চন্দ্র’মল্লিকা ৩
লেখা : Azyah_সূচনা
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে হিরা এবং মাহরুর।রাস্তার মোড়ে হঠাৎ ডেকে থামানো হয়েছে তাকে।পূর্বে কয়েকবার কল করেছিলো মাহরুরকে। অফিসের কাজে খেয়াল করা হয়নি।ফোন ব্যাক করার আগেই সামনে এসে হাজির হয় তার তথাকথিত প্রাক্তন স্ত্রী।
“এখানে দাড়িয়ে আছো কেনো হিরা?কি হয়েছে?”
নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো হিরা। মাহরুরের কন্ঠে মুখ তুলে তাকায়। একি?মুখে অপরাধবোধের ছাপ দেখা যাচ্ছে যে?
“কোনো সমস্যা?আমাকে খুলে বলো। সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করবো”
“আমাকে ক্ষমা করে দিন।প্লিজ আমার প্রতি কোনো আক্ষেপ রাখবেন না।”
মাহরুর হেসে জিজ্ঞেস করলো, “ব্যাস এতটুকু ব্যাপার?আমার কোনো আক্ষেপ নেই।বরং তুমি আমাকে ক্ষমা করো আমি তোমাকে ভালো রাখতে পারিনি।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সত্যটা বলার জন্য উদ্যত হয় হিরা, “আমি বিয়ে করছি।বিয়ের পর আমার হবু স্বামীর সাথেই কানাডা চলে যাবো।এটাই বলতে এসেছিলাম।আমি চাই না আপনি অন্য করো কাছ থেকে এই খবর পান।নতুনভাবে জীবন শুরু করতে যাচ্ছি মাহি।আমার প্রতি কোনো আক্ষেপ রাখবেন না।আপনার সাথে কাটানো সময় সুন্দর ছিলো।তবে সম্পূর্ণ অনুভূতিহীন।ভুলবশত কয়েকবার আমাদের কাছে আসা হয়েছে….”
“এসব পুরোনো কথা।বাদ দিলে ভালো হয়।তোমার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা।”
“আপনি রেগে নেই আমার উপর?”
“রেগে থাকার কথা ছিল?”
“হয়তো ছিলো।আপনাকে এভাবে মাঝ পথে ফেলে রেখে চলে গেলাম।”
অন্তর জবাব দিলো, “যেমন কর্ম তেমন ফল।শক্ত পুরুষকে ফেলে রেখে যাওয়ায় অনুশোচনায় ভুগছে হিরা।একদিন সেও এক কিশোরীকে দিশেহারা করে তার চক্ষু সম্মুখে অন্যের হয়েছিলো ”
তবে মুখ আওড়ায় অন্য বাণী, “আমার কোনো রাগ নেই, আক্ষেপ নেই।তুমি ভালো থাকো। সবাই ভালো থাকুক”
চেষ্টায় কি কমতি ছিলো বিগত ছয় বছরে?এক নারী মনে ছুরি চালিয়েছিলো।আরেক নারীকে মিথ্যে সম্পর্কে বেধে ক্ষতবিক্ষত করতে চায়নি।আর পাঁচটা সংসারের মতোই চালাতে চেয়েছিলো নিজের সংসারের চাকা। ভালোবাসায় না হোক মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হতে চেয়েছিলো।এক বছরের ব্যবধানে হিরার রূপ বদলায়।বিতৃষ্ণা আসতে থাকে মাহরুরের প্রতি।তার যত্ন, দায়িত্বশীলতার চেয়ে বেশি চোখে বাজে তার অসহায়ত্ব। পাঁচটা পূর্ণ করার অসমর্থ।এরপর শুরু হয় তাদের দূরত্ব।মেনে নিয়েছে মাহরুরও।এখন থেকে নতুন জীবন সূচনার পালা। একাকীত্বে ভুগে।জেদী মনকে মানিয়ে নিয়েছে।তার এই জীবন চালনায় তার সঙ্গ হবে তার কল্পনা।
প্রতিদিন এই পরিবেশটা দেখতে দেখতেই বাড়ি ফেরা হয়।বিকেলের শেষভাগে।কোলাহল থাকে এই নির্বোধ শহরে। অফিস থেকে বাড়ির দূরত্ব বিশ থেকে পঁচিশ মিনিট। মধ্যবিত্ত জীবনে যানবাহনের ভাড়া বাঁচিয়ে মনে হয় এক রাজপ্রাসাদ কেনো যাবে।হেঁটে হেঁটে পাড়ি দেয় কংক্রিডের সরণি।হাঁটলে নাকি শরীর ভালো থাকে।এটাও টাকা বাঁচানোর এক ওজনদায়ক বাহানা মাত্র।যাওয়ার পথে একটু এগোলেই বাগানবাড়িটার দেখা মেলে।তার খুব পছন্দের একজনের বাড়ি। বাগানবাড়ির দরজার কাছে পা দুটো থমকেছে খানিক সময়ের জন্য। নিরাপদ দূরত্বে সামান্য উকি ঝুঁকিও দিলো। কোথায় মিষ্টি মেয়েটা?দরজার কাছে দেখা যাচ্ছে না যে?পকেটে করে দুটো চকোলেট এনেছিল তার উদ্দেশ্যে।হটাৎ মনে পড়লো বাড়ির পাশের ছোটো খোলা জায়গার কথা।এখানে খেলে মিষ্টি।তার সমবয়সীদের সাথে।কদম পিছিয়ে সেখানে নজড় বুলায়।নাহ!এখানেও নেই।আজ বোধহয় খেলতে আসেনি সে। চকোলেট দুটো পূনরায় বুক পকেটে রেখে হাটা শুরু করে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
___
অতীত,
“মাহরুর এসেছে”
এই কথাটি কতটা আনন্দে আত্মহারা করে তুলেছে মল্লিকাকে? কেউ জানে?জানে না।সে প্রকাশ করছে না।বুঝতে দিচ্ছে না বুকে চেপে রাখা ঝড়।এখনই হয়তো বিস্ফোরণ ঘটবে মেয়েলি হৃদপিণ্ডের। কম্পিত চিত্তে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা মল্লিকার নজর বাবার ঘরের দিকে।সেখানেই বসে আছে পা গুটিয়ে তার মনের মানুষ।পরনে কালো রাঙা উলের সোয়েটার জড়িয়ে।হাত দুটো একে ওপরের সাথে মিলিত। সম্পূর্ণ দৃষ্টি মল্লিকার বাবা রমজান সাহেবের দিকে।আলাপ আলোচনায় মগ্ন চাচা ভাতিজা।পুরুষালি স্বর সুর তুলছে ঘরের আনাচে কানাচে।এতদিন পর চক্ষু দর্শন হয়েছে বলে কি তাকে পূর্বের তুলনায় বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে?নাকি সে আগ থেকেই রূপবান পুরুষ?
“জানুয়ারি থেকে চাকরিতে যোগ দিচ্ছি চাচা।প্রথমে বেতন অল্প কিন্তু তারা আশ্বাস দিয়েছে কাজের সাথে লেগে থাকলে বেতন বাড়বে।”
“খুশি হইছি বাজান।তুইতো একমাত্র সম্বল তোর মায়ের।” রমজান সাহেব উত্তর দিলেন।
“দুআ করবেন চাচা।চাকরিটা পাকাপোক্ত হয়ে গেলে মাকে নিয়ে যাবো সাথে।একা একা এখানে কি করে থাকবে। শিরীনটাও নেই।”
মাহরুরের বাহু চাপড়ে রমজান সাহেব বললেন, “তুই কোনো টেনশন করবি না।তুই যতদিন না ঢাকায় সব ঠিকঠাক করতে পারস আমরা ভাবীরে এই বাড়ি আইনা রাখবো।আম্মা মরার পর এই ভাবীই আমারে মায়ের মতন পালসে।ভাবীর প্রতি আমারও দায়িত্ব আছে।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহরুর উত্তর দেয়, “আপনারা আছেন বলেই আমি নিশ্চিন্ত ”
“তা ঢাকায় এতদিন কোথায় ছিলি?”
“শিরীনের শশুরবাড়িতে চাচা।আমি থাকতে চাইনি।আমারে জোর করে রেখেছে।ওর শশুর ভালো মানুষ।বললো নিজের বোনের বাড়ি থাকতে ভাই অন্য কোনো জায়গায় কেন থাকবে।আমিও চোখের সরম দেখায় ভালোমন্দ বাজার করে দিয়েছি মাঝেমধ্যে।”
“ভালো করছিস বাজান।যতই হোক মাইয়ার শশুরবাড়ি।”
পুরুষের নেত্র জোড়া এদিক ওদিক ঘুরল।কাউকে খুঁজছে হয়তো। যার খোঁজ করছে সেতো পর্দার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে। বিচক্ষণ চোখ দুটো ফর্সা পা দুটো দেখতে ভুল করলো না।আনমনে হেসে ফেলে।নিজ থেকে ব্যাগ থেকে প্যাকেট বের করে প্রশ্ন করলো,
“চাচী আর চন্দ্র কই চাচা?ডাকেন আপনাদের জন্য উপহার এনেছি”
রমজান সাহেব চমকালেন।বললেন, “মাত্র চাকরি পাইলি?এখনই এসবের কি দরকার ছিল?”
“সুসংবাদ পেয়েছি চাচা তাই ভাবলাম।আর এতে বেশি টাকা খরচ যায়নি।”
রমজান সাহেব স্ত্রী আর মেয়েকে আওয়াজ তুলে ডাকলেন।ফরিদা বেগম এসে হাজির হলেও মল্লিকা আসতে সময় নিচ্ছে।ভয় পাচ্ছে আজ। ক্যালেন্ডারে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো মাসটা। ডিসেম্বর এর তিন তারিখ।তার মানে মাত্র একমাস? একমাসও পুরোপুরি নেই।তারপর মাহরুর ভাই শুরু বিশ দিন নয় অনেক অনেক দিনের জন্য চলে যাবেন সেই শহরে।কোমল মন দ্বিধায়।তার আগমনে খুশি হবে?নাকি আবার চলে যাওয়ার শোক পালন করবে?
মায়ের ডাকে ঘরে আসতে বাধ্য হয় মল্লিকা।বাবার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে।আড়াল করতে চাইছে খানিকটা নিজেকে।এক এক করে একটি পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি এগিয়ে দিল মাহরুর রমজান সাহেবের দিকে।আর শাড়িটি দিয়েছে ফরিদা বেগমের দিকে।তাদের উভয়ের মুখে একই কথা। ‘ কি দরকার ছিলো? ‘ মাহরুর অগ্রাহ্য করে। শখ করে এনেছে। এতে টাকা পয়সার হিসেব করলে হবে?
“চন্দ্র?এখানে আমার পাশে এসে বস”
এমন ডাকে কেপে উঠলো চন্দ্রমল্লিকা।নিজের দিকে আসার আহ্বান করছে।ভিন্ন এই ডাক।তবে মনে হলো সারাজীবনের জন্য পাশে ডাকছে। গুটিগুটি পায়ে এক কোনায় এসে বসে।তবে দুরত্বে।
একটি প্যাকেট তার দিকে এগিয়ে বললো, “এটা তোর।পছন্দ হয় কিনা দেখ”
গাঢ় নীল রঙের সেলওয়ার কামিজটা সুন্দর।সাদা সুতোয় কারুকার্য করা। ওড়নাটা সাদা নীলে মিশ্রিত।মন বললো মাহরুr যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর তার মন।তার চেয়ে বেশি সুন্দর তার পছন্দ। হাত বুলিয়ে পছন্দ হওয়া ড্রেসটা দেখে নিচ্ছে মল্লিকা।একটা খাদ তাকে সুন্দর জিনিসে তৃপ্তি দিতে পারছে না। মাহরুর এসেছে এর থেকে বেশী মাহরুর চলে যাবে।এটাই ভাবাচ্ছে তাকে।
“পছন্দ হয়েছে?”
“হ্যা মাহরুর ভাই”
রমজান সাহেব এবং ফরিদা বেগম তাদেরও বেশ পছন্দ হয়েছে।ফরিদা বেগম মাহরুরের জন্যে চায়ের ব্যবস্থা করতে গিয়েছেন।রমজান সাহেবও উঠে দাঁড়ান।ভাতিজা শখ করে কিছু এনেছে।এখনই পড়ে দেখবেন।এলাকা জুড়ে সবাইকে জানাবেন তার ঢাকায় চাকরি হয়েছে।গ্রাম্য অঞ্চলে শহরে চাকরি বিশাল ব্যাপার।শিক্ষিতদের সংখ্যা কম।এর মধ্যে মাহরুরের নামটা বেশ জমকালো সবার কাছে।
“তোর নাকি জ্বর হয়েছিলো চন্দ্র?”
“হ্যা।তুমি কি করে জানলে?”
“একটু আগে চাচা বললো।কেনো পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে শুনিসনি বুঝি?”
কাচুমাচু হয়ে গেলো লজ্জায়।সে জানে?মল্লিকা এতক্ষন পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিল?উত্তর আসলো না আর মুখ ফুটে।চোখ নামিয়ে অপরাধীর মতন বসে আছে।
মাহরুর হেসে বললো, “কখনো বড়দের মতন আচরণ করে আমাকে ভাবাস।আবার কখন নির্বোধের মতন করিস!অনেক বোকা তুই চন্দ্র।”
বিপরীত প্রসঙ্গ তোলে মল্লিকা।জিজ্ঞেস করে, “তুমি একবারের জন্য ঢাকা চলে যাচ্ছো মাহরুর ভাই?”
“উমমম। হ্যা বলতে পারিস।কিন্তু ছুটিতে আসবো।”
“আমাদের দেখা হবে না মাহরুর ভাই?বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনতো প্রতি বৃহস্পতিবার আসতে।এখন কি সেটাও হবে না?”
“ঢাকা অনেক দুর।আমার বিশ্ববিদ্যালয় কাছাকাছি ছিলো।প্রতি সপ্তাহে আসা হচ্ছে না আর।”
শীতকালে বারবার কালবৈশাখীর কালো মেঘের দেখা দেয়।আকাশে নয় রমণীর মুখে। চন্দ্রের উজ্জ্বল মুখকে ঢেকে দেয় বারবার।এই মেয়েটি দাবি করে ভালোবাসার।অল্প বয়সের আবেগ বলে বারবার বাদ দিতে চাইলেও তার আচরণ?সেটা মাহরুরকে দোটানায় ফেলে।কষ্ট দিতে চায় না মেয়েটিকে।সে যা চাইছে তা কি আদৌ সম্ভব?মুখ ফুটে সবটা বলেও না।আবার তার চোখ বিশাল এক উপন্যাস আওড়ায়।
“চল মেলায় যাবো। শশীকেও ডাক।”
“আমি যাবো না”
কপাল কুঁচকায় মাহরুর।সরাসরি প্রত্যাখ্যান? সেতো মাহরুরের সাথে থাকার জন্য বাহানা খুঁজতো।আজ এমন রূপ? অদ্ভুত!চোখে মুখে অভিমান। মাহরুর তোয়াক্কা না করেই বললো,
“আমি তোর মতামত জানতে চাইনি।দৌড়ে গিয়ে শশীকে ডাক”
লম্বা চওড়া এক যুবকের দুইপাশে হাঁটছে দুজনে।মল্লিকা আর শশী। শশী ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মল্লিকার দিকে চাইছে বারবার।অন্যদিকে মুখটা ভার চন্দ্রমল্লিকার।তাদের দুজনকে দুপাশে রাখার মূল উদ্দেশ্য হলো তাদের বাচাল মুখ।একসাথে থেকে বকবক করে কান পাকিয়েছে মাহরুরের।মাথা ব্যাথা উঠার আগেই বিভক্ত হয় তারা। শশীর চিন্তা মল্লিকাকে নিয়ে। মাহরুর ভাই মেলায় নিয়ে যাচ্ছে।ঘোরাতে। এতে তার খুশি সাত সমুদ্র তের নদীর পারে হওয়ার কথা।সে কেনো মনমরা?
মুখের ভঙ্গি চুপসান রেখেই সারাটা বিকেল পাড় করে চন্দ্রমল্লিকা।তাকে দেখে শশীও উপভোগ কার্য থেকে বিরত।আজ মল্লিকার মাহরুর ভাই তাকে ফুচকা খাইয়েও খুশি করতে পারেনি?দুজনকে দুই জোড়া কানের দুলও কিনে দিলো।তাতেও লাভ হলো না?মল্লিকার মন বোঝা বেশ কঠিন হয়ে উঠছে বাল্যকালের সখীর কাছেও।
আকস্মিক উঠে দাঁড়ালো মল্লিকা। অনুমতি চেয়ে বললো, “মাহরুর ভাই সামনের দোকানটায় যাবো।”
“কিছু নিবি?”
“হ্যাঁ”
“আচ্ছা চল”
“না তুমি আর শশী এখানে দাড়াও।আমি একা যাবো”
যেতে চাইছে মাহরুর সাথে।তবে বিনয়ের সুরে মল্লিকা বারণ করে।বেশি দূরে যাচ্ছে না সে।চোখের সামনেই আছে। মাহরুর সামান্য এগিয়ে দাড়ায়।গোলগোল চোখে দেখছে বই খাতার দোকানে দাড়ানো চন্দ্রকে।ফিরে এসেছে গাঢ় খয়েরী রঙে মোড়ানো ডায়রি হাতে নিয়ে সাথে একটি বলেন।
খানিকটা সময় নিয়ে বললো, “তুমিতো চলে যাবে মাহরুর ভাই।এটা তোমার জন্য”
বিস্ময়বোধ ঘিরে ফেলে মাহরুরকে।এতটুক মাথায় এমন চিন্তা এলো কি করে?নাকি সেই ভুল ভাবছে।ছোটোবেলা থেকে ছোটো চন্দ্র ছোট চন্দ্র বলতে বলতে তার মস্তিষ্কে এটাই গেথেছে।তার চিন্তার আড়ালে বড় হয়ে যাওয়া চন্দ্রের দিকে খেয়াল রাখতে পারেনি।
“এগুলো কেনো এনেছিস চন্দ্র?”
“তোমার জন্য। আমাকেওতো তুমি উপহার দিয়েছো।”
“আমি চেয়েছি তোর কাছে?পাকামো করিস কেনো?আর টাকা পেলি কোথায়?”
শশীর বড় ভাইয়ের আগমনে তার কথার মাঝে বাঁধা আসে। শশীকে নিয়ে এসেছে শওকত।বাড়িতে মেহমান এসেছে। মাহরুরের সাথে কুশল বিনিময় করে তাদের বিদায় দেয়। পূনরায় চন্দ্রের দিকে চাইলে শশী ফিরে এসে বলে,
“এক বছর ব্যাংকে টাকা জমিয়েছিল।সেটা কাল রাতে ভেঙেছে আপনাকে উপহার দিবে বলে” বলেই ভাইয়ের পেছনে ভো দৌড় লাগায় শশী।
রাগের আভাস দেখতে পেলো মাহরুরের মুখে।এই রাগ যে তারই বোকামির ফল?সেটা বোধগম্যতার বাহিরে নয় মল্লিকার।ভয় হলো সামান্য।চোখের ইশারায় পিছু হাঁটতে বলে হাটতে থাকে মাহরুর।কিছু পথ হেঁটে থেমে যায় মাহরুর।সাথে মল্লিকাও।তার দিকে ঘুরে বুকে হাত বাঁধলো।
বিরক্তির সাথে বললো, “এমন কেন করিস?কি সমস্যা তোর?”
“তুমি জানো মাহরুর ভাই।”
“না আমি জানি না।তুই বল।আমার মধ্যে কি পেয়েছিস?”
“তুমি ভালো মানুষ মাহরুর ভাই।তাই ভালো লাগে তোমাকে।”
চন্দ্রের ঝটপট উত্তরে চোখ বুজে কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাহরুর। দীর্ঘশ্বাস ফেলে। পরক্ষনেই বললো,
“ভালো লাগা সময়ের সাথে কমে যাবে।এই বয়সটা এমনি।তুই দেখে নিস আজ থেকে আরো দুই তিন বছর পর আর আমাকে ভালো লাগবে না।”
“তুমি নাহয় দুই তিন বছর অপেক্ষা করে দেখো মাহরুর ভাই।যদি তোমার কথা ঠিক হয় আমাকে শাস্তি দিও।আমাকে তুমি কেনো ছোট ভাবো। ভালো লাগা অনুভব করার জন্যেওতো মনকে স্বাবলম্বী হতে হয়।ছোটোবেলা থেকে তোমাকে ভাই হিসেবে দেখেছি মাহরুর ভাই। হটাৎ এই পরিবর্তন এলো কি করে?”
চন্দ্রের মুখে বড়বড় কথা শুনে ভ্রূ উচুতে উঠেছে।নাহ সেই ভুল ছিল।এটা ছোট চন্দ্র না।উত্তরে বলে,
“আমি বলিনি এই পরিবর্তন আনতে।”
“আমি এনেছি।এখানে তোমার কোনো দোষ নেই।আমি মায়ের কাছে শুনেছি মেয়েদের নাকি অল্প বয়সে প্রখর বুঝ শক্তি চলে আসে।আমাকে অবুঝ ভাববে না।”
শক্ত মুখে মাহরুর প্রশ্ন করলো, “তো এখন কি চাস তুই?”
“আমি কিছুই চাইনা মাহরুর ভাই।তুমি মাঝেমধ্যে আমার সাথে কথা বলো।দেখা করো।শুধু অন্য কাউকে বিয়ে করো না।আমি জানি তোমার বিয়ের বয়স হচ্ছে।”
“বিয়ে করবো না?সারাজীবন চিরকুমার থাকবো তোর জন্য?”
ঠোঁট কামড়ে নেয় মল্লিকা। পূর্বপ্রস্তুতি নিতে লাগলো। নড়েচড়ে তত্পর করলো নিজেকে।অধিক ধীমা আওয়াজে বললো,
“আমাকে বিয়ে করবে?”
কতকালীয়ভাবে মিলে গেলো মাহরুরের চিন্তার সাথে।মনে মনে একবার ভেবেছিল হয়তো এমন কোনো প্রশ্ন আসবে।যে মেয়ে সাহস করে ভালোবাসা ভালো লাগার প্রকাশ করতে পারে?সে বিয়ের কথাও বলতে পারে।
“এক না একদিন বিয়ে করতেই হবে আমাকে।সেটা কাকে করবো সময় বলে দেবে।কিন্তু! তুই বললি না আমাকে দুই তিন বছর অপেক্ষা করতে?যা করলাম অপেক্ষা।ঢাকা যাবো কিছুদিন পর।কবে ফিরবো জানা নেই।হয়তো বছরে ঈদের ছুটিতে আসবো।এসে যদি দেখেছি তুই বদলে গেছিস।নিজের কথা রাখতে পারিস নি।শাস্তি ভয়াবহ হবে।”
চলবে…