চন্দ্রকিরণ পর্ব-০৭

0
589

#চন্দ্রকিরণ
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৭

রাইচ মিলের কাজকর্ম বন্ধ। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে পুড়ে যাওয়া চাউলের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। হয়তো কেউ আগের রাতে সব চাল সরিয়ে ফেলে ইচ্ছে করে আগুন লাগিয়েছে। কমোলিনি ম্যানেজারের সঙ্গে পরামর্শ করে থানায় বিষয়টা জানিয়েছে তারপর থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। কোনো ক্লু না থাকার কারণে কেসটা এগিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। মফিজ বেশ ফেঁসেছে। দফায় দফায় থানা থেকে ডাক পড়ছে। হু*মকি ধা*মকি সমানে চলছে। আরিয়ান নির্বাক ভঙ্গিতে চলাফেরা করছে। নিজের কাজগুলো ও ঠিকঠাক করে। সেখানে প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা কারো নেই। ইব্রাহিম খান সন্ধ্যায় এসে বোনের মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। অনুষ্ঠানের পর এখানে পাঠাবেন। জাহানকে নিয়ে উনি চিন্তা করছিলেন কিন্তু ফিরোজ যেতে দেয়নি। ইতিমধ্যে ফিরোজের বড় ভাই ফ্লাইটে উঠে পড়েছে। রাতের মধ্যে পৌঁছে যাবে। আরিয়ান চুপচাপ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। সারাদিনের ঝামেলায় শরীর ক্লান্ত ছিল। সাওয়ার নিয়ে কিছুটা শান্তি লাগছে।জাহান ড্রেসিং টেবিলের সামনে গুণগুণ করে গান গাইছে আর চুল চিরুনি করছিলো। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো। নির্জনতা কাটিয়ে বলে উঠলো,

> আপনার কি মন খারাপ? আমি কিছু করেছি?

আরিয়ান পাশ ফিরলো। মিষ্টি করে হেসে বলল,

> আমার মন থাকলে তো খারাপ হবে। অনুভূতিহীন হয়ে গেছি। হৃদয়ের চরণভূমি শুকিয়ে পাথরে পরিণত হয়েছে। দুদিন আগে নানুর মৃ*ত্যু হলো। অথচ কত সাবলীলভাবে দাফন করে এসেছি।। সকালের ওই মেয়েটা আমার নামে মাত্র বাবার মেয়ে অথচ ওকে দেখে অচেনার মতো ব্যবহার করলাম। সত্যি হৃদয়হীন হয়ে যাচ্ছি। ছোট থেকে শুনে আসছি আমার মা ভালো ছিল না। বাবার দ্বিতীয় পক্ষ। সৎ মা আমাকে খুব একটা পছন্দ করেন না। যদিও ফুপিমা আমাকে কখনও সেখানে যেতে দেয়নি কিন্তু আফসোস একটা থেকেই যায়। এই বাড়িতে আরোহী আরোপ ওরা ভাইবোনদুটো মাঝেমাঝেই প্রশ্ন করতো আমার মা কেন ওর বাবার সঙ্গে অনৈক্য সম্পর্কে জড়িয়েছিলো? এখানকার প্রায় লোকে জানে আমার মায়ের জন্য ফুপিমা স্বামীহারা। নিজেকে খুব ছোট মনে হতো। কিন্তু বিশ্বাস করুণ কখনও মায়ের উপরে ঘৃণা জন্মেনি। বরং আমি বাবাকে অপছন্দ করি। স্ত্রীর ভালো খারাপ সবটার দায়িত্ব স্বামীদের থাকে উনি অবহেলা করেছেন। ছোট থেকে আমি পড়াশোনাতে ভালো ছিলাম। ভেবেছিলাম ডাক্তার হবো কিন্তু ভাগ্যে লেখা নেই। সংসারের হাল সেই মাধ্যমিক থেকেই কাধে তুলে নিয়েছি। ফুপি মায়ের কথায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি। নাম মাত্র পড়াশোনা ছিল। পরীক্ষার সময় কেন্দ্রে গেছি পরীক্ষা দিতে।মাঝে মাঝে প্রাইভেট পড়তাম এই যা। যখন জ্বর আসতো খুব ইচ্ছে করতো আমার কপালে কেউ স্নেহের হাতটা রাখুক। সারারাত মা মা বলে যন্ত্রণায় ছটফট করেছি কিন্তু পাশে কাউকে পাইনি। বাবা না থেকে যদি আমার মা বেঁচে থাকতেন। এতো ঐশ্বর্য আমাদের প্রয়োজন ছিল না। মফস্বলের কতো লেবার আছে আমি নাহয় ওদের সঙ্গে কাজ করে মা ছেলে কুঁড়েঘরে বসবাস করতাম। আপনি জানেন আমি ওদের সঙ্গে মিশেছি। কতটা সুখী ওরা। সারাদিন কাজকর্ম শেষে বাবা মা স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারে। অথচ এতো বড় পৃথিবীতে নিজের বলতে আমার কেউ নেই।

আরিয়ান কথাগুলো বেশ স্বাভাবিকভাবেই বললো কিন্তু জাহান নিজেকে ঠিক রাখতে পারলোনা। ফুপিয়ে উঠলো। মানুষের কষ্টের কথা শুনলে ওর খারাপ লাগে আর যদি সে নিজের মানুষ হয় তাহলেতো কথায় নেই। আরিয়ান এক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে থেকে ডান হাত বাড়িয়ে ওকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিলো। সামান্য ছোয়াতে মেয়েটা মনে হলো আরও আহ্লাদী হয়ে উঠলো। শব্দ করে কেঁদছে। চোখের পানিতে আরিয়ানের কাঁধ ভিজে যাচ্ছে। আরিয়ান ওর মাথায় হাত রেখে বলল,

> এমন নরম মনের হলে অপরাধী নিজের দুঃখ শুনিয়ে আপনাকে অনায়াসে বোকা বানাতে পারবে। আরে মুশকিল আমি পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। ওসবে এখন কিছু আসে যায় না। কাঁদবেন না। আপনার চোখে পানি দেখলে আমি অস্থির হয়ে উঠি। আমাকে দুর্বল করতে চাইছেন কেন? আমার সঙ্গে কিসের শ*ত্রুতা শুনি?

জাহান ঝট করে মুখ তুলে চাইলো। আরিয়ান ওকে শত্রু বলেছে বিষয়টা হজম হলো না। মুখ ফুলিয়ে বলল,

> বাবা মাকে নিয়ে কেউ দুঃখ প্রকাশ করলে আমারও দুঃখ হয়। তাছাড়া আপনাকে আমি খুব পছন্দ করি। ওইযে সেবার উপজেলা নির্বাচনের সময় ঝামেলা হয়েছিল আপনি আব্বাজানকে বাঁচিয়েছিলেন মনে আছে? তখন আপনার নামে অনেক সুনাম শুনেছিলাম। তখন থেকেই আমাদের কাজের ছেলে সুবিরকে দিয়ে আপনার খোঁজখবর রাখতাম। না জেনে শুনে হঠাৎ কাউকে বিয়ে করার মতো মেয়ে এই দিলরুবা জাহান খান একদম না।

জাহান সত্যিটা বলতে পেরে বেশ শান্তি পেলো। কিন্তু আরিয়ানের চোখে মুখে কৌতূহল। এই মেয়ে একদম সুবিধার না। কেমন কৌশলে নিজের পছন্দসই মানুষকে বিয়ে করে নিলো। আরিয়ান সোজাসুজি জিঞ্জাসা করলো,

> আপনি নিজে থেকে ফুপিমার নিকট প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন? যদি আমি রাজি না হতাম?

জাহান নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। চোখ মুছে উত্তর দিলো,

> রাজি না হয়ে পারতেন না। আমি জানতাম আপনি ওই একজনের কথা ফেলতে পারবেন না। তাছাড়া আপনি তো জানেন এই পরিবারের মেয়েরা অদ্ভুত রোগে মারা যায়। বিয়ে পযর্ন্ত পৌঁছনোর সুযোগ আসে না। আব্বাজান ভয়ে ছিলেন। উনি নিষেধ করছিলেন আমি শুনিনি। প্রথমে আপাকে দিয়ে আপনার ফুপির সঙ্গে দেখা করিয়েছি তারপর আলেয়াকে দিতে আপনার সঙ্গে কথা বলিয়েছি। ডিএনএ টেস্ট ওইটা ইচ্ছা করেই বলেছি। আমি আপনাকে নিয়ে কিছু কথা শুনেছিলাম। আমি চাইছিলাম আপনি রাগে জেদে আসল সত্যিটা খোঁজ করতে শুরু করেন।

জাহান আরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু আরিয়ান বলতে দিলো না। থমথমে মুখে বলল,

> বলতে হবে না। বিষয়টা আমি জানি। যাইহোক আপনাকে কি গিফট দেওয়া যায় বলুন তো?চেয়ে নিন এসবে আমার ধারণা নেই। শাড়ি নিবেন নাকি অলঙ্কার?

আরিয়ান কথা ঘোরাতে চাইছে। জাহান বুঝতে পেরেছে তাই বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে বলল,

> শাড়ি অলংকার ওসব যথেষ্ট আছে। আপনি বরং আমাকে একটা সংসার গিফট করেন। আপনার না বউ বাচ্চা নিয়ে একটা পরিবারের অনেক স্বপ্ন?

আরিয়ান ভ্রু কুচকে ফেলল। এটা কোন ধরণের আবদার কে জানে। কপালে চুলকে উত্তর দিলো,

> ব্যারিষ্টারের ভুত মাথা থেকে নেমে গেছে? মেয়েদের এই এক সমস্যা একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেই হয়। দিন দুনিয়া ভুলে যাবে। আপনাকে এখানে রাখা উচিত হচ্ছে না। যথেষ্ট করেছেন বাকীটা আমি দেখে নিব। কবে যাচ্ছেন?

জাহান মুখ ফুলিয়ে বের হয়ে আসলো। পেটের গোপন খবর মুখ ফসকে সব বের করে দিয়েছে। লজ্জাজনক বিষয় আবেগপূর্ণ হয়ে কিভাবে জানি সব বলে দিয়ে এখন আফসোস করতে হচ্ছে। ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে আরিয়ান শব্দ করে হেসে ফেলল। এই মেয়েটা পরিস্থিতি বুঝে আচরণ করে। কখনও অবুঝের মতো আবার কখনও বড়দের মতো বুঝদার।
*************
কতগুলো বছর পর নিজের মৃ*ত স্ত্রীকে জীবন্ত দেখে আবেগপূর্ণ হয়ে গেলো লাবিব। বাল্যকালের প্রথম ভালোলাগা ভালোবাসার মানুষ। যাকে নিয়ে অনুভূতি তৈরী হওয়ার আগেই পৃথিবী ছেড়ে ওকে মুক্ত করে চলে গিয়েছিলো মেয়েটা। মেহেরের বয়স ছিল পনেরো আর ওর সবে ষোলো চলছিলো। অদ্ভুত কারণে চাচাজান মেহেরের বিয়ে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত ছিলেন। মেয়েকে বাইরে কোথাও পাঠিয়ে শান্তি পাবেন না বিধায় নিজ ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিলেন কিন্তু বিধির লিখন। বাসর ঘরে মেহের প্রবেশের কয়েক মূহুর্ত্তের মধ্যেই মৃ*ত্যুর কোলে ঢোলে পড়লো। তারপর থেকে লাবিব নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। দেশ ছেড়েছিলো সেই বছরেই। আর কখনও আসা হয়নি। আবারও মেহের রূপি মেয়েটাকে দেখে আনন্দে কেঁদে উঠলো। এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে ওকে ঝাপটে ধরতে চাইলো কিন্তু মেয়েটা আরিয়ানের পেছনে লুকিয়ে পড়লো। ড্রয়িং রুমে লাবিবকে কেন্দ্র করে এই বাড়ির প্রতিটা মানুষ উৎসুক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জাহানকে লুকাকে দেখে লাবিব অস্থির হয়ে উঠলো। খানিকটা চিৎকার করে বলল,

> মেহের আমাকে চিনতে পারছো না? আমি লাবিব। খুব সরি মেহের আমি তোমার খেয়াল রাখতে পারিনি কিন্তু বিশ্বাস করো এবার থেকে তোমার খেয়াল রাখবো। আমরা এখানে থাকবো না। আগামীকাল অষ্ট্রেলিয়া ফিরে যাবো। এখানে থাকলে তুমি আবারও আমাকে রেখে হারিয়ে যাবে।

লাবিবের কথা শুনে আরিয়ান বিরক্ত হলো। এই মাথা মোটা লোকটাকে দেখলে এমনিতেই ওর মেজাজ ঠিকঠাক থাকে না। কাজের জন্য বহুবার অষ্ট্রেলিয়া যাওয়া আসার সুবাদে এই লোকটাকে ওর ভালো করে চেনা আছে। বারে গিয়ে ওয়া*ইন খেয়ে মাত*লামি করে। কতবার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ঠিক নেই। দুবার জেলে গিয়েছে মাতাল হয়ে মারা*মারি করার জন্য। তবুও শিক্ষা হয়নি। আরিয়ানের কোমর জড়িয়ে রেখেছে জাহান। মেয়েটা ভয় পাচ্ছে। আরিয়ান নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,

> ভাইজান ও মেহের না। ওর নাম জাহান। পুরো নাম উম্মে দিলরুবা জাহান খান। আমার স্ত্রী।

লাবিব বিরক্ত হলো। ভ্রু কুচকে বলল,

> তুই ওকে বিয়ে করে নিয়েছিস? মেহের তোর বোন হয় কিভাবে পারলি এমন করতে? আমার বাড়িতে থেকে আমাদের সম্পত্তি ভোগ করে এখন আমার নিজের মানুষটার দিকে হাত বাড়িয়েছিস? বিশ্বা*সঘাতক একটা। মায়ের মতো হয়েছিস।

লাবিবের কথা শুনে আরিয়ান রাগে কাঁপছে।। ওর কিছু বলার আগেই জাহান পেছনে থেকে বেরিয়ে আসলো। তাচ্ছিল্যপূর্ণ হেসে বলল,

> খুব দরদ না মেহের আপার জন্য? বন্ধ কক্ষে যখন শরবতের মধ্যে বি*ষ দিয়ে মেহের আপাকে খু*ন করা হলো তখন কোথায় ছিলো আপনার ভালোবাসা? এই বাড়ির নয়জন মেয়ে অদ্ভুত কারণে মা*রা গেছে সঠিক তদন্ত হয়েছে? কেউ মা*রা গেলে আপনারা দাফন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আসছেন ভালোবাসা দেখাতে। আমার বয়স আর আপনার বয়সের পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন না? শুনেছি মা*তাল হয়ে পড়ে থাকেন এখনো কি তেমনই আছেন? নড়েচড়ে জেগে উঠুন। আমি মেহের না শুনেছেন? আর অন্যের উপরে আঙ্গুল তুলছেন না? এই ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে সবাইকে সাক্ষী রেখে কথা দিচ্ছি এর সঠিক জবাব আমি দিব।

জাহান আরিয়ানের ডান হাত ধরে রেখেছে। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। আরিয়ান নিজেকে সামলে নিলো। এই মূহুর্ত্তে ঝামেলা করলে জাহানের জীবনের ঝুকি আছে। যদি একবার ওর আসল পরিচয় প্রকাশ ঘটে যেভাবেই হোক গোপন শ*ত্রু ঠিকই নিজের কাজ হাছিল করে নিবে। জাহানের কথায় লাবিব বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। অবাক হয়ে বলল,

> মেহেরের মৃ*ত্যু বি*ষ পানে হয়নি। চাচাজান সত্যি জানতে ময়না*তদন্ত করিয়েছিলেন। হার্ট এ্যাটাক করেছিলো। এই বাড়িতে মেহেরকে কতটা যত্নে রাখা হতো সবাই জানে। মেহের ছিল এই বাড়ির প্রাণ। চাচা চাচির আত্মা।

> ভাইজান এটা আধুনিক যুগ। কে বিশ্বাস করবে পরপর নয় জন মেয়ে রোগ ছাড়া অদ্ভুত কারণে মা*রা গেছে? আসলে কি জানেন? আসল সত্যি হচ্ছে আপনার বাবা চাচা আর দাদুরা কখনও চাননি চৌধুরী পরিবারের অর্থসম্পদ বাইরে ভাগ হয়ে যাক। মেয়ে হলে বাইরে বিয়ে দিতে হবে। বাইরের কেউ চৌধুরী বাড়ির সম্পত্তিতে দখল নিবে। এসবের জন্যই বরং মে*রে ফেলা হয়। আপনাদের কাছে মেয়ে মানে অবহেলার বস্তু।

জাহান আরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। লাবিব বলে উঠলো,

> পাগল হয়েছো? মেহের আমার স্ত্রী ছিল। এই বাড়ির ছেলে আমি। বাড়ির সম্পত্তি বাইরে কিভাবে যাবে বলো? মনগড়া কথা বলছো তুমি। বাদ দাও আমি জানি তুমি মেহের না। আসলে হঠাৎ দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। ওসব মনে রেখো না। তবে তুমি চাইলে আমি তোমার দায়িত্ব নিতে রাজি আছি। আরিয়ানকে ভয় করোনা। আমি বললে ও তোমাকে মুক্তি দিবে। চৌধুরী বাড়ির ছেলে আমি। আশাকরি এই বাড়ির সম্পদ সম্পর্কে তোমার ধারণা আছে?

লাবিবের বাজে ইঙ্গিত শুনে এবার দুদিক থেকে প্রতিবাদ আসলো। ফিরোজ তেড়ে এসে বলল,

> তুমি মা*তাল আছো ভাইজান। পাগলামি করলে কিন্তু ভালো হবে না। নাটক করছো?আয়নাতে নিজের চেহারা দেখেছো? বয়সের সঙ্গে ভিমরতি বেড়েছে। তোমার চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য মেহের আপার সঙ্গে তোমার কবুল হয়েছিলো। আপার কপাল খারাপ না বরং ভালো। এইরকম চরিত্রের পুরুষের সঙ্গে থাকার চাইতে মৃ*ত্যু ভালো। জাহান আমার ছোট বোনের মতো। ওকে বোন বলেছি। খবরদার ওর দিকে নজর দিবা না। তোমার চরিত্র সম্পর্কে জানতে বাকী নেই।

আরিয়ান এদের ঝগড়ার মধ্যে থাকলোনা। চুপচাপ জাহানের হাত ধরে নিজের কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো। থমথমে মুখে বলল,

> আপনি সকাল হলেই ফিরে যাচ্ছেন।এই বাড়িতে থাকলে ঝামেলা বাড়বে। আমি কিছুদিন বাসা থেকে দূরে থাকতে চাইছি।

জাহান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শাস্তি দিব, প্রতিশোধ নিব কথাগুলো মুখে যতটা জোর দিয়ে বলা যায় কাজটা করতে গেলে ততটা সহজে হয়না। কত পরিশ্রম আর সাহসের প্রয়োজন আল্লাহ ভালো জানেন। ধৈর্য্য ধরে প্রতিটা সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে হবে। আরিয়ান পূণরায় বলল,

> যাচ্ছেন তো? লাবিব ভাইজান মানুষ সুবিধার না। বয়স চল্লিশ হতে চলেছে কিন্তু মন মস্তিষ্ক প*শুর থেকেও অধম। বিয়ে করেনি ঠিকই কিন্তু এক মেয়ের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়িত। ওরা বিয়েতে বিশ্বাসী না।

জাহান দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। জীবন কেমন জটিল হয়ে উঠেছে। মা বোনদের মৃ*ত্যুর রহস্য কিভাবে প্রকাশে আনবে বুঝতে পারছে না। হাতে কোনো উপযুক্ত প্রমাণ নেই। সবটা লোকমুখে শোনা। প্রামাণের জন্য হলেও এখানে থাকতে হবে।
********
সকালে ঘুম থেকে ঢুলতে ঢুলতে কক্ষের বাইরে আসলো জাহান। এখনো চোখে ঘুম লেগে আছে। আরিয়ান কক্ষে নেই। হয়তো বাইরে আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা ছাড়া জাহানের চলে না। কথাটা ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি থেকে নামতেই কাচের উপরে পা ফেলে দিলো। কেউ ভাঙা কাচের বোতল সিঁড়ির নিচে রেখে দিয়েছে সেটা ওর চোখে পড়েনি। পায়ের তালু কেটে একাকার অবস্থা। কিছু কাচ ভেরতে ঢুকে পড়েছে। কাজের মেয়ে ফুলি দৌড়ে এসে ওকে ধরে চিৎকার করে বলল,

> ভাবিজান আপনার পায়েতো অনেক খানি কাচ ঢুকেছে। র*ক্ত পড়ছে।

জাহান পা চেপে চোখ বন্ধ করে বসে পড়লো। যন্ত্রণায় কাতর,আশেপাশে খেয়াল নেই। এই সুযোগে মেয়েটা টান দিয়ে ভাঙা কাচের টুকরো বের করে নিলো। ভাঙা অংশ ভেতরে আছে কি বোঝা যাচ্ছে না। তারপর হন্তদন্ত হয়ে বাটিতে কিসের একটা ওষুধ নিয়ে কাটা জায়গায় লাগিয়ে দিতেই জাহান জ্ঞান হারালো। তখনই আরিয়ান ভেতরে আসলো। দৌড়ে এসে জাহানের মাথাটা তুলে নিয়ে ফুলিকে ধমক দিলো,

> কি করেছিস ওর সঙ্গে? ওর কিছু হলে কছম প্রা*ণে মেরে দিব সবাইকে। সত্যি মিথ্যা যাচাই করবো না।

ফুলি ভয়ে কেঁদে উঠে বলল,

> আমার কোনো দোষ নেই ভাইজান। ভাবির পায়ে কাচ ফুটেছে আমি বের করে র*ক্ত বন্ধ করতে ওষুধ লাগিয়েছি। ভাবি হয়তো র*ক্ত দেখে ভয় পেয়েছে।

> ডাক্তার হয়েছিস? আমার চোখের সামনে থেকে যা।
আরিয়ান দ্রুত পানি এনে জাহানের পায়ের উপরে ঢেলে ওষুধ পরিস্কার করে কোলে তুলে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসলো।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে