#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-২৮
৮৮.
আমার বাবার প্রতি আমার এক আকাশ পরিমাণ ঘৃনা।কারণ আমার প্রতিটা চোখের ঝরা পানির কারণ তিনি।বাবা শব্দ নিয়ে যত ভুলে থাকতেই চাই,ততই সামনে এসে দাড়ায়। মনে করিয়ে দেয়।আমার বিষাদময় জীবনের গল্পটা।আমি পৃথিবীতে এসেছিলাম।শুধু মাএ মায়ের কারণে।আর আজ সে নেই।বাবা নামক মানুষটি আমার পাশে আগেও ছিল না।আর এখনো থাকার প্রশ্নই উঠে না।সে আমার অতীত।অতীত হয়ে থাক।
আজ পুতুল এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে এসেছে।এটাই তার লাস্ট পরীক্ষা ছিল।বাসায় আসতেই শুনতে পায় বিদেশ থেকে তার চাচা এসেছে।তাকে দেখতে চায়।কিন্তু পুতুল তার সামনে যেতে চায়না।তার ওই বাড়ি কিংবা ওই বাড়ির কারো সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।বাবা শব্দ তার জন্য মৃত।পুতুল নিজের কথায় অনড়।সে বিন্দু মাত্র ঘর থেকে নড়লো না।তার এমন কথা দিহান সাহেব জানতে বা শুনতে পেলেন না।তিনি স্বাধীনের ঘরের বারান্দায় বসে আছেন।একটিবার পুতুলকে দেখতে চান।কিছু কথা ব’লে চলে যাবেন।কিন্তু পুতুল আসেনি।স্বাধীনের হাতে চিরকুট গুঁজে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের ঘরেই দাঁড়িয়ে রয়।স্বাধীন চিরকুট পড়ে,ছোট্ট করে নিশ্বাস ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
স্বাধীনকে দেখে দিহান সাহেব দাঁড়িয়ে যান।কিন্তু পুতুলকে দেখতে না পেয়ে বলল,
পুতুল কোথায়?সে কি একটিবার আমার কাছে আসবে না?
স্বাধীন তার প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেনি।স্বাধীন নিশ্চুপ থাকায় তিনিও খুব হতাশ হন।ছোট করে নিশ্বাস ফেলে বলল,
পুতুলের বড় আব্বু আর নেই।তিনি মারা গেছেন।
স্বাধীন চমকে উঠে।দিহান সাহেব দিকে তাকিয়ে বলল।
কবে মারা গেলেন?
তিনমাস হয়েছে।মৃত্যুর কয়েকমাস আগে থেকেই বিছানায় পড়ে ছিলেন।বিদেশে ডাক্তার দেখিয়ে ওহ কাজ হয়নি।তবে যাওয়ার আগেই তিনি তার শেষ ইচ্ছের কথা জানিয়ে যান।পুতুলের বড় আব্বু শেষ ইচ্ছে ছিল পুতুলের বিয়ে হোক।আর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী চেয়েছেন,পুতুলের হাত আমার ছেলের জন্য।কারণ দলিল অনুযায়ী পুতুলের আঠারো হতে বেশি বাকি নেই।আঠারো হলেই মেয়ে বিয়ে জন্য উপযুক্ত।পড়াশোনা সে বিয়ের পরেও করতে পারবে।এতে কারো কোনো আপত্তি নেই।কিন্তু সমস্যা ওই দলিল লিখিত তৈরি হওয়া নিয়ে।বিয়ে আঠারো মধ্যেই হতে হবে।যদি আঠারো মধ্যে বিয়ে না হয়।তাহলে সামনে যে ঝড়টা আসবে সেটা আমি কিংবা আপনি,কেউ তাকে রক্ষা করতে পারবনা।
দিহান কথায় স্বাধীন আরেকটিবার চমকে উঠে।পুতুলের বিয়ে নিয়ে সবার এত মাথা ব্যাথা কেন?আর কিসের বিপদের কথা বলছেন উনি?স্বাধীন বুঝতে পারছে না।স্বাধীন না বুঝতে পারায় দিহান সাহেব হতাশ হন।সবটা ডিটেইলসে বলতে পারছেন না।শত হোক নিজেদের রক্তের টান রয়েছে।কিন্তু স্বাধীন বিয়েটা দিতে যত দেড়ি করবে।পুতুলের মৃত্যু ততটাই ঘনিয়ে আসবে।আর পুতুলের কিছু হলে সরোয়ার বংশের কোনো অংশীদার রইবে না।
৮৯.
একজন বাবা হিসেবে বলছি না।একজন মানুষ হিসেবে বলছি।আমার ছেলে অন্তর অতটাও খারাপ নয়।সে শিক্ষিত এবং বেশ মার্জিতভাবেই চলাফেরা করে।তার কথাবার্তায় দেশের প্রতি টান রয়েছে।সে অল্প বয়সে বিদেশের মাটিতে গেছে ঠিকই।কিন্তু দেশের প্রতি অসীম ভালোবাসায় ডুবন্ত।সে দেশে ফিরতে চায়।পড়াশোনা তার শেষ।কিন্তু বিজনেসের কাজের জন্য আসতে দিচ্ছি না।সবে নতুন বিজনেসে ঢুকেছে।এমন সময় দেশে আসা ঠিক হবেনা।আমি বিয়ের ব্যাপারটা অন্তরকে এখনো বলিনি।সে এসব জানে না।আপনার অনুমতি পেলেই জানাবো।
দিহান সাহেবের কথায় স্বাধীন কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা?একদিকে মেয়ের স্বপ্ন।আর অন্যদিকে বিয়ের জন্য ভালো পাত্র।মেয়েদের বাবারা সব সব সময় মেয়ের জন্য বেস্ট খুঁজে।সেখানে তার মেয়ে’র দূর্বলতার কথা জানে কি না বুঝতে চেষ্টা করছেন।
আমি আমার মেয়েকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাই না।তাকে কথা দিয়েছি।তার স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত।কোনোকিছুতেই জোর করবোনা।
দেখুন স্বাধীন সাহেব মেয়ে আপনার।আপনার ইচ্ছে বিরুদ্ধে আমি তাকে জোর করতে পারি না।ছেলের বউ নিতে এসেছি।কোনো বিরুদ্ধ করতে নয়।আপনি শান্তি পূর্ণভাবে মেয়ে দিলেই নিয়ে যাব।এখন সময় দিচ্ছি সময় নিন।ভেবে না হয় জানাবেন।আসছি।দিহান উঠতে নিলেই স্বাধীন বলল,
মেহমান হয়ে যখন আমার বাড়িতে এসেছেন।তখন আপ্যায়ণ না করে কিভাবে ছাড়ি?আপনি এখানে থেকে যান।এই ফাঁকে না হয় পুতুলকে দেখে যাবেন।
আপনি থাকতে বলেছেন।এতেই আমি খুশি।কিন্তু আজ উঠতে হবে।আমার বন্ধু অসীম তালুকদারের বাড়িতে যেতে হবে।তাঁকে অলরেডি কথা দিয়েছি।বিজনেসে কিছু কাজ তার সাথে করা বাকি।তাই দুইদিন তার বাসাতেই থাকব।তিন দিনের দিন ফ্লাইট।দিহান সাহেব চলে যেতেই পুতুল রুম থেকে বের হয়ে আসে।কিন্তু স্বাধীন মেয়ের সাথে কোনো কথা না ব’লে হনহনিয়ে বাহিরে রাস্তা পথে চলে যায়।তার মেয়ের প্রতি অভিমান হ’য়েছে।বড়দের সম্মান করে।কিন্তু বাবা-র বাড়ির লোক ব’লে আসবেনা।এটা তোও ঠিক না।
৯০.
বাইকে বসে দুই ঠোঁটের মাঝে সিগারেট নিয়ে একটু পর পর টান দিচ্ছে অর্পন।পড়াশোনা কম্পিলিট না করে রাজনীতিতে পুরোপুরি ডুবে গেছে।সামনে ভোটাভুটি শুরু।কিছু চিন্তা করেই যাচ্ছে।জিসান,রিহান দুই চাচাতো ভাই তার পাশে বসে আছে।
কি’রে ভাই আজ তুই এত চুপচাপ কেন?অর্পন সিগারেটে শেষ টান বসিয়ে ফেলে দিল।ঠোটঁ উচিয়ে সিগারেট শেষ ধোঁয়া ছেড়ে বলল।
তোরা তৈরি হ।বাসায় যাব।দুইদিন থেকেই চলে আসবো।
অর্পন কথায় দুই ভাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলল,
সূর্য আজ কোন দিকে উঠল ভাই।যার কানে সামনে হাজারবার চিতকার করে বাসায় যাওয়ার কথা ব’লে ওহ যে বাসায় যাবেনা বলত,আজ সে বাসায় যাবে।কাহিনি কি বস?
কাহিনি কিছু না।বাসায় যেতে মন চাইলো তাই যেতে চাইছি।কেন তোদের কোনো সমস্যা?থাকলে বলল,
না,কোনো সমস্যা নেই।তুমি যখন যেতে চাইছো।তখন যাব।এই সুযোগেই তনীকে দেখা হয়ে যাবে।কতদিন ছোট বোনকে দেখি না।জিহান,রিহানের আদরের ছোট বোন।সাফিন তালুকদার এবং মাসুদা তালুকদারের একমাত্র কন্যা।
অসীম তালুকদার চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে বন্ধুর সাথে টুকটাক বিজনেস নিয়ে আলাপে ব্যাস্ত।কথায় কথায় জানতে পারলেন।বন্ধুর ছেলে কে সামনে বিয়ে দিবেন।দিহানের হাসিখুশি মুখ দেখে তার কলিজায় আঘাত লাগল।আজ ছেলেটা যদি ঠিকঠাকভাবে পড়াশোনা করে বিজনেসটাতে মনটা দিতো তাহলে শান্তি পেতেন।ভালো পরিবার দেখে একটা মেয়ে বিয়ে করাতো।এক সময় তার পুত্তের ঘরে ওহ কোল আলো করে নাত বা নাতনি আসতো।অসীম তালুকদারের গভীর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়।তার সবকিছুই আছে।কোনো কিছুর অভাব নেই।কিন্তু সুখ নামক শব্দটা এই বাড়ি থেকে কেমন যেন বিলীন হয়ে গেছে?হাসিখুশি বাড়িটা নিরবতা পালন করছে কত বছর ধরে।ছেলেকে ঢাকায় দিলেন পড়াশোনা করে মানুষ হতে।কিন্তু সে কি করলো?মাঝ পথে পড়া ছেড়ে রাজনীতিতে ডুবে গেলো।এটা বাবা হিসেবে মানতে কষ্ট হয়।নিজে চেয়ারম্যান হয়েছিল গ্রামের মানুষের জন্য।তাদের বিপদে আপদে সাহায্য যেমন করেছেন।ঠিক তেমনই ছেলের জন্য মুখ কালা হয়েছে।গ্রামের যেসব করেছিল।এখন সেসব নেই ব’লে গ্রামের মানুষ শান্তিতে আছে।ছেলেটা বাড়িতে আসেনা।কতদিন হয়ে গেছে।হঠাৎ করে এসে তো একটু চমকে ওহ দিতে পারে।তা না করে ঢাকায় পড়ে আছে।ঢাকায় তার সব।
৯১.
সময়টা গভীর রাত।রাতের আঁধারে দূর থেকে গ্রামকে দেখে চোখ জুড়িয়ে নিলো অর্পণ।চোখ বুঝে নিতেই এক এক করে মনে পড়ে গেলো সেই ছোট বেলার কথা।মায়ের সাথে তার কত সুখময় সৃতি ছিল।বাবার কোলে চড়ে গ্রাম ঘুরা।তাদের কাছেই যত বায়না আবদারের ঝুড়ি।আজ সব কল্পনা।বাস্তবে সে যে বড্ডই একা।কেউ নেই তার পাশে।বাবা ডাকলেই ছুটে এই গ্রামে আসে না।আগে পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত ছেলেটা বখাটে ছেলেদের মতোই চলে।একদিন না খেয়ে থাকলে তোমার মতো করে।কেউ ব’লে না মা।
বাবা আমি তোর পছন্দের খাবার রান্না করেছি।খেতে আয়।না খেয়ে পড়লে পড়া মনে থাকে না।খাবার গরম গরম খেতে হয়।ঠান্ডা হলে খেয়ে শান্তি পাবি না।অর্পণ সেই ডাকে পড়া মাঝ পথে থামিয়ে বলত,
মা ডিস্টার্ব কর না।পড়া শেষ করে আসছি।
শরীরে জ্বর আসলে তোমার মতো সারা রাত জেগে কেউ ব’লে না।
তোর কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমায় বল বাবা?আমি ম্যাজিক মতোই তোর কষ্ট দূর করে দিব।
অর্পন আয় বাবা তোর মাথায় তেল দিয়ে দেই।আরাম পাবি।অর্পণ এখন মায়ের কথায় আর রাগ করে না।রাগ কবেই পানিতে পরিনত হয়েছে।দূষ্টু অর্পণ দূষ্টমী সেই কবেই ছেড়েছে।রাজনীতির মহলে সবাই জানে অর্পণ গম্ভীর আর রাগী ছেলে হলেও কারো সাথে অন্যায় সে এখন করে না।তাড়াহুড়ো কোনো ডিসিশন সে নেয় না।ঠান্ডা মাথায় সবটা সামলাতে জানে।তাকে ভালো ছেলে হিসেবে জানে দলের ছেলেরা।তবে হ্যা নিজের পরিবারের কাছে যতটা পারে খারাপ প্রমাণ করে?যেমন একটু আগে বখাটে ছেলেদের মতো বাইকে বসে সিগারেট টেনেছে।বাবার ভাড়া করা লোকটা তার পিছন থেকে সরে যেতেই মুখের সিগেরেটটা ফেলেছে।একবার মুখ দিয়ে যেটা ব’লে সেটাই করে।জিদ বাবা-র মতোই পেয়েছে।অর্পণের গম্ভীর মুখের ভাব দেখে দুই ভাই কোনো কথা ব’লে না।চুপচাপ সময় চলছে।
চলবে….
#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-২৯
৯২.
বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে আছে মিলন।পড়া দেখলেই তার মাথা ঘুরায়।ঘুম পায়।হাম ছাড়তে ছাড়তে পাশে তাকাতে দেখে আপু তার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।পুতুল কাঠের স্কেল দিয়ে টেবিলে জোরে বারি মারে।যার মানে নো বাহানা।আগে পড়া শেষ কর।পড়া শেষ না হলে ছাড়ব না।
আপু আমার পড়তে ভালো লাগে না।পড়া দেখলেই ঘুম পায়।চোখে সর্রষে ফুল দেখি।এখন তুমি বলল,আমি কি করব?
চলো না আপু কিছু খেলতে যাই।খেলা শেষ হলেই আবার পড়তে বসব।
মিলনের কথায় পাত্তা দিলো না।চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল,পড়।মিলন মন খারাপ করে চুপচাপ পড়ায় মনযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে।এরমধ্যেই রেনু,পুতুলকে ডাকতেই সে মামীর কাছে চলে যায়।বোনকে বের হতে দেখেই মিলন ঠাস করে বই বন্ধ করে দিলো।
পুরনো কাঠের চেয়ারটায় আরামসে বসে গাইতে লাগল।
ভাল্লাগে না পড়াশোনা,
ভাল্লাগে না রে..!
কি যে করি
মন থাকে শুধু বাহিরে।
ওহ পড়া তুই চইলা যা।
আর ফিরে আসিস না।
তোকে দেখলেই গায়ে ওঠে একশ চার জ্বর।
মাথাটা হয় আমার আউলাঝাউলা।
আমি হই পাবনার পাগল।
মামীর কথা শুনে পুতুল রুমে প্রবেশ করতে নিলেই বেশুরে গলায় গান শুনতে পায়।জোরে কাশি দিতেই মিলনের হাওয়া ফুঁস।চুপচাপ ভদ্রবাচ্চার মতো পড়তে লাগল।আড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখলো।বোন দড়জা সামনে দুই হাত ভাজ করে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
স্বাধীন ছাগল আর গরুর জন্য ঘাস কেটে নিয়ে বাসায় ফিরেছে।দু’টো গরু কিনেছে আজ এক সপ্তাহ হবে।ঘামে তার শরীর ভিজে আছে।গোসল করতে হবে।পুতুল,মামার আসার খবর পেতেই এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিলো।মামা বসে পানি খেয়ে একটু জিরিয়ে নিতেই,মামী ঘর থেকে গামছা আর লুঙ্গি এনে দিতেই মামা গোসলের জন্য পুকুর পাড়ে গেলো।পুকুরের দু’টো ডুব দিলেই মনটা একদম চাঙ্গা হয়ে যাবে।আজ দিহান ভাইয়ের কথাগুলো পুতুলের সামনে তুলবেন।দেখা যাক কি হয়?
৯৩.
জার্মানে বসে নাইট ক্লাবের ক্যাসিনো খেলছে জেভিন রর্য়াড।পাশে তার বান্ধবীরা একটু পর পর উৎসাহিত করছে।কিন্তু জেভিনের মন খেলাতে নেই।সে স্বামী এবং ছেলের বিষয়ে চিন্তি।স্বামী তার বাংলাদেশে গেছে।কোথাকার কোন গাইয়া মেয়ে কে ছেলের জন্য বউ করে আনবেন।আমি থাকতে ইম্পসিবল।ওই গাইয়া চাষার মেয়েকে ছেলের বউ কখনোই করতে দিবো না।আমি আমার পচ্ছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে দিব।
দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।রেনু মসুরের ডাল,মুলা শাক ভাজি,পেঁপে,আলু দিয়ে তরকারি রান্না করেছে।স্বাধীন খাবার মুখে দিয়ে খেতে খেতে বলল কালকের বিস্তারিত কথাগুলো।মামার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে পুতুলের হাত থেকে ভাতগুলো পড়ে যায়।পরবর্তী আবার ভাতের লোকমা মুখে তুলতে লাগলো।মেয়ের এমন চুপচাপ থাকাটা সবাই লক্ষ্য করছে।পুতুল খাবারটা শেষ করে হাত ধুয়ে নিলো।ইশারায় বলল,আসছি।
পুতুল নিজের রুমে গিয়ে কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে চিরকুট দিল।স্বাধীনের ততখনে খাওয়া শেষ।পানি দিয়ে হাত ধুয়ে গামছায় হাতটা মুছে নিলো।পুতুলের হাত থেকে চিরকুট খুলে পড়তে লাগল।
মায়ের পরই তোমরা আমার আপনজন।এত বছর ধরে তোমাদের কাছে রয়েছি।কখনো কোনোদিন কষ্ট পেতে দেও নিই।নিজেরা না খেয়ে ওহ আমাদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছো।সাজু,মিলন,রিফাত ওরা ছোট্ট ছিল তাই বুঝতে পারেনি।কিন্তু আমিও ছোট ছিলাম।তবে অতটা ওহ ছোট বা অবুজ ছিলাম না।তখন কিন্তু সব বুঝতে পারতাম।আর তোমার এখন অবধি যত কিছু করেছো।তা আমাদের জন্য কল্যাণময় হয়েছে।তখন সবটা বুঝে শুনে ঠিক ভুল বিচার করে এগিয়েছো।তাই সামনে যা করবে।আমাদের ভালোর জন্যই করবে।আমার তোমাদের ওপর পুরোপুরি বিশ্বাস আছে।
পুতুলের কথায় যেন স্বাধীন শান্তি পেলো।তার প্রতি মেয়ের অগাধ বিশ্বাসটাই তার মনোবল আর দ্বিগুণ করলো।
আম্মা আপনি নিশ্চিত থাকেন।আপনার ছেলে আপনাকে নিরাশ করবে না।আপনি এই বিয়েতে মত দিলেই আগাবো।আর যদি না ব’লেন।তাহলেই কোনো কথা আগাবো না।আপনি একদিন সময় নিন।সময় নিয়ে ভেবে জানান।তাড়াহুড়ো কোনো কারণ নেই।স্বাধীনের মুখে হাসি দেখে পুতুলের কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেলো।এতটা খুশি কখনোই দেখেনি।আজ প্রথম এতটা প্রাণবন্তত হাসি দেখছে।এই হাসি এভাবেই থাকুক।
বোনের বিয়ের কথা শুনে সাজু,মিলন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।তাদের ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলছে।তাদের আপুর বিয়ে হবে।ওহ কি মজা হবে?এই খুশিতে রিফাত সামিল হতে পারবে।বেচারা আপু ভক্ত।সে এখন মাদরাসায় থাকে।বাবা তাঁকে মাসে একবার বাসায় আনে।বাড়িতে থেকে দিন দিন পাঁজি হচ্ছিল।তাই তাঁকে দূরে রাখা।তাকে ছাড়া কষ্ট হয়।তবুও স্বাধীন নিজের মনকে বুঝ দেয়।ছেলে একদিন হাফেজ হয়ে আসবে।তাদের মুখ আলোকিত করবে।
৯৪.
পুতুল এডমিশন নিতে কলেজে আসে।তার সাবজেক্ট সাইন্স ছিল।কিন্তু এখন নতুন কলেজে এসে বিপদে পড়েছে।নতুন শিক্ষকরা তাঁকে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে চিনেন।খবর কাগজে তার ছবি বের হয়েছিল।ছোট্ট গ্রামের মেয়ে পুতুল।ক্লাস এইট জিপিএ -ফাইভ ছিল।দশম শ্রেনীতে গোল্ডেন এ প্লাস আসছে।এর আগেই ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে উপজেলা প্রথম স্থান দখল করেছিল।সবাই তার পড়াশোনা জন্য বেশ প্রশংসা করে।কিন্তু সে কথা বলতে না পারায় নতুন শিক্ষকরা থাকে একটু অবহেলা করে।তারপর অনেক কষ্টে ফরর্ম পেয়ে কাগজ জমা দিয়েছে।ভর্তি সময় বলছে।সে সাইন্স নিয়ে পড়তে পারবে না।সে ডাক্তার হয়ে কি রোগী সেবা করবে।সে তোও নিজেই রোগী।এই কথাটায় পুতুল খুব কষ্ট পায়।তবুও আজ গ্রাম থেকে ঢাকায় আসছে।তার স্বপ্নটা যে এখনো পূরণ করা বাকি।কলেজ প্রাঙ্গণে বসে চোখের পানি ফেলছে।সে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে আছে।হাত থেকে ভর্তির কাগজটা উড়ে গেলো।পুতুল সেটা তুলার আগেই কারো পায়ে নিচে পরে গেলো।নিজের ভর্তির কাগজটা কারো পায়ের নিজে পৃষ্ঠ হতে দেখে শব্দ করে কেঁদে ওঠে।দৌড়ে আসে।অচেনা কারো পায়ের নিজ থেকে কাগজটা নেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।অচেনা মেয়ের কান্না শব্দ শুনে অর্পণ কপাল কুঁচকে নিচু মাথাটা তুলতেই অদ্ভুত সু্ন্দরর্যৌ দেখে কপালের ভাজ মিলিয়ে যায়।ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।কিন্তু পুতুল সামনের ব্যাক্তিটিকে দেখতে মোটে ওহ আগ্রহী নয়।সে নিজের ভর্তির কাগজের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে।যা অর্পণের পায়ের নিচে পৃষ্ঠ হয়েছে।
স্বাধীন মেয়ে কে কলেজের ভেতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন।মেইন গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।স্বাধীন ইচ্ছে করলেই পারতো মেয়েকে নিয়ে ভর্তি করিয়ে আসতে।কিন্তু সে যায় নিই।মেয়ে বড় হচ্ছে।তাকে নিজের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে।সে না থাকলে যেন সামলাতে পারে সেইজন্য ইচ্ছে করেই যান নিই।কিন্তু এতখন হয়ে গেলো মেয়েটা বের হচ্ছে না কেনো?স্বাধীন এগিয়ে যাবেন কি না ভাবছেন?
এইদিকে পুতুলের কান্না বন্ধ হয় না।তার ভয় হচ্ছে।এত কষ্ট করে এতদূর এসে সবটা শেষ হয়ে যাওয়া।মানতে পারছে না।কাঁদতে কাঁদতে মুখ লাল করে ফেলছে।অর্পণ তাকে যত বোঝাচ্ছে ততই ফুফিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
অর্পণের কথা পুতুল কানেই তুলছে না।কাঁদামাখা কাগজটা নিয়ে পিন্সিপালের অফিসার রুমের দিকে যেতে লাগল।পুতুল তার ময়লা কাগজটা নেওয়ার জন্য পিছনে দৌড়ে আসতে লাগে।কিন্তু লোকটা হঠাৎ অফিস রুমে ঢুকে পড়ায়।পুতুল আর এগিয়ে যেতে পারলো না।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।অপরদিকে অর্পণ নিজের কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে পুতুলের দিকে তাকাচ্ছে।তারপর কাজ শেষ হতেই পুতুলের হাতে ভর্তি কর্নফাম কাগজটা তুলে দেয়।পুতুল চোখ বড় বড় করে নতুন ফর্রমে তার সকল ডিটেইলসসহ ভর্তি কাগজ পেয়ে খুশি হয়।নিচে পিন্সিপাল স্যারের সাইন।আরেকজনের সাইন দেখতে পায়।যেখানে লিখা এমপি অর্পণ তালুকদার।
এখন এই কাগজগুলো আর ভর্তি টাকা জমা দিয়ে আসো।আর সাথে রোল নাম্বার জেনে সোজা বাসায় যাও।
পুতুল চলে যেতে নিলে অর্পণ ডেকে ওঠে।
ওই লিলিপুট।এভাবে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদবে না।দেখতে বাজে দেখায়।মনে হয় আমাদের বাগান বাড়ির পেছনের বড় তাল গাছটায় থাকা পেতনীটা কাঁদছে।
অদ্ভুত নামে পুতুল হতবাক হয়ে যায়।শেষ কথায় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রয়।অর্পণ নিজের কাজ শেষ করে বাইক নিয়ে চলে যায়।
সবকিছু ভালোভাবে মিটিয়ে রোল জেনে মামার সাথে গ্রামে ফিরে যায়।
চলবে…
#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩০
৯৫.
পুতুল বিয়ের জন্য হ্যা বলতেই স্বাধীন আলহামদুলিল্লাহ বলল।দিহান সাহেবকে খবর পাঠানোর আগেই সে নিজেই স্বাধীনের বাসায় হাজির হয়।মেয়ের রাজি হওয়ার কথাটা জানায়।বিয়ে কথাবার্তা সব ঠিকঠাক চলছে।কথা হয়,ছেলে দেশে ফিরলেই পুতুলের বিয়ে শুরু হবে।সবকিছু বন্দবস্ত করতে বলেন দিহান সাহেব।স্বাধীন তার হাত ধরে বারবার বলতে লাগলেন।তার বিয়ে পরেও যেন পুতুলকে পড়তে দেন।তার স্বপ্ন পূরণ করা হয়।দিহান সাহেব অভয় দিচ্ছেন।পুতুলের স্বপ্ন পূরণ করা হবে।দিহান কথায় কিছুটা শান্তি পান।ঠিক হয় একমাস পরে বিয়ে হবে।এবং পুতুলের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলেই বউ নিয়ে বিদেশের মাটিতে চলে যাবে।মেয়েকে অতদূরে দিতে কষ্ট হচ্ছে। তবু্ও তার জন্য এত ভালো ছেলে।হাত ছাড়া করতে চায়নি।এবং তার স্বপ্নের কথা ভেবে স্বাধীন না করতে পারেনি।
অসীম তালুকদার দিহানকে এতটা খুশি মনে গোছগাছ করতে দেখে এগিয়ে আসে।
কি ‘ বন্ধু এত খুশি কেন?
খুশি হব না মানে?আজ তোও আমার খুশির দিন।সামনে ছেলের বিয়ে কত কাজ এখনো বাকি।সেগুলো সেরে আসতে হবে।বউ,ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাক করতে হবে।বাবা থেকে শ্বশুর মশাই হওয়ার ফিলিংসটা জোস।ওইসব তুই এখন বুঝতে পারছিস না।তোর সময় হলে তখন তুই বুঝতে পারবি।আমি আজ রাতেই চলে যাচ্ছি।খুব শ্রীর্ঘই ফিরে আসবো।
দিহান কথায় অসীম তালুকদার মন খারাপ করেন নিই।একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এখনও তার আশা আছে।একদিন তার বাড়িতে বউমা আসবে।তিনিও দিহানের মতোও প্রতি নিয়ত অপেক্ষা করছেন।ভাগ্যের চাকায় কি হতে চলেছে জানা নেই?
নিজ অফিস রুমে বসে অর্পণ যতবার কাজে মনযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।ততবারই পুতুলের কান্না জড়িত মুখটা ভেসে উঠেছে।কি হচ্ছে তার?পুতুলের অতীত জানার পর থেকেই সে নিজেকে একটু একটু করে বদলাচ্ছে।পুতুলের জন্য আলাদা সফট কর্নার সৃষ্টি আরো আগেই হয়েছে।এখনো মুখে তা প্রকাশ করে নিই।পুতুল তার স্বপ্ন অবধি পৌঁছে যাক।তারপর তার মনের মানুষটিকে জানিয়ে দিবে তার মনের কথা।তাঁকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন।তাকে পুরোপুরি একটা কম্পিলিট পরিবার দেওয়া।যেখানে মা,বাবা নামক দুটি মিষ্টি শব্দ থাকবে।
ভাইয়ের মুখে হাসিটাকে লক্ষ্য করছে জিহান,রিহান দুই ভাই।কিন্তু তার খুশি কারণটা বুঝতে পারে নিই।
৯৬.
তোমার লজ্জা পাওয়া উচিত।তুমি আমার ছেলের জন্য ওমন একটা গাইয়া মেয়ে আনবে।আমি এটা মানতেই পারবো না।তবে হ্যা মেনে নিতাম।যদি আমাদের ক্লাসের হতো।ওই মেয়েটা লো ক্লাসের।ওর মধ্যে কোনো যোগ্যতা নেই।একটা গাইয়া আনকালচার মেয়ে।সে কোনোভাবেই আমাদের সাথে যায় না।দিহান ডালিং তুমি বিয়েটা ভেঙে দেও।আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের মেয়ে আছে।যেমন স্মাট তেমনই সুন্দরী।তার চলাফেরা হাইফাই মর্ডেনের।সে আমাদের ছেলের জন্য একদম পারফেক্ট।
দিহান ল্যাপটপের কাজ বন্ধ করে বলল,
জেভিন তোমার সমস্যা কি জানো?তুমি নিজে যা তেমনই সবাইকে পেতে চাও।তোমার পোশাক,তোমার কথাবার্তায় এবং বিদেশি কালচারালে বড় হ’য়েছো।তোমার মধ্যে বাঙালি আনা খুঁজতে যাওয়া নির্বোধের কাজ।তবুও তোমায় ভালোবাসি।আর ভালোবাসিই ব’লে যখন যা ব’লেছো।তাই মেনেছি।কখনো কষ্ট পাওয় এমন কাজ করিনি।কিন্তু তুমি তোমার মতো সবাইকে চালাতে চাইলে হবেনা।আমি তোমার কথা নাচবো ব’লে ছেলেকেও নাচতে হবে তার কোনো মানে নেই।আমি মুখ বুঝে তোমার সব আবদার মেনে নিলেও ছেলের ওপরে কোনো বাহানা শুনব না।সামনে ছেলের বিয়ে তৈরি থাকো।আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরব।স্বামীকে যতই বুঝাতে চাইছেন ততই তিনি বেঁকে বসছেন।ছেলের বিয়ে না-কি বাংলাদেশেই দিবেন।তিনি রেগে মনে মনে ব’লেন।
আমি দেখব ওই মেয়ে কি করে আমাদের সাথে জড়ায়?একবার বিয়েটা হোক।তারপরে বুঝবে মজা।তুমি শুধু দেখবে এই জেভিন তোমার সাথে কি কি ঘটায়?
আজ অনেকদিন পরে তালুকদার বাড়িতে অর্পণ পা রাখল।ভাইয়ের হঠাৎ গ্রামে ছুটে আসা নিয়ে জিহান,রিহান কিছুই ব’লে না।এতদিন পর ছেলেকে দেখে অসীম তালুকদার হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে থাকেন।ছেলের কাছে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে ছুটে আসেন।বাবা এমন হুর মুরিয়ে সামনে আসায় নিজেকে আবার গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে রয়।বাবাকে কিছু বলতে চাইলে।তিনি প্রশ্ন করেন।
কেমন আছে আমার শের?আমার আদরের একমাত্র সন্তান কি মনে করে আজ তালুকদার বাড়িতে?
কেন আসতে পারি না?
সে তুমি অবশ্যই আসতে পারো।তোমার যখন খুশি তখনই আসতে পারো।এই তালুকদার বাড়ির দরজা তোমার জন্য সব সময় খোলা।
বা.. বা আমি তোমায় কিছু বলতে চাই।
আজ এতদিন পরে ছেলের মুখ থেকে বাবা ডাকটি শুনে চমকে উঠেন।তবুও নিজেকে শান্ত রেখে ছেলের পরবর্তী কথা শুনতে অপেক্ষা করছে অসীম তালুকদার।
কিন্তু অর্পণ তার কথা মুখে বলবার আগেই তালুকদার বাড়ির ল্যান লাইনের মোবাইলটা উচ্চ শব্দে কেঁপে ওঠে।অসীম তালুকদার ছেলের কথা শুনার জন্য অপেক্ষা করছেন।কিন্তু ফোন একটুও পর পরই বেজেই যাচ্ছে। সে আজ থামতেই চাইছে না।এত বাজার
পরেও যখন অসীম তালুকদার এগিয়ে গিয়ে মোবাইলটা রিসিভ করেনি।তখন
অর্পণ এগিয়ে গিয়ে মোবাইলটা কানের কাছে নেয়।
৯৭.
হ্যালো অসীম।আমি দিহান বলছি।আমরা আগামী কালই বাংলাদেশে আসছি।পুতুলের জন্য বিয়ের গহনা থেকে শুরু করে সবকিছুই আনা হচ্ছে।তুই তোও জানিস স্বাধীনের ভাগ্নীর সাথে আমার ছেলের বিয়ে হচ্ছে।এবং সেটা এই সপ্তাহ মধ্যেই পড়েছে।পুতুল আর অন্তরকে যা মানাবেনা।ভাবতেই খুশি লাগছে। মেয়েটা কি শান্ত সৃষ্ট?একদম পরী।আমার ছেলের ভালোবাসা।বিয়ে পরই মেয়েদের আসল ঠিকানা স্বামীর ঘর।সেই পুতুল আজ আমার ছেলের জীবনে পুরোপুরি বাঁধতে চলেছে।
অর্পণের কানটা মনে হয় বিষাক্ত সাপে কামড়ে দিয়েছে।শরীরের রক্ত চলাচল মনে হয় বন্ধ হয়ে গেলো।বুকের ভিতরের ছোট হার্টবিটটা আজ জোরে জোরে বাজছে।মনে হচ্ছে এখুনই বেরিয়ে আসবে।এটা কি শুনলো?তার পুতুল অন্য কারো ভালোবাসা।
তার পুতুলের মনে অন্য কারো বসবাস।হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেছে সেই কখন।ওপাশ থেকে দিহান ব’লে যাচ্ছে।
হ্যালো,অসীম আমার কথা শুনতে পারছিস।অনেকবার হ্যালো হ্যালো ব’লে যখন কোনো রেন্সপন্স পেলো না।তখন ফোনটা কেটে গেছে ভেবেই রেখে দিল।পরে আবার ফোন দিবে।
অর্পণের কপাল বেয়ে চিকন ঘাম বেয়ে নিজে পড়তে লাগল।তার চোখ লাল হয়ে উঠেছে।হঠাৎ করে নিজের বুকটা চেপে ধরে।এখানে অসয্য ব্যাথা করছে।কেমন অস্থির লাগছে।অসীম তালুকদার ছেলের এমন অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যান।ছেলে কে দুই হাতে জড়িয়ে ডাকতে লাগল।
অর্পণ,বাবা আমার কি হয়েছে তোর?এই অর্পণ কথা বল।জিহান,রিহান এতখন বাবা,ছেলেকে আলাদা কথা বলতে দেখে উপরে গিয়েছিল।চাচার এমন চিতকারে দৌড়ে ছুটে আসে।
নিজ চোখের সামনে ভাইয়ের সুন্দর মুখখানা টকটকে লাল হয়ে উঠেছে।বুকটা চেপে কেমন নিশ্বাস ফেলছে।মনে হচ্ছে প্রাণ পাখিটা খাঁচা ছেড়ে উড়াল দিবে।অর্পণ এই অবস্থা দেখে মাসুদা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।চোখের সামনে এটা কোন অর্পণকে দেখছেন।তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে খবর দিলেন।
৯৮.
“হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো,বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম ব’রে।
সুরমা-কাজল পরাও কন্নার ডাগর নয়নে,
আলতা বিছপা রাঙা দুটি,রাঙা চরণে
ভরা কলস ছলাৎ ছলাৎ ডাঙা এ নিতল।
নদীর ঘাটে এসেছে কিছু মহিলা।তাদের মধ্যে স্বাধীনের বউ আছে।পুতুলের গায়ে হলুদ দিয়ে গোসল করাবে।সেইজন্য পানি নিতে আসছে।পুকুরের পানি নিতে শেষ সিঁড়িতে বসে খালি কলস ডুবিয়ে পানি নিচ্ছে।এত সুন্দর দৃশ্যটা ফটো ক্লিক করছে অন্তর কিছু কাজিনরা।তারা বিদেশে মাটিতে বড় হয়েছে।এর আগে এমন দৃশ্য দেখে নিই।বয়স্ক মহিলাদের দেখলো,হলুদ শিল নুড়িতে পিশে নিয়েছে।এবং সেটা মিহিন হতেই বাটিতে তুলে নিচ্ছে।তাদের মুখে এসব গ্রাম গানগুলো শুনা যাচ্ছে।
পুতুলের গায়ে হলুদ শাড়ি।চুলগুলো হাত কোপা করা।হিজাব ছাড়া কখনো বের হয়নি।আজ এতগুলো পুরুষের সামনে ঘর থেকে বের হতে হবে।ভাবতেই বুকটা হু হু করে কাঁদছে।সে এভাবে বিয়ে করতে চায়নি।তাকে কেন পরপুরুষে দেখবে এবং হলুদ ছুয়ে দিবে।সেসব ভেবেই অস্থির হচ্ছে।মামাকে ঘরে এনেছে।বাড়িতে এত এত কাজ সেখানে থেকে ছুটে এসেছে।পুতুলের অস্থিরতা কারণ বুঝতে পারেন।ধীর পায়ে এগিয়ে এসে মেয়ের কপালে চুমু বসিয়ে বলল,
আমার আম্মাটা কবে এত বড় হয়ে গেলো?এই তোও সেইদিন ছোট ছোট পায়ে সাড়া উঠোনে খেলেছে,দৌড়েছে।সারাদিন খাটাখাটুনি করে বাসায় ফিরতেই লেবু শরবত করে দিয়েছে।লেবু না থাক এক গ্লাস ঠান্ডা পানি অন্তত দিয়েছে।শীত আসলেই আমার গায়ে চাদরে মুড়িয়েছে।আমি আমার আম্মার থেকে কতটা ভালোবাসা পেয়েছি।আজ সেই আম্মাটা না-কি সারাজীবনের মতো পরের ঘরে চলে যাবে।ভাবতেই ভীষণ কান্না পায়।আমার আম্মা এত বড় না হলেই ভালো হতো।আমার আম্মা চলে গেলে আমি কি নিয়ে থাকব।মেয়েরা বড় হয় কেন?আর কেন বাবার মায়া কাটিয়ে চলে যায়।স্বাধীনকে কাঁদতে দেখে পুতুলের কান্না পায়।সে ফুফিয়ে কাদে।মাথা নাড়িয়ে ব’লে সে কোথাও যাবে না?মেয়ে এমন পাগলামিতে সায় দিলো না।অনেক বুঝিয়ে চলে আসেন।একটু পরেই পুতুলের গায়ে এক এক করে হলুদ ছোঁয়া হয়।তবে কোনো পুরুষকে সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি।পুতুলের জন্য স্বাধীন নিষিদ্ধ করে।
চলবে…