চন্দ্র’মল্লিকা পর্ব-০৪

0
449

চন্দ্র’মল্লিকা ৪
লেখা : Azyah_সূচনা

কতোটা দিন পেরোলো। মিষ্টি নামক মিষ্টি মেয়েটার দেখা নেই।গুনে রেখেছে মাহরুর। এগারোদিন হয়েছে।না গেটে দেখা যায় না বারান্দায়। কোথায় হারিয়ে গেল বাচ্চাটা?বাচ্চাদের সাথে খেলতেও আসেনা। চকোলেটগুলো বুক পকেটে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে যাবে।তবে চকলেটের মালিকের দেখা নেই।আজও বিরস,পরাস্ত হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

সিড়ি বেয়ে ঘরে দিকে চাইতেই মুখ জুড়ে বিস্ময়।ঘরের বাতি জ্বলছে।এটা নতুন কিছু নয়।হিরা থাকাকালিন এই দৃশ্য ছিলো রোজকার।কিন্তু এখন?এই সময় কে আসতে পারে? হন্তদন্ত পায়ে এগোলো দরজার দিকে।বিছানায় বসে খেলা করা বাচ্চাকে দেখে বুঝতে বাকি রইলো না কে এসেছে।কানে ভাসছে হাঁড়ি পাতিল এর আওয়াজ।জুতো খুলে ঘরে প্রবেশ করেই সায়মনকে কোলে তুলে নেয়।

আদর দিয়ে বলতে থাকে, “মামা?কখন এসেছো?”

“একটু আগে এসেছি মামা”

পকেটে রাখা চকোলেট দুটো সায়মনের দিকে এগিয়ে দিলো। মাটিতে বসে তরকারী কাটা মেয়ের দিকে চাইতেই বিদ্রুপ দৃষ্টির শিকার হয়।রেগে আছে বুঝি?শিরীন ঝাঁঝালো গলায় বলতে লাগলো,

“খাওয়া দাওয়া নেই শুধু কাজ আর কাজ।কতবার বলেছি আমার বাড়ি এসে খেয়ে যেতে।কে শুনে কার কথা?আমিতো পর।”

“আহা রেগে যাচ্ছিস কেনো?আর তোকে কে বলেছে রান্না করতে?”

রাগী চোখে তাকালো শিরীন।বললো, “বড় ভাই বলে রাগ করার অধিকার তোমারই আছে?আমার নেই।ভাইকে ক্ষুধার্থ দেখলে আমারও কলিজা পুড়ে!”

“তোকে কে বলেছে আমি ক্ষুধার্থ?মোল্লা হোটেলে প্রতিদিন খাই”

“কত খাও আমি জানি।রান্না করে দিবো প্রতিদিন এসে।কোনো কথা বলবে না।হাত মুখ ধুয়ে আসো।আমি চা দিচ্ছি।”

পাগলাটে স্বভাবের বোন।অল্প বয়সে বিয়ে করে এই শহরে এসেছিল।এখন তার বোন দুই সন্তানের জননী।স্বামী,সংসার বাচ্চা সব একহাতে সামলে নিচ্ছে।কেউ সত্যি বলেছিলো পুরুষের আগে নারী বুঝদার হয়ে উঠে।অল্প বয়সে সবটা সামলে নেয়।মেয়েলি হাতের চা খায় না কিছুদিন হতে।আজ বোন এসেছে।কাপের পরিবর্তে মগ ভর্তি চা নিয়েছে।সাথে টোস্ট বিস্কুট।নিজে খাচ্ছে সাথে সায়মনকে যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে।

একপর্যায়ে মাহরুর প্রশ্ন করে, “সুমাইয়াকে আনলি না কেনো?”

“ও মাদ্রাসায়।ওর বাবা বাড়ি যাওয়ার পথে ওকে বাড়ি নিয়ে যাবে।”

“আচ্ছা আচ্ছা।”

নিরব হলো দুজনেই।সায়মনের সাথে ব্যস্ত হচ্ছে মাহরুর।খুব ভালোভাবে ভাগ্নে, ভাগ্নিকে।মৌনতা ভেঙে শিরীন বললো,

“ভাবি আর ফিরবে না?”

“নাহ”

“ডিভোর্সের পরও বোঝাপড়ার জন্য কিছু সময় দেওয়া হয়।তোমরা সেই সময়টাও নিলে না কেনো?”

“সুযোগ দেয়নি তোর প্রাক্তন ভাবি”

ভাইয়ের মুখে নতুন শব্দ।তোর ভাবি থেকে তোর প্রাক্তন ভাবি হয়েছে।হবেই না কেনো?সংসার ভেঙে চুরমার। বর্তমান থেকে প্রাক্তন।অথচ মাহরুরের মুখে কোনো গ্লানির চিন্হ নেই।একটা শক্ত মনের মানুষ আগে থেকেই।জীবনের উত্থান পতন দেখেছে। গাধার খাটুনি খেটে সুখের মুখটা দেখতে পেলো না। এরচেয়ে গ্রামে দিন এনে দিন খাওয়া সেই সময়টাই ভালো ছিলো।বাবা চলে গেলো। মাহরুরের বিয়ের দুই বছরের মাথায় মাও চলে গেলো।আর কি আছে জীবনে বাকি?

“আমাদের বাড়ির নিচের ঘরটা খালি আছে।আমি জানি তোমাকে হাজার বললেও তুমি আমার সাথে এসে থাকবে না।তুমি নাহয় ওই ঘরটায় উঠো।অন্তত তোমাকে চোখের সামনে তো পাবো ভাইয়া”

“তুই কেনো বুঝিস না।বোনের শ্বশুরবাড়িতে এভাবে থাকা যায় না।”

“সুমাইয়ার বাবাকে তুমি এই চিনলে এত বছরে?ভাবি যাওয়ার পর থেকে এখানে এসে তোমাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।তোমার আত্মসম্মান বোধের কথা বিবেচনা করে আমি থামিয়ে রেখেছি।”

“ভেবে দেখবো।”

শিরীন চলে গেছে।রান্না করে রেখে যাওয়া খাবার টুকু তৃপ্তি সহকারে খেয়ে উঠে মাহরুর।আজকাল নতুন অভ্যাসে ধরেছে। বদঅভ্যাস। সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস। আসক্ত নয় সে।মাথা ভার হলে দুয়েকটা খেয়ে উঠে।আজও তাই।আকাশের চন্দ্রে মনোনিবেশ করে কিছুক্ষন যাবৎ।কয়েক দল মেঘ ঢেকে দিচ্ছে বারবার।আবার ফুটে উঠছে তার শুভ্র সৌন্দর্য।মনে পড়লো তার নিজের চন্দ্রের কথা। মানবাকৃতির চন্দ্র।তার মুখেও দেখা যেত এই মেঘের ঘনঘটা।আবার হুট করেই ফুটে উঠতো চন্দ্রসুধা।

“আয় চন্দ্র তোকে কল্পনা করি”

___

অতীত,

ক্রন্দনে মুখ ভিজেছে।পায়ের ব্যথার চেয়ে দ্বিগুণ মনের ব্যাথা।পায়ের চোটতো শুধু একটা বাহানা মাত্র। মাহরুরের উঠোনে বসে কেঁদে চলেছে মল্লিকা।ব্যস্ত দেখাচ্ছে তার বাবা মাকেও।আজ বিদায়ের দিন। অনিশ্চিত যাত্রা।ফেরার কোনো যুতসই সময় নেই। চিৎকার চেঁচামেচি নেই। নিঃশব্দে অস্রু বিসর্জন দিচ্ছে মল্লিকা। মাহরুরও তার সামনে ঠায় দাড়িয়ে। কয়বার শান্তনা দিতে এসেছিলো।লাভ হয়নি।শীতকালে ব্যথা বেশি লাগে গায়ে।তবে এই পীড়া ভিন্ন। মাহরুরের বিচক্ষণ নজরে এই বেদনাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে।আজ প্রথম বোধহয় খারাপ লাগলো কিশোরী মেয়েটির জন্য।ছোট্ট হৃদয় কি জানে কি চাচ্ছে সে?অনেক উচুতে হাত বাড়িয়েছে। সম্ভবের মধ্যেও অসম্ভবের আভাস।কি করবে তার চন্দ্রের জন্য?কি করে থামাবে তাকে?

পায়ের ব্যথা নিয়েও উঠে দাড়ালো।সবার চোখের আড়ালে একটা চিরকুট পুড়ে দিলো মাহরুরের ব্যাগে।সবার দৃষ্টি এড়াতে পারলেও মাহরুরের নজরে ধরা দিয়েছে সেই চুরি। বাস স্ট্যান্ডে কাকুতি ভরা মুখে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির মুখের দিকে শেষবার চাইলো।তারপর মিনিট দশেকের মধ্যে বিশাল বাসের চার চাকা ত্বরান্বিত গতিতে দূরত্ব বাড়াতে লাগলো।মাথা বের করে একবার পিছু দেখা হয়েছে। দুরত্বের সাথে ঝাপসা হয়ে যাওয়া তরুণীর অবয়ব।

“শহরের ব্যস্ততায় আমাকে ভুলে যাবে?আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মাহরুর ভাই।কিন্তু আমি জানি তোমার চাকরিটা বেশি জরুরি।তুমি ভালো থাকবে। চন্দ্র অপেক্ষায় রইলো”

কি সুন্দর হাতের লেখনী!তার সাথে মিশ্রিত তার এলোমেলো অনুভূতি। হীনমন্য মাহরুর।তাকে বলে দিয়েছে সেও অপেক্ষা করবে।কিন্তু এরপর?তাকে প্রশ্রয় দেয়া ঠিক হবে?ফেলে রেখে কষ্ট দেওয়াওতো অন্যায়। মাহরুর কি অনুভব করতে পারছে তার চলে যাওয়া কতটা ক্ষতবিক্ষত করছে চন্দ্রের হৃদয়কে?বুঝলে হয়তো চাকরি ভেস্তে দিত।

“আমি বুঝতে পারছি না চন্দ্র আমার কি করা উচিৎ?তোর এগিয়ে রাখা হাতে নিজের হাত বাড়াবো? নাকি ফিরিয়ে দেবো।তুই সত্যিই লক্ষী একটা মেয়ে।এটাও সত্য তুই যে ঘরে যাবি সেই ঘর আলোকিত করবি।তারপরও একটা কিন্তু রয়ে যায়রে চন্দ্র।”

__

দশম শ্রেণীতে ভালো নাম্বারে পাশ করেছিলো মল্লিকা।পড়ালেখায় ছিলো দুরন্ত।ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে। ‘টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়েট ফর নোন’ সময় আর নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।তারা হয় নিজের মার্জিত মালিক।চলে যেতে দ্বিধাবোধ করে না।কিন্তু অপেক্ষা? সময়তো চলে যায়।তবে অপেক্ষারত মানুষটা যে স্থির। যার জানা নেই এই প্রতীক্ষার অবসান কবে?মাসের পর মাস পেরিয়ে যাচ্ছে এই অপেক্ষায়।হুমায়ূন আহমেদ স্যার এক উক্তি রেখে গিয়েছেন, “অপেক্ষা হলো শুদ্ধতম ভালোবাসার একটি চিহ্ন।”

ঘূর্ণায়মান ঘড়িকে দেখে আর কত বুঝানো যায় মনকে?মনে পড়ে মাহরুর ভাইকে।ভীষণ মনে পড়ে। মধ্যেমধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়া মল্লিকা বেঁচে আছে এই বিশ্বাস নিয়ে মাহরুর ভাই ফিরবে।তাকে সময় দিয়েছে।ওই সময়ের মূল্য সেও দিবে।

তার মন খারাপে যোগ দিলো আরেকজন।হাসি মাখা লাজুক মুখ।আজ সে একা আসেনি।তার বাবা মাও এসেছে।চুল হাওয়ায় উড়িয়ে টেবিলে হাত রেখে আনমনে বসে থাকা মল্লিকা তাকায় শশীর দিকে।প্রশ্ন করে,

“এত খুশি কেনো তুই?”

আবারো লাজুক হাসলো শশী।মাথা নামিয়ে ঠোঁট কামড়ে বসেছে।কি এমন প্রশ্ন করেছে মল্লিকা তাই ভেবে পেলো না।লজ্জার কি আছে এখানে?বাহু ঝাঁকিয়ে পূনরায় প্রশ্ন করে,

“বলছিস না যে?”

কন্ঠ খাদে নামিয়ে শশী উত্তর দেয়, “সেদিন আমাকে দেখতে এসেছিল।আমাকে পছন্দ হয়েছে।আগামী মাসে বয়স আঠারো হলেই বিয়ে।”

চক্ষু ছানাবড়া মল্লিকার। তড়িৎ গতিতে জিজ্ঞেসা করলো, “তাই তুই এত খুশি?”

“হ্যাঁ রে।আমার মামাতো ভাই হয়।আমি তাকে দেখেছি।গোছানো মানুষ।”

“তাকে পছন্দ করিস?”

“না তেমনটা নয়। তবে অপছন্দ করিনা।তার বয়সও বেশি না।পাশের গ্রামেই থাকে তারা।”

দুঃখ যেনো দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলো।আগামী মাসে শশীর বয়স আঠারো হবে।তারপরই তার বিয়ে।সখীর বিয়েতে আনন্দিত হওয়ার বদলে দুঃখী হয় মল্লিকা পরবর্তী সময়ের জন্য।বিয়ে হলেও তাকে চলে যেতে হবে দূরে।পাশের বাড়ি থেকে পাশের গ্রাম?না চাইতেই হুহু করে কেদে ফেললো মল্লিকা।

বললো, “তুইও আমাকে ছেড়ে চলে যাবি শশী?”

হাসি মাখা বদন মিয়ে যায়। শশীও হঠাৎ আবেগ প্রবন হয়ে উঠে। সত্যিইতো? তারও চলে যেতে হবে।দ্রুত গতিতে মল্লিকাকে জড়িয়ে ধরলো।

বললো, “আমি বিয়ে করবো না।আমি তোকে ছেড়ে যাবো না কোথাও!”

“এটা কি বললেই হয়? মাহরুর ভাইকে আটকাইনি তার সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। তোকেও আটকাবো না।আমি চাই সবাই সুখে থাকুক।তোরা দুজনই আমার ভীষণ প্রিয়।আমার সাথে অন্ততঃ দেখা করতে আসিস শশী”

দুজনেই বাবা মার পাশে এসে বসেছে।আলাপ আলোচনা চলছে বিয়ের।দাওয়াত করতে এসেছেন সর্বপ্রথম রমজান সাহেব ও তার পরিবারকে।একমাস আগেই জানিয়ে দিলেন।আসতে হবে।
রমজান সাহেব নিজ থেকে শশীর বাবার দিকে মিষ্টি এগিয়ে দিয়ে বললেন,

“আলহামদুলিল্লাহ ভীষণ খুশি হয়েছি।সবার ছেলে মেয়েরা সুখে থাকুক।এটাইতো আমাদের চাওয়া।”

“হ্যা ভাই সাহেব।ছোট করেই বিয়েটা করবো।অত বড় আয়োজন না হলেও আপনারা সবসময় থাকবেন কিন্তু।” শশীর বাবা উত্তর দিল।

রমজান সাহেব বললেন, “অবশ্যই। শশীতো আমারও মেয়ে নাকি?সেই ছোট বেলা থেকে দেখেছি বাচ্চাটাকে। কতো বড়ো হয়ে গেলো।”

মুরব্বীদের কথায় মুখরিত ঘরটা।বিয়ের সমস্ত বিষয়ে যেনো আজই আলোচনা করে ফেলছেন।রমজান সাহেবও নিজের ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব তুলে নেন।কথায় কথায় রমজান সাহেব বলে উঠলেন,

“আমার মেয়েটাকেও একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিবো খুব দ্রুত।দুআ রাখবেন।”

“তা যা বলেছেন।অল্প বয়সে বিয়েটা হয়ে গেলেই ভালো। সংসারটা বুঝে নিয়ে এগিয়ে নিতে পারবে।”

রমজান সাহেব সায় দিয়ে বললেন, “শশী মার বিয়েটা মিটলে আমিও পুরো দমে ছেলে খোঁজা শুরু করে দেবো”

বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত পড়লো কথাটি মল্লিকার কর্ণকুহরে।সাথেসাথে কাঁপুনি ধরে গেছে। একি বললো বাবা?তাকেও বিয়ে দিয়ে দিবে! হৃদপিণ্ডটা দ্রুত বেগে ছুটছে।এখনই বোধহয় মৃত্যু হবে। দাঁড়িয়ে ছটফট করতে লাগলো মল্লিকা। মাহরুর ভাইতো সময় দিয়েছে,নিয়েছে।এর আগেই বাবা তাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কথা কেনো বলছে। শশী বুঝতে পারে তার অবস্থা। হাত চেপে দ্রুত অন্য ঘরে নিয়ে গেল।

আর্তনাদ করে মল্লিকা বলতে লাগলো, “আমি মরে যাবো শশী।আমি মরে যাবো!আমার মাহরুর ভাইকে চাই।এনে দে শশী।”

“থাম মল্লিকা।কেউ শুনতে পাবে।”

“তুই বুঝতে পারছিস না। তুইও মাহরুর ভাইয়ের মতন আমাকে ছোট ভাবিস?আমি! আমাকে একবার মাহরুর ভাইয়ের সাথে কথা বলিয়ে দে।হাত জোড় করি তোর কাছে!”

বাবার বিনা অনুমতিতে তার ফোন হাতে নিয়েছে।গলা শুষ্ক হয়ে উঠতে লাগলো একটু পরপর।পানি খাওয়ার সুযোগ নেই।চোরের মতন তার প্রত্যেকটি কদম।দেয়াল ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে দেখলো রাতের একটা বাজে।এতটা সময় জেগে বাবা মায়ের ঘুমিয়ে পড়ার অপেক্ষা করেছে।সৌভাগ্যবশত ছোট্ট বাটন ফোনটা আজ ঘরে না বসার ঘরে রেখেছে। তিন রুম বিশিষ্ট আধাপাকা ঘরে নিঃশ্বাস ফেললেও টের পাওয়া যায়।আজতো দুঃসাহস করে ফেলেছে মল্লিকা।না পারতে এক গ্লাস পানি নিয়ে খেয়ে ফেললো।শব্দ যেনো না হয় সেখানেও খেয়াল রেখেছে।
দুরুদুরু বুক নিয়ে ফোন মেলায় সেই কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে।

“আসসালামু আলাইকুম চাচা।এত রাতে ফোন করলেন?সব ঠিক আছেতো?”

তরতর করে সর্বাঙ্গে কাঁটা দিয়ে উঠে মল্লিকার।মাহরুর ভাইয়ের ঘুমঘুম কন্ঠ লোমহর্ষক। অন্যদিকে চিন্তায় পড়ে গেছে মাহরুর।রমজান চাচার নাম্বার থেকে কল এসেছে।ফোন করে কোনো কথা বলছে না। আকষ্মিক কান্নার শব্দ ভেসে এলো অন্যপাশ থেকে।মল্লিকা হেঁচকি তুলে বললো,

“মাহরুর ভাই”

কন্ঠস্বর অস্পষ্ট।কান্নার জোরে গলা জড়িয়ে আসছে। মাহরুর বললো,

“চন্দ্র?কি হয়েছে? কাঁদছিস কেনো?”

“মাহরুর ভাই…বাবা”

“কি হয়েছে চাচার?”

নাক টেনে টেনে মল্লিকা বললো, “আমাকে..আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে বাবা। শশীর বিয়ে আগামী মাসে।বাবা…বলেছে আমাকেও ওর পরেই বিয়ে দিবে..ছেলে খুঁজবে আমার জন্য”

কথাগুলো বলতে দীর্ঘসময় নিয়েছে। এমনভাবে কাদঁছে মেয়েটা!কথাও গলায় আটকে আসছে। মাহরুর সর্বপ্রথম তাকে থামানোর প্রয়াস করে বলে,

“চন্দ্র? শোন!শান্ত হ।কিসের বিয়ে?কবে বলেছে দিবে বিয়ে?”

“শশীর বিয়ের পরই। মাহরুর ভাই তুমিতো আমাকে সময় দিয়েছো।বাবা কেনো এরই আগে আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে।আমি বিয়ে করবো না মাহরুর ভাই।আমি পারবো না বিয়ে করতে।আমাকে বাঁচাও।আমি অন্যের ঘরে যাবো না কক্ষনো!পায়ে পড়ি তোমার”

মিনতি করছে চন্দ্রমল্লিকা। কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা নাজেহাল। এরকম করেতো মাহরুরের বিদায়ের দিনও কাদেনি।বুঝে উঠতে পারল না মাহরুর।কি করবে?কি করে শান্ত করবে তাকে?

নরম গলায় মাহরুর বলে, “বিয়ে বললেই হয়ে যায়না।আমি কথা বলবো চাচার সাথে।এটা কি তোর বিয়ের বয়স?”

“আমি তোমাকে ভালোবাসি মাহরুর ভাই”

“কি বললি?”

“ভালোবাসি!”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে