু বললো না। হ্যা না কোনো উত্তরই দেয়নি। আকষ্মিক ভিন্নধর্মী প্রশ্নে মাহরুরকে তাক লাগায়।বলে, “সৎ বাবা কি মাহি বাবা?”

উত্তরে মাহরুর কোনো ভাষা খুজে পেল না।ইচ্ছে করেছে মিথ্যে বলে কাটিয়ে দিতে।তবে এটা মিষ্টির জন্য ভুল শিক্ষায় পরিণত হবে।
মল্লিকা মেয়েকে শাসনের গলায় বললো,

“অনেক কথা বলিস মিষ্টি। সৎ বাবা বলতে কিছু নেই।শুধু একজনই আছে সেটা হলো তোর মাহি বাবা।বুঝেছিস?”

মাহরুর বাঁধ সাধে।বলে, “আহহা চন্দ্র!তুই ওর সাথে এভাবে কেনো কথা বলছিস?ছোট মানুষ জানতে চেয়েছে।ওকে বুঝানোও যায় তাই না?”

ভারগ্রস্ত মল্লিকার মুখ।বিরক্তিতে ঠাসা।পরনের সবুজ শাড়িতে তার এরূপ মুখ দেখে মাহরুরের এটিও পছন্দ হয়ে যায়। ভুল জায়গায় ভুল চিন্তা।নড়েচড়ে উঠে সোজা হয়ে দাড়ায় মল্লিকার উত্তরের অপেক্ষায়।
হয়রান কন্ঠস্বর তুলে মল্লিকা বললো,

“ওই মহিলাটি স্কুলে আমাদের দিকে চেয়ে কিরকম হাসছিলো দেখেছেন?তার মুখের হাসিটা ভিন্ন ছিলো।যেনো আমরা কোনো লজ্জাজনক কাজ করেছি।এই সমাজে কি দ্বিতীয়বার জীবনকে সুযোগ দেওয়া অপরাধ?যেখানে আমাদের কোনো পিছুটান নেই।কোনো ভুল না করে সবখানে ভিন্ন দৃষ্টির শিকার হয়ে আসতে হচ্ছে।গ্রামে গিয়েও একই অবস্থা।বিধবা নারীদের নাকি নিজস্ব জীবন বলতে কিছু নেই।কু দৃষ্টির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। বিধবার জীবন থেকে যখন আপনার জীবনে আসলাম তখন সবাই আপনার আর আমার চরিত্রে না বুঝেই আঙ্গুল তুললো।এলাকার মানুষ নানান কানাঘুষা করে এখন অব্দি।আজও তাই।এসব কি সারাজীবন চলবে মাহরুর ভাই?আমাদের কি সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার নেই?যদি নাই থাকে চলেন কোথাও চলে যাই।এসব মানুষের থেকে অনেক দূরে।”

চলবে…..

চন্দ্র’মল্লিকা ৩২
লেখা : Azyah_সূচনা

রাত্রির রোষপ্রবণতা ব্যয়িত হয়েছে প্রেমকথনে।যত্নশীল কন্ঠস্বর এর ব্যাখ্যায় বলে অরুচিপূর্ণ মনুষ্যের ক্লেদপূর্ণ কথায় কর্ণপাত না করাই শ্রেয়।তারা হয় বিকৃতমূর্তি।তাদের পেছনে নিজের ধারণা অপচয় নির্বুদ্ধিতা। সরলহৃদয় বুঝবার ভঙ্গিতে গর্দন দোলায়।এভাবেই ফুরায় আধার আদত যামিনী।

রবি অসমন্তরাল প্রভাস্ফূর্তি ছাইরঙা ছাদের ছোট্ট এক কক্ষ বিশিষ্ট চিলেকোঠায়। ঘূর্ণায়মান ফ্যানের ক্যারক্যার আওয়াজ সম্পূর্ণ কামরায়। রৌদ্রের প্রখরতা অত্যন্ত অল্প।গায়ে এসে মাখলেও বিশেষ কোনো টের নেই ঘুমন্ত দেহত্রয়ে।একে অন্যের সাথে মিশে স্বপ্নের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে পরিগমনে ব্যাপৃত। অন্তরীক্ষ ভিন্ন রূপে সজ্জিত। নারাঙা রঙে নিজেকে সাজিয়েছে।গাঢ় কমলা রঙের মধ্যিমধ্যিতে আপন নীলাভ রংটা উকিঝুকি দিয়ে যাচ্ছে নভে।ভিন্নতায় পরশোভিত এই চিত্রাঙ্কনের মাঝে তন্দ্রা হালকা হয় দিনের আলোয় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা চন্দ্রের। রোশনি বরাবর মুখ পড়তে কুঁকড়ে উঠলো মুখশ্রী।ভারী দেহ আড়মোড়া দিয়ে উঠতে বাধ্য হয়েছে।হাত মুখ ধুয়ে আটা মাখতে শুরু করলো।গরম গরম পরোটা ভেজে দিবে মাহরুরকে।অন্য চুলোয় ঝুরো ডিম ভাজি করছে।

বাবার আগে মেয়ে উঠে হাজির।এক লাফে বিছানা থেকে নেমে এসেছে মায়ের সান্নিধ্যে।পা মুড়িয়ে বসে মায়ের কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।তখনই আদেশ আসে,

“মিষ্টি?হাত মুখ ধুয়ে আয়”

ঘুমুঘুমু নাদান কন্ঠ মায়ের উদ্দেশ্যে বললো, “তুমিও আসো না মা?”

“সেদিন শিখিয়েছি কিন্তু কিভাবে হাত মুখ ধুতে হয়।”

মিষ্টি চঞ্চু ফুলিয়ে আবদারজনিত গলায় বললো, “তুমিও আসো”

মিষ্টির এরূপ কন্ঠে মুচকি হাসে মল্লিকা।নাহ! এতটুক বাচ্চাকে শেখানো যায়।তবে এটা আশা করা ভুল শিখানোর সাথে সাথে সে ওই কার্যে আমল করবে। বয়সে অত্যন্ত ছোট।বেশি ভার তার উপর না চাপিয়ে উঠে গেলো মল্লিকাও।

গুনগুন করতে করতে মেয়ের হাত মুখ ধুয়ে মুছে দিয়েছে। আকষ্মিক ঘর হতে মাহরুরের ফোনের আওয়াজ ভেসে আসে। মল্লিকা দুর হতে শব্দ পেয়েছে অথচ কাছে থেকে মাহরুরের ইয়াত্তা নেই। মাহরুরের বাহু ঝাঁকিয়ে বললো,

“আপনার ফোন বাজছে”

পাত্তা দিল না মাহরুর।হাত তুলে বললো, “পড়ে!”

ঘুম থেকে উঠবে না সে। ভাবসাবে ঠিক বোঝা যাচ্ছে।মল্লিকা আবার বললো, “দেখেন না কে?দরকারি হতে পারে।”

“তুই..ধরে দেখ” আধোআধো কণ্ঠে উত্তর দিলো মাহরুর।
মল্লিকা ফোন তোলে।কানে রেখে বললো, “আসসালামু আলাইকুম”

অন্যপাশ থেকে এক নারীর গলার আওয়াজ ভেসে এলো।বললো, “মাহরুর কোথায়?”

“উনি ঘুমোচ্ছে।আপনি কে?”

নারীটি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে বললো, “সে উঠলে আমাকে কল করতে বলবেন। ইটস আর্জেন্ট!”

“কিন্তু..আপনার পরিচয়টা?”

মুখের উপর খট করে ফোন কেটে দিলো মেয়েটি।ভারী অদ্ভুত! কথাবার্তার ভঙ্গিতে মনে হলো সে বিরক্ত মল্লিকার কন্ঠে। ঝাঁঝালো সুর।আদেশের ভঙ্গিতে বলল সবটা। সন্দিহান মল্লিকা মূর্তি হয়ে দাড়িয়ে আছে।মিষ্টি এসে মল্লিকার গায়ে ধাক্কা দিলো।

বললো, “ও মা”

ধ্যান ফিরতেই মল্লিকা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে।বলে, “হ্যা?…আয় নাস্তা করবি।”

“না মা।মাহি বাবার সাথে খাবো।”

মল্লিকা একপলক দৃষ্টি ফেলে মাহরুরের দিকে। ব্যাপারটা মাথা থেকে বের করতে পারলো না। অপেক্ষায় রইলো মাহরুরের ঘুম ভাঙ্গার।ঘুম হালকা হয় সময় নিয়ে।মুখে প্রাণজুড়ানো হাসি নিয়ে মিষ্টির চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে হাত মুখ ধৌত করার জন্য গেলো।ফিরে এসে মল্লিকার পানে চেয়েছে।কেমন যেনো ভোতা মুখটা। মাহরুর সামনে এসে দাড়ানোর পরও তাকালো না?নাস্তা দিচ্ছি কথাটি বললো না?
মাহরুর পাশ ঘেঁষে বসলো।ভাজ করে রাখা পায়ের হাঁটুতে দুহাত বেধে।পর্যবেক্ষণ করলো পুরো মুখটাকে। বিভোর তার চন্দ্রমল্লিকা।বাবার দেখাদেখি মিষ্টি নকলে ব্যস্ত।সেও একই ভঙ্গিতে বসেছে। মাহরুরের দৃষ্টি অনুসরণ করে মায়ের দিকে তাকালো।

মিনিট খানেক পর মল্লিকার ধ্যান ভাঙ্গে। অনুভব হলো দুই জোড়া চোখ তাকে ড্যাবড্যাব করে দেখছে।তাদের এমন চাহনির সাথে তার চাহনি মিললে ফিক করে হেসে ফেললো।

বললো, “এভাবে কি দেখছেন?”

মাহরুর উত্তর দেয়, “তোকে”

মিষ্টিও একই কথা বলে উঠলো, “তোকে”

মাহরুর দ্রুত মিষ্টির দিকে চেয়ে বলল, “উম!না।মা’কে কেউ তুই করে বলে?”

“তুমিতো বলো মাহি বাবা” মিষ্টি দ্রুত উত্তর দেয়।

“তোর মাতো আমার চেয়ে ছোটো মিষ্টি তাই তুই ডাকি।তুই তোর মাকে তুমি বলে ডাকবি কেমন?”

“আচ্ছা”

মাহরুরকে নাস্তা দিয়ে মল্লিকা বললো, “একজন মহিলা কল করেছিলেন।আপনাকে চাইছিলেন।”

অবোধ মাহরুর জানতে চাইলো, “মহিলা?আমাকে কোন মহিলা কল করবে?পরিচয় চাস নি?”

“হ্যাঁ জানতে চেয়েছি উনি বলেনি।ওনার কথা শুনে মনে হলো উনি বিরক্ত প্রচুর।আপনি উঠলে যেনো তাকে কল করেন সেটাও বলেছে”

মাহরুর অবিদিত।কে কল করেছে?কেনো করেছে?সে নিজেও জানে না।মল্লিকা,শিরীন ফরিদা বেগমবিহীন অন্যকোনো নারীর কাছে তার নাম্বার নেই। অপরিজ্ঞাত কারণে মোবাইল নাম্বার থাকতেই পারে নাম্বার।তবে কাজ কি মাহরুরের সাথে? সেদিন রাতেও কল এলো।কেউ কথা বললো না।আজ নাম্বার ভিন্ন।

উঠে দাঁড়িয়েছে মাহরুর। কোমরে দুহাত রেখে কিছু সময় নিলো ভাবতে।পরপর ফোন হাতে নিয়ে কল আসা নাম্বারে আবার ফোন মিলায়। আশা ছিলো একজন নারী ফোন ধরবে।অথচ কন্ঠ আসলো একজন পুরুষের।

মাহরুর বলে উঠে, “আসসালামু আলাইকুম।এই নাম্বার থেকে একজন নারী কল করেছিলেন।”

অন্যপাশ থেকে পুরুষটি বললেন, “হ্যা এই নাম্বার থেকে ম্যাডাম কল করেছিলেন আপনাকে।”

“ম্যাডাম?কোন ম্যাডাম?” জানতে চায় মাহরুর।

উত্তর এলো, “তানিয়া ম্যাডাম।আপনি ডি. বি. সি কোম্পানি লিমিটেড এ চাকরি করেন?”

“জ্বি।আর তানিয়া ম্যাডাম আমার টিমের।”

“জ্বি আমি জানি।আপনার সাথে ম্যাডামের কিছু কাজ আছে।সেই উদ্দেশেই কল করা।”

মাহরুর বললো, “আমার জানা মতে তানিয়া ম্যাডামের আমার সাথে আমার যাবতীয় কাজ অফিসে। অফিসিয়াল কোনো কাজ কি?”

“জ্বি।আপনার এখনই ব্লু লেক রেস্টুরেন্টে আসতে হবে। সাইট ভিসিট এর জন্য”

আশ্চর্য্যচকিত মাহরুর।কিসের সাইট ভিসিট?আর সেই আদেশ তানিয়া কেনো দিবে?যদি আসলেই কোনো কাজ থাকতো ডিরেক্টর নিজে কল করে জানাতো।তানিয়ার কাজ নয় এসব।খটকা লাগে মাহরুরের।

বলে উঠে, “আমি তানিয়া ম্যাডামের সাথে কথা বলতে পারি?”

পুরুষটি হচকচিয়ে বললো, “ম্যাডাম টিমের বাকি মেম্বারদের সাথে ব্যস্ত আছেন।আপনি প্লিজ আধ ঘন্টার মধ্যে চলে আসুন।”

মাহরুর ফোনটি রাখে।সম্পূর্ণ এলোমেলো কথাবর্তা। কোনোটার সাথে কোনো কথার মিল পাওয়া গেলো না।যাবে কি যাবেনা? দ্বিমুখী চিন্তার মাঝে পড়ে হটাৎ মাথায় বুদ্ধি এলো তার টিমের ডিরেক্টরকে কল করা উচিত।সেই আসল তথ্য দিতে পারবে।

আর কোনো চিন্তা ভাবনা না করেই ডিরেক্টর শরিফুলকে কল করে মাহরুর। একবারে ফোনটা রিসিভ হয়নি। দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার চেষ্টা করেও লাভ হলো না। ছুটির দিনকে কেন্দ্র করে হয়তো ফোনটা রিসিভ করছেন না।

আবার কল বাজলো মাহরুরের ফোনে।একটু আগে আসা নাম্বার থেকেই আবার কল এসেছে। বিরক্তি সহকারে মাহরুর কল রিসিভ করে।

“হ্যালো মিস্টার মাহরুর।তানিয়া বলছি”

“জ্বি..জ্বি আমাকে ক্লিয়ার করে বলবেন কিসের সাইট ভিসিট?তাও এই ছুটির দিনে?”

“শফিকুল স্যার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।আমাদের যে নতুন প্রজেক্টটা?সেই প্রজেক্ট হেড বানিয়েছেন আমাকে।এই কাজে আপনার সাহায্য দরকার।এবার আমাদের টিমের ভালো পারফরমেন্স করতে হবে অন্যদের তুলনায়।আপনার কি ছুটির দিনে কাজ করতে বিশেষ কোনো সমস্যা?”

“সেটা হবে কেনো?আমি গতকালই অফিসে গিয়েছি। ডিরেক্টর স্যারতো প্রজেক্টের ব্যাপারে কিছু বললেন না?আর টিম লিডার আপনাকে করেছেন এই আলোচনা কখন হলো?”

ফোনের অন্যপাশ থেকে তানিয়ার ফটা কন্ঠ ভেসে আসে।বলে,

“উফফো মিষ্টার মাহরুর। ইটস ইউর জব!আপনি এভাবে জেরা করা শুরু করলেন কেনো?আপনি আসুন।এক ঘণ্টার কাজ মাত্র।ডিরেক্টর স্যারের সাথে আমার কথা হয়েছে। উনিই বলেছেন”

মাহরুর খানিক হন্তদন্ত গলায় বললো, “আচ্ছা আচ্ছা।টিমের সবাই কি সেখানে আছে?”

“হ্যাঁ আছে। কাম ফাস্ট!” কড়া আদেশ গিয়ে দ্রুত ফোন কেটে দেয় তানিয়া।

এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছে না মাহরুর।সকাল সকাল একটা চাপ পরে গেলো।অন্যদিকে ডিরেক্টর কল ধরছে না। দ্বিধান্বিত কোনো কাজে যাওয়ার ইচ্ছেটাও নেই।এদিক ওদিক পায়চারি করছে মাহরুর।যদি সত্যিই কাজ পড়ে থাকে?মাত্র অফিসে জয়েন করেছে। হেলামি করা একদম ঠিক হবে না।মল্লিকা যে নাস্তা দিয়েছিল প্রায় ঠান্ডার পথে।

অনবসর – ক্রিয়াশীল মাহরুরকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

“হয়েছে কি?”

“আরেহ বলিস না!আমি যে টিমে কাজ করি সেই টিমে তানিয়া নামে একটা মেয়ে আছে।কল করে বললো আজ নতুন প্রজেক্টের জন্য নাকি কাজ আছে।যেতে হবে একঘন্টার জন্য।”

“কোথায় অফিসে?”

“না ব্লু লেক রেস্টুরেন্টে।”

মল্লিকাও বিস্ময়ভরা গলায় বললো, “রেস্টুরেন্টে আবার কাজ হয় নাকি?”

“কে জানে!বড়োলোকের বিরাট করবার।”

মল্লিকা জানতে চায়, “আপনি কি যাবেন?”

“গিয়ে দেখি কি বলিস?যদি সত্যিই কাজ হয়। আমরা নিজেদের মতন ভেবে বসে থাকলেতো হবে না।”

“তাই করেন গিয়ে দেখে আসেন।না গেলে যদি আপনার বস রাগ করে।”

মাথার এদিক ওদিক চেয়ে বললো, “আচ্ছা নাস্তা দে।খেয়ে বের হই।”

__

তৈরি হয়ে ব্লু লেক রেস্টুরেন্টের এসে হাজির হয় মাহরুর।বিশাল আকারের রেস্তোরাটি বিলাসবহুল। ব্লু নামটার সাথে মিলিয়ে নীলাভ ক্যানভাসে সাজানো চার দেয়াল।লম্বা আধো বলছে রঙের গ্লাসের অপরপ্রান্তে কৃত্রিম একটা লেক দেখা যাচ্ছে। মাহরুর হিসেব মেলাতে পারলো না এটা লেক নাকি সুইমিং পুল।ওয়েটিং লাউঞ্জ এর সোফায় বসে অপেক্ষারত।হাতের ঘড়ির দিকে চেয়ে সময় গুনছে।ডেকে আনার পর কেনো তাদের কোনো খবর নেই।ফোন করা হলেও ধরছে না।আশপাশের পরিবেশে দৃষ্টি বোলাতে বোলাতে একজন ভদ্রলোক সামনে এসে দাঁড়ান।

বলেন, “আপনি মিষ্টার মাহরুর?”

মাহরুর উঠে দাড়িয়ে বললো, “জ্বি।আপনি কে?”

“আমি ডি. বি. সি কোম্পানির একজন কর্মকর্তা।”

ভ্রু কুঁচকে মাহরুর বলে উঠে, “আপনাকে অফিসে কখনো দেখা হয়নি।”

“আপনার আমার ডিপার্টমেন্ট আলাদা তাই হয়তো।তানিয়া ম্যাডাম উপরে আছে।আসুন আপনি আমার সাথে।”

মাহরুরের মনে প্রশ্ন জাগে আরো একটি।যেহেতু সে অন্য ডিপার্টমেন্ট এর তাহলে তানিয়ার সাথে কি কাজ তার?আজ সকাল থেকে এত এত প্রশ্ন উত্তর হয়ে আসছে মাহরুর প্রায় বিরক্ত। ধাঁধানো কথাবার্তা সকলের।উপরে গিয়ে নাহয় সবটা জানা যাবে।এই উদ্দেশ্যে মাহরুর লোকটির পিছু হেঁটে চলে গেলো।

উপরের ফ্লোরে ভিআইপি এরিয়া।মানুষের তেমন আনাগোনা নেই।অল্পস্বল্প সমাগমে দূরে তানিয়াকে বসে থাকতে দেখা গেলো। মাহরুরের গতি অত্যন্ত ধীর।পা দুটো ইচ্ছার বিরুদ্ধে এগোচ্ছে।

তানিয়ার সামনে এসে দাড়াতেই সে হেসে বললো, “মিষ্টার মাহরুর।প্লিজ সিট”

মাহরুর বসলো না।দ্রুত গলায় প্রশ্ন করলো, “টিমের বাকিরা কোথায়?”

“আপনি এত উতলা হচ্ছেন কেনো?একটু বসে রিল্যাক্স হন।”

মাহরুর অনিচ্ছুক।প্রথম থেকেই ব্যাপারটা বিরূপতার কাতারে পড়ে আছে।এরমধ্যে শুধু তানিয়াকে একা বসে থাকতে দেখে অভিশঙ্কা আরো বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো।

মুখোমুখি বসে দ্বৈধ গলায় জানতে চাইলো, “বলুন কাজটা কি?আমি ডিরেক্টর স্যারকে অনেকক্ষন যাবৎ কল করছি।উনি রেসপন্স করছেন না।”

তানিয়া কফির মগটা হাতে তুলে স্বাচ্ছন্দ্যে বসলো।পায়ের উপর পা তুলে। আটসাট কাপড়ে বাজে দেখাচ্ছে তাকে। মাহরুর দৃষ্টি নামিয়ে নেয়।

তানিয়া উত্তর দিলো, “আপনি জানেন না ডিরেক্টর অফ ডে- তে কল রিসিভ করেন না?”

“জ্বি না।”

“ব্যাপার না।”

“আমরা কি কাজের বিষয়ে আলোচনা করতে পারি?”

“অবশ্যই।সেটার জন্যই আপনাকে ডাকা।”

মাহরুর সাথে ব্যাগ এনেছে।যেহেতু কাজ নতুন প্রজেক্টের প্রত্যেকটা বিষয় নোট করার ব্যাপার আছে।নতুন ফাইল বের করে তানিয়াকে এড়িয়ে বললো, “বলুন”

মাহরুরের কানে মেয়েলি তাচ্ছিল্যপূর্ন হাসির আওয়াজ আসে।সামনে বসে থাকা তানিয়া মাহরুরের এরূপ আচরণে অবজ্ঞা করে হাসছে। মাহরুরের এই হাসি বোধগম্য হয়নি।চোখ তুলে তাকায় বিরক্তির সাথে।

তানিয়া মুখে হাত রেখে হাসি থামিয়ে বললো, “খুব পাংচুয়াল মানুষ আপনি মিষ্টার মাহরুর ইবনাত।কিন্তু এখানে এসবের প্রয়োজন নেই।”

মাহরুর কণ্ঠে সামান্য রুষ্টতা টেনে বলতে লাগলো, “আমাকে এখানে ডাকলেন।বললেন টিমের সকলে আছে।কাজ করতে হবে।অথচ আপনি এখানে একা।আমি অনেক সময় যাবৎ এখানে।কোনো কাজের কথা আমি এখানে হতে দেখছি না।আপনি বারবার প্রহেলিকায় ফেলছেন।”

মাহরুরের কথায় তেমন কোনো প্রতিমূর্তির পরিবর্তন দেখা গেলো না তানিয়ার।উল্টো নিজের ভঙ্গিমা বজায় রেখে বললো, “অনেক ধাঁধায় ফেলেছি আপনাকে তাই না? লেট মি ব্রেক ইট।আপনাকে আমি এখানে কিছু বিষয় আলোচনা করতে ডেকেছি।যা বলবো সরাসরি বলবো।”

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মাহরুর বললো, “জ্বি?কি বিষয়?”

“আপনার সম্পর্কে আমি ইচ অ্যান্ড এভ্রি ডিটেইলস কালেক্ট করেছি।আপনি একজন ডিভোর্সী পুরুষ। কয়েকমাস হলো নিজের চাচাতো বোনকে বিয়ে করেছেন যেকিনা উইডো ছিলো।আর আপনি যার বাবা বলে নিজেকে দাবি করেন সে আপনার মেয়ে নয় আপনার সেকেন্ড ওয়াইফ এর আগের ঘরের বাচ্চা।”

কপাল মাত্রাতিরিক্ত কপালে ভাঁজ ফেলে বললো, “হ্যা!তো?”

“আপনাকে সেদিন অফিসে কেউ একজন চিরকুট দিয়েছিল মনে আছে?”

এবার বাকা হাসে মাহরুর।বলে, “আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম এটা কোনো না কোনোভাবে আপনার কাজ।আপনার দৃষ্টি আমার জন্য মোটেও ভালো ঠেকছিল না।”

বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি তানিয়ার মুখে। গাঠ খুলছে ধীরেধীরে।তানিয়া প্রতিউত্তরে বললো,

“আপনি খুবই অ্যাটিটিউড এর সাথে চিরকুটের উত্তর দিয়েছেন।যেটা আমার পছন্দ হয়নি।কে আপনার চাঁদ?আপনার স্ত্রী?”

সোফার হাতলে নিজের হাত এলিয়ে মাহরুর তানিয়ার ভঙ্গিতেই তাকে উত্তর দিলো, “অবশ্যই আমার স্ত্রী।কেনো আপনি আশা করেছিলেন আপনি?”

“আমাকে কি চাঁদের থেকে কোনো অংশে কম মনে হয়?”

তাচ্ছিল্যপূর্ন হাসিটা তানিয়ার মুখ থেকে মাহরুরের মুখে আসলো।নিজের প্রশংসা করছে? এমনও মানুষ আছে পৃথিবীতে? মাহরুর বললো,

“না!আপনাকে আমার চোখে চাঁদের কোনো অংশই মনে হয়না।…. তবে হ্যা হতে পারেন আপনি চাঁদ,তারা, গ্রহ, উপগ্রহ,নক্ষত্র।সেটা অন্যের চোখে।আপনার ক্ষেত্রে আমি বলবো আমার চোখ নষ্ট।আমি আমার চন্দ্র ছাড়া আর কাউকে চোখে দেখতে পাইনা।”

মুখ শক্ত করে তানিয়া বলল, “চোখের ডাক্তার দেখানো উচিত আপনার!”

“আমার চোখ এর চিকিৎসা করতে পারবে এমন কেউ জন্ম নেয়নি।আপনি বরং নিজের দৃষ্টি বিশুদ্ধ করুন। অজান্তেই আপনার চোখ অন্যের প্রেমিক,অন্যের স্বামী আর অন্যের বাবার উপরে যাচ্ছে”

“আপনি অপমান করছেন আমায়?”

মাহরুর উঠে দাড়ালো।বললো, “যে যেটার যোগ্য।আমার বোঝা হয়ে গেছে আমাকে এখানে কেনো ডেকেছেন।আসি আমার কাজ বোধহয় শেষ।”

যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে তানিয়া হাত টেনে ধরে মাহরুরের।এরূপ সাহসিকতায় রেগে উঠে মাহরুর।ফিরে তাকালো তৎক্ষনাৎ।অগ্নিদৃষ্টি ছুঁড়ে তানিয়ার দিকে।

ফোঁসফোঁস করতে করতে বললো, “লজ্জা করা উচিত আপনার!পর পুরুষকে হাত লাগান কোন সাহসে?রূপ না গুণের জালে ফেলার চেষ্টা করুন।তবে আমাকে আপনার রূপ গুন কোনোটাই বশ করতে পারবে না।সরি”

সদর্পে চলতে লাগলো মাহরুর।পেছনে হতভম্ব দাড়ানো তানিয়াকে দেখার বিন্দু ইচ্ছে নেই।কত বড় নির্লজ্জ!কাজের বাহানায় রেস্টুরেন্টে ডেকে প্রেমালাপ করার চেষ্টা করছিল। অনবরত কল করতে লাগলো ডিরেক্টরকে।এক প্রকার বিরক্ত হয়েই কল রিসিভ করেছে ডিরেক্টর শরিফুল।কোনো রিস্ক না নিয়ে সবটা জানায় তাকে।ভাগ্য সাথ দিলো। মাহরুরের ফোন অটো কল রেকর্ড অন করা আছে।সাথে অতিরিক্ত সতর্কতা দেখিয়ে অফিসের সিসিটিভি চেক করার জন্যও অনুরোধ করলো মাহরুর।তাহলেই সেই চিরকুটের মালিককে স্বচক্ষে দেখতে পারবে ডিরেক্টর।আগামীকাল দেখবে বলে জানায় ডিরেক্টর শরিফুল।

বাড়ি ফিরেছে।আজ দিনটাই মাটি।মল্লিকার সাথে অসৎ হতে পারবে না। বিশ্বাসঘাতক নয় সে।তবে কিছু সত্য লুকায়িত থাকলে সেটা ভয়ঙ্কররূপে এসে হাজির হয় কোনো এক সময়ে। রাতে সবটা জানাবে ভেবেই বিকেল দিকে তার স্টেশনারী শপে এসে বসলো।দুলাল কাজ করছে বেশ মনোযোগের সাথে। রেদোয়ান এর ঋণ আছে মাথায়।তার ছোট্ট সংসারে তেমন খরচ নেই। অল্পতেই চলে যায় তিনজনের।মল্লিকা, মিষ্টির চাহিদা অত্যন্ত কম।তারা মাহরুরের ভালোবাসার প্রাচুর্যে খুশি।সারা সপ্তাহের হিসেব নিকেশ করে দেখলো সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আয় আসছে।সামনের রাস্তায় স্কুল থাকায় এখানে স্টেশনারি এর চাহিদা বেশি। দুলালকে তার পরিশ্রমের প্রাপ্ত প্রশংসা দিয়ে বাড়ি ফেরে মাহরুর।

উকি দেওয়া চাঁদের আলোয় যে একাকী সময়টা আছে?আজ সেই সময়ে নতুন অতিথি যোগ দিয়েছে।মিষ্টি নামক অতিথি। হিংসুটে বাবা মার মতন নিজেদের মতন সময় কাটাতো। আজ মেয়েকে সাথে নিয়েছে। মাহরুর কথার অগোচরে মল্লিকাকে সবটা জানালো।

সর্বশেষ বললো, “আমাকে অবিশ্বাস করবি না চন্দ্র। আমি পুরো মানুষটাই তোর নির্ভরশীলতায় বেচে আছি।আমার জীবনে চার নারী।আমার মা,আমার বোন,আমার স্ত্রী আর আমার মেয়ে।এই সম্পর্কগুলোর উর্ধ্বে আমি আর কোনো নারীকে মৃত্যু এসে হাজির হলেও গ্রহণ করবো না।শুধু বিশ্বাস রাখিস।”

চমকপ্রদ হাসি মল্লিকার মুখে। মাহরুরের চওড়া হস্ত নিজের মুঠোয় নিবিদ্ধিত করে বললো,

“আপনার সচ্ছতাকেইতো সেই সতেরো বছর বয়স থেকে ভালোবেসে এসেছি।অনেকদিনের পুরোনো ভালোবাসা মাহরুর ভাই।অনেকটা মজবুত।না কেউ ভাঙতে পারবে না কেউ নড়বড়ে করতে পারবে।আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে