#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৬০+অর্ন্তিম পর্ব
১৫৮.
পুতুলের জ্ঞান ফিরে আসতেই অর্পনের অসহায় মুখটা দেখতে পায়।নিজ থেকে উঠে বসার চেষ্টা করতেই অর্পণ,পুতুলকে ধরে বসায়।
এখন কেমন লাগছে?
পুতুল আস্তে করে বলল,
ভালো।
এত বড় শাস্তি কেনো দিলে আমায়?এত বড় শাস্তি কি আমি সত্যি ডির্জাভ করি?
পুতুল অসহায় চোখে তাকিয়ে মাথাটা নিচের দিকে নামিয়ে রাখে।
তোমার এই মাথা নিচু করাকে আমি কি ধরে নিবো?
তুমি নির্বোধ।না-কি অতি চালাকচতুর নারী?আমি শুনে এসেছি নারী যখন মায়ের আসনে যায়।তখন দুনিয়া উল্টে গেলেও তার সন্তানের কথা সবার আগে মাথায় থাকে।যা কিছু হয়ে যাক সন্তানের নিরাপত্তার কথা আগে ভাবে।কিন্তু তুমি যেটা করেছো সেটা ঠিক করো নিই।একজন বাবা হিসেবে মায়ের পরে তার সন্তানের কথা তার বাবা জানবে।কিন্তু আমি তার কথা জানতামই না।এমনকি আমার সন্তানের পুরো ব্যাপারটা তুমি লুকিয়ে গেছো।এক,দুই মাস নয়,পুরো ছয়টা মাস তুমি আমাকে ধোঁকার মধ্যে রাখলে।এটা করে তুমি কি প্রমাণ করলে?ইউ আর সেলফিশ।
অর্পণের কথায় পুতুল শব্দ করে কেঁদে ওঠে।চোখের পানি মুছতে মুছতে ব’লে
আমি কি করতাম?চারদিকে করোনার জন্য এত মৃত্যু আমার ভিতরটা ভয়ে গুটিয়ে গেছে।তার ওপর নিজের অনাগত সন্তানের আগমনে ঘাবড়ে যাই।একদিকে দায়িত্ব ফেলে ছুটে আসতে ইচ্ছে করে তোমার কাছে।আর দায়িত্ব ব’লে নিজের সত্তাকে বাহিরে ফেলে লড়াই করতে।
চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু এখনও ভাসে।আমার মা কষ্ট পেতে পেতে মারা গেলো।বিনা চিকিৎসায় তার প্রাণটা গেলো।তখন উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলে হয়তো আমার মা’টা আজ বেঁচে থাকতো।আমি আর আমার ভাই মা বিহীন হতাম না।বাবা শব্দটা আমার কাছ থেকে বিলীন হয়ে গেছে।স্কুল,কলেজ।সব জায়গায় শুনি বাবা ইউ আর দ্যা বেস্ট হয়।বাবা তার রাজকন্যাকে আগলে রাখে।তার সকল বায়না আবদার পূর্ন করে দেয়।সেই বাবার কাছে দিন শেষে তার ঠাঁই হয়।দিন শেষে মায়ের নামে শত শত নালিশ বাবার কাছে করা।যাতে বাবা,মা’কে মিছে মিছে হলেও খুব করে বকে দেয়।তার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর স্বাদ আমার এই জম্মে থেকে গেলো।আমার ভাই আজও জানতে পারলোনা সে যাকে ফুপুর মেয়ে হিসেবে জানে।সে তার আপন বোন।তার মা আর কেউ নয়।সে যাকে ফুপু ব’লে জানে সে আসলে তার জম্মদাত্তী।তার নিজের মা।
কিন্তু আমাদের বেলা কেন এমন হলোও?খুব কি ক্ষতি হতো আর দশটা বাচ্চাদের মতো আমরাও একটা সুখি পরিবার পেতাম।সেখানে সুখ থাকতো কানায় কানায় ভরপুর।এই ছোট্ট জীবনে আমার অপূর্ণতার গল্পটা বেশি।সব কষ্ট ভুলে গিয়ে এক বুক আপসোস বুকে চাপা দিয়ে এই তোও আছি বেশ।আমি আমার ক্যারিয়ারকে বেশি পাধান্য দিচ্ছি।তোমার সাথে যে অন্যায় করেছি।এটা ক্ষমার যোগ্য নয়।তবুও বলব,
তুমি আমায় ক্ষমা করো না।আমার ভয় হয়।তোমার কাছে থাকার ভয়।তোমাকে হারানোর ভয়টা মনের মাঝে কা*মড়ে ধরে।মাঝে মাঝে মনে হয় এই সুখ আমার জন্য নয়।আমি এসব পাওয়ার যোগ্য নই।আর যে আসছে।তাঁকে সারা দুনিয়ায় থেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা।কারণ আমার বাবা তোও আর দশটা বাচ্চাদের বাবার মতো নয়।সে একজন অমানুষ,একজন রাক্ষস।আমি ঘুমের মধ্যে দেখতে পাই।আমার খুব সুন্দর একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান হয়েছে।সে কি সুন্দর করে হাসে।তার যখন হাঁটার বয়স হলো।সে হাঁটি হাঁটি পা চলাতেই আমি সুখ খুঁজে পাই।
তাঁকে আমার কাছে আসার জন্য যখন হাত মেলে অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি।অপেক্ষা করছি সে আমার কোলে এসে বসবে।আমাকে আদরের বুলিতেই মাম্মা ব’লে ডেকে উঠবে।কিন্তু সে আমার কাছে আসার আগেই তাঁকে নিয়ে গেলোও।ওই অমানুষটা আমার চোখের সামনেই আমার মেয়েকে জীবন্ত কবর দিচ্ছে।আর আমি এক অদৃশ্য লোহার শিকলে বন্দি।আমার মেয়েটা চিতকার করে কাঁদছে।সে ব্যাথা সইতে না পেরে মাম্মমা,বাপা ব’লে ডাকছে।আমি শত চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারলাম না।আমার মেয়েকে মে*রে ফেলছে।আর আমি মা হয়ে সন্তানের মৃত্যু দেখতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি।পারিসা ব’লে চিতকার করে উঠে বসতেই কানে আসে ফজর আজানের শব্দ।আমি শুনেছি ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়।আর জেনে বুঝেও চুপচাপ ভয়ে নিজেকে ঢেকে রাখতে চাইছি।আমি আমার মেয়ে কে কলিজা ভেতর রেখে দিব।আমার মেয়ে কে কারো কাছে দিব না কারো কাছে না।পুতুল হাইপার হয়ে যাচ্ছে।অদ্ভুত বিহেভিয়ার জন্য অর্পণ নিজেও চমকে উঠে।পুতুলকে নিজের বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
পুতুল রিলাক্স।শান্ত হও।তোমার সন্তানকে কেউ নিবে না।আমি আছি তোও।আমি আর তুমি মিলে আমাদের মেয়ে কে সেইভ করব।সে নিরাপদের সাথে থাকবে।কেউ তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।অর্পণ পুতুলের সাড়া শব্দ না পেয়ে মুখটা তুলতেই দেখে আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।অর্পণ পুতুলের দিকে তাকিয়ে ভালো করে খেয়াল করতেই বুঝতে পারে মেয়েটা নিজের যত্ন নেয় না।মাথার চুলগুলো উসকখুসক।চোখের নিজে কালি পড়েছে।পুতুললের বি
প্রেগন্যান্ট বিষয়টি নিয়ে অন্য ডাক্তার সাথে কথা বলল,এবং আজকের ঘটনা বিস্তারিত জানালো।মায়ের থেকে পুতুলের রিপোর্ট নিয়ে দেখালোও।ডাক্তার নন্দিতা সবটা দেখে এবং শুনে বলল,
তার বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।তার মানসিক এবং শারিরীক অবস্থা ঠিক নেই।তার সাথে পূর্বে যা হয়েছে সেইসব এখন তাকে ভাবতে বাধ্য করে।এবং মুড সুয়িং এর একটা ব্যাপার আছে।এটা বেবি পেটে আসলেই অনেক মায়েদের একটুও বেশিই হয়ে থাকে।আর সবচেয়ে বড় কথা উনার মন থেকে ভয় নামক জিনিসটা দূর করতে হবে।উনি বেবির চিন্তায় আরো নাজুক হয়ে গেছেন।উনার বিশেষ খেয়াল রাখুন।
ডক্টরের সাথে কথা শেষ হতেই অর্পণ মাথা নাড়িয়ে কেবিনে পা রাখে।পুতুল এখন ঘুমিয়ে আছে।ওর দুই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।মেয়েটা ঘুমের ঘোরেও কাঁদছে।অর্পন নিজের ডান হাত দিয়ে পুতুলের দুই চোখের লেগে থাকা অশ্রুটুকু মুছে নিলো।বউয়ের ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তাতে হালকা ঠোঁটের স্পর্শ একে বলল,
আই এম সরি।আমাকে প্লিজ মাফ করে দেও।তোমার পরিস্থিতিটা না বুঝেই আমি মিস বিহেভ করে ফেলেছি।যা আমার করা উচিত হয়নি।আজকের পর থেকে তোমার চোখ থেকে আর কখনোই পানি জড়তে দিবোও না।তোমার ভয় দূর করতে আমাকে যা করতে হয়।আমি তাই করব।প্রয়োজনে তোমার বাবাকে খুঁজে বের করবোও।সে আদৌও বেঁচে আছে।না-কি মা-রা গেছে।আমাকে জানতে হবে।আমাদের সন্তানকে নিয়ে আমি কোনো রিস্ক নিবো না।তোমার স্বামী বেঁচে থাকতে তোমাদের গায়ে একটা আঁচড় লাগতে দিবে না।অর্পণ পুতুলকে নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ির পথে গাড়িতে করে রওনা দিলো।পুতুলকে সাবধানে বসিয়ে আস্তে ধীরে গাড়ি চালিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে।
১৫৯.
অর্পণ থানার ওসির সাথে ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলতে লাগল।ওসির কথা মতে,
পুতুলের দাদী আর বেঁচে নেই।আর পুতুলের বাবা জেল থেকে বেশ কয়েকবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।এবং শেষ মুহূর্তে সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।কিন্তু বেশি দূর পালিয়ে যেতে পারেনি।তার আগেই পুলিশ তার পায়ে গুলি করে বসে।এবং সে মা*রাত্মকভাবে আ*হত হয়।এবং তার জেলের সাজা শেষ না হওয়া।তার চিকিৎসা দরকার হয়।যার কারণে তার একটি পা অপারেশন করে কে*টে ফেলতে হয়েছে।তার একটি পা নেই।আর অপর পায়ে পচন ধরেছে।শত চিকিৎসা নিয়েও পা ভালো হয়নি।
বর্তমানে সে ঢাকার পুরোনো জেলখানায় রয়েছে।তবে সে খোলা বাতাসে যাওয়ার চেষ্টা করতোও।তার বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাইতোও।অন্ধকারে থাকতে চাইতোও না।তার অন্ধকার কয়েদীদের মতোও জীবনটা এতগুলো বছর পার করা।তার ওপর মায়ের মৃত্যু।বউ,বাচ্চা দিন শেষে কেউ নেই তার পাশে।সে নিঃশ্ব।সে অন্ধকারে পড়ে আছে।অন্ধকারে দেখলেই মনে হয় কেউ তাকে গিলে খেতে আসছে।তার গ*লা টি*পে ধরছে।এক রকম ভয় পেতে পেতেই আজ সে পাগল উন্মাদ।কোনো কিছু সে মনে করতে পারে না।নিজের চুল টেনে ধরেন।জেলের মধ্যে মাথা ঢুকতে থাকেন।আর চিতকার করে কাঁদতে থাকেন।
অর্পণ ওসিকে বলল,সে একবার ওখানে যেতে চায়।এবং সবকিছু নিজের চোখে দেখতে চায়।ওসির পারমিশন নিয়ে অর্পণ ঢাকায় পা রাখে।এবং যেখানে পুতুলের বাবাকে রাখা হয়েছে সেখানে আসে।আজ থেকে আঠারো,উনিশ বছর আগের মোস্তফা সরোয়ারের সাথে এই মোস্তফা সরোয়ারের কোনো মিল নেই।আগে জুয়ার নেশা,টাকার লোভ,বউয়ের ওপর অত্যাচার করা।বাপের বাড়ি থেকে টাকা না আনার জন্য তালাক দেওয়া নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে।সেই অমানুষের আজ কি হাল হয়েছে?কথায় আছে লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু। পাপ কখনো বাপকে ছাড়েনা।তার করা পাপে আজ তার এই পরিনতি।এখন সে পাগল হয়ে গেছে।আর এই পাগলের বেশেই একদিন এই জেলের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটবে।যাবজ্জীবন কারাদন্ড জন্য আজ তার ফাঁসির রায় হলো না।বরং তিলে তিলে মেরে দিতে আজীবনের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামী করে দিলো।যতদিন বাঁচবে এভাবেই থাকবে।
ঘুম ভাঙ্গতেই অর্পণকে দেখতে না পেয়ে পুতুলের মুখটা চুপসে গেলো।মন খারাপ করে নিজের রুমে পা বাড়াতে নিলেই অসীম তালুকদার পুতুলকে ডাক দিলো।
আম্মু ওখানে দাঁড়িয়ে আছোও কেন?নিচে আসোও।তোমার অপেক্ষা এতখন ধরে ড্রয়িরুমে বসে আছি।
পুতুল সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।অসীম তালুকদারের সামনে বসতেই তিনি মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলল,
আমার আম্মুর মন খারাপ কেন?আপনার এই সময় মন খারাপ করা মানায় না।সব সময় হাসিখুশিতে থাকবেন।আপনার হাসিতে আমার এই বাড়িটা আলোয় ভরে উঠবে।ঘুম থেকে উঠেছেন।নিশ্চয় খিদে পেয়েছে।আপনার শ্বাশুড়ি আম্মা আজকে আপনার পছন্দের সব রান্না করে গেছেন।আসুন।আমি খাবার দিচ্ছি।অসীম তালুকদার সোফা ছেড়ে চলে যেতে নিলেই পুতুল ডাক দিলল,
বা..বা!আমায় মাফ করে দিন।আমি না বুঝে একটা ভুল করে ফেলেছি।আর কখনো এমন ভুল করবো না।এই যে কানে ধরেছি।নাকে চিমটি কা*টছি!অসীম তালুকদার পুতুলের কাজে হেঁসে দিলেন।
দূর বোকা মেয়ে।রাগ কেনো করব?মায়েদের ওপর সন্তান কখনোই রাগ করে থাকতে পারে?পারে না।তাহলে আমি রাগ করি কি করে?আমি তোও খুব খুশি তোমার জন্যই আমাদের ঘরে আমার খেলার সাথী আসছে ব’লে।অসীম তালুকদার আরো অনেকখন গল্প করতে লাগলেন।সেই ফাঁকে খাবার বেড়ে পুতুলের সামনে বসে তাঁকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতে দিতে বলল,
আমার এবং অর্পণের মায়ের একটা মেয়ের খুব শখ ছিল।কিন্তু তোমার শ্বাশুড়ি মায়ের সমস্যা দেখা দেওয়া সেটা আর পূরণ হয়নি।অর্পণের মাধ্যমে একটা বউ আনতে চাই নিই।আনতে চেয়েছিলাম।নিজের মেয়েকে।অবশেষে আলহামদুলিল্লাহ পেয়েছি।আমার বাঁদর ছেলেটা তোমার আগমনে এক পলকেই বদলে গেছে।না হলে এই ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে আমি খুব চিন্তায় থাকতাম।ভাবতাম এই বাঁদরের গলায় কে মুক্তার মালা পড়াবে?কথায় কথায় পুতুলের খাওয়া শেষ।এখন বিশ্রাম নিচ্ছে।অসীম তালুকদার পুরনো দিনের অর্পণের শৈশব,কৈশোর দুষ্টুমি কাহিনিগুলো বলতে লাগল।আর পুতুল হেসে কুটিকুটি হলো।এই লোকটা এত পাঁজি ছিল।পুতুলের মনে পড়ে গেলো অর্পণ তাদের বাড়িতে রানীকে চুরির করার কথা।তখন সে কি-না অচেনা অজানা ছেলেকে জুতা খুলে ছুড়ে মেরেছিল তার মুখে।বেচারা কি ব্যাথাটা নাই পেয়েছিল?ইস ভাবতেই লজ্জা লাগে।আজ সেই মানুষটাই তার স্বামী।তার সন্তানের বাবা হতে যাচ্ছে।
অসীম তালুকদার অর্পণের ছোট বেলা থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত সকল ছবি এক ফ্যামিলি এলবাম থেকে বের করলেন।পুতুলের সামনে অর্পণের ছবিগুলো দেখালো।একটা ছবিতে এক বছর,দেড় বছরের ছবিটা তোলা হয়েছে।অর্পণ সাহেবের গায়ে কোনো পোশাক নেই।খালি গায়ে ডায়াপার চেঞ্জ করে সবে নতুন ডায়াপার পড়াবে ঠিক তখনই হিসু করে বসে অর্পণের ছোট মামার মুখের ওপর।বেচারা চোখ মুখ কুঁচকে তাকাতেই ওই অবস্থায় বড় মামা ছবিটা তুলে ফেলেন।ছোট মামার ওপর হিসু করে বিশ্ব জয়ের হাসি তিনি দিয়েছিলেন।আরো অনেক ঘটনার ছবি সামনে আসতেই অসীম তালুকদার প্রত্যেকটা কাহিনি বলতে লাগল। আর ভাবতে লাগল যারা বাবা এতটা পাঁজি ছিল।না জানি তার কন্যা কি করে?পুতুল নিজের পেটের ওপর হাত রেখে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।
এমন সময় অর্পণের গাড়ির শব্দ বাহির থেকে শুনা যায়।পুতুল অস্থির হয়ে ওঠে।তাড়াহুড়ো করে বাহিরে আসতে চাইলে অসীম তালুকদার সাবধানে যেতে বলেন।
১৬০.
গাড়ি সাইড করে রেখে বউকে সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও কিছু বলো না।চুপচাপ বাড়িতে ঢুকে পরে।অর্পণের কাজে পুতুলের মুখটা চুপসে গেলো।মন খারাপ করে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে।অর্পণ চুপচাপ নিচ তলার একটি রুমে ঢুকে গোসল সেরে বের হয়ে আসে।পুতুলের সামনে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলল,
মুখ থেকে হাসি গায়েব কেন?আমি বাহির থেকে এসেছি।তার ওপর অনেক বড় লম্বা জার্নি ছিল।বেশ ক্লান্ত আমি।কথা বলতে একদমই সায় দিচ্ছিলো না।ভাবলাম গোসল করে বাহিরে জীবানু পরিষ্কার করে আসি।ফ্রেশ লাগবে।ওহ আরেকটা কথা আজকে থেকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা নামা করতে হবে না।আমরা নিচ তলায় শিফট হচ্ছি।
সারাদিন কোথায় ছিলেন?পুতুলের প্রশ্নে অর্পণ সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে যায়।ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেলে বলল,
আগে নিচে শিফট হই।তারপর না হয় শুনো আজ কি কি করেছি?পুতুলের উওরের আসা না করেই রুমে চলে যায়।একে একে প্রয়োজনী জিনিসপত্র নিচে শিফট করে।
আজকের দিনে কথাগুলো পুতুলকে বলতেই পুতুল নিরব রইলো কোনো কথা সে বললো না।অর্পন পুতুলের কপালে চুমু একে বলল,যা কিছু হয়ে যাক।মৃত্যু ব্যতিত তোমার পিছু ছাড়ছি না।তোমাদের ছাড়া আমার এক বিন্দু চলবে না।আমাদের কন্যা তার বাবার রাজত্বে নিরাপত্তেই থাকবে।ভরসা রাখ,প্রিয়তমা।
দেখতে দেখতে পুতুলের নয়মাসে পড়েছে।সে দেখতে বেশ গুলুমুলু হয়েছে।হাত,পায়ে পানি এসেছে।ঠিক মতো হাঁটা চলা করতে পারে না।বেবি এক একটা কিকে তার জানটা বের হয়ে যায়।এত কষ্ট মা হওয়া তা তো আগে জানা ছিল না।পুতুলের কষ্ট দেখে অর্পণের মন খারাপ হয়ে যায়।অসহায় চোখে তাকিয়ে রয়। পুতুল রাতে ঘুমাতে পারেনা।মেয়েটা কাঁদে যন্ত্রণা ছটপট করে।অর্পণ,মিথ্যে রাগ নিয়ে পুতুলের পেটে চুমু বসিয়ে ব’লে।
আম্মু এত লাথি মেরো না।তোমার আম্মা ব্যাথা পায়।তুমি না আব্বুর ভালো মেয়ে।ভালো মেয়েরা এমন করে বলো।চুপচাপ গুড গার্ল এর মতো থাকোও।অর্পণের মিথ্যে কাজে কাজ হয় না।কয়েক সেকেন্ড যেতেই আবার কিক মারে।পুতুল ব্যাথা সইতে না পেরে অর্পনের বুকে মধ্যে কামড় বসিয়ে দেয়।
বেচারা বউয়ের প্যারা পাগল হওয়ার দশা।এই কয়েকমাসে বউ নিজেও ঠিক মতো ঘুমাইনি তাকে-ও ঘুমাতে দেয়নি।পুতুলের মতে তার মেয়ে তাকে জ্বালিয়ে মারে।তাকে শান্তি দেয়না।আর বাপ রাতে বিছানায় আরাম করে পরে পরে ঘুমাবে।তাই মায়ের সঙ্গে বেবির বাপও জেগে থাকবে।
নতুন অতিথি জন্য পুরো বাড়িতে খেলনার মেলা বসেছে।পুতুলের দুই ভাই এবং মামা,মামী এসেছেন বেশ কয়েকবার।যতবার আসবে কিছু না কিছু নিয়ে আসবে।বেবি জন্য খেলনা,টয়েস।আর বেবির মায়ের জন্য বিভিন্ন টক আচার,বাবুর জন্য নকশিকাঁথা।আরো কত কি?পুতুল কে তাদের কাছে নিয়ে রাখতে চাইলেও পুতুল নিজেই যায়নি।আর অর্পণ এবং অর্পণের মা,বাবা যেতে দিতে রাজি হয়নি।বেবি হোক তারপর না হয় মামা,মামী কাছে কয়েকদিন গিয়ে থাকবে।
আজ অর্পণ বাগানে বসে মিটিং করছে।রাবেয়া ওহ বাড়িতে এসেছেন মাত্র।হাসপাতাল থেকে এসেই সোজা গোসল করতে গিয়েছেন।অসীম তালুকদার নিজের খামার বাড়িতে গিয়েছেন।পুতুল না-কি বড় মাছের মাথা খাবে।তা ওহ আবার মুগডাল দিয়ে।এই মেয়ের পছন্দের তালিকার জায়গায় সব অপচ্ছন্দের খাবার যোগ হচ্ছে।যা সে কখনোই মুখে তুলেনি।আজ সেগুলো খাওয়া বায়না করে।তাই মেয়ের আবদার মিটাতেই ভরদুপুরে বের হয়েছেন গাড়ি নিয়ে।
পুতুল আমের আচার বাটিতে করে নিয়ে হাঁটছে আর খাচ্ছে।অর্পণ বার বার বলছে বসে খাও।কিন্তু এই মেয়ে কোনো কথা শুনলে তোও।পুতুল থেকে চোখ সরিয়ে আবার মিটিং বসে মনযোগ দিতেই পুতুল হঠাৎ চিতকার করে উঠে।পুতুলের চিতকারে অর্পণ চমকে পুতুল দিকে তাকিয়ে সেও পুতুল ব’লে চিতকার করে দৌড় দেয় ।
রাবেয়া দৌড়ে নিচে বাহিরে আসেন।দেখেন আচারের তেল ফেলে সেই তেলের ওপর পুতুল পড়ে গেছে ।
হায় আল্লাহ এসব হলো কি করে?
অর্পণ তাড়াতাড়ি গাড়ি বের কর।পুতুলকে হাসপাতালে নিতে হবে।
হাসপাতালে আসার পথেই রাবেয়া ওটি রুম রেডি করতে বলেন।স্বাধীনদের বাড়িতে খবর দেওয়া হয়।রাবেয়া তাড়াহুড়ো করায় বাসা থেকে বেবি এবং মায়ের প্রয়োজনী কোনো জিনিস আনতে পারেন নিই।তাই রেনুকে তাদের বাসায় যেতে বলেন।আর কি লাগবে।তা বলে দিলেন।সব রেডি করা ছিলো।শুধু নিয়ে আসবে।
পুতুলকে ওটিতে নেওয়া হলো।অর্পণের ভয়ে হাত,পা কাঁপছে।তার সাদা গেঞ্জিতে পুতুলের রক্ত।তার আরো সর্তক থাকা উচিত ছিলো।তার জন্যই পুতুল এত কষ্ট পাচ্ছে।ওটির ভেতর থেকে পুতুলের চিতকার শব্দ ভেসে আসছে।অর্পণ পড়ে যেতে নিলেই অসীম তালুকদার ছেলেকে ধরে ফেলেন।বউয়ের ফোন পেয়ে বাসা না গিয়ে সোজা হাসপাতালে আসছেন।এখন পরিস্থিতি ভালো হলেই হয়।মা এবং সন্তান দুইজনই সুস্থ থাকুক।
১৬১.
আল্লাহ্ অনেক খুশী হলে মানুষকে কি উপহার দেয় জানেন? কন্যা সন্তান!হ্যাঁ এটাই ইসলাম এটাই সত্য।
কন্যা সন্তান হলো একজন বাবার জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার।আলহামদুলিল্লাহ্ আমি একজন কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছি।
অর্পণের হাতের ওপর তার মেয়ে।তার দিকে তাকিয়ে অর্পণের কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
ওটিতে তার আগমনে জানিয়ে দিয়েছে গলায় ফাটিয়ে চিতকার করে।যখন ডাক্তার তার কান্না বন্ধ শুনে।পিঠের মধ্যে হালকা থাপ্পড় দেয়।এরপর কান্না আর বন্ধ হওয়ার নাম নেই।তাঁকে পরিষ্কার করে তোয়ালে করে বাবা কাছে দিতেই সে একদম চুপ।বাবা-র কোল সে ততক্ষণে বুঝে গিয়েছে।তাই তোও কান্না বন্ধ করে একদম শান্ত বাচ্চা হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে হেঁসে দিয়েছে।মেয়ের ওই হাসিতে অর্পণ কেঁদে ওঠে।মেয়ের কপালে চুমু বসিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
আম্মু দেখোও।আমার আরেকটা মা হেসে গেছে।আমাদের ভালোবাসার অংশ।আমার রাজকন্যা।আল্লাহ কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।তিনি আমার স্ত্রী এবং সন্তানকে সুস্থ রেখেছেন।
রাবেয়া নাতনীর মুখে দিকে তাকিয়ে বলল,
মাশা-আল্লাহ।বাপকা বেটি।একদম বাপের কোলে এসেই শান্ত।আর দেখতেও একদম তোর মতো হয়েছে।অর্পণ মায়ের কথা শুনে তাকাতেই রাবেয়া মাথা নাড়িয়ে বলল।
হুম তোর কার্বন কপি।একদম বাবা-র মুখের আদলেই তার তৈরি।আমি তাঁকে দেখেই প্রথমে অবাক হলেও এখন ভালো লাগছে। এরজন্যই পুতুল বাবুকে পেটে নিয়ে তোমাকে দিন,রাত দেখতোও।
দুই হাজার তেইশ সাল….
তন্নী,অন্তর,তন্ময় তাদের সাথে দিহান সাহেব,এবং জেনিফা বাংলাদেশে এসেছে।কোভিট নাইনটি সময় যে বিপদ তাদের ওপর দিয়ে গেছে।এখন আলহামদুলিল্লাহ সবাই সুস্থ আছে।আর আজ নিজের পরিবারকে দেখতে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখে।রাত পোয়ালেই আকাশে চাঁদের রাত।তারপরই ঈদ।এবার ঈদ নিজের পরিবার সাথে মানাতে আসছে।
তালুকদার বাড়িতে খুশির আমেজ বইছে।পুতুল ফজরের নামাজ পড়ে রান্না ঘরে রান্না করতে ব্যাস্ত।শ্বাশুড়ি মা তার সাথে রান্না ঘরে রয়েছে।অসীম তালুকদার গোসলে গেছেন।ছেলেরা একসাথে ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগাহে যাবেন।আর তার জনাবের কোনো খবর নেই কোথায় গেছে জানা নেই।আর এই বাঁদর মেয়ের বাঁদরামি কমে না।পুরো বাড়ির মধ্যে তার পায়ের কদম চলবেই।সিঁড়িতে হাঁটতে গিয়ে একশ একটা ব্যাথা পাবে।আর বাপের কাছে নালিশ থাকবে।দাদু ভাইয়ের বাড়ি ভাল্লা না।তাকে দুঃখ দিয়েছে।এখন নবাবের বেটি কোথায় আছে কে জানে?
তন্ময় গোসল সেরে কেবল রুমে ঢুকেছে।কোমড়ে তোয়ালে জড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করছে।এমন সময় দরজা ঠেলে তার ঘরে পারিসা আসে।
খাটে বসে আঙুল গুনতে গুনতে কিসের হিসেব করতে লাগল তন্ময় খেয়াল করেনি।কিন্তু তারপর যা হলো তন্ময় শেষ।পারিসা তার কোমড় থেকে তোয়ালে টান দিতেই সেটা খুলে নিচে পড়ে গেলো।আর তন্ময় চিতকার করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলল।
পারিসা ততখনে নিজের কাজ করে তন্ময়ের ঘরের বাহিরে দৌড়।তন্ময় চিতকার দিয়ে একদম স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পারিসা তখনো হাসছে।আবার দরজা বাহিরে দাঁড়িয়ে
ভেতরে উঁকি মে*রে বলল,
তন্ময় ভাইয়ের পক্ষী দেখে ফেলেছি।পারিসা কথাটা ব’লেই নিজের ঘরে দৌড়।
পারিসার কথায় তন্ময় শেষ।লজ্জায় বেচারার মুখটা চুপসে গেলো।ইতিমধ্যে তন্নী কি হয়েছে,কি হয়েছে ব’লে ছেলের রুমে আসতেই দেখে ছেলে হাফ প্যান্ট পরে খাটে বসে কাদঁছে।
কি হয়েছে আমার আব্বু?কাঁদছো কেনো?
তন্ময় শরমে মা’কেও কিছু বলতে না পেরে শব্দ করে কেঁদে ওঠে।তন্নী ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে কান্না বন্ধ করতে বলল।কিন্তু তার কান্না বন্ধ হওয়ার নামই নেই।এই ঈদের দিনে এই রকম করে কেউ কাঁদে।
পারিসা তালুকদার পরী।অর্পণ আর পুতুলের ভালোবাসার অংশ।
তন্ময় চিতকার শুনে পুতুল বুঝে গেছে এই মেয়ে কিছু তোও অবশ্যই করেছে।পরশু দিন থেকে ছেলেটা আসছে পর থেকেই তার পিছে লাগছে।পুতুল নিজের রুমে যাচ্ছে।আজকে এর পিঠে থাপ্পড় একটা লাগিয়ে ছাড়বে।সবার আদরে একটা বাঁদর হচ্ছে।
পুরো রুম তন্ন তন্ন করেও মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে বাগানের দিকে গেলো।
বাহ।কি সুন্দর দৃশ্য মেয়ে একদম সাধু সেজে বাবার কোলে চড়ে বসেছে।
এই যে নিচে নামেন।তন্ময়েয় রুমে গিয়ে কি করেছেন?ওহ এমনই এমনই চিতকার দেয় নিই।নিশ্চয়ই কিছু করেছো।সত্যি করে বল।কি করেছো?পুতুলের কথায় মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের না করলেও বাবার জিজ্ঞেস করতেই রুমের ঘটনা ব’লে দিল।মেয়ের কান্ডে অর্পণ শব্দ করে হেঁসে উঠে।আর পুতুল রেগেমেগে আগুন।
আম্মু এসব কেনোও করেছো?সে তোমার বড় ভাই হয়।ভাইয়ের সাথে এসব কেউ করে।
তাহলে সে আমার সাথে কথা কয় না কেন?
অর্পণ মেয়ের কথাটার মানে বুঝতে পারে।বাড়ির সবাই তার সাথে কথা ব’লে এমনকি তন্নি পুরো পরিবারও।কিন্তু তন্ময় বাদে।সে পারিসা সাথে কথা ব’লে না।আর পারিসা তার এটেশন চায়।যার জন্য তাঁকে বিরক্ত করে।
পুতুল রেগে আছে।তাই মেয়েকে নিয়ে চুপচাপ সরে যেতে নিলেই পুতুল,বাপ বেটিকে ইচ্ছে মতোও ঝাড়ে।
আরোও লাই দেও।মেয়ে আদরে আদরে বাঁদর হয়েছে।আমার কথা শুনেনা না।ওর মা আমি নই।ওই আমার মা আর আমি তার মেয়ে।সে আমার পেট থেকে হয়নি।আমি তার পেট থেকে হয়েছি।মেয়ে আমার কথা শুনেনা।মেয়ের বাপেও আমার কথা শুনেনা।একদিন এই মেয়ে বড় কিছু করে ফেললে বুঝবে মজা।থাকোও তুমি তোমার মেয়ে নিয়ে। পারিসা মায়ের কথায় বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে বসে রইলো।পুতুল চলে যেতেই পারিসা মাথা তুলে।
আব্বা।আম্মু রাগ করছে?
হুম খুব রাগ করছে।
আচ্ছা,আর দুষ্টমি করবো না।এই যে তোমার কানে হাত দিলাম।আর করবো না।
অর্পণ বাড়ির সকল পুরুষদের সাথে নামাজ পড়তে ঈদগাহে গেছে।তন্ময়ের মান ভাঙ্গাতে খুব কষ্ট হয়েছে।মেয়েটার জন্য ছেলেটার ঈদ মাটি হোক সে চায় না।কষ্ট হলে-ও অবশেষে হেসেছে।তার পাঞ্জাবি পকেটে কচকচে পাঁচ টাকার নোট অর্পণ দিয়েছে।এটা তার ঈদের সালামী।
পুতুল চুপচাপ মেয়েকে গোসল করিয়ে নতুন ড্রেস পরিয়ে দিতে লাগল।পারিসা ঈদে নতুন
ড্রেস পেয়ে খুব খুশি।এই ড্রেস তার নানাভাই দিয়েছে।কিন্তু মায়ের মন খারাপ দেখে তারও মন খারাপ হয়ে গেলো।মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু বসিয়ে বলল,
আম্মু আর করবো না।
আপনি প্রত্যেকবার এভাবে বলেন।আর সেই একই কাজ বারবার করেন।কিন্তু আজ আপনার কথায় আমার মন গলছে না।
পুতুল মেয়েকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিতে চাইলেও পারিসা সরলো না।মা’কে শক্ত করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখল।পুতুলের মন নরম না হওয়া পারিসা কান্না করে দিল।চোখের পানি নাকের পানি এক করে বলল,
তুমি কথা না ব’লে নানু বাড়ি চলে যাব।আর আসব না।
পুতুল তবুও চুপ।এবার পারিসা মা’কে ছেড়ে উল্টো দিকে ফিরে কাঁদতে লাগে।এই ঈদের দিনে তার মেয়েটা কাঁদুক সে মা হিসেবে এটা চায় না।তাই মেয়েকে বুকে টেনে আদর করতে করতে বলল,
এবারের মতোও মাফ করে দিলাম।আর কখনো এমন কাজ করবেনা।যার ধারায় অন্য মানুষ কষ্ট পায়।মনে থাকবে।পারিসা মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বলল।
পুতুল মেয়েকে তৈরি করে নিজেও গোসল সেরে তৈরি হয়ে নিলো।পারিসার দাদুজান আসতেই তার কোলটা দখল করে বসলো।দাদাজান তাকে খুশি হয়ে এক হাজার টাকার নোট দিলো।কিন্তু সে সেটা নিলো না।তার পাখি ওয়ালা টাকা লাগবে।অসীম তালুকদার এখন চিন্তায় পড়লেন।সে পাখি ওয়ালা টাকা কই পাবে?এই টাকা তোও তার কাছে নেই।
রাবেয়া পারিসাকে বলল,
চলো দাদু ভাই আমরা সেমাই খাবোও।তোমার ফেবারিট খাবার তৈরি হয়েছে।
না।আমি গোশত খাব।হাম্বা খাব।
খাবে তোও।আগে মিষ্টি পরে ঝাল খেয়েও।
রাবেয়া নাতীকে কোলে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে দিলো।
বিকেলে তার নানু বাড়িতে যাবে।তার নানা ভাই তাকে পাখি ওয়ালা টাকা দিবে।এরমধ্যে অর্পণ পারিসার নানা বাড়ির সবাইকে নিয়ে হাজির হলো।তার সাথে তন্ময় গিয়েছিল।এখন ফিরে এসেছে।স্বাধীনকে দেখতেই নানা ভাই ব’লে চিৎকার শুরু করে।রাবেয়া কোল থেকে নেমে দৌড়।এক দৌড়ে নানা ভাইয়ের কোলে।নানা ভাইয়ের পাকা লাল দাঁড়িতে হাত দিয়ে টেনে ধরে বলল,
নানু ভাই আমার পাখি ওয়ালা টাকা দেও।আমি চকলেট খাব।চকলেট মজা মজা।
পাকাবুড়ি কথায় সবাই হেসে উঠে।নানার থেকে কচকচে পাখি ওয়ালা টাকা নিয়ে দুই মামার কোলে গেলো।তাদের কাছে টাকা না চেয়ে সোজা পাঞ্জাবি পকেটে হাত ঢুকিয়ে পাখি ওয়ালা টাকা নিয়ে নিজের জামার মধ্যে রাখল।তার মুখে বিশ্ব জয় করা হাসি।কারণ সে জানে তার মামারা তার জন্য পাখি ওয়ালা টাকা সব সময় পকেটে রাখে।
মেয়ের হাসিতেই অর্পনের কলিজা ঠান্ডা। পারিসা বাবাকে দেখে বাবার কোলে চড়ে বসে।
আব্বু আমার পাখি ওয়ালা টাকা।
তুমি খুশি?
হুম,খুব?
অর্পণ পাঞ্জাবি পকেট থেকে পাখি ওয়ালা নতুন কচকচে টাকার বান্ডিল বের করে মেয়ে জামার মধ্যে রাখল।পারিসা পাখি ওয়ালা টাকা দেখে খুশি হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল।
আম্মু তুমি পঁচা।আমার আব্বু ভালা।অর্পনের গালে চুমু খেয়ে সে হেসে উঠে।মেয়ের কথায় অর্পন সহ পুরো পরিবার হাসে।পুতুল হেসে এগিয়ে আসে অর্পনের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
হুম আপনার আব্বু ভালো।আর আমি পঁচা হয়েছে।খুশি।
পারিসা মাথা নাড়িয়ে বলল,না আমার আম্মু ভালো।
পুতুল মেয়ের একগালে চুমু বসিয়ে দিতেই অর্পণ পারিসার অপর গালে চুমু বসিয়ে দিলো।সেই মুহূর্তে একটা সুন্দর ছবি তোলা হলো।একটা সুন্দর পরিবার।সুখী পরিবার।তাদের ভালোবাসার ঘরে পারিসা একটা জান্নাতের টুকরো।
নিঃসন্দেহে কন্যা সন্তান একটি পরিবারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ উপহার। তাই আপনার কন্যা সন্তানকে আগলে রাখুন।
(সমাপ্ত)