#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩৪
১০৯.
স্বাধীন ভাই একটা ভালো প্রস্তাব আনছি।
স্বাধীন মাটিতে মরিচের চারা বুনছিল।মাথা উঁচু করে দেখে নিলো সবুর মিয়া আসছে।
কিসের প্রস্তাব?
কিসের আবার।বিয়ের প্রস্তাব।
বি.য়ে.র প্রস্তাব!
হ্যাঁ।
কিন্তু আমার তোও বউ আছে।সাথে বাচ্চা ফ্রি।আমি চার ছেলেমেয়ের বাপ।আমাকে মেয়ে দিবে কে?
আরে আপনার কথা কে বলে?আমি তোও আপনার মেয়ে পুতুলের জন্য প্রস্তাব আনছি।
তাহলে ওখানেই থেমে যাও।মেয়ে আমার এখনো ছোট।আঠারো হয়নি।
আরে কি যে কও না মিয়া।গ্রামের মেয়ের আবার আঠারো হওয়া লাগেনি।চৌদ্দ হলেই তোও মেয়ের বিয়ের জন্য উপযুক্ত।শুনোও স্বাধীন ভাই।ছেলের বড় বিজনেস আছে।জাপানে থেকে বিজনেস করে।আমাদের পাশের গ্রামের পোলা।বয়স বেশি না মাত্র পয়ত্রিশ বছর।আগে একটা বিয়া হইছিল।কিন্তু ডির্ভোস হইয়া গেছে।তার ঘরে পাঁচ বছরের ছেলে সন্তান এবং নয় বছরের কন্যা সন্তান আছে।ছেলে যেমন সুন্দর তেমনই ভদ্র।কিন্তু মা একটু অহংকারী।ওই টাকার গরমে আরকি পা মাটিতে পড়ে না।
সবুর মিয়া।মেয়ে আমি বিয়ে দিবো না।একবার যেহেতু বলেছি না।না মানে না।হ্যাঁ কিছুতেই হবে না।আর তুমি কোন সাহসে আমার মেয়ের জন্য ডির্ভোসি ছেলে।আবার দুই বাচ্চার বাপের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছো।
স্বাধীন মুখের ওপর না করতেই সবুর মিয়ার মুখ থেকে হাসি গায়েব।তার মুখ কালো হয়ে গেছে।মুখ কালা করেই বলল,
তোও তোমার মেয়ের জন্য এর থেকে ভালো প্রস্তাব পাইবা নিই।
শুনো,স্বাধীন ভাই,বোবা মেয়ে নিয়ে এত ভাব নেওয়া ভালা না।এর আগে বিয়ে হইতে গিয়া বিয়া হইলো না।বিয়ের আসরে বর ছেড়ে চলে গেছে।মেয়ে হইছে বোবা।তার ওপর তোমার তেজ কমে না।দেখবো নিই কে করে তোমার বোবা মাইয়া বিয়া?হু যতও সব।সবুর মিয়া জিদের চটে স্বাধীনের কিছু মরিচ গাছ মারিয়ে চলে যায়।স্বাধীন ছোট নিশ্বাস ফেলে নিজের কাজে আবার মনযোগ দিলো।
রমিজ মেম্বার হুক্কা টানতে টানতে বলল কি রে সবুর কি বলল?
কি আর বলব?বোবা মাইয়ারে না-কি এখন বিয়া দিব না।হুনছি পড়ালিখা করাইবো।
পড়াশোনা করতে মন চাইলে করবে।কিন্তু বিয়া দিতো না কেন?মেয়ের বয়স তোও কম হয়নি।এত ভালা প্রস্তাব দিলাম রাজি হয় নাই।কেন?আমার ভাতিজা খারাপ না-কি?মাসে মাসে তার লাখ লাখ টাকা ইনকাম হয়।
স্বাধীন মাগরিবের নামাজ পড়ে বারান্দায় বসে আছে।কিছু নিয়ে চিন্তায় আছে তা তার মুখের আতল ব’লে দিচ্ছে।রেণু নামাজ শেষ করে বাহিরে আসতেই স্বামীকে বারান্দায় বসে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে।কাঁধে হাত রেখে ডাক দেয়।
কি গোও মন খারাপ?
হু..ম।না।এমনই বসে আছি।
কিছু হয়েছে আমায় বলো।
আজ দুপুর বেলা ক্ষেতে যখন কাজ করছিলাম।তখন সবুর মিয়া বিয়ার প্রস্তাব নিয়ে আসে।মেয়ের বিয়ের কথা উঠাবে বুঝতে পেরে কথা ঘুরানো চেষ্টা করেছি।কিন্তু লাভ হয়নি।সবুর মিয়া পুতুলের জন্য রমিজ মেম্বারের ভাতিজার হয়ে বিয়ের প্রস্তাব আনে।
খবর নিয়েছিলাম।ছেলেটা ভালো না।ছেলের মা বউয়ের ওপর অত্যাচার করতো।দিন রাত বাপের বাড়ি নিয়ে গালাগাল আর হাত দিয়ে আ*ঘাত করত।আগের বউকে আ*গুনে পুড়িয়ে মারছে।মাঝখান থেকে বাচ্চা দুটো এতিম হয়েছে।আমি হয়তো পুতুলের বাবা নই।কিন্তু মামা হইয়া নরম,কোমল মাইয়ারে কেমনে দিমু এমন নরপশুর হাতে।মেয়ের বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে।বুড়ি মেয়ে কেউ ঘরে তুলবে না।তার ওপর বিয়ে আসরে বর তাকে ছেড়ে দিয়েছে।নানা জায়গায় থেকে কথা শুনতে পাই।সবই কানে আসে বউ।
তাইলে এখন আপনি কি করবেন?বাড়ি বয়ে এসে পাড়াপ্রতিবেশি আমাদের নিয়ে হাসি,মজা করে।সব দেখেও মানতে পারিনা।পুতুলের জন্য চুপচাপ থাকি।তার ওপর এই কথা শুনে আমার হাত,পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।পুতুলের কি হবে?আমাদের মেয়ের ভাগ্যে কি আল্লাহ সুখ দেয় নাই?আল্লাহ কি এতটাই নিষ্ঠুর হবেন?
স্বাধীন রেগে পিলারে সাথে হাতকে আ*ঘাত করে বলল,
আমি কি করে আমার মেয়েরে ওমন জালিমের ঘরে দিমু।যে কর জান্নাত নয়।জাহান্নাম।প্রয়োজন পড়লে আমি আমার মেয়েকে কে*টে টু*করো টু*করো করে নদী ভাসাইয়া দিমু।তবুও ওমন জালিম পরিবারে আমার মেয়েকে বিয়ে দিব না।একবার শিক্ষা পাইছি।দ্বিতীয়বার আর ভুল করতে চাই না।
স্বামীর কথায় রেনু স্বামীর কাঁদে মাথা রেখে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।
১১০.
সকাল বেলা পুতুল রেডি হয়েছে।কলেজে যাওয়ার জন্য চার ঘন্টা আগে রওনা দিতে হয়।তাই সকালের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পরে।আঁকা পাকাঁ মেঠোপথে হেঁটে যেতেই চোখে পরে মাথার ওপর থাকা বিভিন্ন গাছের দিকে।রাস্তার কিনারে সারিসারি আম গাছ,সুপারি,তালগাছ,জামগাছ,গাব গাছ লাগানো।পুতুল নিজের এলাকার রাস্তা ছেড়ে সামনে এগিয়ে যেতেই মেম্বারের ছেলে,এবং তার কিছু বন্ধুরা তাকে দেখে শিস বাজায়।আবার গলা ছেড়ে গান ধরে।
ও..…টুনির মা তোমার টুনি কথা শুনেনা।
যার তার লগে ডেটিং মারে আমায় চিনেনা।
ও… টুনির মা তোমার টুনিরে বুঝাও না।
দিনে রাইতে মিস কল মারি ব্যাক করে না।
টুনি কলেজে যাইব,টুনি বারান্দায় আইব
টুনিরে দেইখা আমার পরান জুরাইব।
পুতুল রাগী চোখে একবার দেখে সোজা হাটতে নিলে পথ আগলিয়ে ধরে।পুতুল হাত দিয়ে ইশারা করে তার পথ ছেড়ে দিতে।কিন্তু তারা পথ না ছেড়ে বিভিন্ন বাজে অঙ্গভঙ্গি করে।যেটা দেখা পুতুলের রাগে শরীর কাঁপতে থাকে।পায়ের জুতা খুলে হাতে তুলে যেটাকে সামনে পেয়েছে ওটাকেই ধরে ঠাসস ঠাসস করে গালে মুখে বারি মেরে বসে।মেম্বার ছেলে আতাউর বন্ধুকে মারতে দেখে এগিয়ে এসে মুখ দিয়ে বিচ্ছিরি গালি ছুড়ে।যা পুতুলের কানে যেতে দেড়ি,কিন্তুু ঘুরে লাথি মারতে দেড়ি করেনি।তার এক লাথিতে মেম্বার ছেলে পেট ধরে বসে পড়তেই তার পিঠের মধ্যে ঠাসস,ঠাসস করে জুতার বারি মেরে বসে।রাগে ব্যাগ থেকে মরিচের গুড়ো বের করে সব কয়টার চোখে মুখে লাগিয়ে পাশের পুকুরের ধাক্কা মেরে ফেলে দিল।বোনের রাগের বারুদ দেখে মিলন,সাজু দূর থেকে হেসে ওঠে।কানে বাটন ফোনটা চেপেঁ ধরে কাউকে ব’লে।
ভাইয়া,আপু আজকে ক্ষেপছে।মেম্বারে কুত্তা পোলা এবং তার বন্ধুরা সব পানিতে।আপু পায়ের দুইশ টাকার জুতার সেন্ডেলের বারি খেয়ে এক একটার হুস জ্ঞান হইলো ব’লে। মামার কিনে দেওয়া জুতার পুরো দুইশা টাকা উসুল হইয়া গেছে।
ফোনের ওপর পাশে ঢাকায় বসে অর্পণ শব্দ করে হেসে উঠে।তার হাসিতে অফিসের ছেলেপেলে এমনকি তার দুই ভাই তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।ঘটনা কি বুঝতে পারছে না?
ঠিকই আছে।যেমন কুকুর তেমন মুগুর।কিছু শয়তানকে টাইট দিতে এমন শেরনীর খুব প্রয়োজন।সিংহ কেনো সব সময় তার শেরনীকে রক্ষা করবে?বর সিংহ ছাড়া যে সিংহিনী লড়তে পারে এটা তারই উদাহরণ।গ্রামে কখন কোথায় যায়,বোনের দিকে সব সময় নজর রাখো।গ্রামে থাকলে দায়িত্ব তোমাদের।আর ঢাকায় পা দিলে সে আমার দায়িত্ব থাকবে।মিলনের থেকে সাজু ফোন টান দিয়ে কানে নিয়ে বলল,
বুঝতে পারছি দুলাভাই।গ্রামে আপনার শালারা আছে চিন্তা নাই।ঢাকায় আপনারা মতো দুলাভাই থাকলে চলবে।আমার আপুকে আপনি সামলাতে পারবেন।অর্পণ হেসে ফোন রেখে দিতে নিলে সাজুর থেকে ফোন নিয়ে মিলন কানে ফোন তুলে বলল,
হ্যালো দুলামিঞা,
হুম,বলুন শালা সাহেব।
বিয়ের সানাই বাজবে কবে?
খুব শ্রীর্ঘই।
সত্যি।
হুম তিন সত্যি।তার স্বপ্ন পূরণ হলেই আমার ঘরে ঘরণী করে নিয়ে আসব।
আপু যদি রাজি না হয়।জোর করে তুলে নিয়ে যাবেন।যেমনটা সিনেমায় হয়।
হুমম না।তুলে আনার দিন শেষ।তার মনটা জয় করে আনতে চাই।
তার মেয়ের সাথে মামা রাজি না হলেও মিছিল করব।হরতাল ডাকব।মামলা দিব।তবুও হবু মামা শ্বশুরের মন জয় করে নিয়ে আসব।
বউয়ের পাশাপাশি হবু মামা শ্বশুরের মন জয় করে নিব।এমন ভালোবাসা দেখে হবু মামা শ্বশুর মোমের মতো গলতে বাধ্য হবেন।মামা শ্বশুর মশাই তার মেয়েকে নিজেই আমার হাতে তুলে দিয়ে বলবেন।
জিতছি জামাই।জিতছি।
মিলন,সাজু ফোনটা মুখের সামনে ধরে বলল,
জিতছি দুলামিঞা।জিতছি।
মিলনের নাচনের ঠেলায় কখন লুঙ্গি খুলে গেছে।খেয়াল করেনি।যখন খেয়াল করে তখন হাঁটুর সামনে লুঙ্গি পরে।ভাঙ্গিস ছোট প্যান্ট পরে থাকায় এবারের মতো ইজ্জত বেঁচে গেলো।
সাজু শব্দ করে হেঁসে মুখে হাত দিয়ে বলল,
মিলনের লুঙ্গি হাঁটু তলে।
মিলন,সাজুকে ধমক দিয়ে বলল,
চুপথাক।
মিলন লুঙ্গি তুলতে তুলতে গান ধরে।
আমি চিৎকার করিয়া হাসিতে চাইয়া করিতে পারিনি চিৎকার।
লুঙ্গি খুলিয়া পরিয়া যাওয়ায় নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।
মিলনের গান শুনে ফোনের লাইনে থাকা অর্পণ আবারও শব্দ করে হেসে চেয়ারে পিঠ লাগিয়ে বলল,
আচ্ছা।ধন্যবাদ শালা সাহেব।এখন রাখছি পরে কথা হবে।ফোন কেটে হাসতেই বিজি।
অর্পণকে এর আগে কেউ এতটা প্রানবন্ত দেখেনি।আজ ছেলেটা মন খুলে হাসছে।সময়গুলো এভাবেই যাক না কেঁ*টে।
চলবে…
#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩৫
১১১.
গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
ও মীরাবাই,গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
মিলন,রোমান ভাইয়ের গান শুনে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
শালা।হারামী।কি গান গায় রে?গান শুনে তোও আমার জান যায়।গলাটা পরিষ্কার করে খ্যাক করে বলে,
ওই থামেন।কি গান ব’লেন এগুলো?আপনার গান শুনে আমি বেহুশ হয়ে যাই।
কেডা রে?রোমান পুকুর পাড়ে আরামে বসে সিগারেট টেনে টেনে গান ধরে।কিন্তু কারো ঝাড়ি খেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে মিলন দাঁড়িয়ে।কোমড় হাত রেখে বলল,
রোমান ভাই আপনি।এখানে কি করেন?আমাদের পুকুরের ঘাটে আপনি বসে আছেন।কিন্তু কেন?
কি করুম ভাই?তোর ভাবীর কথা চিন্তা করেই বুক ফাটি যায়।বউ তার বাপের বাড়ি। আর আমি বউরে না পাইয়া মনের সুখে সিগারেট টেনে ফাটা গলায় গান গাই।মনটা বউয়ের জন্য কেমন কেমন করে।
ওহ,মা গো।এ দেখি টু’রু লাভ।
ছোট থেকেই এই গ্রামেই বড় হয়েছি।আজ পর্যন্ত আপনার বউরে আপনি না মেরে ভাত খান নাই।আজ এতটা দরদ।কাহিনি কি?
কি করুম?বউরে না মারতে পারলে শান্তি লাগে না।খালি হাত চুলকায়।
যখন হাত চুলকায়।তখনই আপনার হাতটাতে ওই শীল নূরের পুতা দিয়ে ছেচা মারা দরকার।কথায় কথায় বউ মারে।এখন বউ গেছে গা।ভালোই করছে।দোয়া করি।সে যেন আপনার জীবনে ফিরে না আসে।আমীন।
সকালের ঘুম ভেঙে যেতেই পুতুল উঠে বসে।বেলা কতটুকু হয়েছে তা দেখার জন্য জানালা খুলে দেয়।জানালা খুলতেই এক দমকা বাতাসে কেঁপে ওঠে।বাহিরে কুয়াশায় ঘেড়া।শীত আমেজ ফিরে এসেছে।এতটা ঠান্ডা পড়ছে দেখে পুতুল তাড়াতাড়ি জানালা বন্ধ করে।বিছানায় বসে পড়ে।গায়ের চাদরটা আরো ভালো করে পেঁচিয়ে নেয়।মিলন,সাজু,ঘরে নেই।নিশ্চয় বাহিরে আছে।পুতুল বিছানা গুছিয়ে রাখতে গিয়ে হাতে চিরকুট পায়।চিরকুট খুলে দেখে।
তুমি আমার দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী মহিলা যিনি বয়সের সাথে শক্তিশালী হয়ে উঠে।এবং সব খারাপ অনুভূতিকে টেক্কা দেয়।শুভ জন্মদিন আমার পুতুল আম্মা।
চিরকুট পরে পুতুলের মুখে হাসি ফুটে।হালকা ঠান্ডা লাগছে।পুতুল হাঁচি দিতে দিতে ঘর ছেড়ে বাহিরে নামে।সকাল বেলা রিফাত সূরা পাঠ করছে।তা কানে আসে।কি মিষ্টি সুর।কলিজা শীতল করে।এগিয়ে যায় মামা,মামীর থাকার ঘরে।পুতুল এগিয়ে এসে দেখে মামী তার তিন ভাইকে আরবি পড়াচ্ছে।পুতুল খুশি মনে সালাম দিলো।রেনু,পুতুলকে দেখতে পেয়ে কাছে ডাকে।পুতুল এগিয়ে আসতেই তার কপালে চুমু বসিয়ে দিলো।তোমার নতুন দিনটির জন্য অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা।
যাও, হাত মুখ ধুয়ে আসো।আজ নামাজ পড়নি।এখনো পেট ব্যাথা করছে।পুতুল মাথা নাড়িয়ে না বলল।
কয়েকদিন গেলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।আবার নামাজ পড়তে পারবে।পুতুল মাথা নাড়িয়ে কলপাড়ে চলে গেলো।হাত,মুখ ধুয়ে আসতেই।তাদের চার ভাই বোনকে গরম গরম ক্ষীর পায়েস পরিবেশন করে।হাড়ির ঢাকনা সরাতেই ক্ষীর পায়েস গন্ধে জিহ্বায় পানি আসে।মিলন,সাজু পায়েসের গন্ধে পেটে হাত বুলিয়ে নেয়।এতখন হালকা খিদে ছিল।এখন আরো বেশি খুদা লাগছে।তাদের বাটিতে পায়েস তুলে দিতেই মামাও বাজার নিয়ে হাজির হয়।সে-ও ছেলেমেয়ের সাথে যোগ দেন।একসাথে পরিবারের সকল সদস্য আনন্দের সাথে খাবার খাচ্ছে।
কয়েকদিন পর…
তালুকদার বাড়িতে ফুফিয়ে কেঁদে যাচ্ছেন রাবেয়া।একটু পর পর স্বামীর ওপর রাগ ঝাড়ছেন।কিন্তু অসীম তালুকদার বউয়ের রাগ পানি করতে মিষ্টি মিষ্টি কথা তুলছেন। কিন্তু তার মিষ্টি কথায় কাজ হচ্ছে না।সে যাই করে তাতেই বউ ঝাড়ছে।একমাত্র বউ হওয়াই না পারছে বেশি রাগতে আর না পারছে ঠান্ডা করতে।অসীম তালুকদার বউয়ের মন ভালো করতে দৌড়ে চা করে নিয়ে আসেন।
রাবেয়া স্বামীর বানানো চা মুখে দিতেই গড় গড় করে সেটা ফেলে দিল। তার মুখটা এখন তিতা লাগছে।
এই তুমি আমাকে কি খাইয়েছোও?সত্যি করে বলো।এতে কি মিশিয়েছোও?
বিশ্বাস কর।কিছুই মিশাই নিই।চিনি,চা পাতি দিয়ে বানিয়ে আনছি।
এতদিন পর আসছি।কোথায় রাগ ভাঙ্গিয়ে সোনা,বাবু ব’লে ডাকবে।কিন্তু না।বেডা আমির তালুকদারের ছেলে আমাকে বিষ খাইয়ে মারা প্লান করছে।এই তোমরা কে কোথায় আছোও দেখে যাও?আমার স্বামী আমাকে বিষ দিয়ে মারতে চাইছে।বেডা মিথ্যুক।
এতখন ভালোবাসে বউয়ের জন্য কতকিছু করলো।তবুও নাম নেই।সব দোষ পুরুষ মানুষের হলো।এরজন্যই লোকে ব’লে।মেয়ে মানুষের বুদ্ধি হাঁটুর তলে।বিয়ে করলে পাগল হবি।বিয়ের পর টের পাবি।বউ কি চিজ?
রাবেয়া ফ্যাসফ্যাস কান্না দেখে অসীম তালুকদার বিরক্ত হয়ে বলল,
বেশি কিছু দেয় নিই।ইন্দুর মারার বিষ দিয়েছি।এবার খুশি।
স্বামীর কথায় রাবেয়া চোখ বড় বড় করে তাকায়।চিতকার করে বলল,
তুমি আমাকে চা নামের ইন্দুর মারার বিষ খাইয়ে মারতে চাইলে।এটা তুমি পারলে।আজকে তোমার খবর আছে।রাবেয়া জামদানী শাড়ি আঁচল কোমড়ে খুঁজে সারা বাড়িতে অসীম তালুকদারকে দৌড় করিয়ে ছাড়ল।বেচারা একটু দৌড়িয়ে হাঁপিয়ে উঠেন।হাঁপাতে হাঁপাতে বউয়ের সামনে সারেন্ডার করলো।মানে আত্মসমর্পণ করেছে।
এইদিকে ঢাকার কাজ শেষ করে।অর্পণ বাড়িতে ফিরে এসেছে।বাড়িতে এসে মা,আর বাবার ঝগড়া দৃশ্য দেখে মুখ অটোমেটিক হা হয়ে আছে।
বাড়িতে এসব কেলোরকীর্তি হবে।সে কি আর জানত?
১১২.
রাতের বেলা মায়ের কোলে মাথা দিয়ে অর্পণ গল্প করছে।রাবেয়া ছেলের মাথায় চুমু একে বলল,
তা আব্বু এবার কি ঘরে বউ তুলবেন না?বয়স তোও আর কম হলো না।বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে।আপনি এতদিনে বিয়ে করলে নাতি নাতনীর মুখ দেখা হয়ে যেতো।
মাথা থেকে মায়ের হাতটা নামিয়ে চুমু খেয়ে বলল।
বিয়ে করব মা।কিন্তু আমার আদুরনী এখনো ছোট।তার স্বপ্ন পূরণ হোক।তার স্বপ্ন পূরণ হলেই তাঁকে ঘরে তুলে আনব।
ছেলের কথায় রাবেয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।কোল থেকে ছেলেকে উঠিয়ে দিয়ে। পিঠের মধ্যে ঠাসস করে থাপ্পড় মেরে বলল।
ওরে বাবা।আমার আব্বা প্রেম করে।আর আমি জানি না।হুম।আমার আগে এই কথা আর কাকে কাকে বলেছিস।এই কথা কয়জন জানে?
হুম।দুলা শালা ছাড়া আর কেউ জানে না।
কি?আবার শালাদেরকে পটিয়ে ফেলছিস।তুই কি ‘রে?তা যাকে ভালোবাসি।তাঁকে পটিয়েছিস?তাকেঁ বলেছিস মনের কথা।সে জানে!
অর্পণ মায়ের হাতটা ধরে বলল,
সে কিছুই জানে না।এখনো মনের কথা বলা হয়নি।
ছেলের কথায় রাবেয়া ঠাসস করে পিঠের মধ্যে আরেকটা থাপ্পড় মেরে বলল।
আরে গাধার বাচ্চা।এখনো বলিস নিই।ওই মেয়ে তোর মনের কথা জানে না।সে কি আর তোর পথ চেয়ে বসে থাকবে।অন্য কারো বউ হয়ে যাবে না।আমার বাড়িতে যার বউ হওয়ার কথা সে যদি অন্য বাড়িতে পা রাখে।তাইলে তোর খবর আছে।
আরে মা কিছুই হবে না।তার পিছনে অলরেডি গোইন্দায় লাগানো আছে।আর মা তুমি আমাকে এটা কি বলে?আমি গাধার বাচ্চা।তারমানে আমার বাপ অসীম তালুকদার একটা গাধা।
রাবেয়া মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
হু…হু।গাধারের গাধা বলবো না তোও কি করব?আমি যে পাঁচ বছর তার থেকে দূরে ছিলাম।একবার খোঁজ নিয়েছে।যখন দুইদিন ছিলাম বাপের বাড়ি।একবার খবর নিলো না।রাগে, দুঃখে গেলাম লন্ডনে।রোগীদের দেখেই সময় চলতো।অবসরে সময় রাতটুকু বিশ্রামে চলে যেতো।ডাক্তার হ’য়েছিলাম ব’লে আজ নিজের একটা আলাদা পরিচয় হয়েছে।
হুম তোমার বউ মা ওহ ডাক্তার হতে চায়।এটাই তার একমাত্র স্বপ্ন। রাবেয়া চোখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো।হাসিমুখে বলল
সত্যি।
হুম।সত্যি।
আলহামদুলিল্লাহ।মন থেকে দোয়া রইলো।আমার ছেলের বউ ডাক্তার হবে।
সকাল সাড়ে সাতটা বাজে কনকনে ঠান্ডায় মানুষের বের হওয়া দায়।আজ পুতুল সকালে হাঁটতে বের হয়েছে।গায়ে কালো বোরকা তার ওপরে শীতের চাদর মুড়ানো।ফজরের নামাজ শেষ করে বাড়ি থেকে বের হয়েছে।মায়ের কবর থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে মোনাজাত ধরে।অর্পণ বাইক থেকে নেমে মাথায় টুপি পরে।তার গায়ে সাদা পাজামা,পাঞ্জাবি।পুতুলের পাশে দাঁড়িয়ে একপলক তার আদুরিনীকে দেখে নিয়ে মোনাজাতে দুইহাত তুলে দোয়া পাঠ করতে লাগল।
অর্পণ মোনাজাত শেষ করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে পুতুল এখনো চোখ বুঝে আছে।অর্পণ এক ধ্যাণে তার প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে রইলো।মনে মনে বলল,
আমার রাজ্যের রাণীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।ভালবাসার মুকুটে তোমায় সবসময় ভালই মানায়।
তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ থাকবে।তোমার নিঃশর্ত ভালবাসা এবং যত্ন দিয়ে আমায় প্রাণবন্ত করে তোলে।শুভ জন্মদিন আমার আদূরনী।
চলবে…
#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩৬
১১৩.
তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ থাকবে।তোমার নিঃশর্ত ভালবাসা এবং যত্ন দিয়ে আমায় প্রাণবন্ত করে তোলে।শুভ জন্মদিন আমার আদূরনী।জম্মদিনে উইশটা করতে দেড়ি হয়ে গেলো।পরেরবার সবার আগেই আমি তোমায় জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবো।
পুতুল চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে অর্পণ তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।পুতুল আগের কথা মনে করতেই ঢোক গিলো।তাড়াহুড়ো করে পিছনে পা ফেলতে হোচঁট খেয়ে পড়তে নিলেই অর্পণ,পুতুলের ডান হাতটা ধরে ফেলে।
চোখের সামনেই কি ঘটে গেলো?পুতুল ভয় পাচ্ছে।আবার নিজের ওপর রাগ হচ্ছে।এই প্রথমবার কোনো পুরুষ তার হাতটা স ইচ্ছা ধরেছে।আর সে অপর হাতটা না সরিয়ে সেই হাতটাকে নিজের অজান্তেই আঁকড়ে ধরলো।
পুতুল হাতটা ছুটিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ির পথে হাঁটতে লাগে।
পুতুলের এমন করায় অর্পণ রাগ করেনি।বরং মুচকি হেসে তার পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে।
আই এম সরি।আসলে আমার সেইদিন অন্য একটা বিষয় নিয়ে একটু রাগ ছিলো।সেই রাগটা তোমার ওপর দেখিয়ে ফেলেছি।যা আমার করা একদম উচিত হয়নি।আই এম রিয়েলি সরি।প্লিজ সরি একসেপ্ট কর।দেখ তুমি যদি আমার সরি একসেপ্ট না কর।তাহলে আমি খুব কষ্ট পাব।আমি মানছি।আমার ওই রকম রিয়াকশন দেওয়টা ভুল জায়গায় ছিল।তার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী।
অর্পণ এত করে সরি বলাতেই পুতুল চোখ ঝাপটিয়ে বলল,
ইস ওকে।সে পুতুলের ভাষাটা হয়তো ততক্ষণে বুঝে নিয়েছে।
এইদিকে চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলের সাথে পুতুলকে দেখতে পায় সবুর মিয়া।
ওহ তাইলে গ্রামে এসব কাহিনি চলে।এরজন্যই কি স্বাধীন প্রস্তাব মেনে নেয়নি।বড়োলোক বাড়ির পিছনে মেয়েকে লেলিয়ে দিয়ে স্বাধীনের এখন সাধু সাজা হচ্ছে।দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।
বাহ,বাহ,কি অপরুপ দৃশ্য?দেখলেই মনে হবে গ্রামের মধ্যে প্রেমলিলা চলছে।মেম্বার আপনি চুপ থাকলেও গ্রামের মানুষ কিন্তু চুপ থাকবে না।তারা কিন্তু এসব মানবে না।এটা একটা বিহিত করেন।
রমিজ মেম্বার চেয়ারে বসে বলল,জমি চাইলাম দিলো না।জমিটা টাকা দিয়া কিনতে চাইলাম।তা ওহ মানলো না।চুপচাপ মেনে নিলাম।দাতঁ কামড়ে সয্য করলাম।আবার ভাতিজার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিলাম মানলো না।কিন্তু এখন তোও এসব ফষ্টিনষ্টি মেনে নিবো না।সবুর গ্রামের লোকের কানে একটু কথাটা তুলো।আর হ্যা অবশ্যই ঘি টা যেন বেশি পরে।আজ রাতই হবে ওদের শেষ রাত।আমি ওদের এই এলাকা ছাড়া করব।তারপর সুযোগ বুঝে রাতের শেষ প্রহরের মেরে গুম করে দিব।সকাল হওয়ার আগেই রাজীব হকের বাড়ির সব লোক নিরবংশ হবে।
মেম্বার রমিজের কথায় পুতুলের গায়ে মিথ্যে কলঙ্ক দাগ লাগিয়েছে।পুরো গ্রামে ছড়িয়ে দিয়েছে।চেয়ারম্যান ছেলের সাথে স্বাধীনের ভাগ্নীর অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে।গ্রামের লোক ছি,ছি, ছি করতে লাগল।স্বাধীনদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার পথেই মহিলারা থু, থু মারছে।মহিলাদের ব্যাবহারে পুতুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবটা দেখেই এগিয়ে আসে।
দেখ মায়ের মতো নষ্টামি করে সাধু সাজছে।যেনো ভাজা মাছটা ওহ উল্টে খেতে জানে।অথচ পুরো মাছটাই খেয়ে বসে আছে।নষ্টা মেয়ে কোথাকার।
স্বাধীন ঘর থেকে বের হয়ে এমন কটুবাক্য শুনে চিতকার করে।
আপনাদের এত বড় সাহস।আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার মেয়েকে মিথ্যে দোষারোপ করেন।আমার মেয়ে আপনাদেরটা খায় না-কি পড়ে।যে বাড়ি বয়ে এসে কোথা শুনাচ্ছেন।কোন অধিকারের এসেছেন আমার মেয়েকে কথা শুনাতে?আমি আপনাদের সেই অধিকার দেয়নি।আর একবার আমার মেয়েকে নিয়ে যে কু কথা বলবে।তার জিহ্বা আমি কেটে আমার বাড়ির সীমানায় ঝুলিয়ে রাখব।যান এখান থেকে।
ওহ মা এ দেখি অন্যায় করে গলা বাজি করছে।এই শিক্ষায় শিক্ষিত করছো মেয়েকে।বড়লোক বাড়ির ছেলের পেছনে বোবা মেয়ে লাগিয়ে আবার বড় বড় কথা বলছো।লজ্জা তোমাদের নেই।কিন্তু আমাদের আছে।আমরা আর এই নষ্টা মেয়েকে আমাদের গ্রামে রাখব না।এই মেয়েকে আজই গ্রাম থেকে বের করব।মেম্বার সাহেবকে খবর দিচ্ছি।তিনি যা করার করবেন।কথায় আছে না জোরের মায়ের বড় গলা।অন্যায় করে আবার উচ্চস্বরে কথা বলা বের করছি।
মহিলাদের কথা শেষ হতে দেড়ি।রমিজ মেম্বার গ্রামের ছেলেপেলে এমনকি গ্রামের কিছু লোক নিয়ে স্বাধীনদের বাড়িতে হাজির।তার সাথে গুন্ডা টাইপের লোক নিয়ে এসেছে এদের প্রত্যেকের হাতে বাশঁ,দা,ছুরি।বাড়িতে এত হৈচৈ শুনে মিলন,সাজু,রেনু একটু আগেই ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসে।পুতুলকে নিয়ে এমন জগন্য অপবাদ শুনে রেনু মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
আমাদের পুতুল কিছু করেনি।আপনারা তাকে ভুল বুঝছেন।
পুতুল তুই চুপ করে আছিস কেন?ওরা যা বলছে সেসব সত্যি নয়।তুই বল,চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে তোর কোনো সম্পর্ক নেই।ওরা শুধু শুধু তোকে দোষ দিচ্ছে।আমি জানি তোও।আমাদের পুতুল কিছুই করেনি।
পুতুল দুই চোখের পানি ফেলে মামার দিকে ছুটে গেলো।হাত নাড়িয়ে বলছে,
গ্রামের লোকেরা তাঁকে ভুল বুঝেছে। চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।সে লোভী নয়।টাকার জন্য সে কাউকে ফাসায় নিই।
স্বাধীন মেয়ের চোখের পানিটুকু মুছে দেওয়ার আগেই পুতুলকে ধাক্কা দিয়ে গ্রামের কিছু মহিলাদের হাতে তুলে দেয়।স্বাধীন ধরতে গেলে তাঁকে গ্রামের পুরুষরা আটকে ধরে রাখে।মেম্বারের ভাড়া করা গুন্ডাগুলো বাঁশ দিয়ে স্বাধীনকে পিটিয়ে যাচ্ছে।মামার চিতকারের পুতুল ছটপট করতে লাগল।সবার কাছে হাত তুলে আকুতি বিনুতি করলো তাকে ছেড়ে দিতে।কিন্তু তাকে ছাড়া হলো না।রেনুকে ঘরে আটক রেখেছে।আর সাজু,মিলনকে খুঁজে পাওয়া যায় নিই।
এই মেয়ের চুল কেটে নেড়া করুন।মুখে চুলকানি মাখিয়ে দশ গ্রাম হাঁটিয়ে এলাকার বাহিরে ছুড়ে মারুন।রাজিয়া তার নাগরের লগে ভাইগা এই খা*নকিরে জম্ম দিয়েছে।মায়ের মতো নটি*মা* একটা।আজকে ওরে এমন শিক্ষা দিমু।গ্রামের মধ্যে এসব কু*র্কাম করা সাহস দ্বিতীয়বার করার কথা কেউ ভাববে না।
মেম্বার কথায় স্বাধীন চিতকার করে।পুতুলকে ছেড়ে দিতে বলে।রেনু দরজা ধাক্কায় খুলে দেওয়ার জন্য।কিন্তু তাদের কথা কেউ শুনে না।মেম্বারের কথা মতো।তারা পুতুলের চুল কেটে নেড়া করার সিদ্ধান্ত নেয়।পুতুল তাদের সামনেই নিশ্চুপ।একটা শক্ত পাথর।তার কানে আসছে মায়ের নামক করা উপরোক্ত কথাগুলো।মামাকে মারার দৃশ্য।রমিজ মেম্বার ইশারা দিতেই।একজন পুরুষ পুতুলের মাথায় পেচানো ওড়না টান মেরে খুলতে গেলেই পুতুল ঘুরে লাথি বসায়।পুতুল একজন পুরুষকে আঘাত করতেই আরেকজন পিছন থেকে বাশঁ দিয়ে পুতুলের পিঠের মধ্যে ঠাসস করে বারি মারে।পুতুল মাটিতে পরে যায়।চোখ দিয়ে পানি পরে।মেয়েটা ব্যাথা কুকিয়ে উঠে।কিন্তু তার কষ্ট দেখা’র জন্য কেউ বসে নেই।সবাই আজ তাকে মেরে ফেলতে এসেছে।
পুতুলের গায়ের ওড়না টান দিয়ে নিতেই পুতুল দৌড়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করে।মাটিতে কপাল ঠুকে।কেন তার বেলায় এত কষ্ট?এত মরণ জন্তনা কেন?মনে মনে আল্লাহ কাছে নিজের মৃত্যু কামনা করে বসে।সে আর পারছে না।আজ তার জন্যই তার মামার পরিবারে অশান্তি।গ্রামের লোকেরা তাদের আগেই এক ঘর করেছে।তার অপয়ার জন্য আজ এই ভয়ংকর অবস্থা হয়েছে।সেই দায়ী।পুতুলের ভাবনার মাঝেই নিজের ঘরের মধ্যে কেরাসিন তেলের গন্ধ পেয়ে চমকে উঠে।বাহিরে থেকে গ্রামের লোকেদের শব্দ আসছে।তারা তাঁকে পুড়িয়ে মারবে।পুতুল কান্না মাঝে-ও হেঁসে দেয়।সেই ভালো হবে।
তার জন্য এই সুন্দর পৃথিবী নয়।সে ভুল করেছে।জম্মের সাথে সাথে মরে গেলেই ভালো হতো।বাবা,দাদী তাকে দেখতে পারেনি।আজ যাদের জন্য সে হেঁসেছে,খেলেছে।স্বপ্ন দেখেছে।সেই তাদের কে কত বড় শাস্তি দিলো?আমাকে মাফ করে দিও মামা।আমি পারলাম না নিজের লড়াই একা লড়তে।আমি হেরে গেলাম।আমাকে মাফ করে দিও।আর আসবো না তোমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে।এই পৃথিবীতে আমার মতো বোবা মেয়েটিকে মানায় না।এখানে আমি বড্ড বেমানান।আমি চলে যাচ্ছি মামা।তোমাদের কারো ওপর কোনো রাগ অভিমান রইলো না।শুধু আপসোস থেকে যাবে।আমি
হেরে গেলাম।পুতুল,ইউ আর লু’সার।
দাউদাউ করে আগুনের লেলিহান দাবালনের শিখায় শেষ হয়ে যাচ্ছে একটি বোবা মেয়ে।তার কষ্ট,তার আত্মনাত তার না বলা কথাগুলো আর বলা হবে না।তার স্বপ্ন সেটা অসম্পূর্ণ পরিত্যাক্ত হয়ে গেলো।
এইদিকে অর্পণের বাড়ির সামনে এসেছে সাজু,মিলন।দারোয়ান কিছুতেই ঢুকতে দিচ্ছে না।তার একটাই কথা বড় সাহেব অনুমতি ছাড়া সে কাউকে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে দিতে পারবে না।সাজু,মিলন খুব আকুতি করছে।বাহিরে চিতকার চেচামেচি শুনে অসীম তালুকদার বাড়ির বাগান সাইড থেকে বের হয়ে আসেন।দুইজন স্বল্পবয়সী বালকে দেখে এগিয়ে আসেন।
ওদের কে আসতে দেও।দারোয়ান গেইট খুলতেই মিলন,সাজু ছুটে আসে।
অ..র্প..ণ ভাই কোথায়?
তোমরা কে?আর অর্পণকে খুঁজছো কেন?
প্লিজ তার কাছে যেতে দিন।আমার আপুর খুব বিপদ।
অসীম তালুকদার কিছুই বুঝতে পারছেন না।
এই দিকে মিলন,সাজু তাকে বুঝানোর সময় নেই।তারা বাড়িতে ঢুকেই অর্পণকে খুঁজে।অর্পণ দুই ভাইয়ের পাশে বসে ল্যাপটপে ভিডিও কলে পার্টির লোকের সাথে ডিসকাস্ড করছিল।এমন সময় তারই সামনে মিলন,সাজুকে দেখে চমকে উঠে।কিছু বলা আগেই মিলন,সাজু একসাথে ব’লে ওঠে আমার আপুকে বাঁচান।ওরা আপুকে মেরে ফেলবে।অর্পণ কাজ ফেলে ছুটে আসে।
কারা মেরে ফেলবে?
ওরা।মিলন,সাজু বাড়িতে হওয়া ঘটনা বলতে দেড়ি অর্পণের বাড়ি থেকে বের হতে দেড়ি হয়নি।নিজের বাইক নিয়ে ছুটে।অপরদিকে ছেলেকে এলেমেলো দেখে ঠিক লাগলো না।অসীম তালুকদার জিহান,রিহান,এবং মিলন,সাজুকে নিয়ে গাড়িতে উঠেন।উদ্দেশ্য রোহিতপুর গ্রাম।
চোখের সামনেই সব শেষ হয়ে গেছে।বাড়িটা আর বাড়ি নেই।পুতুলের ঘরটা চোখের সামনেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।অর্পণ পাগলের মতো পুতুলকে ডাকতে লাগল।কিন্তু পুতুল তার ডাকে সাড়া দিচ্ছে না।স্বাধীন মেয়ের মৃত্যুটা চোখের সামনে মেনে নিতে পারেনি।বাড়ির উঠোনেই জ্ঞান হারিয়েছে।রেনু এখনো দরজা খুলে দিতে ব’লছে।আগে চিতকার করায় গলা বসে গেছে।তার গলা দিয়ে জোরে শব্দ করতে পারছে না।বাহিরে এতখন শোরগোল থাকলেও এখন সব নিস্তব্ধ।এ যেন এক মৃতুপুরী।
অসীম তালুকদার পৌঁছে যান। মিলন দের বাড়ি দেখে বুঝতে পারলেন।খারাপ কিছু হয়েছে।কিন্তু নিজ ছেলেকে এমন হন্য হয়ে কিছু খুঁজতে দেখে ডাক দেন।কিন্তু অর্পণ তার ডাকে কথা বলছে না।অর্পণ পাগলের মতো বিহেভিয়ার করতেই হতবাক হন।এইদিকে বাড়ির অবস্থা দেখে মিলন,সাজু চিতকার করে কান্না করছে।
আপু,আপু করে পুতুলকে ডাকছে।
অর্পণ আগুনে পোড়া ঘরটাতে যেতে চায়।সেখান থেকে এখন ধোয়া উড়ছে।অসীম তালুকদার ছেলের পাগলামি দেখে জিহান,রিহানকে ধরতে বলে।তারা ভাইকে পেচিয়ে ধরে।
কিন্তু অর্পণ কাঁদছে।
বাবা আমাকে যেতে দেও।ওই ঘরে আমার পুতুল রয়েছে।ওর খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা।আমি না গেলে ওহ আসবে না।আমাকে যেতে দেও।ছাড় আমায়।তোরা আমাকে ছেড়ে দে।আমি পুতুলের কাছে যাব।পুতুল,পুতুল তুমি ভয় পেয়ে ওহ না।তোমার কাছে আমি আসছি।আমি আসছি পুতুল।
আ.ল্লা.হ!তুমি এটা কি করলা?আমার কাছ থেকেই আমার প্রাণটাই কেড়ে নিলা।আমি বাঁচব কি নিয়ে?আমি মরে যাব।আমি মরে যাব তোমায় ছাড়া।
বাবা ওহ বাবা।আমি তোমার দুইটি পায়ে পড়ছি।তুমি আমার পুতুলকে এনে দেও।আমি কথা দিচ্ছি।আমি আমার পুতুলকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব।আর কোনোদিন তোমাদের এই গ্রামে ফিরব না।আমার তাকে এখনো বলা হলো না।আমি ভালোবাসি।আমি আমার পুতুলকে খুব ভালোবাসি।পুতুল,আমি তোমাকে ভালবাসি।
অসীম তালুকদার ছেলের পাগলামি দেখে মর্মাহত হন।পুতুলের নামের কোনো মেয়েকে ভালোবাসত।এটা আরো আগে কেনো জানলেন না।আজ যখন জানলো তখন সব শেষ।
চলবে…