চন্দ্র’মল্লিকা ৫
লেখা : Azyah_সূচনা
নারী প্রেম কতটা গভীর?কতখানি? পরিমাপ করার মতন?নাকি সীমারেখার বাহিরে?মনের অজান্তেই চন্দ্রমল্লিকার এই নব্য অনুরাগ ভাবতে বাধ্য করছে।যদি হয় তার ভালোবাসা যথাযথ?তাহলে মাহরুরও চেষ্টায় পিছিয়ে থাকবে না।তাকে অপছন্দেরতো কারণ নেই। সৌন্দর্য তার বাহ্যিক দিক। মনটা পানির মতন সচ্ছ। অনুভূতিহীন মাহরুর।তবে এই স্থির প্রতিক্রীয়া বদলাতে কতক্ষন?শুধু একটু প্রয়াসের দরকার।তবে ভয় আছে। ডগমগ করবে নাতো সেই বালিকার কদম?বয়সের তারতম্যে মন্দ হয়ে উঠবে নাতো সবটা?আর পরিবার?তারা কি মেনে নিবে?মহা মুশকিল।এক মন বলছে এগোতে।আরেক মন বলছে দশ কদম পিছিয়ে দিতে।এসবই মোহ।সময়ের সাথে কেটে যাবে।অদ্ভুত এই চন্দ্র।জ্বালায় না তাকে।একদম বিরক্ত করেনা।আজ কত কষ্ট পেলে ফোন করে?কত সাহস হলে বলে ‘ ভালোবাসি ‘।কথা জানে ভালো ছোটবেলা থেকেই।তবে বেশকিছু দিন যাবত ধরন পাল্টেছে।কি করবে?কি করবে না?এই ভাবতে বসে গেছে মাহরুর রাতের গভীরে।অনেকদিন হলো মেসে উঠেছে।সে ছাড়াও আরো চারজন থাকে এখানে।ঘুম আর আসবে না।চন্দ্রের মায়াময় গলায় ‘ ভালোবাসি ‘ কথাটা মস্তিষ্কে গেঁথেছে।এভাবে আগে কেউ কখনো বলেনি।বলার সুযোগ কই?তবে কি ধীরেধীরে চন্দ্রবিলাসে নামলো মাহরুরের মনোসত্তা?ভালোবাসি উক্তিটি গ্রাস করতে লাগলো?
“আমাকে চোরাবালিতে ফেলে দিলি চন্দ্র। নিজের জং ধরা অনুভূতিশক্তিকে সচল করতে পারছি না।আমার কি তোকে নিয়ে ভাবা উচিত?”
__
চায়ের আড্ডা সচরাচর হয় না।আজ হচ্ছে।অল্প বেতনের চাকরিতে ঘর চলে এটাই অনেক। বন্ধু বান্ধবের আনাগোনা কম মাহরুরের।এটা নতুন নয়।শুরু থেকেই।তার মতে বন্ধুদের সাথে চলতে হলে কাধে কাঁধ মেলাতে হয়।আপাদত সেই কাঁধটাও তার ভঙ্গুর। মিথ্যে আশ্বাসে কাটিয়ে দেওয়া ছয় বছরে কোনো উন্নতি নেই। লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে চাকরিতে এনেছিল।ফলাফল এখানে শূন্য।কত জায়গায় নতুন চাকরির জন্য চেষ্টা করেছে।সেখানেও ফলাফল শূন্য। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি মুঠোভর্তি টাকাও দরকার এখানে।টাকার বিনিময়ে টাকা কেনা যাকে বলে।জীবন বাঁচাতে এখানেই পড়ে থাকতে হচ্ছে।
রেদোয়ান বললো, “ভাই আমিতো তোমার সমবয়সী প্রায়।আমার সাথে শেয়ার করতে পারো।কি এমন হয়েছে যে ভাবি তোমাকে ছেড়ে চলে গেলো?”
বোন জামাইর এমন প্রশ্নের জবাবে কি বলবে?এখানে সত্যটা যে ভিন্ন।কথা ঘুরিয়ে নিজের দিকে নিলো।বললো, “আমার দোষে”
“মিথ্যে বলবে না।আমি অনেককিছু আচ করতে পারছি।নিজেকে হাল্কা করো মাহি।আমাকে বিশ্বাস করো না?তোমার বোনের স্বামী আমি।এতটা বছর সংসার করছি।তোমাকে দেখছি।আমাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়না?”
মাহরুর নাছোড়বান্দা। বলবে না যেহেতু পণ করেছে।তাকে মেরে কেটেও কথা বলানো যাবে না। রেদোয়ান ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে।বলে,
“শুনেছি তোমার স্ত্রী নাকি তালাকের একমাসের মাথায় অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধতে চলেছে? সবকিছু এত দ্রুত ভুলে গেলো সে?আর তুমি বলছো তোমার দোষ।এখানে হিসাবে গড়মিল আছে।আমি চাইলে তদন্ত করে আরো অনেককিছুই বের করতে পারি।তবে তোমার মুখে শুনতে চাই।”
“তুমি তদন্ত করেই বের করো।আমি কারো সম্মানহানি করতে রাজি না।”
পিছু হটে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে রেদোয়ান।মুখে বাঁকাচোরা হাসি।কি দিয়ে তৈরি এই লোক?কোন মাটির মানুষ?সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে কি মজা পায়?
“এসবের পেছনে মল্লিকা নয়তো?”
এত বছর পর মল্লিকার নামটা অন্য কারো মুখে শুনে হৃদপিণ্ড লাফিয়ে উঠে।ক্ষুদ্র চক্ষু রেদোয়ানের দিকে ছুঁড়ে।কি বোঝাতে চায় সে?বুঝেও বুঝলো না রেদোয়ান। ইচ্ছেকৃত বলে উঠে,
“হয়তো মল্লিকার প্রতি তোমার ভালোবাসার কারণেই হিরা ভাবি তোমাকে ছেড়ে গিয়েছে!”
চোয়াল শক্ত করে মাহরুর। কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, “আমাকে দুই নৌকায় মাঝি মনে হয়?একজনকে ভালোবাসবো আর অন্যজনের সাথে সংসার?”
“তাহলে কেনো গেলো তোমার বউ!”
“সে ভালোবাসতো না আমাকে।আমার মা তাকে মিথ্যে বলে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে।জানো না তুমি? সবইতো জানো।”
“আরো বিস্তারিত জানতে চাই।”
“বলতে পারবো না রেদোয়ান”
শব্দ করে হাত রাখে টেবিলে রেদোয়ান।যেনো তার সামনে কোনো আসামি। জবানবন্দী নেওয়া হচ্ছে তার।যে করেই হোক তথ্য চাই। তবে এই আসামির প্রতি তার বিশেষ মায়া।তাকে বাঁচানোর জন্যই তার অন্তরে জমিয়ে রাখা কথা গুলোর খোলাসা চায়।
“তুমি যখন জানতে তোমার বউ পরকীয়ায় লিপ্ত!দামী কাপড়,গাড়ি,বাড়ি,আলিশান জীবনের জন্য উন্মাদ।তারপরও কেনো সংসার করলে তার সাথে?সে তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার পূর্বে কেনো ছুঁড়ে ফেলোনি তাকে?”
রেদোয়ান এর কথায় মোটেও অবাক হয়নি মাহরুর।পুলিশ ডিপার্টমেন্টএ আছে সে।এসব তার কাছে বা হাতের খেল। হিরাকে অন্য পুরুষের সাথে ঘুরতে দেখে সেই সর্বপ্রথম জানিয়েছিল মাহরুরকে।সেদিন কথা কাঁটায় মাহরুর।ভাই বলে চালিয়ে দেয় নিজের স্ত্রীর প্রেমিককে।
রেদোয়ান এর প্রশ্নের বিপরীতে মাহরুরও প্রশ্ন করে, “সে কেনো ছেড়ে যায়নি?”
“সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো ওই মহিলা।”
“আমিও দিয়েছি সুযোগ।কারণ দোষ আমার ছিলো। স্বামী হিসেবে আমার কর্তব্য ছিল না তার সব আবদার পূরণ করার?আমি পেরেছি? তাইতো সে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে।”
বিরক্ত সুরে রেদোয়ান বলে উঠে, “তুমি পরকীয়াকে সমর্থন করছো?তুমি তাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছো।”
“সম্মানে দুনিয়া চলে না।”
“আর মল্লিকা?”
ধীরেধীরে শক্ত মুখ ছেড়ে দিয়েছে।ঠিক এখানটাইতো রাগ দেখাতে পারেনা।এখানে অচল পুরোটা মাহরুর।মিয়ে এলো কন্ঠস্বরটাও।বললো,
“চন্দ্র আমার অপ্রাপ্তির এক সুন্দর পৃষ্ঠা”
“এখনও ভালোবাসো?”
বাঁকা হাসলো মাহরুর।আঙ্গুলের সাহায্যে কাঠের টেবিলে আকাঝুকি করতে করতে আবার বলল,
“আমার কোনো অনুভূতি ছিলো না ওর প্রতি।কিন্তু মায়া হতো।এইটুকু মেয়ে ভালোবাসার কথা বলতো আমায়।তারপরও সুযোগ দিয়েছিলাম ওকে।সে সৎ ব্যবহারও করেছে।আমি পারিনি। স্বার্থপরের মতন ওয়াদা ভঙ্গ করেছি।যেদিন থেকে স্বার্থপর হলাম সেদিন থেকেই আমার হৃদয় খোঁজে সেই ছোট্ট চন্দ্রকে।সামলে নেই অবাধ্য হৃদয়কে। বোঝাতে চাই আমি এখন অন্যের ভালোবাসার ভাগীদার। চন্দ্রকে নিয়ে ভাবা হয়তো তার প্রতি অন্যায় হবে।কিন্তু তার চেয়ে বড় অন্যায় যে আমি চন্দ্রের সাথে করেছি?সেই মাশুল কে দিবে? নিশ্চয়ই আমি।দেখো কিভাবে নিয়তি খেল খেললো। অস্রু বৃথা যায় না রেদোয়ান।রুহের হায় লাগে।হয়তো চন্দ্র ভুলে গেছে আমাকে।তবে একটা কথা বলবো।শুদ্ধ ছিলো চন্দ্র।তার ভালোবাসা।কলংক ছিলাম আমি।আজ ধুঁকে ধুঁকে মরছি।রেহাই দেওয়ার কেউ নেই।”
___
অতীত,
গ্রাম্য অঞ্চলে বিয়ের রমরমা পরিবেশ।আগের ঐতিহ্য এখনো বজায় রাখা হয় এখানে। বাড়ির সাজসজ্জাটাও সম্পূর্ণ গ্রামীণ।সময়ের সাথে মানুষের চিন্তা উন্নত হলেই কিছু ক্ষেত্রে পুরোনো স্মৃতি বহন করে আনন্দ পায়। ভাবধারা বজায় আছে শশীদের বাড়িতে।পালন করা হচ্ছে সব ধরনের নিয়ম নীতি। মাত্রই হলুদ গোসল হয়েছে।মল্লিকা আনন্দিত।বেশ আনন্দিত।আজ তার আনন্দ হওয়ার কারণ দুটো।আরেকটি কষ্টের।আগামীকাল সখি পারি জমাবে অন্যত্র।ভালোবাসায় ভাগ পড়বে।অন্যকে সময় দেবে তার চেয়ে বেশি।সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ কিশোরী হয়ে উঠবে নারী।
কপকপা ঠান্ডায় কাপতে থাকা শশীকে মোটা কম্বলের মাঝে জড়িয়ে ধরলো মল্লিকা।গামছা দিয়ে দ্রুত কেশ মুছে দিচ্ছে যতনে।বিয়েটা বড্ড মুশকিল বৃষ্টির মৌসুমে।
“গরমকাল আসলেই বিয়ে করতি শশী?”
“মানুষের বিয়ে খেয়েছি।কত আনন্দে।এখন বুঝতে পারছি কত মজা।পুরো জমে যাচ্ছিরে মল্লিকা।এখনতো শীতকালও না।”
“তোর জন্য আদা চা আনি?”
“আনলে ভালো হয়।কিন্তু সবাইতো ব্যাস্ত।”
“চিন্তা করিস না।আমি বানিয়ে আনছি আমাদের বাড়ি থেকে।তুই একটু বিছানায় পিঠ ঠেকা।”
কাজ টুকটাক মায়ের কাছে শিখেছে মল্লিকা। মাহরুর ভাইকে চিত্তে অবস্থান দেওয়ার পর আরো আগ্রহী হয়েছে ঘরের কাজে।মনের বিশাল ইচ্ছে নিজ হাতের রান্না খাওয়াবে।কিন্তু কাজ করার বেশি কাজ বাড়িয়ে ফেললো এই মুহূর্তে।গরম চা পড়েছে হাতে। জ্বলনিতে কুঁকড়ে যাচ্ছে।বাড়িতে কেউ নেই।মা শশীদের বাড়ি।দ্রুত গিয়ে নিজে নিজেই টুথপেস্ট লাগিয়েছে হাতে। ব্যথাকাতর হাত নিয়েই কোনো রকম চা ফ্লাক্সে করে শশীদের বাড়ি চলে গেলো।
“হাত পুড়লি কি করে?”
“মহারানী তোমার জন্য চা করতে গিয়ে পুড়েছে।”
“কি যে করিস না মল্লিকা।এতদিন মন পুড়িয়েছিস এখন হাতটাও পুড়িয়ে নিলি।”
“এ কিছুনা।এই সামান্য কষ্টের চেয়ে আমার খুশিটা দ্বিগুণ”
“মাহি ভাই আসছে বলে?”
লজ্জাবতী গাছের ন্যায় নেতিয়ে জবাব দেয় মল্লিকা, “হ্যা ”
“শওকত ভাইয়া ভালো একটা কাজ করেছে।”
“ঠিক তাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।”
রাত পেরিয়ে যেতেও সময় নিলো না। বান্ধুবির সাথেই ছিলো মল্লিকা।গল্প গুজব করে সময় কাটিয়েছে। আজইতো চলে যাবে মেয়েটা।কষ্ট হবে।হুটহাট কেঁদেছে কয়েকবার।তারপর নিজের মনকে বুঝিয়েও নিয়েছে।মেয়ে হয়ে জন্ম!বাবার ঘর ত্যাগ করতেই হবে।সব বদলাবে দুনিয়াতে।এই নিয়ম খোদ সৃষ্টিকর্তার তৈরি। খন্ডানোর ক্ষমতা মাটির তৈরি মানুষের নেই। ভোর সাতটায় ঘুমের ঘোরে কর্ণ জেগে উঠে মল্লিকার।তার চাচির গলার স্বর।অর্থাৎ মাহরুরের মা লিজা বেগমের।
নারী কণ্ঠে একটা মধুর কাব্য ভেসে এলো, “মাহি এসেছে সকাল পাঁচটায়।একটু বিশ্রাম নিয়েই চলে আসবে এবাড়ি”
কেশ নেতিয়ে ছিলো বিছানার কোনে।নিদ্রা নীড়ে তোষামোদ সর্বাঙ্গ। অকস্মাৎ তোড়জোড় শুরু হলো।মাহি হোক আর মাহরুর।সেতো এক।একই মানব।নাম এসে বাড়ি খায় হাওয়ার মতন।লক্ষ্যহীন হয় চেতনারা। বিদ্যুৎ বয়ে যায় কায়ায়।লাফিয়ে উঠার দরুনে চুলগুলো দোল খাচ্ছে।দুহাতের সাহায্যে চোখ ডলে নেয়।নিজেকে পূনরায় আশ্বস্ত করে চাচীর গলার আওয়াজ সত্যতো?নাকি প্রটিরাতের মত মাহরুর ভাই আসছে তার হৃদ এর আঘাতে মলম প্রশমিত করতে।কান পাতে। মনোযোগ পূর্ণ দেয় বাহিরের কোলাহলে। হ্যা! সত্যিই চাচী কথা বলছে।কয়েকবার মাহরুর ভাইয়ের নামও নিয়েছে।
__
“আমাকে কেমন লাগছে?”
বউয়ের সাজে সজ্জিত শশী মল্লিকার সামনে এসে সটাং করে দাড়ায়। উদ্দীপিত হয়ে জানতে চায় তাকে কেমন দেখাচ্ছে। ‘ এক টুকরো সৌন্দর্য্যের প্রতীক’ এই উক্তিটি মুখ থেকে উচ্চারণ করে মল্লিকার চোখ জলে টইটুম্বুর হয়।এতটাই বেশি যে চোখের সামনে শশীর বধূ রূপটা ঝাপসা হয়ে আসলো।
মল্লিকার বেয়ে চলা অস্রুদানা মুছে আদেশের সুরে বলল, “যা তৈরি হয়ে আয়।এত সুন্দর করে সাজবি যেনো দেখেই মনে হয় বউয়ের একমাত্র আপন সখী”
মায়ের হাতে প্রথমবার শাড়ি পড়েছে। শশী আর মল্লিকা আগে থেকেই পণ করেছিলো একে অপরের বিয়েতে শাড়ি পড়বে। পাতলা কিশোরী বদনে আসমানী রঙের শাড়ি শোভা পেলো।ঢিলেঢালা ব্লাউজ মায়ের নিপুণ হাতে সেফটিপিন দিয়ে আটকে নিয়েছে।এবার সাজসজ্জার পালা। পরিপাটি বিনুনী বেঁধেছে ঘন চুলে।মাহরুরের চিন্তা সম্পূর্ণ মাথা থেকে বের করে কাজল পড়তে মনোযোগী হয়।মুখে সামান্য পাউডার মেখে ছোট্ট একটা টিপ দিয়ে দশ মিনিটে তার সাজসজ্জা সমাপ্ত।
আশপাশ ভালোমত তাকিয়ে পা বাড়ালো মল্লিকা শশীদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।মাঝপথে বাঁধা হয় এক কন্ঠ।যেনো কেউ মুখ দিয়ে তীর ছুঁড়ে মারলো।
“চন্দ্র”
লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে ঘুরে তাকালো কণ্ঠের মালিকের দিকে।পরনে আসমানী রঙের পাঞ্জাবি পরিহিত মাহরুর ভাই সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে। ঘোরে পড়ে গেলো মল্লিকা।এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।এই পোশাকটা বেশি সুন্দর নাকি মাহরুর ভাই? অদ্ভুতভাবে রংটা মিলে গেছে মল্লিকার সাথে।মুখোমুখি দাড়ানো দুজন মানুষ স্থির। মাহরুরও সময় দিচ্ছে যেনো।তাকে দেখে নেওয়ার।চোখ জুড়ানোর।
“তুই চন্দ্রতো নাকি অন্য কেউ?”
কন্ঠনালীতে আটকে আসা শব্দগুলোর সাথে যুদ্ধ করলো মল্লিকা।জোরপূর্বক বের করে আনলো।তারপরও ভাঙ্গা শব্দ,
“কে..কেনো মাহরুর…ভাই?”
“তোতলাচ্ছিস কেনো?”
“ভয় ক…করছে মাহরুর ভাই”
কি অদ্ভুত কথা বার্তা?এই পরিবেশে ভয়ের কোনো কারণ দেখছে না মাহরুর। বিচিত্র মেয়ের অনুভূতিও বিচিত্র। মাহরুর উত্তরে বলে,
“কাকে ভয় পাচ্ছিস?”
“তোমাকে”
আরো আশ্চর্য্য দৃষ্টি ছুঁড়ে মাহরুর বললো, “আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক?”
নত জানু হয়ে থাকা মল্লিকা আড়ষ্ট হচ্ছে আরো।নেতিয়ে পড়ছে যেনো জমিনে। ঘাবড়িয়ে উঠছে বারবার।ভিন্ন অনুভূতির স্বীকার। বোধশক্তি শূন্যের কোঠায় এসে দাড়ালো।
মাহরুর নরম কণ্ঠে বললো, “তোকে দেখে মনে হচ্ছে তুই একটা পরিপূর্ন নারী।আমার চোখের সামনে বড় হওয়া ছোট মেয়েটি না। মানিয়েছে শাড়িতে।সুন্দর লাগছে তোকে চন্দ্র”
চলবে…