চক্ষে আমার তৃষ্ণা পর্ব-৪৯+৫০+৫১

0
344

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৯
১৩৭.
চালের গুড়ার রুটি সাথে গরুর গোশত স্বাদ অসাধারণ।অর্পণের খুব পচ্ছন্দের।তাই চারটা টা রুটি এবং বাটির অর্ধেক গরুর গোস্ত এর সাথে খেয়ে নিয়েছেন।বাকিটা পুতুলের জন্য রেখে গেছে।পুতুল,চুপচাপ দেখে মুচকি হাসি দিলো।আজ পবিত্র শবেবরাত।আল্লাহ নাম নিয়ে বাহিরে সব পুরুষরা গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তে গেছে।আর মহিলা সবাই বাড়িতে ওযু করে নামাজ দাঁড়িয়ে গেলো।

শবে বরাত হলো মুসলমানদের জীবনে অত্যন্ত ফযিলতপুর্ন একটি উৎসব।এ রাত ক্ষমা লাভের বা নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার একটি রাত।এ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ডাকে সারা দিতে চতুর্থ আসমানে নেমে আসেন।শবে বরাত মূলত হিজরী সালের শাবান মাসের পনের তারিখে।এটি মুলত ইসলামি বছরের অষ্টম মাস।সারা বছরে একবার মুসলমানদের মাঝে এই উৎসবটি পালিত হয়। শবে বরাতের মুসলিমরা দিনের রোযা পালন করে এবং রাতে সারারাত ধরে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকে। যেহেতু শবে বরাত মুসলমানদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা রাত সেহেতু সবার উচিত এ রাত টি আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে দেওয়া। তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনের সব ভুল গুলো ক্ষমা করে দিয়ে আমাদেরকে তার প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করে দিবেন।

নামাজ শেষ হতেই রাতের একটার সময় অর্পন,স্বাধীন,মিলন,সাজু,বাড়িতে পা রাখে।রিফাত এখনো সুস্থ হয়নি।তবে ঘরে শুয়ে সে-ও হালকা জিকির এবং দোয়া,দূরদ পাঠ করতে থাকে।স্বামী ঘরে পা রাখতেই পুতুল নামাজের সালাম শেষ করে মোনাজাতে দুই হাত তোলে।তার বিরবির করে কথাবলার চেষ্টা সবটাই নজরে পড়ে।পুতুল জানেও না।তার ডানে তার স্বামী দাঁড়িয়ে তাঁকে অনেকখন পরক্ষ করছে।

সকালে কাক ডাকা ভোরের জেগেছে অর্পণ।ফজরের নামাজ পড়ে এসে মাঠে গেছে লুঙ্গি পরে।অনেকদিন হলো অভ্যাস নেই।আবার নতুন করে লুঙ্গি পড়ায় হিমশিম খাচ্ছে।তবুও আজ ক্ষেতে নামল।সেখানে স্বাধীন ভুট্টা ক্ষেতে দাঁড়িয়ে গরুর জন্য ঘাস কাটছে।অর্পনকে এখানে আশা করেননি।এই ছেলে এখানে কি মনে করে?স্বাধীন ঘাস কা*টা বন্ধ করে এগিয়ে আসে।

-;কিছু বলবে তুমি।

অর্পণ লুঙ্গিটা হাঁটু অবধি টেনে কোমড়ে গিট্টু মেরে কাচি নিয়ে সে-ও ঘাস কা*টতে লাগল।
অর্পণ চুপ থাকায়।স্বাধীন চুপ করে কাজে মনযোগ দিলো।কাজের এক ফাঁকে অর্পণ বলল,

আমি পুতুলকে নিয়ে লন্ডনে যেতে চাই।ওর ডাক্তারি পরীক্ষা জন্য।এবং আরেকটি কারণ আছে?

কি কারণ?

পুতুল কানে শুনতে পায়।কিন্তু মুখে বলতে পারে না।আপনি আপনার মতো করে অনেক চেষ্টা করেছেন।এবার আমি তার স্বামী হিসেবে আরেকটিবার শেষ চেষ্টা করতে চাই।যদি আল্লাহ তায়া’লা রহম করেন।সবটা ঠিক হবে ইনশাআল্লাহ।

অর্পণের কথায় স্বাধীনের হাত থেমেছে।ওর দিকে তাকিয়ে রয়।মেয়েটা নিজের পরিচয় গড়ুক তাতে আপত্তি নেই।কিন্তু পুতুল কি কোনোদিন কথা বলতে পারবে?ওকে আগেই আশা দেওয়া ঠিক হবে?পরে যখন ভালো কিছু না হবে।ওর মন ভেঙে যাবে।ওহ কষ্ট পাবে।

অর্পণ ঘাস কাটতে কাটতে আত্ম বিশ্বাসের সাথে বলল।কিছু হবে না।বরং সবকিছু ঠিক হবে।আমার ওপর ভরসা রাখুন।

সেটাই তোও ভয়ের কারণ!আমি তোমাকে ভরসা করব কি করে?তুমি তোও তোমার ছোট্ট মামার আদরের ভাগ্নে।

স্বাধীনের কথায় অর্পণ এর হাত কয়েক সেকেন্ড জন্য থামালেও আবার কাজ করতে করতে বলল,

সে সম্পর্কে আমার মামা হলেও আমি তাকে মামা হিসেবে মানি না।যে অন্যের ক্ষতি করে আনন্দ পায়।সে কখনোই ভালো মানুষ হতে পারে না।যার একদিন পরের ক্ষতি করতে হাত কাপেঁ নিই।সে নিজের পরিবারকে কতটা ভালো রাখবে।হ্যা,আমি মানছি।আমার শৈশব একটু অন্য রকম কে*টেছে!আমি আর দশটা বাচ্চাদের মতো নই।একটু দূরন্ত এবং চটপটে ছিলাম।ভুলভাল কাজ কর্ম যেমন করতাম।তেমনই আব্বু হাতে খুব বকা এবং মা’র খেতাম।সময়ের সাথে সেসব বদলেছে।আমি আর ছোট্ট নেই।এখন বড় হয়েছি।দায়িত্ব কি? সেটা বুঝতে শিখেছি।এখন মা,বাবার পাশাপাশি আমার একটা মিষ্টি বউ আছে।যার ভালো থাকাতেই আমার স্বস্তি।আমার অন্য রকম শান্তি।তারজন্য বুঝতে শিখেছি ভালোবাসা মানেটাকে।তার ছোঁয়া আমার এই আমিটাকে বদলে নিয়েছি।বাকি যে বদ মেজাজ রয়েছে সেটা তার সঙ্গপর্ণে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

আমি দুই,একদিনের মধ্যে আমার এবং পুতুলের জন্য পার্সপোট তৈরি করতে কাগজপত্র অফিসে জমা দিতে যাব।পার্সপোট দ্রুত তৈরি করা জন্য বলব।তারা আজেন্ট পনেরো দিনের মধ্যে করে দিবে।অর্পণ হাতের কাজ শেষ করে ভ্যানগাড়িতে সবটা তুলে দিলো।লুঙ্গির গিট্টু খুলে নামিয়ে নিলো।চললাম।

কল চাপার শব্দে পুতুল ঘরের জানলা দিয়ে উঁকি দিতেই দেখতে পায়।অর্পণের ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে।মনে হয় রোদের মধ্যে ছিল।পুতুল হাতে করে গামছা নিয়ে এগিয়ে যায়।অর্পন হাত মুখ ধুয়ে নিতেই পুতুলকে সামনে দেখতে পায়।গামছাটা এগিয়ে দিতেই চুপচাপ নিয়ে সেটা দিয়ে মুখ এবং হাত,পা মুছতে লাগল।

১৩৮.
মিলন তুমি বল তোও বড় হয়ে কি হতে চাও?

স্যার,আমি বড় হয়ে বিয়ে করতে চাই?

কি?

হ্যা,স্যার।আমার মা,বাবার জন্য একটা লাল টুকটুকে বউ আনতে চাই।

আমি বিয়ের কথা বলিনি।বলছি,বড় হয়ে কি হতে চাও।মানে পুলিশ,ডাক্তার,ইন্জিনিয়ারি আরকি?

কেনো স্যার?আমি ওগুলো হব কেন?পুলিশ হলে তোও পাবলিককে বিনা কারণে মে*রে মে*রে জেলে দিবো।এসব ফালতু কাজে হাত চুলকায় বেশি।আর পাবলিক আমায় এসবের জন্য ডিটারজেন্ট পাউডার ছাড়া ধুয়ে দিবে।আর যদি ডাক্তার হতে যাই।একবার ভাবুনতো,রোগীর মুখ বন্ধ।আমার হাত চলবে বেশি।একশ বিশটা সুই লাগাবো।সেটা কোথায় আর কোথায় ফেলবো আমি নিজেই জানিনা।যার ওপর সুঁইয়ের বর্ষণ চলবে।সে না পারবে কাউকে বলতে আর না পারবে দেখাতে।এবার ভাবুন কোথায় কোথায় পড়বে?আর ইন্জিনিয়ারিং পড়লে অটো পাশের মতো উল্টো বিল্ডিং বানাবো।যার না থাকবে দরজা আর না থাকবে সিঁড়ি।

তাহলে তুমি বিয়ে করবে?

হ্যাঁ,অবশ্যই করব।

বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কি?

কেন,আমি যা খাব তাই খাবে।

আরে বাবা,তুমি এখন তোমার বাবার টাকায় খাচ্ছো,পড়ছো,ঘুমাচ্ছ।তাঁকে কি করবে?

সে যেহেতু আমার বউ হবে।তাহলে সে-ও আমার মতো আমার বাবা-র টাকায় খাবে,পড়বে,ঘুমাবে।

আরে,আমি বলতে চাইছি।তুমি নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে তারপরে বিয়ে কর?

কেনো?স্যার,আমি তোও আমার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি।আপনার পায়ে ওপর তোও দাড়াইনি।তাহলে নিজের পায়ে ওপর দাঁড়িয়ে থাকার কথা আসছে কেন?

এই ছেলে বড্ড বেশি কথা বলো।বেয়াদব।যা-ও বাহিরে গিয়ে কান ধরে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকো।

যা বাবা আমি আবার কি করলাম।আজকাল দেখছি ভালো কথার দাম নেই।দূর যাতার মাথা।

মিলন বিরবির করে চলে যেতেই স্যার আস্তে আস্তে ব’লে উঠল,

সুখে আছো, সুখেই থাকো!
ভু’তের কাছে যাওয়ার দরকার নাই,কি”ল খা’বি।

শাফকাত খান বাংলাদেশে আসছে দুইদিন হলো।বউ,ছেলে,মেয়ে বিদেশে রেখে দেশের মাটিতে ফিরেছে।তার আদরের ভাগ্নের খবর নিতে রুহিতপুরে মাটিতে হক সাহেবের বাড়িতে পা রাখে।পুতুল তখন পুকুর পাড়ে বসে গোসল করার জন্য গায়ে সাবান মাখছে।
এমন সময় পিছন থেকে কেউ তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেই চমকে উঠে।রাগে শরীর কাঁপতে থাকে।পিছনে মানুষটিকে ঘুরেই ঠাসস করে থা*প্পড় মেরে বসে।এইদিকে পুতুলের সাথে একটু দুষ্টুমি করতে গিয়ে বউয়ের হাতে থাপ্পড় খাবে।এটা তার কল্পনাতে ছিল না।গালে হাত দিয়ে উজবুক মতো তাকিয়ে বলল,

বউ তুমি আমাকে মারতে পারলা।তোমার দশটা না পাঁচটা না মাত্র একটা জামাই।তার ওপর থাপ্পড় মেরে দিলে।এটাতো পুরুষ নির্যাতন হলো।হায় হায়।অর্পণ শেষমেষ বউয়ের হাতের মা’র খেলি।আমি দেখি সবকিছুতে অলরাউন্ডার হয়ে খেলাম।বউয়ের হাতে কিল,ঘুষি,খামচি,জুতার বারি,শেষে থাপ্পড়।আহারে আমি এই দুঃখ কথায় রাখব।বউ শুধু কথায় কথায় রাগ,বকাঝকা ছাড়ে।একটু আদর করে ভালোবেসে কাছে টানে না।ছেহহ শালা জীবনটা আমার গেলো বউয়ের বিরহে।

এইদিকে রাগের বসে না দেখেই থাপ্পড় মেরে বসেছে পুতুল।যখন দেখল এটা তার স্বামী তখন মুখে অলরেডি হাত চলে গেছে।চোখ পিটপিট করে লুকিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও লাভ হলো না।জামাই তাঁকে ঠিকঠাক কথা শুনিয়ে বিস্মিত করে দিলো।ইস কি বিচ্ছিরী কান্ড ঘটে গেলো?

পুতুল কোনো দিশা না পেয়ে বাড়ির দিকে দৌড় দিতে নিলেই অর্পন পিছন থেকে হাত টান মা’রে।এক টানে অর্পনের বুকের মধ্যে এসে পরে।

বউ শুধু পালাই পালাই করে।কিন্তু আজ ছাড়ছি না।

রেডি ওয়ান,টু,থ্রি।অর্পন,পুতুলকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পরে।হঠাৎ লাফিয়ে পড়তে পুতুল অর্পনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।পানির মধ্যে থেকে দু’জনে মাথা তুলতেই পুতুলের নাকে,মুখে পানি যেতেই কাশি উঠে।
রাগী চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে রয়।আর অর্পন মিষ্টি হেঁসে বউয়ের কপালে চুমু বসিয়ে দেয়।বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে খালি গলায় স্বর তুলতে তুলতে কানে হাত রাখে।

লক্ষী সোনা রাগ করে না একটু হাসো প্লিজ
ভাল্লাগে না আর হবে না করছি যে প্রমিস।

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫০
১৩৯.
অর্পণ কাপড় চেঞ্জ করে রুম থেকে বের হতেই শাফাকাত খানের মুখোমুখি হলো।হঠাৎ ছোট্ট মামাকে সে এখানে আশা করেনি।

তুমি,তুমি এখানে কেনো?তোমাকে কে আসতে ব’লেছে?

একমাত্র ভাগ্নেকে দেখতে কি কারো অনুমতি লাগে?শুনলাম সুন্দরী রমনীকে ঘরে তুলেছো!তাও আবার আমার জিনিসের কার্বন কপি।তা কোথায় সে?ডাকো তাকে, দেখে একটু ধন্য হই।

মুখ সামলে কথা বলুন?আপনি ভুলে যাচ্ছেন কার সম্পর্কে কথা বলছেন।সে আমার প্রিয়তমা।তাকে কটুক্তি করা মানে আমাকেই করা।আপনি আমার গুরুজন এবং সম্পর্কের মান আপনার কাছে নাই থাকতে পারে।আমি গুরুজন এবং সম্পর্কে মান রাখতে জানি।প্রথমবার নিজেকে সংযোজত করেছি।তারমানে এই নয় বারবার নিজেকে সংযোজত করব।এখানে কোনো তামাশা হোক আমি চাই না।চলে যান এখান থেকে।অর্পন ঠান্ডা মাথায় মুখ গম্ভীর করে কথাগুলো ব’লে।শাফাকাত খান আরো কিছু বলতে চাইলেন।কিন্তু বলতে পারলেন না।

ঠিক আছে!এখানে কথা না বলতে চাইলে খান বাড়িতে আসো কথা আছে।

হুম।

শাফাকাত খান বেরিয়ে যেতেই অর্পন দুই হাতের মুঠো বন্ধ করে রাগে ফুঁসতে লাগলো।

মিলন,সাজু আমি একটা কাজে বাহিরে যাচ্ছি ফিরতে দেড়ি হবে।তোমার আপুর খেয়াল রেখো।অর্পনের কথায় দুই ভাই মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।

অর্পন গাড়িতে চড়ে বসতেই ড্রাইভার খান বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।
শহর একটি কোলাহল পরিবেশ।গ্রামের মানুষ হঠাৎ করে শহরে আসলেই কেউ কেউ অবাক হয়।আবার কেউ এত কোলাহল পরিবেশ পচ্ছন্দ করে না।তারা গ্রামে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।সেই কোলাহল পরিবেশ ছেড়ে অর্পন নিজের পরিবার এবং বউয়ের সাথে গ্রামে দিব্যি শান্তিতে কা*টাছিলো!আজ আবার তাকে ফিরতে হচ্ছে।যথাযথ সময়ে খান বাড়ির বড় গেইটের সামনে গাড়ি আসতেই দুই দিকে গেট ভাগ হয়ে সরে যেতেই গাড়িটা ভিতরে ঢুকে।এতগুলো বছর পর খান বাড়িতেই রাজপুত্র আগমন ঘটে।দারোয়ান আব্দুর চাচা অর্পনের গাড়ি দেখতে পেয়ে চিতকার করে বড় সাহেবকে ডাকতে থাকে।

বড় সাহেব,বড় সাহেব আমাদের রাজপুত্র আসছে।আপনার আদরের নাতি এসেছে।
আব্দুর কথায় জামশেদ উল্লাহ খান খুশি হয়ে বাহিরে নামতেই নিজের নাতিকে দেখতে পান।

অ.র্প.ন!নানাভাই আমার।আজ কতগুলো বছর পর খান বাড়িতেই পা রাখলে।আয় আমার বুকে আয়।জামশেদ উল্লাহ জড়িয়ে ধরেন।কিন্তু অর্পনের সেই দিকে মনযোগ নেই।সে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে।তার মধ্যে আনন্দের কোনো ছিটেফোঁটা নেই।এইদিকে অর্পনের আসার খবর পেয়ে তার নানী জান ছুটে আসেন।নাতীকে জড়িয়ে কান্না ভেঙে পড়েন।আজ তার খুশির দিন।তার ছোট ছেলে অনেক বছর পর বাড়িতে পা রাখতেই তার নাতির মুখ দর্শন হলো।

বাহিরে দাঁড়িয়ে কেন?আয় ভেতরে আয়।নানীজান তার হাত টেনে ভিতরে টেনে নিয়ে সোফায় বসায়।

এই কে কথায় আছিস।তাড়াতাড়ি টেবিলে খাবার সাজা।আজ আমি নিজের হাতে আমার নাতিকে খাওয়াবো।

নানী জান আমি এখানে বসতে কিংবা খেতে আসি নিই।যার জন্য আমাকে এতদূর আসতে হয়েছে তাকে ডাকুন।আমি কথা ব’লে চলে যাব।

কি বলছিস তুই?আমি তোকে এত তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে দিব না?কয়েকটা দিন থাক আমার কাছে।

এক সময় সেই পরিবেশটা ছিল।কিন্তু আজ সবটা ভিন্ন।আমার আমিটাকে তোমার আদরের ছোট ছেলে ভাঙ্গা আয়নার মতো আমার মনটা ভেঙে দিয়েছে।যেটা কখনোই জোড়া লাগবে না।আমিও চাই না এই ভাঙা সম্পর্কে কোনো নাম দিতে।তাকে ডাকো।কথা আছে।

আমাকে ডাকতে হবে না।আমি এখানেই আছি।শাফাকাত খান সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে ব’লে।

অর্পন পাঞ্জাবি হাতা গুটিয়ে নিয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আঙুল তুলে বলল,

অতীতে যা করেছেন।তার শাস্তি ভোগ করা এখনো বাকি মিস্টার শাফাকাত খান।আপনার কারণে একটা সংসার ভেঙেছে।শুধু মাত্র আপনি দায়ী।রাজিয়া মা’কে আমি বাঁচাতে পারিনি।কিন্তু তার কন্যাকে বাঁচাতে।যদি আমার জান চলে যায় তবে যাবে।কিন্তু রাজিয়া মায়ের পরিনতি আমার প্রিয়তমার সঙ্গে করতে দিবো না।কিছুতেই না।তার সম্মান,তার ইজ্জত হেফাজত করতে তার স্বামী জনাব অর্পন তালুকদার এখনো বেঁচে আছে।তাই আমার প্রিয়তমার দিকে হাত বাড়াতে হলে আমার মুখোমুখি আগে হতে হবে।

বাহা,বউ দেখছি ভালোই বশ করেছে।তা বউ কি মন্ত্র পড়ালো?যে বউয়ের পালিত কুত্তা হয়ে গেলি।ওই মেয়ের তোও একটা ব্যাবস্থা করতে হয়।শাফাকাত খানের কথা শেষ হতে দেড়ি তার নাক বরাবর ঘুষি মারতে দেড়ি হলো না।অর্পনের হঠাৎ আক্রমণে শাফাকাত খান দিশা না পেয়ে সোফায় পড়ে যান।অর্পন সেই সোফার একপাশে পা রেখে আঙুল তুলে বলল,

ওহ আমার প্রিয়তমা,আমার বউ।আর তালুকদার বাড়ির আমানতের দিকে তুমি চোখ তুলে তাকানোর কথা ভাবলেই বা কি করে।কোন সাহসে তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে এই কথা মুখে আনলে।আমার ইচ্ছে করছে তোমার ওই জিহ্বা কে*টে দিতে।যে জিহ্বা দ্বারা আমার প্রিয়তমাকে অসম্মান করে।

অর্পনের কাজে জামশেদ উল্লাহ খান এবং তার বেগম দুই মামা,ভাগ্নেকে আলাদা করার চেষ্টা করেছেন।কিন্তু অর্পন রাগে ফুঁসছে।তাকে সামলানো দায়।বাড়ির গার্ড ডেকে তাদের আলাদা করা হলো।শাফাকাত খান ঠোঁটের কিনারে র*ক্ত মুছতে মুছতে বলল,

তুই আমার গায়ে হাত তুলি।

হ্যা,তুললাম।তোমার এতখনে শুকরিয়া করা উচিত ছিলো।তোমাকে আ*ঘাত করেছি।কিন্তু জানে মা*রিনি।দ্বিতীয়বার তোমার ওই নোংরা মুখে আমার বউয়ের নাম নিবেনা।যদি চেষ্টা করেছো।খোদার কসম।তোমাকে ধ্বংস করে দিব।

অর্পন গার্ডদের ধাক্কা দিয়ে খান বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো।অর্পনের নানী জান সেই কখন থেকে কান্না করছেন।এসব কি হলো?তার সুন্দর সংসারের কোন কা*লনাগিনী ছায়া পড়লো।

অর্পন এর রাগ দেখে ড্রাইভার বুঝতে পারলো।এবারেও গন্ডগোল হয়েছে।যবে থেকে অর্পনের হয়ে কাজ করে তবে থেকেই এমন ঝগড়াঝাটি দেখতে পায়।এতদিন মুখে মুখে চলতো।আজ সরাসরি হাতাহাতি হয়ে গেছে।স্যারের রাগ প্রচুর।এই রাগ না কমা পর্যন্ত তার সামনে যাওয়া যাবে না।অফিসের সামনে গাড়ি থামতেই অর্পন নেমে গেলো।ফোন করে পার্টি লোকদের খবর দিল।এবং জরুরি মিটিং বসার আহ্বান জানালো।

১৪০.
পুতুলের দুপুরের ভাত ঘুম ভেঙে যেতেই অর্পনকে দেখতে পেলো না।পুতুল নিজের লম্বা চুলগুলো হাত খোপা করে বের হয়ে পুকুর পাড়ে গেলো।চারদিকে তাকিয়ে কোথায় তাঁকে খুঁজে পেলো না।লোকটা তাঁকে না ব’লে কথায় চলে গেলো।কখনো না ব’লে কোথায় যায় না।পুতুল মন খারাপ করে নিজের ঘরে বসে পড়ে।পানির গ্লাসের নিচে ছোট্ট চিরকুটটা দেখে কপালে চিন্তা ভাজ ফেলে।চিরকুটটা খুলে পড়তেই মুখটা চুপসে গেলো।তার জনাব তাকে না জাগিয়ে ঢাকায় একা চলে গেছে।হঠাৎ কী না-কি কাজ পড়ে গেছে।একবার ডেকে বলে গেলে কি হতো?লোকটা তাকে ঘুমে দেখে একবার ডাকলো না।এটা কোনো কথা।দূর ভাল্লাগে না।

অর্পন চলে যাওয়া পুতুলের খারাপ লাগাটা আরো বেশি করে ঝেকেঁ ধরে।স্বামীকে সে এখনই মিস করছে।তাহলে তাকে ছাড়া বাকি দিনগুলো কা*টাবে কি করে?

জামশেদ উল্লাহ খানের দিকে তাকিয়ে শাফাকাত খান বলল,

পিপীলিকা পাখা গজায় মরিবার তরে।তোমার নাতিকে এর মূল্য দিতে হবে।এতদিন বোনের ছেলে ব’লে কিছু বলিনি।কিন্তু আজ যেটা করলো তারপর ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে না।ওহ খুব বেড়েছে।রাজনীতি নিয়ে ওর খুব সম্মান এবং শ্রদ্ধার জায়গায়।সেই গদিই যদি কেঁড়ে নেই।তাহলেই ওকে উচিত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব।তুমি এতদিন কিছু যখন করতে পারোনিই।তখন যা করার আমি করব।হয় ওহ থাকবে।আর না হয় আমি থাকব।দুই রাজা একসাথে রাজ্য পরিচালনা করতে পারে না।শাফাকাত কথায় অর্পনের নানীজান আঁতকে ওঠেন।তার নাতি কিছু হলে মেয়ে এবং মেয়ে জামাই বাঁচবে না।ছেলেকে বোঝাতে তার পিছনে ছুটে।এইদিকে জামশেদ উল্লাহ খানকে ছেলে কিসের আভাস দিল?বুঝতে পারছেন না।তবে খারাপ এবং ভয়ংকর কিছু হওয়ার পূর্ব আভাস এখনই পাচ্ছেন।

অর্পনকে শেষ করতেই তার শত্রুর সাথে হাত মিলিয়েছে শাফাকাত খান।উদ্দেশ্য একটাই অর্পনের রাজনীতির ক্যারিয়ারে লাল কালির দাগ বসিয়ে দেওয়া।যাঁর ফলে অর্পন এর ক্যারিয়ার শেষ।তাঁকে দূর্বল করেই তার প্রাণনাশ করা।তার আপন জনই তার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে।অর্পন জন্য মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি হচ্ছে।

চলবে….

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫১
১৪১.
মেশিনের সাহায্যে পুকুরের পানি সেচে
ধানের ক্ষেতে দিয়েছে।সেখানে এত মাছ পানির সাথে আসবে ভাবনার মাঝেই ছিল না।সেই পানির সাথে মাছ আসছে।এগুলো দেখে তাদের খুশি ধরে না।মিলন,সাজু বরশি দিয়ে মাছ ধরছে।স্বাধীন ক্ষেতে নেমেছে বাইন মাছ,শিং মাছ,কই,পুটি হাড়িতে জায়গায় করেছে।রেনু লাকড়ি ঘর থেকে চিকন কঞ্জি নিয়ে আসছে ক্ষেতে এসেই দুই ছেলেকে ধমক মেরে বলল,

তোদের দুই ভাইকে বললাম স্কুলে যেতে আর তোরা দুইজন কি করলি?ব্যাগ বাড়িতে ফেলে এসে মাছ ধরা হচ্ছে।জলতি ওঠ।কথা না শুনলে মা’র খাবি।

আম্মু আজকে স্কুলে যামু না।কালকে যামু নিই।

চুপ।বেশি কথা ব’লেই মা’রবো!ওঠ।ব্যাগ কাধেঁ নিয়ে স্কুলে যা।আজকে স্কুলে না গেলে তোদের খাওয়া বন্ধ।পড়াশোনা না করলে কোনো কথা শুনব না।রেনুর কথায় দুই ভাই গাল ফুলিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাটতে হাটতে ইচ্ছে করে কাঁদা পানিতে পড়ে গেলো।ছেলেদের কৃতি কলাপে রেনু কঞ্জি দিয়ে দৌড়ানি দিতেই বাবার পিছনে লুকিয়ে পড়ে।

কত বড় পড়াচোর হয়েছে।ইচ্ছে করে পরে এমনটা করলো যাতে স্কুলে না যেতে হয়।আজ তিন বাপ পুত্রের খাওয়া বন্ধ।বাপের আহ্লাদে বাদর হয়েছো না।থাক মাঠে পরে বাড়িতে আসতে হবে না।আসলেই হাড্ডিগুড্ডি গুড়া গুড়া করে ফেলব।বউয়ের বকাঝকা দেখে স্বাধীন নিজেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল।ছেলেদের জন্য আজ তার কপালেও ভাত নেই।

আব্বু আজকে আম্মু ভাত দিবেনা বলেছে।তাহলে চলো বিরিয়ানি খাই।

চুপ।আর তাড়াতাড়ি বাসায় চল।

রাজনীতি এমন একটা জায়গায় সেখানে সবাই রাজ করতে চায়।লুটপাট তাদের ধর্ম হয়ে দাঁড়ায়।অসৎ সঙ্গ বেশিই থাকে।এই রাজনীতিতে সবাই স্বার্থপর।গদিতে বসে জনগনের হোক নষ্ট করে।আর জনগন কষ্টে ম*রে!তাতে গদিতে থাকা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কিছুই যা আসে না।একজন সৎ এবং নীতিবান নব্য রাজনীতিবিদ এগিয়ে আসবে।জনগণে সুখে,দূঃখে পাশে দাড়াবে।তা তারা যায় না।সাহায্য করবে এগুলো পচ্ছন্দ হয় না।সৎ সাথে কাজ করতে দিতে চায় না।একজনের ভালো করতে দেখলেই কথা উঠে।হয় গদি ছাড়।আর নয় হয় ম’র!সহজেই গদি ছাড়লেই অসৎসঙ্গের বসবাস।আর সৎ মানুষের সর্বনাশ।জনগনের করুন পরিহাস ঘটে।তিন শেষে খারাপ লোকগুলোই রাজত্ব করে।আর ভালো লোকের ঠাঁই হয় কবরের ঘরে।আর নয় হয় পঙ্গুতো হয়ে সারাজীবন পড়ে থাক বিছানায়।

বোরহানীবাগ মোহম্মদ নইমুদ্দিনের আট তলা বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছে।আগুনের উৎসটা শুরু হয় নিচ থেকেই।তাই ওই বিল্ডিং থেকে কেউ বের হতে পারেনি।যারা চেষ্টা করেছে।তারা বেলকনিতে কিংবা দরজার ভিতরে আটকে পরে,নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছে।কালো বিষাক্ত ধোঁয়া অজ্ঞান হয়েছিল।দেহখানিকে আগুনে ঝলসে দিয়ে যায়।ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি।এই পযন্ত সত্তুরের বেশি মৃত্যর লাশ।আর পুড়া,অর্ধশতাধিক।সরকার থেকে সাহায্য জন্য বলা হয়।তারা সাহায্য জন্য নিহত পরিবারকে দুই লাখ।এবং আহত পরিবারকে নব্বই হাজার টাকা দেওয়া কথা দেন।কিন্তু সময় বয়ে যায়।টাকা আসে না।অর্পন খোঁজ নিয়ে জানতে পারে মৃত্যু মিছিলটি বাড়ছে।একশ ঘর ছাড়িয়েছে।আহতদের অবস্থা আশঙ্কা জনক।আর এইদিকে তাদের পার্টি লোকেরা দুই নাম্বারি করে টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছে।সে প্রতিবাদ করায় পার্টিলোকই তাঁকে হুমকি দিচ্ছে।অর্পন চুপচাপ থাকবে না।সে এটার শেষ দেখে ছাড়বে।অর্পন পার্টি লোকজনের সাথে তর্কাতর্কি করে বেরিয়ে আসে।তার মাথায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলে।আল্লাহ নাম নিয়ে কাগজে লিখিত বয়ান এবং পার্টি লোকদের বিরুদ্ধে কেস করতে বের হয় প্রমাণসহ।

মেইন সড়ক পথ ধরে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টায় যখন ব্যাস্ত।তখনই গুলির শব্দ শুনা যায়।অর্পনের ড্রাইভার হাতে গুলি লাগতেই ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে।অর্পন নিজের হাতের মোটা ফাইলটা পিছনে রেখে গাড়ি ঘুড়াতে শুরু করে।তাকে সরাতে পারলেই কাদের লাভ হবে তা এতখনে খুব ভালো করে বুঝে গেছে।

কিন্তু অর্পন আজ হার মানবে না।ড্রাইভারকে সরিয়ে নিজে গাড়ি চালাতে শুরু করে।আকাঁ বাকাঁ পথের মতো গাড়িটা ঝুটতে থাকে।কোথায়ই গাড়ি গন্তব্যে ছুটে চলছে জানা নেই।নিজেকে এই মুহূর্তে নিরাপদে রাখাটা জরুরি।তার ওপর নির্ভর করছে তার বউ,পরিবার,আপন মানুষগুলোর ভালো থাকা।তার কিছু হলে তারা ঠিক থাকবে না।চোখের সামনে মায়ের মুখটা ভেসে ওঠে।বাবার বকাঝকাগুলো আজ খুব করে মনে পড়ে।বউয়ের জন্য কলিজা কেঁপে ওঠে।তাকে কথা দিয়েছিল।জীবনে যা কিছু হয়ে যাক।সারাটি জীবন ছায়ার মতো পাশে রবে।অর্পন একটুও অমনোযোগ হতেই তিন রাস্তার মোড় থেকে একটা বড় গাড়ি এসে ধা*ক্কা মারে।অর্পনের গাড়িটা বারি খেয়ে উল্টে পাশের খাদে পরে গেলো।তার কয়েক সেকেন্ড মধ্যে গাড়িটা গরম হয়ে ব্লাস্ট হয়ে যায়।
১৪২.
রাত দু’টো বাজে।কোনো শোরগোল নেই।অর্পন হাসপাতালে বেডে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে।মাথাটা ঝিমঝিম করছে।পা নাড়াতে পারছে না।শরীরে বিভিন্ন জায়গায় কা*টাছেঁড়া দাগ।ভিতর থেকেই দ্বীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে।আজ দুইদিন হয়েছে সে হাসপাতালে ভর্তি।বাড়ির কারো সাথে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি।জিহান,রিহানের সাথে তার শেষ কথা হয়েছিল।ওরাই অর্পনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।ড্রাইভার অবস্থা ভালো নয়।সে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে।

বলছিলাম কি ভাই?একটিবার বাড়িতে তোমার খবরটা দেই।

অর্পন আস্তে করে বলল,

না।বাড়িতে খবর দিলে ওরা চিন্তা করবে।আর আমার মা’কে খুব ভালো করেই জানা আছে। যদি শুনে আমার এই অবস্থা।তাহলে কেঁদেকে*টে বাড়ি মাথায় তুলবে।মায়ের মনটা নরম।আদরের সন্তানের কিছু হলে ঠিক থাকে না।তারচেয়ে বরং কয়েকটা দিন যাক সবটা আমি সামলে নিব।

তোদের ভাবীর কি খবর?

ভালো নেই ভাই।তুমি আসার পর আরো চুপচাপ হয়ে গেছে।তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে।সে তোমায় প্রচুর মিস করে।তোমার সাথে কথা বলার জন্য ছটপট করছে।

অর্পন অস্যয়নীয় ব্যাথা সয্য করার মাঝে একটু মুচকি হাসি দিলো।কয়েক মিনিট চুপ থেকে বলল,

ওখানকার কি খবর?

ভাই তোমাকে আ*ঘাত করার পেছনে ওদের কোনো মোটিভেশন আছে।শুধু শুধু তোমাকে আঘাত করেনি।

জানি আমি।আর এসব কে বা কারা করছে?সবটা জানা আছে।ওরা চায় আমি সরে যাই।
কিন্তু আমি এত সহজে হার মানবো না।নিজের কথা ভেবে এই পথে আসা হয়নি।আমি এসেছি জনগনের কথা ভেবে।তাদেরকে একটা সুন্দর দেশ গড়ার লক্ষ্যে।আর আমি আমার দায়িত্ব থেকে সরবো না।এইসব বাদ দে গাড়ি বের কর!এখানে ভালো লাগছে না।বউটাকে খুব মিস করছি।গ্রামে যাব।

কিন্তু ভাই তুমি গ্রামে গেলে চাচী মা তোও এমনই জেনে যাবে।

তোরা না ব’লে জানতে পারবেনা।আপাদত সে নিজের প্রফেশন নিয়ে ব্যাস্ত আছে।রোগীর সেবা করাটাই তার ধর্ম।সে রোগীর সাথে কোনো ক্নফোমাইজ করবে না।আর বউকে আমি সামলে নিতে পারব।

ওকে,ভাই ব্যাবস্থা করছি।

লেবু গাছ থেকে লেবু পারতে গিয়ে হাতের মধ্যে কাঁ*টা ফুটেছে।পুতুল বুড়ো আঙুল চেপে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছে।এমন সময় বাড়ির সামনে একটা বড় গাড়ি আসতেই পুতুলের কপালে চিন্তা ভাজঁ পরে।ডান হাত ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে গেলো।গাড়ির দরজা খুলতেই পুতুল চমকে উঠে।হাতের লেবু ফেলে ছুটে আসে।অর্পনের গালে হাত বুলিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।এসব কি করে হয়েছে? জানতে চায়।

ভাবী আপনি প্লিজ শান্ত হন।তেমন কিছু হয় নিই।ওই ঢাকায় একটা গাড়ির সাথে ভাইয়ের গাড়ির ধাক্কা লাগে।আর তারপর গাড়ি উল্টে খাদে পড়ে যায়।ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট আরকি।

পুতুল এক্সিডেন্ট শব্দটা শুনে ভয় পেয়ে যায়। অর্পনকে শক্ত করে জড়িয়ে কান্না ভেঙে পরে।পুতুলের জড়িয়ে ধরায় অর্পনের ব্যান্ডেজ করা জায়গায় আবার ব্যাথা লাগে।তবুও প্রিয় মানুষটির এত অস্থিরতা দেখে তার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে।পুতুলের মুখটা তার বুক থেকে তুলতে চাইলেও।পুতুল মাথা তুললো না।আর না ছাড়লো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।পুতুল তাঁকে জড়িয়ে ধরতেই জিহান,রিহান অন্য দিকে তাকিয়ে রয়।বাড়ির উঠনে এরমধ্যেই স্বাধীন,রেনু,আসে।মামা,মমীকে দেখে পুতুল তাকে ছেড়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকে।অর্পন এর এই অবস্থার কথা শুনে।তাকে সাবধানে ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে।স্বাধীন,জিহান,রিহান সাহায্যে পুতুলের ঘরের বিছানায় তার ঠাঁই হয়।মাথার আঘাতের জায়গায় এখনো ঝিনঝিন করছে।বিশ্রাম নিলে হয়তো সেরে যাবে।পুতুল অর্পনের হাত ধরে বসে রইলো।আর অর্পন চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।একটুও পরেই ঘুমের মেডিসিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে।

আছরের আজান পরতেই অর্পন চোখ মেলে তাকায়।পুতুল নামাজ পড়ছে।ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে আবার চোখটা বুঝতে চাইলে মায়ের মুখটা দেখতে পায়।ভাবে হয়তো কল্পনা।কিন্তু তার কল্পনাকে মিথ্যে করে রাবেয়া ঠাসস করে ছেলের হাতের বাহুতে থাপ্পড় লাগিয়ে বসেন।অর্পন হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে ডাকে।

আম্মু তু…মি?

কি ভেবেছিস?মায়ের কাছ থেকে পুরো ব্যাপারটা লুকিয়ে যাবি।আর আমি বুঝতে পারব না।বলি তোকে পেটে আমি নিয়েছিলাম।না-কি তুই আমায় নিয়েছিলি।হারামজাদা এত বড় এক্সিডেন্ট করে আমার কাছে বলার প্রয়োজনবোধ করলো না।আমি যে তার মা সেটা তার মনেই ছিল না।মায়ের কষ্ট তুই কি বুঝবি?মায়ের কষ্ট বোঝার মতো তোর বয়স হয়েছে।আমাকে চিন্তা রাখতে আর কাঁদাতে খুব ভালো লাগে না রে।রাবেয়া ছেলেকে বকছেন আবার নিজেই ভ্যা,ভ্যা করে কাঁদছেন।পুতুলের নামাজ শেষ করে ছুটে আসে।অর্পন মায়ের রাগ ভাঙ্গতে মা,মা ব’লে ডাকতে লাগল।কিন্তু রাবেয়া থামছে না।

এই যে আমার এই অবস্থা দেখে কান্না করছো।আমার কি ভালো লাগছে বলো।
তুমি কান্না করবে ব’লেই আমি বলতে চাইনি।প্লিজ আম্মু কেঁদো না।আমার কষ্ট হচ্ছে।তাছাড়া তোমাকে খবরটা দিল কে?আমি জিহান,রিহানকে বারবার বলতে বারণ করেছিলাম।

তুই বারণ করলে কি হবে?যে খবর দেওয়ার সে ঠিকই দিয়েছে।

কে দিয়েছে?

কে আবার?আমার পুতুল মা দিয়েছে।

অর্পন হা করে তাকিয়ে রইল।

ওরেব্বাস।যার জন্য করলাম চুরি।সে দিল আইকা গলা বাঁশ।

অর্পনের রিয়াকশন দেখে পুতুল,রাবেয়ার পিছনে লুকিয়ে পড়ে।অর্পন যে তার পরিবারকে পুরো বিষয়টি ইনর্ফম করেনি।তা তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে