#চন্দ্রকুঠি
পর্ব (৯)
#নুশরাত জাহান মিষ্টি
রাতের খাওয়া-দাওয়া করে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো। খাওয়ার টেবিলে রসিদ(রাফির দাদু) মুনের দিকে বেশ কয়েকবার তাকালেন। যদিও সবাই কম বেশি তাকিয়ে ছিলো। খাওয়া শেষে রাফির বাবা রাফির রুমে গেলেন। রাফি বাবাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, ” কিছু বলবে বাবা?”
” হুম। তোমার বন্ধুরা যা বললো তা কি সত্যি?”
” কি বললো?”
” নিজেদের সম্পর্কে যা বললো। এই যে মুনতাহার সার্জারীর ব্যপারটা।”
রাফি বুঝতে পারলো না তার বাবার কথা। তবুও সে বললো, ” নিজেদের ব্যপারে যখন বলেছে তখন তো সত্যিই হবে। শুধু শুধু মিথ্যে কেন বলবে?”
” হুম তাও ঠিক। বলছিলাম মুনের থেকে হাসপাতালের নামটি জেনে আমাকে একটু জানাও তো।”
এরমাঝে পিছন থেকে মুন বলে উঠলো, “… (হাসপাতালের নাম) এই হাসপাতাল কাকা।”
রাফি এবং তার বাবা পিছনে ঘুরে তাকালো। দেখতে পেলো মুন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাফির বাবা বললেন, ” ডাক্তারের নাম?”
” ডাক্তার রফিকুল ইসলাম।”
” ওহ আচ্ছা। তুমি বোধহয় রাফির সাথে কথা বলতে এসেছো, তোমরা কথা বলো আমি চলে যাচ্ছি।”
রাফির বাবা চলে গেলেন। রাফির বাবা চলে যেতেই রাফি বললো, ” হাসপাতাল, সার্জারী এসবের মানে কি? তোমরা কি বলেছো বাড়িতে?”
” তেমন কিছু নয়। আমার মনে হয়না কাকা এ ব্যপারে আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন। তাই বলছিলাম তুমিও এসব নিয়ে আর ভেবো না।”
” আচ্ছা। তুমি কি আমাকে কিছু বলতে এসেছো?”
” হ্যাঁ।”
” আচ্ছা বলো।”
” তোমার সত্যি মনে হয় আপু এমন করতে পারে?”
” ভিডিওটা তুমিও দেখেছো। এবার তুমিই ভাবো?”
” কি ভাববো? ভাববে তো তুমি। তোমার সাথে আপুর সম্পর্কটা কেমন ছিলো সেটা তো তুমি জানো। তোমার সাথে রিলেশন চলা-কালীন তোমার কখনো মনে হয়েছে আপু তোমার সাথে খুশি নয়।”
” না কখনো মনে হয়নি।”
” তাহলে একটা ভিডিওর জন্য সবকিছু মিথ্যে কেন ভাবছো তুমি?”
” কিন্তু ভিডিওটা….”
” চোখের দেখা কি সবসময় সত্যি হয় বলো?”
” তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো?”
” আমার মনে হয় আপু বিপদে আছে। আমাদের আপুকে খুঁজে বের করা উচিত।”
” কিন্তু আমরা কিভাবে খুজবো?”
” আমা…..”
মুন কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো। ভালোভাবে রাফির ঘরটি আরো একবার দেখলো। ঘরটি বেশ বড়। মুন ঘরটি দেখতে দেখতে হঠাৎ করে ঘরের সুইচ বাটনে টিপ দিলো। সাথে সাথে ঘরটি অন্ধকার হয়ে গেলো। অন্ধকারের মধ্যে মুন বিছানা খুঁজে সেখানে বসে পড়লো। রাফি মুনের কর্মকান্ড নির্ভীকভাবে দেখছিলো। রাফি গিয়ে ঘরের সুইচ অন করলো তারপর বললো, ” কি করছো তুমি এসব? কিছু একটা বলতে চাইছিলে তা না বলে এসব কি করছিলে?”
মুন শান্তভাবে বললো, ” রাফি ভাইয়া তোমাকে একটা কথা বলতে চাই?”
” হ্যাঁ বলো।”
” তোমার ঘরটি খুব সুন্দর, আমার খুব পছন্দ হয়েছে।”
রাফি মুনের কথায় বেশ অবাক হলো। এসব কি বলছে মুন! রাফি অবাক হয়েই বললো, ” মানে? এসব কি করছো, কি বলছো? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
” তোমাকেও আমার খুব ভালো লাগে।”
” মানে?”
” আপুকে তুমি কতটা ভালোবাসো রাফি ভাইয়া?”
” সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় মুন। তুমি জানো না মাধুরি আমার কতটা জুড়ে আছে!”
” যে তোমাকে ঠকালো তাকে কি তুমি এখনো ভালোবাসবে?”
” তুমি ঠিক কি বোঝাতে চাইছো মুন? আমি সত্যি তোমার কাজকর্ম কিছু বুঝতে পারছি না?”
” বড় বোনের প্রেমিককে ভালোলাগা খুব বেশি অপরাধের কি?”
কথাটি বলে মুন রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলো। রাফি কিছু না বুঝতে পেরে হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে।(লেখিকাও জানে না এখানে কি হলো?)
____________
রাফির দাদু ডাক্তার রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলো মুন সত্যি বলেছে। সত্যি ওর মুখে সার্জারী হয়েছিলো। যদিও ডাক্তার রফিকুল প্রথমে বলতে চাইনি। তবে জোরাজুরিতে বলতে বাধ্য হয়েছে। রসিদ সাহেবের মনে এখন আর দ্বিধা নেই। ডাক্তারের কথা সাথে আরো একটি কথা মনে করে রসিদ সাহেব দুই দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলেছেন।
অন্যদিকে রিয়াদ উঠানে পাইচারী করছিলো। এতরাতে রিয়াদকে এভাবে পাইচারী করতে দেখে রাতুল(রাফির ভাই) এগিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলো,” এতরাতে না ঘুমিয়ে কি এখানে কি করছেন?”
রিয়াদ রাতুলের দিকে তাকিয়ে মুখে কিছুটা দুঃখ রেখা ফুটিয়ে তুলে বললো, ” আসলে ঘুম আসছিলো না।”
” তা মুখে এত দুঃখ কেন?”
” না ভাই তেমন কিছু নয়।”
” আরে বলুন না।”
” বলাটা ঠিক হবে না।”
” সমস্যা নেই বলুন।”
” আচ্ছা আমরা কোথাও বসি আগে?”
” আচ্ছা চলুন। ঐদিকটায় পুকুরপাড় আছে, সেখানেই বসি চলুন।”
” আচ্ছা।”
দুজনে গিয়ে পুকুরপাড়ে বসলো৷ রাতুল বললো, ” এবার বলুন দুঃখী মুখ কেন?”
” আপনি বুঝবেন না ভাই। আপনি বিবাহিত মানুষ। বউ নিয়ে সুখেই আছেন। আমাদের দুঃখ কি বুঝবেন?”
” আরে কি হয়েছে সেটা বলুন তো?”
রিয়াদ একবার মনেমনে ভাবলো টোপটা কি দিবে নাকি একটু সময় নিবে। ভাবনা বাদ দিয়ে রিয়াদ টোপটা দিয়েই ফেললো।
” আসলে কাল মঞ্চনাট্য দেখতে গেছিলাম। চন্দ্রকুঠির এত এত সুন্দর রমনী দেখলাম যে আজ রাতের ঘুম উবে গেছে। একজন রমনীকে যদি একটু সময়ের জন্য কাছে পেতাম।”
কথাটি বলে চোখ বুঝলো রিয়াদ। উল্টোদিক থেকে কি রিয়েকশন আসবে সেটা বুঝতে পারলো না। রিয়াদের ধারনা ঠিক প্রমাণ করে রাতুল বললো, ” বেড পার্টনার হিসাবে চাইছো নাকি লাইফ পার্টনার?”
রিয়াদ চোখ খুলে ফেললো। মনেমনে খুব খুশি হলো, হয়তো তাদের ধারনা ঠিক। চন্দ্রকুঠির রহস্য তারা বুঝে গেছে, এবার শুধু ভিতরে ডোকার পালা। রিয়াদ বললো, ” না রে ভাই। লাইফ পার্টনার নামক ঝামেলাটা এত তাড়াতাড়ি নিতে চাইছি না। তাছাড়া ওসব রমনীদের বেডেই মানায় জীবনে নয়। কিন্তু বেডে তো পাইনা?”
” বেড অব্দি পেতে হলে তো কিছু ছাড়তে হবে ভাই।”
” মানে?”
” বলবো তবে একটা শর্ত আছে।”
” কি?”
” এখন আমি তোমাকে যা বলবো তা জীবনে কখনো কাউকে বলতে পারবে না।”
” আচ্ছা বলবো না।”
” তাহলে শোন চন্দ্রকুঠির ভিতরে রমনীদের বেড অব্দি তোমাকে আমি পৌঁছে দিতে পারি তার জন্য তোমাকে আগে পকেট ফাঁকা করতে হবে।”
” মানে টাকা দিতে হবে?”
” হ্যাঁ তা টাকা দেওয়ার মুরোদ আছে তোমার।”
” কত চাই?”
” এক ঘন্টা পাঁচ, দুই ঘন্টা দশ। আর সারারাত হলে পঞ্চাশ হাজার।”
” কালকের সারারাতের ব্যবস্থা করতে পারবে। চিন্তা নেই টাকা সকালে পেয়ে যাবে।”
” টাকা হলে ব্যবস্থাও হবে।”
” তারমানে বাইরে মঞ্চনাট্য ভিতরে এসব চলে চন্দ্রকুঠির।”
” হ্যাঁ।”
” আমি তো শুনেছিলাম ওটা জমিদার বাড়ি ছিলো। তোমার দাদু রসিদ তালুকদার ওখানে গরিব অসহয় মানুষদের থাকতে দেন। তারা মঞ্চনাট্য করে নিজেদের খাদ্য, বস্ত্রের যোগান দেন।”
” এটা তো সবাই জানে। কিন্তু ভিতরের কথা যারা জানে তারা সৌভাগ্য নিয়ে জন্ম নেয়। এই যে দেখছো এত সুন্দর গ্রাম, গ্রামের প্রবেশদ্বার এত সুন্দর, এগুলো কি এমনি এমনি নাকি?”
” এগুলো কিসের জন্য।”
” সবি উপরে ফিটফাট নিচে সদরঘাট এর মতো। বুঝলে না তো?”
” কিছুটা বুঝেছি।”
রিয়াদ ভাবনায় পড়ে গেলো। রিয়াদকে ভাবনায় পড়তে দেখে রাতুল বললো, ” কি ভাবছো? তোমাকে এত সহজে এতকিছু কেন বললাম?”
” হ্যাঁ। আমি তো এখন সবকিছু সবাইকে জানাতেই পারি। যদি জানিয়ে দি তো?”
” কিচ্ছু করতে পারবে না। কেন পারবে না সেটা অজানা থাক? আর শোন ভিতরের এই ব্যবসাকে চালাতে হলে কাস্টমার দরকার। তাই লোকদের তো জানাতেই হতো এই ব্যবসার কথা। যদি মুখ খুললেই ধরা পড়ে যেতো তাহলে গত আঠারো বছর ধরে এই ব্যবসা চলতো না।”
” কি বলছো আঠারো বছর ধরে এসব চলছে?”
রিয়াদ অবাক হয়ে বললো। রিয়াদকে অবাক হতে দেখে রাতুল হাসলো তারপর বললো, ” রাতটা চন্দ্রকুঠির ভিতরে থাকতে চাইলে সকালে টাকাটা রেডি রেখো।”
কথাটি বলে রাতুল উঠতে লাগলো। রাতুল চলে যাবে বুঝতে পেরে রিয়াদ বললো, ” এসব কথা মুনকে বলো না। আসলে আমি ওর খুব ভালো বন্ধু, পাশাপাশি ভালো মানুষও।”
রাতুল যেতে যেতে বললো, ” আমরা অকারনে কারো কথা ফাঁস করিনা। আর হ্যাঁ লোকেরা আমাদের কথা কেন গোপন রাখে সেটা তুমি কালকের রাতের পরই বুঝতে পারবে। খুব ভালো করে বুঝতে পারবে। এখন ফাঁস করার চিন্তা মাথায় এলেও পরে এসব চিন্তা থাকবে না।” ( বেড, টেড নিয়ে বেশ বাজে কথা বা ইঙ্গিত করা হয়েছে তার জন্য দুঃখিত। সবাই ক্ষমা করবেন)
রাতুল চলে গেলো। রাতুলের শেষ কথাগুলো শুনে রিয়াদ বেশ অবাক হলো। রিয়াদ কিছুই বুঝলো না।
_______
রাফি রুমে বসে বসে ভাবছিলো মুন ঠিক কি বোঝাতে চাইছে! এভাবে উল্টাপাল্টা কথা বলে কেন চলে গেলো! বারবার কানে ভেসে উঠছে, ” বড় বোনের প্রেমিককে ভালোলাগা খুব বেশি অপরাধের?”
” মানে কি এটার! কি বলতে চাইলো! প্রথমে বললো মাধুরি বিপদে আছে, এরপর বললো…। ঠিক কি বলতে চাইলো।”
রাফি ফোনটা হাতে নিয়ে মাধুরির ছবি দেখতে লাগলো। মাধুরির ছবি দিকে কয়েক মূহুর্ত তাকিয়ে রইলো। রাফির ভাবনাতে আসছে না ঠিক কি হচ্ছে!
অন্যদিকে মুন রুমে বসে ভাবছে, ” কি বলতে গেলাম! আর কি বলে এলাম! আমি কি ভুল পথে হাঁটছি নাকি! আমি সব ঠিক করছি তো। এরকম অদ্ভুত ব্যবহার কেন করলাম? কিসের আশায়?”
চলবে,
#চন্দ্রকুঠি
পর্ব (১০)
#নুশরাত জাহান মিষ্টি
সকালে,,
রিয়াদ টাকা নিয়ে রাতুলের রুমে গেলো। রিয়াদকে দেখে রাতুল বসতে বললো।
রিয়াদ বললো, ” ভাই টাকা….”
রিয়াদের কথা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে রাতুল তার বউয়ের উদ্দেশ্য বললো, ” নিচে গিয়ে মাকে কাজে সাহায্য করো।”
রুপা(রাতুলের বউ) বললো, ” কিন্তু আপনি তো….”
” কথা কানে যায়নি।”
রুপা চুপচাপ চলে গেলো। রুপার চলে যাওয়ার দিকে এক পলক তাকালো রিয়াদ।
” টাকা এনেছো?”
” হ্যাঁ।”
” দেও।”
রিয়াদ রাতুলকে টাকাটা দিলো। রাতুল টাকাটা নিয়ে আলমারি থেকে একটা সবুজ কার্ড বের করে রিয়াদকে দিলো। তারপর বললো, ” খুব সাবধানে এই কার্ডটি দেখাবে। তারপর বাকি কাজ চন্দ্রকুঠির লোকেরাই করে দিবে।”
” আচ্ছা।”
” হুম।”
রিয়াদ কার্ডটি নিয়ে চলে গেলো। কার্ডটি পেয়ে গেছে এটা ভেবে মনেমনে খুব খুশি হলো। যাক অন্তত ‘চন্দ্রকুঠির’ ভিতরে কি হয় সেটা তো জানা গেলো। কিন্তু প্রশ্ন হলো চন্দ্রকুঠিতে এসব কিভাবে শুরু হলো আর তালুকদার বাড়ির লোকেরা এরসাথে যুক্তই বা কিভাবে হলো? প্রশ্ন অনেক উত্তর নেই।
অন্যদিকে মুন রাফিকে নিয়ে গ্রামটি ঘুরে দেখতে বের হলো। রাফি আর মুন পাশাপাশি হাঁটছে। দু’জনেই নিরব। নিরবতা ভেঙে রাফিই বললো,” কাল মাধুরির বিপদ নিয়ে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলে?”
মুন খুব স্বাভাবিকভাবে বললো, ” যে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনে তার সম্পর্কে কি আর বলবো?”
” মানে?”
” এই যে আপু তোমার মতো একজনকে ছেড়ে অন্যকারো সাথে পালিয়ে গিয়েছে। এটাই তো ওর জন্য বিপদ। আজ না বুঝলেও একদিন বুঝবে।”
” ওহ। এটাই বলতে চাইছিলে কাল?”
” হ্যাঁ।”
” যাই হোক এসব কথা বাদ দেও। এসব নিয়ে যত ভাববো ততই কষ্ট বাড়বে বই কমবে না।”
” হুম। তা চাকরিতে যোগ দিবে কবে?”
” এই তো দুই একদিনের মধ্যে।”
” ওহ৷ আচ্ছা আমি শুনেছি তোমার বাবাও নাকি জেলার ছিলো?”
” হুম। এখানকারই।”
” ওহ। তার চাকরিটাই তুমি পেয়েছো নাকি?”
রাফি কিছুটা চমকালো তারপর বললো, ” মানে? এরকম হয় নাকি।”
” হয় না বলছো। তাহলে এত ছোট বয়সেই তুমি এক ধাপে জেলার হয়ে গেলে?”
” না৷ তেমন নয়। এটা পেতে অবশ্যই আমাকে পরিশ্রম করতে হয়েছে, যোগ্যতার প্রমান দিতে হয়েছে। তারপর না পেলাম।”
” হুম বুঝলাম।”
হঠাৎ করে এমন সময় কোথা থেকে জেনো রিয়াদ এসে পড়লো।
” আমাকে ছাড়াই ঘুরছো তোমরা?”
রাফি রিয়াদকে দেখে বললো, ” তোমাকে ছাড়া আর ঘুরতে দিলে কোথায়?”
” তাও অবশ্য ঠিক। চলে এলাম।”
” যাই হোক তোমরা এদিকটা ঘুরে দেখো আমি পাশের দোকান থেকে কিছু নিয়ে আসছি।”
” আচ্ছা।”
রাফি চলে গেলো। রিয়াদ মুনের উদ্দেশ্য বললো, ” আমরা এখানে কেন এসেছি সেটা বোধহয় তুমি ভুলে গিয়েছো?”
” তুমি?” ভ্রু কুচকে
পরক্ষনেই বললো, ” দেখুন আমি সেসব ভুলি নি। তবে ভুলতে চাই।”
” মানে?”
” আমার মনে হচ্ছে আমরা মরিচিকার পিছনে ছুটে চলেছি। আমি আর এসবের পিছনে ছুটতে চাইছি না।”
” কি? তোমার ঠিক কি হয়েছে? এভাবে কথা বলছো কেন?”
” কিভাবে কথা বলছি?”
” তুমি বুঝতে পারছো না তুমি কি বলছো? কালকেও তো সব ঠিকই ছিলো তাহলে হঠাৎ সুর বদলাচ্ছো কেন?”
” দেখুন কালকে ভিডিও দেখে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন আপু নিজ ইচ্ছায় কারো সাথে চলে গেছে। তাই আমি আর আপুকে নিয়ে ভাবতে চাচ্ছি না।”
” তো কি নিয়ে ভাবতে চাচ্ছো?”
” রাফিকে নিয়ে।”
” কি?”
রিয়াদ বেশ চমকালো। রিয়াদ এটাই বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে মুনের হলো কি! ওদের প্লান অনুযায়ী ওরা তালুকদার বাড়ি ডুকলো তারপর হঠাৎ কি হলো যে মুন এরকম করছে!
” রাফিকে নিয়ে মানে?”
” আমার রাফিকে খুব ভালো লাগে। আমি রাফির জীবনে আপু শূন্যতা পূরণ করতে চাই।”
” মানে? রাফি ভাইয়া থেকে সোজা রাফি, তারপর এসব কি বলছো?”
” যা শুনছেন তাই বলছি। রাফিকে আমার চাই।”
” রাফিকে চাইলেই বুঝি রাফি তোমাকে চাইবে?”
” জানি চাইবে না। কারন রাফি আপুকে ভালোবাসে কিন্তু সমস্যা কি আমি অপেক্ষা করবো। রাফির আপুকে ভুলে যাওয়ার অপেক্ষা।”
” আমার মনে হচ্ছে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।”
রিয়াদ বেশ রেগে কথাটি বললো। মুন রিয়াদের রাগকে পাত্তা না দিয়ে বললো, ” বেশ তো। তুমি বলতে অনুমতি নেন না, আপনি বলতেও না।”
রিয়াদ রেগে কিছু বলতে যাবে তখনি রাফি চলে এলো। রাফি এসে বললো, ” কি হলো তোমাদের মুখগুলো এরকম করে আছো কেন?”
” না কিছু না। আমি বাসায় যাচ্ছি তোমরা থাকো।”
কথাটি বলে রিয়াদ বাসার দিকে হাঁটা শুরু করলো। পিছু পিছু মুন ও রাফিও আসছিলো। রাফি রিয়াদের ব্যপারটা বুঝতে পারলো না। ঐদিকে রিয়াদ মুনের ব্যপার বুঝতে পারছে না। এক রাতের মাঝে এতটা বদল কিভাবে সম্ভব! কি হচ্ছে এসব!
_________
সন্ধ্যার দিকে রিয়াদ ‘চন্দ্রকুঠির’ উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিলো। এমন সময় লক্ষ্য করলো মুন এবং রাফি পুকুরপাড়ে বসে গল্প করছে। মুন বারবার কথার তালে তালে রাফির হাত ধরছিলো। রাফি কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করছিলো। তবুও মুনকে কিছু বললো না। রিয়াদ মুনের এই অস্বাভাবিক আচরণ দেখে মুচকি হাঁসি দিয়ে ওখান থেকে চলে এলো।
চন্দ্রকুঠির ভিতরে ডুকলো রিয়াদ। রিয়াদের হাতে সবুজ কার্ড দেখে একটি লোক এসে ওকে দর্শক সারি থেকে আলাদা একটি সারিতে বসালো। সেদিনের সেই যায়গাটিতেই বসানো হয়েছে। তবে আজকে সাজসজ্জা ভিন্ন। আজকে যায়গাটি দর্শকদের থেকে আড়াল করার জন্য পর্দার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্দার এপাশে মানুষ বসে আছে এটা কেউ বুঝতে পারবে না। রিয়াদ বসা অবস্থায় আশপাশ ভালোভাবে তাকালো। তার পাশে দুই তিনজন বসা। কিছুক্ষনের মাঝে দুই তিনজন থেকে সেটা দশ বারোজন হয়ে গেলো।
কিছুক্ষন বাদে একজন এসে খুব সাবধানে বললো তাদের কি করতে হবে। একজন চলে যাওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিট পড় অন্যজন চলে যাবে।
রিয়াদের আগে দুজন সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। এরপর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে রিয়াদ উপরে উঠলো। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই দুজন ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। একজন সবুজ কার্ডটি দেখাতে বললো, অন্যজন ওর বডি চেক করছিলো। সব কিছু মেটার পর একজন তার সাথে যেতে বললো। রিয়াদ লোকটির পিছু পিছু গেলো। লোকটি একটি রুমে নিয়ে গেলো তাকে। রুমে ডুকে রিয়াদ দেখলো সেখানে বেশ কিছু মেয়ে বসা। মেয়েদের মাঝে যিনি প্রধান তিনি বললেন, ” দেখ কাকে পছন্দ?”
রিয়াদ মেয়েগুলোকে ভালোভাবে দেখলো। এদের মাঝে রিয়াদ যাকে খুঁজছে সে নেই। এদের দেখেই বোঝা যায় এরা এই কাজে বেশ চালু। এদের মাঝে কোন দ্বিধাবোধ নেই। অর্থাৎ এরা এখানে বেশ পুরনো মানুষ। নতুন হলে নিশ্চয়ই কিছুটা সংকোচ চোখে ফুটে উঠতো। রিয়াদ একটু ভয়ে ভয়ে বললো, ” ২১-২২ বছরের মধ্যে পাওয়া যাবে না?”
এখানে সবার বয়স আনুমানিক ত্রিশ থেকে বত্রিশের মধ্যে। সেই অনুমানে মাধুরির বয়স আন্দাজ করে কথাটি বললো রিয়াদ। মহিলাটি একটু ভেবে বললো, ” পকেটে মাল-কড়ি আছে?”
” আছে অল্প কিছু। কিন্তু আমি তো টাকা দিয়েই এখানে আসলাম?”
” সেটাতো বেড অব্দি মেয়ে নেওয়ার জন্য৷ এবার তো দিবি ডিমান্ড অনুযায়ী মেয়ে পাওয়ার জন্য।”
” কত দিতে হবে?”
” দে দশ।”
” আচ্ছা দেখছি আছে কিনা।”
রিয়াদ পকেট থেকে দশ হাজার টাকা বের করে দিলো। আগেই ভেবেছিলো এখানে আসলে আরো টাকার প্রয়োজন হতে পারে। তাই টাকা নিয়েই আসছিলো।
” ওকে মেয়েটার রুমে দিয়ে আয়।”
মহিলাটি একজনকে নির্দেশ দিলো। তারপর রিয়াদকে তার সাথে যেতে বললো। রিয়াদ তার পিছু পিছু যাচ্ছিলো আর মনেমনে বলছিলো, ” আমার ভাবনা মতো হবে তো সবকিছু। এরা আদো মাধুরির কাছে নিয়ে যাচ্ছে তো? যদি অন্যকারো কাছে নিয়ে যায় তো? তাহলে কি হবে?”
কিছুটা ভয় নিয়েই রিয়াদ এগিয়ে যাচ্ছিলো। রিয়াদকে একটি রুমের সামনে এনে লোকটি দাঁড়িয়ে গেলো। বললো,”ভিতরে যান। যদি কোনভাবে বাঁধা দেয় তবে আমাদের ডাকবেন নয়তো থাপ্পড় মেরে বসিয়ে দিবেন। একদম ঠিক হয়ে যাবে।”
কথাটি বলে রিয়াদের ভিতরে যাওয়ার অপেক্ষা করলো লোকটি। রিয়াদ ভিতরে না গেলে এ যাবে না বুঝতে পেরে রিয়াদ ভিতরে গেলো। রিয়াদ ভিতরে গিয়ে দরজাটি বন্ধ করে বিছানার দিকে তাকালো। একটি মেয়ে বেশ জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। মেয়েটির মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলো না রিয়াদ। কারন মেয়েটি ঘুরে বসে ছিলো। তাই সাইড দেখা যাচ্ছিলো। সাইড দেখে রিয়াদ যতটা আন্দাজ করলে এটা মাধুরিই হতে পারে। কোনকিছু না ভেবেই রিয়াদ বললো, ” মাধুরি।”
মাধুরি ডাকটার সাথে সাথে মেয়েটি রিয়াদের দিকে তাকালো।
অন্যদিকে মুন তালুকদার বাড়িটি ভালোভাবে ঘুরে দেখছিলো। এমন সময় রুপা মুনকে ডাকলো। মুন রুপার সাথে তার রুমে গেলো। রুপা মুনকে বসতে বললো তার পাশে। মুন বসার পর রুপা বললো, ” রাফিকে ভালো লাগে তোমার?”
” হঠাৎ এ প্রশ্ন।”
” না মনে হলো আর কি?”
” ভালো লাগলে কি খুব ভুল হবে।”
” না ভুল হবে না। রাফি ভালো ছেলে। কিন্তু এই পরিবারটা কেমন জানি?”
” কেমন?”
” জানি না। অদ্ভুত।”
” কিছু মনে না করলে জানতে পারি আপনাদের বিয়ে হয়েছে ঠিক কতদিন?”
” সাত বছর।”
” এতদিনে অদ্ভুত মনে হওয়ার মতো কি ঘটেছে আপনার সাথে?”
” কিছুই না। বিয়ের দুই বছর ভালোই কাটছিলো আমাদের। তারপর ছেলে হওয়ার পর জীবনটা কেমন জানি হয়ে গেছে।”
” কেমন?”
” তোমাকে সব বলতে পারবো না। শুধু একটু বলছি রাফির পরিবার সম্পর্কে জেনেই ভালোলাগাটাকে এগিয়ো।”
” আচ্ছা।”
মুন আরো কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু তাকে বলতে না রুপা বললো, ” চলো তোমাকে বাড়ির ছাদটা দেখিয়ে নিয়ে আসি।”
” আচ্ছা।”
এরপর মুন এবং রুপা বাড়ির ছাঁদে গেলো।
________
পরেরদিন সকালে,
রিয়াদকে যে ঘরে থাকতে দেওয়া হয়েছে সেই ঘরটি ধাক্কা দিচ্ছিলো একজন লোক। বেশ কয়েকবার ধাক্কা দেওয়ার পরও কেউ দরজা খুলছে না দেখে প্রধান মহিলাকে ডেকে আনলো। মহিলাটি দরজা ভাঙার নির্দেশ দিলেন। দরজা ভাঙার নির্দেশ পেয়ে দু’জন দরজাটি ভেঙে ফেললো। ভিতরে ডুকে সবাই অবাক। ঘরের সমস্ত জিনিস ছড়ানো ছেটানো। ফুলদানি ভেঙে কয়েকশো টুকরো হয়েছে আর বিছানার উপর রিয়াদ অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। রিয়াদের মাথা রক্ত আর জানালার কাঁচ ভাঙা দেখে মহিলাটি সব বুঝে গেলো। তিনি রিয়াদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বললো এবং ঘর পরিষ্কার করতে বলে চলে গেলেন।
বেশ কিছুক্ষন পর রিয়াদের জ্ঞান ফিরলো। রিয়াদের জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে মহিলাটিকে ডাকা হলো। মহিলাটি রিয়াদকে জিজ্ঞেস করলেন,” রাতে কি হয়েছিলো?”
” জানি না। রুমে ডোকার পর মাথায় একটা আঘাত অনুভব করলাম, তারপর আর কিছু মনে নেই।”
” আচ্ছা।”
কিছুক্ষন পর রাতুল এসে রিয়াদকে তালুকদার বাড়ি নিয়ে এলো। রাতুল রিয়াদের কাছে ক্ষমা চাইলো এবং বললো আজকে রাতে ওখানে কাটাতে চাইলে কাটাতে পারে। রিয়াদ বললো পরে জানাবে।
চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন ]