#চন্দ্রবতী আসছে
৩য় পর্ব
তাহলে অরন্য দোষী ছিল না।আমি শুধু শুধু অরন্যকে এতগুলো কথা শুনিয়ে আঘাত করলাম।সুখীর কথাগুলো শুনে বুকের ভিতর একটা চাপা কষ্ট হতে লাগল।মনে হতে লাগল এ আমি কি করলাম?আমার অরন্যকে আমি এত ভুল কি করে বুঝলাম।কিন্তু সুখীর রুমে কে আসে প্রতিদিন ?কারন সুখী বলেছে
-মামানি আমার রুমে কে আসে জানি না।প্রতিদিন রাতে আমার রুমে এসে আমাকে খুব কষ্ট দেয়।আমার সব জামাকাপড় খুলে ফেলে।আমার শরীরে অনেক আঁচড় কাটে।শরীরে খুব ব্যাথা হয় আমার।মামনি চেঁচাতে চাইলে চেঁচাতে দেয় না।আমার শরীরটাকে অনেক কষ্ট দেয়।আমি তাকে দেখতে পারি না মামনি, তবে স্পর্শ করতে পারি শুধু।মনে হয় একটা লোম জাতীয় কোন প্রাণী আমাকে আঘাত করছে।আমাকে প্রতিদিন বলতে নিষেধ করে এগুলা কাউকে বলতে।আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।মামনি আমার অনেক কষ্ট হয়।
সুখী কথাগুলো বলে জোরে জোরে,ফুঁপাতে ফুঁপাতে কাঁদতে লাগল।সুখীর কান্না দেখে যেন আমার বুকটা আরও ফেটে গেল।আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম কে এমন করে সুখীর সাথে নাকি কোন মানুষ নাকি অন্যকিছু।এসব ভাবনা যেন মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে।তবুও নিজেকে বেশ সামলিয়ে সুখীকে বললাম
-মামনি তুমি চিন্তা কর না।আজকে থেকে আমি তোমার সাথে থাকব।তোমাকে আর কষ্ট পেতে দিব না।তুমি এখন খাবার খাও মা।আর কোন কষ্ট হলে আমাকে বলবা।কোন সমস্যা হলেই মামনির কাছে দৌঁড়ে চলে আসবা।আসো মা নাস্তা টা খাও আগে।
সুখী আমার কথাটা শুনে মনে হল একটু স্বস্তি পেয়েছে।আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকল কতক্ষণ। হুট করে সুখী গড়গড় করে বমি করতে লাগল।খেয়াল করলাম সুখীর অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে লাগল।বমির উপর বমি করতে করতে সুখী নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।সুখীকে একা একা সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।কি করব বুঝতে পারছিলাম না।অরন্যকে ফোন দিব কিনা বুঝতে পারছি না।এখন অরন্যকে ফোন দিলে হয়ত হিতে বিপরীত হতে পারে।
তাই সাত পাঁচ ভেবে কোন উপায় না পেয়ে সুখীকে নিয়ে ডাক্তার সায়মার কাছে গেলাম।সুখীকে ডাক্তার সায়মা চেক আপ করে যা বলল আমি পুরোপুরি হতাশ হয়ে গেলাম।কেন এমন হচ্ছে কোন উত্তর যেন আমি পাচ্ছিলাম না।কারন ডাক্তার সায়মা বলল
-আমি সুখীর একটা আল্ট্রা করেছি।আর আল্ট্রাতে যা দেখলাম সেটা আমার ডাক্তারি জীবনে কখনও পায় নি।সুখীর পেটে ২ মাসের বাচ্চা।আর আশ্চর্য জনক হলেও এটা সত্যি যে সুখীর পেটের বাচ্চার এখনেই চুল, নাক,মুখ সব হয়ে গিয়েছে।আমি আমার মেডিকেল জীবনের ২০ টা বছর এমন কোন ঘটনা পায় নি।আমি জানি না এটার রহস্য কি?ডাক্তার হলেও এটা বলতে হচ্ছে আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে এটার সাথে অলৌকিক কোন কিছু যুক্ত আছে।
ডাক্তার সায়মার কথা গুলো আমি যত শুনছিলাম ততই বিস্মিত হচ্ছিলাম।কারন যে জায়গায় একটা ২ মাসের বাচ্চার শুধু হার্টবিট থাকার কথা সে জায়গায় সুখীর বাচ্চার হাত, পা সব হয়ে গিয়েছে।কথাটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।তাই ডাক্তার সায়মাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম
-আপনার কি কোথাও ভুল হচ্ছে না তো।হয়ত অন্য কারও রিপোর্ট এর সাথে বদলে গিয়েছে।
উনি আমাকে জোর দিয়ে বললেন
-আল্ট্রাটা আমি নিজে করেছি।এরকম দেখার পর বারবার করেছি।প্রতিবারেই রেজাল্ট একি রকম এসেছে।আমি ও বুঝতে পারছি না এমন কেন হচ্ছে।আমি আমার সিনিয়র কয়েকজন ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি সবাই বিষয়টা নিয়ে হতাশ। কেউ এই জানে না এটার মানে কি?অনেকে এ বিষয় নিয়ে গণ মাধ্যমকে জানাতে চেয়েছিল।কিন্তু সুখী যেহুত অবিবাহিত তাই আমি সুখীর ব্যাপার নিয়ে বাড়াবাড়ি করার অনুমতি দেই নি।
আমি ডাক্তার সায়মার কথাগুলো শুনে আরও হতাশ হতে লাগলাম।ওনাকে বললাম
-এখন আমার কি করা উচিত আমি বুঝতেছি না।আপনার কোন পথ জানা থাকলে বলুন।
ওনিও বেশ চিন্তা করে আমাকে উত্তর দিল
-আমার পরিচিত একজন প্রফেসর আছে যিনি দীর্ঘ বছর ধরে এসব অলৌকিক বিষয় নিয়া গবেষণা করছে।আপনি দয়াকরে একটু ওনার সাথে কথা বলুন।ওনি হয়ত কোন পথ দেখাতে পারবেন।আর আমি তো আছিই।
ডাক্তার সায়মার কথা গুলো শুনে মনে একটু ভরসা পেলাম।ওনার কাছ থেকে ঠিকানাটা নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।বাসায় এসে সুখীকে কিছু খেতে দিলাম।সুখী খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।কিছুক্ষণ পরেই অরন্য আসল।অরন্যকে কি বলে সরি বলব বুঝতে পারছিলাম না।অরন্য আমার সাথে কোনরূপ কথা না বলে রুমে চলে নিতে নিল ঠিক ঐসময় অরন্যের হাতটা ধরে অরন্যকে বেশ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।অরন্য আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে বলল
-কাঁদতেছ কেন এভাবে কি হয়েছে তোমার?
আমি কাঁদতে কাঁদতে অরন্যকে সবটা ঘটনা খুলে বললাম।অরন্য আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
-তোমার ভুলটা যে ভেঙ্গেছে এতেই আমি অনেক খুশি।আর এত হতাশ হওয়ার কিছু হয় নি অধরা।সব কিছুরেই সৃষ্টি থাকে, ধ্বংস থাকে আর উপায় ও থাকে।
অরন্যের কথাটা শোনে আমি বেশ স্বস্তি পেলাম।মনটা বেশ উৎফুল্ল হল।আমি খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে সুখীর রুমে গেলাম ঘুমাতে।সুখীকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলাম।হঠাৎ করে একটা আওয়াজ পেলাম কানে।আর আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।বুঝতে পারলাম কেউ একজন রুমে প্রবেশ করেছে।কিন্তু তার উপস্থিতি টের পেলেও চোখে দেখতে পারছিলাম না। সুখীর শরীরের উপর লোমের মত কিছু একটা স্পর্শ অণুভব করতে লাগলাম।সুখী সাথে সাথে ছটফট করতে লাগল।আমি সুখীকে সাহস করে আরও জোরে জড়িয়ে ধরলাম।এবার মনে হল ঐ লোম জাতীয় কিছু একটা আমার উপস্থিতি টের পেয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিল।
সুখীকে জোরে ঝাপটে ধরেই সারা রাত পার করলাম।পরদিন সকালে ডাক্তার সায়মার দেওয়া ঠিকানায় প্রফেসর বিশ্বাসের বাড়িতে গেলাম সুখীকে নিয়ে।বাড়িতে ঢুকতেই খেয়াল করলাম মধ্যবয়স্ক কালো রোগা পাতলা একজন লোক চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে।আমাকে দেখে বলল
-আমি যদি ভুল না করি তাহলে আপনি মিসেস অধরা আর পাশের মেয়েটি সুখী।
ওনার কথাটা শুনে বেশ অবাক হলাম।কারন ওনার সাথে আমার পরিচয় ছিল না কখনও।তাই হ্যা বোধক মাথা নেড়ে বললাম ওনার কথা গুলো সঠিক।এবার ওনি জবাব দিয়ে বলল
-ডাক্তার সায়মা আমাকে আপনার কথা গুলো বলেছে।এখানে একটু বসুন আমি আসছি।
আমি সুখীকে নিয়ে বসলাম।আর ওনি কোথাও যেন গেল।কিছুক্ষণ পর আবার আসল।এবার আমাকে বলল
-আমি আপনাকে এ ব্যাপারটা নিয়ে আরও একমাস পর কথা বলব।একমাস পর এ ঘটনাটা পাল্টে যাবে।আপনি ঠিক আমার সাথে এক মাস পর দেখা করবেন।
আমি ওনার কথায় বেশ বিরক্ত হলাম।মনে মনে রাগ ও হল।কারন ওনি কিছু না শুনেই আমাকে একমাস পর আসতে বলল।মেজাজটা খুব চড়ে গেল।তবুও নিজেকে বেশ সামলিয়ে বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে।
এই বলে ঐখান থেকে প্রস্থান নিলাম।বাসায় এসে ও যেন স্বস্তি পাচ্ছিলাম না।চিন্তার উপর চিন্তা আমাকে গ্রাস করতে লাগল।আস্তে আস্তে দিন কাটতে লাগল আর আমি প্রতিবারেই ঐ মোমের পুতুলটা স্বপ্ন দেখতে লাগলাম।এভাবে একমাস কাটল।
হুটকরে এক সকালে খেয়াল করলাম আমার পেটটা বেশ ফুলে গিয়েছে।আর সুখীও বাড়িতে নেই।আমি সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে সুখীকে খুঁজলাম।কিন্তু সুখীকে কোথাও পেলাম না।আমার পেটের এ অবস্থা দেখে তারাহুরা করে ডাক্তার সায়মার নিকট গেলাম।ওনি আমাকে চেক আপ করে ওনি নিজেও বেশ বিস্মিত হল।আর বিস্মিত হয়ে আমাকে যা বলল আমিও বিস্মিত না হয়ে পারলাম না।কারন ওনি বলল
-মিসেস অধরা আপনি তিন মাসের গর্ভবতী।আর অলৌকিকভাবে এটাই সত্যি যে সুখীর পেটে যে বাচ্চাটা ছিল সে বাচ্চাটা এখন আপনার পেটে।
-কি বলছেন মেডাম।আমি হুট করে কিভাবে প্র্যাগনেন্ট হলাম।এটা কি করে সম্ভব।
ডাক্তার সায়মা আমাকে হতাশ হয়ে জবাব দিল
-এর কারন আমার জানা নেই।তবে সুখী কোথায়, তাকে দেখছি না যে।
আমি হতাশ কন্ঠে উত্তর দিলাম
-সুখীকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
এবার ডাক্তার সায়মা নড়ে চড়ে বসে আমাকে বলল
-আমার এবার সত্যিই মনে হচ্ছে এটার সাথে বাইরের কোন জগতের মিল রয়েছে।আপনি আবার প্রফেসর বিশ্বাসের কাছে যান।
ডাক্তার সায়মা প্রফেসর বিশ্বাসের কথা বলতেই আমার মনে পড়ে গেল প্রফেসর বিশ্বাস বলেছিল একমাস পর কাহিনী পাল্টে যেতেও পারে।তার মানে ওনি আগে থেকেই সব জানতেন এমন হবে।
আমি কিছু উপায় না পেয়ে বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে বিমূর্ত হয়ে বসে রইলাম।অরন্য আসল অরন্যকে ঘটনা সব খুলে বললাম।অরন্য আমাকে বেশ আশ্বাস দিল।এবার একটু ভরসা পেলাম মনে হচ্ছে।
পরদিন অরন্যকে নিয়েই প্রফেসর বিশ্বাসের বাড়ি গেলাম।খেয়াল করলাম আগের মতই ওনি চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে।আমাদের দেখে বলল
-আরে মিসেস অধরা যে…..একটু বসেন আমি আসছি।
এ বলে উনি পাশের রুমে গেল।কিছুক্ষণ পর এসে আমাকে বেশ ভালো করে দেখল।এরপর আমাকে যা বলল আমি আর অরন্য রিতীমত ভয় পেয়ে গেলাম।অবাক হয়ে গেলাম।মনে হচ্ছে কোন রূপকথার গল্প শুনছি।কারন প্রফেসর বিশ্বাস বলল…..
লেখিকা -শারমিন আঁচল নিপা
(বানান ভুল গুলা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)