চন্দ্র’মল্লিকা ১৫
লেখা : Azyah_সূচনা
“অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমার বিশ্রী রকমের বেহায়া মনতো তোকে পাওয়ার জন্য আগে থেকেই পাঁয়তারা করছিলো।আমিই থামিয়ে রেখেছিলাম চন্দ্র।এখন ভাবলাম যেহেতু একবার তোকে পাইনি? দ্বিতীয়বার চেষ্টা করতে কি যায়?আয় ভুল শুধরে নেই। তোকে আর তোর মেয়েকে নিয়ে সম্মানের সাথে বাঁচি।আমার প্রাক্তন যদি স্বার্থপর হতে পারে আমি কেনো পারবো না?….. হ্যা যদিও আমি আগে থেকেই স্বার্থপর তোর চোখে।আরেকটু হলে কিই বা আসে যায়? কিশোরী বয়সে জানতে চেয়েছিলি না তোকে বিয়ে করবো কিনা?আজ আমি জিজ্ঞেস করছি।আমাকে বানাবি তোর জীবনের ব্যক্তিগত পুরুষ?সুযোগ দিবি আরেকবার?”
শেষরাতে মাহরুরের এসব বাক্য মল্লিকার নির্ঘুম রাতের কারণ।এক মুহূর্তের জন্য চোখের পাতাকে বিশ্রাম দেয়নি। মাহরুরের বলে যাওয়া কথাগুলোতে মিশ্র অনুভূতি। দ্বিতীয় সুযোগ?এই পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় সুযোগ শব্দদ্বয় ভীষণ ভারী।সকালের কিরণ মুখে এসে পড়লে নড়চড় বিহীন শুয়ে থাকা মল্লিকা যেনো শ্বাস ছাড়লো।সারারাত ভর মাহরুরের বাক্যসমুহ আওড়িয়েছে। স্মৃতিচারণ করেছে।এরমধ্যে তার আগের সংসারটাও ছিলো।মিষ্টির জন্মদাতা বাবার মুখটাও ছিলো।চলে গিয়েও ফিরে আসার চেষ্টা কেনো করছে মাহরুর? কোথায় এনে দাড় করিয়ে দিলো।
আজ বন্ধের দিন।সকাল সকাল মিষ্টিকে ডাকলো না আর।ঘুমাক।সকালে উঠতেই চায় না মেয়েটা।অর্ধ ঘুমে কোলে তুলে স্কুলে দিয়ে আসতে হয়।ফরিদা বেগম ঘুম থেকে উঠেন সকাল ছয়টায়।এখন আটটা বাজতে চললো।রান্না ঘর থেকে থালা বাসনের আওয়াজে মল্লিকাও গেলো সেদিকেই। বেলে রাখা রুটিগুলো তুলে ভাজতে লাগলো।মায়ের সাথে টুকটাক আলাপ এর মধ্যেই পুরুষালি কন্ঠস্বর আসে।
“চাচী?”
মাহরুরের আওয়াজে তাওয়ায় হাতটা লেগে যায়। অসাবধানতা বশত।দ্রুত হাত সরিয়ে পানির নিচে দিলো মল্লিকা।বুক কাপে এখনও ওই কণ্ঠে।
ফরিদা বেগম উঠে গিয়ে বললেন, “হ্যা মাহি।আয় ঘরে আয়।”
বসার ঘরে গা এলিয়ে বসেছে মাহরুর।সকাল সকাল এসে হাজির।অনেক বেশি প্রয়োজন আর বাবা,মা জড়াজড়ি না করলে আসতে চায় না।আজ বিনা নেমন্তন্নএ এসে গেছে।ফরিদা বেগম এসে জানতে চাইলেন,
“গরম গরম রুটি ভাজছে মল্লিকা।এনে দেই?খা।”
ভেবেছিল না বলবে।মল্লিকা ভাজছে শুনে মত পরিবর্তন করে বললো,
“ঠিক আছে।দেন। সাথে ডিম ভাজতে বইলেন”
নিজ থেকে আবদার করলো বলে অবাক হয় ফরিদা বেগম। হাসিমুখেই চলে গেলেন।নাস্তা রেডি করে মাহরুরের সামনে দাড়াতেই প্রশ্ন করে মাহরুর,
“চাচা কই?”
“চা পাতা আনতে গেছে সামনের দোকানে। আইসা পড়বো।”
“আচ্ছা”
চোখ জোড়া চন্দ্রের দর্শন পেতে শুষ্ক হয়ে উঠলো। কাল রাতেইতো দেখেছে।এই নির্লজ্জ চোখের কি পোষায় না?তারই মধ্যে রমজান সাহেব এসে হাজির।স্ত্রীর হাতে চা পাতা ধরিয়ে দিয়ে এসে বসলো মাহরুরের পাশে।
“আর কিছু খাবি বাজান?”
“না চাচা। চা খাবো শুধু”
“আচ্ছা”
হাত মুছে রমজান সাহেবের দিকে পূর্ন দৃষ্টি রেখে মাহরুর বলে,
“আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো চাচা।”
“হ্যা বল”
“আপনি অনুমতি দিলে আমি চাচ্ছি চন্দ্রকে ঢাকা ফিরিয়ে নিয়ে যাবো।এখানে আসলে!…. কি বলবো?গ্রামের পরিবেশ ভালো না। মিষ্টি ছোট এমন নিম্নমানের মানুষের সাথে থেকে ওর মনে ভালো প্রভাব পড়বে না”
রমজান সাহেব আশ্চর্য্যের চরম সীমায়।এইতো দুইমাস হলো দিয়ে গেছে। আবার নিয়ে যাবে?নিশ্চয়ই এর পেছনে বিশেষ কারণ আছে।
“কেন মাহি?কোন পরিবেশ ভালো না?”
মাহরুর এক এক করে বিগত দুইমাসের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা বলে যাচ্ছে। শওকত তাকে খবর দিয়েছে সবই।যা রমজান সাহেব এর অজানা।জহিরের ব্যপারেও বলেছে। মাহরুরের কথায় চোখ কপালে। এসবতো কিছুই জানে না সে।মল্লিকা তাদের কিছুই বলেনি।
চিন্তিত মুখে বললেন, “মাহি ঢাকায় আমি আমার মাইয়ারে ওই নরকে আবার পাঠাবো না।লাগলে আমরা গ্রাম ছাইড়া দিবো।”
“না চাচা এমন কিছুই হবে না।”
“তাইলে?তাইলে কি করবো? এভাবেতো আমার নাতনি আর মাইয়া দুজনের জন্যই চিন্তার বিষয়।আমার মাইয়াটা কি একটু শান্তি পাইবো না?যেদিকে যায় ওদিকেই এত ঝট ঝামেলা।”
“চাচা উপায় আছে”
“কি?”
এক বুক সাহস নিয়ে মাহরুর বলে উঠে, “আমি…আমি চন্দ্র আর মিষ্টির দায়িত্ব নিতে চাচ্ছি”
এক থমথমে নীরবতা বয়ে গেছে ঘরে।ফরিদা বেগমও চা দিয়ে দাড়িয়ে। শ্রবণইন্দ্রিয় সজাগ করে দাড়িয়ে থাকা মল্লিকাও স্তব্ধ।তার মতে ভীষণ সাহসিকতা দেখিয়ে ফেলেছে। অবলীলায় বিধবা মেয়ের দায়িত্ব চেয়ে বসলো বাবার কাছে। রমজান সাহেব এর মুখ অন্ধকারাচ্ছন্ন।
অনেকটা সময় নেন নীরবে।এই মাহরুরের জন্যই তার মেয়েটাকে ভাবি কথা শুনায়।মার খাইয়েছে।ওর ছোট্ট মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল।
রমজান সাহেব সরাসরি জানালেন,
“এটা সম্ভব না”
অকস্মাৎ কাতর হয়ে উঠে মাহরুর।চাচার হাত টেনে বললো, “কেনো সম্ভব না চাচা?আপনার মেয়েটা একটা ভালো জীবন প্রাপ্য না?মিষ্টির মাথায় বাবার ছায়া দরকার না চাচা?আমিতো আপনারও ছেলে।কোলে পিঠে মানুষ করেছেন।আমি কি যোগ্য না আপনার মেয়ের?নাকি এখনো আমার আর মার উপর অভিমান করে আছেন?”
“ব্যাপারটা সেটা নয় মাহি।আমার কোনো রাগ অভিমান নেই তোর আর ভাবীর প্রতি।আর আমি জানি তোর উপর দিয়ে কি গেছে।ভাবি গেলো। হিরাও তোকে ছেড়ে গেলো।আমার মনে হয় তোর জীবন নিয়ে আলাদাভাবে ভাবা উচিত।আমরা আছি আমার মেয়ের জন্য।”
রাগ নেই,অভিমান নেই কিন্তু মনে একটা চাপা কষ্ট আছে।বাবা মায়ের মন কাতর তার সন্তানের জন্য।ওই অল্প বয়সে কতটুক কষ্ট পেয়েছিলো?এরপর আর সুখের আলো দেখেনি। মাহরুর সামনের টেবিল সরিয়ে নেয় এক ঝটকায়। রমজান সাহেব এর পা জড়িয়ে ধরলো। টলমলে চোখ নিয়ে বললো,
“আমাকে আমার ভুল শুধরে নিতে দিন চাচা।পায়ে পড়ি আপনার। বিলাসিতা না দিতে পারি।সুখে রাখবো আপনার নাতনি আর মেয়েকে।”
“কি করছিস মাহি।পা ধরছিস কেনো?উঠ।উঠ বলছি”
“না চাচা আপনি রাজি না হলে আমি এক পা নড়বো না”
শক্ত পুরুষের চোখ বেয়ে জ্বল ঝরতে দেখে রমজান সাহেব।বাচ্চাদের মতন আবদার করছে। কাকুতি মিনতি ভরা তার চাহনি।হাত এগিয়ে পা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
“মল্লিকা রাজি হবে না বাজান।তুই কাঁদিস না।”
“আপনি বলেন ওকে।আপনার কথা ফেলবে না ও ”
“আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।কিছুতেই করবো না”
আরো একটি কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে চায় মাহরুর এবং রমজান সাহেব দুজনেই। মাহরুরের লালচে মুখ দেখে বাকি কথা যা ভেবে চিন্তে এসেছিল সেগুলো গুলিয়ে গেলো।ঠিক এই কারণেই তার থেকে দূরে থাকার প্রয়াস করে মল্লিকা।তার মুখ,তার গলার স্বর সবটাই চম্বুকের মতন টানে। অন্তরাত্মায় কম্পন ধরায়।এত বড় একটা লোক কেঁদেকেটে মুখ লাল করেছে।ঠোঁট চেপে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার দিকে।ঘরে দৌড় লাগালো মল্লিকা।এখানে থাকলে দম আটকে যাবে।
বাড়িটা নীরব। মাহরুর আছে কিনা চলে গেছে বোঝা যাচ্ছে না।
নিজেকে ঘরবন্দী করেছে মল্লিকা।নিজেকে একাকীত্বে কিছুক্ষন সময় দিতেই এই পন্থা অবলম্বন করে।হৃদয়ে অদৃশ্য ঝড় চলছে। ধুকেধুকে মনে পড়ছে সব। দুমড়ে মুচড়ে আসছে।কখনো রাগ কখনো অভিমানে জর্জরিত মন। জানালায় ‘ ঠকঠক ‘ আওয়াজে চোখ মুছে মল্লিকা।উঠে গিয়ে মেলে দিলো জানালা।সম্মুখে মাহরুর দাড়িয়ে।
মল্লিকাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে বললো, “বিয়ে করবি না?”
“না” সোজাসুজি উত্তর দেয় মল্লিকা।
“এক সময়তো পাগল ছিলি আমার জন্য।”
“এখন সময় বদলেছে।”
“ক্ষমা করে দে চন্দ্র?একটা সুযোগ দে?”
ফুলে উঠেছে মাহরুরের মুখ।এতটা ব্যাকুল কেনো সে?কেনোই বা উতলা হয়েছে বিয়ে করার জন্য?নিজেকে সামলে মল্লিকা বললো,
“যখন সময় ছিলো তখন আমাকে ফেলে চলে গেছেন।আজ এসেছেন কেনো? দয়া দেখাতে?একা নারী আমি , একটা মেয়ের মা। সহানুভূতি দেখাতে এসেছেন?আমি বিয়ে করবো না।ধরে নিজ আপনার তালাক হয়নি।ধরে যেন মিষ্টির বাবা বেচে আছে। আগে আমাদের জীবন যেমন চলছিলো তেমনি চলুক ”
মলিন মুখে হাসলো মাহরুর বললো, “কেনো আমার ডিভোর্স হলো?কেনো মিষ্টির বাবা হুট করেই মারা গেলো?যেখানে ভাগ্য আবার সুযোগ দিচ্ছে তুই কেনো ফেলে দিচ্ছিস।দেরিতেই না হয়।আরেকবার জীবন সুযোগ দিয়েছে আমাদের।চন্দ্র নতুন করে শুরু করি সব?”
“সম্ভব না।”
“তুই চাইলে সম্ভব।”
“আপনি পাগল হয়ে গেছেন!” রাগ দেখিয়ে বললো মল্লিকা।
“সত্যি বলেছিস।পাগল আমি বিগত ছয় বছর যাবতই।যেদিন থেকে উপলদ্ধি করেছি তোর মতই তোর আমার জন্য ভালোবাসা শুদ্ধ ছিলো। খাঁটি ছিলো।না চাইতেই পেয়ে গিয়েছিলাম তাই কদর করতে পারিনি।এই পাগলামি তুইই থামাতে পারবি।আমার তোকে প্রয়োজন!ভীষণ প্রয়োজন।”
কান্নার জোর বাড়ে।হেঁচকি তুলে চন্দ্র বলে, “আমাকে আবার দুর্বল করবেন না।”
“আর আমি যে তোকে প্রতিনিয়ত চোখের সামনে দেখে দুর্বল হয়ে পড়ছি?তোকে ভেবে,কল্পনা করে?আমি স্বার্থপর!আমি খারাপ।ভালো হওয়ার সুযোগটা দে।শেষ বয়স পর্যন্ত সাথে থাকবো চন্দ্র।চল আমার চিলেকোঠার ছোট্ট সংসারে।নিজেকে পরিবর্তন করবো তোদের দুজনের মোতাবেক।এবার আমি কথা রাখবো চন্দ্রমল্লিকা।”
___
সময় পেরোচ্ছে চন্দ্রমল্লিকার উত্তরের আশায়। দুঃসাধ্য সাধন করতে উদ্যমী।নিজের মধ্য অল্প অল্প করে সাহস জুগিয়ে এসেছে এখানে। চিন্তাধারার প্যাচেও পড়েছে বহুবার।কি ভুল,কি সঠিক সেটা ভাবতেই সময় নিয়েছে।এখন আবার সময় নিচ্ছে তার চন্দ্র।কিন্তু অনিশ্চিত।উত্তর তার পক্ষে আসবে কিনা জানা নেই।উত্তর দেবে কিনা সেটাইতো অনিশ্চিত।জানালায় বেহায়া প্রেমিকের মতন এসে দাড়িয়ে থাকলেও জানালা খুলে দেয়না।নিজের করে পাওয়ার আশায় না হারিয়ে ফেলে আবার।অনুপমের ন্যায় কল্যাণীর পথ চেয়ে মাহরুর।তার মতই খালি হাতে যদি ফিরতে হয়?
“মা? ও মা? তুমি খাচ্ছো না কেনো?”
ধ্যানমগ্ন চন্দ্রের হুশ ফিরে।ভাত মেখে অন্য জগতে হারিয়ে গিয়েছিল।মেয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে বলে, “খাবো।তুই খা আগে”
“মা?”
“হুম?”
“মামাকে বলবে আমাকে মেলায় নিয়ে যেতে?আমি পুতুল কিনবো”
“মিষ্টি?তোকে না বলেছি এভাবে কাউকে বিরক্ত করতে নেই?চুপচাপ খা।আমি নিয়ে যাবো মেলায়।”
“আচ্ছা মা”
রোজই আসে মাহরুর।জানালার দ্বারে দাড়ায়।ঘরে ঢুকে না।ভয়ে ভয়ে এখানে দাড়ায়।কেউ দেখলে কানাঘুষাতো করবে অবশ্যই।কিন্তু তার চেয়ে বেশি চন্দ্রের উত্তর প্রয়োজন। কর্ণকুহরকে প্রসন্ন করা রাজিনামা প্রয়োজন।কিন্তু সে ধরা দিলে না? বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছে।এত রুষ্টতা এলো কিভাবে চন্দ্রের মধ্যে?আজও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছিলো তার মধ্যে কয়েকজন এসে ঘেরাও করে ধরলো তাকে।কিছু মানুষকে পরিচিত মনে হচ্ছে।রাব্বি মিয়ার লোক।আর বাকিরা অপরিচিত।
পরিচিত একজন এগিয়ে এসে জানতে চাইলো, “কবে এসেছো গ্রামে?”
“তিনদিন হলো এসেছি”
“ঢাকায় কি চাকরি করো?”
“আপনারা এসব প্রশ্ন করছেন কেনো?”
রহস্যময় হেসে লোকটি বললো, “না এমনেই। তোমারতো দেখা মেলে না এখন আর।অনেকদিন পর দেখলাম তাই আরকি।”
“আচ্ছা আমি আসি”
“দাড়াও! তোমাকে রাব্বী চাচা দেখা করতে বলছে।”
মুখ কালো করে মাহরুর জানতে চাইলো, “আমাকে দিয়ে ওনার কি কাজ?”
“আছে হয়তো কোনো কাজ।চলো আমাদের সাথে।”
মাহরুরের মধ্যে খানিক সন্দেহ কাজ করে।কোনোভাবে জেনে গেলো নাতো?তার ছেলেকে হসপিটালের পাঠানোর পেছনে যে মাহরুর দায়ী। কারোইতো জানার কথা নয়।সময় সুযোগ বুঝে আচ্ছামত ধোলাই দিয়ে এসেছে।আর যেনো তার নিকৃষ্ট দৃষ্টি চন্দ্রের দিকে না দিতে পারে। মাহরুর ভেবে চিন্তে তাদের সাথে চলে গেলো।জানালা ছেড়ে দৌড় লাগায় মল্লিকা।বাবার কাছে গিয়ে হাপিয়ে বলতে লাগলো।
“আব্বা মাহি ভাইরে রাব্বী চাচার লোকেরা নিয়া গেছে।আব্বা একটি গিয়ে দেখো।”
“কেনো নিয়ে গেছে?ওকে দিয়ে কি কাজ?”
“আব্বা কেনো নিয়ে গেছে এটা পড়ে শুনো আব্বা।তুমি ওদের পিছনে যাও।”
কান পেতে বসে থাকার স্বভাবটা এখনও পাল্টে নি মল্লিকার। শ্রবণশক্তি প্রখর।এই শক্তিটা বেশিরভাগ সময় কাজে না লাগলেও আজ লাগছে।ভীত, আতঙ্কিত মুখখানা।সেতো জানে কি হতে পারে সেখানে। জহিরকে মেরে তক্তা বানিয়েছে। ভ্রানাক্ষুরেও যদি টের পায় রাব্বী মিয়া?ঠিক প্রতিশোধ নেবেন।রমজান সাহেবও পায়ের গতি বাড়িয়ে পিছু নিলো।
রাব্বী মিয়ার পাশেই বসে আছে মোতালেব হোসেন।তার প্রাক্তন স্ত্রীর বাবা।তার প্রাক্তন শশুর।ঢাকায় থাকেন আলিশান বাড়ি বানিয়ে।মেয়ের কর্মকাণ্ডও নিশ্চয়ই জানেন।নাহয় বাবা ব্যতীত বিয়ে করার সাহস পায় কী করে? মাহরুর বসলো রাব্বী মিয়ার সামনে।
রাব্বী মিয়া সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, “তিনদিন আগে ভোররাতে আমার গ্যারেজের দিকে কি করছিলে?”
সরাসরি মিথ্যে জবাব দেয় মাহরুর, “ঢাকা থেকে সেদিন সকালেই ফিরেছি আমি।তবে সেটা ভোররাতে নয়।”
“কয়টায় এসেছো?”
“আটটায়।”
“তাহলে ফারুক কি তোমার প্রতিচ্ছবি দেখলো ভোররাতে?”
“হয়তো দেখেছে।আমি আটটায় ফিরেছি।”
“ওয় সত্যি বলছে রাব্বী ভাই।আমি নিজে গিয়ে নিয়ে আসছি ওরে বাস স্ট্যান্ড থেকা। আপনাগো গ্যারেজতো বাস স্ট্যান্ডের উল্টাপাশে।মাহি ওদিকে কি করে যাইবো?”
বলতে বলতে এগিয়ে আসলেন রমজান সাহেব।তার কথায় মাহরুরকে যাওয়ার অনুমতি দিলেও দৃষ্টি তার সন্দিহান।একটা শক্তপোক্ত প্রমাণ পেলেই হয়।যাওয়ার পথে মোতালেব হোসেন ডাকলেন।হয়তো পুরোনো সম্পর্কের দায়ে কুশল বিনিময় করতে চাচ্ছিলেন।মাহরুর পরিপূর্ণভাবে তাকে এড়িয়ে গেছে।
“ঢাকায় ফিরে যান।এখানে আপনার বিপদ।সন্দেহ করেছে যেহেতু আপনার পিছু এত সহজে ছাড়বে না”
রাতের আকাশে নক্ষত্রের মেলা।তারই নিচে সমতল ভূমিতে দাড়ানো অবাধ্য রকমের পুরুষ।তার চন্দ্রের চিন্তিত মুখ দেখে সস্তি’নুভব হলো।গাম্ভীর্য বজায় রেখে জানতে চাইলো,
“তোর চিন্তা হচ্ছে?”
অভিমান জমতে জমতে রুঢ় চন্দ্রমল্লিকার মুখখানা।অলস নেত্র মাহরুরের দিকে ছুঁড়ে বললো, “চিন্তা হবে কেনো?”
“তাহলে কেনো বলছিস চলে যেতে?আমার বিপদ হলে তোর কি?মেরে ফেলুক আমাকে।এক কাজ করি নিজেই যাই সবটা সত্যি সত্যি বলে দিয়ে আসি?”
“ইচ্ছে করে করছেন এসব?”
আবেগের বশবর্তী হয়ে মাহরুর ভিন্ন প্রশ্ন করে, “ভালোবাসিস আমায়?”
থতমত খায় মল্লিকা।আরেকবার ভালোমত দেখে নেয় সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে।এটা কোনোভাবে মাহরুর ভাই হতেই পারেনা।তার কথা বলার ধরন এমন নয়।সরল,শান্ত মানুষ।এখন উদ্ভট পাগলামো করছে।
“বাসি না”
“মিথ্যে বলছিস!সরাসরি মিথ্যে বলছিস তাও আমাকে।আমি তোকে সেই ছোটোবেলা থেকে চিনি চন্দ্র। আমার চোখে ধুলো দিবি?…. যাই হোক! কাল সকাল অব্দি সময় আছে তোর কাছে।ভেবে দেখ।দুপুরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হব।আর ফিরবো না কোনোদিন।কক্ষনো না!”
চলবে…