#গোলকধাঁধা
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১০
ইদানীং কাজের চাপে পরিবারকে সময় দেওয়াটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রত্যয়ের জন্য। মা-বাবা, সিরাত যে ওর ওপর রেগে আগুন তা সে ভালোই বুঝতে পারে। তাছাড়া নিজেও ফুরসত পাচ্ছে না। সারাদিন কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান শুনতে শুনতে ও ক্লান্ত। এই কাজ, সেই কাজ, এর-ওর অপরাধের বিচার, প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই সব মিলিয়ে মাঝেমধ্যে মন বিষিয়ে ওঠে ওর। ইচ্ছে করে সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যেতে, কিন্তু তা সম্ভব হয় না। কাগজে একের পর এক সাইন করারত
অবস্থায় হঠাৎ ফোন বেজে ওঠলো ওর। চোখ সরিয়ে দেখলো প্রত্যাশার নাম্বার থেকে এসেছে।
রিসিভ করলো প্রত্যয়। ধরেই ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
‘প্রচন্ড ব্যস্ত, কি বলবি দশ সেকেন্ডে বল।’
প্রত্যাশা শক্ত গলায় বলল,
‘আসলে সোহা এসেছে। প্রত্তু প্রত্তু করে পায়ে-পায়ে
ঘুরে বেড়াচ্ছে। আচ্ছা তুমি যখন ব্যস্ত কি আর করার! রাখছি, কাজ করো।’
এটুকু বলে ফোন কেটে দিলো প্রত্যাশা। কিছুক্ষণ চেয়ারে ‘থ’ হয়ে বসে রইলো প্রত্যয়। সোহাকে দেখে
না আজ প্রায় তিন সপ্তাহ হতে চললো। গুণে দেখলো সে। এত আদুরে বাচ্চাটা যে ভালো না বেসে থাকতে পারে নি সে। এই মুহূর্তে ভীষণ লোভ জন্মালো মনে, পালিয়ে যাওয়ার লোভ! মস্তিষ্ক জ্যাম করা বিষন্ন, একঘেয়ে কাজকর্ম ফেলে ছোট্ট সোহাকে কোলে নিয়ে ছাদে ঘুরতে ইচ্ছে হলো ওর। তাই মিনিটেই নিজের সিদ্ধান্ত বদলে ফেললো ও। মাহিনকে ডেকে সব কাজকর্ম ওর ওপর চাপিয়ে দিয়ে সন্ধ্যা নামতেই
বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো সে। এদিকে কাজের চাপে মাহিনের মুখ ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। গার্লফ্রেন্ড অধরার সাথে ডিনারে যাওয়ার কথা আজ। এই কথা সে বলতেও পারবে না প্রত্যয়কে। বললেই তার চাকরি নট, এদিকে যেতে না পারলেও অধরার থেকে কানের নিচে দু-চারটে খেতে হবে। কিন্তু সব বিবেচনা করে কাজটাকেই গুরুত্ব দিলো সে, অধরাকে লম্বা একটা টেক্সট পাঠিয়ে প্রত্যয়ের দিয়ে যাওয়া কাজে মন দিলো।
বাড়ি ফিরে প্রত্যয় ফ্রেশ হয়ে প্রথমেই সোহাকে নিয়ে সারা বাড়িময় ঘুরে বেড়ালো, খেললো। সোহা ওকে প্রত্তু বলে ডাকে আর সে ‘হা’ হয়ে, মুগ্ধ চোখে দেখে। এত কিউট লাগে সোহাকে যে দু’হাতে গাল টেনে দেয় ওর। এদিকে প্রত্যাশা বেশ মজা পাচ্ছে ভাইয়ের কান্ড দেখে।
মুশফিকা চৌধুরী ময়দা মাখতে মাখতে সিরাতকে
ডেকে বললেন,
‘দেখো, একটা ছেলেমেয়ে আসলে তবেই ছেলেটা ঘরমুখো হবে।’
সিরাত বললো,
‘যে ঘরে থাকতে চায় না, তাকে ঘরমুখো করে কি
লাভ? এত এত এক্সিডেন্ট হলো, আপনার অসুস্থতা, বাবার ধমকি কিছুই তো ওনি গণ্য করেনি। তাহলে একটা বাচ্চা কিভাবে ওনাকে আটকে রাখবে ঘরে?
তাছাড়া শুধু আমাকে বললেই তো হবে না মা,
ওনার ও তো বুঝতে হবে তাইনা? ওনি তো আমার
কথা শুনেনই না।’
মুশফিকা চৌধুরী ওর কথাটা তেমন পছন্দ করলেন
না। তার মতে সিরাত একটা বেয়াদব আর স্বার্থপর মেয়ে। খামখেয়ালিপনা করে বেশি, তার ছেলের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই ওর। তিনি বেশ কাঠখোট্টা গলায়ই বললেন,
‘তুমি ভারী বেয়াদব মেয়ে। মুখে মুখে তর্ক করার স্বভাবটা পাল্টাও।’
‘দুঃখিত। তবে আমার মনে হয় না আমি ভুল কিছু বলেছি!’
‘এত কথা জানি না, কাজে যাও।’
সিরাত চলে এলো সেখান থেকে। ভীষণ বিরক্ত আর অপমান বোধ হচ্ছে। শ্বাশুড়ি বিচ্ছুর মতো তার পিছু পড়ে আছে, আজব! এতবড় দামড়া ছেলের সাথে না পেরে এখন ওকে চাপ দিতে এসেছে। রাতের খাবার পর্ব শেষ করে সব কাজ গুছিয়ে বাকিটা বুয়াকে বুঝিয়ে দিয়ে একটু ফুরসত পেলো সিরাত। ড্রইংরুমে গিয়ে দেখলো প্রত্যয়ের কোলে ওঠে সোহা ওর গালে খামচি দিচ্ছে আর প্রত্যয় ছাড়ানোর চেষ্টা করলেই চিৎকার দিচ্ছে। ও ছুটে গিয়ে সোহাকে ছাড়িয়ে নিলো। এরপর বকাঝকা করতে করতে ঘরে চলে এলো ওকে নিয়ে। প্রত্যয়ও এলো পেছন পেছন। ধমকে বলল,
‘এভাবে বকছো কোন সাহসে? দাও ওকে আমার কাছে।’
সিরাত কঠোর গলায় বলল,
‘আপনি এই সময়ে এখানে কেন? অফিসে যান। এত আদিক্ষেতা কেন দেখাতে এসেছেন?’
প্রত্যয় অবাক হলো,
‘মানে?’
‘ও কি আপনার বাচ্চা? এত আদর দিয়ে মাথায় তুলছেন যে? লাগবে না আপনার এত ভালোবাসা। নিজের মুরগীর খবর নেই, আরেকজনের বাচ্চা নিয়ে আদিক্ষেতা যত্তসব।’
সিরাতের ভাষা দেখে প্রত্যয় বিস্মিত হলো। এই মেয়ে এসব ভাষাও জানে নাকি? পরক্ষণেই রেগে বলল,
‘শাট আপ বেয়াদব।’
সিরাত তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
‘হু আমি তাই।’
বলে সোহাকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। প্রত্যয় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। নিজেও গিয়ে শুলো। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘কি হয়েছে আমার বাঘিনীর? এমন করছে কেন?’
রাগের মাথায় সিরাত হঠাৎই বলে বসলো,
‘ছোট্ট বাঘ ছানার জন্য হাপ্যিতেশ করছে সবাই।’
প্রত্যয় ঝট করে মুখ তুলে চাইলো। অবাক চোখে তাকালো,
‘কি?’
সিরাত লজ্জা পেয়ে গেলো। একি বললো সে? কথা এড়ানোর জন্য বলল,
‘কিছুনা। আচ্ছা আপনার কাজ নেই?’
প্রত্যয় ক্লান্ত গলায় বলল,
‘অনেক কাজ।’
সিরাত মুখ গোঁজ করে বলল,
‘আপনি প্লিজ কিছুদিন বেকার থাকুন।’
‘কেন?’
‘বাড়িতে সময় দিন। মায়ের প্রেসারটা ঠিক নেই
ইদানীং, মেজাজও তিরিক্ষি। খাওয়াদাওয়া করছেন
না ঠিকঠাক। আমার মনে হয় আপনার চিন্তায় ওনি একদিন ঠিক পাগল হয়ে যাবেন।’
প্রত্যয় ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলল,
‘আর তুমি?’
‘আমি কি?’
‘বেকার স্বামীর চিন্তায় তুমি কি হবে?’
‘কিছু হবো না, কিন্তু আপনাকে ভালো রান্না করে খাওয়াবো।’
‘তাই নাকি? কিন্তু এত খাওয়ালে তো আমি ভুড়িওয়ালা হয়ে যাবো।’
সিরাত হেসে বলল,
‘ভালোই মানাবে আপনাকে। ভুড়িওয়ালা বেকার মোরগ।’
প্রত্যয় নাকমুখ কুঁচকে বলল,
‘ইডিয়ট। ভুড়িওয়ালা মোরগ আমি হতে চাই না।’
সিরাত হেসে ফেললো। গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
‘কতদিন পর আপনার সাথে দুটো কথা বলার সুযোগ হলো বলুন তো!’
‘সেটাও সোহার জন্য!’
সিরাত রেগে ওর গলা ছেলে দিলো,
‘আমার জন্য কখন সময় বের করবেন আপনি?’
প্রত্যয় অপরাধী গলায় বলল,
‘আমি চেষ্টা করছি, হয়ে ওঠছে না।’
সিরাত কঠোর গলায় বলল,
‘বুঝেছি সত্যিই ছানাপোনা হলে আপনার
সময় হয়ে ওঠবে।’
প্রত্যয় নির্বিকার চেয়ে থেকে কিছু একটা ভাবলো। এরপর আচমকা কিছু না জানার ভান করে সরু
কন্ঠে বলল,
‘আমি সঠিক জানি না। কিন্তু ফোলা পেটে তোমাকে কেমন লাগবে সেটা ভেবেই আমার হাসি পাচ্ছে।
আমি হয়তো তোমার মতো সুন্দরী মুরগীকে এইভাবে দেখার লোভে আর অফিসেই যাবো না। ওমন প্রতিবাদী, মানবদরদী সিরাত কীভাবে শত্রুর প্রেমে পড়ে তার ছানাপোনার মা হতে যাচ্ছে সেটা উপভোগ করার আনন্দ পৃথিবীর সব আনন্দের ঊর্ধ্বে
হবে তখন! আমি এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে
চাই না।’
সিরাত ভীষণ রেগে গেলো। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে
বললো,
‘ইতর লোক।’
প্রত্যয় বাঁকা হাসলো,
‘আসো মুরগী, তোমাকে আমার ছানা-পোনা’র মা
বানিয়ে দিই।’
সিরাত কানে হাত চেপে কটমট করে বলল,
‘আপনার নির্লজ্জ কথাবার্তা বন্ধ করুন প্লিজ।’
প্রত্যয় হাসতে হাসতে চুপ করে সময়টা উপভোগ
করতে লাগলো। সিরাতের লাজুক চেহারাটা হৃদয়ে লাগে যেন। এই মেয়ের জীবনের প্রতিটা সময় কান্নায় মুড়িয়ে দিতে এনে সে নিজেই জড়িয়ে গেছে আনমনে। ওর যত্ন, ভালোবাসাকে প্রত্যয় অবহেলা করতে পারেনি। সিরাতকে দু’হাতে কাছে টেনে কপালে চুমু বসালো সে; কতদিন সুন্দর সময় কাটানো হয় না দু’জনের!
________________
সোহানের মেজাজ তিরিক্ষি। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না আফজাল সাহেব তাকে এভাবে ঠকাবে। সামনের নির্বাচনে ওকে নমিনেশন না দিয়ে প্রত্যয়কে নমিটেড করেছে তার পার্টি; এটা ভাবতেই ওর সারা গায়ে আগুন জ্বলে ওঠলো। প্রত্যয়ের দল ভারী। তরুণ নেতা হিসেবে সকলের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে।
তবুও আফজাল সাহেব সোহানকে ভরসা দিয়েছিলো সেই এবার নির্বাচনে লড়াই করবে এবং জিতবে। সোহান সেটা বিশ্বাসও করে নিয়েছিলো। কিন্তু এতবড় বিট্রে হবে নিজের সাথে তা ভাবতে পারে নি।
এমনিতেই প্রত্যয় সবখানে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছে, যার কারণে সোহানের ক্ষতি হয়েছে। তবুও এই নির্বাচন এবং পদের লোভে সে এতদিন চুপচাপ সব মেনে নিয়েছে। কিন্তু এভাবে আফজাল সাহেব পেছন থেকে ছুরি বসিয়ে সর্বোচ্চ ক্ষতিটা করে দেবে তা ঘূর্ণাক্ষরেও টের পায়নি। আর এ সবকিছুর জন্যে দায়ী প্রত্যয়, অবশ্যই সে। প্রত্যয় এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করলে আফজাল সাহেব নিশ্চয়ই এ কাজ করার সাহস পেতো না। সোহানের সব রাগ, হিংসা-বিদ্বেষ সব গিয়ে প্রত্যয়ের ওপর পড়লো!
প্রতিশোধ একটা নিতেই হবে, নয়তো ওর বুকের জ্বালা কমবে না। সোহান ফোন করলো প্রত্যয়কে।
প্রত্যয় প্রেসক্লাবে এসেছিলো গুরুত্বপূর্ণ কাজে। কাজ শেষে বেরুনোর সময়ই এলো ফোন। নাম্বারটা তার চেনা। বাঁকা হেসে ফোন ধরলো সে। কিছু বলার আগেই সোহান চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
‘কত টাকা দিয়ে কিনেছিস আফজাল কুত্তাকে?’
প্রত্যয় হেসে বলল,
‘তুই যত দিয়েছিস তার একগুণও না। তবে ছোট্ট একটা ট্রিকস খাটিয়েছি, সেটাই কাজে দিয়েছে। এটাই রাজনীতি, বুঝলি? এখানে একবার বোকামি করলে সারাজীবন পস্তাতে হবে। যেমন তুই পস্তাচ্ছিস!’
‘তোর মরণ আমার হাতে। আমি শেষ হলে তুইও শেষ।’
প্রত্যয় ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘তাই?’
সোহান রোষপূর্ণ গলায় বলল,
‘আমাকে পাত্তা দিচ্ছিস না তাইতো? কাজেকর্মে করে দেখাবো অতি শ্রীঘ্রই। তোকে সহ তোর বউ, পরিবারকে জ্যান্ত কবর না দিলে আমার নামও সোহান নয়। লিখে রাখ, আগামী ২৪ঘন্টার মধ্যে তুই শেষ। কাকপক্ষীতেও টের পাবে না কিছু।’
প্রত্যয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। এরপর আচমকাই থেমে গেলো। গম্ভীর, ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে বলল,
‘তোর কি ধারণা আমি বোকা? কাঁচা খেলা খেলি?
এখনও এত বোকা রয়ে গেলি। এর আগেও তুই
আমার অনেক ক্ষতি করেছিস। সিরাতকে উষ্কে দিয়েছিস আমার নামে যা-তা বলে, ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিস! এমনকি আমার বাবাকেও উল্টাপাল্টা কথা বলেছিস আমার ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য।
এসব আমি জানি না ভেবে ভুল করেছিস। আমি
তোকে চরম শিক্ষা দেওয়ার জন্য বসে ছিলাম
এতদিন।’
সোহান ভড়কে গেলো। এসব প্রত্যয় জানলো কিভাবে? ওর তো এসব জানার কথা নয়! এই চিড়িয়াটাকে সে এখনো ঠিকঠাক বুঝে ওঠতে পারেনি। এতকিছু বলেও ভয় দেখানো গেলো না, উল্টো ওকেই হুমকি দিচ্ছে? দম আছে বলতে হয় এর। ও নিজের ভড়কানো ভাব লুকিয়ে বলল,
‘মানে? কি বলতে চাইছিস তুই?’
প্রত্যয় শান্ত স্বরে বলল,
‘সব তো শুনলিই। তাছাড়া আরও একটা কথা শুনে নে, এই যে তুই, এতক্ষণ যা যা বললি সব কলরেকর্ড হয়ে আছে। অডিও রেকর্ডটা কিছুক্ষণ পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরাফেরা করবে। ভাইরাল হতে আর কতক্ষণ? এরপর বাকিটা তুই নিজেই দেখে নিস।
তোর মতো কিছু আসবে যাবে। ছুঁচো মেরে হাত নোংরা করছে না আর প্রত্যয়। গুড লাক বন্ধু।’
মুখের ওপর ফোন কেটে দিলো প্রত্যয়। সোহান ভেবেই পেলো না এতবড় বোকামি কি করে করতে পারলো সে! চিন্তা, অস্থিরতা, ভয় গ্রাস করে নিলো ওকে। কি করবে বুঝে ওঠতে পারলো না। কিছু মুহূর্তেই ওর অডিও রেকর্ড সহ বিভিন্ন কুকর্মের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লো। সোহান দিশেহারা হয়ে একে-ওকে ফোন করতে লাগলো, কিন্তু কেউই ওর প্রতি সদয়
হলো না। পরবর্তীতে এই নিয়ে বেশ হুলস্থুল কান্ড পরে গেলো চারদিকে। প্রত্যয়ও ছোট্ট একটা মামলাও করে দিলো ওর নামে, এতে করে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নিলো সোহানকে। আর আরও একটা সত্যি জানতে পারলো সে, ওর বিশ্বস্ত কর্মী মকবুলই ওর সব কার্যক্রম প্রত্যয়কে জানাতো। মূলত সে প্রত্যয়ের দলেরই লোক ছিলো। এতকিছু জানতে পেরেও কপাল চাপড়ানো ছাড়া ওর আর কিছুই করার রইলো না সোহানের, বিপদে দলের কাউকে পাশে পেলো না সে।
___________
ঘরে ঢুকে প্রত্যয় দেখলো সিরাত ঘুমে ঢুসছে চেয়ারে বসে। প্রত্যয় ওর ঘুম না ভাঙিয়ে কপালে চুমু খেতেই ধরফড়িয়ে ওঠলো সিরাত। প্রত্যয়কে দেখেই ফুস
করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ডাকবেন তো! ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন।’
প্রত্যয় শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল,
‘এখানে বসে ঢুলছো কেন? বিছানায় গিয়ে ঘুমাও।’
সিরাত বাস্তবে ফিরে এলো। ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আপনি ঠিক আছেন তো? কতকিছু ঘটে গেলো আজ। সোহান লোকটা আসলেই সব খারাপ করেছে। খারাপ জানতাম, এত বড় বদমাশ জানতাম না।’
প্রত্যয় হেসে বলল,
‘তাই? আর আমি?’
সিরাত ওর গলা ছেড়ে দিলো। এরপর কাপড় বের
করে দিতে দিতে বিড়বিড় করে বলল,
‘মোটামুটি চলে। বেশি ভালো বলবো না। ভেতরের
খবর তো সব আমি জানি না।’
‘মানে?’
‘ইয়ে যদি আপনার খুব গায়ে লাগে আরকি, তাই
বলতে চাচ্ছি না!’
প্রত্যয় সামান্য হাসার প্রচেষ্টা করে বলল,
‘বলো যা মনে আছে, আমি এত গায়ে মাখি না।’
সিরাত ঠোঁট উল্টে বলল,
‘আসলে যারা রাজনীতি করে তাদের নীতিটাই
তো খারাপ। গুটিকয়েক পাবেন ভালো। তাছাড়া সবই নষ্ট চরিত্রের অধিকারী। যেমন ধরুন, বউ রেখে সুন্দরীদের নিয়ে ফষ্টিনষ্টি করা ছাড়া আরও কত কি! জীবনে কোনো অন্যায়, অবিচার করেনি এরকম
কথা কোনো নেতা, পাতি নেতা বুকে হাত দিয়ে স্বীকার করতে পারবে না। ন্যায় বলতে কিছু আছে তারা সেটা জানেই না।’
প্রত্যয়ের হাসিমাখা মুখটা মুহূর্তেই কালো হয়ে এলো।একদৃষ্টে চুপ করে তাকিয়ে থাকলো সিরাতের দিকে। কিন্তু রাগে ধিকধিক করে জ্বলতে থাকা চোখ দুটো সিরাতের নজর এড়াতে ব্যর্থ হলো। সিরাত বিড়বিড় করে বলল,
‘পড়লো কথা হাটের মাঝে, যার কথা তার গায়ে
লাগে।’
প্রত্যয় শুনতে পেলো কথাটা। জ্বলন্ত চোখে তাকালো সিরাতের দিকে। ও পালাতে গেলেই একহাত চেপে ধরে আটকে ফেললো। এরপর অন্যহাতে নিজের বুকে হাত রেখে বলল,
‘আমি প্রত্যয় চৌধুরী, বুকে হাত রেখে স্বীকার করছি
এই জীবনে করা আমার সবচেয়ে ন্যায়পূর্ণ কাজ হলো আমার শত্রু সিরাত আঞ্জুমকে বিবাহ করা। বিবাহ করে ওর প্রতিটা দিন উলটপালট করে দেওয়াটাই আমার জীবনের সবচেয়ে ন্যায়ের কাজ। এও স্বীকার করছি, আগামী দিনগুলোতে ওর সাথে আরো উল্টাপাল্টা কাজ করে ন্যায়ের পথে এগিয়ে যাবো। কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
সিরাত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে
ভাবলো এই লোকটা জীবনেও শোধরানোর নয়। সেইসাথে প্রচন্ড হাসিও পেলো ওর।
_________
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ]
চলবে…