চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-৫+৬+৭

0
376

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫
১৪.
সলিমুল্লাহ চলে যেতেই রাজিয়া দুই চোখের পানি ঝড়ে পড়ে।এটাই তো হওয়ার কথা ছিল।বন্ধ কামরায় বসে সবটাই সে শুনতে পেয়েছে।মানুষটা তার এত পাষাণ।যার জন্য জীবন যৌবন সব শেষ করলো।সে নাকি দ্বিতীয়বার ঘরে বউ তুলছে।একটিবার তার খবর নিলোনা।নিজের মেয়ে আর ভবিষ্যতে আসা সন্তানের কথা সে ভুলে গেছে।তার এই অবহেলায় রাজিয়া নরম মনটা একটু একটু করে পাথরের পরিনত হচ্ছে।ঘৃনা হচ্ছে এমন একটি মানুষকে সে ভালোবেসে ছিল।পরিপূর্ণ সংসার গড়ে তুলতে চেয়েছিল।

ইয়া রহমান,ইয়া রহিম,ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম,”ইয়া গাফফার” ইয়া সাত্তার, “ইয়া জব্বার,ইয়া ওয়াদুদ,ইয়া আজিজু,ইয়া আজিম,ইয়া হান্নানু,ইয়া মান্নান হে আমার রব,হে আমার সৃষ্টি কর্তা।

আপনার পবিত্র নামগুলোর উছিলায়, আপনার তাওহীদের সাক্ষী লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর উছিলায়,আপনার বন্ধু ও হাবীব হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর উম্মত হিসেবে আমাদের সকলের মনের নেক ইচ্ছে গুলো পূরণ করে দেন।অভাব,ঋণ দূর করে দিন।
আমার মতো যারা যারা বিপদে আছে তাদের সকল কে তুমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দাও।আমাদের মানসিক কষ্ট,দুঃখ দূর করে দাও।আমাদের রিযিকে বরকত দান করুন।বাবা মা পরিবারের সকলকে নেক হায়াত দান করুন।আমিন।

ফজরের নামাজে রাজিয়া সাথে পুতুল নামাজ পড়তে উঠেছে।খোদার দরবারে মায়ের সাথে সে ওহ মুনাজাতে তুই হাত তুলেছে।আজ জুম্মার দিন।সময় দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে।রাজিয়া,পুতুলের এই বাড়িতে দশ দিন পূর্ণ হলো।আজ মোস্তফা সরোয়ারের বিয়ে।রাজিয়া মন থেকে গভীর দীর্ঘ নিশ্বাস বের হয়।সময়ের সাথে নিজেকেও পরিবর্তন পথে নামিয়েছে রাজিয়া।আজ থেকে স্বামী নামক নরপশুটাকে চিরদিনের জন্য ভুলে যাবে।ভুলে যাবে সাড়ে ছয় বছরের সংসারটাকে।যে সংসার এবং সংসারের মানুষটাকে সে আপন ভেবেছিলো।কিন্তু তাদের আপন সে যখন হতেই পারেনি।তখন তার মধ্যে মায়া,মোহাব্বত শব্দ সে আর রাখতে চায় না।মোস্তফা সরোয়ার তার কাছে মৃত।আজ এবং এখন থেকে জানবে তার স্বামী নেই।সে কোনো এক দূ*র্ঘটনা মারাত্মকভাবে খু*ন হয়েছে।

১৫.
মাথা পাগড়ি,গায়ে পাজামা-পাঞ্জাবি পরে চলো বিয়ের আসনে।পাচঁশত জন লোক আসবে বরযাত্রী সাথে।কিন্তু সেখানে এক হাজার জন লোক এসেছে।বরের মায়ের কথা অনুযায়ী কনে পক্ষ পাচঁশত জনের খাবার আয়োজন করেছে।এখন বাকি পাঁচশত জনের খাবার কথা থেকে দিবে।কনে পক্ষ প্রচন্ড রেগে গেলো।কিন্তু কনের বাবা ব্যাপারটা সামলাতে আবার বাকিদের খাবার তৈরি আয়োজন জন্য লোক নিয়োগ দিল।

নিজেদের ফার্ম থেকে মুরগি ধরে এনে জবাই করে রোস্টের জন্য হাঁড়ি বসিয়ে দিলো।একটা গরু মেয়ে বিয়ের জন্য আনছে।যতটুকু লাগবে ব্যবহার করা হবে।আর বাদ বাকিটুকু এতিমখানা দান করবেন।কিন্তু এত মানুষ আসায়,পুরোটা হাঁড়িগুলোতে জায়গায় দখল করে নিলো।তা ওহ যদি না হয়,কনের বাবা নিজে গরুর মাংস আনতে বাজারের যাবেন।তবু্ও মেয়ের সুখ চান।ছেলেটা গরিব হলে কি হবে?ছেলেটার আচরণ ব্যবহার ভালো।তিনি মেয়ে দেখার দিন ভালো করে যাচাই-বাছাই করে বিয়েতে মত দেন।ছেলের না-কি কোনো চাওয়া নেই।ছেলের মা’ই নাকি ছেলের এবং ছেলের বউ জন্য কিছু জিনিস চেয়েছে।আর সাথে জামাই নতুন ব্যাবসা শুরু করব।তার জন্য পনেরো লাখ টাকা দাবি।মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করেই সব দিতে রাজি হয়েছেন।কিন্তু তিনি হয়তো ভুলে গেছেন।টাকা দিয়ে মেয়ে সুখ নয়।দুঃখের ভাসিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করছেন।মেয়ে তার সুখে থাকবেনা।বরং কষ্ট হবে তার নিত্যদিনের জীবন সঙ্গী।

-;বলছিলাম বেয়াইন সাহেব।খাবার আয়োজন প্রায় হয়ে গেছে।খাবার তৈরি হতে হতে মিষ্টি মুখ করে বিয়ের কাজটা যদি শুরু করতেন।যদিও দোষ তাদের ছিল।তাই নাসিমা বিয়ের দিন কোনো ঝামেলা না করে মত দিল।
বর পক্ষ খাবার না খেয়ে রাজি হলো, আপাতত বিয়েটা মিঠে যাক।তারপরে সবাই পেট ভোজন করবে।

কাজী দুই পরিবারে অনুমতি নিয়ে কাগজপত্র তৈরি করে বর পক্ষ কাছ থেকে সই নিলো।
কন্যার কাছ থেকে সই আনতে যাবে এমন সময় স্বাধীন উপস্থিত হয়।মোস্তফা সরোয়ার স্বাধীনকে দেখে গলার কাঁটা বিঁধলে যেমন করে তেমন করে উঠে।নাসিমা বেগম স্বাধীন দেখে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রয়।তার এত কিছু করা সব বিধা যাবে তা মেনে নিতে পারবেন না।তাই এগিয়ে স্বাধীনকে কিছু বুঝাতে চাইলে স্বাধীন পাত্তা দিলো না।

১৬.
ঘরে এক বউ থাকতেই যে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায়।তাকে কি করা উচিত বলুন চাচা?কনে পক্ষের বাবা হতভম্ব হয়ে যান।কি বলছে এই ছেলে?তার মাথায় কিছু টুকছে না।

-;আপনি বুঝতে পারছেন না তাইতো।আমি বুঝাচ্ছি আপনাকে।স্বাধীন মোস্তফা সরোয়ার গ্রাম থেকে এবং নিজের গ্রাম থেকে প্রায় পঞ্চাশ জন লোক নিয়ে আসছে।তাদের সামনেই বরকে টেনে আসন থেকে নামিয়ে দুই গালে ঠাসস করে চড় লাগায়।

-;এই কুলাঙ্গার আমার বোনের জামাই।যার একটা বউ আছে।একটা ছয় বছরের মেয়ে সন্তান আছে।এমনকি বউটা আবার মা হতে চলেছে।সে আট’মাসের বেশি অন্তসত্বা।তাকে নির্মমভাবে মেরেছে।শুধু মাএ টাকার জন্য।এদের মা,ছেলের এত লোভ চাচা আপনি ভাবতেই পারবেনা।আপনি কার হাতে মেয়ে তুলে দিচ্ছেন?একটু খবর নিয়ে দেখুন।এই আমার সাথে তার গ্রামে বিশজন লোক আসছে।তাদের জিজ্ঞেস করুন।কি নির্মমভাবে তারা বউ নির্যাতন করে?আমার আদরের বোনটাকে পালিয়ে বিয়ে করেছে।আমার মায়ের যত গহনা ছিল সব তার জুয়ার ঘরে হেরে আসছে।

শুধু তাই নয়,আমার বোনটা তাকে ভালোবেসে ছিল ব’লে তার হাত ধরে ঘর ছাড়ে।কিন্তু আজ সেই আদরের দুলারি পরিনতি খুব খারাপ।যে বোনের গায়ে আমি কোনোদিন হাত তোলা দূরের কথা একটা ধমক পর্যন্ত দেয়নি।সে বোনের শরীরের মা’রের দাগ স্পষ্টভাবে ঝলঝল করছে।আমার বোনটার গর্ভে তার অনাগত সন্তান রয়েছে।তা ওহ একটু রেহাই দেয়নি।এতটা নি*ষ্ঠুর আর ব*র্বরত।আমার বোনটা ভালোবাসার অন্ধ হয়ে তারে ভালো পথে ফিরে আনতে চেয়েছিলো।তাদের সাড়ে ছয় বছরের সংসার ছিল।কিন্তু এই ডায়নী মহিলা নাসিমা বেগম আমার বোনকে মারতে ছেলেকে উৎসাহ দিত।এমন একটা দিন যায়না যে টাকা বাপের বাড়ি থেকে আনতে অত্যাচার করে নিই।মা হয়ে কম অত্যাচার করেননি আমার বোনটার ওপর।তার কথায় ছিল বিষ।যা মানুষের বুকটা ছু*রি মতো এসপার ওসপার করতে পারতো।এই দুর্রন্ত মহিলা নিজেকে অনেক চালাকচতুরভাবে।ছেলে নামে জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়া।এমনকি পনেরো লাখ টাকা দাবি সেসব ছেলের বউ নামে মাএ নেওয়া।আসল কথা হলো জুয়া খেলতে নামবে।দিন শেষে যখন হাতে কিছু থাকবে না।তখন আবার বাপের বাড়ি টাকা আনতে নির্যাতন শুরু করবে।এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ মেয়েকে ঠেলে দিবেন।সেখানে অসাধ্যের মত কতগুলো অমানুষে বসবাস।তাদের স্বাথে ব্যবহার হবে আপনার মেয়ে।তারপর দিনের পর দিন মেয়ে নির্যাতন সইতে না পেরে গলায় দড়ি দিবে।তখন পারবেন নিজেকে মাফ করতে।বাপ হয়ে আপনার কি একটু কষ্ট লাগবে না?মেয়ে এই দুনিয়া সুখ পায়নি।আর ওই দুনিয়ায় আজাব হবে গলা দড়ি দিয়ে মরার জন্য।আমার বোন তার একমাত্র মেয়ে আর অনাগত সন্তানের জন্য বেঁচে আছে।এই দুই সন্তান না থাকলে হয়তো কবে হারিয়ে ফেলতাম আমি আমার আদরের বোনটাকে।
আর কেউ ডাকতো না ভাইজান ব’লে।আমি ভাইয় হয়ে বোনের কান্না মুখটা প্রতিদিন দেখি।সে জায়নামাজে বসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কাঁদে।তার এই কান্নার শেষ নেই। তার একটি ভুলের মাশুল তাকেই দিতে হচ্ছে।
আমি পারিনি ভাই হয়ে তার কষ্ট দূর করতে।সে কষ্ট পায়।বাবা হারিয়েছে।ভাই ফিরে ওহ তাকায় না।এতটা মানসিকভাবে তার জীবন কাটছে।

-;এসব মিথ্যে কথা।আমি কিছুই করিনি। এ আমার নামে ষড়যন্ত্র করে এসব বলছে।মা তুমি কিছু বলছো না কেন?

ছেলের কথায় নাসিমা তাল মিলিয়ে ব’লে।

-; হ এই পোলা মিছা কথা কয়!তারা মিথ্যা অপবাদ দিতাছে।আমাগো সুখ সয্য করতে না পাইরা।এরা লোক ভাড়া কইরা আনছে।শুনছে,বড় লোক পরিবারে মাইয়া আনতাছি।তাই এমন অমানবিক কাজ করতাছে।আমি তোমারে জেলে দিমু বান্দর পোলা।আবার আমারে ডায়নি কস।তোর জিহ্বা কাইটা লবণ দিয়া একদম কচকচ কইরা খাইয়া ফালামু।

-;আমি মিছা বলছি না আছা বলতাছি।তা গ্রামের লোক ভালো জানে।কি মিয়ারা আপনার ব’লেন আমি মিথ্যে বলছি?

১৭.
গ্রামের লোক একে একে সত্যি কথা বলতেই নাসিমা বেগমের মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যান।ছেলেকে রেখেই এখান থেকে কেটে পড়ার ধান্দা করে।সবাইকে সামনে ফেলে নিজেকে পিছনের দিকে নিতে শুরু করে।তার পিছানো দেখে স্বাধীন মোস্তফা সরোয়ারকে নিজ গ্রামের লোকের হাতে তুলে দেন।দৌড়ে এসে নাসিমা বেগমের হাত ধরে ব’লে।

-;এই-যে আপনি কোথায় পালাচ্ছেন?আপনি তোও এই সকল নাটের গুরু।আপনি না থাকলে হবে।নাসিমা বেগমকে কনের মায়ের হাতে তুলে দিতেই সকল মহিলা মিলেই উত্তম পাত্তম দিতে শুরু করে।ঐদিকে মোস্তফা সরোয়ারকে দুই গ্রামের মানুষ মে’রে পাজামা,পাঞ্জাবি ছিড়ে ফেলছে।মাথা টুপি মারের চোটে কোথায় পড়ছে খবর নেই।কনে পক্ষের মধ্যে থেকে কয়েকজন জুতা ছুড়ে মারে।তাদের নিশানা মতো মোস্তফার গালে আর মুখে জুতা পরে।পিছন থেকে মেয়েরা ঝাড়ুর বারি দিয়ে ভাঙ্গা কোমড় আরোও ভেঙে দেয়।পাবলিকের এমন গণধোলাইয়ের কথা সারাজীবন মনে রাখবে মা,ছেলে।

সেই কখন স্বাধীনের কথা শুনে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে বসে পড়েন কনের বাবা আলতাফ হোসেন।মেয়ে সুখ দেখতে গিয়ে মৃত্যু ডেকে আনছিলেন।এই ছেলেটা ঠিক সময় না আসলে হয়তো এর থেকে বড় সর্বনাশ হয়ে যেতো।আল্লাহ ঠিক সময় তাকে হয়তো পাঠিয়ে দিয়েছেন।কিন্তু এদের মা,ছেলেকে এত সহজে ছাড়া যায় না।এদের শাস্তি পেতে হবে।আলতাফ হোসেন ভাতিজাকে ফোন লাগাতে বলেন।এরমধ্যেই পুলিশকে খবর দেওয়া হলো।

-;সবাই থামুন।এদের পুলিশে দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।

আলতাফ হোসেন মোস্তফা সরোয়ার সামনে এসে পায়ের জুতা খুলে দুই গালে আর পিঠে ঠাসস,ঠাসস করে বারি মেরে বলল,

-;ধোঁকাবাজের শাস্তি এটা।তোর মতো জা*নোয়ারদের হাতে আমার মেয়েকে তুলে দেওয়ার থেকে ঘরে বসিয়ে রাখা অনেক ভালো।এই কে আছিস,একে উল্টো করে গাছের সাথে বাঁধ।পুলিশ না আশা পর্যন্ত এভাবে থাকুক।আর এই মহিলাকে তোমরা মেয়েরা ঘরে মধ্যে আটকে রাখো।

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৬
১৮.
আলতাফ হোসেন এগিয়ে এসে স্বাধীন এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল।
-;তোমাকে কি ব’লে ধন্যবাদ দিবো?আমি সত্যি জানি না।আজ তুমি আসায় হয়তো আমি আমার মেয়েকে শয়তানটার হাত থেকে বাঁচাতে পারলাম।

-;আমি যখন জানতে পারলাম।আমার বোনের জামাই।বোনকে মেরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে নতুন করে আবার বিয়ে করছে।তখন রাগ হয়।আমার বোনের জীবন নষ্ট করে। আরেকটা মেয়ে’র জীবনে নরক আনতে চলেছে।তাই চুপচাপ বসে থাকতে পারিনি।গ্রামের লোকদের নিয়ে এসে বিয়েটা বন্ধ করা দরকার ছিল।নিজের বোনকে রক্ষা করতে না পারলেও আরেকটা মেয়ে কে রক্ষা করতে পেরেছি।আর এতেই আমার কিছুটা শান্তি লাগছে।এরমধ্যেই পুলিশের জিপ গাড়িটা হাজির হলো।আলতাফ হোসেন বাড়ির উঠোনে।মোস্তফা সরোয়ার এবং তার মা’কে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছে।নারীর নির্যাতনে কেস করেছে স্বাধীন।আলতাফ হোসেন কনে পক্ষকে মিথ্যে ব’লে বিয়ে নামে ছলনা।আর যৌতুক জন্য মামলা দায়ের করেন।এখন মা, ছেলে জেলে পঁচে মরবে।

মা,ছেলের কাজ সমাপ্ত করে বাড়ির পথে রওনা হয়।বাড়িতে পা রাখতেই দেখতে পায়
রেনু অপেক্ষা করছে।

-;আপনি সারাদিন কোথায় ছিলেন?সকাল দশটায় বেড়িয়েছেন।বেলা গড়িয়ে রাত প্রায় শেষের দিকে।তবুও আপনার খবর নাই। আপনার জন্য চিন্তায় চিন্তায় আমার হাত,পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো।

-;শান্ত হও তুমি!আমি ঠিক আছি।একটা কাজ ছিল তাই বেড়িয়ে গেছিলাম।কাজটা শেষ করে আসতে এতটা দেড়ি হয়েছে।খাবার সাজাও।আমি কলপাড়ে হাত মুখ ধৌত করতে গেলাম।

রেনু খাবার সাজিয়ে দিতেই স্বাধীন বিসমিল্লাহ ব’লেই খাবারটা তৃপ্তির সাথে খেতে লাগলো।স্বামীর এত আনন্দের সাথে খাবার খাওয়া দেখে নিজেই অবাক হয়ে প্লেটে দিকে একবার তাকায়।আরেকবার স্বামীর দিকে তাকায়।প্লেটে সাদা ভাত,লাল শাক ভাজি,আর ছোট ছোট টেংরা মাছের ঝোল।এত স্বাদ করে কখনো খাবার খেতে দেখেনি।কিন্তু আজ কি হলো এমন?স্বাধীন খাবার শেষ করে বউ দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা মুচকি হাসি উপহার দিল।এর মানে খাবারটা দারুণ হয়েছে।স্বামীর তৃপ্তির খাওয়া দেখে রেনুর কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে যায়।

১৯.
রাজিয়া ঘুমিয়ে আছে।স্বাধীন বোনের কপালে চুমু একে দরজাটা লাগিয়ে চলে যেতেই রাজিয়া চোখ খুলে।

-;ভাই এতো রাতে আমার ঘরে কি মনে করে? কপালে হাত স্পর্শ করতেই মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার কথা।রাজিয়া ঘুমের মাঝে যখন থাকে।ভাই তখন প্রতিদিন সকালে কপালে চুমু একে বলতো।

যত বিপদে পড়োনা কেন?মনে রাখবে তোমাকে আগলে রাখতে,তোমার সব বিপদে ঠাল হয়ে থাকতে তোমার ভাই আছে।সে ছিল।আর ভবিষ্যতেও থাকবে।

তারমানে ভাইটার ধারালো লোহার মতো মনটা তার জন্য একটু একটু করে নরম হচ্ছে।আবার আগের পুরনো রুপে ফিরছে।রাজিয়া খুশিতে দুই চোখের পানি গাল বেয়ে ঝড়ে পড়ে।শত কষ্টের মাঝেও এটুকু সুখ ধরা দিলো।আজ নিশ্চিতে একটা শান্তির ঘুম দিবে।

নভেম্বর মাস চলছে।এই মাসেই একেবারে শেষের দিকে রাজিয়া ডেলিভারি পড়ছে।ডাক্তার কাছে নেওয়া কথা।সেসব সবটাই ঠিক করে রাখা হয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ করে রাজিয়া কলপাড়ে পা পিছলে পড়ে যায়।স্বাধীন ক্ষেতের কাজের জন্য বের হতে নিলেই কিছু পরে যাওয়ার শব্দ পেয়ে দৌড়ে আসে।চোখের সামনে বোনকে ব্যাথায় কাতরাতে দেখে কলিজা কেঁপে ওঠে।রক্তের স্রোতে ততক্ষণে মেখে যাচ্ছে কলপাড়।স্বাধীন মাথার গামছা খুলে বোনকে জড়িয়ে কোলে তুলে সদর হাসপাতালে দিকে দৌড়ে যাচ্ছে।

হাসপাতালে ব্যানগাড়িতে করে রাজিয়াকে আনার পথেই জ্ঞান হারিয়েছে।তার অবস্থা খুব খারাপ।যে ডাক্তার রাজিয়াকে এর আগে দেখছিল।তিনিই স্বাধীনকে বলল,

-;রোগীর অবস্থা খুব একটা ভালো না।আমাদের ইমারজেন্সীতে নিতে হবে।মা,এবং সন্তান দুইজন বিপদের মুখে।আল্লাহ ওপর ভরসা রাখুন।ডাক্তার কথা শুনে স্বাধীন ঢোক গিলে।কি বলছে ডাক্তার?তার বোন বাঁচবে তো!

২০.
এক সেকেন্ডের নাই ভরসা।
দুই দিনের দুনিয়ায় মানুষ করে
কতই না রং তামাশা।
চোঁখ বুঝিলে দুনিয়া আঁধার।
তবু ও মানুষ করে কতই না অহংকার।
সাদা কাঁপড় পঁড়ে একাকি থাকবে কবরে।
তবু ও মানুষের মন থাকে টাকার নেশায় পঁড়ে।

বড়ই পাতার গরম জলে গোসল করানো হচ্ছে।বাড়ি চারদিকে আগরবাতি,ধুপকাঠির সুগন্ধে ভরে গেছে।তেরপাল টানিয়ে মহিলারা রাজিয়ার শেষ গোসল করিয়ে দিচ্ছে।

মিস্টার স্বাধীন আপনার বোন একটি ছেলে সন্তান জম্ম দিয়েছে।

-;ডাক্তার আমার বোন কেমন আছে?

-;পা পিছলে পরার কারণে মারাত্মকভাবে আঘাত খেয়েছেন।যার জন্য তার শরীর থেকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।আমরা হাজার চেষ্টা করে ওহ তার রক্ত পড়া বন্ধ করতে পারিনি।উনি বাচ্চা জম্ম দিয়ে অপারেশন রুমে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।আই এম সরি মিস্টার স্বাধীন।সি ইজ ডেইড।

বোনের মৃত্যু খবর কানে আসতেই দৌড়ে ছুটে যায় অপারেশন রুমে।কি সুন্দর চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে,তার আদরের একমাত্র বোন।যে আর কোনোদিন ভাইয়া ব’লে ডাকবে না।বলবেনা,ভাইয়া আমাকে মাফ করে দেও।আমি ভুল করেছি।সে সাধের এই দুনিয়া ছেড়ে পরপারে পারি দিয়েছে।একটিবার ভাবলো না।তার আদরের সন্তানদের কি হবে?কতটা কষ্ট বুকের মধ্যে জমা রেখে দুনিয়ায় মায়া ত্যাগ করলো।আহা এমন মৃত্যু কেন দিলে খোদা?

সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে রাজিয়াকে যখন খাটে শুয়ে রাখা হলো।ছোট পুতুল মায়ের মুখে হাত দিয়ে ডাকছে।তার চোখে কতটা আকুলতা।চোখ বেয়ে ঝড়ে পড়ছে পানি।একবার মামা দিকে ছুটে যাচ্ছে।আরেকবার মায়ের গায়ে সাদা কাপড়ের অংশ ধরে টানছে।তার মায়ের গায়ে এমন অদ্ভুত পোশাক কেন?এই কাপড়ে মা’কে কোনোদিন সে দেখে নিই।তার মা তার ডাকে কথা বলছে না কেনো?ভিতরের ঘর থেকে একটি শিশুর কান্না ভেসে আসছে।সে শিশু মায়ের ভালোবাসা পেলো না।তার চিতকার করে কান্নার শব্দ কাঁপিয়ে দিচ্ছে রাজিব হকের বাড়ির ভিটা।স্বাধীন কান্না করছে।তার মন কিছুতে মানছে না।এসব মিথ্যে হোক।তার বোনটা ফিরে আসুক।বোনের প্রতি আর রাগ করে থাকবেনা।কিন্তু না,সে ভাই কিংবা আদরের সন্তানের ডাক।কারো ডাকেই সে সাড়া দিচ্ছে না।

২১.
আপনি শান্ত হন।আপনি এভাবে কাঁদলে ওদের কে শান্ত করবে।আপনি ছাড়া ওদের এই দুনিয়ায় কেউ রইলো না।আপনি ওদের ওপর ভরসার হাত।রাজিয়া জানাজা পড়াতে হবে।এভাবে মাটির ওপর বেশিক্ষণ রাখা ঠিক নয়।তাকে যত তাড়াতাড়ি কবর দিবেন।তার আজাব তত কম হবে।আপনি নিজেকে একটু শক্ত করুন।স্বাধীন মাথা নাড়িয়ে চোখের পানি মুছে ঘরে দিকে ছুটে যায়।স্বামীর এমন চলে যাও তাকিয়ে দেখে রেণু।একটু পর স্বামীর কোলে রাজিয়া সন্তানকে দেখা যায়।সে উঠোনে রাজিয়া কোলের উপরে বাচ্চাটা রাখতেই কান্না একটু একটু করে কমে আসে।সে মায়ের বুকে চুপচাপ হয়ে গেলো।পুতুল একবার ছোট বাচ্চাটাকে দেখে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে পাশের মহিলা ছাড়ে না।তারা পুতুলকে ধরে রেখেছে।মায়ের জন্য মেয়েটা পাগলামি করছে।তাকে থামানো কষ্ট কর।

মায়ের পরশ পেয়ে দুধের শিশু ঘুমিয়ে গেছে।স্বাধীন বোনের কোল থেকে ভাইগ্নাকে নিয়ে রেনু’র আরেক হাতে সপে দিলো।দুই ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছে রেণু।সে চোখের পানি লুকিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা করছে।

আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসূলুহু।কালিমা শাহাদাত পড়তে পড়তে স্বাধীন বোনের লাশ কাঁধে তুলে নিলো।তার সাথে আরো কিছু লোক একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।মা’কে কাঁধে নিয়ে চলে যেতে দেখে পুতুল পাগল হয়ে উঠেছে।মা’কে কিছুতেই যেতে দিবেনা।সে মা’কে চায়।তার মা’কে নিয়ে সবাই কোথায় যাচ্ছে?তার মায়ের সঙ্গে তাঁকে কেন নিলো না?তাঁকে কেন ফেলে গেল।পুতুল গলা ফাটিয়ে চিতকার করতে চায়।কিন্তু মুখ দিয়ে একটি শব্দ বের হয়না।তার দুই চক্ষে তৃষ্ণা।তার মা’কে না পাওয়ার কষ্টে মাটিতে কপাল দিয়ে একেপর এক আঘাত দিতে থাকে।পা দিয়ে মাটিতে কই মাছের মতো দাপাদাপি করে।কিন্তু তাঁকে একজন মহিলা সামলাতে পারছেনা।সে আরেক মহিলার সাহায্যে ছোট বোবা মেয়েটিকে ঘরে রেখে বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়।পুতুল দরজা ধাক্কা সে মা যাবে।কিন্তু কেউ তার ডাক শুনলো না।মা মা করতে করতে মাটিতেই বেহুশ হয়ে পড়ে রইলো।তার খবর কেউ নিলোনা।মা,বাবা ছাড়া পুতুল মেয়েটির জীবনটা কেমন হবে?

চলবে…..

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৭
২২.
রাজিয়া নেই সাতদিন পার হয়ে গেছে।পুতুল স্বাভাবিক হয়নি।সে বিছানায় জ্বরে পুড়ছে।রেণু ছোট ছোট দুই বাচ্চা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।তার ওপর পুতুলের জ্বরটা কোনোভাবেই কমছে না।ওষুধে কোনো কাজ করছে না।মেয়েটা জ্বরে ঘোরে মা’কে খুঁজে।মা ছাড়া তার দুনিয়ায় অন্ধকার।নরম তুলতুলে শরীরটা শুকিয়ে গেছে।চেহারা তার বিষাদের ছায়া।

-;মেয়েটি এভাবে থাকলে মরে যাবে।আপনি দেখেন কিছু করতে পারেন কি-না!স্বাধীন মাথা নাড়িয়ে ব’লে দেখছি।

স্বাধীন দুপুর বেলা ছোট ঘুমন্ত শিশুটিকে নিয়ে পুতুলের সামনে গেল।পুতুল বিছানায় চুপচাপ হয়ে পড়ে আছে।স্বাধীন খাটে একপাশে বসে ডাকল।

-;আম্মা…আম্মা।দেখো কারে নিয়ে আসছি তোমার কাছে।পুতুল আম্মা দেখ।

পুতুল চোখ মেলে একটু তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলো।এর মানে সে তাকাবে না।তার ভালো লাগেনা।কিন্তু স্বাধীন চুপচাপ হয়ে থাকলো না।ছোট বাচ্চাটাকে পুতুলের পাশে নিয়ে সুয়ে দিয়ে বলল।

-;ভাইয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আম্মা।তুমি ছাড়া ওর কে আছে বল?তুমি ওর বোন।তোমার কাছে মায়ের গন্ধ পায় ব’লে।রোজ রাতে তোমার বিছানায় তোমার পাশে রেখে যাই।কিন্তু তুমি জ্বরের ঘোরে বলতেই পারোনা।সে মায়ের মতো বড় বোনকে কাছে পেয়ে শান্তিপ্রিয় হয়ে গেছে।তোমাকে পেলে সে একদম নিরবতা পালন করে।এটাই তো বোনের প্রতি ঠান,মায়া,ভালোবাসা।তুমি মুখ ঘুরিয়ে নিলে ভাইটা যাবে কার কাছে?তুমি কি চাও?তোমার ভাইয়া তোমার মায়ের মতো দূরে চলে যাক।ভাইকে একটু আদর কর।

পুতুল উঠে বসতে চেষ্টা করে।কিন্তু শরীর দূর্বল দেখে বসতে পারেনা।আবার বিছানায় পড়ে যায়।স্বাধীন,পুতুলকে উঠিয়ে পেছনে একটা বালিশ দিয়ে খাটে বসালো।ছোট ছোট নরম হাত দুটি বাড়িয়ে দেয়।যার মানে সে ভাইকে কোলে নিবে।স্বাধীন কোলে তুলে দিতেই টুপ করে একফোঁটা পানি ভাইয়ের চোখে পাতায় পড়ে।আর অবুঝ শিশুটি বোনের কোলে এসে কি সুন্দর চোখ মেলে তাকিয়ে রয়।হাত,পা নড়াচড়া করছে।দেখে মনে হচ্ছে।সে সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে রয়েছে।এই সুন্দর মুহূর্তটা দেখে স্বাধীনের পুরনো কথা মনে পড়ে যায়।সে চোখের পানি লুকিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা করছে।এই তো সেই দিন।বাবা তাকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়িতে আসতেই শুনতে পায়।ছোট একটি শিশুর কান্না।যে চোখ বুঝে কান্না করে সারা বাড়ি মাথায় তুলতো।বাবা তার হাতে ছোট নরম তুলতুলে শরীরটা তুলে দিয়ে বলেছিল।

-;স্বাধীন।এটা তোমার বোন।তাকে মাথায় তুলে রাখবে।

হ্যা,স্বাধীন বোনকে কোলেপিঠে মানুষ করেছে।মাথায় পর্যন্ত তুলে রেখেছে।মাটিতে বোনকে সহজে রাখেনি।মাটির পিপড়াই যদি তার বোনকে কামড়ে দেয়।আজ সেই বোনটা কোথায় সুয়ে আছে?সাড়ে দিন হাত মাটির ঘরে।

২৩.
জিহান লালটা না কালাটা ধর।আজকেই এইটারে চিকেন ফ্রাই করুম।পার্টি হবে মামা।
লাল মুরগী ছেড়ে কালোটা ধরতে গেলে হাতের মধ্যে ঠুকরে কুক..কু..রুক্কু করে উঠে।বাড়ি ভিতর থেকে চোর চোর ব’লে রমেশ রায় দৌড়ে ছুটে আসে।কালোটা শব্দ করতেই অর্পণ,জিহান,রিহান তিনটা উঠে পরে দৌড়।

-;অর্পণ ভাই আজকে গেছি।মুরগী চুরি করতে গিয়া ধরা খাইলাম।আজকে শেষ।এতখনে রমেশ রায় মনে হয় বাড়িতে বিচার পাঠিয়ে দিয়েছে।

রমেশের বাচ্চাটা যদি আজকে বিচার দেয়।তাইলে ওর খবর আছে।

চেয়ারম্যান সাহেব,চেয়ারম্যান সাহেব বাড়িতে আছেন না-কি!রাতের বেলা চেয়ারম্যান বাড়ি দুয়ারে কয়েকজন লোক হাত,পা ভাঙ্গা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

-;আপনার পোলায় তার বাদর ভাইদের নিয়ে আমার পেয়ারা বাগানে গেছিল।আমার গাছের সকল পেয়ার চুরি করছে।আমি বাঁধা দেওয়া।আমার কপালে,মুখে পেয়ারা মারছে।দেখেন আমার অবস্থা।

-;আমার গাছের ডাব চুরি করছে।গাছে উঠে সকল ডাব পারছে।আমি বাধাঁ দেওয়া।আমার গাছের ডাব দিয়ে আমার হাত,পা ভাঙ্গছে।

-;আমার পুকুরের মাছ চুরি করছে

-;আমার মুরগী চুরি করতে গেছিলো।তারে স্ব চোখে দেখছি।সে আমারে দেইখা পালায়ছে।

চেয়ারম্যান সাহেব গম্ভীর স্বরে ব’লেন।আর কার কি ক্ষতি হয়েছে?

-;মসজিদের নামাজ পড়ে বের হতেই দেখি আমাদের সবার জুতা নেই।কে নিয়েছে জানি না?আমি মসজিদের ইমাম আজকে গঞ্জের বাজারে গেছিলাম।আর সেখানে আপনার অসভ্য ছেলে তার ভাইদের নিয়ে জুতা বগল থাবা করে বিক্রি করছে।এক জোড়া জুতা আশি টাকা।আমি আমার আগের জুতার মতো এক জোড়া জুতা কমে পেয়ে কিনে নিলাম।বাসায় এসে দেখি আমার জুতা আমার কাছেই আসছে।মাঝখানে আশি টাকা গেলো।আমি এর বিচার চাই।

সবার অভিযোগ শুনে রাগে কপাল চাপড়ান অসিম তালুকদার।আর ছেলেকে বকতে থাকেন।ছেলেটাকে নিয়ে সে কি করবে?এমন তেরামি সে যদি তার বাপের আমলে করতো।মেরে পিঠের ছাল তুলতো।আর এই তার গুণধর ছেলে বাপের নামডাক সব ডুবিয়ে ছাড়ছে।আজকে বাসায় আসুক ওর খবর আছে।

সবাইকে জরিমানা দিয়ে বাড়িতে ঢুকেই বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

-;হতচ্ছাড়া বাড়িতে পা রাখলেই আমাকে ডাক দিবে।ওহ কি পেয়েছে?প্রতিদিন এসব বদনাম করবে।আর আমি সব মেনে নিবো।

-;আহা আপনি রাগ করছেন কেন?ওহ বাচ্চা ছেলে।এই বয়সে দুষ্টুমি করবে না তো।তাহলে কবে করবে?আপনার মতো বুড়ো বয়সে।

-;রাবেয়া,আমার মাথা গরম করবে না।বেশি বাড় বেড়েছে তোমার ছেলে।তুমি ওকে আল্লাদ দিয়ে মাথা তুলেছো।তোমার জন্য ছেলের এই অত পতন।

-;আপনি,আপনি এত বড় কথাটা বলতে পারলেন।দশটা না পাচঁটা না।আমার একটা মাএ সন্তান।আমি একটু বেশি আদর করি।তাই ব’লে আমি ওকে আল্লাদ দিয়ে মাথায় তুলেছি।আমি কালই বাপের বাড়ি চলে যাব।থাকবো না এই সংসারে।এই সংসারের লোক আমার আর আমার ছেলের সুখই সয্যই করতে পারেনা।রাবেয়া স্বামীর ওপর অভিমান করে দরজা লাগিয়ে বসে কাঁদতে লাগলো।

-;ভাইজান,ভাবি রেগে গেল।

-;সাফিন,বাদ দেও তোমার ভাবীর কথা।সে এমনই,ছিদকাদূনী মহিলা একটা।
তিন বাঁদরকে ধরে নিয়ে আসো।এদের একটা ব্যাবস্থা করতে হবে।

-;জি,ভাই।আমি খোঁজ নিচ্ছি।

দোস্ত তোরা পালা।সাফিন চাচা তোদের তিনটারে খুঁজতাছে।একবার হাতের কাছে পাইলে খবর আছে।চেয়ারম্যান সাহেব আজকে তার বাপজান অর্পণ এর ওপর বেশি খ্যাপা।

-;আমার নামে বিচারটা কে দিলো সেটা আগে বল?

-;মনে হয় রমেশ রায়।

-;রমেশের বাচ্চা তোর খবর আছে!

-;রমেশের খবর পরে কর!আগে পালা।বন্ধুু সাফাত থেকে খবর পেয়ে তিন ভাই নদীতে ঝাপ দিয়ে নদীর ওপারে রোহিতপুর গ্রামে দিকে সাঁতরে যেতে লাগল।নদীর পানি কমে যাওয়া অতটা গভীর নয়।নদীর মাঝেই একটু বেশি পানি।আর কিনারায় কোমড় সমান পানি।

২৪.
রাতের বেলা ভাইকে নিয়ে বসে আছে পুতুল।তার জ্বর কমতে শুরু করেছে।হারিকেন আলো প্রায় শেষের দিকে।চোখটা ঘুমের জন্য মেলে রাখায় দায়।রাতে মামী জোর করে দুই লোকমা ভাত তুলে খাইয়েছে।এরপর ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে।এখন একটু ঘুমাতে পারলে বেশ শান্তি লাগবে।কিন্তু তার ঘুমটা গভীর হওয়ার আগেই ছাগলের ডাক কানে ভেসে আসে গোয়াল ঘর থেকে।এমন সময় ছাগলগুলো ডাকছে কেন?মামা বাসা নেই।মামী তার রুমে বাবুকে ঘুম পাড়াতে গেল।মনে হয় চোখ লেগে গেছে তাই কিছুই টের পায়নি।পুতুল ভাইয়ের ওপর একটা কাঁথা দিয়ে দিলো। দরজাটা খুলে মাথাটা একটু বের করে আবার ভিতরে ঢুকিয়ে নেয়।বাহিরে চাঁদের আলোয় কিছুটা পরিষ্কারের মধ্যে কেমন যেন অদ্ভুত দৃশ্যতে চোখ আটকে যায়।ছাগলের রশি ধরে টানছে দুই অদ্ভুত লোক।তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত গাছ লতাপাতা দিয়ে ঢাকা।এটা আবার কি জিনিস?পুতুল ভেবে পায়না।একজন তার আদরের রাণীকে কাঁধে নিয়ে হাটতে দেখে নিজের পায়ের জুতা খুলে রাগে ঝুড়ে মারে।মুখের ওপর ছোটো একটা জুতা দেখে উহু শব্দ করে উঠে অর্পণ।তার মুখের ওপর এমন লিলিপুট জুতাখানা কে মারলো?পুতুল ভয় না পেয়ে আদরের রাণীকে কোলে নিয়ে তার ঘরে ঢুকেই দরজাটা ঠাসস করে লাগিয়ে দেয়।দরজার শব্দে রেনু’র ঘুমটা ভেঙে যায়।ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।ততখনে তিন ভাই ছাগল রেখেই হাওয়া।

পুতুল রাণীকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।রাজিয়া সাথে এই বাড়িতে তার থাকার পঞ্চম দিনই রানীর জম্ম হয়।ছাগলের বাচ্চার নামটা তার মায়ের দেওয়া।রানী।তাই এটার প্রতি তার মনটা একটু বেশিই নরম।

অর্পণ ঠোঁট ধরে পুকুর পাড়ে বসে সমানে দুই বেনীওয়ালিকে বকে যাচ্ছে।

আজ পর্যন্ত কেউ তাকে একটা থাপ্পড় মারেনি।সেখানে কি-না এই লিলিপুট একখানা জুতা ছুড়ে মারে।তাও আবার কাকে?মিষ্টার অর্পণ তালুকদারকে।এই লিলিপুট জুতার মালিককে আমি দেখে নিবো।অসভ্য মেয়ে মানুষ।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে