গোধূলি লগ্নে হলো দেখা পর্ব-০৬

0
547

#গোধূলি_লগ্নে_হলো_দেখা
#Part_6
#ইয়াসমিন_খন্দকার

মান্যতাকে কাঁদতে দেখে হচকচিয়ে তাকিয়ে রইল ভেনাস। নিজের ম্যানেজারের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”ও এভাবে কাঁদছে কেন? ও কি এখানে নিজের ইচ্ছায় এসেছে না তুমি ওকে জোর করে নিয়ে এসেছ?”

“আমি জোর করিনি স্যার৷ উনি নিজের ইচ্ছাতেই এসেছেন এখানে?”

“তাহলে উনি কাঁদছেন কেন?”

মান্যতা বলে,”আমাকে ঠকিয়ে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি ভিনচেঞ্জোর কনসার্টে ছিলাম। সেখান থেকে একজন লোক আমার সাথে ভিনচেঞ্জোর দেখা করিয়ে দেবার কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছে। আমাকে দয়া করে এখান থেকে যেতে দিন। আপনি তো আমার ভাইয়ের মতোই। নিজের বোনের কোন ক্ষতি করবেন না প্লিজ।”

বোনের কথা শুনেই ভেনাস আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। তার মনে পড়ে যায় নিজের বোনের কথা। তারও তো একটা সুন্দর পরিবার ছিল। মা-বাবা, বোন সবাই ছিল। কিন্তু হঠাৎ আসা এক ঝড়ে তার পুরো জীবনই যেন বদলে যায়। অতীত থেকে বেরিয়ে এসে ভেনাস রাগী চোখে তার ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমাকে এইজন্য রেখেছি আমি? এভাবে প্রতারণা করে মেয়েদের ধরে আনছ কেন তুমি? তোমাকে না আমি একবারেই বলেছি যেসব মেয়েরা স্বেচ্ছায় টাকার বিনিময়ে আসতে রাজি হবে তাদের নিয়ে আসবে। তাহলে এসব কি?”

“আমি কিছু জানি না স্যার। এরিয়েল এই মেয়েটাকে নিয়ে এসেছে। ও তো বলল মেয়েটা স্বেচ্ছায় এসেছে আর তাছাড়া মেয়েটার ব্যবহার দেখেও তো আমার মনে হয়েছিল যে ও জেনে বুঝেই এখানে এসেছে।”

মান্যতা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমি তো ভেবেছিলাম এখানে এসে ভিনচেঞ্জোর সাথে দেখা করব। তাই তো এত স্বাভাবিক ছিলাম।”

ভেনাস তার ম্যানেজারকে আদেশের সুরে বলল,”এই মেয়েটাকে সসম্মানে ওর বাড়িতে পৌঁছে দাও।”

অতঃপর মান্যতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি আমায় ভাই বলেছ, তাই আমিও তোমাকে নিজের বোন মনে করেই একটা পরামর্শ দিচ্ছি। এভাবে অচেনা কাউকে বিশ্বাস করো না। পৃথিবীটা অনেক জটিল যায়গা। এখানে তো আপনজনদেরই বিশ্বাস করা যায়না সেখানে অচেনা মানুষ তো দূর। আজ যদি ঐ এরিয়েল তোমায় আমার কাছে না এনে অন্য কোথাও নিয়ে যেত তাহলে কি হতো একবার ভেবে দেখেছ? যাইহোক তুমি এখন সাবধানে নিজের বাড়ি যাও।”

মান্যতা কৃতজ্ঞতা সূচক দৃষ্টিতে ভেনাসের দিকে তাকায়। বলে,”আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি সত্যি একজন ভালো মানুষ। আমি আপনাকে নিজের ভাইয়ের মতোই দেখব।”

“আমি মোটেই ভালো মানুষ নই। তবে তোমার ভাই হতে কোন আপত্তি নেই। আমারও একটা বোন ছিল ঠিক তোমারই মতো।”

“ছিল মানে? এখন আর নেই?”

মান্যতার মুখে এমন প্রশ্ন শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে ভেনাস। নিজের ম্যানেজারের দিকে তাকায় ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে। ভেনাসের ম্যানেজার মান্যতাকে বলে,”দ্রুত আমার সাথে চলো। স্যার, রেগে যাচ্ছে।”

মান্যতা চলে যেতে থাকে। ভেনাস চোখ বন্ধ করে বলে ওঠে,”আমার সব ছিল, সব। সব হয়তো আজও ঠিক থাকতো যদি আমি ভুল মানুষকে ভালো না বাসতাম।”

`~~~
ভেনাসের ম্যানেজার মান্যতাকে অনুরাগদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। মান্যতা অনুরাগদের বাড়িতে প্রবেশ করে। মান্যতাকে দেখেই এগিয়ে আসেন অনিতা খান। তিনি এসেই বলেন,”তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে মান্যতা? অনুরাগ বললো কনসার্টে গিয়ে তুমি নাকি হারিয়ে গেছ। ছেলেটা চারিদিকে পাগলের মতো তোমায় খুঁজছে।”

“আমি আসলে অনেক লোকের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম খালা। তারপর কয়েকজন মানুষের সাহায্য নিয়ে এখানে ফিরলাম।”

“তোমার ফোন কোথায়? তোমাকে নাকি অনুরাগ ফোন করেছিল।”

“তখন ভিড়ের মধ্যে ফোন রিসিভ করতেই পারিনি। আর পরে ফোনে চার্জও ছিলনা।”

‘ওহ। আচ্ছা, তুমি নিজের রুমে যাও। আমি অনুরাগকে তোমার ফেরার সংবাদটা দেই। না জানি ছেলেটা তোমায় কোথায় কোথায় খুঁজে চলেছে।”

মান্যতা মনে মনে বলে,”এই মিথ্যা বলা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না৷ সত্য বললে সবাই খুব চিন্তা করত। বাড়িতে এসব জানাজানি হলে আব্বু আমায় আবার দেশে ফিরিয়ে নিতে চাইত। তাহলে তো ভিনচেঞ্জোকে পাওয়ার শেষ আশাও আমার নস্যাৎ হয়ে যেত।”

“““`
হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে অনুরাগ। বাড়িতে এসে সোজা চলে যায় মান্যতার রুমে। মান্যতা সবে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে নিজের রুমে প্রবেশ আসল। অনুরাগ রুমে এসেই মান্যতাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি? জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম!”

“আপনি শান্ত হোন। আমি একদম ঠিক আছি।”

“সব দোষ আমারই। আমার উচিৎ হয়নি তোমাকে তখন এভাবে একা ছেড়ে যাওয়া।”

“আপনি নিজের দোষ দেবেন না।”

“এখন থেকে তোমাকে আমি এক মুহুর্তের জন্যেও একা ছাড়ব না মান্যতা। খুব শীঘ্রই তোমাকে নিজের করে নেব সুইটহার্ট।”

~~~`
বেশ কয়েকদিন পর,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করতে নিচে নামতেই চরম পর্যায়ের অবাক হলো মান্যতা। তার মা-বাবা ইটালিতে! মান্যতা তাদের সামনে গিয়ে হতবাক গলায় বলে,”তোমরা!”

মহিউদ্দিন বলেন,”কি চমকে দিলাম তো?”

“আম্মু-আব্বু তোমরা আসবে আমাকে জানাও নি তো?!”

রাহেলা বেগম বলে ওঠেন,”আগে থেকে জানালে কি তোমাকে এভাবে সারপ্রাইজ দিতে পারতাম!”

“ওহ, তোমরা তার মানে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এভাবে চলে এসেছ?”

অনুরাগ পিছন থেকে বলে ওঠে,”এর থেকে বড় সারপ্রাইজ আজ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

“সারপ্রাইজ?! আর কি সারপ্রাইজ?”

“সেটা আজ সন্ধ্যাতেই জানতে পারবে।”

অনুরাগের কথায় ধন্দে পড়ে যায় মান্যতা। অনিতা খান বলে ওঠেন,”মেয়েটাকে আর চিন্তার মধ্যে রেখো না অনুরাগ। ওকে সত্যিটা বলে দাও। মান্যতা আজ সন্ধ্যায় তোমার আর অনুরাগের এনগেজমেন্ট।”

“কি?! এনগেজমেন্ট!”

“হুম। কি খুশি হও নি তুমি?”

মান্যতা ভীষণই চমকে যায়।

““
“ভিনচেঞ্জো ছাড়া আমি আর কারো সাথে নিজের এনগেজমেন্ট হতে দিতে পারি না। আমি ভিনচেঞ্জো ছাড়া আর কারো নই। এই এনগেজমেন্ট টা আমায় আটকাতেই হবে।”

নিজের রুমে বসে এসবই বিড়বিড় করছিল মান্যতা। এমন সময় অনুরাগ তার দরজায় টোকা দিয়ে বলে,”ভেতরে আসতে পারি।”

“হ্যাঁ, আসুন।”

অনুরাগ রুমে এসে মান্যতার দিকে একটা শপিং ব্যাগ তুলে দিয়ে বলে,”এটা খুলে দেখো। তোমার জন্য অনেক সুন্দর একটা গিফট আছে।”

মান্যতা শপিং ব্যাগটা খুলে লাল রঙের খুব সুন্দর একটা গাউন দেখতে পায়। অনুরাগ জিজ্ঞেস করে,”পছন্দ হয়েছে?”

মান্যতা মাথা নাড়ায়।

“তাহলে আজ এনগেজমেন্টে এটাই পড়ে এসো। তোমাকে অনেক সুন্দর লাগবে এটা পড়ে। অপেক্ষায় থাকবো।”

বলেই স্মিত হেসে চলে যায় অনুরাগ। মান্যতা গাউনটা সাইডে রেখে বলে,”এখন কি আর এই এনগেজমেন্ট আটকানোর কোন উপায় নেই? উফ কি করব কিছু বুঝতে পারছি না৷ এখন সবকিছু আল্লাহর হাতে। আল্লাহ তুমি আমায় অনেক সাহায্য করেছ আর একটু সাহায্য করে দাও। এমন কিছু করো যাতে এই এনগেজমেন্ট টা আজ বাতিল হয়ে যায়। আমি মন থেকে এই এনগেজমেন্টটা মানতে পারব না। কারণ আমি যে অন্য কাউকে ভালোবাসি। তার জন্যই তো এত কিছু করা।”

~~~
একে একে অনেক গেস্ট এসে হাজির হয়েছে। আজকের সন্ধ্যাটা খুব স্পেশাল। আজ অনুরাগ ও মান্যতার এনগেজমেন্ট। অনুরাগ আজ কালো রঙের ফরমাল কোর্ট আর জিন্সের প্যান্ট পড়েছে। সে কিছু সময় পর পরই সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে। তার মন উসখুস করছে কখন নিজের প্রেয়সীকে দেখতে পারবে। তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মান্যতাকে তার দেওয়া লাল গাউন পড়িয়ে নিচে নিয়ে আসে অনিতা খান৷ মান্যতার দিকে মুগ্ধদৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে থাকে অনুরাগ। যেন এক যাদুতে মুগ্ধ সে। মান্যতা এগিয়ে আসে। এনগেজমেন্টের কার্যক্রম শুরু হয়। মান্যতাকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও সব করতে হচ্ছে। মান্যতাকে পড়ানোর জন্য একটা রিং হাতে তুলে নেয় অনুরাগ। মান্যতা অনিচ্ছাকৃত হাত বাড়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে,”এছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। এবার মনে হয় এনগেজমেন্টটা হয়েই যাবে।”

অনুপম মান্যতাকে রিং পড়াতে যাবে এমন সময় সেখানে হাজির হয় এক ভিনদেশী তরুণী৷ পরনে তার খুব ছোট একটা স্কার্ট। চুলে লাল রঙ করানো। মেয়েটি এসেই বাকা হেসে বলে,”দাঁড়াও এনি। আমাকে ছাড়া তোমার এনগেজমেন্ট কিভাবে হতে পারে?”

অনুপমের মনোযোগ সরে যায়। সে তরুণীটির দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলে,”ম্যানিলা তুমি!”

To be continue

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে