চন্দ্র’মল্লিকা পর্ব-২৭+২৮

0
440

চন্দ্র’মল্লিকা ২৭
লেখা : Azyah_সূচনা

মাহরুরের কাণ্ডে হতভম্ব মল্লিকা।নিজেই যেহেতু সিদ্ধান্ত নিবে তাহলে কেনো জানতে চাইলো সে পড়বে কিনা?ঘরে দাড়িয়ে মাথা চুলকাচ্ছে।বলছে ‘ না তোর পড়ালেখা করা উচিত ‘।কথা পোক্ত! ভাবসাব দেখে মনে হলো পাকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মল্লিকাকে কলেজে ভর্তি করিয়েই ছাড়বে।অযথা ফর্মালিটি করলো জিজ্ঞেস করে।মল্লিকার এতে মতবিরোধ আছে।এই বয়সে কোন কলেজ তাকে শিক্ষার্থী হিসেবে গ্রহণ করবে? তাছাড়াও মিষ্টি এখন ছোট।নিজে পড়তে বসে গেলে মেয়ে আর সংসার কে সামলাবে?

“দেখেন এই বয়সে আমাকে কোনো কলেজ নিবে না”

“ভোকেশনাল আছে চন্দ্র।”

“ভোকেশনাল কি?”

“এখানে যে কোনো বয়সের মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।”

“আপনি কি বলছেন?আমি পড়ালেখা শুরু করলে মিষ্টিকে কে দেখবে?সংসার কে সামলাবে?”

“আরেকটা বউ আনি?”

মাহরুরের উত্তরে চক্ষু ছানাবড়া।কি বললো সে?আরেকটা বউ!এক জনমে কয়টা বিয়ে করার শখ তার? মল্লিকাই তার দ্বিতীয় স্ত্রী। হতবুদ্ধির হয়ে চেয়ে রইলো মাহরুরের দিকে।রাগ হচ্ছে বটে।কিন্তু এই লোকের সামনে দেখানোর সাহস নেই।

মাহরুর সামনাসামনি এসে দাঁড়ায়।আবার বলে, “চন্দ্র? বল না কেমন হবে?তুই পড়ালেখা করবি আর নতুন বউ মিষ্টিকে,এই সংসারকে সামলাবে।আর আমাকেও।”

মল্লিকা মুখ নত করে।চক্ষু কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে রাগে।জমিনের দিকে চেয়ে ফোঁসফোঁস করতে লাগলো। মল্লিকাকে ধাক্কা দিয়ে মাহরুর একই বুলি আওড়ায়,

“বল কেমন হবে?”

“খুব খারাপ হবে মাহরুর ভাই।খুব খারাপ!আমি জানতাম ছেলে মানুষের চরিত্রে একটু আধটু খোট থাকে।আপনাকে অন্যরকম ভাবতাম।আপনিও আর পাঁচটা পুরুষের মতই বেরিয়ে এলেন।”

মল্লিকার এমন উচু গলায় চক্ষু প্রসারিত হয় মাহরুরের। তৎক্ষনাৎ নুয়েও ফেলে।

বলে, “ভাই ডেকেছিসতো?ঠিক আছে।আমি ঈদের পর আরেকটা বিয়ে করছি।ফাইনাল!”

দাতে দাত চেপে মল্লিকা বললো, “কতগুলো বউ লাগবে আপনার!”

মিষ্টির মনোযোগ টিভির থেকে বেশি সামনে লাইভ টেলিকাস্টএ।চেয়ে আছে দুজনের দিকে।চেচাচ্ছে কেনো বোঝার চেষ্টা করছে। মাহরুর একবার মিষ্টির দিকে চেয়ে আবার মুখ ফেরায় মল্লিকার দিকে।

বলে, “মেয়ের সামনে আমার সাথে উচু গলায় কথা বলছিস?”

“আপনি যেটা করছেন?সেটা মেয়ে জানলে আপনাকে কি সাবাশি দিবে?আমি ভাবতেও পারছি না আপনি এমন একটা কথা বলতে পারেন।”

“ভাবতে পারিসনি এখন ভাব।”

মাহরুর প্রত্যেকটা কথা গম্ভির সুরে বলছে। মল্লিকাও অবলীলায় বিশ্বাস করে নিচ্ছে তার কথা।

মল্লিকার চোখ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়ায়।বলে, “আব্বাকে কত আশ্বাস দিয়ে আমাকে এনেছেন।বিয়ে করেছেন।আমি বিয়ে করতে চাইনি।ওই সিদ্ধান্তটাই ঠিক ছিলো।”

মল্লিকা আবার বললো, “আমি মিষ্টিকে নিয়ে চলে যাবো গ্রামে।আমার টিকেট করুন।”

এবার বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। মাহরুর বুঝলো।এই ভনিতা বেশিক্ষণ চললে সত্যিই চলে যাবে।ভীষণ অভিমানী। মাহরুর বুঝলো বয়স বাড়লেও বুদ্ধিটা হাঁটুর নিচে তার চন্দ্রমল্লিকার।সামান্য দুষ্টুমি বুঝে না। তাকাচ্ছেও না তার দিকে।অভিমান ভাঙ্গানোর পূর্বেই সিড়ি ঘরের কোণে দৌড় লাগায় মল্লিকা।

মিষ্টি বলে উঠলো, “মা কাদঁছে”

“না মিষ্টি মা কাদঁছে না।চোখে ময়লা পড়েছে।তুই টিভি দেখ।”

মাহরুরও বড় বড় কদম ফেলে চলে গেলো সেখানটায়। হাঁটুর উপর হাত বেঁধে বসে আছে মল্লিকা। মাহরুর মুচকি হাসলো।সেও মল্লিকার নকল করে তার পাশে বসে পড়লো।

ডেকে বললো, “শুনেন”

“আমি কিছু শুনতে চাই না।আপনি চলে যান এখান থেকে।” জবাব দেয় মল্লিকা।

মল্লিকার কাধে মাথা রাখে মাহরুর।বলে, “আমি আপনাকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে ভাবতেও পারি না এখন আর। বিয়েতো দূরের কথা।”

“তাহলে কেনো বললেন বিয়ের কথা?”

“সম্পর্কে শুধু ভালোবাসা থাকলেই হয়? খুনসুটি দরকার নেই?”

“তাই বলে এমন ধরনের খুনসুটি?”

“আজ এই খুনসুটি না করলে জানতে পারতাম না আপনি চিৎকারও করতে জানেন।রাগ দেখাতে জানেন।আমার মজা করার বদৌলতে আপনার রাগী মুখটাও দেখা হলো।”

“আপনার মুখ থেকে বের হওয়া সব কথাই আমার সত্য মনে হয়।”

“এমা!এটা কেমন কথা?আমি কি ফেরেশতা নাকি?আমিও মানুষ।তাও এই জাহিল যুগের। মিথ্যে আমিও বলি।”

“আমার সাথে কখনো বলবেন না।”

“আচ্ছা বলবো না।এবার চলেন।মিষ্টি চলে আসবে নাহয়।”

মাথা তুলে মাহরুর।সুন্দর করে মানিয়ে বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে ঘরে।মিষ্টি মায়ের মুখ ভালোভাবে পরখ করছে।মা কি কাদঁছে নাকি না?কোনো প্রকার অস্রু চোখে মুখে না দেখে বাচ্চা মেয়েটিও সস্তি পায়।

মল্লিকা বললো, “আমি পড়বো।কিন্তু এখন না।আম্মা,আব্বা ঢাকা আসুক।মিষ্টি পুরোপুরি স্কুলে মনোযোগী হোক।আর আপনার চাকরিটাও।যখন দেখবো কোথাও কোনো সমস্যা নেই তখনই ভর্তি হবো।এখন মাথায় এত চিন্তা নেওয়ার কারণ নেই।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।মেনে নিলাম”

____

রোজা শুরু হয়েছে।দিন চারিতায় পরিবর্তন।পূর্বের চেয়ে বেশি ক্লান্ত মাহরুর।যতই আরামে থাকুক অফিসে ঘরের মতন শান্তি অন্য কোথাও নেই।প্রতিদিন চেষ্টা করে পায়ের গতি বাড়িয়ে আযান পড়ার আগেই বাড়ি ফিরতে।কোনোদিন পারে আবার কোনোদিন বাড়ির দরজায় আসতেই মাগরিবের আজান দেয়। ভাগ্যিস দুটো দিন ছুটি পায়। শক্তপোক্ত শরীরেও আর কত কুলায়?মল্লিকা রোজা রেখে ঘরের সব কাজ সামলায়।সেহেরীর রান্না থেকে শুরু করে ইফতার পর্যন্ত। মাহরুর বাড়িতে থাকলে সে টুকটাক সাহায্য করে।এভাবেই কাটছে মাহে রমজান।

আজ বিশতম রোজা। ভাগ্যক্রমে আজ সোমবার।বাড়িতেই আছে মাহরুর।আজ বাহির থেকেই ইফতার আনবে বলে জানালো মাহরুর।সারাদিন ঘুমিয়ে পাড় করছে মাহরুর।শুধু নামাজের সময় লাফিয়ে উঠে।আবার ঘুমিয়ে পড়ে।বিকেল বেলায় ইফতার আনার জন্য চলে গেলো।

ইফতার বসেছে জমজমাট।তিনজনে আর কতই খাবে?অল্প অল্প করে বাড়িয়ে কিছু আইটেম নিলো।পড়ে ক্ষুদা পেলে খাওয়া যাবে।কেনাকাটার সময়ই সামনের দোকানে চোখ পড়ে।ছোট্ট একটা ভাঙ্গারির দোকান।খালি করা হচ্ছে। মাহরুরের পরিচিত লোক।

মাহরুর এগিয়ে গিয়ে বললো, “মফিজ চাচা?দোকান খালি করেন কেন?”

“শহরে থাকুম না আর” মফিজ চাচা উত্তর দিলেন।

“কেন চাচা?”

“গেরামে জায়গা আছে।ওদিকেই ক্ষ্যাত খামারি করমু।এদিকে আর ভাল্লাগে না।সবাই ওদিকে আমি একলা এদিকে পইড়া আছি।আর দোকানের যেই ভাড়া!আমার ইনকামও অত না”

“ভাড়া কত চাচা?”

“নয় হাজার হাজার টাকা।”

মাহরুরের মস্তিষ্ক হুট করে জ্বলে উঠলো।নয় হাজার টাকা এই সময় মোটামুটি ভালো। নিশ্চুপ থেকে কিছুক্ষন ছক আকে মাথায়।যেই বুদ্ধিটা এসেছে মাথায় সেটা কি কাজে লাগাবে?

মফিজ চাচা বললেন, “যাই ভালা থাইকো”

“চাচা দোকান ভাড়া হয়ে গেছে নতুন কারো কাছে?”

“না কালকে টু-লেট ঝুলাইবো হুনলাম।”

“চাচা মালিকের নাম্বারটা দিতে পারবেন?”

মফিজ চাচা বুক পকেট থেকে তার ফোনটা বের করে মাহরুরের হাতে দিলো।বললো, “এদিকে সাজ্জাদ নামের একটা নাম্বার আছে।খুইজা লও।”

মাহরুর নাম্বার খুঁজে বের করে।নাম্বার নিজের ফোনে টুকে নিয়ে বিদায় দিলো মফিজ চাচাকে।সাথে তার নাম্বারটাও দিয়েছে।কোনো দরকার পড়লে যেনো তাকে কল করে। হাটতে হাটতে ফোন লাগায় সাজ্জাদ রহমানকে।টুকটাক কথা বলে নিলো।আযান দিতে আর দশ মিনিট বাকি।পায়ের গতি বাড়িয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়।
বাড়ির ভেতরের সিড়িতে রহিম মিয়াদের বাড়িতে কাজ করা দুলালকে দেখে বললো,

“কিরে?দাড়িয়ে আছিস কেনো?”

“এমনেই ভাই।”

“এই তোর কি মন খারাপ?”

“মন খারাপ না ভাই”

দুলালের মুখ বিরস।সারাদিন বুড়ো বুড়ির সাথেই সময় কাটে।বয়স বেশি না। আঠারো উনিশের ঘরে।

মাহরুর আবার বলে, “কোনো সমস্যা হইছে নাকি রহিম চাচার সাথে?”

“না ভাই।রহিম চাচা ভালো মানুষ।আমারে সব খরচা দেয়।কিন্তু আমার এতবড় পরিবার।চলে না এট্টুকে।রহিম চাচার কাছে চাইতে শরম করে। উনিই চলে ওনার ছেলের টাকায়। ভাড়া যা পায় তাও ব্যাংকে নিয়া জমা করতে হয় প্রতিমাসে।”

সু সময়ে সঠিক মানুষ চোখের সামনে পড়ে যাওয়া।এটাও একটা ইঙ্গিত এগিয়ে যাওয়ার। মাহরুর নিজের সিদ্ধান্তে আরো একটু ভরসা পেলো।

দুলালকে বললো, “শোন ঘরে যা ইফতার কর।ইফতারের একঘন্টা পর উপরে আসবি।কথা আছে তোর সাথে।”

“আচ্ছা ভাই”

ইফতারের পর নামাজ আদায় করে বিছানায় পিঠ ঠেকিয়েছে মাহরুর।শরীর ছেড়ে দেয় পুরোপুরি। মল্লিকার শান্তি নেই।ইফতার শেষেও তার কাজের অন্ত হয়না। মাহরুরের ধমকে এসে বসে।কাজ প্রয়োজন তেমন বিশ্রামও দরকার।আধ ঘন্টা পর দুলাল এসে হাজির।

মাহরুর বলে উঠে, “এসেছিস?”

“হ ভাই”

মাহরুর মল্লিকাকে ডেকে বলে, “চন্দ্র ওকে চা দিস।”

মল্লিকা আগেই যা বানিয়ে রাখে। দুলালকে দেখে ফ্লাক্স থেকে বের করে এগিয়ে দিলো দুজনকেই। মাহরুর বলে,

“মোড়ের দোকানটা খালি হয়েছে।আমি ভাবলাম ঐখানে একটা ছোট খাটো স্টেশনারী শপ ওপেন করবো।এসব দরকারি জিনিস।আমাদের এলাকায় স্টেশনারি নেই বললেই চলে।কিন্তু মানুষ পাচ্ছিলাম না।তুই পারবি করতে কাজ?”

দুলাল দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া দেয়।ভালো আইডিয়া।কিন্তু বললো, “আমি কাজ করতে পারবো কিন্তু ভাই রহিম চাচা আর চাচী?”

“ওনাদের বেশি কাজ না।প্রয়োজনে টুকটাক দরকার হয় তখন তুই করে দিস।যেই সময়টা খালি থাকিস তখন দোকানে বসবি।রহিম চাচার কোনো দরকার পড়লে ডেকে নিবে তোকে।আমিও বারণ করবো না।কারণ তাদের দায়িত্ব সবার আগে।”

দুলাল সম্মতি দিয়ে বললো, “ভাই আপনি রহিম চাচার লগে কথা কন।”

“চল তাহলে নিচে যাই।”

মাহরুর রহিম চাচার সাথে আলোচনা করতে নিচে এসেছে।ঘরে বসেই সবটা খুলে বললো।এটা আরো একটা সুযোগ।অল্প সময়ের সিদ্ধান্তে কাজ করার পরিকল্পনা।হুটহাট আসা বুদ্ধিটা কাজে লাগাবে বলে ভেবে নেয়।রহিম চাচাও তার এই সিদ্ধান্তে মত প্রকাশ করে।সম্মতি দেয়।তাদের আর কিই কাজ?রান্না বুয়া এসে করে দিয়ে যায়।বাজার করে দুলাল। তারও কিছু আলাদা উপার্জন হবে।রহিম চাচার সম্মতি নিয়েই হাসি মুখে ফিরলো।কানে ফোন চেপে আছে। রেদোয়ান তার শুভাকাঙ্ক্ষী, উপদেষ্টা।তাকে জানালে সেও ভালো চিন্তা বলেই মত প্রকাশ করলো।

মাহরুর বাড়ি ফেরার সাথে মল্লিকা প্রশ্ন ছুঁড়ে, “ব্যবসা করার চিন্তা করছেন?চাকরির কি হবে?”

“চাকরিতো করবোই”

“তাহলে দোকান?”

“সেটাও আমারই থাকবে।কিন্তু সেখানে কাজ করবে দুলাল। ওরও উপার্জন হলো।আমারও লাভ।”

“ভেবে চিন্তে করছেনতো?দোকানে কিন্তু আলাদা খরচ হবে।”

“শোন চন্দ্র।টাকা কামাতে হলে প্রথমে টাকা ঢালতে হয়।আমি ভেবে চিন্তেই করছি।মানুষের কিছু শখ থাকে, আহ্লাদ থাকে।আমি আমার সীমা জানি।সেটা কোনোদিন অতিক্রম করবো না।কোনোদিন বিলাসবহুল জীবনে আসক্ত হবো না।যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই।”

মাহরুর স্মিথ হাসে।হাত তুলে ডাকে মল্লিকাকে কাছে। মিষ্টিকেও পাশে বসিয়েছে।মুঠোফোন বের করে কিছু ছবি তুলে ধরলো তাদের দুজনের সামনে।মল্লিকা,মিষ্টি খুব আগ্রহ নিয়েই দেখছে।একের পর এক ছবি দেখিয়ে যাচ্ছে মাহরুর।ছিমছাম একতলা একটা বাড়ি।বেশ সুন্দর ডিজাইন।

ফোনের দিকে দৃষ্টিপাত করে মল্লিকা প্রশ্ন করে, “এটা কার বাড়ি?”

“এটা একটা বাড়ির ডিজাইন।”

“ডিজাইন দিয়ে কি করবেন?আর বাড়ি দেখেই কি হবে?”

মাহরুর বললো, “এই বাড়ির ছবিগুলো যত যত্ন করে টুকে রেখেছি?তত যত্ন করেই ঠিক এই রকম একটা বাড়ি বানাবো।তোর জন্য,মিষ্টির জন্য,আমার জন্য।”

মল্লিকা নিজের মনের ভাব সরাসরি প্রকাশ করে বললো, “আমি এই চিলেকোঠায়ও খুশি।কিন্তু আমি খুব করে চাইবো আপনার এই ইচ্ছেটা পূরণ হোক।খুব শীগ্রই হবে দেখে নিয়েন।”

“হতেই হবে চন্দ্র।দুঃখের দিন শেষ।যত সহ্য করার সয়ে নিয়েছি।এখন এই জং পড়া মস্তিষ্কটাকে ঝালাই করবো।নিত্য নতুন কাজে লাগাবো।আমি লোভ করছি না চন্দ্র।আমার শখ এটা।আমার দুটো স্বপ্ন ছিল।একটা পূরণ হয়েছে। দ্বিতীয়টা হবে ইনশাল্লাহ।”

আগ্রহী হয়ে মল্লিকা জানতে চায়, “কি সেই স্বপ্নটা?যেটা পূরণ হয়েছে?”

“তোকে পাওয়ার।তোকে কাছে পাওয়ার।মৃত্যুর আগে তোর মুখ থেকে এটা একবার শোনার ইচ্ছে ছিলো।তুই আমাকে ভালোবাসিস।এটাও বলার ইচ্ছে ছিলো তোর ভালোবাসা আমি হারেহারে টের পেয়েছি।আমিও মজেছি ওই অনুরাগে।কিন্তু ভাগ্য আমাকে আমার চাওয়ার চেয়ে বেশি দিয়েছে আমাকে।তোকে পেয়েছি।তোর বদৌলতে একটা বাচ্চা মেয়েকেও পেয়েছি।একটা সুন্দর জীবন পেয়েছি।সারাজীবন তোর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও শেষ হবে না চন্দ্র।”

চোখে জল এসেছে মল্লিকার।অনুভব করছে মাহরুরের প্রত্যেকটা কথা। জলে টলমল নেত্র সামলে নিয়েই মল্লিকা বললো,

“আপনি যতটা কৃতজ্ঞ ততটা আমিও।আমাকে নতুনভাবে বাঁচিয়ে তুলেছেন।ওই নরক থেকে বের করে এনে নতুন জীবন দিয়েছেন।”

“চন্দ্র?সেদিন মা যদি আমাদের বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যেতেন তাহলে আমাদের গল্পটা পানসে হতো তাই না?এই গল্পটা ঠিক।অনেক অনেক কষ্টের পর যখন সুখ আসে তখন বড্ড আয়োজন করেই আসে।চন্দ্র মাহরুরের গল্প এভাবেই একটা সুন্দর চিত্র বহন করে।”

“এভাবেই হয়তো প্রণয় লিখিত ছিলো”

“কি করে বোঝাবো তোকে বল?বক্ষ ভেদ করে হৃদয় দেখানোর সুযোগ পেতাম?তাহলে হয়তো পরিমাপ করতে পারতি কতটা পাগল হয়েছি আমি।কত কাতর!কত দুর্বল আমার চিত্ত তোর কাছে”

মাহরুরের তর্জনী আঙ্গুল নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মল্লিকা বললো,

“আমি জানি।বুঝি।আপনার কাছাকাছি থাকলে আমি হারিয়ে যাই।মনে হয় যেনো ভাসছি মহাশূন্যে। আপনার কথায় ভিন্ন অনুভূতি,আপনার ছোঁয়ায় অন্যরকম ভালোবাসা।আমি এসব আগে কখনো অনুভব করিনি।তাই ঘাবড়ে উঠি কখনো কখনো।”

গালে হাত দিয়ে মধ্যিখানে বসে দুজনের কথায় মনোনিবেশ করে আছে মিষ্টি।কোনো বিরক্ত করলো না তাদের।কথা বলতে দিলো।তাদের কথা শেষে একে অপরের দিকে চেয়ে থাকতে দেখে মিষ্টি বলে উঠে,

“কি হয়েছে মা?মাহি বাবা?তোমরা কাঁদছো কেনো?”

দুজনেই একই সঙ্গে মিষ্টির গালে হাত রেখে হেসে উঠে।এই বাচ্চাটা ঘরের জান।তাকে ছাড়াও যে অসম্পূর্ণ মাহরুর,মল্লিকা।

মাহরুর বললো, “আমরা নতুন বাড়ি বানাবো তোর জন্য।সেই খুশিতে কাদছি।ওই বাড়ির নাম কি হবে জানিস?”

“কি হবে মাহি বাবা?”

“মিষ্টি কুঞ্জ”

“আমার নাম?” খুশিতে গদগদ হয়ে বললো মিষ্টি।

“হ্যা তোর নাম।তোর জন্যইতো বানাবো।”

“সেখানে আমি আমার স্কুলের বন্ধুদের আনবো।”

“আনিস”

___

মাসের শুরুর দিকেই তেইশ রোজা পড়েছে।বেতন পাওয়ার সাথেসাথেই অ্যাডভান্স টাকা পরিশোধ করে দোকানটা নিজের জন্য বুক করে নিয়েছে মাহরুর।এবার ঈদ খরচা দ্বিগুণ। ভাগ্যিস এবার ঈদ বোনাস পেয়েছে।নাহয় এত খরচ কুলানো যেত না। ব্যাংকের টাকা দিয়ে দোকানে নতুন মাল তুলবে।যত সম্ভব কম খরচে করার চেষ্টা করবে।দুইদিন পর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।কোনো রকম দোকানটা আটকায় মাহরুর।যেকোনো সময় অন্য কেউ এসে নিয়ে নিত।সোমবার পড়ায় আজ ভাবলো ঈদের কেনাকাটা করে ফেলবে।যেমন চিন্তা তেমন কাজ। মল্লিকাকে আদেশ ছুঁড়েছে।দ্রুত তৈরি হয়ে নিতে।আজই সব কেনাকাটা শেষ করে দায়মুক্ত হবে।

এক ঘণ্টার মধ্যে মার্কেটে হাজির হয়।কেনাকাটা চলছে।এক পর্যায়ে মল্লিকা বলে উঠে,

“একটু দাঁড়াবেন?”

“কিছু নিবি?” মাহরুর জানতে চায়।

“হ্যাঁ।”

“কোথায় যাবি?চল।”

মল্লিকা সামনের পাঞ্জাবির দোকানে এসে দাঁড়ায়।খুঁজে খুঁজে একটা সাদা পাঞ্জাবি পছন্দ করলো। মাহরুরের গায়ের মাপ নিয়ে দেখছে। মাহরুর বলে উঠে,

“আমার জন্যতো ঈদের কাপড় নিয়েছি।আবার পাঞ্জাবি দেখছিস যে?”

মল্লিকা ঠোঁট কামড়ে হেসে উত্তর দেয়, “পড়ে বলবো।আপনি মাপ দিন।”

“চন্দ্র অযথা আরেকটা পাঞ্জাবি কেনো নিবো বলতো?”

“আমি নিবো।কিছু টাকা জমিয়েছি।সেটা দিয়েই কিনবো।আপনি না করবেন না দয়া করে।আরো অনেক কাজ বাকি।”

মল্লিকা রহস্যময় কথা বলছে।সরাসরি না করে দিবে তার জমানো টাকায় কিছু নিতে।সম্পূর্ণ অহেতুক।তবে মল্লিকা শুনলো না।ছোট্ট পার্স থেকে টাকা বের করে দোকানির হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।পরপর মাহরুরকে পেছনে ফেলেই আরো কিছু টুকটাক কিনে ফিরে আসে।
মাহরুর জানতে চেয়ে প্রশ্ন করে,

“আবার কি কিনলি?তুই কষ্ট করে জমিয়েছিস টাকা।খরচ করার কি দরকার?পড়ে তোর দরকার হলে?”

“হবে না।”

“বড্ড জেদী হচ্ছিস তুই দিনদিন।”

মল্লিকা উত্তর দেয় না।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসে।সম্পূর্ণ সাদা পাঞ্জাবি কিনেছে।কারুকার্য বিহীন।যথাযথ উত্তরও দিচ্ছে না। মাহরুরের প্রত্যেক কথার বিপরীতে ঠোঁট টিপে হাসে।আজব!মল্লিকার এমন আচরণ অদ্ভুত লাগছে মাহরুরের কাছে।অন্যদিকে মল্লিকার মস্তিষ্কে চলছে ভিন্ন বুদ্ধি।

চলবে…

চন্দ্র’মল্লিকা ২৮
লেখা : Azyah_সূচনা

পা টিপে মল্লিকার পদচারণ ছোট্ট চিলেকোঠার ঘরটাতে। মাহরুরের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়ানো মুশকিল।কিন্তু আজ পেরেছে।হয়তো ভাগ্য সহায়।আধার আচ্ছন্ন নিশিতে চোরের মতন হাঁটাচলা করছে।নিচের ছোট্ট বাটন ফোনের বোতাম টিপে দেখে নিলো কয়টা বাজে?রাত দুইটা। মাহরুরের ভারী ঘুম।সহজে উঠে না একবার ঘুমিয়ে পড়লে।ফোনের লাইট জ্বালিয়ে আলমারি থেকে কিনে আনা পাঞ্জাবিটা বের করে নিল।সাথে খয়েরী কাগজে মোড়ানো থলেটাও।এটায় কালো রঙের মোটা সুতো আছে।সাথে সুই।একবার মাহরুরের দিকে চেয়ে খুব সাবধানে সিড়ি ঘরের পাশে গিয়ে বসে পড়ে।লাইট জ্বালিয়ে নেয়। ঢিপঢিপ করা হৃদয় নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়।

আশেপাশে ছড়িয়ে আছে কেচি,সুতো,কলম ইত্যাদি।হাঁটুর উপর মাহরুরের পাঞ্জাবিটা রেখে কলারে সুন্দর নকশা তৈরি করছে মল্লিকা। মাহরুরের মতই চট করে বুদ্ধিটা এসেছে মাথায়।তাকে খুশি করার ছোট্ট প্রয়াস।জানে না কেমন হবে? হাতে সময় কম।সাড়ে তিনটে বেজে যায় অর্ধেক কাজ শেষ করতে।সেহেরীর সময় হবে এখনই।নিচু হয়ে বসে এক ধ্যানে কাজ করতে করতে ঘাড় ব্যথা হয়েছে।উঠে গেলো মল্লিকা।বাকি কাজ বাড়ি গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে করবে।

সকাল সকাল মল্লিকাকে ঘুমোতে দেখে ডাকলো না আর।মিষ্টি চোখ পিটপিট করে চেয়ে আছে কাথার নিচে।মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে মাহরুর বললো, “আমি আসি।মার সাথে আবার ঘুমিয়ে পড়।উঠলে বলে দিস অফিসে গিয়েছি আমি।”

“আসার সময় জিলাপি আনবে মাহি বাবা।”

“এত মিষ্টি খাওয়া ঠিক না।আজকে অন্যকিছু”

মিষ্টি মুখ লটকে বললো, “তাহলে চিপস খাবো আজ।”

মাহরুর মাথা দোলায়।বেশি আদরে অভ্যাস খারাপ হচ্ছে।ঈদের পর ছাড়াতে হবে বাহিরের খাবারের অভ্যাস।বললো, “আচ্ছা আনবো।মাকে বলে দিস কিন্তু।”

“আচ্ছা”

__

বাড়ি ফেরার পথে বাসের টিকেট করেছে মাহরুর।আগামীকাল গ্রামে যাবে। বন্ধ শুরু নিজেকে যেনো কারামুক্ত মনে হলো।আজ অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশীই উচ্ছলতার সাথে বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছে।আসার পথে সেমাই নিয়েছে ঈদের জন্য।হাটতে হাটতে রাস্তার দ্বারে একটি কসমেটিকস এর দোকানে চোখ পড়ে।বড় পোস্টারে একজন মডেল তার মেহেদী রাঙা হাত দেখিয়ে আছে।পিত্তি জ্বলে উঠলো। দাঁত দিয়ে জ্বিভ কাটে।এত বেখেয়ালি কি করে হলো মাহরুর?মেহেদী ছাড়া বাংলাদেশ কেনো বিশ্বের কোনো নারীর ঈদ পরিপূর্ণ হয়?ছোটোবেলা থেকেইতো মল্লিকার শখ।ঈদের আগে হাত ভর্তি মেহেদী লেপে ঘুরে বেড়াতো এদিক ওদিক। কিশোরী মল্লিকাকে কল্পনা করে মুচকি হাসি ফোটে ঠোঁটের কোণে।

পায়ের গতি বাড়িয়ে দোকান এর কাছে গিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে।এখানে মহিলাদের সরঞ্জাম। পুরুষ মানুষ দোকান খুলে বসেছে ঠিকই তবে অন্য পুরুষের প্রবেশে একটা মনের বাঁধা থাকবেই।

দোকানে সাহায্য করে ছেলেটি এগিয়ে এসে বললো, “কি লাগবো?”

“মেহেদী আছে না?” মাহরুর জবাবে জানতে চায়।

ছেলেটি কপাল কুঁচকায়।বিচিত্র ভঙ্গিতে বলে উঠলো, “আপনি ব্যাটা মানুষ হয়ে মেন্দি দিবেন?”

তৎক্ষনাৎ বিরক্ত হয় মাহরুর।সে কেনো দিবে মেহেদী? বিরক্তিকর মুখ বানিয়ে বললো, “আশ্চর্য্য আমি কেনো মেহেদী দিবো?আমি আমার স্ত্রীর জন্য নিতে এসেছি।তুমি এত কথা না বলে মেহেদী দাও।”

“কোনটা নিবেন?অনেক কোম্পানির আছে।”

“ভালো কোনটা?”

“অনেকগুলা ভালো ব্র্যান্ড আছে।”

‘ ব্র্যান্ড ‘ মেহেদীতেও ব্র্যান্ড।কি অদ্ভুত কথাবার্তা।মেহেদীর উপর পি এইচ ডি করা নেই মাহরুরের। ছেলেটিও কাজের চেয়ে বেশি অহেতুক কথা বলছে।

দাতে দাত চেপে মাহরুর বলে, “দোকানের সবচেয়ে ভালো?এক নাম্বার?যেটা আছে সেটা এনে নাও।”

“কিন্তু…”

“ভাই প্লিজ যাও। হাইফাই ব্র্যান্ড এর টা নিয়ে এসো।”

“হাইফাই?এটা আবার কোন ব্র্যান্ড?”

বিরক্তি রাগে পরিণত হচ্ছে।রোজা রেখে,সারাদিন অফিস করে ব্যান্ড এর তর্জমা বিশ্লেষণ করতে ইচ্ছুক নয় মোটেও। মাহরুর বললো, “এই ছেলে তোমার মালিককে ডাকো।আমি বুঝিয়ে বলছি।”

ছেলেটি মুখ বেকিয়ে বললো, “না না।আপনার সবচেয়ে ভালো মেহেদী লাগবোতো?আইনা দিতাছি দাঁড়ান আপনে।”

আহাম্মক বনে গেছে মাহরুর।ফাজলামো নাকি?এই শুদ্ধ স্পষ্ট বাংলাটা একটু আগে বুঝলেইতো এখানে সময় নষ্ট হতো না। নেহাত মাহরুরকে রাগিয়ে দিলো। ফ্যাচফ্যাচ করে বিগড়ে দিয়েছে মেজাজ।অবশেষে মেহেদীর দুটো কোণ হাতে পেয়েছে।নিয়েই হাটা ধরলো। গুনেগুনে পনেরো মিনিট নষ্ট করেছে এই ছেলে।

পাঞ্জাবিতে শিল্পকলা প্রদর্শন করতে ব্যস্ত মল্লিকা মাহরুরের গলার আওয়াজে লাফ দিয়ে উঠে।সবকিছু হন্তদন্ত হয়ে লুকিয়ে দরজা খুলে দিলো।মেহেদী মল্লিকাকে এগিয়ে দিয়ে বললো, “ধর!”

মাহরুরকে বিরক্ত মুখে দেখে মল্লিকা প্রশ্ন করে, “এমন দেখাচ্ছে কেনো আপনাকে?”

“মেহেদী যুদ্ধ করে এসেছি।তাই এমন দেখাচ্ছে।”

মেহেদী যুদ্ধ?এটা আবার কেমন কথা?মল্লিকা হিসেব মেলাতে দরজায়ই দাড়িয়ে আছে। বিস্মিত মল্লিকা।ভাবতে লাগলো তারই বুদ্ধি কম নাকি মাহরুর মজার ছলে বলে গেলো এসব? মাহরুর উল্টোঘুরে মল্লিকার হাত টেনে ঘরে নিতে নিতে বলে,

“মাথায় এত চাপ দিস না।”

“আচ্ছা আপনি কি বললেন?কিসের মেহেদী যুদ্ধ?”

“চাচা চাচী হয়তো তোকে বলেনি ছোটোবেলা থেকে তোর মস্তিষ্ক ছোট।বড় কথা আটে না।এসব নিয়ে ভাবিস না।আমি যুদ্ধ জয় করে দুটো মেহেদী এনেছি।তোর স্বামী বিজেতা”

প্রথম কথা না বুঝলেও এই কথা ঠিকই বুঝেছে মল্লিকা। উপহাস করা হচ্ছে তাকে।মল্লিকা ঠোঁট উল্টে নেয়।কম বোঝার কারণে এতবড় অপমান?

___

সকাল আটটার বাসে চেপে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে মাহরুর,মল্লিকা আর মিষ্টি।ইফতারের আগে আগে পৌঁছাতে হবে। কাউন্টারে ভিড় দেখে চোখ কপালে উঠলো।সবাই ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে ফিরে যাচ্ছে যারযার বাড়িতে।ভাগ্যিস সেদিন টিকেট পেয়েছে নয়তো বাড়ি যাওয়াই হতো না।

দুপুর একটা নাগাদ পৌঁছালো গ্রামে।রমজান চাচা আজ বাস কাউন্টারে এসে হাজির। তিনজনকে একসাথে পেয়ে খুশি কুলাচ্ছে না।এইতো কয়দিন আগে ঢাকা এসেছিল।অথচ আনন্দ দেখে মনে হলো কয়েক বছর দেখে না তাদের। মাহরুর বাড়ির সামনে এসে রমজান সাহেবকে বললো,

“চাচা বাড়ির চাবিটা?”

“বাড়ির চাবি দিয়ে কি করবি?”

“থাকবো কোথায় চাচা?”

“ওমা! এ কেমন কথা থাকবি কোথায়?বাড়ি চল।”

“এটাইতো বাড়ি।আমার বাড়ি।আপনার মেয়ের শশুর বাড়ি।”

মাহরুরের কথার অর্থ বুঝতে সক্ষম রমজান সাহেব। সত্যিইতো এটা এখন থেকে তার শ্বশুরবাড়ি। মাহরুরের ঘরই এখন মল্লিকার ঘর।রমজান সাহেব এর বাড়ি আর কতদূর মিনিট পাঁচেক এর রাস্তা।দৌড়ে দৌড়ে আসা যাবে।যেহেতু মাহরুর নিজের বউকে প্রথমবারের মতন নিয়ে নিজের বাড়িতেই রাখতে চাচ্ছে এতে বাঁধা দিলো না।

ফতুয়ার পকেট থেকে চাবি বের করে এগিয়ে দিয়ে বললো, “মেয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে থাকবে মেনে নিলাম।কিন্তু ইফতার তোর শশুরবাড়িতে করতে হবে মাহি।আমি মিষ্টির জন্য খাবার দিয়া যাইতেছি।”

মাহরুর হেসে সম্মতি দেয়, “ঠিক আছে চাচা।”

“তোরা ঘরে যা।আমি তোর চাচীকে ডাইকা আনি।ঘরটা সাফ করে দিবো নে।”

“না চাচা।আমরা যতটুক প্রয়োজন করে নিবো।”

রমজান সাহেব মুখে হাসি নিয়ে পথ চলছেন।মেয়ের জীবনে আলো ফুটেছে।এই দেখে কোন বাবা না তৃপ্তি পাবে।বাড়ি ফিরে ফরিদা বেগম এর উদ্দেশ্য বললেন,

“তোমার মেয়ে, নাতনি আর মেয়ের জামাই এসেছে ওই বাড়ি।”

ফরিদা বেগম জানতে চাইলেন, “এখানে এলো না কেন?”

“মাহি চায় ওর বউ বাচ্চা ওর বাড়িতেই থাকুক।আমার মাইয়া এই সংসারটা চাইছিল।আজকে পাইছে।আমি আর বারণ করিনাই।ইফতারে আসবে।কি কি লাগবে কও?আজ ভরপুর আয়োজন করবা কিন্তু।”

“আমি আপনারে লিস্ট দিতেছি। সব বাজার থেকে আনবেন।আর রাত্রের খাবারের বাজারটাও একবারে করে ফেইলেন।”

“আচ্ছা ড্রয়ার থেকা টাকা আইনা দাও।আর একটা বড় ব্যাগ দাও।আর হ্যা মিষ্টির জন্য দুগা ভাত বসাও।”

এই ঘরটা এখনও তেমনি আছে। আধাপাকা।বড় চাচার নিজ হাতে তৈরি এই ঘরে একটা ইটও পরিবর্তন করা হয়নি।বলা হয় এখানে তার গন্ধ লেগে আছে। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেলেও এই বাড়ির চিত্র এমনি থাকবে।আর এই ঘরটাতে নিজের সংসার পাতানোর ইচ্ছে ছিল মল্লিকার।আজ পূরণ হয়েছে।তবে ভিন্নভাবে।চাচীর কথা মনে পড়ে।যতই হোক ছোটবেলায় চাচী মল্লিকাকে নিজের মেয়ের সাথেই,মেয়ের মতন করেই ভালোবেসেছে।তারই দেওয়া নাম ‘ চন্দ্র ‘। হঠাৎ কি হলো?সেই চন্দ্র লিজা বেগমের চোখে কাঁটা হয়ে বিধতে শুরু করে।

ঘরে প্রবেশ করে প্রত্যেকটা জিনিস হাতিয়ে দেখতে শুরু করে মল্লিকা। মাহরুর পিছু ডেকে বললো, “স্মৃতিচারণ পড়ে করিস চন্দ্র।এখন একটু বিশ্রাম নে”

“এখন?”

“হ্যা এখনই।জার্নি করেছিস।এরমধ্যে রোজা।ইফতার এর সময় হতে অনেক দেরি।”

“আচ্ছা।আপনিও ঘুমোন একটু।”

__

চোখের পলকে রমজান মাস কেটে গেছে।আজ চাঁদরাত।মল্লিকার হাত চলছে তাড়াহুড়ো করে।যেভাবেই হোক আজকে পাঞ্জাবিটা তৈরি করতেই হবে।সে চায় আগামীকাল মাহরুর এই পাঞ্জাবি পড়েই ঈদের নামাজে যাক।মনের মধ্যে নানান প্রশ্ন।পছন্দ হবেতো?গ্রামে বসবাসের সুবাদে টুকটাক সেলাই কাজ শিখা হয়েছিলো।সেটাই প্রদর্শন করলো মাহরুরের পাঞ্জাবির কলারে।ছেলে মানুষ অত জাঁকজমক পছন্দ করে না। মাহরুরও তাই।হালকা পাতলা কারুকাজে পাঞ্জাবির কাজ শেষ করেছে। সাদার মধ্যে কালো সুতো বেশ সুন্দর ফুটে উঠলো।মল্লিকার চোখে ভালো লাগলেইতো হবে না। মাহরুরের পছন্দ হতে হবে।

এশার নামাজ শেষে ঘরে ঢুকতেই মাহরুরের প্রশ্ন, “মেহেদী দিস নি কেনো এখনো?”

মল্লিকা উত্তরে বলে, “একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিলো।”

বুকে হাত বেঁধে মাহরুর ভ্রূ নাচায়।বলে, “কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুনি?”

মল্লিকা বালিশের নিচে ভাজ করে চাপা দিয়ে রাখা পাঞ্জাবিটা বের করে মাহরুরের হাতে তুলে দিলো। মাহরুর আশ্চর্য্য হয়।এটাতো সেই পাঞ্জাবীটা?কিন্তু এটার গলায় ডিজাইন আসলো কি করে? প্রশ্নবিত্ত নয়নজোড়া মল্লিকার পানে তুলে দিলে তাকে হাসতে দেখা গেলো।

মাহরুর বলে উঠে, “এই পাঞ্জাবির কলারেতো কোনো কাজ ছিলো না।”

“আমি করেছি।”

বিস্ময়বোধে পুনর্বার চোখ কপালে উঠেছে মাহরুরের। অপরপক্ষে মল্লিকা ওষ্ঠদ্বয় চেপে দাড়িয়ে। শাড়ির আঁচলে হাত কচলে চলেছে। মাহরুরের দিকে পূর্ণদৃষ্টি।ততক্ষনে দূরকল্পনা কাটিয়ে মাহরুর পাঞ্জাবি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।এই চলছিলো তাহলে তার চন্দ্রের মস্তিষ্কে। মাহরুর ভেবে নিয়েছিলো এভাবেই নিজের টাকায় তাকে কিছু উপহার দিলো।দেখা শেষে স্মিথ হাসে। চমৎকার কারুকার্য।

মুগ্ধ নেত্র যুগল মল্লিকার দিকে রেখে বললো,

“কখন করেছিস এগুলো?”

“আপনি যখন অফিসে যেতেন তখন।”

“কষ্ট হয়েছে না?” মুখ মলিন করে বললো মাহরুর।

মল্লিকা অকপটে বলে উঠে, “হ্যা একটু কষ্ট হয়েছে বটে।কিন্তু আমি খুব শখ করে তৈরি করেছি আপনার জন্য।আপনি পড়বেনতো?”

উত্তরবিহীন মল্লিকাকে জড়িয়ে ধরলো মাহরুর।বললো, “পড়বো। কাল সারাদিন,সারারাত এটা পড়েই থাকবো।আমার বউ আমার জন্য শখ করে বানিয়েছে।এই পাঞ্জাবিটা আমার জীবনের বিশেষ একটা উপহার।”

উল্লাসমুখর হৃদয় নিয়ে মল্লিকা বলে উঠে, “আপনার সত্যিই পছন্দ হয়েছেতো?নাকি আমার মন রাখার জন্য বলছেন।”

“খুব খুব পছন্দ হয়েছে।তুই আমার গুনবতী বউ।এই পাঞ্জাবিটায় শুধু তোর প্রতিভা না তোর ভালোবাসার ছোঁয়াও আছে।”

মাহরুরের সাথে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে মল্লিকা।তার ছোটছোট ইচ্ছে পূরণে মরিয়া হয়ে উঠছে মল্লিকার হৃদয়ও।কতবার সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে হিসাব নেই। প্রার্থনা শুধু এতটুকুই? সর্বদা এই যোগবন্ধন অটুট থাকুক তাদের তিনজনের।

“আয় চন্দ্রবউ তোর হাতে মেহেদি দিয়ে দেই।”

“আমিই পারবো দিতে।আপনার কষ্ট করার কি দরকার?”

মাহরুর মল্লিকার গালে হাত রেখে বলল, “তোর কি দরকার ছিলো আমার জন্য এত কষ্ট করার?..আয় বেশি কথা বলিস না।”

“আপনি পারেন মেহেদী দিতে?”

বিচিত্র মুখভঙ্গি প্রকাশ করে মাহরুর উত্তর দেয়, “চেষ্টা করবো।আর নাহয় ফোনে দেখে নিবো।…কেনো?খারাপ হলে বুঝি তুই কষ্ট পাবি?”

মল্লিকা তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়ায়।না বোধক উত্তর দিয়ে বললো,

“আপনি যেভাবেই দিয়ে দিবেন আমি খুশি।”

“আচ্ছা আয়।আমি চাচাকে কল করে বলছি মিষ্টিকে দিয়ে যেতে।ওকেও মেহেদী পড়িয়ে দেবো।”

মল্লিকা আকস্মিক বলে উঠে, “সৌভাগ্য আমাদের মা মেয়ের।”

মল্লিকার কথার বিপরীতে ভালোবাসার স্পর্শ পায় কপালে।গাঢ় ঠোঁটের স্পর্শনে লাজুক হাসে মল্লিকা।কাপড় ছেড়ে এসেছে মাহরুর।ঘরের কাপড় গায়ে দিয়ে পা গুটিয়ে বসলো।কখনো মোবাইলে কখনো মল্লিকার হাতে।চোখের মণিজোড়া এদিক ওদিক চেয়ে যাচ্ছে বারেবারে।তারপরও হাল ছাড়েনি।মেয়ে মানুষের কাজ ছেলে মানুষের জন্য দুষ্কর আর ছেলে মানুষের কাজ মেয়েদের জন্য। এভাবেই;এই নিয়মেই চলছে ধরণী।পরিপূর্ণভাবে।

প্রভাতের প্রারম্ভ। মাহরুর তৈরি গোসল করে।সকাল সাড়ে সাতটার জামায়াত। মল্লিকাকে ঈদ মোবারক জানিয়ে সর্বপ্রথম কপালে চুমু খেয়েছে।একসাথে প্রথম ঈদ তাদের।আনন্দ দ্বিগুণ।বরং তিনগুণ মিষ্টিকে নিয়ে।বেরিয়ে পড়ে নামাজের উদ্দেশ্যে।নামাজ শেষে সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পড়লো মাহরুরের।বাবার হাত ধরে হাতে নতুন জায়নামাজ ঝুলিয়ে হেঁটে চলত প্রত্যেক ঈদে।ছেলের সাথে কোলাকোলি করতে বাবাকে হাঁটু গাড়তে হতো জমিনে। এখানের আনন্দ শেষে বাড়িতে গরম গরম সেমাই খেতে দৌড়ে যেতো দ্বিগুণ গতিতে।আজ তারা কেউই নেই।দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহরুর।রমজান সাহেব এর সাথে কোলাকোলি করে কবর জিয়ারত করতে গেলো বাবা মার।

ফিরে এসে দেখছে ভিন্ন পট।মা মেয়ে দুজনই তৈরি।দুজনের গায়ে একই রঙের কাপড়।দুজনের চুল অর্ধ ভেজা।মাহরুর লক্ষ করলো কোনো অংশে মল্লিকাকে মিষ্টির মা মনে হয়না।বয়স হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেই চাপ মুখ, অঙ্গে স্পষ্ট নয়।

মিষ্টি দৌড়ে আসে। আধো আধো গলায় বলে, “আসসালামু আলাইকুম মাহি বাবা।”

এক ঝটকায় মিষ্টিকে কোলে নিয়ে জবাব দেয় মাহরুর, “ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা।”

“সালামি দাও?”

মাহরুর মল্লিকার দিকে চাইলো।পরপর মিষ্টির উদ্দেশ্যে বললো, “এটা তোর মা শিখিয়ে দিয়েছে না?”

মিষ্টি ধরা পড়ায় হেসে কুটিকুটি হয়ে উত্তর দেয়, “হ্যা”

পকেট থেকে নতুন চকচকে নোট বের করে মিষ্টির হাতে দিলো মাহরুর।মিষ্টি টাকা পেয়ে খুশি হলেও সেই খুশি একা ভোগ করতে রাজি নয়।

“তোকে পরীর মতন দেখাচ্ছে মিষ্টি।”

“কিন্তু আমারতো পাখা নেই মাহি বাবা।মা আমাকে রাতে গপ্পো শুনাতো তখন বলেছে পরীদের পাখা থাকে।ওরা উড়ে বেড়ায়।”

দুহাতে মিষ্টিকে তুলে হাওয়ায় উড়িয়ে মাহরুর বললো, “দেখ মিষ্টি তুইও উড়ছিস ”

মিষ্টি খুশি হয়। উচ্ছাসে চিৎকার করে বেড়ায়।তাদের দেখে হাসছে মল্লিকাও। পাখা বিহীন বাবার হাতে ভর করে মিনিট দুয়েক উড়ে ক্ষ্যান্ত হয় মিষ্টি।

আবার বলে উঠে,

“মাকে দিবে না সালামি?”

“তোর মাকে আমি আলাদাভাবে সালামি দিবো।”

মল্লিকা মাহরুরের তাকানোর ভঙ্গিতে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে।কথাটি শুনেও এড়িয়ে যায়।বলে, “সেমাই দিচ্ছি।দুজনে খেয়ে নিন। ওবাড়ি যেতে হবে আবার।”

পরিপূর্ণ ঈদের আমেজ উপভোগ করছে মিষ্টি।গ্রামের বাচ্চাদের সাথে উঠোনে খেলায় মেতেছে।বলতে গেলে তার প্রথম পরিপূর্ণ ঈদ।বিগত বছরগুলোতে ঈদ এর আনন্দ কাকে বলে সেটা তার জানা ছিলো না।যত দেরিতে আসে তত দ্রুতই চলে যায় ঈদ। সন্ধ্যা নামছে।সকাল থেকে সারাটা সময় কাটিয়েছে মল্লিকা মাহরুর রমজান মিয়ার বাসায়।আগামীকাল শিরীন আসবে।তারপর শশীদের নতুন বাড়িতে যাবে বলে সিদ্ধান্ত হলো।

মিষ্টি সারাদিন লাফালাফি করে ক্লান্ত।রাত আটটায় ঘুমিয়ে পড়েছে। অগ্যতা তার মাহি বাবার কোলে চড়ে ঘুমন্ত মেয়েটি বাড়ির দিকে রওনা হয়।বাড়ি ফিরেছে মিনিট পাঁচেক রাস্তা হেঁটে।

মিষ্টিকে শুইয়ে দিয়ে মাহরুর মল্লিকার দিকে এগিয়ে এসে বললো,

“আমাকে আজ সালামও করিসনি।বেয়াদব হচ্ছিস চন্দ্র!”

মল্লিকা কাপড় বদলে নিয়েছে।অন্যদিকে মাহরুরের গায়ে এখনও মল্লিকার দেওয়া পাঞ্জাবি।কানের দুল পাশে রেখে দ্রুত পায়ের কাছে এসে ঝুকে গেলো মল্লিকা। মাহরুর থামিয়ে দেয়।

বলে, “প্রথম কথা?পায়ে ধরে সালাম করতে নেই। দ্বিতীয় কথা পুরোনো কাপড়ে কিসের সালাম?”

বোকার মতন করে মল্লিকা প্রশ্ন করে, “এখন আবার নতুন কাপড় গায়ে দিবো?”

“জ্বি না।আপনি আসেন আমার সাথে।”

উঠোনে মিষ্টি চাঁদনী পড়েছে। মেটে রঙের উঠোন আলোকিত করতে এসেছে ঈদের চাঁদ। মাহরুর মায়ের ঘর খুঁজে পুরোনো একটা হারিকেন নিয়ে এলো।কি শখ জেগেছে কে জানে?পুরোনো দিনের মতন করে জ্বালিয়ে নিলো।মল্লিকা তার দিকে নিখুঁত দৃষ্টিতে তাকিয়ে।হারিকেন জমিনে রাখলো। চাটাই বিছিয়ে নিলো।

কাছে এসে বললো, “আয় আজ একসাথে চন্দ্রবিলাস করবো।”

মাহরুরের হাত ধরে চাটাই এর মধ্যিখানে পা গুটিয়ে বসেছে।পাশে মাহরুর।আকাশ দেখায় মগ্ন মল্লিকা।এই সুযোগে নরম গালে অধর ছোঁয়ায় মাহরুর।থতমত খেয়ে উঠা মল্লিকার পানে চেয়ে মাহরুর বললো,

“একমাসের দুরত্বে ভীষণ লোভ জেগেছিলো।তুই রাগ করিসনিতো?”

মল্লিকা হন্তদন্ত মাথা দোলায়।না বোধক উত্তর দেয়।সেতো রাগ করেনি।ভরকে উঠেছে আকস্মিক। মাহরুর আবার বললো অদ্ভুত বাণী,

“রাগ করেও আমাকে থামাতে পারবি?”

বলে হেসে উঠে মাহরুর।মাথা পাতে মল্লিকার কোলে। নিত্য দিনের প্রয়োজন তার এটা।শান্তি পায় সস্তি পায়।মনে হয় তাকে সামলানোরও কেউ রয়েছে।যত্ন করতে আছে চন্দ্রমল্লিকা। শশাঙ্কের আবছা আলোয় মুখরিত গ্রামীণ বাড়িটির মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এক কপোত কপোতী। স্নিগ্ধতায় ঘেরা বাতাবরণে প্রেমের মধুর ডাক। শব্দহীনতায়ও গান গেয়ে যাচ্ছে।

মাহরুর ভরাট কন্ঠ টেনে বলে,

“চন্দ্র?তোর সাথে থাকলে মনে হয় এই ছোটছোট খুশিগুলো অনেক বিশাল। প্রাচুর্যে আমি ভীত হয়ে পড়ি।পূনরায় যখন তোর চোখে এক আকাশ সমান ভালোবাসা দেখি?তখন লোভী হয়ে উঠি।কেনো এতো ভালোবাসি তোকে?”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে