গোধূলি লগ্নে হলো দেখা পর্ব-০৩

0
514

#গোধূলি_লগ্নে_হলো_দেখা
#Part_3
#ইয়াসমিন_খন্দকার

“শেষ বারের মতো বলছি বিয়েটা করবি কি না বল।”

নিজের মায়ের মুখে এই প্রশ্নটা শুনে স্বাভাবিকভাবেই রেগে গেল মান্যতা। এক প্রকার চিৎকার করে বলল,”করব না আমি বিয়ে। আর কতবার বলতে হবে তোমায়?”

এরইমধ্যে মান্যতার বাবা মহিউদ্দিন দৌড়ে চলে এলেন৷ তাকে দেখে রাহেলা বেগম বললেন,”তুমি তোমার মেয়েকে বোঝাও ও কিন্তু হাতের লক্ষ্ণী পায়ে ঠেলছে। অনুরাগের মতো ছেলে কিন্তু তোমার মেয়ের জন্য আর পাবে না। ও বিদেশে সেটেল্ড। ওকে বিয়ে করলে তোমার মেয়ের জীবন সোনায় সোহাগা।”

মান্যতা মহিউদ্দিনের সামনে বলতে লাগল,”আমি এখন বিয়ে করতে চাই না আব্বু। আমি পড়তে চাই। মানুষের মতো মানুষ হতে চাই। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর আমি বিয়ে কর‍তে চাই।”

রাহেলা বেগম রেগে বললেন,”তোমার নিজের পায়ে দাঁড়ানো আমি বের করছি। হয় ভালোয় ভালোয় বিয়েতে রাজি হয়ে যাও আর নয়তো….”

মহিউদ্দিন নিজের স্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,”তুমি চুপ করো রাহেলা। আমি আমার মেয়ের কথাই শুনব। ও যখন এই বিয়েটা করতে চাইছে না তখন ওকে জোর করা মোটেই ঠিক হবে না। আমি আমার মেয়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এই বিয়ে দিতে চাই না।”

“কিন্তু…”

“কোন কিন্তু নয়। আমি এই নিয়ে আর কোন কথা শুনতে চাই না। আমার যা বলার বলে দিয়েছি।”

“তুমি তো বলেই খালাস। আমি আপু আর দুলাভাইকে এখন কি বলব? ওনারা যে অনেক আশা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন যে আমাদের মেয়ের সাথে অনুরাগের বিয়ে দেবেন। এখন কি আমি ওনাদের মুখের উপর গিয়ে না বলে দিব?”

“তোমাকে কিছু বলতে হবে না রাহেলা। যা বলার আমি বলব।”

“যা ইচ্ছা করো। তোমাদের বাবা মেয়েকে একসময় এর জন্য পস্তাতে হবে দেখে নিও।”

এই বলে রাহেলা বেগম হনহন করে মান্যতার রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রাহেলা বেগম বেরিয়ে যেতেই মান্যতা নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ইউ আর দা বেস্ট আব্বু। আই লাভ ইউ।”

“লাভ ইউ টু মাই ডিয়ার ডটার।”

~~~~~~~
মান্যতা নিজের ঘরে বসেই ফেসবুক স্ক্রল করছিল। এমন সময় রাসেল তাকে ম্যাসেঞ্জারে নক দেয়। মান্যতা সেদিনের ঘটনার জন্য রাসেলের উপর রেগে ছিল তাই সে ম্যাসেজের কোন রিপ্লাই দেয় না। কিন্তু রাসেল একের পর এক ম্যাসেজ দিতেই থাকে৷ শেষে বাধ্য হয়ে মান্যতা রাসেলকে রিপ্লাই করে,”আরে বা** ম্যাসেজ দিচ্ছিস কেন? তোর সাথে আমার কোন কথা নেই।”

“তোকে ভিনচেঞ্জো নিয়ে একটা জরুরি খবর দেওয়ার ছিল। আচ্ছা, তুই যদি আমার সাথে কথা বলতে না চাস তাহলে ঠিক আছে।”

“এই না, না। তুই বল কি বলবি।”

“তুই তো আমার সাথে কথা বলবি না।”

“এই মেয়ে মানুষদের মতো ন্যাকামি না করে যা বলার বল।”

“তার মানে তুই স্বীকার করে নিচ্ছিস মেয়েরা ন্যাকা? তাহলে তুইও ন্যাকা?”

“ধৈর্যের কিন্তু একটা সীমা থাকে রাসেল।”

“ওকে কাম ডাউন। আমি বলছি। একটা নতুন নিউজ বেরিয়েছে দেখিস নি?”

“কি নিউজ?”

“ভিনচেঞ্জোর ঠিকানা নিয়ে।”

“কি?”

“হুম। যতদূর জানা যাচ্ছে ভিনচেঞ্জো থাকে ইটালিতে।”

“ইটালি?”

“হুম। সেরকমই খবর। বিশ্বাস না হলে তুই যেকোন অনলাইন নিউজ পোর্টালে দেখতে পারিস বা ফ্যান গ্রুপেও দেখতে পারিস।”

মান্যতা আর সময় নষ্ট না করে তাই করে। আর এতেই তার চক্ষু চড়কগাছ। সত্যিই ভিনচেঞ্জোর ঠিকানা ইটালিতে।

মান্যতা বলে ওঠে,”এত দিনে ভিনচেঞ্জোর খোঁজ পেলাম। কিন্তু এখন আমি ইটালিতে যাব কিভাবে? কিছু একটা তো করতেই হবে আমায়।”

মান্যতা কিছুক্ষণ ভেবে বলে,”অনুরাগই পারে আমায় ভিনচেঞ্জোর কাছে পৌঁছে দিতে। তাই এখন আমায় ওরই সাহায্য নিতে হবে।”

~~~
সকলে রাতের খাবার খেতে ডিনার টেবিলে উপস্থিত হয়েছে। অনুরাগ, তার মা-বাবা, মহিউদ্দিন সবাই। মান্যতাও এসে হাজির হয়েছে। রাহেলা বেগম গোমড়া মুখে সবাইকে খাবার পরিবেশন করছেন। কারণ তিনি জানেন আজই মহিউদ্দিন হয়তো অনুরাগের মা-বাবার সামনে মান্যতার বিয়েতে নিমরাজি থাকার কথাটা বলে দেবেন।

আর হলোও তাই। অনিতা খান যখনই বলে উঠলেন,”আসলে আমার অনুরাগ আর মান্যতার সম্পর্কে কিছু বলার ছিল। তোমরা তো জানোই আমি এই দেশে আমার ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজতেই এসেছি। আর আমার মান্যতাকে অনেক বেশি পছন্দও হয়েছে। এখন তোমরা কি বলো?”

মহিউদ্দিন তখন বলতে উদ্যত হন মান্যতার অমতের কথা। কিন্তু তিনি কিছু বলার আগেই মান্যতা বলে ওঠে,”আমি এই বিয়েতে রাজি আছি খালা। এখন তুমি আব্বু-আম্মুর মতামত নাও।”

মান্যতার এমন উত্তর তিন জোড়া বিস্মিত চোখ তার দিকেই তাকায়। অনিতা খান এবং তার স্বামী খুশি হলেও মহিউদ্দিন, রাহেলা, অনুরাগ এই তিনজনই মান্যতার হঠাৎ এমন ৩৬০° টার্ন নেওয়ায় অনেক বেশি অবাক হয়ে যায়। মহিউদ্দিন মান্যতার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”এটা তুই কি বলছিস মান্যতা? তুই না একটু আগেই বললি..”

“আগের কথা বাদ দাও আব্বু। এখন যা বলছি তাই ঠিক।”

রাহেলা বেগম অবশ্য নিজের মেয়ের উপর এবার বেজায় খুশি হন। মনে মনে বলেন,”যাক, মেয়েটার তাহলে সুমতি হয়েছে।”

অনুরাগ মান্যতার দিকে তাকিয়ে ছিল বিস্মিত নয়নে। যেই মেয়ে কাল অব্দি তাকে বিয়ে করতে নারাজ ছিল, যার জন্য সে এত ছলচাতুরী করল তার হঠাৎ এমন ভাবে বদলে গেল। এদিকে মান্যতা মনে মনে বলছিল,”ভিনচেঞ্জোর কাছে পৌঁছানোর জন্য এখন এটাই আমার কাছে একমাত্র পথ। তাই আমাকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও এই বিয়েতে মত দিতে হলো।”

অনিতা খান বললেন,”সবারই যখন বিয়েতে মত আছে তাহলে শুভ কাজে আর দেরি কেন? দ্রুতই কাজি ডেকে দুজনের চার হাত এক করে দেই।”

রাহেলা বেগম একমত জানিয়ে বলে,”হ্যাঁ, তাই হোক।”

“না জানি এই মেয়ে আবার কখন বেকে বসে। তার থেকে ভালো দ্রুতই বিয়েটা হয়ে যাক।”(মনে মনে)

মান্যতা বলে,” আমার একটা আর্জি ছিল খালা।”

“হ্যাঁ, জানাও তোমার আর্জি।”

“আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা আমি বিদেশের মাটিতে বিয়ে করব। তাই আমি চাই এই দেশে নয় ইটালিতে গিয়ে বিয়েটা করতে। যদি তোমাদের কোন আপত্তি না থাকে।”

“আপত্তি থাকবে কেন? অনুরাগ তুমি দেখো তো মান্যতার পাসপোর্ট ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের তো দ্রুতই এখান থেকে যেতে হবে। এরপর কয়েক মাস পর মান্যতার পাসপোর্ট ভিসা পেলেই ওকে নিয়ে ইটালিতে যাব। তারপর ওখানে গিয়েই তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা হবে।”

মান্যতা মনে মনে বলে,”একবার শুধু আমাকে ইটালিতে যেতে দাও। তারপর আমি ঠিক খুঁজে নেব আমার ভিনচেঞ্জোকে। বিয়ে করলে আমি শুধু ওকেই করব। আর কাউকে নয়।”

~~
মান্যতা রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে যাবে এমন সময় অনুরাগ তার রুমের বাইরে এসে নক করে বলল,”একটু বাইরে আসবে তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”

মান্যতা দরজার কাছে গিয়ে বলে,”হ্যাঁ, বলুন।”

“তুমি কি সত্যি এই বিয়েতে রাজি আছ? নাকি বাধ্য হয়ে মত দিয়েছ?”

“আমি মন থেকেই রাজি হয়েছি।”

“কিন্তু তুমি তো কাল অব্দি আমায় পছন্দ করতে না তাহলে আজ হঠাৎ কি হলো তোমার?”

“কে বললো আমি আপনাকে পছন্দ করতাম না? আমি তো প্রথম দেখাতেই আপনাকে পছন্দ করে ফেলি।”

“সত্যি বলছ?”

“হুম।”

“তাহলে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এমন নাটক করলে কেন?”

“আপনার পরীক্ষা নিচ্ছিলাম যাতে আপনি ১০০ তে ২০০ পেয়ে জিতেছেন।”

“সত্যিই তাই?”

“হু”

“আমার কেন জানি তোমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে। তোমার কাছে শুধু একটাই অনুরোধ আমাকে ঠকিও না। জীবনে একবার খুব বাজে ভাবে ঠকে গেছিলাম। দ্বিতীয় বার আর ঠকতে চাই না।”

মান্যতা কিছু না বলে নির্বিকার চিত্তে অনুরাগের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুরাগ বলে, “আমি যাচ্ছি। তুমি দরজাটা লক করে দাও।”

to be continue

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে